আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-৩৫

0
1571

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৩৫]

আষাঢ়মাসের চন্দ্রকলার তিথী শেষে মাসের সমাপ্তি ঘটলো। বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী পরবর্তি মাস শ্রাবণের আগমন ঘটলো। ভারি বর্ষণের মাত্রা তিরতির করে বেড়ে গেলো। আবহাওয়া হলো শীতল। বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট, গাছগাছালি পরিচ্ছন্ন। শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে নদনদী মুখরিত। সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো রোশান ও রাইমার শ্বশুর আফজালের। প্রথমে বিয়ের ডেইট আষাঢ় মাসের শেষে ঠিক করা হলেও ব্যস্ততার কারণে পিছাতে হয়েছে।পারিবারিক বৈঠকের পর চলতি মাসের তেইশ তারিখ ঠিক করা হলো। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে লাগলো সবাই।

যেহেতু বিয়ের ডেইট আসতে আরো দেরি ; সেহেতু এই ফাঁকে ছোটখাটো একটা ট্রুর দেওয়াই যায়। প্ল্যানটা অবশ্য আরিয়ান করেছে। সম্মতি দিয়েছে মেয়েরা। নিশিতা প্রথমে রাজি ছিলো না। বিয়ের আগে মেয়েদের ঘুরাঘুরি করা অনুচিত। আয়েশার মতামতও না এর পক্ষে ছিলো। কিন্তু রিমি, নুরা, দীবা ও বিশেষ করে রাইমার জোরাজোরিতে আয়েশা নিজেও রাজি হলো আর নিশিতাকেও রাজি করালো। সবাইকে রাজি করানোর পর পরলো আরেক বিপাকে। ট্রুরে যাবে বলে লাফিয়েছে ঠিকই কিন্তু যাবে কোথায়? এই নিয়ে চিন্তিত সবাই। সন্ধ্যা হতেই গুলপট্টি বাধাচ্ছে একত্রে।

‘মানে কি রে ভাই? এতো বড় একটা দেশে ঘুরতে যাবার মতো কোনো প্লেস নাই? এইডা কোনো কথা?’ হতাশ হয়ে বলে উঠলো আরিয়ান।

নুরা সোফায় হেলান দিয়ে চিপসে কামড় দিয়ে বললো, ‘সাজেক ছাড়া আপাতত কোথাও যাওয়ার জায়গা দেখছি না।’

নুরার পাশেই রিমি বসে ছিলো। তাই সে অনায়াসে নুরার গায়ে একটা চাপড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘বর্ষাকালে সাজেক গিয়ে হাত পা ভাঙ্গার ইচ্ছা আছে নাকি?’

নুরা বিরক্তিকর চোখেমুখে রিমির দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝ দেখিয়ে বললো, ‘আব্বে বাল আমি যেতে বলেছি নাকি?’

আবরার নিরবে হেসে ফেললো দুই বোনের কাহিনী দেখে। চোখ ঘুরিয়ে দীবার দিকে তাকাতেই দেখলো দীবা দুই গালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। ভাব এমন যেন অত্যন্ত চিন্তিত মেয়েটি। কোথায় যাবে এই নিয়ে মহা বিপাকে। আচ্ছা দীবার পছন্দের কোনো প্লেস আছে? বা দীবার কেমন পরিবেশ ভালো লাগে? জানার আগ্রহ জাগলো আবরারের মনে। কিছু বলার জন্য উদ্যোগ নিতেই রাইমা বলে উঠলো, ‘আসো চা বাগানে যাই। ওখানে গিয়ে হরেক রকমের চা খাই। উফফফ!’

আরিয়ান তার কথার ব্যাঙ্গ্য করে উঠলো, ‘এহেহে তুই নিজে কঙ্কাল তাই আমাদেরও কঙ্কাল বানানোর পায়তারা করছিস? খালি কেমিক্যাল ওয়ালা পানি খাওয়ার লাগি কোন বেক্কলে এতো দূরে যায়?’

রাইমা কাটকাট ভাবে উত্তর দিল, ‘তুমি নিজেই বেক্কল তাই যাও না। চায়ের প্রেম তোমার মতো গর্দভ রা বুঝবে না। তাই আমি আর তর্কে জড়াচ্ছি না।’

আরিয়ান ত্যাঁছড়া ভাবে হেসে রাইমার দিকে হাত তুলে বলে উঠলো, ‘হেহে বেডি মানুষ। লজিক নাই তবুও হার মানবো না। তুই তর্ক করবি কেমনে তোর কাছে কোনো যুক্তি আছে? নাই। বস দের সাথে তর্ক করতেও কিছু যোগ্যতা রাখা লাগে। যা বেডি মানুষের নাই।’

শেষের কথাটা শার্টের কলার ঠিক করে ভাব নিয়ে বললো আরিয়ান। রাইমা পাত্তা না দিয়ে বললো, ‘বেডা মানুষদের সাথে কথা বলায় বেকার।’

রাইমার কথার সম্মতি দিয়ে খুশি খুশি মনে দীবা বলে উঠলো, ‘আপু চা বাগানই পারফেক্ট হবে। চারপাশে শুধু সবুজ গাছ আর গাছ। সন্ধ্যা বেলায় খোলা আকাশের নিচে বসে বারবিকিউ পার্টি। ভালো হবে না?’

