#আষাঢ়িয়া_প্রেম 💓
লেখনিতে #মিমি_মুসকান
#পর্ব_৭
ফাহাদের মা তৃণলতা বেগম এবার খুব হাঁপিয়ে উঠলেন। বড় ছেলের বউটা ফোন হাতে ছুটে এলো। তারা ফোন রিসিভ করেছে। জানিয়ে ফোনটা তুলে দিলেন শাশুড়ির হাতে। শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছে তৃণলতা বেগম ফোন হাতে নিলেন। ওপাশে মুরশিদা বেগম কে বললেন,
“জি রওনা দিয়েছেন আপনারা?”
“হ্যাঁ,এই দিব। কিন্তু আপা ফারজানা কে কি সত্যিই নিয়ে আসব?”
“হ্যাঁ, আপা নিয়ে আসুন। নিজে এসে শ্বশুড় বাড়ি দেখে যাবে।”
“কিন্তু মানুষজন কি বলবে? মেয়ে যাবে ছেলে দেখতে?”
তৃণলতা বেগম হেসে উঠলেন। চোখের চশমা ঠিক করে বললেন, “আপনারা ব্যাপারটা যত বড় করে দেখছেন এটা আসলেও তেমন বড় নয়। মেয়ে হয়ে ছেলে বাড়ি যাওয়া তো দো*ষের কিছু না। আর আমার এখানে আত্মীয়র অভাব নেই। মোটে ২৫ জন। তারা সবাই এখন মেয়ে দেখতে চায়। আমি কি পারি বলুন এতো মানুষ কে আপনাদের বাড়িয়ে নিয়ে যেতে? আমার নিজেরই তো শরম লাগবে। কিন্তু ব্যাপার আসলে এটাও না। আমার শাশুড়ি চাইছেন ফারজানা কে দেখতে। তিনি অসু*স্থ মানুষ। নড়াচড়া তেমন করতে পারেন না। আর আজ আপনারাও আসছেন ফাহাদকে দেখতে। তাই ভাবলাম ওকেও নিয়ে আসুন। আমার শাশুড়ি দেখুক, বুঝতেই তো পারছেন মুরব্বি মানুষ।”
“না না আপা। তিনি নাতবউ দেখতে চাইলে দেখবেন এটাতে আমি তো আর কিছু বলতে পারি না। আচ্ছা আমরা ফারজানা কে নিয়েই আসছি।”
“জি আসুন। সকলে মিলে আসবেন। ওর নানা আর মামাকে কিন্তু নিয়েই আসবেন। বিয়ের একটা কথাবার্তা যখন হবে সবাই থাকলে বেশিই ভালো।”
“জি আমরা আসছি। রওনা দিলাম মাত্র।”
“আচ্ছা। এখানে এসে ফোন করবেন ফাহাদ গিয়ে নিয়ে আসবে!”
অতঃপর ফোন কেটে ছেলে বউয়ের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “দেখলি জ্বা*লা। ওর জন্য কতো মি*থ্যা কথা বলতে হয় আমার। অসু*স্থ মানুষটাকে নিয়েও এখন মিথ্যা* অজুহাত দিলাম।”
ভাবী মুখ টিপে হেসে দেওয়রের দিকে তাকাল। ফাহাদ এতোক্ষণ মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে ছিল। ভাবী চোখ ফিরতেই ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল। ভাবী হেসে বললেন, “আসছে গো আসছে। বাব্বাহ, তোমার ছেলের তো দেখি তর সইছে না মা!”
ফাহাদ মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে এলো। খুশিতে মাথার চুল হাতড়ে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়াল। তার বাড়িতে আজ উৎসব। বড় চাচা,মেঝো চাচা আর ছোট চাচা এসেছেন। তাদের মধ্যে বসা দাদি। তারা অসুস্থ দাদির শরীরের অবস্থা জিজ্ঞেস করছেন। ফাহাদের বাবা দাঁড়িয়ে পাশে। এদিকে তার কাজিন সব। মোট হিসাব করবে ১২ জন। একেকজন চাচার ৩ জন করে ছেলেমেয়ে। চাচিরা সব রান্নাঘরে মায়ের সাথে গল্প করছে। হ্যাঁ কারণ খাবার রান্না হচ্ছে নিচে বাড়ির সামনে ডেকে করে। এতো মানুষের রান্না ঘরে করা মুখের কথা না। ও বাড়ি থেকেও ১৫ কি ২০ জন মানুষ তো আসবেই।
কাজিন কয়েকজন মিলে খেলছে ক্যারাম বোর্ড। আরো কয়েকজন লুডু। মেয়ের ফোনের ক্যামেরা ধরে ঢং করছে। এদের মধ্যে দুইজনের বিয়ে কমপ্লিট। ফাহাদের ছোট হয়েও এই কাজ তারা আগে করে ফেলেছে। একজন হচ্ছে হিমু অন্যজন হচ্ছে নাদিম। এছাড়া তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের কাজিনদের মধ্যে এই তিনজনের কেবল বিয়ে হয়েছে। হুমাইরা ফাহাদ কে দেখে হাত ধরে টেনে এসে বসাল তাদের মাঝে। ঝুমুর, নুপুর, হুমাইরা আর সুমাইয়া একসাথে ঘিরে ধরল। পেছন থেকে এসে ঘাড়ে হাত রাখল নাজিম আর সুফিয়ান। এরা প্রায় সবাই সমবয়সী। ওই ৩ কি ৪ বছরের ছোট বড়। অবশ্য সকলে একসাথে হলে বয়স ফ্যাক্ট না। কে বড় কে ছোট কেউ দেখছে না। কাজিনদের মধ্যে অসম্ভব রকমের মিল। যেকোনো উৎসবে তারা একসাথে হবেই হবে। এবার তাদের পারিবারিক দ্ব*ন্দ্ব যতই থাকুক না কেন? উৎসব অনুষ্ঠানে একত্র না হয়ে তারা থাকতে পারে না। এটা তাদের দাদির আদেশ।
সুফিয়ান তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ভাবী কি আসছে?”
