#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৭
আষাঢ় এবং চিত্রা গন্তব্যে পৌঁছাতেই রিকশা থেকে নেমে পরলো। আষাঢ় ভাড়া দিতে চাইলো তবে আজ চিত্রা কিছুতেই আষাঢ়কে ভাড়া দিতে দেয়নি। সে নিজেই ভাড়া দিয়েছে। এতে আষাঢ় একটুও মন খারাপ করেনি। সেদিন সে দিয়েছে আজ না হয় চিত্রাই দিলো। আষাঢ় চিত্রাকে নিয়ে ভেতরের দিকে আসলো। চিত্রা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে প্রকৃতিকে। জায়গাটার মাঝ বরাবর একটা খাল চলে গিয়েছে। পাশ দিয়ে ব্রিজের মতো অনেকটা রাস্তা। কিছুদূর থেমে থেমে কুঁড়ে ঘরের মতো ঘরও আছে। দু’জন হাঁটা শুরু করলো।
“এতো সুন্দর জায়গার সন্ধান কিভাবে পেলেন আষাঢ়। প্রকৃতির এমন রূপ দেখার সৌভাগ্য আগে হয়নি আমার। ধন্যবাদ এখানে নিয়ে আসার জন্য”
“এই জায়গাটা আমার ভীষণ পছন্দের। আমি এখানে আগেও তিন চার বার এসেছি। আপনার পছন্দ হয়েছে তো চিত্রা?”
“হুম ভীষণ। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যতে হারিয়ে যেতে চাই আমি। আমি আমার জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছি তার মধ্যে অন্যতম হলো নিজেকে ভালোবাসা, যে মানুষ নিজেকে ভালোবাসতে পারে না সে অন্য কাউকেও ভালোবাসতে পারে নাহ”
আষাঢ় মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো তার প্রিয় নারীর কথা। চিত্রা হঠাৎই তাকালো আষাঢ়ের পানে। আষাঢ় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখ চোখ পরতেই দু’জনেই চোখ সরালো। আষাঢ় চিত্রাকে অপেক্ষা করতে বলে কোথাও একটা গেলো। চিত্রা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি কিছু ভিডিও আর ছবিও তুলে নিলো। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবে। কিছুক্ষণ বাদে আষাঢ় দু কাপ চা নিয়ে আসলো। মৃদু হেসে তা চিত্রার দিকে এগিয়ে দিলো।
“চিত্রা আমি আপনাকে সেদিন নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে ছিলাম। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি উত্তর দেননি, আমি বলতে চাইছি আপনি আমায় ভালো না বাসলে নিজেকে জোর করবেন না। আমি না হয় বন্ধু হয়েই আপনার পাশে থাকবো”
চিত্রা সরাসরি বলে উঠলো,,“আষাঢ় সাহেব সত্যি বলতে আপনার জন্য আমার মনের গহীনে অনুভূতি নেই তা নয়। আছে কিছুটা তবে ভালোবাসা বলে না সেটাকে”
“পছন্দ! পছন্দ হলেই হচ্ছে চিত্রা। আমি তো বলেছি আপনার যখন ইচ্ছে আমায় তখন উত্তর দিবেন। আমি জোর করবো না। আমি জোর করে কোনো কিছু করা মোটেও পছন্দ করি নাহ”
“এসব বাদ দিন। আমার অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আপনিই একমাত্র পুরুষ যার সাথে আমি এতোটা কথা বলেছি এই যে বের ও হয়েছি।”
“চিত্রা আমি জানি আপনার অতীত। অতীত নিয়ে কখনোই পড়ে থাকবেন না। তার থেকে বড় কথা যে আপনার অনুভূতি নিয়ে খেলেছে তার কথা তো মাথায় ও আনবেন নাহ”
“আমি তাকে ঘৃণা ব্যতিত কিছুই করি নাহ”
“সব পুরুষ এক নয় চিত্রা এটা কি আপনি এখন বিশ্বাস করেন?”
“সম্পূর্ন নয় তবে মোটামুটি করি। সবাই আসলেই এক নয়। এই বর্তমান দুনিয়াতে আপনার মতো মানুষের বড্ড অভাব আষাঢ়”
“আপনি আগের মতো হয়ে যান চিত্রা। আমি এক প্রাণবন্ত চিত্রাকে চাই। যে আমার সাথে অভিমান করবে,আমি কলেজ থেকে ফিরলে আমার যত্ন করবে,আবার কখনো ভুল করলে শাসন করবে। আমি এমন আপনিটাকে চাই।”
“আগের চিত্রা হলে হয়তো আপনি এমন চিত্রাকেই পেতেন।”
আষাঢ় হঠাৎ ই বলে উঠলো,,“আমায় বিয়ে করবেন চিত্রা?”
চিত্রা চমকে উঠলো। আষাঢ়ের পানে তাকালো। চিত্রা ভাবলো কিছু একটা অতঃপর বললো,,
“আমায় অসম্মান করবেন না আষাঢ়?আমি কি বিশ্বাস করতে পারি আপনায়?”
“আপনি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারেন”
–
“আরে আপা আপনি আজ হঠাৎ এতো কিছু নিয়ে আসলেন যে?”
