আশার হাত বাড়ায় পর্ব-৩৬+৩৭

0
170

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩৬|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শ্রেয়ার দোকানে আজ অনেক কাজ। রিমলিও আজ কলেজে যায়নি।সৃষ্টি বেগম বাসার রান্না করে চলে আসেন দোকানে।আজ এক ছোট মেয়ে প্রায় মিমির বয়সী তার জন্মদিন।মিমির ক্লাসফ্রেন্ড হয়।জন্মদিন পালন করতে চায় এই দোকানে।চারপাশ সাজাতে ব্যস্ত অর্পা ও রিমলি মিলে।শ্রেয়া কেক বানাচ্ছে।সবকিছু রেডি করে একটু বসতেই ওখানে সৃষ্টি বেগম আসলেন।শ্রেয়ার উদ্দেশে বলেন,”বাসায় যা।তোর বিছানার উপর একটি জামা রেখেছি ওটা পরে মাথায় হিজাব সুন্দর করে বাঁধবি।”

“আমি কেনো আবার নতুন জামা পড়তে যাবো আম্মু?”

“ছেলে পক্ষ বিয়ের ডেট দিয়েছে।তোর যখন এতই তাড়াহুড়া তাই তারা দুইদিন পর বিয়ের ডেট দিয়েছে।আজ ছেলের দুঃসম্পর্কের ফুফু আসবে।সবাই তোকে দেখলেও ফুফু এখনও তোকে দেখেনি।তোর শ্বশুরের চাচাতো বোন।অনাথ ছিলেন তাই তোর শ্বশুরের বাড়িতেই থাকতো।বড় শখ করে তোকে দেখতে চায়।এটাতে অন্তত না করিস না।ছেলে তো তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে ছেলের পরিবারও রাজি।শুধু ফুফু বাইরে থাকে বলে আজ দেখা করতে চায়।”

“আচ্ছা,আমি যাচ্ছি।”

শ্রেয়া রেডি হতে গেলে রিমলি ও অর্পা পিছন পিছন চলে যায়।ওদেরকে দেখে শ্রেয়া বলে,”তোরা এখানে কেনো?”

“তোকে সাজাতে।”(অর্পা)

“আজ আমার বিয়ে না।যতটুকু সাজার দরকার আমি নিজেই সাজতে পারি।”

“তোকে এত কথা কে বলতে বলেছে। শোন শ্রেয়া তোর আগের বিয়েতে আমরা কেউই তেমন আনন্দ করতে পারিনি।এবার আনন্দ করতে চাই।”

শ্রেয়ার মনের মধ্যে আগুন জ্বলছে।কোথায় একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করতে হচ্ছে আর এরা তাকে সাজাতে চায়। নাক ফুলিয়ে উঠছে।কিন্তু কান্না করা যাবে না তাই চুপ আছে।রিমলি আর অর্পা মিলে সাজিয়ে দিচ্ছে শ্রেয়াকে।চোখের পাতায় মোটা করে কাজল ঠোঁটে হালকা গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক আর মুখে একটু পাউডার দিয়ে সাজানো শেষ করলো।এর উপর দিয়ে রিমলি হিজাব বেধে দেয়।রিমলি ইউটিউবে দেখে বিভিন্ন ভাবে হিজাব বাধা শিখেছে।শ্রেয়াকে এখন অনেক সুন্দর করে বেঁধে দিল।ওড়না এক কোনায় দিয়ে হাতে কিছু চুরি পরিয়ে দিল সাথে আঙুলে একটি আংটি।শ্রেয়া চোখ ছোটছোট করে দেখছে।কিছু বলছে না।সাজ শেষ করে ওরা চলে গেলো দোকানের দিকে।দোকানে আসতেই অবাক হয় শ্রেয়া।ফারাজ এখানে আছে।মুখটা ঘুরিয়ে সবার আড়ালে একটা ভেংচি কাটলো।আজ সকালেই রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়েছে।চাকরি হয়তো এতক্ষণে বাই বাই টাটা।সৃষ্টি বেগমের কাছে আসতেই সৃষ্টি বেগম শ্রেয়াকে কাছে টেনে একটি মহিলার সামনে দাড় করায়।বলেন,”আমার মেয়ে শ্রেয়া।যার সাথে আপনাদের পরিবারের মধ্যে কথা চলছে।”

