#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৩৩]
সূর্যমামা পশ্চিমাকাশে ডুবি-ডুবি অবস্থা। হলুদ লালচে আভায় মুখরিত পরিবেশ। ভেঁজা মাটির ভ্যাঁপসা গন্ধ ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে স্পট ভাস্যমান। হু-হু করে চলছে প্রভঞ্জন। তাপমাত্রা অতিরিক্ত শীতলতার কারণে মানব দেহ ইষৎ কেঁপে উঠার উপক্রম। তাই গায়ে পাতলা শাল জড়িয়ে নিলো রিমি। চুল গুলো ছেড়ে আয়নার সামনে নিজেকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে বের হলো রুম থেকে। সিঁড়ি কোঠার দিকে না গিয়ে প্রথমেই পা বাড়ালো একদম শেষের রুমটার দিকে। কাঙ্ক্ষিত রুমটার সামনে এসে নিজেকে প্রস্তুত করে টোকা দিলো কয়েকবার। বেশ কিছুক্ষণ পর রুমের দরজা খুলে বাহিরে আসলো অভ্র। সামনে রিমিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রুর জোড়া কুঁচকে প্রশ্ন করলো, ‘কি?’
রিমি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগ্রহ দেখালো না। যে কাজে এসেছিলো তাই করতে মশগুল হলো। অভ্রের হাত বিনা সংকোচে ধরে টেনে বললো, ‘ছাদে আসো তো আমার সাথে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে বিস্মিত হলো অভ্র। অবাক চোখে রিমির কাণ্ডকারখানা দেখছে অভ্র। এই অবেলায় ছাদে যাবে কেন মেয়েটা? কারণ জানতে চাইলো, ‘এখন ছাদে গিয়ে কি করবে?’
ইতিমধ্যে অভ্রকে ছাদের সিঁড়ির কাছাকাছি টেনে নিয়ে এসেছে রিমি। অভ্রের ধরেই রিমি স্বাভাবিক গলায় শুধাল, ‘তোমার সাথে প্রেম করবো। চুপচাপ আসো তো।’
এমন প্রত্যুত্তর শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো অভ্র। থমথমে মুখে রিমির সঙ্গে পা বাড়ালো। ছাদে আসার পর মুহূর্তেই এক দমকা শীতল হাওয়া গায়ের শিরা উপশিরায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। ছাদের পাশে হেলে পরে থাকা কৃষ্ণচূড়ার ডালটা থেকে ফুলের রক্তিম পাপড়ি উড়ে উড়ে পরছে। রিমি অভ্রকে নিয়ে সেখানটায় দাঁড়ালো। অভ্র এখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে। রিমি অভ্রের বাহু ছেড়ে অভ্রের বাম হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ভাজে নিজের ছোট ছোট আঙ্গুল গুলো মিলিয়ে দিলো। তারপর ফুল গুলো দেখিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমাকে কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে দাও প্লিজ।’
অভ্র রিমির হাতের বাঁধনের দিকে তাকালো। তারপর চোখ তুলে রিমির দিকে তাকালো একবার। মেয়েটা তার হাত ধরায় স্মিতি হাসি ফুটে এলো ঠোঁটে। কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল টার দিকে তাকিয়ে শুধাল, ‘ফুল গাছেই সুন্দর। হাতে মানায় না।’
রিমি কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘শুনেন, পুরুষ মানুষের চোখে ফুল মানায় প্রেমিকা চুলে। যদি কোনো পুরুষ প্রেমিকার চুলে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পায় তাহলে সেই পুরুষ টাই হবে খাটি প্রেমিক।’
অভ্র ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বলে উঠলো, ‘এই মেয়ে তুমি জানো আমি তোমার কত বড়? আমার সাথে এইসব কথা বলতে লজ্জা লাগছে না?’
