#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১৬,১৭
#Jhorna_Islam
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষা, পরিশ্রমের ফল পেয়েছে আষাঢ়। তার এতোদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছে। শুধু এই একটা স্বপ্ন পূরণের জন্য কতো কিছু ত্যাগ করেছে। ফাইনালি স্বপ্ন পূরণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পৌঁছাতে পেরেছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাবা মা কে ডাকতে থাকে আষাঢ়। আষাঢ়কে এরকম করে বাবা মা কে ডাকতে দেখে ঘাবড়ে যায় আষাঢ়ের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সুমা।
সুমা শুকনো ঢুক গিলে ভাবে,,, ছোট সাহেব এরকম করে ডাকছে কেনো?আমিকি কোনো অন্যায় করে ফেলেছি? নাকি এই খামের জন্য ডাকছে? সুমা ভয়ে ভয়ে পিছনে কদম ফেলতে ফেলতে অনেকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
আষাঢ়ের ডাকে তার বাবা মা হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে আসে। ছুটে আসে মেঘ ও দেখার জন্য কি হয়েছে।
“কি হয়েছে আষাঢ় এরকম করে ডাকছিস কেন?” মিসেস রিমি চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে।
হ্যা আষাঢ় কি হয়েছে? এনি প্রবলেম? মি শ্রাবণ কপালে ভাজ ফেলে জানতে চায়।
গেইস করো কি হতে পারে। আষাঢ় ব্রু উঁচিয়ে বাবা মা কে বলে।
মিসেস রিমির কপালে ভাঁজ পরে। ভাবতে থাকে কি হতে পারে। আষাঢ়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে ভালো কিছুই হবে। কিন্তু সেটা কি বলতে পারছেন না।
মিসেস রিমির সাথে মেঘ ও ভাবনার সাগরে ডুব দেয় কি নিয়ে তার আষাঢ় এতো খুশি। সকলের ভাবনার মাঝেই মি.শ্রাবণ বলে উঠেন,,,,,ফাইনালি তোমার এতোদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম সফল হতে যাচ্ছে তাই না? তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করার টিকিট পেয়ে গেছো।
আষাঢ় মুখে হাসি ফুটিয়ে মাথা নাড়ায়।
মি.শ্রাবণ দুই হাত বাড়িয়ে আষাঢ় কে নিজের বুকে আহ্বান জানায়।আষাঢ় গিয়ে বাবাকে ঝাপটে ধরে। মি.শ্রাবণ আষাঢ়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে কংগ্রেস মাই বয়। দোয়া করি উডবি ডক্টর থেকে ডক্টর আষাঢ় এহমাদ হয়ে গর্বের সাথে নিজের দেশের মাটিতে পা রাখো।
“থ্যাংকস বাবা।”
মিসেস রিমি এইবার আসল কাহিনী বুঝতে পারে।ছেলের কানাডা গিয়ে ডাক্তারি পড়ার সময় এসে গেছে। খুশি মনে এগিয়ে গিয়ে আষাঢ়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,, দোয়া করি বাবা অনেক বড় ডাক্তার হও।বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করো এবারও। তুমি আমাদের কোনোদিন ও নিরাস করোনি এইবার ও করবে না এই ভরসাটুকু আমাদের আছে।
আষাঢ় হাসি মনে মাকেও জড়িয়ে ধরে।
অন্য দিকে এই খবর পেয়ে মেঘ কি প্রতিক্রিয়া করবে বুঝতে পারছে না। আষাঢ় কানাডা চলে যাবে। পরোক্ষনেই কিছু একটা ভেবে মেঘ খুশি হয়ে যায়। তারমানে আষাঢ় কানাডা চলে যাবে।আষাঢ় কানাডা চলে গেলে ঐ মেয়েটার থেকে দূরত্ব বেড়ে যাবে। এই সুযোগে মেঘ এরকম কিছু একটা করবে যাতে করে দুইজনের প্রেম হাওয়া হয়ে উড়ে গিয়ে মিশে যাবে। আষাঢ়ের জীবনে এবং মনে শুধু এবং শুধু মেঘ রাজত্ব করবে অন্য কোনো মেয়ে না। মেঘ হবে আষাঢ়ের মনের রানি। মেঘ কথাগুলো ভাবে আর মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
“ফ্লাইট কবে আষাঢ়? ” আষাঢ়ের বাবা জানতে চায়।
আর পনেরো দিন আছে বাবা।
আষাঢ়ের কথায় মিসেস রিমি চিন্তিত স্বরে বলেন,,,”এতো অল্প সময়? কিভাবে কি হবে গোছগাছের ব্যাপারতো আছে নাকি?”
