আসক্তি২ পর্ব-১৬

0
2801

#আসক্তি২
পর্বঃ১৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ফজরের আজান কানে পড়তেই বিছানা ছাড়ে শান।দুচোখের পাতা তখনো ঘুমহীনতায় ভুগছে।সারারাত আকাশ-পাতাল ভেবেছে সে।কখনো মনের কথা শুনেছে তো কখনো মগজের। ফাইনাল কোন সিদ্ধান্তে কিছুতেই উপনীত হতে পারে নি শান।গা ঝাড়া দিয়ে উঠতেই পায়ের ব্যথাটা টনটনিয়ে ওঠে।খুঁড়িয়ে বাহিরে বের হয়।
“মাথাটা বড্ডো ধরেছে।এক কাপ কফির প্রয়োজন”,ভাবতেই পা বাড়ায় সিঁড়িতে কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।ব্যথায় টান পরে ভীষণ।কেউ একজন থাকলে ভালো হতো।জীবনের এই প্রথম কাউকে এতো বেশি প্রয়োজন পরছে শানের।খুবই সাবধানে পা টা রাখে প্রথম সিঁড়িতে।ব্যথায় কুচকে যায় চোখমুখ। ব্যথা সহ্য করে সবকয়টা সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে নিচে নামে ।এরপর রান্নাঘরের দিকে যায়।নিজের জন্যে এককাপ কফি বানিয়ে পূনরায় আস্তেধীরে সোফায় এসে বসে।

কফির কাপে প্রথম চুমুক দিতেই গরমে জিহ্বটা পুড়ে যায় যেন।আর কি বিশ্রী সে কফি।জিহ্ব উল্টিয়ে জিহ্বা পরোখ করার চেষ্টা করে শান।কফির স্বাদে রুচি নষ্ট হয়ে যায়।কফি সমেত কাপটা ছুড়ে মারে মেঝেতে।বিড়বিড় করে বলে,”নরক নরক মনে হচ্ছে সবকিছু”
চোখ বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে দিতেই সেদিন রাতে পাখির অসহায় মুখখানা শানের মানষপটে ভেসে ওঠে।
বড্ডো অমানুষ মনে হয় নিজেকে।

🌸🌸

সময় ঘনিয়ে আসলে পাখি স্কুলের জন্যে তৈরী হয়ে নেয়।রাখি এসে মাথায় একটা চাটি মেরে বলে,”তুই কোথায় যাচ্ছিস ম্যাম?তোরে না মা কয়দিন রেস্ট নিতে বললো!”
পাখি শুকনো মুখে জবাব দেয়,”বাড়িতে একা একা বোর হয়ে যাই।আর ইনায়াহ্’কে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না। ”
“ক্লাস করাতে হবে না।মন মগজে এতো চাপ নেয়ার দরকার নাই। ইনায়াহ্’কে দেখে বাড়ি চলে আসিস।আর আমিও আজ তাড়াতাড়ি চলে আসব।এরপর জমিয়ে আড্ডা দিবো।”,খুব আগ্রহ নিয়ে বলে রাখি।ঠোঁটে সামান্য মুচকি হাসি উপহার দেয় পাখি।

এরপর স্কুলে চলে যায় দুজনেই।পাখি ইনায়াহ্’র সাথে দেখা করে চলে যায় ক্লাসে।কিন্তু রাখি কিছুতেই ক্লাস করাতে দেবে না তাকে।তাইতো ঠেলে ঠেলে গেইট অবধি এনে সিএনজি ঠিক করে দেয়। কোন উপায় না পেয়ে অগত্যা পাখি চলে আসে বাসায়।

