আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-০৪

0
32

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam

আষাঢ় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, এর ডাবল দিতে পারি আমি চাইলে কিন্তু দিচ্ছি না কেন জানো? তুমি দোলনের খালাতো ভাই তাই বেঁচে গেলে।আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো এটা একটা হসপিটাল আর দোলন অসুস্থ।

আমার দোলাকে নিয়ে এতো ভাবার দরকার নাই তোর। বেরিয়ে যা ক্যাবিন থেকে শুধু ক্যাবিন থেকে কেনো এই হাসপাতাল থেকে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যা বলছি নয়তো তোর খবর আছে।

আষাঢ় সুমনের কথায় হাসে।
সুমন তুই চুপ করে মাথা ঠান্ডা কর এরকম ভাবে মাথা গরম করিস না বাবা।

মা এই লোককে দেখে কি মাথা ঠিক থাকতে পারে? আষাঢ় কে দেখিয়ে বলে সুমন।
তুমি আগে এখান থেকে বের করো তারপর আমি মাথা ঠান্ডা করছি।

আষাঢ় মুচকি হেসে বলে,, আমাকে এখান থেকে বের করে দেওয়ার কোনো রাইট তোমার নেই সুমন আর না পারবে বরং আমি চাইলেই তোমাকে এখান থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি।

— মানে? সুমন জানতে চায়।

— মানে হলো আমি এই হাসপাতালেরই একজন ডাক্তার আর তোমার বোনের চিকিৎসার দায়িত্ব এখন আমার কাছে আর সবচেয়ে বড় একটা কারণ আছে সেটা আপাতত জানাতে চাচ্ছি না।

— মা এসব কি বলছে এই লোক? চিল্লিয়ে বলে সুমন।

— গলা নামিয়ে কথা বলো তোমার জন্য আমার দোলনের কোনো ক্ষতি হবে সেটা আমি মেনে নিবো না।

— মা তুমি চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো। সুমনের মা কি বলবে বুঝতে পারছে না। এখন ও মনের কোণে কেন যেনো আষাঢ়ের জন্য মায়া রয়েছে। কিন্তু ছেলেটা তার মা হারা বোনের মেয়েটার সাথে যা করেছে ভাবলেই মনটা বিষিয়ে যায়।

তুমি কি বলছো আষাঢ়,,,,

আমি ঠিকই বলছি আন্টি। আমিই এখন থেকে দোলনের চিকিৎসার দায়িত্বে আছি। তোমরা কোনো টেনশন করো না আমি দোলন কে খুব তারাতাড়ি সুস্থ করে তুলবো।আমার দোলন আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

দোলনের খালা বলে,,,, এতোকিছুর পরেও তোমাকে কি করে বিশ্বাস করি বলোতো।তোমাকে বিশ্বাস করার মুখ তো রাখলেনা।

আষাঢ় বুঝতে পারছে না সে কি এমন করেছে যার জন্য সুমন এমন করছে। আর আন্টিই বা কেনো তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে এমন কিছুতো করেনি। কি কারণে দোলনের পরিবার এমন বদলে গেলো? কেনই বা আজ তার দোলনের এমন অবস্থা? সে কিছু কেন জানে না তার অজানা অনেক কিছু আছে। আষাঢ়ের অনুপস্থিতিতে যে ভয়াবহ কিছু ঘটে গেছে সেটা সে আন্দাজ করতে পারছে।কিন্তু সেটা কি আষাঢ় কে তা জানতেই হবে। আষাঢ়ের সব প্রশ্নের উত্তর সুমন আর তার মায়ের কাছেই আছে। তাদের থেকেই সব জানতে হবে কি কারণে আজ তার দোলন এভাবে ম’রার মতো পরে আছে।

মা তুমি সব গোছগাছ করো আমি দোলার ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করছি এইখানে আর রাখবো না ওকে।আশেপাশে সব খু’নিরা ঘুরঘুর করছে। আবারও ভালো মানুষের মুখুশ পরে দোলার যতটুকু প্রাণ অবশিষ্ট আছে ঐটুকুও কেড়ে নিবে।

সুমন বলেই আষাঢ় হাত উঠিয়ে চড় দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। এখন রাগলে চলবে না আগে সবকিছু জানতে হবে। সুমনের মায়ের কাছে গিয়ে আষাঢ় বলে,,,আন্টি আমার তোমার সাথে কথা আছে। প্লিজ চলো কোথাও বসে কথা বলি?

— তোর সাথে আমার মা কোনো কথা বলবে না। কি হলো মা গোছাও আজই নিয়ে যাবো।

— বাড়াবাড়ি করো না সুমন। দোলনকে নিয়ে যাওয়ার সাহস ও করো না,,।

— তুই আমাকে বাঁধা দেওয়ার কে? কোন অধিকারেই বা বাঁধা দিবি নিয়ে যেতে?

