#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam
ঘুম ভাঙতেই হুট করে চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখে চমকে যায় মেঘ। মানুষ কখনো যেটা কল্পনায় ও ভাবনায় না আনে মাঝে মাঝে সেই জিনিসটাই মানুষের সাথে ঘটে। তখন স্বভাবতই মানুষ চমকে যায় খুব অবাক হয়।
তেমনই মেঘ ও ঘুম থেকে উঠে হুট করে চোখের সামনে সুমনকে দেখে চমকে যায়। শুকনো ঢুক গিলে মনে মনে ভাবতে থাকে এই লোক এখানে কি করছে? কাল মেরে কি সাধ মিটেনি? আবার মারতে এসেছে নাকি? গাল দুটো এখনও ব্যাথায় টনটন করছে। নাকি আবার পুলিশে দিবে? আচ্ছা লোকটা কি পুলিশ সাথে করে নিয়ে এসেছে? মেঘ বেডের চাদর খামচে ধরে দরজার দিকে তাকায়। দরজা হালকা ভিড়ানো কাউকে দেখতে পায় না। পরোক্ষনে মেঘের মাথায় আসে তার মায়ের কথা পুরো ক্যাবিনে চোখ বোলায় কিন্তু সুমনকে ছাড়া কাউকেই দেখতে পায় না। মেঘ ভয়ে ভয়ে সুমনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সুমন।
আ-আপনি এ-এখানে কি করছেন? মেঘ তোতলাতে তোতলাতে বলে।
সুমন এতো সময় নিয়ে মেঘের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।মেঘের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে একটা টুল টেনে বসে । গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,, আপনি বোধহয় আপনার মা খালাদের খুঁজছেন।
মেঘ কিছু বলে না।
সুমন নিজেই বলে,,উনারা একটু নিচে গেছে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। দুইজনকেই খুব ক্লান্ত লাগছিল হয়তো সারারাত জেগে ছিলো এজন্য। আমিই পাঠিয়েছি খেয়ে আসার জন্য।
মেঘ অবাক হয়ে যায়,, মা আর মামনি কি করে পারলো এই লোকটার কাছে তাকে একা ছেড়ে যেতে? কাল কি দেখেনি এই লোকটাই তাকে কিভাবে মেরেছে। এখন যদি একা পেয়ে খু;ন করে ফেলে। মা আর মামনির বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে নাকি। মেঘের সব আজগুবি ভাবনার মাঝেই সুমন গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,ভয় পাবেন না আজ আপনাকে মারতে বা খু:ন করতে আসিনি আমি।
মেঘ বড় বড় চোখ করে সুমনের দিকে তাকায়। লোকটা কি করে মেঘের মনের ভাবনা বুঝলো?
আসলে কালকের জন্য সরি বাট নট সরি।আপনার গায়ে হাত তোলা হয়তোবা আমার ঠিক হয়নি।আবার হয়েছে হয়তো।
“আপনি কি নেশা টেশা করে এসেছেন? ” মেঘ ব্রু কোচকে বলে। একবার সরি বলছেন আবার বলছেন নট।আবার বলছেন গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি আবার বলছেন হয়েছে। আপনার মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে ডাক্তার দেখান।
সুমন মেঘের কথায় মুচকি হেসে বলে,, আসলেই আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে হয়তো। বাদ দেন সেসব কথা।
আপনি মোটেও নিজের ভালোবাসার জন্য অন্য কাউকে পৃথিবীর বুক থেকে সরানোর চেষ্টা করতে পারেন না। নিজের ভালোবাসা পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই ।
আপনি আষাঢ় কে ভালোবাসেন তাইতো? তাহলে এটাকি চান না যে আষাঢ় সুখি হোক?
আষাঢ় তো আপনাকে নিয়ে সুখি হতে চায় না। সে তার চাঁপাফুলের মধ্যে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে।
দিননা ওদের ভালো থাকতে। শুধু শুধু কেন এতো ঝামেলা? এতো সংঘাত? ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকাটাইতো মুখ্য বিষয়।
মেঘ সুমনের কথায় ফোঁড়ন কেটে বলে,,হয়তো কাউকে কোনো দিন ভালোবাসেন নি এজন্য এসব কথা বলছেন। ভালোবাসলে এসব কথা বলতেন না।আপনি কি করে বুঝবেন নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখলে কেমন লাগে?