কাল থেকে ভুলের শেষ নেই শানের।তাই তো সকালের ঐ ঘটনার পর থেকে সব কাজ খুব সাবধনতার সহিত করার চেষ্টা করছে আর মনে মনে রাহেলাকে হাজারটা বকুনি দিচ্ছে।রান্না করতে ইচ্ছে করছে না।তাই কয়েকটা ব্রেড,জেলি সাথে ডিম পোচ নিয়ে বসে পরে ডায়নিং এ।নষ্ট রুচি নিয়ে সামান্য একটু কিছু মুখে দিয়ে হাসপাতালের জন্যে তৈরী হয়।
“আজ কিছুতেই ছুটি নেয়া যাবে না বা লেইট হওয়া পসিবল না”,ভাবতে ভাবতে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফিট করে নেয় শান।ঠিকমতো দেখেশুনে গাড়ির চাবি,ফোন আরো অন্যান্য কাগজপাতি আজ হাত নেয় সে।এরপর সদর দরজায় তালা মেরে চাবি আব্দুল্লাহ্’র হাতে দিতে দিতে বলে,”তোমাদের দুজনের মতিগতি কিছুই বুঝতেছি না।এ কয়দিন চাচি নেই কাল আবার তুমি ছিলে না।কি যে শুরু করেছো তোমরাই জানো”,
আব্দুল্লাহ্ সহাস্যে জবাব দেয়,”তোমার চাচি দেশের বাড়ি থেকে এসেই কাল অসুস্থ্য হয়ে পরে।তাই আমি আসতে পারি নি বাবা”
শান বিরক্ত হয়ে বলে,”কতো করে বলি একটা ফোন কিনে দেই,ফোন কিনে দেই।তা তো নিবা না।ফোন থাকলে তো জানাতে পারতা নাকি?”,
আব্দুল্লাহ্ বরাবরের ন্যায় উত্তরহীন হয়ে সামনের দাঁত ক’পাটি বের করে হেহে করে হেসে দেয়। ফোনের কথা উঠতেই চট করে মনে পড়ে,”পাখিকে তো একটা ফোন কিনে দিলাম সেদিন।ফোনটা কি সাথে নিয়েছে?”
ভাবতেই নিজের ফোন বের করে পাখির নম্বরে ডায়াল করে।পরপর কতোগুলো রিং হয় কিন্তু ফোনটা রিসিভ হয় না।রাগে ফোনের পাওয়ার অফ করে আবার পকেটে ভরে রাখে শান।এরপর রাফিকে বলে গাড়ি স্টার্ট করতে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।এদিকে শান ভাবছে অন্যকথা।
“এতোবার কল দিলাম ধরলো না।এতো এটিটিউড কোথা দিয়ে আসে এই মেয়ের।আরে বাবা কোথায় আছে সেটার ব্যপারে অন্তত নিশ্চিত হতে পারতাম”,বিড়বিড় করতে থাকে শান।
রাফি মিররে তাকিয়ে শানকে দেখে বলে,”ভাইয়া কিছু হয়েছে কি?শরীর খারাপ করছে?”,
শান বিরক্তিমাখা চোখে সেদিকে চেয়ে বলে,”না”
রাফি আবারও বলে,”তাহলে!”
“সেটাও কি এখন তোকে বলব”,চাপাস্বরে ধমকে ওঠে শান।রাফি ভয়ে ভয়ে চুপ হয়ে যায়।শান ভ্রুকুচকে রাফিকে দেখে বলে,”পরশুদিন তুই কখন বাড়ি গেছিস?”
রাফি মিররে দেখে শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আপনাকে নামিয়ে, গাড়ি রেখে আমি চলে গেছি ভাইয়া।”
রাফি স্বগতক্তি করে বলে,”কেন ভাইয়া?কোন…..?
বলতে বলতে শানের দিকে তাকাতেই কথা থেমে যায় রাফির।চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।

খানিক পর শান আবার বলে,”সেদিন কি পাখি ম্যাডামকে কোথাও দেখেছিস?”
শানের প্রশ্নে রাফি অবাক হয়ে যায়।ভেতরে ভেতরে খুশির বন্যা বয়ে যায়।নিজের আবেগানুভূতিকে চেপে রেখে রাফি বলে,”হ্যা দেখেছিলাম তো। কি বলব ভাইয়া বৃষ্টিতে ভিজে জবজবে অবস্থা হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়া ছিলো।আমি কতো করে বললাম ‘ম্যাডাম বাড়িত যান’কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলো না”
“তা শুনবে কেন?নিজের জেদ বজায় রাখতে হবে না”,ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে শান
“কিছু বললেন ভাইয়া”,রাফি স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।
শান রাফির প্রশ্নের তোয়াক্কা না করে ফিরতি প্রশ্ন করে,”তারপর কোথায় গেলো দেখেছিস?”
“তারপর,তারপর, তারপর তো জানি না ভাইয়া”
রাফির থেকে আশানুরূপ জবাব না পেয়ে শান হঠাৎই বলে ওঠে,”গাড়ি স্কুলে নে। ”
রাফি অবাক হয়ে বলে, “ভাইয়া স্কুল তো অন্য রাস্তায়!এখন ফিরে সেখানে গেলে তো সময় লাগবে অনেক”
শান কানে ব্লুটুথটা সেট করতে করতে বলে,”লাগুক।যা বলেছি, তাই কর।”
রাফি ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়
এরপর ইনায়াহ্’র স্কুলে এসে থামে।

