আসক্তি২ পর্ব-১৮

0
2829

#আসক্তি২
পর্বঃ১৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“ওহহহ হো, তাহলে এই কথা?যাওয়ার সময় দরজাটা লাগাই দিলে কি ক্ষতি হতো শুনি?”
“আরে, সে সময় টা দিলে তো!”
“আচ্ছা, ব্যপার না।বাট নিজের মুড নিয়ে থাক।ও যতোক্ষন নিজে থেকে বলে নি ততোক্ষন কিছু বুঝতে দিস না।বুঝেছিস”
“হুমম”
শানের কর্মকান্ডের সমস্ত কথা রাখিকে জানায়। ফোন রেখে ইনায়াহ্’কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে পড়তে বসে পাখি।কিছুক্ষন পর শান চলে আসে। টাই খুলতে খুলতে সোফায় গা এলিয়ে দেয়।মাথাটা চেপে ধরে ইনায়াহ্’কে বলে,”মাম্মাম এক গ্লাস পানি দাও তো”

পাখি সেদিকে একবার ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইনায়াহ’কে বলে,”তুমি পড়ো।কারো বেসিক সেন্সের অভাব থাকলে আমার তো আর নেই।পড়তে বসলে যে বাচ্চাদের ডাকতে নেই তা বোধ হয় অনেকে জানে না”
প্রলাপ বকতে বকতে পাখি রান্নাঘর থেকে একগ্লাস পানি এনে শানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”হুহমম!”
শান হাত বাড়িয়ে পানিটা নিয়ে দ্রুত শেষ করে গ্লাসটা সেন্টার টেবিলে রাখতে পাখি চট করে তুলে নিয়ে বলে,”কাজ করতে কষ্ট লাগে।কেউ এলোমেলো করলে খুন করতে ইচ্ছে করে”
পূনরায় প্রলাপ বকতে বকতে চলে যায় গ্লাসটা রাখতে।
শান পাখির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে ভাবে,”মন্দ লাগছে না”

মাথাটা পিছনে এলিয়ে বলে, “মাম মাথাটা একটু টিপে দাও তো”
ইনায়াহ্ এতোক্ষনে মাথা তুলে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,”উফ,সান সাইন বিরক্ত করো না তো।রাখি ম্যাম হোম ওয়ার্ক দিয়েছে। না করলে কাল পানিশমেন্ট আছে”
“এই রাখি ম্যামই তো কারো মাথাটা একটু একটু করে চিবিয়ে খাচ্ছে”,শানের বিড়বিড় করে বলা কথাটা পাখির কর্ণকুহরে যাওয়ার সাথে সাথে রক্তচক্ষু নিয়ে পাখি ফিরে তাকায়।ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি রেখে মূহূর্তেই চোখ বন্ধ করে ফেলে শান।চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”প্লিজ মাম, আসো না।প্রচুর হেডেইক হচ্ছে”
শান বুঝতে পেরেছে ইনায়াহ্’কে ডাকলে পাখি আসবে।তাই বার বার ডেকে চলেছে।

শানের কথা শুনে সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে যায় পাখির।সারা শরীর রাগে রি রি করে।থম মেরে বসে ইনায়াহ্’র হোমওয়ার্ক দেখছে।উঠার কোন নাম গন্ধও নাই।পাখির কোন সাড়া না পেয়ে শান আস্তে করে চোখের পাতা খুলে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।পাখি সেদিকে তাকাতেই তৃতীয় দফায় পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”প্লিজ”
পাখি একটু এগিয়ে এসে শানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”সেদিনের কথা মনে আছে ডক্টর শান?”
শান ছোট ছোট চোখে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে চেয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,” সরি ”
পাখি যেন সমস্ত কথা হারিয়ে ফেলে মূহূর্তেই।শানের দিকে চেয়ে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর।গিয়ে বসে পরে আবার ইনায়াহ্’র কাছে।কিছুক্ষন কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামান্য ধাতস্থ করে শানের মাথার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।আলতো হাতে মাথা বুলিয়ে দিতে শান চোখ বন্ধ করে ফেলে মূহূর্তেই।পাখি ধীরে ধীরে কপাল টিপে দেয়,মাথার চুল সামান্য টেনে দেয়,হাত গলিয়ে ঘাড়ে হাত রাখতে শান চোখ মেলে তাকায়।

