আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-০২

0
30

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

দেওয়ালে টাঙানো বড় ঘরির কাটার ঢং ঢং শব্দে জানান দিচ্ছে রাত এখন দুইটা বাজে। বাড়ির প্রতিটি সদস্য নির্ঘুম ড্রয়িংরুমে বসে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা একজন মানুষের যার আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। কাজি সাহেব এবং অতিথিরা রাত দশটার দিকেই বিদায় নিয়েছে।

মি. শ্রাবণ এহমাদ ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে আর ঘরির দিকে বারবার তাকাচ্ছেন। মিসেস রিমি একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে আষাঢ় কে কিন্তু কোনো খবর নেই প্রথমে রিং হলেও এখন বারবার বন্ধ বলছে। হাসপাতালে কল দিয়েছিলেন উনারা জানিয়েছে বিকেলেই আষাঢ় হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেছে। সকলেই বেশ চিন্তিত আষাঢ়ের এমন কান্ডতে।

এদের মধ্যে রোবটের মতো বসে আছে মেঘ। একটুও নড়াচড়া করছে না। মেঘের মা মেঘের দিকে একটু পর পর তাকিয়ে করুন চোখে নিজের বোনের দিকে তাকায়।

সবচেয়ে অসহায় বোধ করছে মিসেস রিমি কল্পনা ও করতে পারছেন না ছেলেটা উনার কথা এভাবে অমান্য করবেন।

ঘড়ির কাটা যখন চারটা ছুঁই ছুঁই তখন গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনতে পান সকলে। গাড়ির শব্দে সকলেই উঠে দাঁড়ায় কিন্তু মেঘ একই ভাবে বসে থাকে।

মিসেস রিমি ও মি. শ্রাবণ এহমাদ দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে আষাঢ় কখন প্রবেশ করবে। আজ ওকে কৈফিয়ত দিতেই হবে এসব তামশা করার মানে কি।সবকিছু নিয়ে ছেলেখেলা চলে না। বিয়ে নামক এমন একটা পবিত্র বন্ধন নিয়ে নাটক কেন করছে সে?

এরমধ্যে ঠাস্ করে একটা শব্দ হয়। শব্দ শুনে বোঝা যায় কাঁচের কোনো কিছু ভেঙেছে।
আষাঢ় প্রবেশ করে ভিতরে নিজের মামনি আর বাবা কে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে।

মিসেস রিমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখতে পায় আষাঢ়ের কপাল দিয়ে রক্ত পরছে কেটে গেছে অনেকখানি।মিসেস রিমি দেখতে গেলে আষাঢ় হাত দিয়ে ছুঁতে ও কিছু না বলতে বলে। তারপর হেলে দুলে ভিতরে কদম বাড়ায়। কিন্তু চলতে পারে না হেলেদুলে পরে যেতে নেয়।

এরমধ্যে শান্ত পরিবেশে ভয়ংকর এক গর্জন ভেসে আসে। মি. শ্রাবণ এহমাদ আষাঢ়ঢ়ঢ়ঢ় বলে হুংকার ছারেন।

আষাঢ় দাঁড়িয়ে যায়।পিছনে ফিরে লাল ফোলা চোখ নিয়ে বাবার দিকে তাকায় চোখের কোণগুলো এখনও ভিজে আছে,, মি. শ্রাবণ এহমাদ বুঝতে পারে ছেলে কান্না করেছে কিন্তু কি কারণে তিনি জানেন না। ছেলের এমন অবস্থা দেখে দূর্বল হতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।

গম্ভীর স্বরে বলে,,,,,,”তুমি নেশা করেছো আষাঢ়?”

— আষাঢ় উত্তর না দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে।

—- আই আস্ক ইউ সামথিং আষাঢ়। তুমি নেশা করেছো?

— হ্যা বাবা নেশা করেছি কিন্তু যে সে নেশা না।এই নেশা জীবনে কাটবে না। সারাজীবন থেকে যাবে এই নেশা। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে জানো কি সেই নেশা বাবা?
মামনি তুমি জানো?

❝চাঁপাফুলের নেশা❞
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা নেশা।

আষাঢ়ের এহেন কথায় ড্রয়িংরুমে থাকা সকলেই থমকায়।মেঘ এবার বসা থেকে উঠে চোখ বড় বড় করে আষাঢ়ের দিকে তাকায়। কারণ আষাঢ় কথাটা আস্তে বললেও সকলেই শুনতে পায়।

মেঘের মা আষাঢ়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,, আষাঢ় তুমি এসব কি বলছো বাবা? আজ না তোমার মেঘের সাথে বিয়ে? আজ হয়নিতো কি হয়েছে কাল হবে। তুমি বড় ফ্রেশ হয়ে বড় একটা ঘুম দাও যাও বাবা।

মেঘের মায়ের কথাকে পাত্তা না দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,,,বিয়ে? বিয়ে মাই ফুট বলেই মেঘের মায়ের হাতটা নিজের কাঁধ থেকে ছিটকে ফেলে দেয়।

মেঘের মা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছেন তিনি। মেঘ মা বলে এগিয়ে এসে মায়ের হাত ধরে।

চাঁপাফুল শুনে মিসেস রিমি ওখানেই থমকে আছে এখনও। মি. শ্রাবণ এহমাদ বলে,,,আষাঢ়?