ছেলের ফুফু মানে ফারাজের ফুফু শ্রেয়াকে দেখে শ্রেয়ার হাত ধরে নিজের কাছে আনেন।বয়স্ক মহিলা চোখে কম দেখেন।ফারহান চৌধুরীর থেকেও বয়সে বড় তিনি।শ্রেয়ার মাথায় হিজাব মুখে বেশি মেকআপ করেনি দেখে ভালো লাগলো তার কাছে।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,”মাশাআল্লাহ।মেয়ে অনেক সুন্দর।আমাদের ছেলের সাথে খুব ভালোভাবেই মানাবে।”

সৃষ্টি বেগম খুশি হলেন।বাসার সবাই রাজি এতেই অনেক।তবে জিনিয়া অমত আছে এখনও। ফারহান চৌধুরী ও ফারাজের আশ্বস্ত পেয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন সৃষ্টি বেগম।বার্থডে গার্ল চলে এসেছে।মেয়েটির পাশে মিমি এসে দাড়ালো।আরও কিছু বাচ্চা আছে সেখানে।মিমি সহ বাকি বাচ্চাদের নিয়ে কেক কেটে একসাথে খেতে থাকে।মিমির স্কুলের প্রিন্সিপাল এসেছিলেন।কেক খেয়ে প্রশংসা করতে থাকেন শ্রেয়ার।হাসি মুখে বলেই দেন,”সত্যি বলতে নতুন পেস্ট্রি হাউজ তাও আবার টিনের ঘরে দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিলো।ভেবেছিলাম কেমন না কেমন হবে।তবে নতুন হিসেবে ভালোই আছে।শুধু ভালো না অনেক ভালো খেতে।আপনি উন্নতি করতে পারবেন এই পেস্ট্রি হাউজ দিয়ে।”

“ধন্যবাদ আপনাকে।”

“আপনি চাইলে আপনার কেক আমাদের স্কুলে রেগুলার ডেলিভারি দিতে পারেন।আমাদের ক্যান্টিনে ভিন্ন খাবারের অর্ডার জন্য আমরা আগে থেকে বুকিং করি।কাছের মানুষ থাকতে দূরে যেতে ভালো লাগছে না।”

নতুন অর্ডার পেয়ে খুশি হলো শ্রেয়া।ক্যান্টিনের বাচ্চাদের জন্য কেক দেওয়া মানেও একটা ভালো ইনকামের রাস্তা।খুশি হয়ে বলে,”জি অবশ্যই।কয় পিচ আর কি কি ফ্লেবার লাগবে আমাদের বলবেন।আমরা ডেলিভারি দিবো।”

সবশেষে শ্রেয়া এক কোনায় এসে হাত মুছতে থাকে।শ্রেয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় ফারাজ।বলে,”হঠাৎ রিজাইন নিলেন কেনো জানতে পারি?”

ফারাজের উল্টোদিকে ফেরা ছিলো শ্রেয়া।রাগ হচ্ছে মনে মনে।এক বছর আগে অপমান করেছে এখন বুঝতে পারছে না কেনো চাকরি ছাড়তে চায়।শ্রেয়া নিজেও বা কম কিসে?অপমান করবে সে ফারাজকে।ফারাজের দিকে ফিরে বলে,”আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।হাসব্যান্ড চাচ্ছেন না আমি জব করি।আর এখন তো আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।চাকরি করার প্রয়োজন বোধ করছি না।”

ফারাজ শ্রেয়ার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন না তো কি অন্য কারো পায়ে দাঁড়াবেন মিস শ্রেয়া?”

চোখ বড়বড় করে ফারাজের কথা শুনলো।বুঝতে পারল না কিছুই।এটা কি মজা করে বলা নাকি পাল্টা অপমান।শ্রেয়া বলে,”আসল কথা হলো আমার যে স্বামী হবে সে কাজ করতে দিবে না।”

“আপনি কি তার সাথে কথা বলেছিলেন?”

“হ্যাঁ,বলেছি কথা।”

“কি মিথ্যুক(বিড়বিড় করে),ওহ আপনার হাসব্যান্ড যদি কাজ নাই করতে দেয় তাহলে আর কি?করলেন না চাকরি।আমি তাহলে নতুন অ্যাসিসট্যান্ট খুজবো।অবশ্য আমার যে ওয়াইফ হবে ভাবছি তাকেই আমার অ্যাসিসট্যান্ট করে রাখবো।”

মনের মধ্যে জ্বলতে থাকলেও বাইরে ঠান্ডা পানির মতো নিজেকে প্রকাশ করছে শ্রেয়া। ফারাজকে অপমান করতে পারল না বরং নিজেই অপমান হয়ে গেলো।শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো ফারাজ।দুদিন পর তাদের বিয়ে আর এখন হবু বউকে তার কথা বলেই জেলাস ফিল করাচ্ছে।শ্রেয়া মুখে লোক দেখানো হাসি ফুটিয়ে বলে,”বেশ ভালো তো।আপনিও আপনার ওয়াইফকে নিজের মতো করে ট্রিট করবেন আমাকে আমার হাসব্যান্ড নিজের মতো করে ট্রিট করবে।”