সেদিনের কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয় পাখির।
“আজও কি অপমান করবে নাকি?এই লোকের তো মুড কখন চেঞ্জ হয় বলা মুশকিল”
ভেবে আবারও শানের দিকে তাকায় পাখি।ঘুম জড়ানো এক নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শান।পাখি জড়তা ভুলে আমতাআমতা করে বলে,”অন্যদিকে তাকান”
“কেন?”,একরোখা প্রশ্ন শানের।
শুকনো ঢোক গিলে জবাব দেয় পাখি”আমার অস্বস্তি হচ্ছে”,
শান মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকায়।পাখি শানের মাথার উপর হাতদুটো রাক্ষসীর মতো ইশারা করতেই ইনায়াহ্ দেখে ফেলে। মুখ চেপে খিলখিল করে হেসে ওঠে।

🌸🌸
সকাল সকাল আজ রাহেলা চলে এসেছে।শান মর্নিং ওয়াক থেকে এসে ড্রয়িং রুমে দাঁড়াতে রাহেলাকে দেখতে পায়।কপোট অভিমান আর রাগে বলে,”আসলা কেন?থাকতা!দেশের বাড়ি গেছো। তো ঘাঁটি গাড়তা ওখানেই”
রাহেলা শানের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে, “তোমাদের ছাড়া মন টেকে না বাপ।তাই….”
“হইছে আর বলতে হবে না”,রাহেলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে শান।মুখভরা হাসি উপহার দেয় রাহেলা।

শান ফ্রিজ থেকে পানির বোতলটা বের করে একটু পানি খেয়ে বোতল রাখতে রাখতে বলে,”আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাখলে তোমাদেরই ভালো”
রাহেলা প্রশ্নাতুর চোখে চেয়ে বলে,”কি সিদ্ধান্ত বাবা”
ঘেমে একাকার হওয়া টি-শার্টের বুকের কোণা ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে শান জবাব দেয়,”তোমরা আজ থেকে এ বাড়িতেই থাকছো।এবং সেটা পার্মানেন্ট”
“কিন্তু…..”
“উুহু কোন কিন্তু নয় চাচি।ইতোপূর্বে অনেকবার বলেছি শোন নাই।এইবার শুনতে হবে।আর তাছাড়া পাখি ইনায়াহ’কে নিয়ে একা একা থাকতে একটু ভয় পায়”,চিন্তিত চিত্তে বলে শান।

রাহেলা বুঝতে পারে এদের মাঝে ভাব হয়েছে।খুশি খুশি বলে,”ঠিকাছে আমরা আজই এখানে চলে আসব ”

এরপর সকালের রান্নাটা করে দিয়ে যায় রাহেলা।সকালের খাবার টা খেয়ে পাখি ইনায়াহ’কে নিয়ে স্কুলে চলে যায়।তার কিছুক্ষন পরপর শানও বেরিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।খত হওয়া পায়ের দিকে একবার চেয়ে মুচকি হাসে শান।এরপর পা নাড়িয়ে বুঝতে পারে ব্যথাটা অনেকটাই কম।

স্কুলে ঢুকতে না ঢুকতেই রাখি হাত টেনে নিয়ে যায়।
এরপর চেপে ধরে সমস্ত ঘটনা রিপিট করার জন্যে।পাখি ধীরে ধীরে পূ্ঙ্খানুপূঙ্খ সব কথা রাখিকে জানায় শুধুমাত্র কাল মাথা টিপে দেয়ার কথাটা ছাড়া।
“ওয়াও সো রোম্যান্টিক রে।এক্সাইটিংও বটে।ঐ বদরাগি ডাক্তার যে এমন হবে তা তো কল্পনাও করি নি”,অবাক বিষ্ময়ে বিজ্ঞের মতো করে বলে রাখি।
“হুমম, কবে জানি আবার বদরাগি হয়।হিটলার কোথাকার।এবার একটা অপমানও সহ্য করব না।খুন করে ফেলব একদম”,রাগি রাগি ভাব নিয়ে বলে পাখি।