রিমি ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো, ‘না লাগছে না। আপনি আমার প্রেমিক। তাছাড়া লজ্জা পেলে জীবনেও মা হতে পারবো না। তাই আমি লজ্জা-টজ্জা পেতে পারবো না। এখন আমাকে ফুল ছিঁড়ে দাও। আজান দেওয়ার আগে। তাড়াতাড়ি দাও।’
রিমির প্রথমে কথা গুলো শুনে হতবাক হয়ে গেলো অভ্র। কিংকর্তব্য-হীন হয়ে পরেছে সে। অপর দিকে ফুল পাড়ার জন্য রিমি তাগিদ দিতে লাগলো। বাধ্য হলো অভ্র। হাত বাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুল ছিঁড়ে দিলো কয়েকটা। খুশি হলো রিমি। ফুল গুলো হাতে নিয়ে খুশি হয়ে আহ্লাদের সাথে অভ্রের দুই গাল টেনে দিলো। তারপর আপন মনে প্রত্যেকটা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে লাগলো। আর অভ্র দেখতে লাগলো পাশে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে। এই বাচ্চা মেয়েটা নাকি তার প্রেমিকা? সিরিয়াসলি? ভাবতেই আমনে মৃদু হেসে ফেললো অভ্র।
_________________________
প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী সূর্য তার সঠিক সময়ে পশ্চিমাকাশে ডুব দিয়েছে। ধরনী করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আকাশ একদম স্বচ্ছ। ঘন কালো মেঘের ছিটেফোঁটার ছোঁয়া নেই তার মাঝে। প্রবল শীতল বাতাসের কারণে বারান্দার দরজায় ঝুলানো সাদা পর্দা গুলো বাতাসে উড়ছে। দীবা চটজলদি পড়ার টেবিল থেকে উঠে বারান্দার দরজা টা লাগিয়ে দিলো। পর্দা গুলো টেনে ঠিক করার সময় আবরারের খেয়াল আসলো তার। লোকটা কি করছে? দেরি করে বাড়ি ফিরায় রেগে গিয়েছে নাকি? রেগেছে-ই বোধহয়। নাহলে শব্দ করে দরজা লাগাতো? কখনোই না! ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো দীবা। কিছুসময় চিন্তা করার পর ভাবলো আবরারের রুমে যাবার কথা। তাই আর বিলম্ব করলো না। চটজলদি পা চালিয়ে রুমের সামনে আসলো। দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো আবরার ঘুমিয়ে আছে। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে রুমের ভিতরে ঢুকলো দীবা। এই সময় কেউ ঘুমায়? আজান দিয়েছে নামাজ পরে নি নাকি? বিছানার সামনে একটা বেতের মোড়া রেখে বসলো সেখানে। বিছানায় দুই হাতের কুনই’য়ের ভর দিয়ে গালে হাত রেখে আবরারের মুখের দিকে কিছুটা ঝুকে তাকালো। পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো আবরার কে। এই লোকটা নাকি তার হাসবেন্ড! এতো বড় সেলেব্রিটি হয়েও তাকে ভালোবাসে? আপন মনে ভাবলো কিছুক্ষণ। গালে হাত রেখেই চিন্তিত হয়ে কণ্ঠস্বর নিচু করে বলে উঠলো, ‘যেই মানুষটার জন্য হাজার টা মেয়ে পাগল ; সেই মানুষটা কিনা আমার পিছু পিছু ঘুরে? পাপ্পি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে? ভাবা যায় এই গুলা?’