“জি অবশ্যই।আমি আমার ওয়াইফকে যথেষ্ঠ ফ্রিডম দিবো।তাকে কোনো কিছু নিয়ে সাফার করতে দিবো না।ট্রিট কেনো করতে যাবো আমি আমার ওয়াইফকে?হাসব্যান্ড ওয়াইফ কেউ কাউকে ট্রিট করে না।এক অপরের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ধরে রাখে।”

“কংগ্রাচুলেশন।”

“আপনাকেও মিস শ্রেয়া।”

চলে গেলো ফারাজ।মিমির হাত ধরে এগোতে থাকে।শ্রেয়া পিছন থেকে দেখছে ওদের।কষ্ট হচ্ছে শ্রেয়ার মনে।কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।

দেখতে দেখতে গেলো এই দুইটি দিন। ফারাজের ফুফু আর তার মেয়ে এসে দেখা দিয়ে যায় শ্রেয়ার সাথে।কেকের ডেলিভারির জন্য দুইটি ডেলিভারি ম্যান অনেক আগেই রেখেছিলো শ্রেয়া।একজন এখন স্কুলে ডেলিভারি দেয় আরেকজন বাড়িতে বাড়িতে।বেশ ভালই চলছে শ্রেয়ার দিন।তবে মনের মধ্যে শূন্যতা কাজ করছে।আজ তার বিয়ে।গায়ে হলুদ বা মেহেন্দির অনুষ্ঠান করেনি।শ্রেয়া করতে চায়না আবার ফারাজ নিজেও এসবে ইন্টারেস্টেড না।শুধু বিয়েটা আশ্রমে হবে।আয়নার সামনে বসিয়ে সাজানো হচ্ছে শ্রেয়াকে।আজ দ্বিতীয়বার নিজেকে লাল বেনারসিতে ফুটিয়ে তুলছে শ্রেয়া।আগের মতো এবারও শ্রেয়ার মুখে নেই হাসি।তবে আগেরবার রিমলি ও অর্পা খুশি না থাকলেও এবার ওরা বেশ হাসিখুশি আছে।শ্রেয়া ফারাজদের আশ্রম সম্পর্কে অবগত না।তাই আশ্রমের মধ্যে বিয়ে শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বরং রাজি হয়েছে।কিছু অনাথ বাচ্চাদের আনন্দ হবে আজ।বিয়ের সাজ শেষ করে গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি আশ্রমে এসে থামতেই জানালা খুলে শ্রেয়ার দিকে একটি ছোট্ট হাত বাড়িয়ে দেওয়া হলো।শ্রেয়া কাঙ্ক্ষিত হাতের দিকে তাকাতেই অবাক।হুবহু নিজের বেনারসির সাথে মিলিয়ে একটি শাড়ি পরে ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে আছে মিমি।মিমি নিজেই হাত বাড়িয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।মিমিকে দেখে অবাক হলেও পাশে থাকা রিমলির দিকে তাকাতেই রিমলি ইশারা করে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।শ্রেয়া হাত বাড়িয়ে দিলো।মিমি ভিতরে নিয়ে গেলো শ্রেয়াকে।শ্রেয়া যাওয়ার পর রিমলি নামবে গাড়ি থেকে ওমনি রিমলির দিকেও একটি হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।মানুষটির দিকে তাকাতেই রিমলি দেখলো শিহাব।অবাক হয়ে বলে,”আমার দিকে হাত বাড়িয়েছেন কেনো?”

“বেয়াইনকে নামতে সাহায্য করছি।”

হাত বাড়ালো না রিমলি।নিজে থেকে নেমেই বলে,”এতদিন কোথায় ছিলেন?”

“নতুন কেস এসেছিলো।খুলনায় গিয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য।মিস করছিলে বুঝি?”

পা থেমে গেলো রিমলির।শিহাবের দিকে ঘুরে কিছুক্ষণ দেখলো শিহাবকে।সত্যি বলতে সে মিস করেছে শিহাবকে কিন্তু তারপরও বলে,”একদমই না।আমি কেনো মিস করবো আপনাকে?”

“তাহলে খোঁজ নিলে যে?”

“ওটা তো এমনিতেই।কিছুদিন দেখিনি আপনাকে আজ হঠাৎ দেখলাম তাই মনে পড়ল আপনি ছিলেন না এতদিন।এছাড়া কিছুই না।”

“সত্যিই কিছু না?”

