আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-২৪

0
1871

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-২৪]

নিঝুম রাত্রির প্রহর। রাস্তাঘাট নিস্থব্ধতায় একাকার। ল্যাম্পপোস্টের কৃতিম আলোর নিচে বসে কর্কষ কন্ঠে ডাকছে কুকুর। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক চারপাশ থেকে ভেসে আসছে। খাবারের পর প্রত্যেক সদস্য ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে কেবল। দীবা বারান্দার দরজার কাছাকাছি ফ্লোরে বসে মেঘে ঢাকা আকাশকে দেখছে। চাঁদটা স্পষ্ট ভাস্যমান। সে ভাবছে আবরারকে নিয়ে। সম্প্রতি আবরারের এমন ব্যবহার তাকে ভাবাচ্ছে। আসলেই কি আবরার এই বিয়ে মন থেকে মেনে নিয়েছে? দীবাকে অন্যান্য বিবাহিত মেয়েদের মতো স্ত্রীর মর্যাদা দিবে? নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। সকালে আবরার বলেছিলো রাতে আবার আসবে সেই ভয়ে দীবা খাবার খাওয়ার পর থেকেই দরজা লাগিয়ে বসে আছে। সে দরজা খুলবে না! কিছুতেই না।
.
আবরার রিমির রুমে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বুকে দুই হাত গুঁজে বসে আছে। রিমি ভাব নিয়ে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে চুল আচঁড়াচ্ছে ডেসিংটেবিলের সামনে বসে। আবরার বিরক্ত হলো। ধমকে উঠলো, ‘ফা*জিল এতো রাতে সেজে কি করবি তুই?’

রিমি চুল গুলো উঁচিয়ে খোঁপা করলো। হাতে নাইট ক্রিম লাগাতে লাগাতে বললো, ‘এতো তাড়াহুড়ো করো কেন বলো তো ভাই? দাঁড়াও না একটু। মানে বসে থাকো।’

আবরার অধৈর্য হয়ে বললো, ‘তুই আসবি নাকি আমি যাবো?’

রিমি আবরারের দিকে ফিরে তাকালো। তারপর বললো, ‘বিনিময়ে আমি কি পাবো?’

‘ভাই ভাবি এক হবে এতে তুই খুশি না? আর কি লাগবে?’

‘আলবাত আমি খুশি। তবে এটা মনের দিক দিয়ে। আমি তো পেটের কথা বলছি।’

আবরার হেসে ফেললো রিমির কথা শুনে। বললো, ‘কাচ্চি ট্রিট রইলো। হ্যাপি? এবার আয় বোন আমার।’

রিমির হাস্যউজ্জল চেহারায় এগিয়ে আবরারের গা ঘেঁষে বসলো। তারপর ভ্রুঁ নাচিয়ে বললো, ‘ভাই সত্যি তুমি দীবাকে ভালোবাসো? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি অনেক অনেক খুশি।’

আবরার প্রত্যুত্তরে হাসলো। তারপর বললো, ‘কিন্তু দীবার দিক দিয়ে তো কোনো পজিটিভ সাইন পাচ্ছি না। আই থিংক সি ডোন্ট লাইক মি।’

‘ফিকার নট ব্রাদার। দীবাও তোমার প্রতি উইক। একটু সময় নাও দেখবে ভাবি পটে যাবে।’ আবরার হাসলো রিমির কথায়। অতঃপর রিমিকে সাথে নিয়ে দীবার রুমের সামনে আসলো। আবরার রিমিকে চোখে ইশারা দিয়ে দরজার এক পাশে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালো। রিমি দরজা ধাক্কা দিয়ে দীবাকে ডাকতে লাগলো।

‘দীবা ঘুমিয়ে গেছিস?’

কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর দীবা দরজা খুললো। তাকে এখানে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলো, ‘তুই? কিছু বলবি?’