“আসলেই দেখতে পাবি।”
নাজিম বলল,“না ভাই একটা ছবি তো দেখাতেই পারো।”
“আমার কাছে কোনো ছবি নেই তো।”
হুমাইরা বলল, “না ভাই তুমি মি*থ্যে বলছো।”
“বিশ্বাস না হলে মা কে জিজ্ঞেস কর।”
সুমাইয়া তার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ইশ আমার ভাই কি বড় হয়ে গেলো। এখন মেয়ে দেখতে আসছে আর দুদিন পরেই বিয়ে।”
নুপুর এদের সবাইকে সরিয়ে বলল, “ভাইয়া দেখ দেখ এই লেহেঙ্গা কিনে দিবে আমায় গায়ে হলুদে। এটা পড়েই আমি তোমার গায়ে হলুদে আমি নাচবো।”
“আমি কিনে দিব?”
ঝুমুর বলল, “আমায় একটা কিনে দিতে হবে!”
তার সবচেয়ে ছোট কাজিন যার বয়স কি-না দশ বছর সেও উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমায় ও শাড়ি কিনে দিতে হবে।”
“তুই শাড়ি পরবি?”
নাদিরা ফাহাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “আমায়ও একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে ভাইয়া।”
“আমি কেন কিনে দিব?”
“কেন? বড় ভাইয়া ও কিনে দিয়েছিলো। ভাইয়ার বিয়ের সময়!”
নিরীহ ফাহাদ বোনদের চাপে পড়ে হ্যাঁ বলতে বাধ্য হলো। তখনি এসে ভাইগুলো এসে চেপে ধরল। ওদের ওতো চাপ নেই। সবার একরকম পাঞ্জাবী হলেই তারা খুশি। ফাহাদ মাথা নাড়ল কেবল। সবশেষে শুভ এসে কোলে বসে বলল, চাচ্চু আমায় একটা কিনে নিবে!”
“কি কিনে দিব?”
“শাড়ি।”
“শাড়ি! তুই শাড়ি পরবি?”
শুভ জিহ্ব কেটে বলল, না না তো?”
নাদিরা তার গাল টেনে বলল, “ঠিক আছে তোকে একটা শাড়ি পরিয়ে বউ বানিয়ে দিব। চাচীর পিছন পিছন ঘুরবি তখন!”
শুভ মুখ ফুলিয়ে বলল, না না আমি শাড়ি পরব না। আমি তো ছেলে। চাচ্চু।”
তাতে কি? ওরা কেউ ছাড়ল না মজা করতে। ফাহাদ সকলকে সামলে নিল। হয়েছে হয়েছে, ও ভুলে বলেছে। তবুও শুভ ছাড়া পেলো না তাদের থেকে।
ঠিক ঘণ্টাখানেক পর ফোন পেয়ে তারা বেরুল। ফাহাদ, সুফিয়ান, নাজিম আর নাদিম। এরা সকলে বেরিয়েছে বাইক নিয়ে। চার রাস্তার মোড়ে সাদা রঙের মাইক্রো দুটো গাড়ি দেখে বাইক থামাল তারা। গাড়ি থেকে ফারজানার বাবা, বড় মামা আর বড় চাচা বেরিয়ে কথা বলতে লাগলেন ফাহাদের সাথে। ফারজানা উঁকি মারছে গাড়ির ভেতর থেকে। তার সাথে তার সবগুলো কাজিন। কিন্তু সবগুলোই পুচকে। ফারজানা উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছে। সামনে বড় চাচা দাঁড়ানো বলে দেখতে পেলো না। অবশ্যই পেলো। সাদা রঙের পাজামা পাঞ্জাবী পরা লোকটাকে দেখে এক সেকেন্ডের জন্য তার নেতা বলে মনে হলো। ভাবসাব তো ঠিক তেমন। মনে হচ্ছে কোনো নেতা। বাইকে চড়ে বসে হেলমেট মাথায় পরে এদিক ফিরতেই যেন চোখের দেখা হলো দুজন দুজনার। ফারজানা চট করে চোখের আড়াল হয়ে সোজা হয়ে বসল। গাড়ি চলছে ফের। তার হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ছে গাড়ির তালে তালে। ওদের বাইক অনুসরণ করছে গাড়ি দুটো। এদিকে ফারজানা অন্য ভাবনায় মুশকিল। আজ ও নিজেও তো সাদা রঙের সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে। মিলল কি করে? আসার আগেই তো ফাহাদ সাহেব একবার ফোন করেছিলো। জিজ্ঞেস ও করেছিল কি পরে আসছো। তবে কি লোকটা?
ভাবতে পেয়েই শরীরে অদ্ভুত শিহরণ জাগল। লজ্জা*য় রক্তিম হয়ে উঠল মুখখান। ইশ, ও বাড়ির লোকগুলো কি ভাববে?
#চলবে…