🌸🌸
অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে শান।রাত তখন এগারটা বাজে।কারণ বিকেল বেলা ফোন করে জানতে পেরেছে রাহেলারা সমস্ত ব্যাগপত্র সমেত এ বাড়িতে শিফ্ট হয়েছে।তাই কিছু কাজ এগিয়ে রেখে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায় শানের।ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই বুঝতে পারে পাখি সোফার একমাথায় মাথা এলিয়ে, আরেক মাথায় পা এলিয়ে শটান হয়ে শুয়ে টিভি দেখছে।দরজা খোলার শব্দে বেশ এলোমেলো গা খানি ঢেকে নেয় পাখি।এরপর সোফায় বসে পরে।শান সেদিকে একবার তাকিয়েই নজর সরিয়ে নেয়।

দরজাটা লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,”ঘুমাও নি কেন?”
পাখি কোন প্রতিউত্তর করে না।কারণ সে নিজেও জানে না সে কেন জেগে আছে!
শান আবার কিছু বলতে যাবে তার আগে ফোনে কারো কল চলে আসে।পকেট হাতরিয়ে ফোন বের করে ভ্রুকুচকে স্ক্রিনের দিকে তাকায় শান।
“এই রাত্রেবেলা আননোন নম্বর থেকে ফোন!”,ভাবতে ভাবতে কলটা রিসিভ করে কানে ধরে চুপ করে কন্ঠ বোঝার চেষ্টা করে। এটা নাকি কিছু কিছু লোকের নিঞ্জা টেকনিক।

ওপর পাশ থেকে ইজি চেয়ারের শব্দ ছাড়া কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না।মূহূর্তে শানের চোখেমুখে গাম্ভীর্যতা চলে আসে।গমগমে স্বরে বলে,”কে ?”
“ইনায়াহ্’কে ও বাড়ি নিয়ে গেলে একটি বার জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না?”,
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে চোখেমুখে কাঠিন্যতা দৃঢ় করে শান জবাব দেয়,”যেহেতু জানাইনি তারমানে প্রয়োজন মনে করে নি।আর কিছু?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে ওপাশ থেকে জবাব আসে,”তুমি কি এ জীবনে আমায় এক্সেপ্ট করবে না? মানতে পারবে না? ”
“হয়ত তৃতীয় বারের মতো ভুল করতে চাই না।আপনার মতো মহিলাকে মেনে নেয়ার মতো ভুল তো নয়ই।এক্সেপ্ট করা তো দূরের কথা”,পাখির দিকে তাকিয়ে বলে শান।

এতোক্ষন চুপচাপ পাখি সবটা শুনে যাচ্ছিলো।এখন শানের তাকানোতে কেমন যেন লাগছে।
“কি ভাববেন উনি, আমি আড়িপেতে কথা শুনছি।ছিহ, কেন যে থাকতে গেলাম”,ভাবতে ভাবতে পাখি শানের দিকে তাকায়।

“আপনার আর কিছু বলার আছে?”
“ফোন কাটবে না অনুরোধ রইল।আজ বহুদিন পর এভাবে কথা বললে আমার সাথে।এটা যে কতো বড় পাওয়া একজন মায়ের কাছে তা তুমি বুঝবে না”
“ওহহ শাট আপ!আমি বুঝতে চাইও না।আর কি যেন বললেন? মা! তাই না!তা কোন এঙ্গেল থেকে নিজেকে মা দাবি করেন?আচ্ছা ওয়েট ওয়েট, আমার এতো মূল্যবান সময়গুলো কেন নষ্ট করছি আমি আপনার মতো মহিলার পিছনে!রাখছি,আর নেক্সট টাইম যেন কোন রকম ফোন না আসে।”,কলটা কাটতে উদ্যত হতেই ওপর পাশের আকুতি বেড়ে যায়।
“প্লিজ বাপ আমার, এভাবে কলটা কেটো না। আমার বুকটা হাহাকার করছে তোর জন্যে।আর কতো শাস্তি দিবি আমায়?আমি যে আর পারছি না রে”,বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