“উহু।”

“আচ্ছা ভিতরে চলো।বিয়ের আয়োজন শুরু করতে হবে।”

এই কয়দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলো অহনা।ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে তার।মাথা ঘুরছে আর বমি আসছে বেশি।মাথার চুলগুলো এখন আর নেই।আজ রিলিজ পেয়েছে সে।বাসায় আসতেই মিসেস নাজমা বলেন,”জীবনের সবকিছু ভুলে তোমার উচিত অন্তত তোমার মা ও মেয়েকে একটু আগলে নেওয়া।মেয়ের ভালোবাসা পেতে চাও না তুমি?”

অহনা তাকালো মিসেস নাজমার দিকে।বলে,”পেতে তো ঠিকই চাই আরও অনেক আগে থেকেই কিন্তু ও কি আমায় মা বলে জড়িয়ে ধরবে?অনেক অন্যায় করেছি আমি ওর সাথে।এই অন্যায় ছোট মানুষ কিভাবে মাফ করবে?ওর বাবা আমাকে মাফ করবে না।”

“পাপ যখন মানুষ করে তখন তাকে সবাই ঘৃণা করে কিন্তু সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত যে করে তাকে কিন্তু মানুষ দূরে ঠেলে দেয় না।একবার মেয়েকে নিজের বুকে জড়িয়ে দেখো।দেখবে তোমার মেয়ে তার অতীত ভুলে গেছে।মাতৃত্বের স্বাদ পাবে।”

“সত্যি বলছেন আপনি?আমার মিমি আমার কাছে আসবে?”

“কেনো আসবে না?মা হও তুমি ওর।মাতৃত্বের আশার হাত বাড়িয়ে দেখো ও তোমার কোলে ঠিক ফিরবে।”

“আচ্ছা আমি যদি ওকে কয়েকদিনের জন্য আমার কাছে এনে এখানে রাখি আপনি কি রাগ করবেন?”

“একদমই না।তুমি তোমার মেয়েকে এনে একটু ভালোবাসা দিবে।এতে আমি বাধা দিব কেনো?যাও তোমার মেয়ের কাছে।আমার ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।তোমাকে নিয়ে যাবে ওই বাসায়।”

“আচ্ছা।”

বলেই আলমারি খুলে বোরকা নিয়ে বোরকা পরে অহনা।উদ্দেশ্য তার মেয়েকে দেখা।

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
বর হিসেবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখেই রেগে গেলো শ্রেয়া।মিমির হাত ধরে ভিতরে এসে বউয়ের আসনের পাশে বরের আসনে ফারাজকে দেখতে পেলো।প্রথমে সৃষ্টি বেগম তারপর রিমলি ও অর্পার দিকে তাকাতেই স্পষ্ট হয়ে গেলো যে বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে।শ্রেয়া বউয়ের আসনে না বসে সৃষ্টি বেগমের কাছে গেলো।সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে বলে,”তোমার সাথে আলাদা কথা আছে মা।চলো আমার সাথে।”

বলেই সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে।আশ্রমের একজনের থেকে শুনে নিলো ফাঁকা ঘর কোনদিকে।জেনেই চলে গেলো।ঘরে এসে সৃষ্টি বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”বাবা মারা যাওয়ার পর তোমাকে আমি কখনও বাবার শূন্যতার জন্য কষ্ট দেইনি।আমি বুঝতে দেইনি যে বাবা চলে যাওয়াতে আমি কতকিছু হারিয়েছি।রনির সাথে বিয়ে দিয়েছো বিয়ে করেছি।রনির মতো ছেলের সাথে অত্যাচার সহ্য করে থাকতে বলেছো থেকেছি।এখনও যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলে আমি তাকেই না দেখে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।এগুলো আমি এক সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস থেকে পালন করেছি।কিন্তু আম্মু এর ভিতরে ঠিক কি পেলাম বলতে পারো?”

শ্রেয়ার চোখেমুখে প্রশ্নের ছাপ।সৃষ্টি বেগম দেখছেন তার মেয়ের এমন চাহনি।সৃষ্টি বেগম বলেন,”কিন্তু মা!তুই তো ভালোবাসিস ফারাজকে।”

“আম্মু ভালোবাসা আর নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এক না।আমার মন তাকে পেতে চাইলেও আমি নিজেকে ধরে রেখেছি শক্ত করে।বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো যাবে না বলেই আমি দূরে দূরে থাকতে চেয়েছি।লাভটা কি হলো?সেই আমার সম্মানটা ধুলোয় মিলিয়ে গেলো।আমার কি আত্মসম্মান নেই?আমি কি সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবো না?যে লোকটা আমাকে অপমান করেছে আজ তাকেই বিয়ে করতে বলছো?এই জীবনটা সিনেমা হয়ে গেলো না! ”

“আপনার ঠিক কেনো মনে হলো আমি আপনাকে অপমান করেছি মিস শ্রেয়া?”

