#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
এহমাদ বাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স এসে থামে। এম্বুলেন্সের শব্দে সকলের ভিতরেই মোচড় দিয়ে উঠে। কেন জানি এম্বুুলেন্সের শব্দটা খুব বিদঘুটে বিষাক্ত শোনায়। কারো বিদায় বা অসুস্থতার জানান দেয়। ভিতরটা অজানা আহাজারিতে ছেয়ে যায়।
মিসেস রিমি নিজের রুমে বসে মাত্র চোখ দুটো বুজেছিলেন। মাথাটা খুব ব্যাথা করছে এজন্য নিচে বলে এসেছে কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে। কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে তিনি রেস্ট নিবেন নয়তো এই মাথা ব্যাথা সারবে না। কিন্তু চোখে ঘুম ধরার আগেই এম্বুলেন্সের শব্দে ঘুম উড়ে গেলো। শব্দটা শুনে বুকের ভিতর অজানা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠে। তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠে পরে। তারাতাড়ি দেখতে হবে কি হয়েছে কেউ কি অসুস্থ নাকি? কিন্তু অসুস্থ হলেতো ফোন আসার কথা, ফোনতো এলো না তাহলে? নাকি?,,, আর কিছু ভাবতে পারছেন না তিনি। দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
মিসেস রিমি তারাতাড়ি যেতে গিয়ে একটা ধাক্কা খায়। তাকিয়ে দেখে মেঘ ও দ্রুত বের হচ্ছে দেখার জন্য এম্বুলেন্স আসলো কেন বাড়িতে।
“মামনি? বাড়িতে কেউ অসুস্থ নাকি? তোমাদের বাড়িতে অসুস্থ কারো আসার কথা নাকি?”
“না মেঘ বুঝতে পারছি না কে এলো।”
“আশ্চর্য মামনি তুমি দেখি এই বাড়ির কোনো কিছুর খবরই রাখো না।”
মেঘের কথায় মিসেস রিমি কিছুটা রেগে যায়। চোখ মুখ কোচকে মেঘের দিকে তাকায়। মেঘ মামনির তাকানো দেখে ঢুক গিলে হাসার চেষ্টা করে বলে,,, রাগ কেনো করছো মামনি? আমিতো এমনি বলছি।
“বড্ড বেড়েছিস মেঘ।কম উড়তে চেষ্টা কর এতো উড়া ভালো না।বেশি উড়লে ডানা ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন সর সামনে থেকে কে এলো দেখতে দে।কথাগুলো বলেই মিসেস রিমি নিচে চলে যায়।
মেঘ তার খালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,, তোমার ও মুখটা ইদানীং বেশি খুলছে মামনি।এতো কথা ভালো না। তোমার মুখ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে বলেই মেঘ হাসে। তারপর এম্বুলেন্সের কথা মাথায় আসতেই নিজেও নিচে চলে যায়।
সুমা কয়েকটা ব্যাগ আর কি সব জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। মিসেস রিমি সুমাকে দেখে বলে,,,কিরে সুমা কি এনেছিস?কে এলো ডাক দিয়ে যে হাওয়া হয়ে গিয়েছিস।
” ব্যাগ আনছি বড় ম্যাডাম।”
“সেটাতো আমিও দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কার ব্যাগ এনেছিস? এম্বুলেন্স কেনো এসেছে? কে এলো বাড়িতে?” কিছুটা রাগি স্বরে বলে মিসেস রিমি।
“এখনই দেখতে পাবেন ম্যাডাম কে এলো।”
সুমা বলতে বলতেই বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে আষাঢ় প্রবেশ করে। মিসেস রিমি আষাঢ় কে দেখে এগিয়ে এসে বলে,,,”আষাঢ় এসব কি?”
