#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam
আষাঢ়ের ফোনে অন্য মেয়ের ছবি দেখে হাত পা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে মেঘের। কেউ যেনো ছু’রি দিয়ে মেঘের বুকে শতো সহস্র আঘাত করছে এমন মনে হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটা অন্য একজনকে ভালোবাসে এটা কি সহজে মেনে নেওয়া যায়? কষ্টের দাবানলে পিষ্ট হচ্ছে নরম কোমল হৃদয়। ফোনটা হাতে নিয়ে মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘ। মেঘের সাথে মেয়েটাকে মিলানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কি এমন আছে মেয়েটার মধ্যে যার দরুন আষাঢ় এহমাদ এমন পাগল হলো। মেঘতো মেয়েটার থেকে সুন্দরী কোনো অংশে কম না বরং একটু বেশি। নিজের ঘরে বিরিয়ানি রেখে বাইরের পান্তা ভাতে কেন নজর পরলো আষাঢ়ের? মেঘের দুই চোখের পানি আষাঢ়ের ফোনের স্ক্রিন ভাসিয়ে দিচ্ছে। মেঘ চোখের পলক ফেলছে না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে আষাঢ়ের ফোনের স্ক্রিনে থাকা দোলনের ছবির দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের পানি পরা বন্ধ হয়ে যায়, এখন চোখে পানির বদলে রাগের আভাস ফুটে ওঠে। রাগে চোখগুলো কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে। মেঘ দাঁতে দাঁত খিঁচে কোনো কিছু না ভেবে এক আছাড় মারে ফোনটা দেওয়ালে। এতো জোরেই মেরেছে যে ফোনটা মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে খন্ড বিখন্ড হয়ে মেঝেতে পরে। এক মুহূর্ত আর দেরি করে না মেঘ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আষাঢ়ের রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আষাঢ় বাথরুমে থেকে কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পায়। রুমের ভিতর কিসের এমন শব্দ হলো তা দেখার জন্য তারাতাড়ি শাওয়ার শেষ করে শরীর না মুছেই টাওয়াল টা কোনো মতে শরীরে পেঁচিয়ে বের হয়ে আসে। রুমে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু দেখতে পায় না। আষাঢ় ভাবলো হয়তো অন্য কোথাও হয়েছে আওয়াজ টা। আয়নার সামনে যেতে থাকে ভেজা চুলগুলো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে। হুট করেই পায়ের নিচে কিছুর অস্তিত্ব পায় আষাঢ় ব্রু কোচকে সেদিকে তাকিয়ে দেখে ফোনের ভাঙা অংশ।আষাঢ় নিচে বসে সেটা হাতে নেয়। দেয়ালের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পায় আরো অংশ সেখানে পরে আছে। আষাঢ় বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ফোনটা যেখানে রেখে গেছে সেখানে নেই। এইবার মাথায় খেলে যায় এটা তারই ফোন। তড়িঘরি করে উঠে রুমের বাইরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে কে এসেছিল রুমে কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। কেউ যে ইচ্ছে করে নিজের সব রাগ ফোনের উপর মিটিয়েছে এটা আর বুঝতে বাকি নেই কিন্তু কে? মাথায় আসছে না কিছু আষাঢ়ের। জোরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকতে থাকে,, ”
মামনি?,,,, মামনি?,,,, মামনি কোথায় তুমি? ”
আষাঢ়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসে মিসেস রিমি।
” কি হয়েছে বাবা? এভাবে ডাকছিস কেন, কিছু হয়েছে নাকি? “.
“আমার রুমে কে এসেছিল একটু আগে? ”
“জানিনা তো আমিতো আমার রুমে ছিলাম। কিন্তু কি হয়েছে বলতো।”
আষাঢ় ফোনের টুকরো গুলো রিমির সামনে ধরে। মিসেস রিমি ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে ফেলে।কে করলো এই কান্ড?