দাঁত কেলিয়ে হাসলো রিমি। দীবাকে ঠেলে ভিতরে নিয়ে বিছানায় বসালো। তারপর গাল দুটো টেনে আদুরে কন্ঠে বললো, ‘হ্যাভ আ সুইট ড্রিম বেবি। গুড নাইট।’

দীবা বুঝতে না পেরে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রিমি রুম থেকে বেরুলেই আবরার রুমে ঢুকলো। তাকে দেখেই দীবা বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে তাকালো। রিমি বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো। দীবা দরজার কাছে গিয়ে দু’বার ধা ক্কা দিয়ে চেঁ’চা’ল, ‘রিমোটের বাচ্চা! কাজ টা ঠিক করলি না!’

দরজার বাহির থেকে দীবার কন্ঠ শুনে হাসলো রিমি। চলে যাবার জন্য পিছু ফিরে পা বাড়াতেই নিশিতা কে দেখে দাঁড়িয়ে পরলো। নিশিতা রিমিকে প্রশ্ন করলো, ‘আবরার দীবার রুমে কি করছে?’

রিমি হেসে প্রত্যুত্তর করল,’খুব শীঘ্রই সুখবর আসবে আম্মু। তুমি হবে দাদি ; আমি হবো খালামনি।’

রিমির এমন লাগাম ছাড়া কথা, আর নিজের করা অহেতুক প্রশ্নতে নিজেই বিব্রতবোধ করলো নিশিতা। রিমিকে নিজের রুমে যেতে বললে রিমি হেলেদুলে চলে গেলো। নিশিতা দীবার রুমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রশান্তির হাসি দিলো একটা। সব কিছু ভালোই ভালোই মিটে গেলে ভালো।
_______________

রাত্রির মধ্যভাগ প্রায়। ব্যালকনির দরজা খোলা। শীতল বাতাস ভেসে আসছে বাহির থেকে। হালকা শীতের আমেজ চারপাশে। এমন পরিবেশে রোমান্টিক রোমান্টিক একটা ভাব আসে। কিন্তু আবরার রোমান্টিক হওয়ার বদলে বি’রক্ত হচ্ছে। বিছানার হেড সাইডে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে তী-ক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে দীবার দিকে। আর এইদিকে দীবা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। আফসোস হচ্ছে তার। বড় মাপের আফসোস হচ্ছে কেবলমাত্র রুমে কোনো সোফা নেই বলে। সোফা থাকলে হয়তো সেখানে শুয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারতো। তার পক্ষে সম্ভব না আবরারের সাথে এক বিছানায় থাকা। লোকটা অনেক অ’সভ্য। ভাবতে ভাবতে ঘুমে মাথা দুলে টেবিলের সাথে বারি খেলো একটা। ধরফড়িয়ে উঠলো দীবা। বি’রক্তি নিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। আবরার নিজের এই বি’রক্তি আর নিতে না পেরে ধ-ম-কে উঠলো, ‘বিছানায় আসছো না কেন? ঘুমাবে না? তাড়াতাড়ি আসো।’

দীবা মুখ কালো করে তাকালো। মিনমিনে গলায় বললো, ‘আপনার সাথে ঘুমানো অসম্ভব।’

‘তাহলে কোথায় ঘুমাবে? মেঝেতে? নাকি টেবিলের উপর? কোথায়?’

চিন্তায় পরে গেল দীবা। ঠোঁট কা’মড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর উঠে গিয়ে বিছানার মাঝে একটা বালিশ রেখে বললো, ‘খবর-দার এই দেয়াল টপকে এই পাশে আসবেন না।’

আবরার দীবার কান্ডে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। পরোক্ষনে ত্যাঁছড়া ভাবে বলল, ‘ঠ্যা’কা পরে নাই তো আমার।’