ভাবতেই প্রসন্ন হলো দীবার মন। খুশিতে আমোদিত হয়ে ফিশফিশ গলায় বলে উঠলো, ‘দীবা রে? কখনো ভেবেছিস এতো বড় সেলেব্রিটি তোর জামাই হবে?’ কথাটা বলেই বুকে এক হাত রেখে চোখটা বন্ধ করে আবারো বললো, ‘আল্লাহ! আমার জামাই টা এতো কিউট কেন? কেন? কেন? খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে একদম।’
আবরারের ঘুমানোর সুযোগে ফিশফিশ করে একাই বিড়বিড় করে কথা গুলো বলছে দীবা। ঘুমন্ত আবরার বোধ হয় টেরও পাচ্ছে না। বন্ধ চোখ উন্মুক্ত করে তাকালো আবরারের দিকে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে কিছুটা অসন্তুষ্টির সঙ্গে বলে উঠলো, ‘সবই ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাটা তুই আস্তো লুইচ্চা। সুযোগ পেলেই অসভ্য অসভ্য টাইপ কথা বলে শুধু। নির্লজ লোক। বলি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এইসব বলেন নাকি? মুখে লাগাম নেই?’
কথা গুলো বলেই বিরক্তিকর চোখেমুখে বুকে দুই হাত গুঁজে অন্য দিকে তাকালো দীবা। কয়েকবার নিশ্বাস নেবার পরে আবারো নিজেকে নিজেই বলে উঠলো, ‘আশ্চর্য মেয়ে তো তুই দীবা। তোকে না বললে আর কাকে বলবে? বউ তো একটাই। বলুক যা ইচ্ছা। শুধু মানুষটা তোর পাশে থাকলেই চলবে।’
বলেই মুচকি হাসি দিলো দীবা। গালে হাত রেখে আবারো আবরারের ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে লাগলো। তখুনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ডাকলো রিমি। খুবই সাবধানতার সঙ্গে দীবাকে ডাকলো যেন আবরারের ঘুম না ভাঙ্গে। দীবা তার দিকে তাকাতেই রিমি কিছুটা ঝাঁঝ মিশিয়ে, চোখ পাকিয়ে বললো, ‘এখানে কি করছিস তুই? আরব ভাইয়ের ঘুম ভাঙ্গে কেলেঙ্কারি বাধিয়ে ফেলবে। নিচে আয় তোকে ডাকছে।’
‘ঠিক আছে।’ প্রত্যুত্তর করলো দীবা। তাড়াতাড়ি আয় বলে চলে গেলো রিমি। দীবা কিছুক্ষণ আবরারের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যঙ্গ্য করে বলে উঠলো, ‘কেলেঙ্কারি বাধাবে না ছাই। উলটো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাইবে। অসভ্য লোক বলে কথা।’
দাঁড়ালো না আর এখানে। নিঃশব্দে চলে গেলো আবরারের রুম থেকে। দীবা যেতেই আবরার চোখ বন্ধ রেখেই হেসে উঠলো। এতোক্ষণ সজাগ ছিলো আবরার। শুনেছে সব। কিন্তু উপরে স্বাভাবিক ছিলো। দীবাকে বুঝতে দেয় নি যে তার ঘুম দীবা রুমে আসার আগেই হালকা হয়ে গিয়েছিলো। মেয়েটা এতো কিউট কেন? মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেই তো আবরারকে পাগল করেছে। টানা টানা ভয়ার্ত চোখের চাহনীতেই আবরারকে ঘায়েল করেছে। লাজুক হাসিতে মুগ্ধ করে আবরারকে। দীবাকে ছাড়া থাকা আবরারের পক্ষে অসম্ভব।
