আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-৩০+৩১

0
25

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam

আষাঢ়!!!

দোলন হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আষাঢ় কে ডাকে। হসপিটালের কয়েকজন থাকা লোক ড্যাব ড্যাব করে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে। দোলন অন্য কোনো দিকে খেয়াল দিলো না সে তার চোখের পানি গাল থেকে মুছতে মুছতে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

আষাঢ় মাত্রই অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে এসেছে। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিল এমন সময় দোলনের চিৎকার শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।দোলনকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। কখনো কল্পনা ও করেনি যে দোলনকে এই সময় এখানে দেখতে পাবে।

আষাঢ় অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দোলন এগিয়ে আসে আষাঢ়ের কাছে। আষাঢ় কে আর আষাঢ়ের সাথে উপস্থিত থাকা সকলকে অবাক করে দিয়ে আষাঢ়ের গালে ঠাস করে চ’ড় লাগিয়ে দেয় দোলন। আশেপাশের সকলেই এহেন কান্ডে ভরকে যায়। সকলেই বেশ অবাক হয় মেয়েটার সাহস দেখে হসপিটাল এসে হসপিটালের ডক্টর কে সকলের সামনে চ’ড় মেরে বসা যে সে কথা না। এমন সাহসিকতার কাজটাই দোলন করিয়ে দেখিয়েছে।

দোলন পাগলের মতো বিহেভ করতে থাকে। আষাঢ় কে এই মারছে তো এই নিজের চুল টেনে বলছে তুমি ইচ্ছে করে এই নোংরা নাটক করেছো? এক্সিডেন্টের নাটক করেছো তুমি? মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা? খুব ভালো লাগে না অন্য কে কষ্ট পেতে দেখতে? আরো নানান ধরনের কথা বলতো থাকে দোলন। আষাঢ় আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সকলেই তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আষাঢ় গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,, আসলে,,, আসলে আমার ওয়াইফ,,, ফ্যামিলি ম্যাটার এক্সকিউজ বলেই আষাঢ় দোলনের হাত ধরে বলে,,,ক্যাবিনে চলো।

দোলন আষাঢ়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,, আমি কোথাও যাবো না তোমার সাথে।

“আসো আমার সাথে বসে কথা বলি?”

“আমি তোমার সাথে বসে কোনো কথা বলতে চাই না। ”

“ওকে বসে বলতে হবে না দাঁড়িয়েই কথা বলবো আমরা ওকে?”

“বাজে লোক। ”

আষাঢ় একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে হসপিটালের কেউ আশেপাশে নেই। দোলনকে এখান থেকে না নিয়ে গেলে সে এই লোকদের সামনে আষাঢ়ের মান সম্মান যতটুকু আছে তাও ম্যাডাম পানিতে মিশিয়ে দিবে। আষাঢ় কোনো উপায় না পেয়ে দোলনকে পাঁজা কোলে নিয়ে তারাতাড়ি নিজের ক্যাবিনে ঢুকে যায়।
লোকগুলো শুধু হাসে কিছু বলে না। হাসবেন্ড ওয়াইফের মাঝে তাদের আর কি বলার আছে।

আষাঢ় ক্যাবিনে ঢুকে দোলনকে নামিয়ে দেয়। এতোটুকু সময়ের মধ্যেই আষাঢ় কে কিল ঘুষি মেরে বুক পিঠের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে দোলন।
দোলনকে কোল থেকে নামিয়ে তারাতাড়ি ক্যাবিনের দরজা লাগিয়ে দেয়।

দোলন আষাঢ়ের থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে হাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে,,, তোমার সাহস তো কম না তুমি কোন সাহসে আমাকে কোলে নিয়েছো?

