আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-২৪

0
30

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam

আষাঢ় জরুরি কাজে হসপিটালে গিয়েছে। মাত্রই বাড়িতে এসেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে শরীরটা তার ঠিক করে নেয় একবারে নিচ থেকে ফ্রেশ হয়ে তারপর তার চাঁপাফুলের সাথে দেখা করে রেস্ট নেওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ নিচ থেকে ফ্রেশ হয়ে তারপর দোলনের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা দেয়। বাড়িতে আর কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। কেউ বাড়িতে নেই নাকি? আষাঢ় ভাবতে ভাবতে উপরে উঠে যায়।

দোলনের রুমের সামনে এসে দরজায় নক করে। নার্স থাকে ভিতরে তাই নক করে নেয়।
আষাঢ় নক করার পরও ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স আসে না। আষাঢ় আবারও নক করে এবারও কোনো রেসপন্স আসে না। আষাঢ় ভিতরে ঢুকে পরে দরজা খুলে। ভিতরে ঢুকে আষাঢ়ের মাথা কাজ করা যেনো বন্ধ হয়ে যায়। বেডে দোলন নেই। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে কিন্তু কোথাও নেই। আষাঢ় চিল্লিয়ে নার্স আর সুমাকে ডাকতে থাকে। হুট করেই আষাঢ়ের চোখ যায় বিছানার অপর পাশে কারো কাপড় দেখা যাচ্ছে। আষাঢ় দৌড়ে সেখানে যায়।
বিছানার অপর পাশে গিয়ে আষাঢ়ের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। হাত পা গুলো কাঁপতে থাকে আষাঢ়ের। একি দেখছে সে? তার চাঁপাফুল নিচে পরে আছে।

আষাঢ় দৌড়ে দোলনের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডাকে,,,চ-চাঁপাফুল? এ-এই তুমি এখানে কেনো? কি হয়েছে তোমার? পরলে কি করে তুমি? একের পর এক প্রশ্ন করে দোলনকে কিন্তু কি করে উত্তর দিবে সে? আষাঢ়ের চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি ঝড়তে থাকে। হুট করে
দোলনকে এমন ভাবে নিচে পরে থাকতে দেখে নিজের খেই হারিয়ে ফেলে এটাও ভুলে যায় যে সেখান থেকে দোলনকে তুলতে হবে। যখনই মাথায় আসে তখন তারাতাড়ি বিছানায় তুলে দোলনকে। আষাঢ় চেক করতে থাকে কোথাও ব্যাথা পেয়েছে নাকি। এতকিছুর মাঝে আষাঢ় এটা খেয়াল করে না যে তার চাঁপাফুল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেতো এখন দোলনকে নিচে পরে থাকতে দেখে পাগল হয়ে আছে।

এরমধ্যে দরজা খুলে নার্স ভিতরে প্রবেশ করে।
রুমে ঢুকে আষাঢ় কে দেখে নার্সটা চোখ বড় বড় করে ফেলে।এই মুহূর্তে সে আষাঢ় কে মোটেও এখানে আশা করেনি। নার্সটা ভেবেছিলো আষাঢ় রাতে আসবে তাই বয়ফ্রেন্ডের সাথে নিরিবিলি কথা বলার জন্য বাইরে বাগানে গিয়েছিল। দোলনতো একই ভাবে শুয়ে থাকে তাই কিছু সময়ের জন্য গেলেও সমস্যা হবে না, এই ভেবে বাইরে গেছে।

নার্সটা আমতা আমতা করে বলে,,,স-স-স্যার?
আর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে কারণ আষাঢ় রক্ত লাল চোখ নিয়ে নার্সের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
নার্সটা শুকনো ঢুক গিলে বলে,,, স-স্যার আ-আসলে,,,,,

আমার ইচ্ছে করছে আপনাকে ঠাটিয়ে একটা চ;ড় লাগাতে কিন্তু সেটা করতে পারছি না আফসোস। আপনার গায়ে হাত তুলতে বিবেকে বাঁধছে আমার। আপনাকে চোখের সামনে দেখে রাগটা কমার বদলে বেড়ে যাচ্ছে। নিজের কন্ট্রোল হারানোর আগে নিজের ব্যাগ পাট্টা নিয়ে আউট হয়ে যান।

স্যার?

