#সূচনা_পর্ব
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#Jhorna_Islam
বিয়ের আসর ছেড়ে ইমার্জেন্সি রোগীকে দেখতে গিয়ে থমকে যায় ডা. আষাঢ় এহমাদ । রোগীর বেডে শুয়ে থাকা ব্যাক্তি আর কেউ নয় পাঁচ বছর আগে তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা।
আষাঢ় দৌড়ে বেডের পাশে বসে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। আষাঢ়ের মাথা থেকে বের হয়ে যায় সে এখন কোথায় আছে। ছোট বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে শুধু কেঁদে চলেছে আর মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে একটাই কথা উচ্চারণ করছে আমার চাঁপাফুল, আমার চাঁপাফুল।
এমন কান্না আহাজারি দেখে হাসপাতালের নার্স ডাক্তার অন্যান্য কয়েকজন ছুটে আসে দেখতে কি হয়েছে। নার্স ডাক্তাররা বেশ অবাক হয় তাদের ডাক্তারকে এমন ভাবে কান্না করতে দেখে। কারো মাথায়ই ঢুকছে না এমন করে কেন কান্না করছে। সকলেই এটা বুঝতে পারছে বেডের উপর নিস্তেজ হয়ে পরে থাকা মেয়েটি তাদের ডাক্তার সাহেবের কাছের কেউ উহুু শুধু কাছের না খুব কাছের কেউ নয়তো এমন করে একটি ছেলে কখনো কান্না করবে না।
আষাঢ় মুখে হাত দিয়ে এখনও কাঁদছে তবে এখন শব্দ হচ্ছে না কিন্তু দুই হাতের কুনুই বেয়ে আষাঢ়ের শ্রাবণ ধারা বয়ে চলেছে অবিরত।
এরমধ্যে পিছন থেকে কেউ একজন আষাঢ়ের কাঁধে হাত রাখে।আষাঢ় মুখ থেকে হাত সরিয়ে পিছনের দিকে তাকায়। পিছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে আষাঢ় উঠে দাঁড়ায়। চোখের পানি মুছে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়।
পেশেন্ট কে ইনজেকশন দিয়ে আমার সাথে আসুন ডা. এহমাদ কথা আছে আপনার সাথে। তারপর নার্স কে ইশারা করে বলে,,,আষাঢ়ের দিকে ইনজেকশন টা এগিয়ে দিতে। নার্স ইনজেকশন এগিয়ে দিতেই আষাঢ় ইনজেকশন হাতে তুলে নেয়।
ইনজেকশন হাতে নিয়ে তার ভালোবাসার চাঁপাফুলের দিকে একবার তাকায়। মনে পরে যায় অতীতে বলা কথা,,,,,,, “শোনো আষাঢ় তুমি যখন অনেক বড় ডাক্তার হয়ে যাবে ভুলেও আমার সাথে ডাক্তারগিরি করতে আসবে না।আর আমাকে ইনজেকশন দেওয়ার কথা স্বপ্নে ও ভাববে না। ইউ নো না আমার ইনজেকশনে ভয়াবহ ফোবিয়া আছে। মনে থাকবে?
আষাঢ় তখন হাসতে হাসতে বলেছিলো আমিতো ঠিক করে রেখেছি সকাল বিকাল রাত্রি তোমাকে ইনজেকশন দিবো ভয়াবহ ইনজেকশন।
“মোটেও না তাহলে তোমাকে আমি খু/ ন ই করে ফেলবো।” ডাক্তারগিরি অন্যর সাথে দেখাও আর ইনজেকশন ও অন্য কাউকে দাও গিয়ে।
—- ” এটা যে সে ইনজেকশন নয় চাঁপাফুল ভালোবাসার ইনজেকশন। তুমি চাও আমি তা অন্য কে দেই? চাইলে দিবো, আই হেভ নো প্রবলেম আমার চাঁপাফুলের চাওয়া বলে কথা।
—- আষাঢ়ঢ়ঢ়ঢ়ঢ়!!!!