“আমিতো জানতাম কাউকে কোলে নিতে শক্তি লাগে। সাহসের প্রয়োজন পরে কোলে নিতে গেলে জানা ছিলো না আমার। ”

“তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে ওয়াইফ বলার? তুমি আমাকে ওয়াইফ বলে কেনো পরিচয় দিয়েছো ঐ লোকদের সামনে? ”

আজব তাহলে কি পরিচয় দিবো? বাবুর মা? চোখ মে’রে বলে আষাঢ়।

দোলন চোখ কটমট করে বলে,,আমি তোমার ওয়াইফ না।

এক্সিডেন্টের সাথে সাথে দেখছি তোমার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার আমার সম্পর্ক কি? ভুলে গেছো ঐদিনের সন্ধার কথা? মনে করিয়ে দিতে হবে তোমাকে প্রপোজ করার দিন আমাদের বিয়ের কথা?

দোলন নিশ্চুপ।

ওকে তোমার যখন মনে নেই তাহলে কি করার? আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।

অতীত,,,,,,,,,
ঐদিন বাইকে করে আসার সময় দোলন
যখন আষাঢ় কে মজা করে নানান ধরনের কথা বলে তখন আষাঢ় সেটা সিরিয়াস নিয়ে নেয়। আষাঢ় এতোটাই রেগে গিয়েছিল দোলন কিছু বলতে ও পারেনি। আর না আষাঢ় দোলনকে কিছু বলতে দিয়েছে। আষাঢ় দোলনকে বাইকে বসিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে থাকে দোলন অজানা জায়গায়
যেতে দেখে অনেক বার জিজ্ঞেস করে কোথায়

যাচ্ছে কিন্তু আষাঢ় পুরো নিশ্চুপ ছিলো শুধু একটু পর পর দোলনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েছে।
আষাঢ় বাইক এনে একটা জায়গায় থামায়।দোলন আশেপাশে তাকায় তারপর একটা জায়গায় গিয়ে চোখ আটকায়। বড় বড় অক্ষরে লিখা আছে
❝ কাজি অফিস❞
দোলন প্রথমে ভয় পেলেও পরে আষাঢ় কে হাসি হাসি মুখে বলে,,, তুমি এখানে তোমার বন্ধুর বিয়ের সাক্ষী করতে এনেছো আগে বলবে না? আমি মিছে মিছে কতো ভয় পেলাম। ধূর আষাঢ় তুমিও না।
দেখো আমার হাত পা এখনো কাঁপছে বুকটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। আষাঢ় তখনও নিশ্চুপ ততততক্ষণে তার বন্ধুরা এসে হাজির। আষাঢ় তাদের আসতে দেখে ভিতরে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। দোলনের হাতটা আলগোছে ধরে ভিতরে প্রবেশ করে বলে কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।

আষাঢ়ের কথায় দোলন হাসতে হাসতে বলে,,, কনে ছাড়া বিয়ে পড়াবে কি করে?

আষাঢ় দোলনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে তুমিইতো কনে।

— ম-মা-মানে?

— মানে খুব সহজ। তোমার আর আমার বিয়ে হবে এখন, আর তুমি হলে কনে।

— পাগল হয়ে গেছো তুমি আষাঢ়? কি আবোলতাবোল কথা বলছো?

— আমিতো কবেই পাগল হয়েছি তোমার প্রেমে চাঁপাফুল।

— আষাঢ় বাড়ি চলো রাত হয়ে
যাচ্ছে।

— যাবো কিন্তু বিয়ে করার পর।

— আষাঢ় এসব পাগলামো বন্ধ করো। বিয়ে কি এতই সহজ? বললাম আর হয়ে গেলো। বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে এভাবে হুট করে বিয়ে হয়ে যায়?

— হ্যা এখন হবে। তুমি এখন যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে বুঝবো তুমি আমাকে ভালোবাসো না।

— আষাঢ়?

— বাড়ির কথা চিন্তা করো না কেউ কিছু জানবে না আমরা এই কয়জন ছাড়া।

— আমি করতে পারবো না আষাঢ়।

— তাহলে কি তুমি আমায় ভালোবাসো না?