শান চোখ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্যে। এরপর যখন চোখ খোলে তখন টসটসে লাল দুটো চোখ দেখে আতকে ওঠে পাখি।ছেলে মানুষ যখন কান্না সংবরনের বৃথা চেষ্ট করে তখন তাদের চোখ লাল হয়ে ভয়ানক আকাড় ধারন করে।

“একটি বার মা বলে ডাক না রে বাবা”
“অসম্ভব।আর কিছু বলবেন?”
“আজ এতোগুলো বছর পর তুই আমার কলটা রিসিভ করেছিস, কথা বলেছিস।এমনি সময় তো অন্য কাউকে দিয়ে রিসিভ করাস।জানি না কি কারণে তোর এতোটা উন্নতি হয়েছে!তবে দোয়া করি সে কারণে যেন আমি আমার আগের শানকে ফিরে পাই।যে মা বলতে অজ্ঞান ছিলো”,বলতে বলতেই কলটা কেটে দেয় ওপাশ থেকে।

শান ফোনটা পকেটে ভরে পাখির দিকে একজর তাকায়। এরপর কপাল স্লাইড করতে করতে বলে,”যাও ঘুমাও”
শানের অবস্থা দেখে পাখি আর তেমন কিছু বলতে পারে না।তবে এটা স্পষ্ট বুঝেছে শানের মাঝে চাপা কিছু কষ্ট আছে যেগুলো তার মনের মাঝেই তালাবদ্ধ রয়েছে।
“ডায়নিং এ খাবার রাখা আছে।”,শান্তস্বরে বলে পাখি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।

শান সোফায় বসে বাম হাতে দুই ভ্রুর মাঝের অংশটা চিপে ধরে নিজের অতীতটাকে একটু রিমাইন্ড করার চেষ্টা করে।সাথে একটু আগে আসা ফোন কলের মানুষটার কথাও চিন্তা করে।
“জীবনে দুইজন নারীকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছি।দুজনেই ঠকিয়েছে আমায়।বিশ্বাস হয় না আর এ জাতটার প্রতি।পাখিকে চেনার পর নারীর সঙ্গাটা একটু আলাদাই মনে হয়।কেন জানি না একটা অন্যরকম টান কাজ করে।ওকে ছাড়া থাকতে পারি না,কোনকাজ ঠিকমতো করতে পারি না।তাহলে কি আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি ওকে?”
ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলে,”পাখিও যদি আমায় ছেড়ে যায়! কি নিয়ে বাঁচব আমি?একা একা কেমন করে কাটাব সময়?তার থেকে কি এটাই বেটার না ওর লাইফটা ওর মতো সেট করে দেয়া?দূর থেকে ভালোবাসব।তাহলে ছেড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।আর না থাকবে একাকিত্বের ভয়।আর তাছাড়া আমার কাছে থাকলে পাখিকে অনেক বেশি বদনাম কুড়াতে হবে”

বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আনমনে বলে,”সেটাই করব।তার আগে কয়েকটা কাজ বাকি আছে।ওকে অপমান করে কষ্ট দিয়ে দূরে সরাতে পারব না।আমি ওকে আর কষ্ট দিতে চাই না।ও সেটা ডিজার্ভ করে না।ও সম্মান ডিজার্ভ করে।”

এরপর শান উঠে চলে যায় নিজের ঘরের দিকে।

🌸🌸
রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যায় তবু শানের চোখে ঘুম নেই।রাতে আসা কলটা সবকিছু এলোমেলো করে দেয় শানের।বড্ডো একা লাগে নিজেকে।বেলকোনি থেকে বিছানা, আবার বিছানা থেকে বেলকোনি পায়চারি করেও কিছুতেই ঘুম আনতে পারল না চোখে।এরপর দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই দরজার পাশে রাখা ইনডোর প্ল্যান্টের চারাটা টব সমেত নিচে পরে যায়।হকচকিয়ে সেদিকে চেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে শান।একে একে টুকরো সহ মাটির দলা গুলো কুড়িয়ে নেয়।