— হুশশশশ বাবা আমার চাঁপাফুল।
শ্রাবণ এহমাদ বুঝতে পারেন ছেলের মানসিক অবস্থা ভালো না। হয়তো অতীত এসে মাথায় হানা দিয়েছে। ছেলেকে আর তিনি বেশি ঘাটলেন না চোখের ইশারায় রুমে যেতে বললেন।

আষাঢ় হেলতে দুলতে দুলতে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।

মিসেস রিমি আমতা আমতা করে বলে,,,আষাঢ় কি বলল,,? চাঁপাফুল মানে?

মি. শ্রাবণ মিসেস রিমির কথায় পাত্তা না দিয়ে সবাই কে যে যার রুমে যাওয়ার জন্য বলে।

**********
সকাল আটটার দিকে মিসেস রিমি কফি হাতে আষাঢ়ের রুমের দরজায় নক করে। বার কয়েক নক করার পর ও কোনো রেসপন্স পায় না। একটু ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায় মিসেস রিমি ভিতরে প্রবেশ করে আষাঢ়কে কয়েকবার ডাকে কিন্তু কোথাও পায় না। বারান্দা ওয়াশরুম সব খালি। মিসেস রিমি চিন্তিত মন নিয়ে দারোয়ান কে কল করে জানতে চায় আষাঢ় বের হয়েছে কি না।

দারোয়ান জানায় সকাল ছয়টার দিকেই আষাঢ় গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে।

মিসেস রিমির কথা আবার মেঘ আষাঢ়ের রুমের দরজার সামনে থেকে শুনতে পায়।মেঘ আসছিল আষাঢ়ের সাথেই কথা বলতে। মেঘের কেনো যেনো মনে হচ্ছে হাসপাতালেই কিছু একটা রহস্য আছে কারণ আষাঢ় হাসপাতাল যাওয়ার পর থেকেই পাগলামো করছে।মেঘ দৌড়ে রুমে গিয়ে পার্সটা হাতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

*********

” জানো চাঁপাফুল এখন কিন্তু আষাঢ় মাস চলছে। এই মাসটার কথা মনে আছে তোমার?
তুমি বলতে এই বৃষ্টিময় আষাঢ় মাস তোমার আর এই আষাঢ় ও তোমার মনে আছে সেসব? ”

আষাঢ় মস্ত বড়ো এক তোরা দোলনচাঁপা ফুল তার দোলনের বেডের পাশে রাখে। এই দেখো তোমার জন্য কি এনেছি। তোমার আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল।

একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে আষাঢ় কিন্তু বেডে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকা মেয়ে টা কি শুনতে পাচ্ছে? সে তো গভীর ঘুমে ব্যস্ত।

********
— আষাঢ় মাস,, এই আষাঢ় মাস,, আমি কিন্তু চলে যাবো আর ওয়েট করতে পারছি না। তুমি জানো না আমার ওয়েট করতে ভালো লাগে না? তবুও ইচ্ছে করে তুমি অলওয়েজ এমন করো।

— আর কয়েক মিনিট চাঁপাফুল আমি এখনই আসছি, কাছাকাছি এসে গেছি।

আষাঢ় এসে দেখে তার চাঁপাফুল রাগে লাল হয়ে গেছে। আষাঢ় মুচকি হাসে এই মেয়েটার রাগী ফেস এতো কেন ভালো লাগে তার? ইচ্ছে করেই তো এমন করে রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখার জন্য।

দোলন আষাঢ় কে হাসতে দেখে অন্য দিকে হাঁটা ধরে, বুঝতে আর বাকি নেই ইচ্ছে করে লেট করেছে বরাবরের মতো।

আষাঢ় দৌড়ে দোলনের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। পিছন থেকে এক গুচ্ছ দোলনচাঁপা ফুল বাড়িয়ে দেয় দোলনের দিকে এরমধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে দুইজন ভিজে একাকার।

দোলন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।
—” আমার আষাঢ় মাস আর এই আষাঢ় মাস দুটোই খুব জ্বালাচ্ছে আমাকে।

আষাঢ় হেসে দোলেনের হাত ধরে,,, দোলন অভিমানী স্বরে বলে,,, আমি রেগে আছি তোমার উপর আষাঢ় মাস। হাত সরাও আমার হাত থেকে হাত সরাও বলছি বলেই দোলন হাতটা ছাড়িয়ে হাঁটা ধরে আবার।

পিছন থেকে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে সেটা লক্ষ করে না দোলন। আষাঢ় এমন ভাবে গাড়ি আসতে দেখে ভয়ে চিল্লিয়ে উঠে দোলন বলে।

দোলননন,,,, বলে আষাঢ় উঠে যায়।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দোলন শুয়ে আছে। আষাঢ় দোলনের হাতটা ঝাপটে ধরে আছে। কখন যেনো দোলনের হাত ধরে আষাঢ় ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারে নি।

আষাঢ় এতক্ষন অতীতের স্মৃতি স্বপ্নে দেখেছে কিন্তু সেইদিনের মতো আজও খুব ভয় পেয়েছে। আষাঢ়ের পুরো শরীর কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে।

অন্যদিকে রিসেশনে গিয়ে মেঘ জিজ্ঞেস করে বর্তমানে আষাঢ় কোথায় আছে। রিসেশন থেকে জেনে ঐদিকে পা বাড়ায় মেঘ।

আষাঢ় দোলনের হাত ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে এরমধ্যে কেউ একজন দরজায় নক করে।

#চলবে?,,,,,,,,