— অনেক তর্কাতর্কির পর দোলন আষাঢ়ের জেদের কাছে হার মানতে হয়। কিন্তু দোলন ও শর্ত জুড়ে দেয় বিয়ে হবে কিন্তু তারা থাকবে আগের মতোই বাড়ির লোক না মানা পর্যন্ত এই বিয়ের কথা কেউ জানবে না।

আষাঢ় দোলনের সব শর্তে রাজি হয়। অতঃপর দুইজনের সম্মতিতে তারা দুইজন একটা নতুন হালাল সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।একে অপরের সম্পর্ককে একটা নতুন নাম দেয়। একে অপরের হয়ে যায় সারাজীবনের জন্য।
দোলন তারপর বাড়ি গিয়ে খালামনিকে ধরে অনেক কান্না করে। আষাঢ়ের সাথে অনেক দিন রাগ করে থাকে।আষাঢ়ের কতো কাঠ খড় পোঁড়াতে হয় সেই রাগ ভাঙাতে।

******
মিসেস খেয়া যখন ফোনে কথা বলে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলো এটা ভেবে যে আষাঢ় এক্সিডেন্ট করেছে। আসলে উনার বুঝতে ভুল হয়েছে। আষাঢ় ক্যাবিনে ফোন রেখে গিয়েছিল অপারেশন থিয়েটারে। তখন নার্স এসেছিলো একটা ফাইল নিতে বারবার আষাঢ়ের ফোন বাজতে দেখে কল টা রিসিভ করে। হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কল হবে। নার্স জানায় একটা এক্সিডেন্ট কেস এসেছে আষাঢ় অপারেশন থিয়েটারে। মিসেস খেয়া ভাবে আষাঢ় এক্সিডেন্ট করেছে। আসলে মিসেস খেয়ার বুঝতে ভুল হয়েছে। আর দোলনও পুরো কথা না শুনে পাগলের মতো ছুটেছে।

সুমন জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে মা?

তেমন কিছু না। তুই তৈরি হয়ে চলে যাচ্ছিস?

হ্যা।

কয়দিনের জন্য ট্যুরে যাচ্ছিস?

তা জানিনা তবে মাইন্ড ফ্রেশ করার আগে আমি আর ফিরবো না।

ঠিক আছে যা তবে সাবধানে থাকিস।

তারপর সুমন মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মিসেস খেয়া মন থেকে দোয়া করে ছেলে যেনো সব দুঃখ কষ্ট ভুলে তারপর নতুন জীবন শুরু করতে পারে।

******

আমি আর তোমার কোনো শর্ত মানবো না চাঁপাফুল। এখন আমাদের বিয়ের কথা সবাই জানবে। আর তুমি এখন এই মুহূর্তে আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে।

মোটেও না।

তোমার কথা আমি শুনছি না।

আমি না গেলে তুমি আমাকে কি করে নিবে? দোলন কথাটা বলেই ঘুরে চলে আসতে নেয়। কিন্তু আষাঢ় দোলনকে যেতে দেয় না পিছন থেকে ঝাপটে ধরে। দোলন অনেক মোচড়া-মোচড়ি করে ছুটার জন্য কিন্তু আষাঢ়ের শক্তির সাথে পেরে উঠে না।
আষাঢ় দোলনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,আ’ম সরি চাঁপাফুল।

দোলন আষাঢ়ের বুকে ঢলে পড়ে। আষাঢ় আগলে ধরে নেয় তার চাঁপাফুলকে। ডাক্তার হওয়ার সুবাদে ভালো করেই জানে কি করে একজনকে অজ্ঞান করতে হয়।আষাঢ় সেই টেকনিক ই কাজে লাগিয়েছে। দোলনকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। আসক কালপ্রিট ধরতে হবে দোলন নিজে থেকে জীবনে ও বলবে না।
আষাঢ় দোলনকে পাঁজাকোলে করে নিয়ে চলল তার শ্বশুর বাড়ি ।

#চলবে,,,,,?