দীবা সম্মতি দেওয়ায় এতোক্ষণে মুখ খুললো আবরার, ‘তাহলে এটাই ফাইনাল। এখন কোন চা বাগানে যাবি সেটা ডিসাইড কর।’

‘তোমারা তোমাদের খালামনিদের বাড়ি যাচ্ছো না কেন?’

আয়েশার কথা কর্ণপাত হতেই চকচকিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো সবাই। সবার এমন রিয়েকশন দেখে আয়েশা স্মিতি হাসলো। শাড়ির আঁচল টেনে সিঁড়ি থেকে নেমে সবার সামনে এসে দাঁড়ালো। রাইমা চিন্তান্বিত হয়ে বললো, ‘কিন্তু আম্মু খালামনিরা তো ইউকে থাকে। খালি বাড়িতে গিয়ে কি করবো?’

তখুনি খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আরিয়ান। হঠাৎ-ই তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে নুরা রিমি ভড়কে গেলো। দীবার হাতে পপকর্ন ছিলো ভড়কে গিয়ে কিছু পপকর্ন নিচে পরে গেছে। রাইমা বুকে হাত দিয়ে বললো, ‘হয়েছে টা কি? ব্যঙের মতো এভাবে লাফাইতাছো কেন?’

আরিয়ান রাইমার কথার তোয়াক্কা করলো না। আয়েশার দিকে তাকিয়ে দুই হাত ঠোঁটে কাছে এনে ফ্লাইং কিস দিয়ে বলে উঠলো, ‘উফফ ছোট আম্মু ইউ আর গ্রেট! অলওয়েজ তুমি পারফেক্ট আইডিয়া দাও।’

নুরা ভ্রুঁ কুঁচকে জানতে চাইলো, ‘কিভাবে পারফেক্ট হলো?’

‘খালামনিরা দেশে না থাকায় পুরো বাড়ি খালি। আর বাড়ির পাশে বিশাল চা বাগানে কর্মচারী বাদে কোনো পর্যটক এলাউ না। তারমানে বাড়িসহ বিশাল চা বাগান একদম জনমানবশূন্য। শুধু মাত্র আমরা থাকবো। নিরিবিলি পরিবেশ। পারফেক্ট হবে না?’

আরিয়ানের কথার সঙ্গে সঙ্গে দীবাও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো, ‘আর রাতে আকাশের নিচে বারবিকিউ পার্টি হবে। সবাই আনন্দ করবো। ট্রুথ, ডেয়ার, গানের কলি খেলবো। কতো সুন্দর হবে।’

অভ্র তাদের সমর্থন করলো, ‘রাইমার চয়েজ আর দীবার প্ল্যান দুটোই পারফেক্ট। আমারো পছন্দ হয়েছে।’

সাবিতও তার সম্মতি জানালো, ‘আমারো পছন্দ হয়েছে।’

নুরাও চেঁচিয়ে উঠলো, ‘ইয়ে আমারো হয়েছে।’

সবার মতামত নেওয়ার পর আবরার খালামনির বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তই ফাইনাল করলো। আয়েশা জানালো সে তার বোনকে জানিয়ে সব ব্যবস্থা করে রাখবে। তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো নিশিতা। নিচে এসে সবার পরিকল্পনা শুনলো। নিজেও কিছু টিপস দিলো কিভাবে ফূর্তি করবে। কথার ফাঁকে আবরারকে এটাও বললো, ‘রাজিব আর রাজকেও সঙ্গে নিতে পারো।’

রাজের নামটা শুনতেই বিরক্ত হলো আবরার। অপ্রসন্ন চোখেমুখে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ওরা আমাদের সাথে যাবে কেন?’