ফারাজের কথা শুনে পিছনে ফিরলো শ্রেয়া।ফারাজ ঘরের ভিতরে এসে সৃষ্টি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,”একটু কথা বলতে চাই আমি ওনার সাথে।”

সৃষ্টি বেগম চলে গেলেন।ফারাজ এবার শ্রেয়ার মুখোমুখি দাড়ালো।শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে,”নিজের আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়েছেন ঠিকই কিন্তু এখনও বোধবুদ্ধি বৃদ্ধি করতে পারেননি আপনি মিস শ্রেয়া।”

ভ্রুকুটি করে তাকালো শ্রেয়া।ফারাজ মলিন হেসে বলে,”আপনাকে রিজেক্ট করার হলে আমি নিজে বলতাম।কাউকে দিয়ে অপমান করার মতো লোক আমি নই এটা বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই আপনি রাখেন।বিশেষ করে কারো সম্মানের জায়গা কিভাবে ধরে রাখতে হয় এটা এই ফারাজ চৌধুরী খুব ভালো করেই জানে।দেখুন আমি খুবই স্ট্রেট একজন মানুষ।কথা পেচাতে পারিনা।কাউকে দিয়ে নিজের জন্য সাফাই গাইতে পাঠাই না।বিশেষ করে যেখানে আমি নিজের জন্য নিজেই যুদ্ধ করি সেখানে কেনো আমি আপনার কাছে অন্যদের পাঠাবো বলতে পারেন?”

“আপনি পাঠাননি ওনাদের?আর ওই ভিডিও?”

“আংশিক সত্য আংশিক মিথ্যে।”

“মানে?”

“এমনটা না যে আমি প্রথমেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।আমার একটু স্পেস দরকার ছিল একাকীত্বের জন্য আলাদা সময়ের দরকার ছিল।জীবনের চলে যাওয়া স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়ার জন্য কারো আশার হাত আমি চাইনি।আমি চেয়েছি নিজে থেকেই অতীত ভুলে যেতে।এটা সত্যি যে আমি অতীত ভুলতে পারিনি কিন্তু অতীতের প্রতি সেই টান এখন আর আমার মধ্যে নেই।কিন্তু আমার ওই টানের সময়টিতে আপনি আমার জীবনে আসলে না পেতেন সম্মান না পেতেন স্ত্রীর মর্যাদা।আপনাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যদি গ্রহণ নাই করতে পারি তাহলে বিয়ে কেনো করবো বলতে পারবেন?”

শ্রেয়া তার চোখজোড়া বিচরণ করছে ফারাজের মুখপানে।ফারাজ তাকিয়ে আছে জানালার দিকে।ফারাজ আবার বলে,”এই জীবনে সবাই সমীকরণ মেলাতে চায় কিন্তু আমার বেলায় কেউ কেনো সমীকরণ মিলিয়ে দেয় না?”

ফারাজের কথার মধ্যে কষ্টের ছাপ।পুরুষ মানুষেরও কষ্ট হয় তাদেরও বেদনা আছে।ফারাজ নিজেকে শক্ত রাখতে পারে তাই তাকে বোঝা সহজ না কিন্তু হিসাব করলে দেখা যাবে সবথেকে বেশি কষ্ট ফারাজের হয়েছে।শ্রেয়া মাথা নিচু করে।ফারাজ বলে,”উহু,মাথা নিচু করবেন না।আপনার মাথাটা উচু রাখতেই আমার এতকিছু করা।নাহলে আপনার দুঃখকে অনেক আগেই লাঘব করে দিতাম।দুঃখ লাঘব করিনি কারণ আমি চাই আপনি নিজ যোগ্যতায় পথ চলুন। আশার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানুষের অভাব নেই কিন্তু আশার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষটিও একদিন হাত ধরে পথচলা থামিয়ে দেয়।কারণ এটাই সর্বকালের নিয়তি।বিয়ে করা না করা আপনার ব্যাপার তবে এবার আপনার ইচ্ছাশক্তিকে একটু ভিন্নভাবে পরিবর্তন করতে চেয়েছে আপনার আপনজনেরা।আমি এটাতে কোনো ভুল দেখিনা।জীবন সিনেমা,নাটক ও রূপকথার জগৎ থেকেও কিছু শেখায়।আপনার আমার শেখার শেষ নেই।আপনাকে একটু সারপ্রাইজ দিতে চাওয়া যদি তৃতীয়বার আপনার মান সম্মানে আঘাত করা হয় তাহলে আমি দুঃখিত।এবার আপনার মায়ের কোনো দোষ নেই দোষটা বরং আমার নিজের।আমিই চেয়েছিলাম এমনটা হোক।আপনার চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করতে রাজি ছিলাম আমি মিস শ্রেয়া।তবে সেটা পুরোটাই সম্মানের সহিত।আমার মন্তব্য আমি জানিয়ে দিলাম এখন আপনি ভেবে দেখুন আপনি কি করবেন।”