আই সেইড আউট। আর আপনাকে যেনো কোনোদিন আমার চোখের সামনে না দেখি।হসপিটালে ও আমার সামনে আসবেন না নয়তো এই জীবনের জন্য আপনার চাকরি কি করে বাতিল করতে হয় সেটা আষাঢ় এহমাদ আপনাকে দেখিয়ে দিবে।

“আমার কথাটা একবার শুনুন। আমি সরি স্যার আর এমন হবে না। ”

আউট! এতো জোরে চিল্লিয়ে বলে যে নার্স কেঁপে ওঠে। আষাঢ় এটাও ভুলে যায় রুমে অসুস্থ দোলন রয়েছে।

নার্সটা আর কিছু বলার সুযোগ পায় না। মাথানিচু করে চলে যায় সেখান থেকে।

আষাঢ় দোলনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। হাতের ক্যানোলাতে রক্ত উঠে যাচ্ছে। আষাঢ় সেটা পরিষ্কার করতে করতে দোলনের মুখের দিকে তাকায়। আষাঢ়ের হাত সেখানেই থেমে যায়।

দোলন উপরের দিকে চোখ টিপটিপ করে তাকিয়ে আছে।

আষাঢ় ছলছল চোখে দোলনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,,চাঁপাফুল? ও চাঁপাফুল?

আষাঢ়ের ডাকে দোলন ঘাড়টা ঘুরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তাই চোখ ঘুরিয়ে আষাঢ়ের দিকে তাকায়।

“তুতু তুমি আমার ডাকে সারা দিয়েছো? তুমি আমার দিকে তাকিয়েছো চাঁপাফুল? তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছো? ইয়া আল্লাহ আমার কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? আমায় একটা চিমটি কাটোতো চাঁপাফুল কথাটা বলে দোলনের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় আষাঢ়।

দোলন এক দৃষ্টিতে আষাঢ়ের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে বার কয়েক চোখের পলক ফেলছে।

আষাঢ় বুঝতে পারলো দোলন এখনও পুরোপুরি রেসপন্স করছে না। হয়তো শুধু ওর সেন্সটা পুরোপুরি এসেছে। নিজের হাতটা
সরিয়ে নিয়ে বলে,,,,তুমি আমার দিকে কতোদিন পরে তাকালে তুমি বলতে পারবে? ঠিক কতোদিন পর?

দোলন এখনও চোখ সরায়নি। দোলনের চোখের কোণ বেয়ে পানি পরতে থাকে চেয়েও কথা বলতে পারছে না আর না শরীরটা ও নাড়াতে পারছে না। তখন অনেক চেষ্টা করেছিল নাড়ানোর কিন্তু পারেনি। ফলস্বরূপ অসাবধানতা বশত বিছানা থেকেই পরে যায়। নার্সটা ড্রেস চেঞ্জ করার সময় দোলনকে বিছানার কিনারায় শুইয়ে দেয় যার দরূন ওমন একটা ঘটনা ঘটে।

এই এই তুমি কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়। তুমি ব্যাথা পেয়েছো কোথাও? বলোনা কিজন্য কাঁদছো তুমি? আমিতো বুঝতে পারছি না কোথাও লেগেছে নাকি কোথাও তেমন আঘাত পাওয়ার চিহ্ন নেই। কিছু বুঝতে পারছি না আমি।
আষাঢ় দোলনের চোখের পানি মুছে দেয় কিন্তু আবারও পানি দিয়ে চোখের কোণটা ভরে উঠে।

তুমি কিজন্য কাঁদছো? আমার সহ্য হচ্ছে না তোমার চোখের পানি। এতো বছর অনেক চোখের পানি ঝড়িয়েছো আমার জন্য প্লিজ আর কেঁদো না।আমার ব্যর্থ মনে হচ্ছে নিজেকে।

দোলন শুধু আষাঢ়ের দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে। এক সময় চোখ আর খোলা না রাখতে পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
আষাঢ় বুঝতে পারলো দোলন ঘুমিয়ে গেছে। কিছু সময় ঘুমন্ত দোলনের দিকে তাকিয়ে থাকে আষাঢ় পলকহীনভাবে। তার আজ ঈদের দিনের মতো খুশি লাগছে। তার চাঁপাফুল খুব শিঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে।

