আশার হাত বাড়ায় পর্ব-৬+৭

0
232

#আশার_হাত_বাড়ায় |৬|
#ইশরাত_জাহান
🦋
নতুন টিনের বাড়ির সামনে হাজির হলো শ্রেয়া ও অর্পা।গাড়ি থেকে নামতেই শ্রেয়ার কোলে দৌড়ে আসে ধরে মিমি।শ্রেয়া একটু ব্যালেন্স হারা হয়ে যায়।কিন্তু মিমিকে দেখে আগলে নেয়।অর্পা মিমির হাত ধরে বলে,”ও মিমি। বড় ভাইয়ের মেয়ে।”

বলেই অর্পা মিমিকে বলে,”তোমার কাকাই কোথায়?”

মিমির কোলে একটি পুতুল ছিলো।ওটা কোমরে ধরে বলে,”কাকাই আমাকে দিয়ে চলে গেছে।কিন্তু এই আণ্টি আমাকে চিনেনি?তোমার বিয়েতে তো আমাকে দেখেছিলো।গেটের সামনে দড়ি ধরে দাড়িয়েছিলো টাকার জন্য।পাপা টাকা দিয়েছিলো বলেই তো আণ্টি আমাদের ঢুকতে দেয় তাহলে চিনলো না কেনো?”

মিমির কাছে এসে নিচু হয়ে বসে শ্রেয়া।মিমির দুই গালে হাত রেখে আদর করতে থাকে।অর্পা বলে,”আমার বিয়ের সময় তো কেউ ছিলো না আনন্দ করার।তোমার আন্টিকে তো আমার মা জোর করে পাঠিয়েছিলো।ও তো শুধু নিয়ম রক্ষার্থে দাড়িয়েছিলো।যে লাজুক মেয়ে তোমার আণ্টি কারো দিকে তাকায় না।হয়তো তাই খেয়াল করেনি।”

শ্রেয়া মিমির দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলে আমি তো শুধু দাড়িয়ে ছিলাম।কথা বলছিলো বাকিরা।প্রায় দুই বছর আগের কথা আমার তো মনে নেই।কিন্তু তুমি মনে রেখেছো?”

মিমি এবার নিচের ঠোঁটটা উচু করে বলে,”কেনো মনে রাখবো না?আমি প্রতিদিন প্রোটিন খাই। আর তখন তো আমার বয়স পাঁচ বছর ছিলো।”

হেসে দেয় শ্রেয়া।এইটুকু মেয়ে পাকা পাকা কথা বলে।অর্পার দিকে তাকিয়ে বলে,”মিষ্টি একটা মেয়ে।তোর বিয়েতে যে কেনো ওর দিকে খেয়াল করলাম না!তাহলে ওকে নিয়েই বিয়েতে মজা করতাম।বোরিং হয়ে এক পাশে বসে থাকতাম না।”

চোখ ছোট ছোট করে অর্পা বলে,”তোর এই ভীতু লাজুক স্বভাবের জন্যই তো সমস্যা।আচ্ছা চল তোর ঘর গুছিয়ে দেই।তারপর তো অফিসে যাবি।”

মাথা নাড়িয়ে মিমিকে নিয়ে ভিতরের দিকে গেলো শ্রেয়া।সবকিছু গুছিয়ে অফিসের জন্য রওনা হয়।মিমি আর অর্পা চলে যায় বাসায়।

আজ রুবিনা আর তার মেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ।সকালের নাস্তা কোনো রকমে বানালো তারা।দুপুরের জন্য অনলাইনের খাবার অর্ডার দিলেও রুবিনা বাইরের খাবার খেতে পারবে না।রনি আজ অফিসে যায়নি।সোফায় বসে আছে চুপ করে।এখন ফার্নিচার অর্ডার দিতে হবে।ঘর মোছা ও থালাবাটি ধোয়ার কাজ করছে রুহি আর রুমা।ঘণ্টা দুই ধরেও ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।অথচ শ্রেয়া থাকলে এই কাজগুলো এক ঘণ্টার ভিতরেই হয়ে যায়।আর কাজগুলো ঠিকভাবে করতে না পারলে রুবিনা এসে বলতো,”কি করো সারাদিন?কোনো কাজই তো তোমার মা শেখায়নি।”

আজকে রুবিনা দেখছে রুহি আর রুমাকে।এতদিন উনি পরের মেয়েকে কথা শুনালেও আজ তিনি নিজের মেয়েদের দেখে চুপ আছে।রুহি না পেরে ঘর মোছা নেকড়া হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে,”এই তিনটা ঘর একটা রান্নাঘর আবার বড় একটা ডাইনিং রুম এগুলো মোছা কি মুখের কথা?আমি পারবো না এতগুলো ঘর মুছতে।অলরেডি আমি ঘর ঝাড়ু দিয়েছি।এখন আবার মুছতে মুছতে হাত ব্যাথা করছে।”

রুমা থালাবাটিগুলো সাবানের ফেনাসহ রেখে দেয় সিংকে।তারপর বলে,”সেই ধরে এই চারপাশে লেগে থাকা ময়লা ওঠাতে বসেছি।উঠছে না তো।তুমি কিভাবে আটা সিদ্ধ করেছো যে হারি ধুতে পারছি না?”