ডা. এহমাদ? ডা. রুমানের ডাকে আষাঢ় ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে। তার চাঁপাফুলের হাতটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাতে নেয়।
কতো বছর? কতো মাস? কতো দিন? কতো ঘন্টা? কতো সেকেন্ড পর তার চাঁপাফুল কে ছুঁয়েছে সে।কিন্তু আগের মতো তার চাঁপাফুল লজ্জায় লাল হয়ে যায়নি বা কোনো প্রতিক্রিয়া ও করেনি। অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা হাতে ইনজেকশন পুশ করে হাতে। আবারও এক ফোঁটা পানি টুপ করে তার চাঁপাফুলের হাতে গিয়ে পরে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স বেশ অবাক হয় এই ডাক্তারের বেকগ্রাউন্ড জেনেছে সে ভালো মতো। মাত্র কয়েকদিন আগে নতুন জয়েন করলেও এই কয়দিনে বুঝেছে এই ডাক্তারের পার্সোনালিটি বেশ স্ট্রং। এটা বুঝতে পারছে নিজের কাছের আপন লোকের কাছে বড় বড় স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ ও দূর্বল হয়ে যায়। আচ্ছা মেয়ে টা কি স্যারের বউ নাকি প্রেমিকা? কিন্তু কানা ঘুসায় শুনেছে আজকে ডা. আষাঢ় কয়েক ঘন্টার জন্য ছুটি নিয়েছিল কারণ আজ নাকি তার বিয়ে? তাহলে মেয়ে টা কিছুই বুঝতে পারলো না সব যেনো গোলক ধাঁধাঁর মতো। মেয়েটা আসলে কি হয় এটাই ভাবতে থাকে নার্সটা।
ডা. আষাঢ় প্লিজ কাম উইথ মি বলেই ডা. রুমান প্রস্থান করেন। নিজেকে সামলে আষাঢ় ও পা বাড়ায় ডা. রুমানের সাথে যাওয়ার আগে চাঁপাফুলের দিকে তাকাতে ভুলে না।
— আমি জানি না ডা.আষাঢ় আপনার কি হয়েছে। মেয়ে টা আপনার কি হয় আর আপনি কেনই বা এমন করে কাঁদছেন। আমি আপনার পার্সোনাল বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও করতে চাই না। তবে এই যে বিছানায় মরার মতো পরে আছে মেয়েটাকে সেই প্রথম থেকে তার চিকিৎসা করছি আমি। মেয়েটাকে নিজের মেয়ে ভেবে নিয়েছি আমি,, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আমাকে বদলি হয়ে যেতে হচ্ছে। অবশ্য ট্রান্সফারটা আমি নিজেই নিয়েছি পারিবারিক কারণে।
আজ আপনার বিয়ে আমি জানি। রিসেপশন থেকে আপনাকে কল করা হয়েছে দোলনের অবস্থার অবনতি দেখে। আসলে ওর দায়িত্ব তো এখন আপনার উপর তাই। আর আমিও উপস্থিত ছিলাম না আমার এই হসপিটালের সব ফরমালিটি শেষ শুধু একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছিলাম আর এসে শুনি এই অবস্থা।
ডা. রুমানের কোনো কথা আষাঢ়ের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেছে কি না কে জানে তার মাথায় একটা কথাই ঢুকছে আজ তার বিয়ে।
মনে মনে আষাঢ় আওড়ায় বিয়ে? তাও আবার তার? সেটা ও আবার তার চাঁপাফুলের সাথে নয় অন্য কারো সাথে। ভাবতেই কেমন গা গোলাচ্ছে আষাঢ়ের এটা সে কি করতে যাচ্ছিলো?
অস্ফুট স্বরে মামনি উচ্চারণ করে টেবিলে থাকা একটা গ্লাস হাতে তুলে নেয়। শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে গ্লাসে চাপ দিতেই গ্লাসটা ভেঙে যায়। হাতের ভিতর ভাঙা কাচ ঢুকে গলগল করে রক্ত পরতে থাকে।
**********
আষাঢ় মাস চলছে বর্তমানে চারদিকে মুশলধারায় বৃষ্টি ঝড়ছে। অন্ধকার হয়ে আছে চারদিক। বাইরে লোক সমাগম খুবই কম বৃষ্টির দিনে কে ই বা খুব বেশি দরকার ছাড়া বের হয়?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী পরনে তার লাল রংয়ের বেনারসি শাড়ি। তার সাজ সজ্জা দেখে যে কেউই বলতে পারবে বিয়ের কনে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার হবু বরের জন্য অপেক্ষা করছে।
খুব রাগ হচ্ছে সাইন করার আগেই কেন কলটা আসতে হলো? আর কয়েক মিনিট পর আসলে কি এমন হতো? রাগে বারান্দার লোহার গ্রীল শক্ত করে চেপে ধরে। পরোক্ষনেই মাথায় আসে এটাইতো ডাক্তারদের কাজ। কিন্তু আধা ঘণ্টার কথা বলে দুই ঘন্টা হয়ে গেছে এখনও কেনো লোকটা আসছে না?
অনেক অপেক্ষার পর এই দিনটা তার জীবনে এসেছে আজও কি তাকে অপেক্ষাই করতে হবে?
অপেক্ষা ছাড়া কি কোনো কিছুই পাবে না এই মেঘ?
কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পায় মেঘ। পিছনে ঘুরার প্রয়োজন মনে করলো না মেঘ কারণ জানে সে পিছনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা কে হতে পারে।
—– সময় এখন ও যাচ্ছে না কেন মামনি? এতো অপেক্ষা আর ভালো লাগছে না আমার।
— এতো ধৈর্য হারালে হবে? ভুলে যাচ্ছো হয়তো ডাক্তার কে বিয়ে করতে যাচ্ছো।এরকম প্রায়ই ঘটবে।
— অন্য সময় ঘটুক মেনে নিবো তাই বলে যখন অবশেষে আমার হতে যাচ্ছিল তখনই কেন এমন হতে হলো?
— অপেক্ষা করো তোমার ই হবে সে।
—- অপেক্ষা অপেক্ষা আর অপেক্ষা কিছুটা দাঁত চেপে বলে মেঘ।
রুমি এহমাদ মেঘ কে আর কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। পিছন থেকে মেঘ বলে,,,,মামনি সে আমার হবে তো?
এমন প্রশ্নে রুমি এহমাদ থমকায়। রাস্তার অপর পাশে জোরে বা’জ পরে যার শব্দে মেঘ রুমি এহমাদ
দুইজনই কান চেপে ধরে। মেঘের ভিতরটা ধক করে উঠে অজানা ভয়ে। সবকিছু ঠিক থাকবে তো?
#চলবে?,,,,,,,