#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১৫
#Jhorna_Islam
দোলন হিঁচকি তুলে কাঁদছে।দোলনের খালামনি পিঠে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করছে,,, কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কিরে উত্তর দিচ্ছিস না কেন দুলি? কি হয়েছে খালামনিকে বল মা। কেউ কি কিছু বলেছে? সুমন, সুমন কিছু বলেছে তোকে?
–না খালামনি।
“তাহলে কি হয়েছে মা বল আমাকে।”
কিছু হয়নি খালামনি। তারপর নিজের চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,, ঐ মনটা একটু খারাপ ছিলো। এখন ঠিক আছি।টেনশন নিও না।তুমিতো জানো হুটহাট আমার এমন হয়েই থাকে।
দোলনের খালামনি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। টেনশনে পরে গিয়েছিল এই ভেবে কি হয়েছে মেয়েটার। টেনশনে ভুলেই গিয়েছিল মাঝে মধ্যে দোলন এরকম পাগলামি করে থাকে।
দোলনের মাথায় আদুরে হাতের পরশ বুলিয়ে বলে,,, পাগলি মেয়ে আমার। খেতে আয়।
“আচ্ছা তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“আচ্ছা। ” বলেই তিনি বের হয়ে যান।
দোলন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ফোনে রিং হচ্ছে। আষাঢ় কল দিচ্ছে সাইলেন্ট থাকায় খালামনি বুঝেনি। দোলন ফোনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচড অফ করে দেয়। ধরবে না সে এই বা/জে লোকের ফোন। এতো বড় অন্যায় করে এখন আদিখ্যেতা দেখিয়ে কল করা হচ্ছে। দোলন মুখ বাঁকিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
********
আষাঢ়ের সাথে দোলনের প্রায় পনেরো দিন কথা হয় না। দোলন বলে না আষাঢ় অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে কথা বলার জন্য কিন্তু দোলন বলছে না। সেই যে প্রপোজ করার দিন বাইকে কথা হয়েছে তারপর আর হয়নি। আষাঢ় যতোবারই কথা বলতে চেয়েছে দোলন ততোবারই সুন্দর করে এড়িয়ে গেছে। কল দিলে রিসিভ করে না যদিও বা মাঝে মধ্যে রিসিভ করে কিন্তু কোনো রেসপন্স করে না চুপচাপ হয়ে থাকে। এই কয়দিনের ভিতরে দোলনদের বাড়ির সামনে কয়েকশো বার এসেছে আষাঢ়। ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না তাই বাইরে ঘুরঘুর করে। এরমধ্যে দোলনের খালামনির চোখে তিনবার ধরা খেয়েছে উনিতো আর জানতেন না যে আষাঢ় আর দোলনের মধ্যে কিছু চলছে। দোলনের খালামনি আরো জোর করে বাড়িতে এনে নিজে রান্না বান্না করে খাইয়ে আপ্যায়ন করেছে। আষাঢ় অনেক আশা নিয়ে এসেছে হয়তো এইবার দেখা হবে ম্যাডামের রাগ ভাঙাতে পারবে কিন্তু কিসের কি? দোলন সেই যে নিজের রুমে দরজা আঁটকে দিয়ে বসেছে আর খুলেনি। দোলনের খালামনি ডেকেও খুলাতে পারেনি। আষাঢ় দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিরাস হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
এরমধ্যে একদিন শেষ রক্ষা আর হয় না। দোলনের খালামনির কাছে ধরা খেয়ে যায় আষাঢ়। প্রতিদিনের মতো আজও এসেছিল দোলনের রাগ ভাঙাতে। কিন্তু দোলন বের হয় না দেখে আষাঢ় এবার অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করে। দোলনের রুম কোনটা এতোদিনে জানা হয়ে গেছে তার তাই বিল্ডিংয়ের পিছন দিক দিয়ে যায়। ঐখানে গিয়ে দোলনের রুম বরাবর একটা জানালা দেখতে পায়। কিন্তু জানালাটা বন্ধ দেখতে পায়। আষাঢ় এদিক ওদিক খুঁজে ইটের টুকরো পায়।ইটের টুকরো দিয়ে জানালায় ঢিল ছুঁড়ে মারে। দুইবার মারার পরও খুলে না। আষাঢ় মনে মনে ভেবে বলে আর একবার মারবো যদি না খুলে তাহলে ডিরেক্ট বাড়িতে ঢুকে যাবে। দরকার পরলে দোলনের খালামনিকে সব বলবে। এরকম লুকোচুরি মোটেও আর ভালো লাগছে না আষাঢ়ের।মানছে সে রাগের বসে একটা ভুল করেছে তাই বলে এমন করবে। এই মেয়েকে কে বুঝাবে। আষাঢ় এইসব ভেবে দোলনের জানালায় আবার ঢিল ছুঁড়ে মারে।