নিশিতা অসন্তুষ্ট হয়ে বললো, ‘মানে কি আবরার? ওরা কিছুদিন পর আমাদের আত্মীয় হবে। সাথে নিয়ে যেতে সমস্যা কোথায়? মিলেমিশে ঘুরতে যাবে এক সাথে। ভালো দেখাবে না? তুমি ওদের কল দিয়ে তোমাদের সাথে জয়েন করতে বলো।’

আবরার প্রথমের মতোই পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে থেকে ভাবলেশহীন ভাবে প্রত্যুত্তর করলো, ‘পারিবারিক কাজে সাবিত আছে। তাকে দিয়েই বলাও। আমাকে এইসবে টানবে না।’

ছেলের উত্তর শুনে হতাশার নিশ্বাস ফেললো নিশিতা। পুরনো দণ্ড এখনো মিটে নি। সেই কবেকার একটা ঘটনা কেন্দ্র করে ছেলেটা পরিবার থেকে মুখ ফিরিয়েছে। মনে মনে নিজের স্বামীকেই দোষারোপ করতে লাগলো নিশিতা। কি এমন ক্ষতি হতো যদি তখন আবরারের কথা মেনে নিতো? আবরারের উপর জবরদস্তি না করতো? রোশানের উপর ক্ষুব্ধ হলেও প্রকাশ করলো না। সাবিতকে বললো, ‘তুই ইনভাইট করবি তো? নাকি তোরও সমস্যা হবে?’

সাবিত হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো, ‘এইসব কি বলছো বড় আম্মু? আমার সমস্যা হবে কেন? নিশ্চিন্তে থাকো একদম। ঘরে বাইরে সব কাজে সাবিত হাজির।’

মুচকি হাসলো নিশিতা আর আয়েশা। সাবিত পকেট থেকে মোবাইল বের করে রাজিবের নাম্বারে ডায়াল করে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সবাই অধিক আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে কি মতামত আসে জানার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কথা বললো সাবিত। তারপর এসে জানালো রাজিব যেতে রাজি হয়েছে। কিন্তু রাজ যাবে কিনা সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত না রাজিব। রাতে জানাবে বলে দিয়েছে।

অতঃপর নিশিতা ও আয়েশা সবাইকে তাগিদ দিলো যে যার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। খুশিতে লাফিয়ে উঠলো মেয়েরা। প্রস্তুতি নিতে লাগলো সবাই। কি নিবে, কি পরবে, কি কি করবে সব পরিকল্পনা করে ফেলেছে। এবার শুধু সকাল হবার পালা।
_____________________

শ্রাবণের চলতি সময়। সুবিশাল আকাশটা আজ অদ্ভুত ভাবেই স্বচ্ছ। কোথায় ঘন কালো মেঘের আনাগোনা নেই। বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের বেশিরভাগ ফুল গতকাল রাতের ভারি বর্ষণের কারণে অকালে ঝরে পরেছে। তাদের এই বেহাল অবস্থা দেখে বড্ড মায়া হলো দীবার। ঠোঁট উলটে আকাশের দিকে তাকালো। সুবিশাল আকাশটা পর্যবেক্ষণ করার পর দীবার ষষ্ঠইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে যে আজ বৃষ্টি হবে না। মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ছুড়লো দীবা। ভাগ্যিস আজই আকাশ পরিষ্কার। যদি বৃষ্টি হতো এখন তাহলে ঘুরতে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিতো। আকাশ স্বচ্ছ, আবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী আজ বৃষ্টি হওয়ার আশংকা নেই। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই নিশিতা আয়েশা সবাইকে ছাড়লো। এইসব ভেবেই গাড়ির দরজা খুললো দীবা। তখুনি পিছনে এসে দাঁড়ালো আবরার। দীবা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো, ‘তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে দীবা।’

আবরারের থেকে হুট করে এমন প্রশংসা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দীবা। অবাক চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো পরনে তার লাল রঙের লং কুর্তি। হাতে লাল রঙের চুড়ি। এইটুকুতেই সুন্দর লাগছে? কিছুটা লজ্জাভূতি হলো দীবা। গাল লাল হয়ে এলো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে লজ্জা নিভানোর চেষ্টা করলো। গাড়ির ভিতরে রিমি নুরা বসেছিল। আবরারের কথা শুনে জানালা দিয়ে মুখ বাহিরে এনে দুইজন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রুঁ জোড়া নাচালো। রিমি দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো, ‘বাহ্ শুধু বউকে কমপ্লিমেন্ট দিলেই হবে? আমাদেরও দাও। আমরাও সুন্দর করে সেজেছি।’

আবরার এক গাল হেসে উঠলো রিমির কথা শুনে। হাসির শব্দ থামিয়ে কূটস্থ করে বলে ফেলল, ‘এই জন্যই বউয়ের প্রশংসা করেছি। তোরা মুখে আটা-ময়দা মেখে সেজেছিস। আর বউ কে দেখ? একদম নেচারাল সুন্দরী।’

লজ্জা কাটিয়ে আহাম্মক হয়ে গেলো দীবা। ফ্যালফ্যাল চোখের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের মুখের দিকে। নুরা, রিমি উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠলো। দুইজন কে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো আবরার। নুরা হাসতে হাসতে দাঁত মুখ খিঁচে বলল, ‘তোমার বউ নেচারাল সুন্দরী? আজকে কয় ঘন্টা সময় নিয়ে সেজেছে জানো ভাই?’