______________________
চট্টগ্রামে দুটো সৌন্দর্য রয়েছে। দিনের বেলা যেমন সবুজ শ্যামলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঠিক তেমনি রাতের অন্ধকারাবৃত পরিবেশে ছিমছাম জ্যোৎস্নার আলোতে রয়েছে আরেক সৌন্দর্য। পিচ ঢালা রাস্তার দুই পাশে সাড়ি বদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সোডিয়ামের কৃতিম লাইট। দিনের তুলনায় রাতেও রাস্তাঘাটে জনসংখ্যার কমতি নেই। ব্যস্ত মানুষ আপন মনে চলছে যার যার কাজের উদ্দেশ্যে। পরিচিত একটা জুয়েলারির দোকানের সামনে সাবিত গাড়িটা থামালো। নিশিতা, রাইমা ও দীবা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। রাইমার বিয়ের গয়না বানাতে এসেছে দোকানে। দোকানী সাবিতের বন্ধু সেই হিসেবে তাদের বহু পরিচিত। সাবিত গাড়ি থেকে নেমেই কল লাগালো রাজিবের নাম্বারে। যেহেতু বিয়ের গয়না বানাবে সেহেতু রাজিবের পরিবারের লোকজনও এখানে উপস্থিত থাকা লাগবে। কল দিয়েই জিজ্ঞেস করলো তারা এখনো কতো দূর? রাজিব জায়গার নাম বললে সাবিত তাদের নিয়ে আসতে এগিয়ে গেলো। যেহেতু রাজিবের পরিবার রাউজান থাকে সেহেতু আগ্রাবাদের দোকানপাট সম্পর্কে তারা এখনো অবগত নয়। দীবা রাইমার এক হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে এটা ওটা বলে হাসাচ্ছে রাইমাকে। দুইজনের প্রাণখোলা হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে দেখছে নিশিতা।
কিছুসময় পর সাবিতের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হলো রাইমার হবু-শাশুড়ি ও তার দেবর রাজ। রাইমা তার শাশুড়িকে খুবই সাবলীল ভাবে সালাম দিয়ে ভাব বিনিময় করলো। সঙ্গে দীবাও। সংক্ষিপ্ত আলাপ শেষে জুয়েলারির শো-রুমে ঢুকলো সবাই। সাবিতের বন্ধু সবাইকে সাধরে গ্রহন করলো। দোকানের কর্মচারী কে সব কিছু ভালোভাবে দেখাতে বলে সাবিতের বন্ধু সাবিতকে নিয়ে অন্যদিকে গেলো। ব্যস্ততার কারণে দুই বন্ধু তেমন দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে না। আজ মেয়েরা গয়না চয়েজ করার ফাঁকে নাহয় আড্ডা দেওয়া যাক।
দোকানের কর্মচারী রাইমা কে বিভিন্ন ডিজাইনের গয়না দেখাতে লাগলো। রাইমা এক এক করে সব গুলো ডিজাইন দেখতে লাগলো। তার পাশেই বসে আছে দীবা। সেও এক্সাইটেড হয়ে রাইমার সাথে বসে গয়না দেখতে। তাদের পাশেই নিশিতা ও রাইমার শাশুড়িও ব্যস্ত গয়না দেখায়।
একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে রাজ। চেয়ারে বসে থুতনি তে এক হাত ঠেকিয়ে দীবার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দীবা বিভিন্ন ডিজাইনের গলার হার নিজের গলায় রাখছে আর আয়না দিয়ে দেখছে। সঙ্গে হেসে হেসে রাইমার গলায়ও চেক করছে ঠিক কেমন মানায়। একবার ইয়ারিং দেখছে তো আরেক বার হাতের চুড়ি দেখছে। একটু দূরে বসেই দীবার রি হাস্যউজ্জ্বল চেহারা পর্যবেক্ষণ করছে রাজ। মুগ্ধ হয়ে মৃদু হাসলো।
দীবা গয়না দেখতে দেখতে একপাশে হাতের ব্রেসলেট দেখে পছন্দ করলো। দোকানী কে বের করে দিতে বললে দোকানী বের করে তার হাতে দিলো। দীবা মুগ্ধ চোখে ব্রেসলেট টা দেখলো। তারপর হাতে পরার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ব্রেসলেটের হুকটা ঠিক লাগাতে পারছে না। তবুও বারবার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে দীবা। এক পর্যায়ে না পেরে বিরক্ত হয়ে গেলো। দূর থেকে সবই দেখলো রাজ। দীবার বিরক্তিকর মুখটা দেখে মৃদু হাসলো। তারপর এগিয়ে আসলো দীবার কাছে। ঠোঁটে হাসি রেখেই অনুমতি চাইলো, ‘আমি পরিয়ে দেই?’