শেষ কথাটি রুবিনাকে বলে।রুবিনা আজ রুটি বানিয়েছিলো। আটা সিদ্ধ দিয়ে রুটি বানানোর জন্য কিছু আটা হাঁড়িতে লেগে আছে।এগুলোতে পানি দিতে ভুলে যাওয়ার কারণে আটা শুকিয়ে শক্ত হয়।কিন্তু কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখলেই ধোয়া যাবে।সেই ধৈর্য তো রুমার নেই।সে এখনই অধৈর্য হয়ে বসে আছে।রুবিনা এবার চেঁচিয়ে বলে,”নবাবজাদি তো ওই মেয়ে না নবাবজাদি হয়েছো তোমরা।একটা কাজ করতে এত কথা শুনিয়ে দেও।শশুর বাড়িতে গেলে কি করবে?”

মায়ের বকা শুনে ভয়তে কাজে মন দিল রুহি আর রুমা।রনিকে ফোন টিপতে দেখে রুবিনা বলে,”ওকে আটকালি না কেনো?”

সোফায় হেলান দিয়ে রনি বলে,”আপদ বিদায় হয়েছে ভালোই হয়েছে।বড়লোক ঘরের মেয়ে পেয়েছি তার উপরে সুন্দরী।অনেক টাকার মালিক ওরা।এখন ওকেই ঘরের বউ করে আনবো।”

চোখ ছোট ছোট করে তাকালো রুবিনা।রনির দিকে তাকিয়ে বলে,”বড়লোক বাড়ির মেয়ে আনবি মানে?তুই জানিস ওদের পিছনে কত খরচ থাকে।আরে এই মেয়েকে তো তাও দমিয়ে রাখতাম।কোন জমিদারের মেয়ে এসে সহ্য করবে এই সংসার?ঘটের বুদ্ধি কি বেচে দিয়েছিস?শ্রেয়া মেয়েটাকে জব্দ করে রাখলেও ওরা মুখ খোলে না কিন্তু আলালের ঘরে দুলালী আসলে ওরা মাথায় চড়ে বসে।”

মুখে চ শব্দ করে বিরক্ত প্রকাশ করে রনি।রুবিনার দিকে তাকিয়ে বলে,”এমন কিছু হবে না।মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে।তাছাড়া মেয়েটার নিজেরও আরেকটা সংসার আছে।ওখান থেকেই আমার কাছে ফিরে আসবে।”

মুখে হাত দিলো রুবিনা।চোখদুটো বড় বড় করে বলে,”তুই অন্যের বউ ভাগাইছিস?”

রুবিনার চিৎকারে হাজির হয় রুহি আর রুমা।রনি ওদেরকে দেখে বলে,”তোরা যা তো তোদের কাজে।”

রুবিনা এবার রনিকে দাবর দিয়ে বলে,”ওদের কথা রাখ।তুই বল তুই পরের বউয়ের সাথে প্রেম করিস। ছি ছি ছি মান সম্মান থাকবে না আমাদের।কি সুন্দর অবিবাহিত কর্মঠ মেয়ে আনলাম সেই থুয়ে তুই বেচে নিলি এক বিবাহিতা।”

ফোনটা টেবিলের উপর রেখে রনি বলে,”আরে মা তুমি বুঝছো না।মেয়েটা ওর স্বামীর সাথে সুখী না। আর মেয়েটা ওর স্বামীর থেকে অনেক টাকা উশুল করেছে।আমরা বিয়ে করলে ওই সব আমাদের হবে।মেয়ের টাকা সম্পত্তির মালিক আমরা হবো।এত চিন্তা করো না তো।”

বড়লোক টাকাওয়ালী শুনে খুশি হলো রুহি আর রুমা।ওরা লাফিয়ে বলে ওঠে,”আজকাল বিবাহিত অবিবাহিত মেয়ে কেউ দেখে নাকি?ভাইয়া কাউকে ভালোবেসেছে।আমাদের উচিত নতুন ভাবীকে মেনে নেওয়া।তুমি না করনা মা।”

সন্তানদের কথায় চুপ হয়ে যায় রুবিনা।মনের মধ্যে খচখচ করছে তার।কোন বিপদ আসতে চলেছে বুঝতে পারছে না সে।তবে বিপদ যে একটা আসবে এটা তার মন বলছে।

