আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি পর্ব-২৯

0
328

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৯

রাত এগারোটার কাছাকাছি সময়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো নিশীথ। ক্লান্ত সে বড্ড। বন্ধু গুলো আজ ছাড়ছিলোই না। কিছুক্ষণ আগে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। নিশীথকে দেখে সাজিয়া দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। নিশীথ খেয়ে গ্লাসটা তার হাতে দিয়ে মৃদু হেসে রুমের দিকে পা বাড়ালো। ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। নিশীথ ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে। দু’জন খেয়ে নেয়। অতঃপর নিশীথ রুমে চলে যায়। সাজিয়া দ্রুত পাশের একটা রুম থেকে নিজে তৈরি হয়। ছাদে আগেই সে ডেকোরেশন করিয়ে রেখেছে। ছোটখাটো একটা সারপ্রাইজ দিতে চাইলো সাজিয়া এবং জান্নাত ইসলাম মিলে।

রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। নিশীথ সাজিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। এখনো আসছে না দেখে সে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমে আসতেই জান্নাত ইসলাম বলে উঠেন,,,
“শুভ জন্মদিন নিশীথ। সুখী হও। তোমার প্রতিটা বছর যেনো সুখের”

নিশীথ মৃদু হাসলো। প্রতি বছর সবার আগে তার আম্মুই তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। নিশীথ মাকে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত ইসলাম ছেলের কপালে অদর স্পর্শ করেন। তার বড় শখের ছেলে। এক মাত্র ছেলে তার। জান্নাত ইসলাম বলে উঠেন,,,
“ছাদে যাও। তোমার চোখ যাকে খুঁজছে পেয়ে যাবে তাকে”

নিশীথ লজ্জা মিশ্রিত হেসে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। ছাদে আসতেই দেখতে পায় তার প্রিয় নারী দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য সেজে। নিশীথ এগিয়ে যায়। সাজিয়া পেছনে ফিরে নিশীথকে দেখে হাসে। দোলনা আছে ছাদের এক কোনে সেখানে আগেই হালকা সাজিয়ে রেখেছিলো সাজিয়া। আর ছোট্ট একটা কেক রাখা ছিলো। নিশীথ সাজিয়ার কাছাকাছি আসতেই সাজিয়া বলে উঠলো,,,

“শুভ জন্মদিন প্রিয়। আপনাকে আমার জীবনে পেয়ে আমি সুখ নাম বস্তুটিকে অনুধাবন করতে শিখেছি। ভালোবাসি আপনায়। ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য”

“ধন্যবাদ প্রিয় নারী। আমার জন্মদিনটাকে এভাবে স্মরনীয় করার জন্য। ভালোবাসি সাজি পাখি, একটু না অনেক বেশি।”

“আমিও। চলুন কেক কাটবেন”

দু’জন কেক কাটলো। ইতি মধ্যে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো। সাজিয়া নিশীথকে নিয়ে চলে যেতে চাইলো। নিশীথ আটকালো সাজিয়াকে। করুন কন্ঠে বলল,,,
“থাকি না সাজিপাখি। একটু বৃষ্টিতে ভিজি। তোমার সাথে আমার বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি এখনো। এই রাত না হয় আমরা বৃষ্টিতে ভিজলাম কিছুক্ষণ”

সাজিয়া মেনে নিলো নিশীথের আবদার। থেকে গেলো। দু’জন দোলনায় বসলো। বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার আচ্ছন্ন পরিবেশে দুই মানব মানবী বসে উপভোগ করছে বৃষ্টি। নিশীথে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো তার প্রিয় নারীকে। সাজিয়া কাঁধে মাথা রাখলো। প্রিয় পুরুষটির সাথে ছোট ছোট মুহুর্ত গুলোও উপভোগ করা বুঝি এতো শান্তির। ভালোবাসার মানুষটাকে পাশে নিয়ে সাজিয়া এভাবে নিজের জীবন পার করতে চায়।

বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে চিত্রা। অন্ধকার আচ্ছন্ন পরিবেশ তার খুব ভালো লাগে। আগামীকাল নানু আসবে। এটার জন্য বেশ খুশি সে। অনেক দিন কথাও হয় না তার নানুর সাথে। চিত্রা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দেখতে চাইলো। নিজ ইচ্ছাকে প্রাধন্য দিলো সে। হাত বাড়িয়ে দিলো। বৃষ্টি ফোঁটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার হাত এবং মুখের কিছু অংশ।