তোমাদের মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা রিমি। পনেরো দিন তোমার কাছে কম মনে হচ্ছে? আমাদের এতো সময়ের দরকার পড়ে না এখন বললে আমরা এখনই বেরিয়ে যেতে পারবো।সময় তো লাগে তোমাদের কি ড্রেস নিবা আর কি সাজগোছ তাই ভাবতে ভাবতেই পনেরো দিন পাড় করে ফেলো। কথাগুলো বলেই মি.শ্রাবণ হু হা করে হাসতে থাকে। বাবার এমন রসিকতা শুনে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে আষাঢ় ও হাসতে থাকে।
মিসেস রিমি বাবা ছেলের দিকে কপট রাগ দেখিয়ে তাকায়। তবে উনার রাগকে কে পাত্তা দেয়? গা দুলিয়ে হেসে আরো রাগ বাড়িয়ে দেয়। আষাঢ় বাবা
মায়ের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসেই ফোন হাতে তুলে নেয় খুশির খবরটা দোলনকে জানাবে বলে। দোলনের কথা মাথায় আসতেই আষাঢ়ের মন খারাপ হয়ে যায় দোলনকে ছেড়ে চলে যাবে এই ভেবে। এটাও ভাবতে থাকে দোলন খবরটা শুনে কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কিছু একটা ভেবে আষাঢ় ফোন রেখে দেয়। ফোনে জানানো যাবে না। সবকিছু সামনা-সামনি বলতে হবে। সামনা-সামনি বলে তারপর দোলনের মতামত জানতে হবে। যদিও বা দোলন না বলে তাহলে আষাঢ় তো তা মানবে না কারণ দোলন যেমন তার ভালোবাসা, ডাক্তার হওয়া ও তার আরেকটা স্বপ্নের জায়গা।
আষাঢ় ফোনটা হাতে নিয়ে দোলন কে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার জন্য বলে।
পরের দিন আষাঢ় আগে আগেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে থাকে। বসে বসে কফি খাচ্ছে আর দোলনের জন্য অপেক্ষা করছে।
দোলন রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে বেশ অবাক হয়ে যায়। এটা কিভাবে সম্ভব সেটাই ভাবছে সে।আষাঢ় তার আগে এসে বসে আছে। যে সব সময় লেইট করে সে আজ দোলনের আগে বাহ্।
দোলন টেনিলের উপর সাইড ব্যাগটা আওয়াজ করে রাখে। তারপর একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে পরে।
আষাঢ় চুপচাপ দোলনের কর্মকান্ড দেখছে।ঘেমে নেয়ে মেয়েটা একাকার। এরকম ঘেমে থাকা দোলনকে দেখতেও আষাঢ়ের চোখে অসাধারণ লাগছে। দোলনকে যতো দেখে ততো যেনো তার প্রতি ভালোবাসা বাড়ে।
“কি জনাব? আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে শুনি?”
“সূর্য প্রতিদিন যেই দিকে উঠে সেই দিকেই উঠেছে।আজ বুঝি জনাবা সকালে সজাগ হতে পারেনি? তাই জিজ্ঞেস করছে। ”
দোলন মুখ বাঁকায়।
আমার আগে এসে বসে আছো যে? কোনোদিন তো আগে আসতে পারোনি সব সময় লেইট।আজ হঠাৎ,,,,,?
ভাবলাম অপেক্ষা করার স্বাদ কেমন হয় তা একটু চেকে দেখি তাই আজ আগে এসে উপস্থিত হয়েছি।বলেই আষাঢ় চোখ টিপ মা’রে।
দোলন মুখ বাঁকিয়ে বলে,,তা কি রকম টেস্ট পেলে?