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam

আষাঢ় দোলনের সামনে মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবটা এমন একটা অবলা নিষ্পাপ ছেলে যে ভাজা মাছ কি করে উল্টে খেতে হয় সেটাই জানে না।

দোলন ভয়ংকর রেগে আছে, দেখে মনে হচ্ছে এখনই আষাঢ় কে আস্তো গিলে খাবে নয়তো কাঁচা চিবিয়ে খাবে। এতোটাই রেগে আছে যে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।
হুট করে আষাঢ়ের গালে চ’ড় বসিয়ে দেয় দোলন।
আষাঢ় ঠোঁট উল্টে দোলনের দিকে তাকায় মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলেকে মেরেছে।
দোলন আবারও আরেক গালে চ’ড় দেয়।
চ’ড় দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে একটু পর পর চোখের পানি ঝাড়াচ্ছে সে।
আষাঢ় দোলনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, রাগটা কি একটু কমেছে?

আষাঢ়ের প্রশ্নে দোলন রাগী দৃষ্টিতে আষাঢ়ের দিকে তাকায়।
আষাঢ় ঠোঁট উল্টে বলে,,, কমেনি? আচ্ছা ঠিক আছে আরেকটা মারলে মনে হয় কমে যাবে। নাও আরেকটা মারো বলেই আষাঢ় নিজের গাল এগিয়ে দেয় দোলনের দিকে।
দোলন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আষাঢ় যে ইচ্ছে করে এরকম ঢং করছে বুঝতে পারছে কিন্তু এসব ঢং করে কোনো লাভ হবে না।

“মারবে না আর আমায়?”

“নো রেসপন্স। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে এবার ঠান্ডা হয়ে আমার পুরো কথা শুনো।”

“আমি কারো কথা শুনতে চাই না। ”

“শুনতে হবে তোমাকে আমার কথা। ”

“আমি বাধ্য নই কারো কথা শুনতে। ”

“তোমার স্বামীর কথা শুনতে তুমি একশো বার বাধ্য”
আষাঢ়ের কথা শুনে দোলন চোখ গরম করে তাকায়।
আষাঢ় দোলনের দিকে তাকিয়ে মুখটা কাচুমাচু করে বলে,,,না মানে সুমার পুরো কথা যখন শুনেছো তখন আমারও পুরো কথা শুনতে হবে।

আষাঢ়দের বাড়িতে দোলনকে নিয়ে এসেছে আজ দুই দিন। এই দুই দিন দোলন এক প্রকার রুমে বন্দি প্রায়।শুধু সুমা এসে টাইম টু টাইম রুমের ভিতর খাবার দিয়ে গেছে। এই দুই দিন আষাঢ় ও কোথাও বের হয়নি। দোলন ভেবেছে এই লোককে বুঝি হসপিটাল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে নয়তো হসপিটাল যায় না কেন? পরে বুঝতে পারলো ছুটি নিয়েছে দোলনকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য। আজকে একটু আগে একটা ইমার্জেন্সি কল আসায় বাইরে যায় আষাঢ়। দোলন এই সুযোগে চাইলে চলে যেতে পারতো যাওয়ার জন্য পা ও বাড়িয়েছিলো কিন্তু কি মনে করে যেনো আর যায়নি।

দোলন যখন মন খারাপ করে রুমের ভিতর চুপটি করে বসেছিলো ঠিক সেই সময় সুমা খাবার নিয়ে আসে।
সুমা দোলনের দিকে খাবার এগিয়ে দেয়।
দোলনের একটুও খাওয়ার ইচ্ছে নেই মনে।

“টেবিলের উপর রেখে দাও সুমা আমার খিদে নেই। খিদে লাগলে খেয়ে নিবো।”

সুমা দোলনের কথা মতো খাবার টেবিলে রেখে দেয়। তারপর এদিকে ওদিকে তাকায়। বারান্দায় গিয়ে উঁকি দিয়ে আসে তারপর আবার বাথরুমে গিয়ে উঁকি দেয়।

সুমার মতিগতি কিছুই দোলন বুঝতে পারছে না শুধু ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রইলো।
সুমা রুমের ভিতর আষাঢ় কে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর এসে মেঝেতে বসতে নেয়।

আরে আরে কি করছো?

