আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-২৪

0
326

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৪

চিত্রা প্রেমে তো পরেছিলো ঠিকই তবে তার আগে অতিরিক্ত যোগ হয়েছে। চিত্রা আজ কাল ছেলেটিকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবতে শুরু করেছে। তার মস্তিষ্কে সেই পুরুষটি ছাড়া আর কোনো কিছু ঢুকছে না। চিত্রা পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে পুরুষটির নাম নাহিয়ান!এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে। এখানের ভার্সিটিতে চান্স হয়েছে বিধায় এখানে আসা। মা বাবাকে নিয়ে এখানে এসেছে। চিত্রা স্কুল থেকে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো। এইভাবে কাটলো একমাস। চিত্রা মাঝে মধ্যে তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। টুকটাক ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে তাদের সাথে ওই পরিবারের।

চিত্রার সামনের বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা। ভালো টিচার খুঁজছিলেন আরমান রহমান। জানতে পারেন নাহিয়ান খুব ভালো ছাত্র। গনিতে বেশ ভালো। আরমান রহমান তাকে অনুরোধ করে চিত্রাকে পড়াতে বললেন। নাহিয়ান চাইছিলো না তবুও আরমান সাহেবের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়। এরপর থেকে শুরু হয় চিত্রার জীবনের উলোট পালোট হওয়া সব কিছু। চিত্রা একটা করে চিঠি লিখতো,সেগুলো রঙিন খামে ভরে লুকিয়ে নাহিয়ানের বারান্দায় ফেলতো। নাহিয়ান চিত্রাকে পড়ানো শুরু করলো। বেশ ভালো যাচ্ছিলো দিনকাল চিত্রার। তার মনে হতো নাহিয়ান তাকে পছন্দ করে।

টুকটাক কেয়ার করতো তার। তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করতো। এতে চিত্রার ছোট্ট মনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলে। চিত্রা ভেবে নেয় নাহিয়ানও তাকে ভালোবাসে। নাহিয়ানের মা অবশ্য তাকে খুব একটা পছন্দ করতো নাহ। কারণ তার চঞ্চলতা। তবে সেসব চিত্রা পাত্তা দেয়নি। আজকে স্কুলে পিকনিক। মায়ের কাছ থেকে শাড়ি পড়েছে চিত্রা। কলাপাতা রঙের শাড়িটিতে চিত্রাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো। তবে চিত্রা যার জন্য সেজেছে সে কি আদেও তাকে চায়!

চিত্রা তার স্কুলের কয়েকজন বান্ধবীর সাথে বের হয় বাড়ি থেকে। বের হতেই দেখতে পায় তার প্রিয় পুরুষটিকে। দাঁড়িয়ে আছে তার বন্ধুর সাথে। কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে তারা। চিত্রা তাকিয়ে রয় সেদিকে। নাহিয়ান হুট করে তাকায় তার দিকে। চিত্রা বেশ লজ্জা পায়। চঞ্চল রমনীও এক পুরুষের তাকানোতেই নিরব হয়ে যায়।নাহিয়ান কাছে এসে বলে,,,

“কোথাও যাচ্ছো চিত্রা?”

“জি জি ভাইয়া আজ আমাদের স্কুলে পিকনিক।”

“ওহ তোমাকে কিন্তু আজকে বেশ দারুণ লাগছে।”

চিত্রা লজ্জা পায়। নাহিয়ান চিত্রাকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। চিত্রা মনে মনে ঠিক করে আজই সে বলবে লোকটিকে সে পছন্দ করে না না ভীষণ ভালোবাসে। চিত্রার বান্ধবীরা এ নিয়ে বেশ মজা উড়ালো। বিকালের দিকে বাসায় ফিরে চিত্রা। নাহিয়ানকে খুঁজতে থাকে। ছাঁদে আসতেই খুঁজে পায় পুরুষটিকে। চিত্রা তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,

“নাহিয়ান ভাইয়া!”