মেঘের কথায় সুমন বেদনার হাসি হাসে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,,, মন ভাঙা লোককে বলছেন ভালোবাসেনি কাউকে? আপনি কতো বছর যাবৎ ভালোবাসেন আষাঢ় কে?
মেঘ একটু ভেবে বলে,,,,হবে হয়তো ছয় সাত কিংবা তার থেকেও কম।
দেখেছেন ভালো করে সময়টা ও বলতে পারছেন না। আর আমি? আমি দীর্ঘ পনেরো বছর যাবৎ একজনকে নীরবে ভালোবেসেছি। চোখের সামনে তাকে একটু একটু করে বড় হতে দেখেছি।নিজে তার যত্ন নিয়েছি।কিন্তু অবশেষে সে আমার না তার মনে অন্য কারো বাস। হাহ্ কি আর করবো বলুন সে সুখে থাকলেই আমার সুখ।
কার কথা বলছেন আপনি? মেঘ কৌতুহল হয়ে জানতে চায়।
সুমন বিষয়টা এড়িয়ে যায়।
আপনি ওদের জীবন থেকে সরে যান। সুন্দর একটা জীবন পরে আছে গুছিয়ে নিন।কারো জন্য কিছু থেমে থাকবে না। এখন হয়তো মনে হবে তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তাকে ছাড়া আমার চলবে না কিন্তু দেখবেন পরবর্তীতে গিয়ে অতীতের এসব কথা ভেবে হাসি পাবে।
যে আমাকে চায় না কেনো তার বিরক্তির কারণ হবো? নিজের ভালোবাসা না হয় নিজের ভিতরই যত্নে পোষা থাকুক।
সুমন আরো অনেক কথা বলে মেঘকে।মেঘ সেই কথা চুপচাপ শুনে আর চোখের পানি ঝড়ায়।
সুমন তার কথা শেষ করে একটা লম্বা নিশ্বাস নেয়। তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা নীরবে কাঁদছে। সুমন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়েও কি মনে করে সরিয়ে নেয়। তারপর কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।
পিছন থেকে শুনতে পায়,,,,
“আমি চলে যাবো ওদের জীবন থেকে। চিরদিনের জন্য চলে যাবো আমি। আর কখনো ওদের মুখোমুখি হবো না।আমি আর এই দেশেই থাকবো না। ওরা ভালো থাকুক।
সুমন মেঘের কথা শুনে মুচকি হাসে। তারপর পিছনে না তাকিয়েই বেস্ট অফ লাক বলে বের হয়ে যায়।
মেঘ সুমনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ঝড়ায়।কি অদ্ভুত জীবন মানুষের। আচ্ছা মানুষের জীবনে প্রেম না থাকলে কি খুব বেশি ক্ষক্ষতি হতো?
যার ভাগ্যে যে নেই তার প্রতি সৃষ্টিকর্তা এমন ভালোবাসা কেন দিলো?
********
সকাল থেকে দোলন কান্না করে যাচ্ছে। আষাঢ় হাজার বার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে, কোথায় কষ্ট হচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে যেনো তাকে জানায় কিন্তু দোলন একটা টু শব্দ ও করছে না। এমনকি আষাঢ়ের দিকে এক পলকের জন্য তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। আষাঢ় চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে কি হয়েছে মেয়েটার।
কালকের বিষয়টা নিয়ে ও টেনশনে আছে। মেয়েটা এখন ও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।আষাঢ় কে খুলে বলছে ও না কি হয়েছে একাধারে শুধু কেঁদেই চলেছে।
শেষ পর্যন্ত আষাঢ় হাল ছেড়ে দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে খালামনিকে কল দেয়।
দোলনের খালামনি খবর পেয়ে দৌড়ে আসে।
দোলন খালামনিকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরে।
মিসেস খেয়া বেকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে,,, কি হয়েছে দুলি মা কাঁদছিস কেনো?
খালামনি?
হ্যা খালামনিকে বল মা কি হয়েছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে মা?
কোথাও কষ্ট হচ্ছে না খালামনি।
তাহলে কেনো কান্না করছিস তুই?