দীবা কটমট চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে টেবিলের ল্যাম্প লাইট অফ ধপাস করে এক পাশে শুয়ে পরলো। আবরার হাসলো মনে মনে। বেশকিছু সময় অতিবাহিত হবার পর আবরার মাঝের বালিশ সরিয়ে দীবাকে পিছন দিক দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। হকচকিয়ে গেলো দীবা। আবরার শুধাল, ‘নিজেকে কেমন প্রবাসী প্রবাসী লাগছিলো। বউ আছে কিন্তু কাছে নাই। এইসব বালিশ টালিশ দিয়ে কাজ হবে না। আমি আমার বউকে ছাড়া থাকছি না।’

আবরারের কথা শুনে দীবা হেসে ফেললো। আবরারও নিঃশব্দে হেসে দীবার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে বললো, ‘তুমি চুলে কি শ্যাম্পু ইউজ করো?’

দীবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন?’

আবরার নেশালো কন্ঠে বললো, ‘তোমার চুলের ঘ্রানে কেমন যেনো প্রেম প্রেম পায়।’

নিশ্চুপ হলো দীবা। লজ্জায় লাল হয়ে এলো গাল দুটো। কোনো প্রকার নড়াচড়া করলো না। প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে শুয়ে রইলো। আবরার দীবার ঘাড়ে আলতো ভাবে একটা চুমু খেলো। জড়িয়ে ধরেই ঘুমানোর প্রয়াস করলো।
________________

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যেস থাকলেও আজ ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হলো। তবুও যেন চোখের ঘুম এখনো শেষ হয় নি। দীবা পিটপিট করে চোখ খুললো। নড়াচড়া করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। ঘুম জড়ানো চোখে খেয়াল করলো আবরার তাকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিজের অতি সন্নিকটে আবরারকে দেখে অনুভূতি গুলো ভালোবাসায় অভিভূত হলো। আনমনে মুচকি হেসে উঠলো দীবা। আবরারের এলোমেলো চুল গুলোতে আঙ্গুল চালিয়ে ঠিক করে দিলো। তারপর আলতো হাতে গাল ধরে টেনে দিলো। আবরার একটু নড়েচড়ে আবারো ঘুমে মশগুল হলো। দীবা মুচকি হাসলো। তখুনি কানে আসলো রোহানার কণ্ঠস্বর। হকচকিয়ে গেলও দীবা। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল সাড়ে আটটা বাজে। আজ শুক্রবার তাই কলেজের প্যা*রা নেই। মাথা উঠিয়ে দরজার দিকে তাকালো। রোহানা অনবরত দরজা ধা-ক্কাচ্ছে আর ডাকছে। দরজা থেকে চোখ ঘুরিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। দীবাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে বিভোর আবরার। দীবা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। তাই আবরারকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু আবরার উঠছে না। দীবা অস্থির কন্ঠে ডাকলে আবরার দীবার সাথে আরো নিবিড় হয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ডিস্টার্ব করো না প্লিজ। ঘুমাতে দাও।’

দীবা আবরারকে নিজেকে থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘আপনার ঘুম এক সাইডে রাখেন। রুম থেকে বের হোন তাড়াতাড়ি। আম্মু ডাকছে। উঠেন প্লিজ।’

নিজের আরামদায়ক ঘুমের ব্যাহাত ঘটতেই বিরক্ত হলো আবরার। অপ্রসন্ন মনে অপর পাশ ফিরে শুয়ে বলল, ‘ডাকলে দরজা খুলো গিয়ে।’

দীবা শুয়া থেকে উঠে বসলো। আবরারের বাহু টেনে নিজের দিকে ফিরালো। তারপর বলল, ‘দরজা খুলবো মানে? আম্মু আপনাকে এখানে দেখে ফেললে কি ভাববে বলুন তো।’

ঘুমের কারণে আবরারের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো। দীবার কথায় সে ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল, ‘তাতে আমার কি? ভাবা-ভাবির কিছু নাই। জামাই তার বউয়ের রুমে ঘুমাচ্ছে। ব্যাপার না। তুমিও ঘুমাও। আসো একসাথে ঘুমাই।’