বেলী বেগম হেসে বলেন,,,
“ভাই আমাদের সম্পর্ক এখন প্রতিবেশী থেকে অন্য কিছুতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। সেই প্রস্তাবই নিয়ে এসেছি আজ।”
আরমান সাহেব মৃদু হাসলেন। যার অর্থ তিনি বুঝেছেন বেলী বেগমোর বলা কথার অর্থ। মরিয়ম সুলতানা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। কি হচ্ছে। তিনি বলে উঠলেন,,,
“আচ্ছা তোমরা দু’জন কি নিয়ে কথা বলছো তাই তো বলো?”
“আষাঢ় চিত্রাকে পছন্দ করে আপা। বলতে গেলে প্রচুর ভালোবাসে। আমি আজ আষাঢ়ের সাথে চিত্রার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। আপনারা রাজি থাকলে আংটি বদলের দিন ঠিক করতাম”
মরিয়ম সুলতানা চমকে উঠলেন। আষাঢ় পছন্দ করে চিত্রাকে এটা সে আন্দাজ করেছে। তবে ভালোবাসে বিষয়টি শুনে চমকেছেন তিনি। তার ভেতরোই আরমান সাহেব বলেন,,,
“আপা আমি তো কোনো সিদ্ধান্ত আমার মেয়ের উপর চাপিয়ে দিতে পারি না। তার কাছে অনুমতি নেওয়ার পরেই না হয় আংটি বদলের দিন ঠিক হোক?”
বেলী বেগম অনুমতি দিলেন। তারা টুকটাক কথা বার্তা বলতে লাগলেন। এগুলো আবার দু’জন কান পেতে শোনার চেষ্টা করছিলো। সম্পূর্ণ না বুঝলেও তারা এতো টুকু বুঝতে পেরেছে আষাঢ় চিত্রাকে পছন্দ করে এবং বেলী বেগম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। প্রহর অরিহা দরজা থেকে সরে ছাদে চলে আসলো। প্রহর খুশি হয়ে বলল,,,
“আমার স্বপ্নটা তাহলে পূরণ হচ্ছে। আষাঢ় ভাই শেষমেশ আমার দুলাভাই হচ্ছে। ইশ এটার জন্যই তো এতোদিন অপেক্ষা করেছি। ইশশ আপুর বিয়ে খাওয়া কত দিনের শখ ছিলো আমার”
“আমিও ভীষন খুশি চিত্রা আপুকে আমারও ভীষণ পছন্দ। তাকে আমার ভাবি হিসাবে পেলে আমি অনেক খুশি হবো।”
“অরিও বিস্কুট তুমি তো এখন আমার বেয়াইন হয়ে যাচ্ছো”
“এই তোমাকে না বলে ছিলাম আমাকে অরিও বিস্কুট বলবে না। আমার একটা নাম আছে। অরিহা! আমার এতো সুন্দর নাম টাকে তুমি বারবার বিশ্রি ভাবে বলো বেয়াদপ”
প্রহর ভেঙ্গিয়ে বলল, “তোমার আবার নাম”
অরিহা রেগে চোখ পাকিয়ে বলে,,
“তুমি আমায় কি একটু সম্মান দিতে পারো নাহ। আমি তোমার থেকে এক বছরের সিনিয়র, এটা বোধ হয় তুমি ভুলে যাও। বেয়াদপ, ফাজিল ছেলে কোথাকার”
“আমার মুখ আমার ইচ্ছে। আমি যা খুশি তাই বলবো তোমার কি।আর তোমাকে সম্মান আমি এ জীবনে দিতাম না। তাই সে সব ভুলে যাও”
অরিহা সুযোগ বুঝে আবারও প্রহরের চুল টেনে দৌড়ে নিচে নেমে যায়। প্রহর পেছন থেকে চিল্লাচ্ছে। অরিহা এতে কান না দিয়ে দৌড়ে নিজেদের বাড়িতে চলে আসে। এখন সে কোনো মতেই আর প্রহরের চোখের সামনে পরতে চাইছে না। না হলে তার চুল যে আস্ত থাকবে না তা সে খুব ভালো করেই জানে।
–
রাত প্রায় নয়টা। চিত্রা বাড়ি ফিরেছে সেই সন্ধ্যায়। আষাঢ় তাকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়েছিলো। সে তার কিছু কাজ থাকায় চিত্রার সঙ্গে আসতে পারেনি। তবে এতে চিত্রার মন খারাপ হয়নি। আজকের দিনটা ছিলো তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। অনেক ভেবে চিন্তে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে আজকে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সে দিন সে ভুল মানুষকে বেছে ছিলো তবে আজ সে সঠিক মানুষটিকে বেছে নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধইরে এটা নিয়েই সে চিন্তিত ছিলো।তখনই আরমান সাহেব দরজায় আঘাত করলেন। চিত্রা দরজা খুলতেই আরমান সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলেন।
“আম্মা তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো। কথাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তোমার কাছে একটু জটিল হবে।”
“তুমি আছো তো আব্বু। তুমি থাকতে আমার চিন্তা নেই”
“আম্মা আষাঢ়ের সাথে তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বেলী আপা। তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি আম্মা।তবে আষাঢ় অনেক ভালো ছেলে এটা মাথায় রেখো”
থেমে আবারও বললেন,,,
“আগের বারের মতো তোমায় ঠকতে হবে না এটা আমি তোমায় বলতে পারি। সে হাজারে একটা ছেলে। আমি খোঁজ নিয়েছি তার ব্যাপারে সব। তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও এখন”
#চলবে~