আমি বাড়ি যাবো তোমার সাথে খালামনি।
আষাঢ় দোলনের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে দোলনের দিকে তাকায়। দোলনের খালামনি আষাঢ়ের দিকে তাকায়। তারপর চোখ ঘুরিয়ে দোলনের দিকে তাকিয়ে বলে,, হ্যা ঠিক আছে যাবি বাড়ি।কিন্তু এতে কান্না করার কি আছে?
আমি এখনই যাবো তোমার সাথে। আর এক মুহূর্ত ও এই নরকে থাকতে চাই না।
তুমি এসব কি বলছো চাঁপাফুল? আষাঢ় কিছুটা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
দোলন আষাঢ়ের কথায় চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,,খালামনি এই লোকটাকে বলে দাও আমি উনার সাথে কথা বলছি না।আর না কথা বলার কোনো ইচ্ছে আছে। আমি জাস্ট এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে যেতে চাই।
চাঁপাফুল তুমি আমার সাথে এরকম করে কেনো কথা বলছো? আমরা আস্তে ধীরে বসে সব খোলসা করি?
আষাঢ়ের কথায় দোলন ধীরে ধীরে উত্তেজিত হতে থাকে। দোলনের খালামনি আষাঢ় কে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে,,,এখন ওকে উত্তেজিত করা ঠিক হবে না আষাঢ়। আমার থেকে তুমি ভালো জানো তাই না?
আষাঢ় মাথা নাড়ে।
মিসেস খেয়া আষাঢ়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,, কয়েকটা দিন যেতে দাও সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি এখন দুলিকে নিয়ে যাই তারপর দুলি পুরোপুরি সুস্থ হলে না হয় সব মিমাংসা হবে।
আষাঢ় আর কথা বাড়ায় না। কি বলবে সেটাও জানে না। আষাঢ় শুুধু জানে তার চাঁপাফুল এখন তাকে সহ্য করতে পারছে না।
মিসেস খেয়া দোলনকে তৈরি করে সাথে নিয়ে চলে যায় আষাঢ়ের চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
#চলবে,,,,,?
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২৯
#Jhorna_Islam
আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করা হয়েছে খালামনি। আমার বাবা মা কে তুলে অপমান করেছে। আমার বাবা মাকে যাচ্ছে তাই বলেছে। আমি বড়লোক ছেলে দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারিনি। নিজের রূপ দেখিয়ে আষাঢ় কে পাগল করেছি। টাকার জন্য আষাঢ় কে নিজের প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়েছি। এমনকি বাংলা সিনেমার মতো আমাকে টাকা অফার করা হয়েছে, আষাঢ়ের জীবন থেকে সড়ে আসার জন্য। আমি নিজের অপমান মেনে নিয়েছি কিন্তু কোনো ভাবেই আমার বাবা মায়ের অপমান মেনে নিতে পারিনি।
আমার বাবা মা কে ওমন করে বলা আমার সহ্য হয়নি। আমি সন্তান হয়ে কি করে তাদের অপমান মেনে নিবো? শুধু মাত্র নিজের ভালোবাসার জন্য বাবা মা কে আমি অসম্মান করবো? তুমি বলো খালামনি।
চোখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে কথা গুলো বলে দোলন।মিসেস খেয়া চুপচাপ দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আষাঢ়ের বাড়ি থেকে এসেছে আজ প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেছে। এরমধ্যে আষাঢ় বহুবার বহু ভাবে দোলনের থেকে আসল কাহিনী জানতে চেয়েছে। জানতে চেয়েছে তার অপরাধ কি? কিন্তু দোলন আষাঢ় কে ওসব বলবে দূরে থাক আষাঢ়ের সাথে কথা বলতেই নারাজ। আষাঢ় কে সব সময় ইগনোর করে চলে।
আষাঢ় কোনো উপায় না পেয়ে মিসেস খেয়ার হাত ধরে বলে তাকে সাহায্য করার জন্য। মিসেস খেয়া ও রাজি হয়ে যায় উনি নিজেও জানতে চায় কি কারণে দোলন এমন করছে। আষাঢ় দেখা না করে চলে যাওয়ায় এই সামান্য কারণে দোলন সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার মেয়ে না। মিসেস খেয়া ও অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল কি কারণ কিন্তু দোলন এড়িয়ে গেছে। তাই তিনি আজ বাধ্য হয়ে কসম দিয়েছে কি কারণে দোলন এমন করছে।
কোনো উপায় না পেয়ে দোলন সব বলে।
মিসেস খেয়া সবকিছু জেনে দোলনের মাথায় হাত দিয়ে বলে,,, কে তোকে ওসব বলেছে মা?
