#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৩
সাল ২০১৬! জানুয়ারি মাস চলছে। কনেকনে শীতে কাহিল অবস্থা শহরতলীর মানুষের। কুয়াশা আচ্ছন্ন শহর। কুয়াশা কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে আকাশে। এক কিশোরী রমনী বারান্দার দরজা খুলে গায়ে ফিনফিনে পাতলা চাদর জড়িয়ে এসে উপস্থিত হলো সেখানে। আশেপাশে তাকিয়ে চঞ্চল চোখে পর্যবেক্ষণ করছে সে। এরপর কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখার পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে পেয়ে গেলো। দ্রুত বাড়ির দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। আরমান রহমান হাঁটতে বের হচ্ছিলেন। হঠাৎ করে মেয়েকে সামনে দেখে একটু চমকালেন।
“আব্বু আজ আমিও যাবো তোমার সাথে।”
আরমান রহমান চিত্রাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,,“তুমি এই পাতলা চাদর কেনো জড়িয়েছো আম্মা। এই সাত সকালে কে উঠতে বলেছে তোমাকে। এরকম কেউ করে বলো তোহ”
কিশোরী চিত্রা গাল ফুলিয়ে বলল,,,“আব্বু তুমি এমন কেনো করো। একটু তো হাঁটতেই চাইছি তোমার সাথে। আর তুমি এমন করো।”
আরমান রহমান মেয়েকে গাল ফুলাতে দেখে হাসলেন। মেয়েটা বড্ড অভিমানী। এই যে এখন গাল ফুলিয়ে আছে। আরমান রহমান মেয়ের হাতটা সযত্নে নিজের মুঠোয় নিয়ে বললেন,,,
“আম্মা তোমাকে নিতে চাই না তার কারণ আছে। যদি এই সকাল বেলায় হেঁটে তোমার ঠান্ডা লেগে যায়। তাই তো আব্বু তোমায় বকাবকি করে নিতে চায় না। তুমি বোঝ না কেনো?”
“হ্যাঁ তোমার আম্মা বুঝেছে। আর আজকেই সে লাস্ট যাচ্ছে তার আব্বুর সাথে”
কিশোরী চিত্রা নানান কথা বলতে লাগলো। কথার শহর খুলে ফেলেছে সে। আরমান রহমান আদরের মেয়ের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে চলেছেন। এমন দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না এখন। বাপ মেয়ে মিলে কত পথ হাঁটলো। এক বেঞ্চিতে বসে আরাম করলো দু’জন। এরপর টং দোকান থেকে চা খেলে দুজন।অতঃপর আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যদিও চিত্রার স্কুল আছে তবে জানুয়ারি মাসে আবার কে স্কুলে যায়। তাই চিত্রা একটু ফাঁকি দিবে।
আজ আবার চিত্রা খালাতো আর মামাতো ভাই বোন আসবে। এতে চিত্রা আরও বেশি আনন্দিত। বাড়িতে আসতেই দেখে মরিয়ম সুলতানা কাজ করছে। ছোট্ট প্রহর সোফায় বসে টিভি দেখছে। চিত্রা কি করবে বুঝলো না। সে নিজের রুমে আসলো। রুমের অবস্থা ভালো না। এই অবস্থা যদি তার ভাই বোনরা দেখে তাকে খেপিয়ে মেরে ফেলবে। তাই সে বিছানাটা ঘোছালো সুন্দর করে। বইগুলো অযত্নে পরে আছে। যদিও সে ১০ম শ্রেনীতে পড়ছে তবুও পড়াশোনা নিয়ে তার ম্যাথা ব্যাথা নেই আপাতত এই মাসে। চিত্রা ঠিক করেছে সামনের মাস থেকে ভালো করে পরবে।
দুপুরের দিকে চলে আসলো সবাই। চিত্রার বয়সী দুজন ছিলো। রাফিন এবং নিশি। বাকিগুলো সব অনেক ছোট। চিত্রাই ছিলো সবার বড়। নানা বাড়ির দিক থেকে বড় নাতি। মামাদের ছেলে মেয়ে সব ছোট। সবাই মজা করে কাটালো দুপুরটা। বিকাল হতেই তিন বান্দর মানে রাফিন নিশি চিত্রা বেরলো এলাকা ঘুরতে। সন্ধ্যা য় বাসায় ফিরার জন্য পা বাড়ালো। বাড়ির সামনে আসতেই তিনজন ছুট লাগালো কে আগে যাবে এই নিয়ে। নিশি রাফিন আগে চিত্রা কিছুটা দূরে। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় পরে নিতে যাচ্ছিলো চিত্রা। হঠাৎই কেউ একজন তার হাত ধরে তাকে বাঁচালো।চিত্রা ভীষণ ভয় পেয়েছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
“ঠিক আছো তুমি?”