“উমমম! টক, মিষ্টি, ঝাল,তেঁতো সবকিছুর সংমিশ্রণে যেমন টেস্ট হয় তেমন। ”
“ধূর।”
এসব কথা রাখো দোলন সিরিয়াস বিষয়ে নিয়ে কথা বলার আছে এজন্য ডেকেছি।আজ প্রেম করবো বলে ডাকিনি তোমাকে। মুখটা গম্ভীর করে বলে আষাঢ়।
দোলন আষাঢ়ের কথায় ব্রু কোচকে তাকায়।
তার আগে কফি দরকার বলেই আষাঢ় ওয়েটার কে ডাক দিয়ে বলে কফি দেওয়ার জন্য।
“কফির দরকার ছিলো না আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি। ”
“কফি খেলে কিছু হবে না। ”
আষাঢ় শুকনো ঢুক গিলে বলতে শুরু করে,,,, “দোলন তুমি হয়তো জানো আমার জীবনের একটাই লক্ষ সেটা হলো ডাক্তার হওয়া। আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি সেক্রিফাইস করেছি যেনো সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। ফাইনালি সেই স্বপ্ন পূরণ করার টিকিট পেয়ে গেছি আমি। কানাডা গিয়ে ডাক্তারি পড়ার। ”
“ওয়াও! তুমি কি বলছো আষাঢ় সত্যি? ” প্রফুল্লতার সাথে বলে দোলন। তারপর যখন মাথায় আসে আষাঢ় তাকে ছেড়ে চলে যাবে মুহূর্তের মধ্যেই হাসি মিলিয়ে যায়। চোখ দুটো কেমন ছলছল করে। দোলন বুঝতে পারছে না এখন ওর কি করা উচিত ও খুশি হবে নাকি মন খারাপ করে থাকবে?
আষাঢ় দোলনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। টেবিলে রাখা দোলনের হাতটা আষাঢ় নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।
দোলন আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে নিজেকে সামলে নেয়।
“এটাতো অনেক খুশির খবর আষাঢ় মাস। ” ফাইনালি তোমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি বলে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে।
“কবে যাচ্ছো কানাডা আষাঢ়? ”
“হাতে আর চৌদ্দ দিন আছে। ”
“কিহ্?”
“হ্যা।”
“এতো তারাতাড়ি চলে যাবে?”
“কিছু করার নেই চাঁপাফুল যেতেতো হবেই তাই না? সেটা এখন হোক বা আর কিছুদিন পর।”
“হুম। ”
মন খারাপ করে দিলাম তাই না? মন খারাপ করারই কথা। কয়েকটা বছরই চাঁপাফুল দেখতে দেখতে চলে যাবে।
“এরকম ভাবে বলছো মনে হচ্ছে কয়েকটা দিন।”
আষাঢ় এর প্রতি উত্তর করে না। সে নিজেও জানে ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকা কতোটা কষ্ট হবে।
তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না চাঁপাফুল? জানি অপেক্ষা জিনিস টা বড্ড কষ্টের কিন্তু কিছু করার নেই। পারবে না আমার জন্য অপেক্ষা করতে?
দোলন ছলছল চোখে আষাঢ়ের দিকে তাকায়।
আষাঢ় এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,,অবশ্য অপেক্ষা ছাড়া তোমার কাছে আর অন্য কোনো অপশন ও আমি রাখিনি। তুমি চাও বা না চাও আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবেই। শক্ত বাঁধনে বেঁধে নিয়েছি যে তোমাকে।
আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য আষাঢ়। কিন্তু তুমি আবার বাইরে গিয়ে সুন্দরী রমনী দেখে আমাকে ভুলে যেও না।
“পাগলি মেয়ে তোমাকে ভুলে যাওয়ার সাধ্যকি আমার আছে? ”
তারপর দোলন কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করতে থাকে।
আষাঢ় তা লক্ষ করে বলে,,কিছু বলবে? বলো কি বলতে চাও।
বাড়িতে খালামনি আর সুমন ভাইয়াকে কি বলবো আমি আষাঢ়? উনারাতো কয়দিন পরই আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবে।
“তোমাকে সেই চিন্তা করতে হবে না। তোমার খালামনি আমাদের ব্যাপারে সবকিছুই জানে।”
আষাঢ়ের কথায় দোলন চোখ বড় বড় করে তাকায়।
কি বলছো তুমি আষাঢ়? খালামনি জানে মানে? কখন থেকে? কিভাবে জানে? কিছু বলেনিতো আমাকে কিছু বলেনি কেনো?
