আসক্তি২ পর্ব-৩৮+৩৯

0
2466

#আসক্তি২
পর্বঃ৩৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

নীরা,শহরে বহুল আলোচিত সমালোচিত একটি নাম।একদল মানুষের কাছে যে আইডল। আরেকদল মানুষের কাছে সে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি প্রয়াত স্বামীর ব্যবসা, সাথে নিজের অনলাইন অফলাইন বিউটি প্রোডাক্টের ব্যবসা সে একা হাতে সামলাচ্ছে।নারীবাদীদের কাছে এ এক বিরাট মিশাল।ডাক্তারি পাশ দিয়ে পেশায় নিযুক্ত হওয়ার খুব বেশিদিন হয় নি। এরই মাঝে বেশ প্রশংসিত সে।তার একমাত্র কারণ সে হতদরিদ্রদের বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা প্রদান করে।

অনলাইন মার্কেটিং এ ও বেশ সরব নীরা।বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্টের ব্যবসা তার।রাজধানীর কয়েকটা বড় বড় মানসম্মত এলাকায় তার বিউটি
পার্লারও রয়েছে।এতোসব একা একা করা মোটেই চাখটিখানি কথা নয়।যা সে গত দুই বছরের ধরে সুনামের সাথে করে আসছে।অথচ কেউ জানে না তার এতোসব লোক দেখানো নামে মাত্র ব্যবসার পিছনে কতোটা ঘৃন্য কর্মকান্ড লুকায়িত আছে।
তার বিলাসবহুল জীবন যদিও সবার দৃষ্টিতে এসেছিলো তবে তার স্থায়িত্ব বেশীদিন থাকে নি।কারণ টাকার জোড়ে সে সব বদনাম ঢেকে ফেলেছে।

🌸🌸

গ্রাম থেকে ফিরেছে শর্মিলা, রাহেলা, আব্দুল্লাহ্ আর ইনায়াহ্।আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছে ছিলো শর্মিলার।কিন্তু শানের কথার কাছে সে পারে নি।অগত্যা চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। সদর দরজায় পা রাখতেই রনি শব্দ করে বলে ওঠে,
“বড় মা!”

আজ এতো বছর পর শর্মিলাকে এভাবে দেখে রনি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে নি।সে ভাবতেও পারছে না এভাবে শর্মিলার সাথে তার দেখা হবে।দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।ছোটবেলায় নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতেন রনিকে।বিদেশ থেকে ফিরলেই বায়না করত শর্মিলার কাছে সে খাবে,ঘুমাবে, গোসল করবে।এক কথায় দেশে ফিরলে রনির সবটা আবদার জুড়ে ছিলো শর্মিলা।সেই মানুষ টা যখন চলে যায় তখন সে কিছুতেই এই অপবাদ টা মানতে পারে নি।অথচ না মেনেও কোন উপায় ছিলো না।এরপর হাতে গোনা কয়েকবার শুধু দেশে এসেছিলো রনি।তারপর আর এদেশের মাটিতে পা রাখে নি রনি।

মুখোমুখি বসে আছে বাড়ির সবাই।মূলত একটা আলোচনায় বসা।অপেক্ষা শুধু শানের।কারণ সে এখানে ডেকেছে। পাখি একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছে, কি কারণে আজ বৈঠক।সবার জন্যে নাস্তা পানির ব্যবস্থা করে শানকে ডাকতে চলে যায় উপরে।

“কি ব্যপার, সবাইকে নিচে বসিয়ে এখানে কি করছেন আপনি?”,ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে পাখি।
শান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে পাখির দিকে তাকায়।নেমে আসা চশমা টা উপরে ঠেলিয়ে ফিরতি প্রশ্ন করে,”সবাই এসেছে?”
“হুমম, সবাই ”
“কিন্তু আসল মানুষরাই তো এলো না পাখি।”
“আসবে হয়ত।ফোন দিলাম রাখির কাছে ওর মা নাকি আসতে চাইছে না”
বিজ্ঞের ন্যায় শান জবাব দেয়,”আমি ডেকেছি আর আসবে না।দেখো ঠিকিই চলে আসবে”

নিচ থেকে ডাক পরে যায়।পাখি আর এক মূহূর্ত দেরি না করে ল্যাপটপটা সরিয়ে শানের হাত টেনে নিয়ে যায়।

মূলত আজ রাখি আর রনির বিয়ের ব্যপারেই আলোচনা করতে সকলকে উপস্থিত থাকতে বলেছে শান।কারন পরিবারের সবার উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনকে বেশি প্রাধান্য দেয় সে।

শুরু থেকেই থম মেরে বসে আছে রেহানা হক।রনি রাখির দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে।যেন নজর সরালেই মেয়েটা হাত ফসকে চলে যাবে।রাখি সেদিকে একবার দেখে লজ্জামিশ্রিত একটা হাসি উপহার দেয়।রনি বুকের বাঁ পাশ টা চেপে ধরে মরার ভান করে শানের কানে চাপাস্বরে বলে,”ভাই আমার অবস্থা খুব খারাপ।ব্যপারটা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাও। প্লিজ ভাইয়া প্লিজ”

শান কপোট রাগ নিয়ে রনির দিকে তাকাতেই রনির মুখোভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে যায়।শটান হয়ে বসে থাকে।