আষাঢ় বারান্দার দরজা বন্ধ করতে বারান্দায় এসেছিলো। অপর পাশে চিত্রাকে দেখে সে দাঁড়িয়ে পরলো। কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখলো এলোকেশী কন্যাকে। অতঃপর ফোন থেকে মোবাইল বের করলো। কল করলো সেই নারীর ফোনে। হঠাৎ ফোনে কল আসায় চিত্রা ফোন হাতে নিলো। আষাঢ়ের নাম্বার দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। এতো রাতে ফোন দেওয়ার কারণ বুঝলো না। তবুও সেসব বাদ দিয়ে ফোন রিসিভ করলো।

“আপনি এতো রাতে বারান্দায় কি করছেন চিত্রা। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে, ঠান্ডা লাগবে। এক কাজ করুন এখন রুমে যান। অনেক সময় তো দেখলেন বৃষ্টি”

চিত্রার বেশ ভালো লাগলো আষাঢ়ের অস্থিরতা বুঝতে পেরে। পুরুষটি তার জন্য অস্থির হয়ে পরেছে।সে মৃদু হেসে শুধালো,, “আপনি আমায় খেয়াল করছিলেন এতো সময়?”

“হুম আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম এক বৃষ্টিবিলাসী কন্যাকে যে বৃষ্টি দেখায় ব্যস্ত ছিলো। তা ম্যাডাম এখন রুমে যান এবং মুখ হাত মুছে নিন না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে”

“হুম যাচ্ছি সাহেব। আপনি যান। অনেকক্ষণ যাবত নিজেও বারান্দায়”

“চিত্রা আপনায় ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য”

চিত্রা অবাক হলো। নিজেকে সামলে বললো,,
“আপনাকে আমার ধন্যবাদ জানানো উচিত আষাঢ় সাহেব। এই যে আপনি আমার জীবনে আসলেন। অতঃপর আমি এখন ঠিক হচ্ছি। আপনি আমায় বিশ্বাস করিয়েছেন সবাই সমান না। নেগেটিভ দিকগুলো মাথা থেকে সরিয়েছেন। এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনায়”

“আপনায় আমি ভালোবাসি চিত্রা। জানি না কখন কিভাবে ভালোবেসেছি। সত্যি বলতে আমি আপনার ওই কঠোর রূপের চিত্রার প্রেমে পরেছি। আপনি ওই রূপেই ঠিক আছেন তবে আমার আপনায় সব রূপেই দেখার শখ এই ধরুন, আমার বৈধ, চঞ্চল, রণচণ্ডী, কোমল প্রেমিকা আবার আমার রণচণ্ডী বউ। সব রূপেই চাই আমার। তবে এসব কিছু না হলেও চলবে। আমার শুধু আপনি হলেই হবে। তাই আপনি যেমনই হন না কেনো।”

আষাঢ় থেমে বলল,,,“আমি আপনাকে পরিবর্তন করতে চইছি না চিত্রা। এগুলো শুধু আমার ইচ্ছা। যদি পূরণ করতো ইচ্ছে হয় করবেন কখনো। তবে আমার এগুলো না হলেও চলবে”

চিত্রা মৃদু হাসলো। লোকটা আসলেই তাকে চায়। অনেক বেশিই চায়। ভালোবাসলে ভালোবাসতে হয় আষাঢ়ের মতো। যার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। সার্থ ছাড়া ভালোবাসে লোকটা তাকে। চিত্রা এতেই খুশি জীবনে সঠিক মানুষকে পেলো কি না। চিত্রা কিছু বলতে না দেখে আষাঢ় বলে উঠে,,,
“এই বৃষ্টিবিলাসী কোথায় হারালেন?”