দোলন কে এমন উত্তেজিত হতে দেখে আষাঢ় বলে,,রিলেক্স এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? তারপর একে একে সব খুলে বলে।
দোলন মাথা নিচু করে বসে আছে। একটু পর পর চোখ মুচ্ছে সে।
“হেই চাঁপাফুল তুমি কান্না কেনো করছো?”
“সরি আষাঢ়। আমার সম্পর্কে আগে থেকে কিছু না বলার জন্য। ”
“সরি বলার দরকার নেই। তুমি জানো এসব কিছু আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট তুমি বুঝলে?
আমার ফ্যামিলি নিয়ে ও তুমি টেনশন করো না। যাওয়ার আগে আমি ওদের আমাদের ব্যাপারে জানিয়ে যাবো।
দোলন মাথা নাড়ায়।
*********
হোয়াট? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? এরকম একটা চালচুলোহীন মেয়েকে নিজের লাইফে কি করে আনতে চাচ্ছো? মাথাটা তোমার খারাপ হয়ে গেছে আষাঢ় তাই এমন আবোল তাবোল কথা বলছো। আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না বি প্রেক্টিক্যাল।
ঐসব মেয়ে সিমপ্যাথি পাওয়ার যোগ্য ভালোবাসা না। বাইরে পড়াশোনা করতে যাচ্ছো যাও এসব সস্থা আবেগে এখন জড়াতে যেও না। পরে কিন্তু আফসোস করবে। মেয়েটার টাকা পয়সা লাগলে দিয়ে সরে এসো এসব থেকে। মিসেস রিমি একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামে।হাঁপিয়ে গেছেন তিনি।
আষাঢ় বসা থেকে উঠে একটা কাঁচের গ্লাস ঠাস করে ফ্লোরে ছুরে মা’রে। গ্লাসটা ঝনঝন শব্দ তুলে মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। খাবার টেবিলে নিজের মুষ্টি বদ্ধ হাতটা বারি মেরে বলে,,, ব্যাস মা। অনেক বলেছো আমার চাঁপাফুলকে নিয়ে আরেকটা বাজে কথা ও আমি সহ্য করবো না। তোমার সাহস হয় কি করে এসব আজেবাজে কথা বলার? যাকে চিনো না জানোনা,কোনোদিন দেখোওনি তাকে নিয়ে এসব বাজে কথা কেমন করে বলছো তুমি?
মিসেস রিমি আষাঢ়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ কোন আষাঢ় কে দেখছেন তিনি?
আষাঢ়ের চোখ দুটো আগুনের ফুলকির মতো লাল হয়ে আছে। খাবার টেবিলে বসে নিজের বাবা মাকে দোলনের কথা বলায় মিসেস রিমি এসব বা’জে কথাগুলো বলেছেন।
“আমি যদি লাইফে কাউকে বিয়ে করি তাহলে দোলনকেই করবো।আমার জীবনসঙ্গী যদি কেউ হয় সেটা দোলন হবে আর কেউ না। তোমাদের জানানো দরকার মনে করেছি জানিয়েছি। এখন তোমরা আমার ডিসিশন মানো অথবা না মানো এতে কিছু যায় আসে না আমার। আই ডোন্ট কেয়ার।
খাবার টেবিলের পরিবেশ এখন থমথমে। মিসেস রিমি আষাঢ়ের কথায় বসে বসে চোখের পানি ফেলছেন। মেঘ ও নিশ্চুপ হয়ে আছে তার মাথায় কিছু ঢুকছে না। মি.শ্রাবণ এতো সময় চুপ থেকে এবার মুখ খুললেন,,,,,
” তুমি কি চাইছো আষাঢ়? ”
“দোলনের সাথে এনগেজমেন্টটা সেরে যেতে। ”
“হুট করে এতো কিছু আয়োজন করাতো সম্ভব নয়।”
“এতো আয়োজনের তো প্রয়োজন দেখছিনা। ঘরোয়া ভাবে করলেই হবে। ”
“তবুও লোক সমাজের একটা ব্যাপার আছে। আমাদের তো আর কম আত্নীয় স্বজন নেই। মানুষ এটা ভালো চোখে দেখবে না। আমি একটা প্রস্তাব দিলে রাখবে?”