— আমি কে সেটা তুমি ভালো করেই জানো।আর অধিকারের কথা বলছো? আমার থেকে বেশি অধিকার কারো নেই দোলার উপর কারণ আমি দোলার,,,,,

কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় আষাঢ় কি বলতে যাচ্ছিলো সে? খুব কৌশলে কথা ঘুরিয়ে নেয় আষাঢ়। সুমনের মা কে অনেক করে অনুরোধ করতে থাকে একটা জায়গায় বসে কথা বলার জন্য। অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে সব খোলাসা হওয়া দরকার।

সুমন রাজি না হলেও সুমনের মা কয়েকবার বলার পরই রাজি হয়ে যায়। আষাঢ় কে সুমনের মা খুব পছন্দ করতো। খুব মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিলো তাদের মধ্যে। এমনিতেও দোলনের খালার মনটা খুব নরম তাই বেশি রিকোয়েস্ট করতে হয়নি।

সুমন কথা বলতে রাজি না আষাঢ়ের সাথে। নিজের মায়ের সাথে রাগ করে সুমন বাড়িতে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় দোলাকে সে এখান থেকে নিয়েই ছাড়বে।

*******
একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে দোলনের খালা ও আষাঢ়। আষাঢ় আগ্রহ নিয়ে বসে আছে দোলনের খালার দিকে শোনার জন্য সবকিছু।

দোলনের খালা সবকিছু বলতে থাকে একে একে,,,,,

****
অতীত,,,,,,

সময় টা ছিলো আষাঢ় মাস টানা দশদিন ধরে একাধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
ভার্সিটির বারান্দায় একদল ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে । তাদের গল্প করার মেইন টপিক হচ্ছে এই বৃষ্টিময় আষাঢ় মাস।

একজন বলছে দোস্ত জানিস এই বৃষ্টির মধ্যে ভার্সিটিতে আসতে একদম মন চায় না, এই সময়টা হচ্ছে খিচুড়ি খেয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানো আর নয়তো লুডু খেলতে খেলতে বাদাম খাওয়া।

আরেকজন বলছে,,,আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে,, এই বৃষ্টির মধ্যে কাউকে আছাড় খেতে দেখা। উফফ দোস্ত এটা হচ্ছে সবচেয়ে মজার বিষয়।

অন্যজন ওটার কথা বল বৃষ্টির শেষে কাউকে গাছের নিচে ডেকে নিয়ে গাছে ঝাঁকি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া।

আরেকজন কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাকে সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে,,,,প্লিজ দোস্ত তুই কিছু বলিস না। তোর অ’শ্লীল কথা শুনে আমরা আমাদের কান খারাপ করতে চাই না এই বৃষ্টিমুখর দিনে।

একদল ছেলেগুলোর মধ্যে আষাঢ় নীরব হয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি বৃষ্টির পানি পরে মাঠের মধ্যে ঘাসগুলো ভিজতে থাকায়।

হুট করেই আষাঢ় বলে,,এই চল ফুটবল ম্যাচ হয়ে যাক।

আষাঢ়ের কথায় সকলেই হইহই করে উঠে। তারা একপায়ে রাজি ফুটবল খেলতে।জুনিয়র সিনিয়র খেলা হবে। আজ তারা ক্লাস করবে না। সব আধাঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে মাঠে নেমে যায়।

এরমধ্যে দুইজন মেয়ে গেইট দিয়ে প্রবেশ করে। ছাতা দিয়ে আসলেও মাথা ছাড়া পুরো শরীরই ভিজে একাকার।

আহ্ বৃষ্টি মনটা ভরে যায় বৃষ্টির পানির ছোঁয়া লাগলে শরীরে।মনটা ধুয়ে মুছে ফ্রেশ করে দিয়ে যায় বৃষ্টি এসে। এজন্য এই আষাঢ় মাস আমার এতো প্রিয় বুঝলি আয়শা।

দোলন নিজের দিকে তাকা সব ভিজে চিটচিটে আর রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখিস না? কাঁদায় কি বিচ্ছিরি অবস্থা। এখানে সেখানে পানি জমে থাকে। ছাতা ছাড়া একদম ই বের হওয়া যায় না। আর আছাড় খেয়ে পরলেতো কোনো কথাই নেই কেল্লাফতে হয়ে যাবে।

— যতো যাই হোক তুই ভুলেও বৃষ্টিমুখর দিন নিয়ে মজা করবি না। (দোলন)

— হ্যা বৃষ্টিবিলাসী আমাদের দোলন সাহেবা। আমার কাছে একটা কারণেই শুধু এই মাসটা প্রিয় তা হলো দোলনচাঁপা ফুলের জন্য। আর নয়তো,,,,,

— খবরদার আয়শা তুই ভুলেও বলবিনা সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বল দোলনের দিকেই ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসছে।দুই বান্ধবী বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল,, আষাঢ় বলে লাথি মারতেই দোলনদের দিকে বল ছুটে যায়। দোলন আয়শাকে বলতে চেয়েছিল ভুলেও বলবি না আই হেইট আষাঢ় মাস,,,,
কিন্তু নিজের দিকে বল এগিয়ে আসতে দেখে জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠে,, আই হেইট আষাঢ়। মাস আর বলা হয় না।

#চলবে,,,,,,?