প্রশ্নটা করে মিসেস রিমি কিছু একটা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আষাঢ়ের দিকে একবার তো আষাঢ়ের সামনে স্ট্রেচারে বসে থাকা একজনের দিকে তাকায়। এমন ধাক্কা মনে হয় তিনি জীবনের প্রথম খেয়েছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
অন্যদিকে মেঘ স্ট্রেচারে বসে থাকা দোলনকে দেখে থরথর করে কাঁপতে থাকে। মেঘ যেনো নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে। সামনের সোফাটা শক্ত করে ধরে নিজের ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করে। দোলনের দিকে কেমন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো সুমা? তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে যা কাজ দেওয়া হয়েছে তারাতাড়ি কর।”
সুমা আষাঢ়ের গম্ভীর কন্ঠ শুনে দৌড়ে উপরে চলে যায়।
“কি হলো মা? মনে হচ্ছে এই প্রথমবার দেখছো ওকে? তুমি কি এতো তারাতাড়ি ভুলে গেলে দোলনকে?”
“ত-তুমি কোথায় পেলে দ-দোলনকে আষাঢ়? ”
“রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি বলেই আষাঢ় হাহা করে হাসে।”
ছেলের এহেন উত্তরে মিসেস রিমি বড্ড অসন্তোষ হোন। উনার সাথে ও মজা করা শুরু করে দিয়েছে ছেলেটা। মিসেস রিমির মুখের দিকে তাকিয়ে আষাঢ় বলে,,রিলেক্স মা এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
“তুমি এরকম হেয়ালি করছো কেনো?”
“তাহলে কি করবো? তুমি বড্ড অবুঝ হয়ে যাচ্ছো দিন দিন। দেখেছো একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এসেছি কোথায় তাকে আগে ঠিকমতো রাখার ব্যবস্থা করবে তা না করে তুমি প্রশ্ন করে চলেছো।সবতো পরেও জানতে পারবে। ”
আমি কি ব্যবস্থা করবো ঠিকমতো রাখার? নিজেইতো না জানিয়ে সবটা করলে, বাকিটুকু ও পারবে। এখন এই সামান্য বিষয়ে আর মাকে প্রয়োজন হবে না।
তা অবশ্য ঠিক বলেছো। তোমারা আমার জন্য যা যা করলে এরপর আর কিছু করার প্রয়োজন হবে না আর আমি করতে ও দিবো না। আমার চাঁপাফুলের জন্য আমিই যথেষ্ট। আমার চাঁপাফুলের টেক কেয়ার আমি একাই করতে পারবো তাই না মেঘ??
শেষের কথাটা জোরে চিল্লিয়ে বলে। মেঘ হুট করে নিজের নাম শুনে কেঁপে ওঠে। আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আষাঢ় কেমন দৃষ্টিতে মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। আষাঢ়ের চোখগুলো যেনো মেঘকে কিছু একটার আবাশ দিচ্ছে।
আষাঢ় আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না দোলনের জন্য ঠিক করে রাখা রুমটার উদ্দেশ্য দোলনকে নিয়ে চলে যায়। পিছন দিক থেকে চার জোরা চোখ ওদের যাওয়ার পথেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যে দৃষ্টিতে রয়েছে রহস্য,ভয়,রাগ।
আষাঢ় রুমে এসে দোলনকে বিছানায় শুইয়ে সবকিছু সেট করে দেয়। আজ থেকে দোলন এখানেই থাকবে। আষাঢ় বাড়িতে রেখেই দোলনের চিকিৎসা করবে। সবকিছুর ব্যবস্থা সেরকম করেই করা হয়েছে। কেন জানি আষাঢ়ের দোলনকে হাসপাতালে রাখতে একদম ইচ্ছে করছিল না। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠারো ঘন্টা দোলনের কাছে থেকেও আষাঢ়ের মন ভরছিল না।আষাঢ়ের কেন যেনো মন বলছে বাড়িতে রাখলে দোলন কিছু টা বেটার ফিল করতে পারে আর হয়তো রেসপন্স ও করতে পারে। কিন্তু আষাঢ় এটা জানে না দোলনকে এখানে কতো কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। কারো রাগ,ঘৃণার ও স্বীকার হতে পারে।