****
আজ শুক্রবার ছুটির দিন সকলেই একসাথে খেতে বসেছে। মেঘ মিসেস রিমি আর মি.শ্রাবণ। মি. শ্রাবণ আষাঢ় কে খাবার টেবিলে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে,,,, “আষাঢ় কে দেখছি না যে ও কোথায়? বাড়িতে নেই নাকি খাবে না।

–আমিতো সুমাকে দিয়ে ডাকিয়েছি। ছেলেটা এখনও আসছে না কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।

–দেখো হয়তো ঐ রুমে পাহারা,,আর কিছু বলতে পারে না মেঘ।মিসেস রিমির দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়।
মিসেস রিমি মেঘের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ইশারায় দেখায় মি.শ্রাবণ কে।

“এই সুমা আষাঢ় কে ডাক দিস নি?”

“দিয়েছি ম্যাডাম বললো একটু পর আসছে। মিসেস রিমির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সুমা আবার নিজের কাজে মন দেয়। ”

কেউ আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ খেতে থাকে।
সকলের খাওয়ার মধ্যে আষাঢ় সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে সকলেই খাওয়া বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আষাঢ়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সকলে কারণ আষাঢ় একা নামছে না তার কোলে দোলন। আর দোলনের চোখ দুটো খোলা।
আষাঢ় নিচে নেমে সুমাকে ডাকতে থাকে।

“সুমা এই সুমা নিয়ে আয় ঐটা তারাতাড়ি। ”

আষাঢ়ের কথায় সুমা দৌড়ে গিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে আসে। আষাঢ় সাবধানে দোলনকে বসিয়ে দেয়। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সকলেই ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

–হোয়াট? সকলে খাওয়া বাদ দিয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? মনে হচ্ছে ভূত দেখছো। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোমাদের মধ্যে কার জন্য সুখের আর কার জন্য দুঃখের জানিনা তবে চা,,,দোলন রেসপন্স করছে। আশা করছি খুব শিঘ্রই দোলন আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে।
তারপর হুইলচেয়ারটা নিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে,,, এই সুমা খাবারটা বাইরের বাগানে নিয়ে আয় আমি আর দোলন সেখানে যাচ্ছি।

বাড়ির লোক খুশি হলো নাকি কিছু বোঝা গেলো না
কারণ সকলেই গম্ভীর হয়ে আছে। এরমধ্যে মেঘ খাবার রেখে নিজের রুমে চলে যায়।

******
আষাঢ় ঠিক করে নেয় আজ বিকেলে দোলনকে নিয়ে একটু বাইরে বের হবে এতে করে তার মন ভালো থাকবে।মন ভালো হলে শরীর ও ভালো লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ দোলন কে রুমে তৈরি করে হুইলচেয়ারে বসায়। এরমধ্যে আষাঢ়ের একটা কল আসে। আষাঢ় দেখে তার হসপিটালের ম্যানেজার কল করেছে। সুমাকে ডেকে দোলনের পাশে দাঁড় করিয়ে আষাঢ় নিজের রুমে যায় কথা বলার জন্য।
সুমা চুপচাপ দোলনের হুইলচেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘ এরমধ্যে সুমাকে ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করে। খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে মিসেস রিমি যেনো কেমন করছে সুমা যেনো তারাতাড়ি যায়।বোকা সুমা বুঝতে পারলো না মিসেস রিমির শরীর খারাপ বা অসুস্থ হলে আষাঢ় কে না ডেকে তাকেই কেনো প্রথমে ডেকে পাঠাবে। সুমা সরল মনে চলে যায় প্রথমে দোলনকে নিয়ে ভাবনায় পরে গিয়েছিল দোলনকে একা রেখে যাবে নাকি যাবে না। মেঘ বলল,,তুই যা আমি দেখছি দোলনকে।

সুমা ভাবলো আষাঢ়তো এখনই এসে পরবে তাই সে কথা না বাড়িয়ে মিসেস রিমির কাছে চলে যায়। অন্য দিকে মেঘ হুইলচেয়ারটা টেনে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।

#চলবে?,,,,,,