অফিসে এসে সব কাজ শিখে নিলো শ্রেয়া।পুরনো ফাইল সম্পর্কে ফারাজ তাকে বুঝিয়ে দিলো।এছাড়া কর্মচারী থেকে দেখে নিলো কোথায় কি আছে।নিজের কেবিনে এসে বসতেই শ্রেয়ার আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে।নিজস্ব একটা পরিচয় তৈরি হতে চলেছে তার।টেবিলের উপর ল্যাপটপ রাখা আরো কিছু ফাইল।ফারাজ দিয়েছে এই ফাইলগুলো।পুরনো কিছু ফাইল চেক করে অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে।ল্যাপটপে অফিসিয়াল ফ্যাশন সম্পর্কে কিছু ডিটেইলস আছে।যেগুলো দেখতে থাকে শ্রেয়া।এভাবে চলতে চলতে দুপুর হয়ে যায়।এখন লাঞ্চ টাইম।শ্রেয়া বুঝতে পারছে না এখন খাবে কি না।খুদা লেগেছে খুব।অফিস সম্পর্কে অবগত না শ্রেয়া।আশেপাশে তাকাতে থাকে।দেখতে থাকে কাউকে পাওয়া যায় কি না।কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শ্রেয়ার চোখ গেলো থাই গ্লাসের পাশে।শ্রেয়ার কেবিন আর ফারাজের কেবিন পাশাপাশি মাঝখানে থাই গ্লাস দেওয়া।শ্রেয়ার কাছে কিছুটা ইতস্তত লাগতে থাকে।আশেপাশে কোনো মেয়ে থাকলে এমনটা লাগতো না।ফারাজ একজন যুবক।এর থেকে কোনো সাহায্য চাওয়া যায় না।কিন্তু বস হিসেবে তো তাদের কেবিন পাশাপাশি হবে এটাই স্বাভাবিক।ফারাজ এক ধেনে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে।তাকাচ্ছে না কোনদিকে।শ্রেয়ার এতেই সুবিধা বেশি।হঠাৎ শ্রেয়ার কেবিনে হাজির হয় এনি।মিষ্টি হেসে এনি বলে,”আসতে পারি?”

শ্রেয়া এনিকে দেখে একটু শান্তি পেলো।মুখে শোভনীয়তা বজায় রেখে বলে,”হ্যা আসুন ম্যাম।”

ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে এনি বলে,”ওহ মাই লেডি।ডোন্ট কল মি ম্যাম।অনলি এনি,ওকে?”

ঠোঁটটা একটু হা হয়ে গেলো শ্রেয়ার।মায়ের বয়সী মহিলা কি বলছে এসব শ্রেয়ার মাথায় আসছে না।ওনাকে নাম ধরে ডাকতে বলছে। কাল অবশ্য ফারাজকেও নাম ধরে ডাকতে শুনেছে।প্রায় মানুষই তাকে এনি বলে ডাকে।শ্রেয়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে এনি হেসে দেয়।বলে,”আই এম নট সো ওল্ডি।জাস্ট বয়সের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।মনটা তোমাদের মতই ফ্রেন্ডলি।এই কোম্পানির সবাই আমাকে এনি বলে ডাকে। আর এটাই আমার ভালোবাসা।”

শ্রেয়া চুপ করে শুনলো কথাগুলো।যদিও বড়লোকি ফ্রেন্ডলি বিহেভ বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে শ্রেয়ার।কিন্তু এনির ব্যাবহার অসাধারণ।শ্রেয়া মুখে মিষ্টি হাসি বজায় রেখেছে।এনি এবার বলে ওঠে,”এখন লাঞ্চ টাইম।আমি শিওর তোমার খুদা লেগেছে। এম আই রাইট?”

লজ্জায় পড়ে গেলো শ্রেয়া।খুদা তো লেগেছে কিন্তু বলতে লজ্জা লাগছে তার।এটাই স্বাভাবিক।মুখ ফুটে কোনো কথা শ্রেয়া বলতে পারে না।এনি শ্রেয়ার চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুক্ষণ।তারপর বলে,”আজকে তুমি আমার সাথে লাঞ্চ করবে।আমি ক্যান্টিনের সবকিছু তোমাকে চিনিয়ে দিবো।এমনিতেও আমরা কোম্পানির টিম মেম্বার্স মিলে লাঞ্চে অনেক মজা করি।প্রথম দিন তাই তুমি ভয় পাচ্ছো।কিন্তু এই ফ্যাশন হাউজকে আমরা বন্ধু মহল ভেবে কাজ করি।তুমিও আজ আমাদের এই বন্ধু মহলের অংশ হয়ে গেছো। জড়তা ভাব কাটিয়ে আমাদের সাথে ইনজয় করবে,আসো।”

বলেই চেয়ার থেকে ওঠে এনি।শ্রেয়া নিজেও ওঠে। ফারাজের কেবিনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”স্যার তো এখনও খায়নি।উনি খাবেন না?”