*
মিসেস রিমি একের পর এক মি.শ্রাবণকে কল করে চলেছে। উনার সবকিছু কেমন আউলিয়ে গেছে। দোলনকে আষাঢ় কোথায় পেলো, এরকম অবস্থা কেন দোলনের মাথায় হাজার খানেক প্রশ্ন কিন্তু ছেলেটা উত্তর দিচ্ছে না কেমন হেয়ালি করে কথা বলছে। মি.শ্রাবণ যদি এখন কিছু জানতে পারে। লোকটা ফোনও তুলছে না কোথায় চলে গেছে কে জানে।
অন্য দিকে মেঘ রুমে গিয়ে পায়চারি করছে। এই দোলন মেয়ে টা তার পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। কতো প্লেন সাজিয়ে আষাঢ় কে বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু শেষে সব ভেস্তে গেলো।মেঘ এখন বুঝতে পারছে আষাঢ় কেন তাকে বিয়ে করছে না। নিজের প্রেমিকাকেই যখন পেয়ে গেছে এখন আর তাকে কেনো বিয়ে করবে? আষাঢ়ের মা ও এখন আর কিছুই করতে পারবে না কারণ আষাঢ় আর কারো কোনো কথাই শুনবে না। সে এখন চাঁপাফুল পেয়ে গেছে।
মেঘের খুব রাগ হচ্ছে এই মেয়েটার কই মাছের জান নাকি কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে না পিছু ছাড়ানো যাচ্ছে না। ঠিক এসে হাজির হচ্ছে। আষাঢ় এখন শুধু চাঁপাফুল চাঁপাফুল করবে এই নামটা শুনলে মেঘের শরীরে আগুন ধরে যায়।
মেঘ মনে মনে বলে,, তোমার চাঁপাফুলকে আমি পা দিয়ে পিষে ফেলবো আষাঢ়। তুমি শুধু আমার হবে আর কারো না।
আষাঢ় কিছু সময় দোলনের রুমে বসে থাকে তারপর মনে হয় তার ফ্রেশ হওয়া দরকার। ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে দাঁড়াতে মনে হলো দোলনের হাতের আঙ্গুল নড়েছে।আষাঢ় তা দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায়। তাহলে তার চাঁপাফুল কি রেসপন্স করছে? ভুল দেখছে না তো আবার? আষাঢ় চোখ কচলিয়ে আবার দোলনের হাতের দিকে তাকায় কিন্তু এখন আর নড়ছে না। তাহলে মনে হয় মনের ভুল যতোটা খুশি হয়েছিলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য তা নিমিষেই উবে গেলো। আষাঢ় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। পিছনে বেডে শুয়ে থাকা দোলনের হাতের আঙ্গুল আবারও নড়ে কিন্তু আষাঢ়ের দৃষ্টিতে তা পরে না।
#চলবে,,,,?
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam
তুই এখানে কি করছিস মেঘ?
হুট করে এরকম গম্ভীর স্বর শুনে মেঘ লাফ দিয়ে উঠে। খুব ভয় পেয়ে গেছে হাত পা কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে পিছন ফিরে আষাঢ়ের দিকে তাকায়। আষাঢ় মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে কিন্তু মুখে রাগটা তেমন প্রকাশ পাচ্ছে না।
মেঘ কি বলবে মনে মনে শব্দ সাজাচ্ছে।
“কি হলো তুই এখানে কি করছিস?”
“আ-আামি?”
তাহলে কি এখানে মেঘ নামে অন্য কেউ আছে? কই আমিতো দেখতে পাচ্ছি না। আষাঢ় মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে।
“ইয়ে মানে আমি একটু দেখতে এসেছিলাম।”
“হোয়াট?”
“ঐ মেয়েটাকে।”
“প্রথমত ওর নাম দোলন তুই নিশ্চয়ই জানিস? আর তোকে কেনো দেখতে হবে? তোকে কি আমি দোলনের কেয়ার টেকার হিসেবে রেখেছি?”
“আষাঢ়? ” কিছুটা রাগি স্বরে বলে মেঘ।
ভাই বল সাথে। ভুলে যাস না আমার আর তোর সম্পর্ক আর ভুলেও আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে আসবি না।
আমিতো কিছু ভুলে যাইনি ভুলে যাচ্ছো তুমি। আগে ভাই বলে ডাকার সম্পর্ক থাকলেও এখন আর সেটা নেই। যেখানে বিয়ের কথা হয় সেখানে আবার ভাই কিসের শুনি?