বসছি ম্যাডাম।

এই ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা মেঝেতে কেনো বসছো? এখানে বসো বলেই নিজের পাশে বিছানায় বসতে বলে।

সুমা খুব খুশি হয়ে যায় দোলনের কথায়। মেঘ হলে জীবনে ও বিছানায় বসতে দিতো না তাকে আর তার সাথে কতো খারাপ ব্যবহার করতো।দোলনের ব্যবহারের জন্য আরো দোলনকে বেশি ভালো লাগে সুমার।
প্রতিদিনই দোলনের সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু আষাঢ় রুমে থাকার কারণে পারে না। আজ দেখা যায় আষাঢ় রুমে নেই এজন্য সব চেক করে দেখেছে বারান্দা বা বাথরুমে আছে নাকি।না পেয়ে বসেছে কথা বলার জন্য।

দুইজন কথায় মেতেছে। দোলন ও চুপচাপ থাকতে থাকতে বোর হচ্ছিলো।সুমা আসায় ভালোই হয়েছে একটা কথা বলার মানুষ খুঁজে পেয়েছে সে। দোলন আর সুমা নানান ধরনের কথা বলতে থাকে। অবশ্য সুমা আষাঢ়দের বাড়ি আর আষাঢ়দের নিয়েই কথা বলছে।কে কেমন কে সুমাকে ভালোবাসে কে খারাপ ব্যবহার করে। সুমার খুব পছন্দ হয়েছে দোলনকে এসব বলতে বলতে হুট করে সুমা আষাঢ় আর মেঘের বিয়ের কথা তুলে।
দোলন এবার নড়েচড়ে বসে, সে বেশ অবাক হয় বিয়ের কথা শুনে। আষাঢ় মেঘকে বিয়ে করে নিচ্ছিল প্রায় এটা শুনে দোলনের মাথায় বা’জ পরে। দোলন ভাবতে পারছে না তাকে ছাড়া আষাঢ় আবার অন্য কাউকে বিয়ে করতে কি করে রাজি হলো। দোলন এবার সবকিছু খুলে বলতে বলে সুমাকে।সুমা ও কথার তালে যতটুকু জানে বলতে থাকে। সুমাতো আর ভিতরের কাহিনী জানে না। সুমা যখন ওদের বিয়ের কথা বলছিল আষাঢ় তখন এসে উপস্থিত হয়। সুমার কিছু কথা আষাঢ়ের কানে যায়। সুমার কথা শুনে আষাঢ়ের মাথায় হাত মেয়েটা এসব কি করছে। গরম তেলে পানি কেন ছিটাচ্ছে।
আষাঢ় নানা ভাবে ইশারা দিতে থাকে সুমাকে চুপ করতে কিন্তু মেয়েটা কথা বলতে এতোই ব্যস্ত যে আষাঢ় কে দেখতেই পায়নি।
আষাঢ় যখন সুমার দিকে তাকিয়ে না না বলে হাতে ইশারা দিচ্ছিলো দোলন তখন দেখে ফেলে।
দোলনকে আষাঢ় দেখে হাত নামিয়ে হাসার চেষ্টা করে। সুমাও তখন আষাঢ় কে দেখতে পায়।
সুমা আষাঢ় কে দেখে বসা থেকে উঠে চলে যেতে থাকে। যেতে যেতে আবার আষাঢ়ের দিকে তাকায়।
আষাঢ় ও সুমার দিকে চোখ গরম করে তাকায়। সুমা তা দেখে এক দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে।

আষাঢ় কিছুতেই তার কথা শুনাতে পারছে না দোলনকে। শেষে উপায় না পেয়ে আষাঢ় পিছন থেকে দোলনকে ঝাপটে ধরে। দোলন অনেকটা সময় নিয়ে ছোটাছুটি করার চেষ্টা চালায় কিন্তু আষাঢ়ের শক্তির সাথে পেরে উঠে না।আষাঢ় ও ছাড়ার পাত্র নাকি নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে তার চাঁপাফুলকে। দোলন যখন শান্ত হয়ে যায় আষাঢ় তখন মুচকি হাসে। তারপর পিছন থেকেই দোলনের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,,আমার চাঁপাফুল, গুড গার্লের মতো এবার তোমার আষাঢ় মাসের সব কথা শুনো। আর যদি না শুনে বা বিরক্ত করো তাহলে কিন্তু রোমান্টিক অত্যাচার চলবে বলে দিলাম।

আষাঢ়ের কথা শুনে দোলন রোবটের মতো দাড়িয়ে থাকে এমনিতেই তার অবস্থা খারাপ আষাঢ় তাকে জড়িয়ে ধরেছে। আষাঢ়ের এহেন কান্ডে দোলন কাঁপতে থাকে। আষাঢ় তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। মনে মনে বলে,, একটু জড়িয়ে ধরাতেই তোমার এই অবস্থা চাঁপাফুল?