দোলন নিশ্চুপ।
“বল আমাকে।”
“আমি বলতে চাই না। ”
“তুই চাস না আমরা জানি কে তোকে এসব বলেছে? ”
“খালামনি কি কারণে ওমন করছি সেটা বলেছি।তুমি কারণ জিজ্ঞেস করেছো বললামতো কারণ। ”
“কে করেছে সেটা জানতে হবে না? ”
“এতো কিছু জেনে লাভ নাই। এখন আর পুরনো কথা টেনো না।”
“আমি না দুলি তুই পুরনো কথা টেনে আষাঢ় কে কষ্ট দিচ্ছিস।আষাঢ়ের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস।”
দোলন খালামনির দিকে চোখ তুলে তাকায়।
ওমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আষাঢ়ের দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস? ছেলেটার মুখটার দিকে একবার ভালো করে তাকালে দেখতি তোর জন্য কি অবস্থা তার।অনেকতো হলো সবকিছু এবার মিটমাট কর। এসব ঝামেলা আর ভালো লাগছে না দুলি।আর কতো মান অভিমানের পালা চলবে? আমারও বয়স হয়েছে তোর আর সুমনের জন্য চিন্তা করতে করতে আমি শেষ। এবার এসব মিটিয়ে নে মা। তুই কি চাস না তোর খালামনি তোদের কে সুখি দেখে তারপর দুই চোখ বুজুক?
এভাবে কেনো কথা বলছো খালামনি?
আষাঢ় তোর জন্য কষ্ট পাচ্ছে দুলি মা। আর তুই নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস।
উফফ খালামনি সেই এক কথা বারবার। আষাঢ় আষাঢ় আর আষাঢ়। আমার মাথা প্রচন্ড ধরেছে আমি গেলাম।দোলন কথাগুলো বলেই নিজের রুমে চলে যায়।
মিসেস খেয়া মনে মনে অংক মিলাচ্ছে। তিনি ভাবতে পারছেন না দোলনকে এভাবে কেনো কথা বলেছে। হয়তো ধারণা করতে পারছেন লোকটা কে। তবে মনে প্রাণে চাচ্ছেন যেনো উনার ধারণা ভুল হয়।
নিজের ভাবনা থেকে মিসেস খেয়া বের হয়ে এসে হাতের ফোনের দিকে তাকায়। এতক্ষন ধরে আষাঢ় কলে ছিলো। দোলনের বলা প্রতিটি কথা আষাঢ় শুনেছে।
আষাঢ় আছো? কানে ফোন ধরে মিসেস খেয়া জিজ্ঞেস করে।
“হ্যা আন্টি বলুন।”
সবইতো শুনলে।এখন বাকিটা তোমার বের করতে হবে। দুলি আর কিছু বলবে না। আমি যতটুকু চিনি ওর থেকে আর কিছু বের করা সম্ভব না।
চিন্তা করবেন না আন্টি এবার সব রহস্য উন্মোচন হবে। আসল পালের গো’দা কে বের হয়ে আসবে।
আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে বিকেলে সময় হবে দেখা করার?
আমিতো সব সময় ই ফ্রি চলে এসো সমস্যা নেই।
আচ্ছা এখন রাখি।
আচ্ছা।
মিসেস খেয়া কান থেকে ফোন নামিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখতে পায় সুমনকে। সুমন কেমন করে তাকিয়ে আছে।
“কি-কি হয়েছে? ”
“সুমন দায়সারাভাবে বলে কোথায় কি হয়েছে? ”
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?”
“সবকিছুতেই এখন কেমন রহস্য খুঁজে পাই মা।”
“কিসের রহস্য?”