দীবা আবরারের বাহুতে একটা ঘু*ষি বসিয়ে দিলো। যদিও আবরারের দেহে এই ব্যাথার পরিমান একদম তুচ্ছ। দীবা তার হাত ধরে টেনে শুয়া থেকে তুললো। বিছানা থেকে নামারে চাইলে অজ্ঞাত আবরার বাধ্য হয়ে নামলো। দীবা উৎকণ্ঠিত হয়ে বললো, ‘তাড়াতাড়ি বের হোন রুম থেকে।’

আবরার দরজা দেখিয়ে বলল, ‘এই দিক দিয়ে যাবো? আচ্ছা যাচ্ছি।’ বলেই দরজার দিকে যেতে নিলে দীবা বাহু ধরে আবারো আ’ট’কে ফেললো। আবরারকে বা’ধা দিয়ে উদ্বেগজনক হয়ে বলল, ‘দরজা দিয়ে যাওয়া যাবে না। আপনি! আপনি রুমেই লুকিয়ে পরেন। তাড়াতাড়ি করেন প্লিজ।’

আবরার ভ্রুঁ কুঁচকে বলল, ‘এতো হাইপার হচ্ছো কেন বলো তো? আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ। এক ঘরে থাকতেই পারি। এখানে কারোর কোনো সমস্যা হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।’

দীবা একটু রাগি গলায় বলল, ‘সমস্যা আপনার না হলেও আমার হবে। আমি আপনার মতো নির্লজ্জ না।’

রোহানা বাহির থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে আবারো ডাকলো, ‘কিরে দীবা? এখনো ঘুম ভাঙ্গে নি তোর? শরির খারাপ? দরজা খোল।’

দীবা আবরারের দিকে করুণ চোখে তাকালো। আবরার তার এমন চাহনীর কারণ বুঝলো। তাই সুযোগ বুঝে কো’প মা’র’লো। বলল, ‘ঠিক আছে লুকাচ্ছি। কাঁদতে হবে না। কিন্তু তার আগে একটা কিস দাও গালে।’

কথাটা বলে দুই হাত পিছনে নিয়ে দীবার দিকে ঝুকে দাঁড়ালো আবরার। বিব্রতবোধ করলো দীবা। চোখমুখ কুঁচকে নাকচ করে বলে উঠলো, ‘ইম্পসিবল! আপনি ওয়াশরুমে যান।’

আবরার তার কথায় অনড় রইলো,’কিস না দিলে যাবো না।’

বাহিরে রোহানার ডাকাডাকি ; আর এই দিকে আবরারের এমন আকুতি। হতাশ হলো দীবা। অতঃপর বাধ্য হয়ে আবরারের গালে আলতো ভাবে ছোট করে একটা কিস দিলো। কিন্তু এতে পুষলো না আবরারের। তাই বললো, ‘তুমি দেখতে যেমন পিচ্চি। কিসটা দিলেও তেমন পিচ্চি। আরেকটু বড়োসড়ো করে কিস দাও তো। যেন ফিল নিতে পারি। হারি আপ।’

দীবা নিরবে দাঁতে দাঁত পিষলো। মায়ের ডাক আর সহ্য হলো না তার। এই বুঝি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পরবে। তাই আবরারের কথা অনুযায়ী বড়োসড়ো কিস দেবার জন্য তার দিকে এগিয়ে গেলো। আবরার দীবার দিকে ঝুকে আসতেই দীবা তার এক গালে এক হাত রেখে, অপর গালে প্রগাঢ়ভাবে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে চুমু দিল একটা। আবরার ঠোঁট বিস্তৃতি করে হাসি দিলো। চুমু দেওয়া শেষে আবরারের ফরসা গালের নরম মাংসপিণ্ডে জোরে একটা কা’মড় বসিয়ে দিলো দীবা। আবরার ব্যাথা পেলেও শব্দ করলো না। এক হাত গালে রেখে ভ্রুঁ কুঁচকে দীবার দিকে তাকালো। দীবা শ’য়’তানি হাসি দিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। তখুনি দীবার ঘাড়ের পিছনে হাত রেখে দীবাকে কাছে টেনে উষ্ঠধয়ে চুমু খেয়ে নিলো আবরার! ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে দীবা টেরও পেলো না। চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো। আবরার বাঁকা হেসে দীবার ঠোঁটে তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বুলিয়ে বলল, ‘এটা ভালো ছিলো।’