নাহিয়ান পেছনে ঘুরে। চিত্রাকে দেখে হাসে। অতঃপর বলে,,,“তুমি এখানে যে! কিছু বলবে”

চিত্রা ইতস্তত করে বলে,,,“জি কিছু কথা বলবো!”

“হ্যাঁ বলো”

চিত্রা চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে,,,
“আমি আপনাকে পছন্দ করি নাহিয়ান ভাইয়া”

নাহিয়ান কিছু সময় চুপ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,“সত্যি পছন্দ করো”

চিত্রা মাথা নাড়িয়ে বলল,,,
“আমি আপনাকে ভালোও বাসি নাহিয়ান ভাইয়া”

“আজকে থেকে শুধু নাহিয়ান বলবে ভাইয়া বলা তোমার জন্য নিষিদ্ধ করলাম আমি এখন থেকে।”

“আপনিও কি আমায় পছন্দ করেন নাহি…য়ান?”

নাহিয়ান মুখে কিছু বললো না। তবে মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। চিত্রা থমকে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। কিছুক্ষণ বাদে লাফিয়ে উঠে চিত্রা। এরপর থেকে বেশ ভালো কাটলো আরো একমাস। নাহিয়ানের নাকি চিত্রাকে শাড়িতে দেখতে বেশ ভালো লাগে। চিত্রা নাহিয়ানের জন্য হলেও সপ্তাহে একবার শাড়ি পরতো। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর চিত্রা একটু বেশিই আসক্ত হয়ে পরে নাহিয়ানের প্রতি।

আজকে স্কুল পালিয়েছে চিত্রা তাও শুধু মাত্র নাহিয়ানের জন্য। নাহিয়ানকে সারপ্রাইজ দিবে বলে ঠিক করেছে। যদিও ভয় করছে তবে সে সবে খুব একটা পাত্তা দিলো না সে। স্কুল থেকে বেরিয়ে রিকশায় চেপে বসলো। গন্তব্য নাহিয়ানের ভার্সিটি। ভার্সিটির সামনে এসে রিকশা থেকে নামে চিত্রা। এগিয়ে যায় ভেতরে। নাহিয়ানের থেকে আগেই জেনে নিয়েছিলো তারা কোথায় বসে আড্ডা দেয়। চিত্রা সেদিকে এগোতেই থমকে যায়।

চোখ দুটো স্থির হয় গিয়েছে। অবাধ্য চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে। সামনেই নাহিয়ান নামক সুদর্শন পুরুষটি অন্য এক রমনীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। দু’জনকে দেখলে যে কেউ ধারণা করে ফেলবে তাদের সম্পর্কটা আসলে কি!চিত্রা চোখ মুছে এগিয়ে যায় সে দিকে। নাহিয়ান নামক পুরুষটি চিত্রাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়। চিত্রা এসে কলার চেপে ধরে নাহিয়ানের।

“আপনি আপনি আমায় ঠকালেন। কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার। আমাকে যখন পছন্দই না তাহলে কেনো সেদিন ওই কথা বলেছিলেন?”

নাহিয়ান বিরক্ত হয়। মেয়েটা যে এতোদূর পর্যন্ত আসবে ভাবতে পারেনি। অতিরিক্ত করছে। সে আসলে কিছুদিন মজা নেওয়ার জন্য চিত্রাকে সেদিন হ্যাঁ বলেছিলো। তবে কে জানতো এই মেয়ে তাকে নিয়ে এতোটা সিরিয়াস হয়ে পরবে।
“দেখো এটা আমার ভার্সিটি তুমি সিনক্রিয়েট করো নাহ। আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলি?”