এহমাদ বাড়িতে রহস্য আর রহস্য। সেই রহস্য আমাদের বাড়িতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কি অদ্ভুত বিষয় তাই না মা? ”
তুই কি বলছিস সুমন আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
বাদ দাও কিছু বুঝতে হবে না। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। তোমার কি সময় হবে?
এভাবে কেনো কথা বলছিস? কি বলবি বল। আর সন্তানের জন্য মায়ের অফুরন্ত সময় বাবা।
সুমন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,, আমি ঠিক করেছি চলে যাবো।
চলে যাবি মানে? কোথায় যাবি?
দেশের বাইরে।
কিহ্? কি বলছিস এসব পাগল হয়ে গেছিস তুই?
দেশের বাইরে চলে যাবি মানে?
আমার এই দেশে মন টিকছে না মা। দিন শেষে আমি ভালো থাকতে পারছি না।
মিসেস খেয়া সুমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, এসব বলিস না বাবা। তুই আমার একমাত্র সম্বল। তুই চলে গেলে আমি বাঁচবো কাকে নিয়ে? শেষ বয়সে এনে আমাকে একা করে দিবি বাবা? মায়ের কথাটা একটি বার ভাব্বি না তুই? তোকে ছাড়া আমি মরেই যাবো। মিসেস খেয়া কান্নায় ভেঙে পরে।
সুমন মায়ের কান্না দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,, ঠিক আছে শান্ত হও কোথাও যাবো না আমি।
সত্যি?
হ্যা। তবে একটা শর্তে।
কি শর্ত?
লম্বা একটা ট্যুর দিতে হবে। মাইন্ডটা ফ্রেশ হওয়া দরকার।
ঠিক আছে বাবা।
******
আষাঢ় দোলনকে ফোন দেয়। ফোন রিসিভ করে না দোলন। দোলন ফোন রিসিভ না করায় মেসেজ পাঠায়,,,,
দোলন মেসেজের আওয়াজ শুনে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আষাঢ় লিখেছে,,,”ফোনটা রিসিভ করো ময়না পাখি। ”
দোলন সিন করেও কোনো রেসপন্স করে না।
আবারও মেসেজ আসে,,, ও ময়নার মা কথা বলো প্লিজ।
দোলন এবার কিছুটা রেগে যায় ময়নার মা বলায়।
রাগী ইমোজি দিয়ে বলে,,, “কে ময়নার মা?
” কেনো তুমি? ”
“আমি ময়নার মা? ”
“হুু।”
আপনার সাহস তো কম না।আপনি আমাকে ময়নার মা বলছেন কোন সাহসে?
আমার সাহস বরাবরই একটু বেশি তোমার থেকে সেটা কে ভালো জানে ময়নার মা?
আমাকে একদম ময়নার মা বলবেন না। আমি মোটেও আমার মেয়ের নাম ময়না রাখবো না।
তাহলে কি রাখবে ময়নার মা?
আপনি ময়নার মা। নাহ্ ময়নার বাবা বাজে লোক।
হাহাহা তুমি ময়নার মা হলে আমিইতো ময়নার বাবা হবো।
দোলন রাগতে গিয়েও রাগে না।বুঝতে পারে লোকটা তাকে কথার জালে ফাঁসাচ্ছে। ইচ্ছে করে এসব করছে যেনো দোলন রেগে যায়।
আষাঢ় আর কথা বলতে পারে না তার ডাক এসে যায় হসপিটালে যেতে হবে। তাই সে তৈরি হয়ে চলে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
****
বিকেলের দিকে দোলন ড্রয়িংরুমে এসে শুনতে পায় খালামনি কার সাথে যেনো কথা বলছে।
দোলন এগিয়ে যেতেই কিছু কথা তার কানে আসে।
কিহ্ এক্সিডেন্ট? কি করে হলো আষাঢ় ঠিক আছে? সত্যি করে বলো।আষাঢ়ের কিছু হয়নিতো? আষাঢ় কি করে এক্সিডেন্ট করলো?
দোলনের কানে কথা গুলো যেতেই থমকে যায় সে।হাত পা কাঁপতে থাকে। দোলন কোনো কিছু না ভেবে এক দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কানে একটা কথাই বাজছে আষাঢ় এক্সিডেন্ট করেছে।
#চলবে,,,?