এদিকে টব ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।শব্দের স্থান খুঁজতেই ইনায়াহ’কে শুয়ে রেখে ধীরপায়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে পাখি।এসেই শানকে দেখতে পায় ময়লা গুলো ঝুড়িতে তুলতে।
শান মাথা তুলে পাখির দিকে একবার তাকিয়ে মেকি হেসে বেলে,”বাহিরে বের হতে হাত লেগে পরে গেলো।সরি তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো।”
ঝুড়িতে সব ময়লা তুলে হাত ঝেড়ে বলে,”যাও ঘুমাও তুমি।”

পাখি বেশ বুঝতে পারল শান কিছু একটা লুকাচ্ছে।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকে শানেরর দিকে।একটা ব্যপার ক্লিয়ার শান চোখ নামিয়ে কথা বলছে।পাখি তখনও সেদিকে চেয়ে আছে।বেসিনে হাত ধুতে ধুতে শান বলে,”জেগে থেকো না। শরীর খারাপ করবে।ঘুমাও”
পাখি এগিয়ে গিয়ে বলে,”ঘুমান নি কেন?”
পাখির এমন প্রশ্নে শান বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়।নজর এদিক সেদিক করে পাখিকে মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,”ঘুমাতে বলছি না!ঘুমাও।যাও”
“দেখি এদিকে ঘুরুন তো”,শানের বাম বাহু ধরে ঘুরিয়ে নেয় পাখি।

শান চোখ তুলে তাকাতেই পাখি থমকে যায়।
অবাক হয়ে আপনাআপনি হাতটা মুখে চলে যায়।
“আপনার চোখে কি হয়েছে?কেঁদেছেন কেন রাত জেগে?”,হন্তদন্ত হয়ে বলে পাখি।শানের চোখ মুখ ফুলে ফেপে উঠেছে অনেক টা।তা দেখে পাখির ভিতরে অজানা কষ্টের ঝড় বয়ে যায় মূহূর্তেই।
“বলুন কেন কেঁদেছেন?”,শানের গা ঝাঁকিয়ে বলে পাখি।
শান নিরুত্তর হয়ে অসহায় চাহনীতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।খুব করে পাখিকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে হালকা করার প্রবল মন চাইছে শানের।কিন্তু সেটা উচিত নয়;সমীচীন নয়।
তাই কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”ওসব কিছু না।কাঁদতে যাব কোন দূঃখে!আমি ফয়সাল আহমেদ শান। সহজে ভেঙ্গে পরি না বা তোমার মতো চোখের জল ফেলি না”

পাখি মুখে বিরক্তির ভাব এনে বলে,”অভিনয়টা একদমই কাঁচা।তবুও বলি যদি অভিনয়টা শেষ হয়ে থাকে তবে আমায় জানিয়ে বাঁধিত করবেন কি, আপনার কি হয়েছে?”
“আরে বললাম তো কিছু হয় নি”
“ওকে”,বলেই রাগ দেখিয়ে পাখি চলে যেতেই না চাইতেও পাখির হাতটা টেনে ধরে শান।
পাখির পা থেমে যায় মূহূর্তেই।পিছন ফিরে একবার হাতের দিকে, আরেকবার শানের দিকে তাকায়।কেমন কেমন যেন অজানা অনুভূতি লাগে মনের মাঝে।দুজনের মাঝে কোন কথা আর অবশিষ্ট থাকে না।খানিক পরে পাখি হাতটা মুচরাতেই শান হাত ছেড়ে দেয় চট করে।এপর নিজের ঘরে ঢুকে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দেয়।

“আরে, বললেন না যে…..”
পাখি নিজের কথাকে সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।

চলবে…..