এনি তাকালো ফারাজের দিকে।তারপর শ্রেয়ার দিকে ফিরে বলে,”হ্যান্ডসামের ছোট মেয়ে আছে। আই থিঙ্ক তুমি জানো যেহেতু তোমরা পরিচিত।”

শ্রেয়া মাথা নাড়ালো। যার অর্থ হ্যা।এনি বলে,”মিমিকে ছাড়া হ্যান্ডসাম কিছু খায় না।মিমি একটু পর স্কুল থেকে আসবে।তারপর বাবা মেয়ে মিলে লাঞ্চ করবে।মিমি আগে আগে আসলে হ্যান্ডসাম আমাদের সাথেই খেতো।আজ হয়তো জ্যামে আটকে আছে মিমি।তাই আমাদের লাঞ্চ করে নিতে বললো।”

“ওহ,মিমি আসলে আমরা একসাথে খাই তাহলে?”

“তুমি আজকে অনেক কাজ করেছো।বাসায় যেয়েও অনেক কাজ তোমার।শুনলাম সকালে খাওনি।তাই আসো খেয়ে নিবে।”

এনির কথাতে না করতে পারলো না শ্রেয়া।আসলেই সে সকালে না খেয়ে ছিলো।এখন দুপুর দুইটা বাজে।এভাবে চললে দুর্বল হয়ে যাবে।তাই চলে গেলো এনির সাথে খেতে।

শ্রেয়াকে চলে যেতে দেখলো ফারাজ।পাশে থাকা ফোন হাতে নিয়ে মিরাজকে ম্যাসেজ দিলো,”তোর বউকে বল তার বান্ধবী খেতে গেছে।বান্ধবীকে নিয়ে টেনশন না করতে।”

ভাইয়ের ম্যাসেজ পেয়ে হাসলো মিরাজ।অর্পা পাশেই বসে আছে।মিরাজকে হাসতে দেখে প্রশ্ন করে,”এভাবে হাসছো কেনো?”

অর্পার ডান হাত টেনে মিরাজ তার কাছে এনে বলে,”বান্ধবী দেখেছি তোমার মত না।কতটা চিন্তা করো তুমি শ্রেয়াকে নিয়ে।এই যে ভাইয়া এখন ম্যাসেজ দিলো শ্রেয়া খেতে গেছে।তোমাকে চিন্তা করতে না করেছে।তোমার এই বান্ধবীর প্রতি ভালোবাসা সবাই বুঝে যায়।”

মিরাজের বুকে মাথা রেখে অর্পা বলে,”শ্রেয়া আমার ছোটবেলার বান্ধবী।স্কুল জীবন থেকে একসাথে পড়ালেখা করেছি।আমরা একজন আরেকজন ছাড়া আমাদের কোনো বন্ধু বান্ধবী ছিলো না।যেদিন জানলাম আমাদের বাসা পাশাপাশি আণ্টি আমার হাতে শ্রেয়ার হাত দিয়ে বলে,তোমরা দুই বান্ধবী একসাথে যাওয়া আসা করবা।আমরা বিকাল বেলা একসাথে মিলে খেলাধুলা করতাম।তারপর হলো রিমলি।ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর শ্রেয়া কত দুষ্টুমি করতাম।আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবা আরেক বিয়ে করে।তখন শ্রেয়া আমাকে ওর কাছে রেখে দেয়।আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট করে।বাবা আমাকে পরে নিয়ে আসে।কিন্তু সৎ মায়ের ব্যাবহারে কষ্ট পেলে শ্রেয়া আমাকে ওর কাছে আগলে রাখতো।আংকেল আণ্টি কখনও আমাকে অবহেলা করেনি।বরং শ্রেয়া ও রিমলির মত আমাকেও ভালোবেসেছে।আমাকেও সমানভাবে খেতে দিয়েছ। ঈদের সময় বাবা সৎ মাকে জামা কাপড় আগে এনে দিতো।ওদিকে শ্রেয়া জামা নিলে আমাকেও একই রকম জামা এনে দিতো।বুদ্ধিমতি শ্রেয়া ওই সময় নিজের জন্য কম টাকায় জামা নিতো। যাতে আমিও এক সেট পাই।আমাকে দিতে হলে তো আংকেলের খরচ বাড়বে।আন্টির হাতের কাজ অনেক সুন্দর।শ্রেয়ার জন্য জামা বানাতো নিজের হাতে।শ্রেয়া তখন আন্টির থেকে আমার জন্যও এক সেট বানিয়ে রাখতো।শুধু তাই না আমার পরীক্ষার খরচ মাঝে মাঝে ওই দিয়েছিলো।আমার বাবা যে আমাকে দেখে রাখেনি এটা ভুল কথা।কিন্তু ঘরে সৎ মা আসাতে বাবার আগের ভালোবাসাটা আর ছিলো না।যেগুলো শ্রেয়া আর ওর পরিবার দিয়েছিলো।আমি দিনে রাতে কিভাবে চলছি এগুলো খোঁজ নেওয়ার সময় আর বাবা পেতো না।হয়তো শ্রেয়া না থাকলে আমি এতটা হাসিখুশি জীবন পেতাম না।হয়তো বা অযত্নে আমি খারাপ কিছুও হতে পারতাম।যেখানে শ্রেয়া আমার ছোটবেলার ঢাল ছিলো তার প্রতি ভালোবাসা আসবে না কেনো বলো তো?ওরকম বন্ধুত্ব কি ভুলে থাকা যায়?আমিও তেমন পারিনি।আমিও শ্রেয়ার ঢাল হয়ে থাকতে চাই এখন।ওর মুখে হাসি দেখতে চাই যেমনটা ও দেখতে চাইতো আমার মুখে হাসি।”