শান বাহিরের দোকান থেকে কতোকগুলো চকোলেট সমেত কিছু হেলথি স্ন্যাক্স নেয় ইনায়াহর জন্যে।এরপর স্কুলে ঢুকে সেগুলো ইনায়াহ্’র হাতে দিয়ে গতদিনের মতো জানতে চায়,”তোমার মুন সাইন আসে নি?”
“হ্যাঁহহ।আমায় আদোর করে কোথায় যেন চলে গেছে”
ইনায়াহ্’র কথাটা শানকে বেশ ভাবায়।
“স্কুলে আসে!আবার চলে যায়!যায় তো যায় কোথায় যায় ও”
ভাবতেই ফোনে কারোর সাথে হেসে হেসে কথা বলারত রাখিকে দেখতে পায় শান।
“রাখিকে জিজ্ঞেসা করব একবার, ব্যপার টা কেমন দেখাবে?”
মন বলছে এক মগজ বলছে আরেক।শেষমেশ রাখির দিকে এগিয়ে যায় শান।
“এক্সকিউজ মি!”
“এক মিনিট হোল্ড করো প্লিজ”,ফোনে কাউকে বলে রাখি শানের দিকে ফিরে বলে,”জ্বি ড.শান!কিছু বলবেন?”
শান সরুচোখে চেয়ে কি যেন ভেবে রাখিকে বলে,”ইনায়াহ্’র পড়াশুনা কেমন চলছে?”
রাখি সহাস্যমুখে বলে,”বেশ ভালো”
“ওকে থ্যাংকস”,বলেই দ্রুত প্রস্থান করে শান।

শানের যাওয়ার দিকে চেয়ে রাখি মুচকি হেসে বলে,”এতো সহজে আপনার ক্ষমা হচ্ছে না মিস্টার শান।সেদিন রাতে পাখিকে বের করে দিয়ে খুব অন্যায় করেছিলেন।এখন দেখবার পালা কি করো আপনার ইগো ভেঙ্গে যায়”

শান ধীর পায়ে গেইটের কাছে চলে আসতে আসতে চারিদিকে পাখিকে খোঁজে।ক্লান্ত শ্রান্ত চোখদুটো যেন তাকে দেখার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।চোখের প্রশান্তির জন্যে হলেও পাখিকে একটিবার দেখা প্রয়োজন।

গাড়ির কাছে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রাফিকে বলে,”তাড়াতাড়ি চল।”
গাড়ি স্টার্ট করে মিররে বার বার শানকে দেখে নেয় রাফি।কেমন যেন বড্ডো মায়া হয় রাফির।এর আগে এতো বিমর্ষ কোন দিনও সে দেখেনি শানকে।চোখ বন্ধ করে শান গাড়িতে গা এলিয়ে বলে,”রাফি আমি কি খুব খারাপ?”
শানের প্রশ্নে হকচকিয়ে ওঠে রাফি।অপ্রস্তুত স্বরে বলে,”এসব কি কথা ভাইয়া।আমার দেখা পৃথিবীর সবথেকে ভালো মানুষ আপনি।সেদিন যদি মায়ের চিকিৎসার টাকা আপনি না দিতেন আর আমায় যদি জবে না নিতেন, এতোদিনে পথে বসতে হতো ভাইয়া”
শান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”আমি খুবই খারাপ বুঝলি তো।নয়ত কেন কাউকে আগলে রাখতে পারি না”
শেষের কথাটা বিড়বিড় করে বললো শান।যেটা রাফির কর্ণগোচর হতে পারল না।