শ্রেয়া অনুমান করতে পারলো ফারাজ তাকে বিয়ে করতে চায়।জিনিয়া বা অতসী এদের কথার মূল্য নেই ফারাজের কাছে।যদি তারা সঠিক বিচারের লোক হতো তাহলে ফারাজ তাদেরকে মূল্য দিতো।ফারাজ চলে যাচ্ছে হঠাৎ দরজার কাছে এসে থেমে বলে,”ব্যাক্তির সফলতা হলো প্রতিশোধের একমাত্র চাবিকাঠি।আপনাকে সেই চাবিকাঠি দেওয়া হয়েছে এখন আপনি বলতে পারবেন আপনার জীবনের পথচলা কিভাবে হবে।”

“এভাবে নাটকীয় ভাবে বিয়ে করার থেকে সরাসরি প্রস্তাব দিলেও পারতেন।”

মৃদু হাসলো ফারাজ।আঘাত হানলো খানিক তারও মনের গহীনে।বলে,”কিছু বিষয়ে নাটকীয়তা প্রয়োজন।এতে মাইন্ড ফ্রেশ থাকে।মনে রাখবেন নাটক সিনেমা কিন্তু বাস্তব জীবন থেকেই নেওয়া হয়।কোনো রাইটার এমনি এমনি কাহিনী লিখতে পারে না যদি ওটা বাস্তবে না হয়।নায়ক নায়িকা তো শুধু আকর্ষণ সিনেমা শেষ তাদের প্রতি আকর্ষণ শেষ কিন্তু কাহিনী ওটা স্মৃতির পাতায় গেঁথে রাখার বিষয়।”

বলেই চলে যায় ফারাজ।আয়নার সামনে এসে দাড়ালো শ্রেয়া।ভাবছে ফারাজের বলা কথাগুলো।ফারাজ তাকে ভালোবাসে না।এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা সম্ভব না।তবে ফারাজ তাকে সম্পর্কের মর্যাদা দিতেই নিজেকে সময় দেয়।এই সময়ের সৎ ব্যাবহার নাহ অসৎ ব্যাবহার করেছে অন্য কেউ।এর জন্য তো ফারাজ দায়ী না।দায়ী যে তাকে ভুগতে হবে।ফারাজ ভুগতে যাবে কেনো?আলতো হেসে মুখের মেকআপ দেখে নিলো আয়নায়।

ফারাজ বাইরে আসতেই মিরাজ আসে ফারাজের কাছে।প্রশ্ন করে,”কি হলো?”

“হয়তো বিয়ে হবে না।”

সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে।ঠিক তখনই শ্রেয়া এসে বলে,”আমি কখন বললাম বিয়ে হবে না?”

সবাই ঘুরে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।ফারাজ স্মিত হেসে বলে,”আপনি বলেছেন এটা তো বলিনি।বলেছি হয়তো বিয়ে হবে না।”

এই লোকের সাথে কথায় পারবে না শ্রেয়া।এটা সে বুঝতে পারলো।হাত বাড়িয়ে মিমিকে বলে,”আমাকে কনের আসরে বসাবে না মিমি?”

খুশিতে খুশিতে মিমি চলে গেলো শ্রেয়ার কাছে।ফারাজ নিজে থেকেই বসলো তার আসনে।মিমি শ্রেয়াকে বসিয়ে দিতেই শ্রেয়া মিমিকে তার কোলে নিলো।বিয়ে পড়ানো শুরু হলো।ফারাজ ও শ্রেয়া একে অপরকে ইসলামিক ও আইনি দুইভাবেই আপন করে নিলো।আজ থেকে তারা স্বামী স্ত্রী।সবাই আনন্দ করতে থাকলো।অর্পা এসে মিষ্টি খাইয়ে দিলো সবাইকে।শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরলো অর্পা।আজ থেকে ওরা দুই বান্ধবী দুই জা হয়ে গেলো।