“আমিও তাই জানতে চাইছি কে করলো? কার এতো বড় সাহস আমার রুমে ঢুকে আমারই ফোন ভেঙেছে। ” চোখ মুখ শক্ত করে বলে আষাঢ়।
মিসেস রিমি মনে মনে বলে,,, ” আষাঢ়ের রুমে এসে এমন কান্ড ঘটানোর দুঃসাহসতো কারো নেই। কাজের মেয়ে টা এমনিতেই আষাঢ়কে ভয় পায় বলে এই রুমে আসতে চায় না তেমন।আর এখন তো সে রান্না করছে। দারোয়ান দরকার ছাড়া ভুলেও এই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে না উপরে এসে আষাঢ়ের রুমের ভিতর আসাতো দূর কথা। আষাঢ়ের বাবা ও সেই ভোরে উঠে অফিসে চলে গেছেন।বাকি রইলেন বাড়িতে তিনি আর মেঘ। তিনি নিজেই চার- পাঁচ দিন হবে আষাঢ়ের রুমে ঢুকে না। বাকি রইলো মেঘ।তাহলে কি মেঘ? মেঘকে আষাঢ়ের রুমে অনেক বার আসতে দেখেছেন তিনি আষাঢ়ের অনুপস্থিতিতে। তারমানে এটা মেঘেরই কাজ অন্য কারো না।কিন্তু মেয়েটা এমন ভয়ংকর কাজ কেনো করতে গেলো বুঝতে পারলেন না তিনি। সেসব কথা পরে ভাববেন এখন আষাঢ় কে কি বলে বুঝ দিবেন সেটাই ভাবছেন মিসেস রিমি।
আষাঢ় অনলাইনে ফোন একটা অর্ডার করে দেয় মিসেস রিমি এখন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আষাঢ়ের ভাব ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছে। আষাঢ় মিসেস রিমি কে অবাক করে দিয়ে বলে উঠে,, “বাদ দাও মামনি যা হবার হয়েছে। এতো মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। আমি নতুন ফোন অর্ডার করে দিয়েছি।তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
মিসেস রিমি মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি খুব চিন্তিত উনার ভালো করে চিনা আছে আষাঢ় কে এতো বড় একটা ঘটনার পরে এমন করে চুপ হয়ে যাওয়া মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়।
****
দোলন আষাঢ় কে একের পর এক মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে আষাঢ় সিন ও করছে না রিপ্লাই ও দিচ্ছে না। দিবে কি করে অনলাইনে থাকলে তারপর তো দিবে।রাগ হচ্ছে খুব আষাঢ়ের উপর দোলনের। ছেলেটা এমন কেন করছে।দোলন আষাঢ়ের সিমে কল দেয় কিন্তু এখনও একই অবস্থা নো রেসপন্স। এতক্ষন রাগ হলেও এখন দোলনের টেনশন হচ্ছে। আষাঢ়ের সাথে যোগাযোগ করার এই একটাই মাধ্যম মোবাইল। অন্য কারো থেকে খুঁজ নিবে তার কোনো উপায় নেই কাউকে তেমন করে চিনে না। আষাঢ়ই কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নি।ভার্সিটি ও বন্ধ।
দুই দিন পাড় হয়ে গেছে দেখতে দেখতে কিন্তু আষাঢ়ের কোনো খুঁজ খবর নেই। এই দুইদিনে দোলন আষাঢ় কে অগণিত কল মেসেজ দিয়েছে কিন্তু কোনো রেসপন্স পায়নি। টেনশন হচ্ছে খুব হুট করে লোকটা কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো।খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই হচ্ছে না ঠিক মতো।
বিকেল বেলা দোলন মন খারাপ করে ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছে না। যেই ফোন নিয়ে সারাক্ষণ বসে থাকে। এক মিনিটের জন্য ফোনটা হাত ছাড়া করে না সেই ফোনটাও ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না এখন। সব কেমন বিস্বাদ লাগছে।
আকাশ পাণে তাকিয়ে আছে দোলন।এরমধ্যে ফোনের মধ্যে একটা নোটিফিকেশন আসে।ইচ্ছে না থাকা সত্যেও দেখে কিসের নোটিফিকেশন।