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায় |৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শ্রেয়াকে নিয়ে অতীতে চলে যায় অর্পা।যেই অতীতে অর্পার কিছু কষ্টের মুহূর্ত থাকে।মা হারা অর্পার খারাপ সময়টা।পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে চোখ থেকে পানি পড়ছে অর্পার।মিরাজ তার বুকে ঠান্ডা অনুভব করলো।শার্ট ভিজে এসেছে তার।অর্পাকে উঠিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলো মিরাজ।অর্পার ললাটে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে বলে,”তোমার অতীত ভেবে কষ্ট পাবে না।অতীতে তোমার ভালোবাসা শুধু শ্রেয়া থাকলেও এখন তোমার ভালোবাসা আমি আছি এই পরিবার আছে।কিন্তু আমাকে ভালোবাসার কেউ নেই।”

শেষের কথাটি মিরাজ মুখ ফুলিয়ে বলে।অর্পা হেসে দেয় মিরাজের এমন মুখ ফোলানো দেখে।মিরাজের মুখের দুই পাশ হাত দিয়ে টিপে দেয়।তারপর বলে,”হিংসুটে বর আমার।”

“হিংসুটে হবো না?বউ সারাক্ষণ এদিক ওদিক নিয়ে ভাবে।আমাকে নিয়ে ভাবেই না।”

“আস্ত আমিটাই তো তোমার আছি।ভাববো আর কি?”

বলেই মিরাজকে আলিঙ্গন করে অর্পা।শ্রেয়ার লাঞ্চ শেষ।এখন সে তার কেবিনে ঢুকবে।এনি চলে গেছে নিজের কাজে।শ্রেয়া একা একা আসতে থাকে কেবিনের দিকে।হঠাৎ পাশে থাকা একটি ডিসপ্লে ডলের হাতের সাথে শ্রেয়ার ওড়না লেগে যায়।শ্রেয়া বুঝে উঠতে পারে না।হাঁটতে যেয়ে ডিসপ্লে ডল পড়ে যেতে নিলে শ্রেয়া একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে ধরে রাখে।পাশে থাকা একটি মেয়ে দৌড়ে আসে সাথে সাথে।ডিসপ্লে ডল উঠিয়ে শ্রেয়াকে ঝাড়ি দিয়ে বলে,”দেখে শুনে চলতে পারো না।তুমি জানো এই একটা ডিসপ্লে ডলের দাম কত? আর এই লাক্সারি ড্রেস এটার দাম মার্কেটে এখন হাই রেঞ্জে।যদি ড্রেসটির কিছু হতো পারতে ক্ষতিপূরণ দিতে?”

ঘাবড়ে যায় শ্রেয়া।মেয়েটির কথাগুলোতে মাথা নিচু করে আছে।আরেকটি মেয়ে দৌড়ে এসে বলে,”আর ইউ ক্রেজি লিজা!এই মেয়ে কিভাবে ড্রেস প্রাইজ সম্পর্কে আইডিয়া রাখবে।এই মেয়ে নিজেই তো সুইটেবল না। আই ডোন্ট নো স্যার কি দেখে একে কাজে নিয়েছে তবে যার ভিতরে নিজস্ব ফ্যাশন নেই সে কিভাবে ফ্যাশন হাউজে কাজ পায় আমার মাথায় আসছে না।”

মেয়েটির কথাতে হেসে দেয় লিজা। তাল মিলিয়ে বলে,”ইউ আর রাইট ইভা।এই মেয়ে নিজেই তো আনকালচারাল।নরমাল কাপড়ের সালোয়ার কামিজ পরে এসেছে। মাথাটা দেখো কিভাবে নিচু করে রেখেছে।এই মেয়েকে কাজে নিয়ে কোম্পানির ফ্যাশনকে অপমান ছাড়া কিছুই করা হলো না।”

চোখ ভিজে আসতে থাকে শ্রেয়ার।মেয়ে দুটোর দিকে তাকালো শ্রেয়া।দুজনেই শার্ট কোর্ট পরে আছে।পায়ের জুতোটাও দামী।খুব বেশি না সাজলেও নিজেদেরকে পারফেক্ট ফ্যাশনের সাথে বজায় রেখেছে এরা।শ্রেয়া চুপ করে ওদের কথাগুলো হজম করতে থাকে।ঠিক তখন পিছন থেকে ভেসে আসে,”কেউ কিছু না জানলে তাকে শিখিয়ে দিতে হয়।এটা তোমরা জানো না?”