মাত্রই অহনার গাড়ি এসে থামলো চৌধুরী বাড়ির সামনে।গাড়ি থেকে নেমে অহনার মুখের হাসিটা নিভে গেলো।দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে শ্রেয়াকে কোলে করে গৃহপ্রবেশ করছে ফারাজ।মিমি তাদের পাশেই দাড়িয়ে।উৎফুল্ল মনে হাততালি দিচ্ছে মিমি।লাল বেনারসি পরে মিমিকে গিন্নি গিন্নি দেখা যাচ্ছে।একটু আগেই ওরা পৌঁছালো।মিরাজ আর অর্পার অনুরোধে শ্রেয়াকে কোলে করে গৃহপ্রবেশ করানো।অহনার নাক মুখ ঢাকা শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে।সেই চোখ দিয়ে ঝরছে পানি।নিজের হাতে কবর দিয়েছে এই পরিবারের থেকে পাওয়া সুখ।আজ সেই পরিবারকে নতুনরূপে সুখে দেখছে।শ্রেয়ার মুখ দেখে অবাক অহনা।যার সংসার ভেঙেছিল সে আজ তারই সংসারে নতুনরূপে গড়ে উঠলো।এটাই নিয়তি এটাই প্রকৃতির প্রতিশোধ।গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবে ঠিক তখন কেউ একজন হাত ধরে অহনার।অহনা তাকিয়ে দেখলো অহিকে।অহি অহনাকে এক কোনায় এনে দার করায়।মুখ থেকে নিকাব খুলে বলে,”আমার অহনা।”

আজ আর অভিমান করে নেই অহনা।কান্না করে দেয়।অহির হাত ধরে কান্নারত কণ্ঠে বলে,”মা।”

ভুল কিছু শুনলো মনে হলো অহির কাছে।বলে,”কি বললি?আবার বল।”

“মা।”

জড়িয়ে ধরলো অহনাকে।কতগুলো বছর এভাবে মা ডাক ভালোবেসে শোনেনি অহি।শোনার মতো কিছুই তো সে করতে পারেনি।অহি বলে,”এখানে দাড়িয়ে কেনো?ভিতরে চল।”

অহি অহনার হাত ধরে নিয়ে যেতেই অহনা বাধা দেয়।বলে,”এখন কি আমার যাওয়া শোভা পায় মা?”

“কেনো শোভা পাবে না?তুই কি কারো ক্ষতি করতে এসেছিস?তুই তোর অধিকার নিয়ে আসবি।”

“যেই অধিকার জন্ম থেকেই পাইনি ওই অধিকার আমার না মা।আর যে অধিকার আমাকে দেওয়া হয়েছিলো আমি সেই অধিকার নিজে থেকে হারিয়েছি।এখন কোন অধিকারের কথা বলছো তুমি?”

“তুই আমার মেয়ে হয়ে থাকবি।তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ এখনও আছে।আমি তোকে ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে দিবো।”

“আমার ভবিষ্যৎ কি জানি না তবে আমি এখন অনেক ভালো আছি।তোমার বান্ধবী মানে নাজমা আন্টি আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমাকে স্নেহ করে মা।”

“আমি জানি তো।আমি খোঁজ নেই ওর কাছে।কিন্তু এই কয়েকদিন আমার সাথে ও কথা বলে না।তোর বিষয়ে জানাও হয়না।”

“আমি জানতাম না তো।যেদিন জেনেছি তুমি আন্টিকে বলে আমাকে ওই বাড়িতে রেখেছো ওইদিন আমি নিজেই আন্টিকে বলেছিলাম তোমাকে না জানাতে।আন্টির কাছে অনুরোধ করেছি জোর করে তাই তিনি তোমাকে কল দেয়নি।”

আসলে এই কয়দিন ব্যাস্ত ছিল মিসেস নাজমা।অহনার জন্য হসপিটালে তিনিও থেকেছিলেন।এই কয়দিনে না পেরেছে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পেরেছে ঠিকভাবে খেতে।

“এত অভিমান তোর মায়ের উপর!হবেই না কেনো?মা যে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।মা যে তার মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারেনি।”

“শুধু তুমি না মা।মুখ ফুটে তাও এটা বলতে পারব আমার মা আমাকে ভালোবেসে আত্মত্যাগ করেছে কিন্তু আমি তো আমার বিষয়ে এটাও বলতে পারব না।আমি তো পুরোপুরি ব্যার্থ মা হয়ে গেছি।”

“মেয়েকে ভালোবাসতে চাস কি?”