দীবা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে নুরার দিকে কটমট চোখে তাকালো। মনে মনে শ’খানেক গালিয়ে শুনাতে লাগলো দুজনকে। আবরার এক হাতে মাথা চুলকে ভাবুক কন্ঠে বলল, ‘ওহহ দীবাও মেকআপ করেছে?’

রিমি বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। পাক্কা দুই ঘন্টা সময় লাগিয়েছে।’

দীবা কপাট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘মিথ্যে বলবি না একদম।’

আবরার ক্ষান্ত হলো না। বরঞ্চ দীবার প্রশংসা অটুট রাখতে বলে উঠলো, ‘সাজলে সাজুক। তোদের সমস্যা কি? মেয়ে মানুষ মানেই সাজবে। আমার বউ সেজেছে। আগের মতোই সুন্দর লাগছে। একদম কিউটের ডিব্বা লাগছে।’

কথাটা বলার মাঝেই কল আসলো আবরারের। তাই সে কথার সমাপ্তি এখানেই ঘটালো। কল রিসিভ করে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো। দীবা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতেই নুরা তার গাল টেনে বলে উঠলো, ‘আসলেই কিউটের ডিব্বা লাগছে।’

রিমি অপর গাল টেনে বললো, ‘উহুম, কিউটের পাতিল।’

দুইজন দুই গাল টেনে বেহাল অবস্থা বানিয়ে ফেলায় চেঁচিয়ে উঠলো দীবা। নিজের গালে হাত বুলাতে বুলাতে রাগে কিড়মিড় করে বলল, ‘অ*সভ্যের দল। আমার গাল কি তোদের সরকারি সম্পত্তি লাগে? হুদাই ধরে টানাটানি করিস কেন? ব্যা:থা লাগে না। বিলাইয়ের দল।’

তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো রাইমা। গাড়িতে উঠতে উঠতে কড়া থ্রে’ট দিয়ে বসলো, ‘তোরা তিনটা আবার ঝ’গ’ড়া করলে রাস্তার মাঝেই নামিয়ে দিবো বলে দিলাম।’

রিমি ভাব নিয়ে বললো, ‘আমরা তো বাড়ি চিনি। ঠিকই রাস্তা চিনে চলে আসতে পারবো।’

এক এক করে উপস্থিত হলো সবাই। ডার্ক ফরেস্ট অর্থাৎ গাঢ় সবুজ রঙের বড় একটা জিপ গাড়িতে উঠে বসলো সকলে। আবরার বসলো ড্রাইভিং সিটে। তার পাশেই সাবিত। পিছনের সিটের তিনটে সাড়ি। প্রথম সাড়িতে রাইমা, দীবা ও নুরা। মাঝের সাড়িটা রাজিব ও রাজের জন্য ফাঁকা রেখে শেষের সাড়িতে বসলো আরিয়ান, অভ্র ও রিমি। পিছনে অবশ্য রাইমা বসতে চেয়েছিলো কিন্তু রিমি নিজে থেকে জোরপূর্বক বসেছে। অন্য সবাই কারণটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও অভ্রের বুঝতে বাকি নেই আসল কারণ ঠিক কি।

সবাই ঠিকঠাক ভাবে বসার পরেই আবরার গাড়ি স্টার্ট দিলো। সু-সু শব্দ তুলে চলতে লাগলো গাড়ি আগ্রাবাদের ইয়া বড় পিচ ঢালা রোডের উপর দিয়ে। বৃষ্টি শেষ রাতে হলেও সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। তাই পরিবেশটা আজ মনোরম। রিমি জানালার বাহিরে তাকিয়ে উপভোগ করছে। মনটা বেশ ফুরফুরে। আকাশের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকালো রিমি। আরিয়ান কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর দুজনের মাঝে বসে থাকা অভ্র আপন মনে মোবাইল চালাচ্ছে। রিমি আপনমনে অভ্রকে দেখলো কিছুক্ষণ। আনমনে মুচকি হেসে অভ্রের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। হঠাৎ রিমি কাধে মাথায় রাখায় হকচকিয়ে গেলো অভ্র। চটজলদি রিমির মাথা কাধ থেকে সরিয়ে দিয়ে চমক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালো। না! কেউ দেখে নি। অভ্র কণ্ঠস্বর নিচু করে ফিশফিশ করে বলে উঠলো, ‘সমস্যা কি রিমি? কাধে মাথা রাখলে কেন?’

চলমান..