আষাঢ় তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলে,, বিয়ে? ঐটা একটা ইন্সিডেন্ট ছিলো যা হতে হতে হয়নি।তোকে নিশ্চয় এখন ব্যাখ্যা দিতে হবে না। আশা করি সবটাই জানিস আর যদি ভুলে যাস কোন পরিস্থিতিতে আমি তোকে বিয়ে করতে নিচ্ছিলাম তাহলে তোর মামনির কাছ থেকে জেনে নিস কেমন?
এখানে কি হচ্ছে? মিসেস রিমি এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
আষাঢ় মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোমার ভাগ্নীকে অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছি। বড্ড দূর্বল তোমার ভাগ্নীর স্মৃতি শক্তি।
মানে?
মানে টা মেঘ তোমাকে পরে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবে। আর মেঘ ভুলেও এদিকে আসার চেষ্টা করিস না। আমার চাঁপাফুল থেকে দশ হাত দূরে থাকবি।
তারপর কিছু একটা মনে পরে যাওয়ার ভঙ্গিতে আষাঢ় সুমাকে ডাকতে থাকে।
“সুমা এই সুমা?”
কয়েক মিনিট পর সুমা প্রায় দৌড়ে এসে সেখানে উপস্থিত হয়।
“‘ জ্বি! ছোট সাহেব? ”
আজ থেকে তোর উপর একটা দায়িত্ব দিবো সেটা তোকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। পারবিতো?
“কি কাজ ছোট সাহেব? ”
আজ থেকে দোলনকে দেখে রাখবি তুই। আমি যতক্ষন পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকবো তুই এই রুমের আশেপাশে থাকবি। যদিও অলটাইম নার্স থাকবে তবুও তোর উপর এই দায়িত্বটা আমি তোর উপর দিতে চাচ্ছি পারবি না?
“সুমা মাথা নাড়িয়ে বলে,,,পারবো ছোট সাহেব এ আর এমন কি কাজ।”
“এটা সবচেয়ে কঠিন কাজরে সুমা কারণ আমি বাড়িতে না থাকলে এই রুমে যেনো কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেটা দেখতে হবে। যদি কেউ ঢুকতে চায় একদম দিবি না। এমনকি আমার মা ঢুকতে চাইলেও দিবি না।
আষাঢ়।
রেগে যাচ্ছো কেনো মা? এমনিতে তোমার তো এই রুমে কোনো কাজ নেই। আর তাছাড়া দোলনকে দেখার হলে আমি বাড়িতে থাকার সময় দেখতে পারবে।দোলনের রুমে এখন এমনিতেও মানুষ এলাও না আশা করি বিষয়টা বুঝবে।
এখন তোমরা আসতে পারো বলেই আষাঢ় রুমে ঢুকে মিসেস রিমি আর মেঘের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
মামনি বলেই মেঘ শব্দ করে কেঁদে উঠে।
মিসেস রিমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে এসব কি হচ্ছে কিছুই উনার বোধগম্য হচ্ছে না।
ও মামনি?
হুম,,,হ্যা?
আমার এবার কি হবে? আমি এসব নিতে পারছি না। নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে মেনে নেওয়া যায়? আমার আষাঢ় আমার না।আমার আষাঢ় আমার চোখের সামনে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে পরে আছে, আমি এসব সহ্য করতে পারছি না। এসব যে করে হোক বন্ধ করো নয়তো আমি কি করবো ভাবতেও পারছো না।
মেঘের কথায় মিসেস রিমি মেঘের দিকে তাকায়। পাশেই সুমাকে ওদের দুইজনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
” কি বলছিস এসব তুই? আর এই সুমা নিজের কাজে যা।আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছিস?”
