#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৮
চিত্রা দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,,
“আব্বু তুমি যদি চাও আমি তাকে বিয়ে করি তাহলে আমি রাজি। আমার কোনো সমস্যা নেই”
“আমি বললে না আম্মা, তুমি তোমার মতামত দাও। কি চাও তুমি। তাকে চাও কি চাও না। আষাঢ়কে পছন্দ করো তুমি?”
“হয়তো বা। তবে আমি নিজেকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাই। আমি চাইছি আষাঢ় সাহেবকে একটা সুযোগ দিতে। হয়তো সে আমার জন্য সঠিক মানুষ”
আরমান রহমান খুশি হয়ে বলে,, “তার মানে তুমি রাজি আম্মা?”
চিত্রা মাথা নাড়ালো অর্থাৎ রাজি সে। আরমান সাহেব মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন। অতঃপর চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
“তাহলে আমি বেলী আপার সাথে কথা বলি?আংটি বদলের দিন ঠিক করি আম্মা। এতে সমস্যা নেই তো?”
“আমার কোনো সমস্যা নেই আব্বু। তবে বিয়েটা যেনো সাদামাটা হয়। এবং অতিরিক্ত লোকজন যেনো না আসে। আমার চিৎকার চেঁচামেচি পছন্দ নয় জানো তো তুমি?”
আরমান সাহেব চিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,
“তুমি যা চাও তাই হবে আম্মা। আমি বেলী আপাকে বলবো সাদামাটা ভাবে যেনো বিয়েটা হয়।”
আরমান সাহেব রুম ত্যাগ করলো। চিত্রা দরজা আঁটকে বসলো নিজের বিছানায়। সে আষাঢ়কেও জানিয়েছে যখন আষাঢ় তাকে বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলো। চিত্রা বিশ্বাস করে আষাঢ় তাকে কখনো অসম্মান করবে না। হুট করেই মাথায় নাহিয়ান! নামটা চলে আসলো। তবে চিত্রা তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো। আষাঢ়ের সাথে আজকের স্মৃতি গুলো মনে করতে লাগলো সে। আষাঢ়ের ছোট ছোট যত্নগুলো বেশ ভালো লেগেছে তার। সাজিয়ার কথা মাথায় আসলো। তাকে খবরটা জানানো প্রয়োজন।
যেইভাবা সেই কাজ। ফোন নিয়ে কল করলো সাজিয়া নামক রমনীকে। সাজিয়া রাতের রান্নার এবং নিশীথকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করছিলো। ফোন বেজে উঠতেই রিসিভ করে।
“কি রে কেমন আছিস?”
চিত্রার কথার জবাবে সাজিয়া হেসে বলল,,,
“এই তো ভালো আছি। আগামীকাল নিশীথের জন্মদিন তার জন্য একটু ব্যস্ত। ভাবছি রাতে তাকে সারপ্রাইজ দিবো”
“আচ্ছা। তোকে কিছু জানানোর ছিলো। তুই কি এখন শুনতে পারবি?”
সাজিয়া কিছু বলবেন তখন জান্নাত ইসলাম বলেন,,
“তুমি কথা বলে আসো সাজিয়া। আমি দেখছিি কি এই দিকটা”
সাজিয়া মিষ্টি হেসে নিজের রুমে আসে।অতঃপর বলে,,“হ্যাঁ বল।শুনছি আমি”
“সাজি আমি আষাঢ় সাহেবকে মেনে নিয়েছি”
সাজিয়া কথাটা শুনে চোখ বড়বড় করে ফেলল। সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না। সাজিয়াকে চুপ দেখে চিত্রা বলে উঠলো,,,
“কি হলো তোর? কথা বলছিস না কেনো?”
“তুই সত্যি বলছিস চিত্রা। আষাঢ় ভাইয়াকে মেনে নিয়েছিস?”
“হ্যাঁ রে আষাঢ় সাহেব আমায় আজ আবারও বিয়ে করতে চেয়েছেন। আমিও না করিনি। তাকে আমি বিশ্বাস করি এবং এটাও বিশ্বাস করি সবাই এক রকম নয়। সব পুরুষ এক নয়। ভালো খারাপ দুটোই পৃথিবীতে আছে”
“যাক অবশেষে তুই সঠিক কাজটি করলি। আমি তো ভেবেছিলাম তুই হয়তো কখনো কাউকে নিজের মনে জায়গা দিবি না। তবে আমি এখন ভীষণ খুশি। আষাঢ় ভাইয়া শেষ পর্যন্ত পাথর মানবীকে জয় করতে পারলো।”
চিত্রা হাসলো সাথে সাজিয়াও। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো। চিত্রা নিজের নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছে আষাঢ় নামক পুরুষটিকে বিশ্বাস করে। যদিও সে জানে না সামনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। তবে সে অনেক স্বপ্ন নিয়েই আষাঢ়ের হাতটা ধরতে চলেছে। চিত্রা বেশি কিছু ভাবলো না। তবে মাথায় এখনো আষাঢ় নামক মানুষটির কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
–
আষাঢ় টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে নিশীথ এবং সমুদ্রের সাথে। সমুদ্রের মুড অফ। কারণ সে ভেবে পাচ্ছে নাহ ফারাহকে কিভাবে মানাবে। তার উপর আবার রবিবার থেকে তার অফিস শুরু। আষাঢ় চা খেতে খেতে বলে,,
“তোদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলতে এখানে ডেকেছি। সমুদ্র তুই যদি এখন মন খারাপ করে বসে থাকিস তাহলে নির্ঘাত তোকে আমি উষ্ঠা মেরে ডাস্টবিনে ফেলে আসবো”
“তুই বল শুনছি আমি”
আষাঢ় সিরিয়াস হয়ে বললো,,
“আমি আজকে চিত্রাকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এবং ওকে বিয়ের জন্য প্রপোজ ও করেছি। আর তার থেকে বড় কথা হলো ও রাজি হয়েছে”
সমুদ্র চা খাচ্ছিল আষাঢ়ের কথা শুনে কাশি উঠে যায়। নিশীথ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সব সময় কিছু হলেই এই ছেলের এমন হবে। আষাঢ় আগের ন্যায় স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। সমুদ্র নিজেকে সামলে বলে,,,
“কি বলছিস আষাঢ় তুই চিত্রা রাজি?এটাও সম্ভব। কিন্তু কিভাবে?”