“কি?”
“আপাতত তুমি কানাডা যাও তারপর ফিরে আসলে না হয় ধুমধাম করে তোমার পছন্দ করা মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ে দিবো। তুমি সুখি হলে আমাদের ঐ মেয়েকে মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই। ”
মি. শ্রাবণের কথা শুনে মেঘ বসা থেকে উঠে সেখান থেকে চলে যায়। মিসেস রিমি মি.শ্রাবণের দিকে তাকাতেই তিনি চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলেন।
তিনি চুপ হয়ে যান।
“তুমি কি বলো আষাঢ়? ভেবে জানাও আমাকে।”
“আষাঢ় কিছু সময় ভেবে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,ঠিক আছে বাবা তুমি যা বলছো তাই হবে। দেশে এসেই দোলনকে আমি বিয়ে করবো।” কথাগুলো বলে সেখান থেকে আষাঢ় চলে যায়।
মিসেস রিমি আর মি.শ্রাবণ দুইজনের মধ্যে কথা বলতে থাকে।
রাতে দোলন আর আষাঢ় ফোনে একে অপরের সাথে কথা বলছে এমন সময় মিসেস রিমি আষাঢ়ের দরজায় নক করে।
“কামিং।”
“কি করছো আষাঢ়? ”
কিছু না। আষাঢ় মুখটা গম্ভীর করে উত্তর দেয়।
“মায়ের সাথে রেগে আছো?”
আষাঢ় নিশ্চুপ।
সরি বেটা।তখন হুট করে তুমি একটা মেয়ের কথা বলায় আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। আমার ঐসব বলা একদম উচিত হয়নি। তুমিইতো আমার সব বলো? তুমি জানো তোমার মা তোমাকে কতো ভালোবাসে। তুমি যেইটা চাও ছোট থেকে সেটাই তোমাকে এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই ইচ্ছে ও অপূর্ণ রাখবো না।আমার ছেলের পছন্দের ঐ মেয়েকেই এই বাড়ির বউ করে আনবো।
আষাঢ় মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, সত্যি?
“হ্যা বাবা। সরি আবারও। ”
ইট’স ওকে মা।
তুমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে যাও আমি দোলনের খেয়াল রাখবো। সব সময় ওর খোঁজ খবর রাখবো।তোমার আমানত আমি পাহারা দিয়ে রাখবো।
“দোলন খুব ভালো মেয়ে মা।”
“আমার ছেলে পছন্দ করেছে ভালোতো হবেই তাই না? ”
“তখনকার জন্য আমিও সরি মা।রাগের বসে জানিনা কি উল্টো পাল্টা কথা শুনিয়ে দিয়েছি তোমাকে।”
“ব্যাপার না। আমিও একটু বারাবাড়ি করে ফেলেছিলাম। ”
“তবুও আমার ওরকম চিল্লানো উচিত হয়নি তোমার উপর। ”
“বাদ দাও সেসব কথা। দোলনের ফোন নাম্বার আমাকে দিও। হবু বউমার খুঁজ খবর রাখতে হবে না। ”
“আমি এখনই টেক্সট করে দিয়ে দিচ্ছি।”
“ওকে।”
আষাঢ় মায়ের কথায় খুশি হয়ে যায়। সে এখন ভরসা পেলো।দোলন কে তার মা দেখে রাখবে শুনে খুব খুশি হলো। আই লাভ ইউ মা বলেই মিসেস রিমিকে জড়িয়ে ধরলো।
মিসেস রিমি ও নিজের ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে খুশি মনে বলে,,,লাভ ইউ টু মাই সান।
আষাঢ়ের সাথে কথা বলতে বলতে মিসেস রিমির চোখ যায় দরজার দিকে। তিনি দেখতে পান একটা ছায়া সরে যাচ্ছে ওখান থেকে।
#চলবে????