মেঘ ভুলেই গিয়েছিলো এখানে সুমা ও আছে। মেঘ চোখ মুখ কোচকে বলে,,এই তুই এখানে এখনও কি করছিস? ঠাটিয়ে একটা না লাগাতে যা এখান থেকে।
সুমা ঠোঁট উল্টে বলে,, আমি আবার কি করলাম? এদের মতি গতি কিছু বুঝি না বাপু বলেই সেখান থেকে চলে যায়।
মিসেস রিমি মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলে,, আয় আমার সাথে। তোকে কতো করে বলেছি একদম মাথা গরম করবি না। আর মুখে একটু লাগাম দিবি।কিছু বলার আগে আশপাশ ভালো করে দেখে নিবি, কিন্তু তুই আমার একটা কথা ও যদি শুনিস।
বিকেল বেলা আষাঢ়ের একটা ইমার্জেন্সি থাকায় হসপিটালে যেতে হয়। মিসেস রিমি ও বাইরে বের হয়েছেন।বাড়িতে এখন শুধু মেঘ সুমা আছে। সুমা কফি বানিয়ে দিচ্ছে সেটাই মেঘ সোফায় বসে বসে খাচ্ছে আর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠে। প্রথম বাজার শব্দে মেঘ পাত্তা দেয় না কারণ জানে সুমা খুলবে কিন্তু বার কয়েক বাজার পরও সুমার খবর নাই। মেয়েটা মুহূর্তের মধ্যে কোথায় হাওয়া হয়ে যায় কে জানে।মেঘ আশেপাশে তাকিয়ে না দেখতে পেয়ে নিজেই উঠে দাঁড়ায় দরজা খুলতে কারণ একের পর এক কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে দরজার অপর পাশের ব্যাক্তি।কলিং বেলের শব্দে মাথাটা ধরে গেছে প্রায়।
মেঘ দরজা খুলে চোখ মুখ কোচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুনতে পায়,,,, বাড়ির সকলে কি বয়রা হয়ে গেছে নাকি? এতো বার কলিং বেল বাজালাম এতো সময় লাগে দরজা খুলতে?
আর এই মেয়ে মাইনে দিয়ে আপনাকে কি ঘোড়ার ঘাস কাটতে রেখেছে?
একপলক মেঘের দিকে তাকিয়ে তারপর হাতে থাকা কাপটা দেখে বলে,,আজ কালকের কাজের লোকগুলো ও মালিকের থেকে বেশি বেশভুশা ধরে থাকে।
“এক্সকিউজ মি? ”
“ওরে বাবা ইংরেজি ও জানেন দেখি।শিক্ষিত কাজের বুয়া গুড ভেরি গুড।”
“ও হ্যালো কে আপনি হ্যা? আর কাজের বুয়া কাকে বললেন?”
“আপনাকে। ”
” মেঘ অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে কোন এংগেল থেকে কাজের বুয়ার মতো লাগে? ”
“আপনি কাজের বুয়া না?”
“ইউ ডেলিভারি বয় আমি কেনো কাজের বুয়া হতে যাবো? বাড়ির মালিককে কাজের লোক বলে।”
আমি মোটেও ডেলিভারি বয় নই সুমন নিজের শার্টের কলারটা উঁচিয়ে বলে। বায় দা ওয়ে মি.শ্রাবণ এহমাদ কি নিজের সব জায়গা সম্পত্তি
দান করে দিয়েছেন নাকি? আমি যতদূর জানি ওনার একটা মাত্র ছেলে আর কোনো ছেলেমেয়ে নাই তাহলে আপনি কি করে এই বাড়ির মালিক হলেন? ঢপ দেওয়ার আর জায়গা পান না তাই না?
“আপনি হয়তো ভুলে গেছেন ছেলের বউ অবশ্যই মালিক হতে পারে। ”
সুমন ব্রু কুঁচকে বলে,, মানে?