মেসেজ এসেছে ফোনে আষাঢ়ের নাম্বার থেকে। প্রথম ভাবে রাগ করে সিনই করবে না। কিন্তু কতক্ষ? দুই মিনিটই থাকতে পারলো না। মেসেজ পরে দোলন কেমন স্তব্ধ হয়ে যায় হাত পা কাঁপাকাপিঁ শুরু হয়ে গেছে তার। দৌড়ে নিচে নেমে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পিছন থেকে দোলনের খালামনি ডাকছে এখন আবার কোথায় যায়? কিন্তু কে শুনে এই কথা দোলনের কানেও মনে হয় যায়নি। সে তো দৌড়ের মধ্যে আছে আর মাথায় ঘুরছে তার অন্য বিষয়।
****
ফোন ভাঙ্গার রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি।এ ব্যাপারে কেউই কিছু বলেনি আর।আষাঢ় বেশি ঘাটেনি বিষয় টা নিয়ে মিসেস রিমির এটাই ধারণা কিন্তু উনি চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না।উনাকে সবটা ভালো মতো জানতে হবে।
দুই দিন ধরে মেঘ ও রুম থেকে বের হয় না। খাবার নিজের রুমেই খায়।বোনের মেয়ের এসব কান্ডে বেশ হতাশ উনি।মেয়েটা এমন ভাবে থাকলে বোনকে কি জবাব দিবেন।বোন ভরসা করে এই বাড়িতে দিয়েছেন।
দরজায় গিয়ে নক করেন মিসেস রিমি।
ভিতর থেকে কোনো শব্দ সারা পাওয়া যায় না। আবার ও নক করেন, এবার উত্তর আসে,,,”দরজা খোলাই আছে। ”
মিসেস রিমি দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
ভিতরে কেমন থমথমে পরিবেশ মেয়েটা দরজা জানালা লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে কেমন অন্ধকার করে বসে আছে। দিনের বেলা ও মনে হচ্ছে কতো রাত যেনো হয়ে গেছে।
মিসেস রিমি গিয়ে রুমের লাইট জ্বলায়।হুট করে আলো এসে চোখে লাগায় মেঘ চোখ মুখ কোচকে ফেলে।
মিসেস রিমি মেঘের অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়। চোখ মুখের কি অবস্থা মেয়েটার।চুলগুলো সব অগোছালো দেখলে মনে হবে পাগল।
“মেঘ মা?”
মেঘ ঢুলু ঢুলু চোখে মিসেস রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,, “ওহ মামনি?”
“কি হয়েছে তোর একি অবস্থা করেছিস তুই নিজের?”
“আমার সব শেষ হয়ে গেছে মামনি।”
কি শেষ হয়ে গেছে তোর?
ও আমার না।’
কে তোর না? কিসব আবোলতাবোল কথা বলছিস কিছুই বুঝছি না। কি হয়েছে খালামনিকে বলবিতো।
মামনি?
হ্যা বল মা কি হয়েছ আমাকে বল।
“তোমাকে বললে কি হবে তুমি কি আমায় দিতে পারবে? ”
“কি চাই তোর একবার মামনিকে বলে দেখ।”
আষাঢ় আষাঢ় কে আমি ভালোবাসি মামনি।খুব ভালোবাসি।আষাঢ় কে আমায় দিতে পারবে?
তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,, তুমি কি করে তা দিবে আমায়?
” তুই আষাঢ় কে?”
মেঘ মিসেস রিমি কে একটু দূরে ঠেলে দিয়ে বলে,, যাওতো মামনি আমাকে একা থাকতে দাও।একা থাকতে চাই আমি।
মিসেস রিমি মেঘের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি বলছে মেয়েটা। আষাঢ় কে ভালোবাসে? তাহলে উনাকে বললেই হতো এমন পাগলামো কেন করছে? মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যান তিনি।
******
আষাঢ়ের দেওয়া ঠিকানায় এসেছে দোলন মাত্রই। আষাঢ় ঐ সময় দোলনকে একটা ঠিকানা দিয়েছে।
দোলন এসে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে কিন্তু আষাঢ় কেন কোনো মানুষই দেখতে পায় না সে।
হুট করে কেউ একজন দোলনের পিছনে এসে দাঁড়ায়, দোলন ভাবে হয়তো আষাঢ়।
আষাঢ় বলেই দোলন পিছনে তাকিয়ে থমকে যায় দোলন।
#চলবে?,,,,