সবাই পিছনে তাকালো।দেখতে পেলো স্কুল ড্রেস পরে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে মিমি। হাত দুটো ব্যাগের দুই পাশে ধরে আছে।মুখে রাগ স্পষ্ট।কোম্পানির সিইওর মেয়ে বলে সবাই চুপ হয়ে গেলো।মিমি এবার শ্রেয়ার পাশে এসে দাড়ালো।কিছু বলতে যাবে তখনই ফারাজ আসে নিজের কেবিন থেকে।ড্রাইভারের কল পেয়েছে সে।মিমিকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েই কল দেয় ফারাজকে।বাইরে এসে মিমিকে রাগ করতে দেখে বলে,”কি হয়েছে?”

মিমি এবার ফারাজের কাছে এসে বলে,”এনি তো বলেছিলো কোম্পানিতে সবাই বন্ধু হয়ে থাকে।তাহলে ওরা কেনো বকাঝকা করছে?বন্ধু কি একে বলে?”

ফারাজ এগিয়ে এলো শ্রেয়া ও মেয়েগুলোর দিকে। ইভা আগ বাড়িয়ে বলে ওঠে,”আসলে স্যার এই মেয়েটি ডিসপ্লে ডল ফেলে দেয়। লাকিলি লিজা ধরে নেয় ডল।এটা তো আমাদের স্পেশাল ব্রাইডাল ড্রেস।”

আর কিছু বলতে না দিয়ে ফারাজ বলে ওঠে,”আমাদের কোম্পানির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন ভুলে গেছেন মিস লিজা?যদি ভুলে যান তাহলে আবার মনে করিয়ে দেই।এখানে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী না বরং বন্ধু হয়ে কাজ করি।এই কোম্পানির ছোট থেকে বড় পজিশনে সবাই একটা টিম।একজন পুরোনো মেম্বার হয়ে আপনাদের মাথায় রাখা উচিত ছিলো এই কোম্পানির রুলস নিয়ে।উনি কোনো ক্ষতি করলে তার ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আছি।আমাদের কাছে এটা নিয়ে ডিসকাস করা উচিত ছিলো।”

মিমি এবার বলে ওঠে,”আমি দেখেছি আণ্টির ওড়না লাগার সাথে সাথে যখন পড়ে যাবে তখন আণ্টি ডলটা ধরে নেয়।তাহলে কিভাবে ওই আণ্টি এসে ঠিক করলো?ডল তো পড়েই নি।উল্টো তোমরা ভালোভাবে না বুঝিয়ে বাজে ব্যাবহার করেছো।”

মেয়ে দুটোর মুখ এবার শুকিয়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলতে থাকে ভয়তে।মিমি নিজেই শ্রেয়ার উইটনেস।ফারাজ মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,”অফিসের রুলসের বাইরে চলা আমি এলাউ করব না।এখানে কেউ কাউকে অপমান নয় মিলেমিশে থাকবে। আর হ্যাঁ!প্রপার ফ্যাশন সম্পর্কে কেউই আগে থেকে অবগত থাকে না। আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করতে হয়।উনি এখন ট্রেনিংয়ে আছে।এই এক সপ্তাহ ট্রেনিংয়ের পর বোঝা যাবে উনি সুইটেবল কিনা।”

বলেই মিমিকে নিয়ে ক্যান্টিনে যেতে নেয় ফারাজ।কিছুদূর হেঁটে পিছনে ঘুরে দাড়ালো ফারাজ।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”দোষ ওদের যেমন ছিলো দোষ আপনারও আছে।নিজেকে সামলে রাখতে শিখুন।এটা বাচ্চাদের স্কুল নয় যে হাতে কলমে সব শিখিয়ে দিতে হবে।এখানে আপনাকে সবকিছু দ্রুত গতিতে ক্যাপচার করে নিতে হবে।বি কেয়ারফুল।”

বলেই চলে গেলো ফারাজ।ফারাজের হাত ধরে হাঁটতে থাকে মিমি।শ্রেয়া ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ মিমি হাঁটতে হাঁটতে পিছনে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া নিজেও তাকিয়ে আছে মিমির দিকে।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি দিলো মিমি।এটা দেখে শ্রেয়া হেসে দেয়।তারপর চলে আসে নিজের কেবিনে।কেবিনে বসতেই শ্রেয়ার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে।ফোনটি নিয়ে শ্রেয়া দেখতে থাকে ম্যাসেজটি।রিমলি করেছে ম্যাসেজ।লেখা আছে,”মা সব জেনে গেছে।তোমার শাশুড়ি মাকে কল করে জানিয়েছে।মা আমাকে বারবার বলছে তোমাকে কল করতে।আমি মিথ্যা বলেছি যে ফোনে নেটওয়ার্ক নেই।বেশিক্ষণ এক মিথ্যা বললে ধরা পড়বো।তাই তুমি কল রিসিভ করবে না।আমি আলাদাভাবে কল দেওয়ার আগে তোমাকে ম্যাসেজ দিবো।এখন মা রেগে আছে।উল্টা পাল্টা কথা শুনিয়ে দিবে তোমাকে।আমি চাই না তুমি এসব শুনো।”

ম্যাসেজটি পড়ে দীর্ঘশ্বাস নিলো শ্রেয়া।ছোট্ট করে লিখে দিলো,”আচ্ছা।”

তারপর আবার ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে শ্রেয়া।লাঞ্চ শেষ করে মিমিকে নিয়ে এসেছে ফারাজ।ফারাজ তার নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে আর মিমি নিজের মতো বসে বসে আশেপাশে দেখছে তো আবার নিজের পুতুল নিয়ে খেলছে।হঠাৎ মিমির চোখ যায় শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়াকে দেখে মিমি ফারাজের কাছে আসে। ফারাজের কাছে এসে বলে,”আমি ওই আন্টির কাছে যাই?”