হঠাৎ কানে শীতল এক কন্ঠ স্বর ভেসে এলো। চিত্রা পিটপিট করে চোখ খুললো। সামনে অপরিচিত লোক দেখে ভীত দৃষ্টিতে তাকালো তার পানে। ভালো করে তাকাতেই সে বড় সর ক্রাশ খেলো। ছেলেটি সুদর্শন। লোকটি চিত্রার সামনে তুরি বাজিয়ে বলল,,,
“এই যে শুনছো? তুমি কি কথা বলতে পারো না।”
চিত্রা হকচকিয়ে উঠলো। সে বলল,,,“জি জি পারি। দুঃখিত”
কথাটুকু বলেই দৌড়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে পরলো। ছেলেটি সে সবে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো। দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে সে। বসার রুমে কেউ ছিলো না বোধ হয় চিত্রার পাগলামি খেয়াল করেনি। দরজা আটকে তাতে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। হৃৎস্পন্দন বেড়েছে। তাহলে কি ছেলেটির প্রেমে পরেছে চিত্রা? চিত্রা বিছানায় এসে লেপের ভেতরে শুয়ে পরে। বারবার মনে করছে ছেলেটির কথা। পুরুষটির মুখটা তার চোখে ভেসে উঠছে। আবেগী চিত্রা নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
–
সকাল সকাল আজও চিত্রা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে। তবে আজ বাবাকে আর জ্বালাবে না সে। গতকাল থেকে তার মস্তিষ্ক জুড়ে সেই অপরিচিত যুবকের কথা কিলবিল করছে। চিত্রা এখনো সেই যুবককে নিয়েই ভেবে চলেছে। যুবকটিকে আরেক নজর দেখার জন্য তার হৃদয় ছটফট করছে। আগে তো তার এমন হয়নি। হবেই বা কিভাবে সে তো গার্লস স্কুলে পড়ে। বাইরের ছেলেদের সাথে কথা ও কখনো বলেনি। চিত্রার পাশে এসে নিশি ধপাস করে বসে পরে।
“কিরে এখানে এই রোদে কেনো বসে আছিস?প্রেমে টেমে পরলি নাকি”
কথাটা বলেই নিশি শব্দ করে হেসে ওঠে। চিত্রা চমকে উঠে। সে ভাবতেই পারেনি নিশি এমন কথা বলবে। চিত্রা আমতা আমতা করে বললো,,,
“ধূর কি বলিস তুই। এখানে বসে আছি কারণ আমার ঠান্ডা লাগছে গাধা। প্রেমে আমি কেনো পরতে যাবো”
“আমি তো মজা করছিলাম। আমি কি জানি তুই সিরিয়াস নিয়ে নিবি। বাদ দে শোন খালামনি খাবার খাওয়ার জন্য ডেকেছে। চল এখন”
চিত্রা উঠে নিশির সাথে খাবার খেতে যায়। সবাই হৈ হুল্লোড়ের সাথে নাস্তা করলো। আরমান রহমান স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেছেন। ভাই বোনেরা মিলে ঠিক করলো কানামাছি খেলবে। সবাই এজন্য ছাদে চলে আসলো। যদিও চিত্রা এখনো সেই পুরুষটিকে মনে আছে। সবার আগে চোর হয় রাফিন। এরপর নিশি। নিশি গিয়ে ধরে চিত্রাকে। চিত্রাকে চোখ বেঁধে দেয় সবাই মিলে। চিত্রা খুঁজে চলেছে। সেই পুরুষটি ছাদে উঠে বালতি ভর্তি কাপড় নিয়ে তখন। চিত্রাদের দেখে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। চিত্রা তার ছোর এক বোনকে ধরে। চোখ খুলে বলে,,,
“ইয়াহু যাক অবশেষে আমি কাউকে ধরতে পারলাম। এতোক্ষণ ছুটতে ছুটতে আমি হাঁপিয়ে গিয়েছি। বেয়াদব সবগুলো দূরে বসে আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছিস”
রাফিন হাসতে হাসতে বলল,,,
“তোকে চোখ বেঁধে মজা নেওয়ার কি আছে। তোর পেত্নী মার্কা চেহারা দেখলেই হাসি পায়।”
চিত্রা বেশ রেগে যায়। সে রাফিনকে মারতে উদ্ধত হয়। রাফিনও চিত্রার হাত থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে পালায়। চিত্রা ধরার জন্য এগোতেই দেখতে পায় সেই সুদর্শন পুরুষটিকে। শান্ত নজরে পর্যবেক্ষণ করে সব কিছু। চিত্রা তাকে দেখে থেমে যায়। রাফিন ততক্ষণে নিচে নেমে গিয়েছে। চিত্রা পেছনে ফিরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
“আর খেলবো না বাসায় চল”
সবাই ছুটে নিচে নেমে যায়। চিত্রা একা পরে রয়। সেও দ্রুত নিচে নামে। পুরুষটিকে দেখলে তার মন অস্থির হয়ে পরে। তবে মাথায় একটা প্রশ্ন খুব ঘুর পাক খাচ্ছে পুরুষটি কে?তাদের বাড়িতেই বা কেনো?শুনেছে গতকাল নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। তবে ভাই বোনদের সাথে সময় কাটাতে গিয়ে সে সব ভুলে গিয়েছে। হয়তো এই পুরুষরাই এসেছে সেখানে। তার কৌতুহল জাগলো। তিনতলায় যেতে মন চাইলো তবে কি ভাববে না ভাববে এই ভেবে যাওয়া হলো না।
“কি রে চিত্রা কি ভাবিস?”
“আরে কিছু নাহ। আচ্ছা নিশি তুই কি প্রেম করিস?”
নিশি বোধ হয় লজ্জা পেলো। সে ফিসফিস করে বলল,,,“তুই জানলি কীভাবে। শোন প্লিজ বলিস না। আম্মা জানলে মেরে ফেলবে আমাকে।”
“কিহ কবে থেকে এসব করছিস তুই?তুই এই কথা আমাকে এখন জানাচ্ছিস। এই আমি তোর বোন বন্ধু হই। নিশি তোর থেকে আমি এটা আশা করিনি।”
“সরি চিত্রা আমি ভয় পাচ্ছিলাম রে তাই বলিনি”
“আচ্ছা নাম কি ছেলেটার?কোথায় থাকে? ভালো তো ছেলে?”
“হু অনেক ভালো অনার্স প্রথম বর্ষে পরে। অনেক ভালো ছেলেটা। আমায় ভীষণ ভালোবাসে।”
#চলবে~