“কোথাও না। রাখি অনেক রাত হলো তো। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। শুভ রাত্রি আষাঢ় সাহেব”

“শুভ রাত্রি চিত্রা ম্যাডাম”

দু’জন কল কেটে নিজেদের রুমে প্রবেশ করলো। চিত্রা বারান্দার দরজাটা বন্ধ করলো। অতঃপর রুমে এসে মাথা মুছে নিলো। শুয়ে পরলো বিছানায়। আজ তার শান্তির ঘুম হবে বিধায়। আচ্ছা তবে কি সে আষাঢ় নামক পুরুষিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। আষাঢ়ের সঙ্গ তার ভালো লাগে, তার সাথে কথা বলতেও তার ভালো লাগে। কথা বললে হৃদয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি দোলা খায়। এগুলো কি ভালোবাসার লক্ষণ নয়?

সকাল সকাল ফোন আসায় ঘুম ভাঙলো নিশীথের। হাত বাড়িয়ে কার কল তা না দেখেই কল রিসিভ করলো নিশীথ। কানে ফোন দিতেই অপাশ থেকে ভেসে আসলো দু’জন পুরুষের কন্ঠ। যার তার অতি পরিচিত।
“শুভ জন্মদিন আমাদের বিবাহিত বন্ধু। বলো রাতটা তোমার কেমন কাটলো। এটা বলে আমাদের উদ্ধার করো”

সমুদ্রের কথায় নিশীথ বিরক্ত হলো অনেক। এই ছেলে তাকে সব সময় একটা না একটা কিছু নিয়ে লজ্জা দেয়। আষাঢ় নিরবে হেসে চলেছে। নিশীথ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। এরপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,
“চুপ শালা লজ্জা করে না বেয়াদপ। এর জন্যই নির্ঘাত ফাটাহ ওকে রিজেক্ট করেছে। তুই না গতকাল ফারাহর রিজেক্ট করার শোকে মরে যাচ্ছিলি।”

“কষ্ট আমার এখনো হচ্ছে। তবে ওসব তোদের সাথে চলবে না। মামা বল না গতকাল রাতে কি করলি”

আষাঢ় হাসতে হাসতে বলে,,
“সমুদ্র ছাড় বেচারা লজ্জায় এবার মরে যাবে। এসব বাদ দে”

“আচ্ছা ঠিক আছে। যাহ বাদ দিলাম। দুপুরে কিন্তু আসছি কবজি ডুবিয়ে খাবো। এরপর আমার ফারাহ রানীর রাগ ভাঙানোর কাজে লেগে পরবো”

নিশীথ মুখ বাঁকিয়ে বলে,,
“যাহ অভিশাপ দিলাম তোরে ফারাহর রাগ ভাঙবে না। উল্টে তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে দেখিস”

সমুদ্র কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,,“তুই আমার বন্ধু হয়ে এই কথা বললি। ছিহ তোদের জন্যই সব বন্ধু যাতের কলঙ্ক লাগে। তোর মতো বন্ধু থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন নেই”

নিশীথ ও আষাঢ় সমুদ্রের কথায় হাসছে। সমুদ্র না পেরে কল কেটে দেয়। আষাঢ় ও নিশীথকে কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয়। কথা বলা শেষ হতেই সাজিয়া রুমে প্রবেশ করে। সাজিয়া নিশীথকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,,,
“শুভ সকাল নিশীথ সাহেব। উঠে পরেছেন আপনি?যান এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন খেতে হবে তো নাকি”

নিশীথ মৃদু হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে। সাজিয়া রান্নাঘরে এসে খাবারগুলো টেবিলে রাখে। জান্নাত ইসলামকে ডাকতে চলে আসেন। তিনি বসে বই পরছিলেন। সাজিয়ার ডাকে টেবিলে আসেন খাবার খেতে। টেবিলে নিশীথের পছন্দের খেচুরি আর মুরগির মাংস রান্না করে রাখা। তিনি মনে মনে বেশ প্রশংসা করলেন সাজিয়ার। নিশীথ আসলে এক সাথে বসে খাওয়া শুরু করেন।

“সাজিয়া আজকের রান্না বেশ সুস্বাদু হয়েছে মা”

শ্বাশুড়ির এমন কথা শুনে বেশ খুশি হলো সাজিয়া। নিশীথের দিকে চোখ পরতেই দেখলো পুরুষটি খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে। সাজিয়া বুঝে নিলো নিশীথের খাবার পছন্দ হয়েছে। সাজিয়া দুজনের দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া আদায় করলো। এতো ভালো একটা ছোট্ট পরিবার পেয়েছে সে। আর কি চাই!

#চলবে~