ফারাজ একবার শ্রেয়াকে দেখে নিলো।তারপর মিমির দিকে তাকিয়ে বলে,”বিরক্ত করবে না কিন্তু আন্টিকে।”

“আচ্ছা।”
বলেই পুতুল হাতে দৌড় দেয় মিমি।শ্রেয়ার কেবিনে এসে নক করে বলে,”মে আই কাম ইন?”

মিমিকে দেখে শ্রেয়া খুশি হয়ে বলে,”হ্যাঁ,আসো।”

মিমি দৌড়ে আসে শ্রেয়ার কাছে।এসেই শুরু করে দেয় গল্প।খুব বেশি বিরক্ত মিমি করেনা।মিমি শুধু বসে বসে কাজগুলো দেখতে থাকে আর সেগুলো নিয়েই প্রশ্ন করে।

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রনি।ঘরে খাট নেই।তাই সে খাট আর ড্রেসিং টেবিল কিনতে গেছিলো।কিন্তু এর জন্য ব্যাংক থেকে টাকা নিতে গেলে দেখতে পায় ব্যাংক একাউন্ট লক করা।ওদিকে অফিস থেকে বলে দিয়েছে তার চাকরি আর নেই।রনি বুঝতে পারছে না এতকিছু একসাথে কেনো হচ্ছে তার সাথে।রুবিনা এসে ছেলের পাশে বসে আছে।শান্তনা দিতে থাকে রনিকে।যেহেতু রনির চাকরি নেই আবার ব্যাংক লক তাই রুবিনা বলে,”আজ থেকে তুই আমার ঘরে ঘুমা।আমি রুহি আর রুমার ঘরে ঘুমাচ্ছি।চাকরি পেলে তারপর নাহয় জিনিসপত্র কিনবি।”

মায়ের থেকে শান্তনা পেয়ে একটু ভালো লাগলো রনির। কাল থেকে আবার চাকরির অ্যাপ্লাই করতে হবে।ফোন হাতে নিয়ে দেখছে কোথায় কোথায় সার্কুলার দেওয়া আছে।

হাতে কলম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর শ্রেয়াকে ভালোভাবে পরখ করছে মিসেস তানহা।উনি একজন ডিভোর্স স্পেশালিস্ট। মোটা গোলগোল চশমা চোখে শ্রেয়াকে দেখে নিয়ে বলে,”ডিভোর্স দেওয়ার কারণ?”

একটু ভয় পায় শ্রেয়া।উকিলের সামনে বসে কথা বলছে এই প্রথম।তারপরও সাহস যুগিয়ে বলে,”এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার।”

“হাসব্যান্ড এর?”

“হুম।”

“ফিরিয়ে আনতে পারলে না কেনো?পরকীয়া করলেই স্বামীকে ছেড়ে দিতে হবে।অধিকার জিনিসটা দেখাও না কেনো?”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে শ্রেয়া আস্তে সুরে বলে,”কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু কারো মনটাই হারিয়ে গেলে তাকে জলজ্যান্ত পাওয়া গেলেও অধিকার পাওয়া যায় না।”

“হুম বুঝলাম।তো কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

শ্রেয়া ফুল হাতার সালোয়ার কামিজ পরা ছিলো।জামার হাতা উচু করে দেখিয়ে দিলো মিসেস তানহাকে।পুরে যাওয়া হাত দেখে মুখটা কুঁচকে এলো তার।মায়া হলো শ্রেয়ার উপর।ডিভোর্স স্পেশালিস্ট হিসেবে মিসেস তানহা চেয়েছিলো শ্রেয়াকে কিছু টিপস দিবে।সংসার ধরে রাখার জন্য।কিন্তু শ্রেয়ার হাতের এই অবস্থা দেখে তার মুখ থেকেই বেড় হয়,”জা নো য়া র।”

বিদ্রুপের হাসি হাসলো শ্রেয়া। তানহার দিকে তাকিয়ে বলে,”এটা কম আরো দেখতে চান?”