🌸🌸

পাখি নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে নিয়েছে।শানের ঘৃন্য স্মৃতিগুলো থেকে মোটামোটি বের হতে পেরেছে।শানের কথা মনে উঠলে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে পাখির।সারাদিন বসে বসে গল্পের বই পড়া, দুপুরের পরে রাখি চলে আসলে জমিয়ে আড্ডা দেয়া।বেশ ভালোই চলছে জীবন।

“রাফি গাড়ি স্কুলের রাস্তায় নে”,আজও সকালে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হলেও রাফিকে স্কুলের দিকে গাড়ি ঘোরাতে বলে শান।রাফিও বাধ্য ছেলের মতো তাই করে।গত দিনগুলোর মতো আজ শান পাখিকে খোঁজে।কিন্তু পায় না।এবার ব্যপার টা সত্যিই দূঃচিন্তার মনে হয় শানের কাছে।নিজের কৌতূহলের কাছে ইগোকে অনেক ছোট মনে হয় তার।

ইনায়াহ্’র সাথে দেখা করে ব্যর্থ হয়ে আবার গাড়িতে ফিরে আসে শান।রাফি শানের অবস্থা দেখে আর ঠিক থাকতে পারে না।আনমনে ভাবে,”তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক?ভাইয়া তবে পাখি ম্যাডামের প্রতি দূর্বল!”
ভাবনা চিন্তা একপাশ করে রাফি বলে,”ভাইয়া আমি জানি পাখি ম্যাডাম কোথায়?”
হরবরিয়ে শান বলে,”হোয়াট?তুই, তুই জানিস? আর আজকে মাত্র বললি”
“সরি ভাইয়া, ম্যাডাম বলতে মানা করেছিলো”,রিনরিনে স্বরে বলে রাফি।
“আচ্ছা বল এবার কোথায় ও।তাড়াতাড়ি বল ডাম ইট!”,হন্তদন্ত হয়ে বলে শান।
রাফি যেন গত সাত বছরে নতুন এক শানকে আবিষ্কার করলো।মনে মনে এক আকাশ খুশি সমেত গাড়ি নিয়ে দাঁড় করালো রাখিদের ফ্ল্যাটের সামনে।

“এটাতো ইনায়াহ্’র প্রিন্সিপালের ফ্ল্যাট!তারমানে আমার ধারনাই ঠিক ছিলো,শিট!”,বলেই শান রাগি চোখে তাকায় রাফির দিকে।রাফি অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকে।শান উঠে যায় রাখিদের ফ্ল্যাটের সামনে। দুইবার কলিং বেল চেপে বিপরীত মুখী হয়ে শান আশপাশে তাকায়।দরজা খোলার শব্দে শান একটু নড়ে চড়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।কেমন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে শানের।

পাখি দরজা খুলে দুহাতে দরজার সাইড চেপে বলে,”জ্বি, কি চাই?”
চেনা কন্ঠস্বর কানে আসতেই শানের কান যেন অন্যরকম প্রশান্তিতে ভরে যায়।নজর এদিক সেদিক করে শান পিছু ফিরতেই পাখির সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়।এক মূহূর্তের জন্যে যেন পৃথিবী থমকে যায় শানের।চোখের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।একদৃষ্টে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।