“মানে এই যে আমি মি.আষাঢ় এহমাদের হবু বউ।”
সুমন কথা শুনে বেশ অবাক হয়। মুহূর্তে রাগ মাথায় চড়ে বসে। মেঘকে আর কিছু বলে না। ততক্ষণে সুমা এসে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে।সুমা ওদের ঝগড়া দেখছিল হা করে তাকিয়ে।
সুমন সুমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে দোলনের রুম কোনটা। সুমা হাতের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সুমন আর এক মুহূর্ত ও দেরি না করে উপরে চলে যায়।
এতক্ষনে সুমার মাথায় আসে আষাঢ় দোলনের রুমে কাউকে যেনো ঢুকতে না দেওয়া হয় সেই আদেশ দিয়েছিলো তাকে।আর সে কিনা নিজেই রুম দেখিয়ে দিলো? সুমনের পিছনে পিছনে নিজেও দৌড় লাগায়।
সুমন দোলনের রুমে প্রবেশ করে একটা চেয়ার টেনে বসে। দোলনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সুমনের চোখগুলো কেমন ছলছল করছে তার দুলি কিভাবে পরে আছে।
“দুলি এই দুলি এখনও কেন ঘুমিয়ে আছিস? উঠ না এই উঠ দেখ তোর সুমন ভাই ডাকছে তোকে। তুই আমার কথা শুনবি না দুলি? উঠনারে দুলি। তোকে আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো টেনশন করিস না। তোর সুমন ভাই এসে গেছে এবার।”
সুমা আড়াল থেকে কান পেতে বুঝতে পারলো এটা দোলনের ভাই তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো।তবে আষাঢ় কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে বিষয়টা।
তোকে ছাড়া আমাদের সবকিছু শূন্যরে।আমার মন আমাদের বাড়ি সবকিছু শূন্য। তুই কেনো উঠছিস না? এভাবে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে তোর? আমি কিন্তু এইবার তোকে মাইর দিবো দুলি। সুমন নানা ধরনের কথা বলতে থাকে দোলনের হাতটা ধরে।
অন্যদিকে আষাঢ় খবর পেয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে উপস্থিত হয়। দৌড়ে দোলনের রুমে ঢুকে। সুমন তখন দোলনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“কি হচ্ছে কি এখানে? ”
সুমন পিছনে তাকিয়ে দেখে আষাঢ়। আষাঢ়ের দিকে এক পল চেয়ে কিছু না বলে সুমন আবার দোলনের দিকে তাকায়।
“কখন এলে সুমন?”
“খবর নিশ্চয়ই পাওয়া হয়ে গেছে আমি এসেছি আর কখন এসেছি তাহলে অযথা এই প্রশ্নের মানে কি?”
সুমনের কথায় আষাঢ়ের রাগ উঠে যায়, এই ছেলে সব সময় খোঁচা দিয়ে কথা বলে। নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে,,,দোলনের রুমে এতো সময় কারো থাকা এলাউ না। তুমি নিচে আসো বসে কথা বলি।
এখানে কারো সাথে কথা বলতে আসিনি।দোলনের কাছে এসেছি দেখতে দেখা শেষ চলে যাচ্ছি। কথাটা বলেই সুমন উঠে দাঁড়ায় চলে যাবে এই উদ্দেশ্যে কিন্তু নিজের আঙ্গুলে কিছু একটার বাঁধন পায়। সুমন ঘুরে তাকিয়ে দেখে দোলন তার একটা আঙ্গুল নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরেছে।
“সুমনের চোখ চিকচিক করে উঠে। দুলি এই দুলি তুই ভালো হয়ে গেছিস? এই যে দেখ আমি সুমন। এই দুলি?”
আষাঢ় ও বেশ অবাক হয়ে যায় দোলন রেসপন্স করছে। সুমনের আঙ্গুলটা কিরকম শক্ত করে ধরে রেখেছে। আষাঢ় দোলনের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,,চাঁপাফুল? চাঁপাফুল তুমি শুনতে পাচ্ছো?
দোলনের কোনো রেসপন্স নেই আর।
সুমন বলে,,দুলি তুই ভালো হয়ে যাবি খুব তারাতাড়ি। তুই আবার আগের মতো হয়ে যাবি।আমি তোকে এখান থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবো একদম টেনশন নিস না তুই। আজ যাই আবার আসবো আমি তোর কাছে। সুমনের কথা বলার সাথে সাথে দোলন তার হাত থেকে সুমনের আঙ্গুল ছেড়ে দেয়।
আষাঢ় শুধু দোলনের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দোলন রেসপন্স করছে। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাবে।
“দেখলে আষাঢ় এহমাদ? দুলি এখানে থাকতে চায় না। আমি ঠিক আমার দুলিকে আমার কাছে নিয়ে যাবো। তুমি খুব শিঘ্রই দুলির মুখ থেকে শুনতে পাবে সে তোমাকে চায় না। ”
#চলবে,,,,,?