বলেই শ্রেয়া ঘুরে দাড়ালো।গলা থেকে চুলগুলো সরিয়ে দেখিয়ে দিলো তানহাকে। চার পাচটা বেল্টের আঘাতের দাগ।যা এখন কালো হয়ে আছে।শ্রেয়া এবার চেয়ারে বসে বলে,”এরকম আরো অহরহ গোপন প্রমাণ আছে।তাছাড়া স্ট্রং এভিডেন্স আমি সাথে রেখেছি।”

তানহা এবার বিনাবাক্যে বলে,”তোমার আর তোমার হাসব্যান্ডের ফুল ডিটেইলস দিবে। আর হ্যাঁ যেহেতু এখানে তোমার দোষ নেই তাই ডিভোর্সের জন্য তুমি কিছু ডিজার্ভ করো তার থেকে।আই থিঙ্ক তুমি বুঝতে পারছো।তুমি কি আদায় করে নিতে চাও নাকি এমনিতেই ছার দিবে?”

“অবশ্যই আমি আমার কাবিনের টাকা চাই।ওরা আমার মৃত বাবার জমানো অনেক টাকা খেয়েছে।বিয়ের সময় মা এতকিছু দিয়েছিলো তারপরও তারা আমার মায়ের থেকে অনেক টাকা নিয়েছে।আমি না করলেও মা দিয়ে দিতো।যেটা কাবিনের থেকেও বেশি।আর ওদের প্রতি দয়া দেখাতে গেলে শুধু আমি না প্রতিটি নারী জাতিকে হারিয়ে দেওয়া হবে।”

“ওকে,তাহলে তুমি ডিটেইলস দেও।আমি পেপার রেডি করে তোমাকে ইনফর্ম করবো।”

“জি ম্যাম।”
বলেই শ্রেয়া তার আর রনির সম্পর্কে বলতে থাকে।রনির পরিচয় পেয়ে মিসেস তানহার ভ্রু কুঁচকে যায়।পাশে থাকা ল্যাপটপ থেকে কিছু ডকুমেন্ট দেখতে থাকে।তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি তোমার প্রতি অন্যায়ের বিচার পাবে।”

একটু অবাক হলেও শ্রেয়া বলে,”আমি তো আমার অন্যায়ের বিচার চাইতেই এসেছি।”

“অপেক্ষা করো আর নিজের সফলতার জন্য এগিয়ে যাও।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ ডিভোর্স পেপার আমি তাড়াতাড়ি রেডি রাখবো।এই কেসে বেশি দেরি করা যাবে না।”

এবার আর শ্রেয়া প্রশ্ন না করে পারলো না।বলে ওঠে,”আপনি এতটা শিওর নিয়ে বলছেন কিভাবে?”

মিসেস তানহা এবার হেসে দেয়।হাসি থামিয়ে বলে,”আমরা তো উকিল।আমাদের নজর খুব তীক্ষ্ণ।আর চারপাশের খোঁজ খবর নেওয়াটাও আমাদের কাজ।হয়তো অন্য কোনো কারণে জানতে পেরেছি।কিন্তু যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে এটা শিওর তুমি বেশিদিন এই ঝামেলায় থাকবে না।খুব তাড়াতাড়ি তোমার সমস্যার সমাধান হবে।”

“কিন্তু কিভাবে?”

“বেশি কিছু তো বলা যাবে না।এই কেসের কিছুটা ইনফরমেশন আগে পেয়েছিলাম।কিন্তু এটা অন্যের ব্যাপার।যেটা কাউকে শেয়ার করার রাইট আমাদের নেই।”

“ওহ,ওকে ম্যাম।তাহলে আমি আসি।”

“ওকে, বাই।”

বেড় হয়ে গেলো শ্রেয়া।মিসেস তানহা দেখলেন শ্রেয়ার যাওয়া।এখন তার নেক্সট ক্লায়েন্ট দেখতে হবে।এটাই তার কাজ।নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে প্রতিনিয়ত একের পর এক ক্লায়েন্ট দেখা।

রাস্তার পাশ দিয়ে দেওয়াল ঘেসে হাঁটছে শ্রেয়া।মাথায় তার অনেক চিন্তা।প্রথম চিন্তা এগুলো সৃষ্টি বেগমকে বলবে কিভাবে।তারপর ভাবছে জীবনটা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে।সে অফিসের কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারবে তো।এরকম আরো ভিন্ন কথা মাথায় ঘুরছে।হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা কাচা বাজারের দিকে আসে শ্রেয়া।প্রয়োজনীয় সবজি নিয়ে বাসায় আসে।রান্না করতে হবে এখন তার।একা একা খেতে বসাটাও যেনো আরেক অলসতা।এতদিন পাঁচজনের রান্না করতো।আজ সে একার রান্না করবে।কিন্তু মন তার ওই শশুর বাড়িতে আছে।মনে মনে ভাবছে ওরা এখন অনেক কষ্টে আছে।সবথেকে বেশি অসুবিধা রুবিনার।তিনি না খেয়ে থাকতে পারে না আর বাইরের খাবার তো মোটে খায় না।রনির মুখটা যখন কল্পনা করে তখন খুব কান্না পেলো শ্রেয়ার।হাজার হোক দেড় বছর সংসার করেছিলো শ্রেয়া।

চলবে…?