বারবার এরকম শব্দে দোলন ব্রু কোঁচকায়। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো কোনো কিছু শব্দ করছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে ঢিল ছুঁড়ে মারছে জানালায়। কতো বড় সাহস দোলনের রুমের জানালায় ঢিল ছুঁড়ে মারা? আজতো খবরই আছে। দোলন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে জানালা খুলে বাইরে দৃষ্টি দেয়। জানলা বরাবর তাকিয়ে দেখে আষাঢ় দাঁড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে।
আষাঢ় দোলনকে দেখে একটা হাসি দেয়। দোলন চোখ মুখ কোচকে ফেলে। জানালা বন্ধ করতে গেলে বলে,,,,”খবরদার চাঁপাফুল একদম জানালা বন্ধ করবে না। ”
আষাঢ় এরকম জোরে জোরে কথা বলা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায় দোলন। আষাঢ় তোয়াক্কা না করে বলে,,আজ যদি আমার সাথে কথা না বলো তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
দোলন শুকনো ঢুক গিলে। এই ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি।লোকজন কি ভাব্বে? দোলন কিছু বলতেও পারছে না এখান থেকে কেউ যদি দেখে তাহলে মান সম্মান সব শেষ। বদনাম হতে বেশি সময় লাগবে না। এমনিতেই মানুষের কিছু পেলেই হয়। তিলকে তাল বানাতে বেশি সময় লাগে না।
দোলন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তারপর মাথায় ঢুকে মোবাইলের কথা তারাতাড়ি আষাঢ় কে মেসেজ দেয়।
আষাঢ়ের ফোন পকেটে সে-তো দোলনের দিকেই তাকিয়ে আছে। দোলন চোখে ইশারা করে বলে ফোন দেখতে। আষাঢ় বুঝতে না পেরে ব্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করে কি বলছো?
দোলনের ইচ্ছে করছে দেয়ালে মাথা ঠুকতে লোকটা এমন করে চিল্লাচ্ছে কেন?
হাতের ফোন দেখিয়ে বলে ফোন দেখতে। আষাঢ় এবার বুঝতে পারে। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে দোলনের মেসেজ,,,,,,,, “পাগল হয়ে গিয়েছেন? লোকজন দেখতে পারলে কি হবে? আমার বদনাম করতে চাইছেন আপনি? ”
—আমার সাথে এরকম করছো কেন? সরি বলার সুযোগতো দিবে নাকি।
— এখন এখান থেকে যান।
— সরি চাঁপাফুল।
— ওকে।
— সরি এক্সেপ্ট করেছো?
দোলন জানে এখন এই লোককে এখান থেকে সরানো মুশকিল যদি না তার কথা শুনে তাই দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয়,,,
–হুম।
–আমার মনে হচ্ছে করোনি।
— করেছি।
— করোনি চাঁপাফুল।
— আপনি বেশি জানেন নাকি? বললাম না করেছি।
— তাহলে এখনও আপনি আপনি করছো কেন?
দোলন দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।খুব হাসি পাচ্ছে তার পাগল লোক একটা এসব সামান্য বিষয় ও খেয়াল করেছে।
দোলন ঠোঁট কামড়ে হাসি আঁটকে মেসেজ দেয়,,, এখন এখান থেকে না গেলে এইবার সিরিয়াস লেভেলের রাগ করবো।তখন কিন্তু কোনো ভাবেই আর ভাঙাতে পারবেন না বলে দিলাম।
–এই না না রাগ করো না চাঁপাফুল।এমনিতে রাগ করেই আমার এই অবস্থা আবার যদি সিরিয়াস লেভেলের রাগ করো তাহলে আষাঢ় শেষ।
— বুঝতে পেরেছেন এবার এখান থেকে যান। পরে কথা বলবো আপনার সাথে।
— আচ্ছা। আষাঢ় এবার দোলনের দিকে তাকিয়ে,, নিজের কানে হাত মুখটা কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিমা করে বলে,, আবারও সরি,, তারপর দোলনের দিকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে।
দোলন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়। জানালা বন্ধ করেই দোলন হাসিতে লুটিয়ে পরে। আষাঢ়ের মুখটা দেখার মতো ছিলো।
আষাঢ় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। মুচকি হেসে মাথার চুলগুলো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,,,,অবশেষে ম্যাডামের রাগ ভাঙাতে পেরেছে। মেয়ে মানুষের রাগ ভাঙানো যুদ্ধের চেয়ে কম কিছু না। এর থেকে মনে হয় অন্য সব কিছু সহজ বাপরে বাপ।
আষাঢ় দোলনের জানালার দিকে তাকিয়ে তারপর পিছনে ফিরে কয়েক কদম দিয়েই থমকে যায়।
তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দোলনের খালামনি।