আষাঢ় গলা খেঁকাড়ি দিয়ে সব বলতে থাকে।
আষাঢ় পড়াশোনা শেষ করে এসে পাগলের মতো দোলনকে খুঁজতে থাকে। কেউ বলবে না এই ছেলেটা ডাক্তার আষাঢ়ের এমনই অবস্থা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায় না। আষাঢ়ের জীবন যাপন শুরু হয় রোবটের মতো না হাসি না কান্না একদম পাথর মানব হয়ে গেছে। বাড়িতে কারো সাথে ও কথা বলে না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া নেই নিজের যত্ন নেই। দোলনকে খুঁজে পাওয়ারও সব আশা চোখের সামনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন আষাঢ়ের অবস্থা যেনো মরিমরি।আষাঢ়ের এরকম করুন অবস্থা দেখে তার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক করে এমনিতেও আরো একবার করেছে। আষাঢ়ের বাবার শারীরিক অবস্থা ও খারাপ হতে থাকে। ছেলের টেনশনে টেনশনে উনার জীবন চলে যাওয়ার পথে। আষাঢ় সবই বুঝতে পারে। এদিকে মা সারাদিন রাত কান্না কাটি করতে থাকে তার সামনে। আষাঢ় কোনো উপায় না পেয়ে বাবাকে জানায় সে আগের মতো চলবে এরকম আর করবে না। নিজের জীবনটাকে এভাবে আর ধ্বংস হতে দিবে না। আষাঢ়ের বাবা ছেলের কথা শুনে স্বস্তি পায় আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে।
তারপর সবকিছু চলছে ঠিক ঠাক হুট করে আষাঢ়ের বাবা আষাঢ় কে ডেকে বলে,,, মেঘকে বিয়ে করতে হবে। আষাঢ় কোনো মতেই রাজি না।আষাঢ় যখন না বলতে যাবে ঠিক তখন তার মা পিছন থেকে হাত জোর করে না করতে বারণ করে। আষাঢ়েরও মাথায় আসে তার বাবার কিছুদিন আগের অসুস্থতার কথা। আষাঢ় বিয়েতে রাজি হয় কিন্তু সে জানে না এর পিছনে মায়ের হাত।তার মা ভুজুংভাজুং বুঝিয়েছে তার বাবাকে মেঘকে বিয়ে করাতে ছেলেকে।
আষাঢ় আবার ডিপ্রেশনে পড়ে যেতে থাকে ঠিক করে নেয় বিয়ে করে সে আবার দেশ ছেড়ে চলে যাবে।

সবকিছু বলতে বলতে আষাঢ় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।হুট করে দোলন কাঁধে তরল কিছুর আবাস পায়। আষাঢ় কি কাঁদছে? হ্যা তাইতো মনে হয় আষাঢ় কাঁদছে। দোলন আষাঢ় কে ছাড়িয়ে আষাঢ়ের দিকে তাকানোর আগেই আষাঢ় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি তারাতাড়ি মুছে নেয়। তারপর হাসি হাসি মুখ করে দোলনের দিকে তাকায়।
দোলন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আষাঢ়ের দিকে।
আষাঢ় কিছু বলতে যাবে দোলনকে তারমধ্য নজর যায় দরজার দিকে। পর্দার আড়ালে কেউ একজন আছে ছায়া দেখা যাচ্ছে। আষাঢ় দ্রুত পা ফেলে পর্দা সরায় গিয়ে।

পর্দা সরিয়ে ব্রু কোচকে বলে,,,,মা?

#চলবে,,,,,,,?