চোখের সামনে এভাবে শানকে দেখতে পাবে পাখির ভাবনার মাঝেও ছিলো না।অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে থাকে সেদিকে।কিছুক্ষণ পর বিব্রতবোধ করে পাখি নজর সরিয়ে নেয়।মাথা তুলে বলে,”আপনি! এখানে? “,
শান তখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পাখিকে দেখছে।কোন প্রতিউত্তর না পেয়ে পাখি বলে,”কি চাই?”
“বাড়ি চলো”,স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয় শান।অবাক হয়ে পাখি তাকায় শানের দিকে।শানের নজরের কোন হেলদোল নেই।নজর সরিয়ে পাখি কাটকাট গলায় বলে,”বাড়ি!আমার তো কোন বাড়ি নেই।আশ্রিতা ছিলাম।মালিক বাড়ির থেকে বের…… ”
“ওহহ প্লিজ।তোমার ভাঙ্গা রেকর্ড শুনতে আসি নি আমি”,পাখিকে থামিয়ে বলে শান।
রাগে ফোসফোস করছে পাখি।বজ্রকন্ঠে বলে,”তো আসছেন কিসের জন্যে?”
আবারও শান স্বাভাবিক ভাবে বলে,”বাড়ি চলো”
“যাবো না আমি।আপনার মতো গিরগিটি মার্কা লোকের সাথে থাকার কোন ইচ্ছে আমার নাই।”,তেড়ছাভাবে বলে পাখি দরজা লাগাতেই শান দরজায় একহাত দিয়ে আটকে দেয়।পাখি অবাক হয়ে যায়।শান ঠোঁটে ভিলেনি হাসি বজায় রেখে বলে,”তা যাবে কেন?এখানে বসে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর ফ্যাট বাড়াবে।ওখানে তো কাজ করে খেতে হয়, না?”
পাখির রাগ যেন আর ধরছে না।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শানের বুক বরাবর দুহাতে জোড়ে আঘাত করে। বেসামাল হয়ে শান দু’পা পিছিয়ে যায়।পাখি চাপাস্বরে চিল্লিয়ে বলে,”আর কতো ইনসাল্ট করবেন আপনি আমার?এখানে বয়ে এসেও ইনসাল্ট করছেন।কেন কিসের জন্যে?আমি তো চলে এসেছি আপানার থেকে। তাহলে?”,

পাখির চোখে স্পষ্ট অভিমানের ছাপ দেখতে পায় শান।মুচকি হেসে এগিয়ে এসে পাখির ডান হাত চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে ।হঠাৎ এমন কিছু হওয়ায় হকচকিয়ে যায় পাখি।শানের বুকের একদম কাছে নিজেকে অনুভব করতে পারে।এই প্রথম বিপরীত প্রকৃতির একজন মানুষের এতোটা কাছে এসে অনুভূতিগুলো কেমন মূর্ছা যায় পাখির।শানের গায়ে কড়া পারফিউমের গন্ধে নিঃশ্বাস আটকে আসার উপক্রম।মূহূর্তে রাগগুলো মিশে জল হয়ে যায়।নিজেকে কোনমতে ধাতস্ত করে পাখি বলে,”ছাড়ুন।পাশের ফ্ল্যাটের কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”
শান শান্ত চাহনিতে পাখির অস্থিরতা দেখে বলে,”বাড়ি চলো”

পাখি মাথা তুলে বলে,”যাবো না। বলেছি না?আর কিসের জন্যে নিতে চাইছেন?ইনায়াহ্’র জন্যে?ওতো ওর দিদা না কে হয় তার সাথে আছে কয়দিন ধরে।তাহলে কেন ডাকতেছেন? আবার অপমান করতে?”
শান বুঝতে পারছে সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না।আর এ কয়দিনে এটা বুঝেছে অন্তত চোখের প্রশান্তির জন্যে হলেও পাখিকে তার দরকার।তাই চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে পাখিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চট করে কোলে তুলে নেয়।

পাখি যেন আকাশ থেকে পরে যায় মূহূর্তেই।শানের দিকে অবাক হয়ে বলে,”কি করছেন আপনি?ছাড়ুন আমায়।ছাড়ুন বলছি!”
শান ওর কোন কথা না শুনে সামনে তাকিয়ে কোলে করেই লিফ্ট বেয়ে নিচে নামে।পাখি ছটফট করতেই শান বলে,”এর থেকে বেশি কিছু করি, তার আগে থেমে যাও”
শানের কথা পাখির কর্ণগোচর হতেই পুরো শরীর হিম হয়ে আসে ।কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয়। আর এক চুলও পাখি নড়ার সাহস পায় না।গাড়ি অবধি পুরো রাস্তা চোখ মুখ খিচে রাখে পাখি।

গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাফি শানের দিকে দেখে আশেপাশে তাকিয়ে নেয় কেউ দেখল কিনা।হকচকিয়ে বলে,”ভাইয়া….. ”
শান কড়াচোখে গাড়ির দরজা খুলতে বলে।রাফি দ্রুত দরজা খুলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।রাফির দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে দেখে নেয় পাখি।

পাখিকে বসিয়ে একহাত চেপে ধরে শান রাফিকে বলে,”গাড়ি বাড়ির পথে নে”
“আআচ্ছা “,শুকনো ঢোক গিলে বলে রাফি

চলবে…..