রাজের দিকে বিস্মিত চোখে তাকালো দীবা। এক বার ব্রেসলেট টার দিকে তাকালো। দ্বিধায় পরে গেলো সে। মুখের উপরে না করে দিবে? নাকি রাজি হবে? না করলে যদি স্যার অপমানবোধ করে তাহলে? বয়সে যেহেতু বড়, আবার স্যার, পারিবারিক ভাবে আত্মীয় হবে কিছুদিন পর। সব কিছু ভেবেই রাজি হলো। ব্রেসলেট টা রাজের দিকে এগিয়ে দিলো। রাজ সেটা হাতে নিয়ে দীবার বাম হাতে পরিয়ে দিলো। খুশি হলো দীবা। ঠোঁটে হাসি রেখেই আয়নার মাঝে হাতটা দেখলো। তার এই খুশি দেখে রাজ প্রশ্ন করলো, ‘পছন্দ হয়েছে?’
দীবা ব্রেসলেট টা দেখতে দেখতে উত্তর দিলো, ‘ভীষণ।’
_______________________
দীবা রুম থেকে যাবার পরেও মাত্র কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছিল আবরার। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো রিমি নুরা বসে ওয়েব সিরিজ দেখছে। আবরার তাদের পাশে বসে কিছুক্ষণ সিরিজ দেখার পর বাকি সবাই কোথায় জানতে চাইলো। তখন নুরা এক এক করে সবার খোঁজ জানালো।সঙ্গে এটাও জানালো যে বাকিরা রাইমার বিয়ের জন্য গয়না দেখতে গিয়েছে। দাঁড়ালো না আর আবরার। সাবিতের কাজ থেকে এড্রেস টা নিয়েই বেড়িয়ে গেলো জুয়েলারির দোকানের উদ্দেশ্যে। যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাবার পর গাড়ি থেকে নামলো আবরার। প্রতিবারের মতোই মুখে মাক্স আর মাথায় ক্যাপ পরা। দোকানের ভিতরে ঢুকার সময় মনটা ফুরফুরে থাকলেও ভিতরে ঢুকার পর ফুরফুরে মেজাজ বিগড়ে গেলো। দীবার হাতে রাজকে ব্রেসলেট পরিয়ে দিতে দেখেই রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। দাঁতে দাঁত পিষে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
আবরারকে দেখে নিশিতা ডেকে উঠলো, ‘আরে আবরার কখন এলি? এইদিকে আয়।’
নিশিতার ডাক শুনে দীবা পিছু ফিরে তাকিয়ে আবরারকে দেখেই বিস্মিত হলো। ধরফড়িয়ে রাজের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিস্মিত হলো কিছুটা।
আবরারের সাথে রাইমার শাশুড়ির পরিচয় করিয়ে দিলো নিশিতা। ভদ্রমহিলা খুশি হলেন আবরারের সাথে পরিচিত হয়ে। রাজ এগিয়ে এসে আবরারের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডসেক করার জন্য। আবরার চুপচাপ হ্যান্ডসেক করলো রাজের সাথে। ভাব বিনিময় করলো। যদিও ভিতরে ভিতরে রেগে আছে প্রচুর।
.
অনেকটা সময় নিয়ে গয়না পছন্দ করে বানাতে দেওয়া হলো। বানানো ছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু গয়না সাথে নিলো নিশিতা আর রাইমার শাশুড়ি। কেনাকাটা শেষে দোকান থেকে বেরিয়ে আসলো সবাই। রাজ ও তার মা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। নিশিতা গাড়িতে উঠে বসতে নিলেই আবরার বলে উঠলো, ‘আম্মু দীবা আমার সাথে যাবে। তোমরা চলে যাও।’
চলমান…