পাশ থেকে তখন সেই রমনী বলে ওঠে,,,“নাহিয়ান কে এই মেয়েটা! তোমাকে এগুলো কেনো বলছে?তুমি কি আমায় ঠকাচ্ছো”

“বিথি কুল ও জাস্ট আমার ছাত্রী এর থেকে বেশি কিছু নাহ। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছো এছাড়া কিছু না। নাহিয়ান শুধু তোমাকেই ভালোবাসে”

নাহিয়ানের শেষ কথাটা শুনে মনে হলো চিত্রার কানে কেউ শিসা ঢেলে দিয়েছে। তার ভালোবাসার মানুষটা অন্য কাউকে ভালোবাসে বলছে। চিত্রা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। নাহিয়ানের কাছে এসে চড় মেরে বসে। উপস্থিত সকলে তাকিয়ে রয় সেদিকে। চিত্রা পাগলের মতো আচরণ করছে। চেঁচিয়ে বলল,,,

“ঠক,প্র*তা*রক। প্র*ত*রণা করেছেন আপনি। ধোঁ*কা বাজ। তোর কখনো ভালো হবে না।”

চিত্রা এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। নাহিয়ানের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এতোটুকু পুচকে মেয়ে তাকে চড় মেরেছে এতো মানুষের সামনে। ঠক,প্রতারক বলেছে। সেও হনহন করে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। বিথি বুঝে উঠতে পারে না আসলে কি হয়েছে।

বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে চিত্রা। তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। মরিয়ম সুলতানা মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে আঁতকে উঠেন। তার প্রাণবন্ত মেয়েটার কি হয়েছে বুঝে উঠতে পারলেন না। চিত্রা রুমে এসে ফ্লোরে বসে পরে। চিৎকার করে কেঁদে উঠে। মরিয়ম সুলতানা দৌড়ে আসেন। চিত্রাকে কাঁদতে দেখে তার পৃথিবী থমকে যায়। মেয়েকে একটু বেশই ভালোবাসেন কি না। দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেন। চিত্রা পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করেছে। কিছুক্ষণ বাদে শান্ত হয়ে যায় চিত্রা। মরিয়ম সুলতানা মেয়েকে বুক থেকে তুলে দেখেন মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পরেছে।

তিনি দ্রুত তাকে কোনোমতে বিছানায় তুলে শুইয়ে দেন। এরপর আরমান রহমানকে কল করে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলেন। আরমান রহামান মেয়ের কথা শুনে ছুটে আসলেন বাড়িতে। মেয়ের রুমে যেতে দেখলেন সেই বিধস্ত মুখশ্রী। তা দেখে তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না।

এরপর, এরপর থেকে পাল্টে গেলো চিত্রা নামক চঞ্চল কিশোরীর জীবন।চিত্রা অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করলো। আবেগে পরে নাহিয়ান নামক পুরুষটিকে যে অসম্ভব ভালোবেসেছিলো। আর তারই প্রতরণা মেনে নিতে পারেনি সে। আরমান সাহেব জানতে পারেন তার মেয়ের সাথে ঘটা সব ঘটনা। সে দিন রেগে গিয়েছিলো আরমান সাহেব, এতোটাই রেগে ছিলো যে মরিয়ম সুলতানা তাদের বিবাহিত জীবনে এমন রাগ কখনো দেখেনি। চিত্রা তাদের বড্ড সাধনার সন্তান।

আরমান সাহেব মেয়ের অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তার দেখান। তারা বলেন চিত্রা মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানোর কথা বলেন তারা। ততদিনে নাহিয়ানরা চিত্রাদের বাড়ি ত্যাগ করেছে। সে সেদিনের অপমান কিছুতেই ভুলতে পারেনি। চিত্রা মাঝে মাঝেই বায়না ধরতো নাহিয়ানের কাছে যাওয়ার তবে আরমান সাহেব তখন তাকে বুঝাতেন। সবাই সময় দেওয়া শুরু করে তখন থেকে চিত্রাকে। তবে আগের সেই হাসি খুশি চিত্রা তো সেদিনই মরে গিয়েছিলো।

~অতিরিক্ত কিছু ভালো নয়,
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জীবন ভীষণ সুন্দর!

#চলবে~