দীবার টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। দীবা আহাম্মকের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। হলো টা কি? ভাবতেই দরজায় আবারো ধা*ক্কা পরলো। চমকে উঠলো দীবা। দরজার কাছে এসে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। এক হাতে চুল গুলো ঠিক করে দরজা খুলতেই রোহানা ক’র্ক’ষ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে? কি করছিলি রুমে?’

দীবা কিছুটা ইতস্তত করে বলল, ‘ওয়াশরুমে ছিলাম। কেন?’

‘কেন মানে? কয়টা বাজে দেখেছিস? এখনো রুম থেকে বের হলি না। শরির ঠিক আছে তোর?’

‘আম্মু আজ শুক্রবার। কলেজ নেই তাই ঘুমিয়েছিলাম। কাল রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে।’

দীবার অস্বস্তিদায়ক চেহারা দেখে রোহানার সন্দেহ হলো। মাকে দেখে ঝাঁপিয়ে পরা মেয়েটা দরজা খুলে দুই হাতে দরজা ধরে দাঁড়িয়েছে। রোহানা বুঝেছে যেন সে ভিতরে যেতে না পারে তাই এভাবে দাঁড়ানো। সন্দিহান দৃষ্টি রেখেই বললো, ‘তোর কলেজ ড্রেসটা দে। ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিবো।’

কলেজ ড্রেস তো ওয়ায়াশরুমের ঝুড়িতে। আবরারও সেখানে। তাহলে কিভাবে আনবে? দীবা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রোহানা আবারো বলল, ‘তাড়াতাড়ি দে! কাজ আছে আমার।’

‘ওয়েট’ বলে দীবা রুমের ভিতরে গেলো। বারবার পিছু ফিরে মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলতে গেলে দেখলো আবরার ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে রেখেছে। দীবা এবার পরলো বিপাকে। ভয়ার্ত চোখে পিছু ফিরে মায়ের দিকে একবার তাকালো। যদিও দরজার বাহির থেকে ওয়াশরুম অব্ধি দৃষ্টি যায় না। তবুও দীবা ভয়ে আছে। যদি একবার টের পায় তাহলে কি হবে? ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। তারপর মৃদু শব্দে দরজা ধা’ক্কা দিলো। কয়েকবার ধা’ক্কা দেবার পর আবরার দরজা খুলে দিলে দীবা তড়িঘড়ি করে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগালো। জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে দেখলো আবরার ভিজে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এমন অবস্থায় দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দীবা। তাৎক্ষনাৎ ঘুরে দাঁড়ালো। বিরক্তিতে এক হাতে কপাল চা’প’ড়ালো। বলল, ‘আপনার কি এখানেই গোসল করা লাগছে? নিজের ওয়াশরুমে গিয়েও তো করতে পারতেন।’

আবরার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে শুধাল, ‘আমি যেখানে খুশি সেখানে শাওয়াল নিবো। তাতে তোমার কি?’

দীবা চরম হতাশ হয়ে ‘উফফ’ বলে নিশ্বাস ছুড়লো। লম্বা দম নিয়ে নিজেকে সামলে ঝুড়ির দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আবরার পিছন থেকে নিঃশব্দে তাকে জড়িয়ে ধরলো। হকচকিয়ে গেলো দীবা। চোখ বড়বড় হয়ে গেলো তার। আবরার জড়িয়ে ধরে কোমলায়ন কন্ঠে বলল, ‘তুমি অনেক কিউট দীবা। তোমাকে দেখলেই আ’দর করতে ইচ্ছে করে।’

চলমান….