আষাঢ় শুকনো ঢুক গিলে মনে মনে বলে,,তো গায়া আষাঢ় এহমাদ।
আষাঢ় ভাবছে তিনি কিছু দেখেছে নাকি।না দেখে থাকলে বেঁচে গেলো।কিন্তু যদি কিছু দেখে বা শুনে থাকে তাহলে কি বলে সামলাবে।
আষাঢ়ের ভাবনার মাঝেই দোলনের খালামনি সামনে এসে উপস্থিত হয়।
ইয়ে মানে আসলে আন্টি,,,,,,,
হাত উঁচিয়ে আষাঢ় কে কিছু বলার থেকে থামিয়ে দেন তিনি। তারপর আষাঢ়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। উনার মুখ ভঙ্গি দেখে আষাঢ় বুঝতে পারে সব দেখেছেন তিনি। আষাঢ় আর কথা বাড়ায় না দেখা যাক কোথায় নিয়ে যায় তাকে।
বর্তমানে আষাঢ় আর দোলনের খালামনি একটা ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছে। আষাঢ় কিছু বলছে না। চুপচাপ এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
“আমি যা ভাবছি তা কি ঠিক? ”
“কোন বিষয়ে?” ভাবলেশহীন ভাবে বলে আষাঢ়।
“তোমার আর দোলনের।”
“আমি জানি না আপনি কি ভাবছেন।তবে আমি যা ভাবছি আপনি ও যদি তাই ভেবে থাকেন তাহলে বলবো,, হ্যা।”
“তোমাকে আমি ভালো ছেলে ভেবেছিলাম আষাঢ়। ”
“আমি এখনও ভালো ছেলেই আছি আন্টি, তবে আপনার ভাবার ধরনটা এই মুহূর্তে একটু পাল্টে গেছে এই আরকি।”
“তুমি জানো আমি দোলনের কি হই?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন?আপনি দোলনের মা।”
তারমানে এখনও কিছু জানো না। আমি দোলনের মা নই খালামনি। দোলন আমার বোনের মেয়ে। দোলনের বাবা মা কেউই বেঁচে নেই। বর্তমানে আমিই ওর আপন আর গার্জিয়ান।ও একটা এতিম মেয়ে। তুমি নিশ্চই চাইবেনা এমন কাউকে নিজের লাইফের সাথে জড়াতে।ওর থেকে আরো ভালো মেয়ে পাবে।সব দিক দিয়েই তুমি পার্ফেক্ট আমার জানামতে, তাহলে দোলনের মতো একটা মেয়েকে কেনো নিজের মূল্যবান জীবনের সাথে জড়াতে চাইছো?
প্রথমতো হ্যা আমি এই বিষয় টা জানতাম না।চা,,না মানে দোলন সময় সুযোগ বুঝে সবটা আমাকে বলতো সেটা আমি জানি। আর বললেন না দোলন এতিম? আমার মনে হয় ভুল বললেন আপনার মতো একটা মা থাকতে ও কখনো এতিম হতে পারে না। হ্যা হয়তো আমি চাইলেই লাইফে দোলনের থেকে বেটার কাউকে জড়াতে পারি। কিন্তু আমি সেটা চাই না কারণ দোলন আমার কাছে বেস্ট। এসব বিষয়ের জন্য আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে না। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি এটাই এনাফ আমাদের জন্য। আমরা চাই আপনারা গার্জিয়ানরা যেনো হাসি মুখে আমাদের মেনে নেন। আর আমাদের জন্য মন ভরে দোয়া করে দেন।
এক নাগাড়ে সবগুলো কথা বলে থামে আষাঢ়। টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে পান করে। একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে আষাঢ় দোলনের খালামনির দিকে তাকিয়ে আছে।
কেমন গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। উনার মতিগতি কিছুই বুঝছে না আষাঢ়। সামনা সামনি ভাবলেশহীন দেখালেও ভিতরে ভিতরে খুব চিন্তা হচ্ছে। সামনে কি হবে এটা খুব ভাবাচ্ছে।
অনেকটা সময় পার হয়ে যায় নীরবতায়।আষাঢ় কে অবাক করে দিয়ে দোলনের খালামনি হাসি মুখে আষাঢ়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, সুখি হও বাবা তোমরা। আমার দুখিনী মেয়েটা কে কোনোদিন কষ্ট দিও না।মেয়েটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল। খুব সুখি হও তোমরা দোয়া করি।
আষাঢ় স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। বড় একটা বিপদ মনে হলো কেটে গেছে।
*********
আষাঢ় রাতে বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই তার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দেয় বাড়ির কাজের মেয়ে সুমা। আষাঢ় ব্রু কোচকে খামটা হাতে নেয়। সেখানে দাঁড়িয়েই খুলে। কাগজ বের করে চোখের সামনে ধরতেই চোখ জোড়া উজ্জ্বল হয়ে যায়। জোরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বাবা মা কে ডাকতে থাকে।,
#চলবে,,,,?