“আমি অতো জানি নাহ। ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটাই সব থেকে বড় কথা। কিভাবে রাজি হলো, কেনো রাজি হলো এগুলোতে আমার কিছু যায় আসবে না। ও আমার হলেই হলো”
নিশীথ মজা করে বলে,,
“বুঝেছি বুঝেছি আমাদের আষাঢ় সাহেব তার চিত্রা ম্যাডামকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তার চিত্রাকে হলেই হবে।”
সমুদ্র নিশীথ যাই বলুক না কেনো তারা আষাঢ়ের জন্য খুবই খুশি। চিত্রা রাজি হয়েছে এটা জেনেও ভীষণ খুশি। সবাই টুকটাক কথা বলছিলো এর মাঝে সমুদ্র বলে উঠে,,,
“ভাই আমি এখন বিরহের যন্ত্রণায় মরছি। তুই ঠিকই বলেছিলি রে আষাঢ়। ফারাহর কদর এখন বুঝতে পারছি আমি। মেয়েটা আগের মতো আমায় আর রাতে কল করে না, মেসোজ দিয়ে ভরে রাখে নাহ। আই মিস হার। ফোন দিয়ে জানিয়েছি ওকে ভালোবাসার কথা তবে ও আমার প্রস্তাব গ্রহন করেনি”
নিশীথ সমুদ্রের সব কথা শুনে বলে,,
“ঠিক হয়েছে তোর সাথে। তুই মেয়েটাকে কত ভাবেই অপমান করেছিস। মেয়েটা তোকে ভালোবাসতো বলে কিছু বলতো না। তবে এখন বোঝ মজা।”
“উফ নিশীথ মজা না উড়িয়ে বল আমি এখন কি করবো”
আষাঢ় কিছুক্ষণ ভেবে বলে,,,
“অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মেয়েটার পিছু লেগে পর। ওকে বোঝা কতোটা ভালোবাসিস তুই ওকে। আমার মনে হয় ফারাহ শুধু অভিমান করে আছে।”
“ঠিক আছে আমি আগামীকাল থেকেই মিশনে নেমে পরবো। আমি ফারাহর অভিমান ভাঙিয়ে ছাড়বোই”
“হ্যাঁ এবার তোর মিঙ্গেল হওয়ার পালা। এতো দিন তো সিঙ্গেল সিঙ্গেল বলে মাথা খেতি। এখন পারবি না বাঁচলাম”
সমুদ্র রেগে তাকায় নিশীথের দিকে। নিশীথ আষাঢ় হাসতে হাসতে শেষ। ওরা অনেকটা সময় আড্ডা দিলো। এমন বন্ধুত্ব আজকাল যুগে তেমন একটা দেখা যায়। নিশীথ দু’জনকে আগামীকাল দুপুরের দাওয়াত দিলো। সমুদ্র তার সব কষ্ট ভুলে লাফিয়ে উঠলো। নিশীথ আষাঢ় একে অপরের দিকে তাকালো। এই ছেলে জীবনেও ভালো হবে নাহ।
–
রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। বাড়িতে প্রবেশ করলো তখন আষাঢ়। অরিহা এবং বেলী বেগম ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। আষাঢ় কলিংবেল বাজাতেই অরিহা গিয়ে দরজা খুলল। আষাঢ়কে দেখে মিষ্টি করে হাসলো। আষাঢ় ভ্রু কুচকে তাকালো। অরিহা সরে দাঁড়াতেই আষাঢ় ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলো। বেলী বেগম আষাঢ়কে দেখে বললেন,,,
“তুমি এতো দেরি করলে যে আষাঢ় আজকে?”
“আর বলো না আম্মা চিত্রাকে বাড়ি পৌঁছে ও দিতে পারিনি। কিছু কাজ পরে গিয়েছিলো। তারপর আবার নিশীথ সমুদ্রের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েছি তার জন্য এতো লেট হয়েছে”
“আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো তাড়াতাড়ি। আমরা এখনো কেউ খাইনি”
আষাঢ় মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে নিজের রুমে আসলো। ফ্রেশ হয়ে বসলো সবাই খেতে। বেলী বেগম খেতে খেতে বলে,,
“আষাঢ় আমি আজ চিত্রাদের বাড়িতে তোমার আর চিত্রার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। ভাই কেনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন চিত্রার মতামত ছাড়া। একটু আগে তিনি ফোন করে জানিয়েছেন চিত্রা রাজি। আংটি বদেলের দিন ধার্য করতে হবে”
আষাঢ় কখনো ভাবেনি এতো তাড়াতাড়ি নিজের প্রিয় মানুষটিকে পাবে। তার মা যে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে কখনো ভাবেনি। সে বলে,,
“আম্মা আমি ভাবেনি আমি ওকে এতো তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো”
“পাচ্ছো যখন আগলে রাখার চেষ্টা করো”
#চলবে~