“হ্যাঁ মা।আমি এখন মিমিকে একটু ভালোবাসতে চাই।জানি না কেনো হঠাৎ আমার মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মালো।হয়তো আমার পরিবর্তন আমাকে এই অনুভূতি জাগিয়েছে।নাহলে আমি কেনো মিমির জন্য এতটা পথ ছুটে আসলাম?”

“ডেকে দিবো মিমিকে?”

“আজকে না মা।আজকে ওর আনন্দের দিন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মা হয়ে কখনও যেই আনন্দ দেইনি আজ সেই আনন্দ কেড়ে নেই কিভাবে?তুমি ওকে নিয়ে অন্যদিন এসো শাহ বাড়িতে।আমি ওর পছন্দের খাবার রান্না করবো।ওকে বলে দিও ওর মা পাল্টে গেছে।ওর জন্য রান্না করে দিবে।”

“আচ্ছা মা তাই হবে।আমি তোর মেয়েকে নিয়ে যাব তোর কাছে।”

“আসি এখন মা।”

মাথা নাড়ালো অহি।গাড়িতে উঠে বসলো অহনা।বোরকা পরার কারণে অহনাকে টাক দেখা গেলো না।নাহলে বুঝতে পারত অহনা এখন কেমন আছে।

শ্রেয়া বাসায় আসাতে খুশি হয়নি জিনিয়া।এটা সবার জানা কথা।ফারহান চৌধুরী এসে জিনিয়ার সামনে দাড়িয়ে বলেন,”বউমার গহনাগুলো দেও।”

“আমি পারবো না।”

“কেনো পারবে না?”

“এই মেয়েকে আমার পছন্দ না।”

জিনিয়ার কথার বিপরীতে মিরাজ বলে,”এই জন্যই তো তোমাকে আল্লাহ মহিলা বানিয়েছে।জাতে শ্রেয়াকে বিয়ে করতে না হয়।তোমার পরিবর্তে তোমার ছেলে বিয়ে করেছে।এখন এসব বাদ দিয়ে দাদু যার জন্য যে গহনা বানিয়েছিলো তাকে ওগুলোই দেও।”

জিনিয়া চোখ রাঙ্গালো।বাড়ির একটা পুরুষও তার মনের মতো না।স্বামী আর দুইটা ছেলে দুজনেই যেনো তার বিপরীতে।মিরাজকে উদ্দেশ্য করে ফারাজ বলে,”মা যদি গহনা দিতে না চায় আমার সমস্যা নেই।আমি আমার বউকে নতুন গহনা বানিয়ে দিতে পারি।সেটুকু ক্ষমতা আমার আছে।গহনা লাগবে না ওনার।আমি ওনাকে কিছুদিন পরই নতুন গহনা এনে দিবো।খুশি তো আপনি?”

শেষ কথাটি শ্রেয়াকে উদ্যেশ্য করে বলে।হাসি মুখে মাথা নাড়ালো শ্রেয়া।কিন্তু থেমে থাকলেন না ফারহান চৌধুরী।জিনিয়ার কাছে এসে বলেন,”তুমি উঠতে বললে আমি উঠি তুমি বসতে বললে আমি বসি।এর মানে এটা না যে আমি সব অন্যায় মেনে নিবো।স্বামী হয়ে স্ত্রীর কথা শুনি কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবো না।ফারাজের বউয়ের জন্য মা যেগুলো গড়ে গেছে ওগুলো ওকেই দিবে।”

জিনিয়া প্রতিক্রিয়া না করে স্বামীর কথামত গহনা আনলেন।শ্রেয়ার সামনে এসে গয়নার বাক্স খুললো।বিদ্রুপের হাসি হেসে জিনিয়া বলে,”সতীনের ব্যাবহার করা গহনা পরবে তুমি!তোমার ভাগ্যটা খারাপ।”

গয়নার বাক্সে থাকা বড় গলার হার নিজের হাতে নিয়ে দেখলো শ্রেয়া।অতঃপর জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”সতীন তো নেই।শুধু যে সতীনের ব্যাবহার করা জিনিস আমি পাচ্ছি এমন না।আমার স্বামীর দেওয়া ভালোবাসা ও আরো গহনা আমি পাবো ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও এখন গহনা গড়ার ক্ষমতা রাখি।শুধু বেশি অহংকার দেখানোর ইচ্ছাশক্তি রাখি না।”

শ্রেয়ার কথা শুনে রাগ বাড়লো জিনিয়ার।অর্পা দেখছে শাশুড়ি বউমার এই চোখে চোখে যুদ্ধ।মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলো।শ্রেয়া আগে এমন ছিলো না।এখন যা হয়েছে তাতে করে একটা কুরুক্ষেত্র বাজবে বলে মনে হয়।

চলবে…?