এক পর্যায়ে শান, রাখি আর রনির ব্যপার টা সর্বসম্মুখে বলে। আর সবশেষে প্রস্তাব রাখে রেহানা হকের কাছে।তিনি স্বভাবসুলভ হাসিটা উপহার দিয়ে বলেন “এটা সম্ভব না ডক্টর শান।আমার একটা মাত্র মেয়ে।ওর বাবা গত হওয়ার পর খুব কষ্টে এতো সবটা আগলে ওকে নিয়ে জীবন পার করছি।আর সেই মেয়েকে সুদূর আমেরিকা আমি পাঠাতে পারব না।মাফ করবেন আপনার এই কথাটা আমি রাখতে পারব না।

গড়গড় করে কথাগুলো বলে দেয় রেহানা।রাখি ছলছলে চোখে সেদিকে তাকাতেই দুফোটা জল টুপ করে গড়িয়ে পরে হাতের উপর।রনি সেদিকে তাকিয়ে বলে,”দরকার পরলে আমি দেশে চিরস্থায়ী চলে আসব আন্টি”

সবাই থমথমে মুখে রনির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।শান কটমটে চোখে তাকাতেই রনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,”হ্যা, চলে আসব”

“আমি আপনার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি মিসেস হক।কিন্তু মেয়ে তো বিয়ে দিতেই হবে, তাই না।রনি আমার কাকাত ভাই বলে বলছি না ওদের দুজনের মাঝে বন্ডিং অনেক ভালো।সব থেকে বড় কথা ওরা একে অন্যকে খুব ভালোবাসে”,শান খুব স্বাভাবিক এবং শান্ত করে কথাগুলো বলে রেহানার দিকে তাকায়।

তার মাঝে কোন প্রকার কোন পরিবর্তন খুঁজে পায় না শান।
আবারও বলে,”আচ্ছা, ওর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট।বিদেশ হওয়ায় আপনার যদি আপত্তি থাকে তবে সে দেশে এসে ভালো কোন জবে জয়েন করবে।”
রনি মাঝখান থেকে বলে ওঠে,”হ্যা আমিতো এটাই করব”

শান আবার ওর দিকে তাকায়।
এবার রেহানা হকের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন দেখা দিলো।
চিন্তিত চেহারায় তিনি প্রশ্ন করেন,”ওর বাবা মায়ের কি মত?”
শান ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত করে বলে,”আমার সিদ্ধান্তই তাদের সিদ্ধান্ত।এখন আপনি বলেন, আপনি কি চান?”

শর্মিলা অনেক বুঝালো রাহেলাও কম না।রাখি আর পাখি দুজনেই গুজুরগুজুর করছে।পাখির কোলে বসা ইনায়াহ্ সবার মুখের দিকে দেখছে।রনি সবার দিকে একনজর চেয়ে মিনমিন করে বলে,”সংসদের বিল কখন পাশ হবে ভাইয়া? উফ এরা এতো ড্রামাটিক!”
“তুই একটু বেশিই বকবক করছিস না রনি?”,রনির দিকে ফিরে শটান হয়ে বসে বলে শান।
স্বগতোক্তি করে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”তোর বিয়ের কথা আলোচনা হচ্ছে কোথায় একটু লজ্জা পাবি তা না ধেইধেই করে মাঝখানে হাত ঢুকাচ্ছিস বার বার”
সামনের দাঁত কপাটি কেলিয়ে রনি বলে,”কি যে বলো ভাইয়া। লজ্জা আর আমি!”

“ঠিকাছে ডক্টর শান আয়োজন করুন”

রেহানার কথায় শান হাফ ছেড়ে বাঁচে।নিজের উপর আসা দায়িত্ব থেকে অব্যাহত পায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”তাহলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা যাক?”

মুচকি হেসে রেহানা জবাব দেয়,”ঠিকাছে”

চকচক করে ওঠে রনির চোখদুটো।পারে তো এখনি উরাধুরা নাচতে মন চাচ্ছে তার।ওর এমন উশখুশ করা দেখে শান সহ সবাই হেসে ওঠে।লজ্জায় মিইয়ে যায় রাখি।

🌸🌸

শান ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে সেট করে নিচ্ছে।
এমন সময় পাখি এসে বলে,”আপনার না আজ অফ ডে, কোথায় যাচ্ছেন তাহলে?”

আয়না দিয়ে ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,”ইম্পোর্ট্যান্ট কাজ আছে একটা ”
বলতে বলতে শান কাবার্ডের কাছে এসে ড্রেস বের করে নেয়।শার্ট গায়ে খোলা বোতামে দাঁড়িয়ে থাকে।পাখি তখন এক দৃষ্টে চেয়ে আছে শানের দিকে।

“আমায় দেখা হলে এবার বোতাম গুলো লাগিয়ে দিতে পারবেন ম্যাম?”
শানের কথায় হকচকিয়ে ওঠে পাখি।সহাস্যে এগিয়ে যায় শানের দিকে।শানের মুখোমুখি দাঁড়াতেই ডানহাতে কোমড় জড়িয়ে শান কানে কানে বলে,”আপনার স্পর্শ আমার শার্টটাও পেতে চায়”

লজ্জামাখা হাসিতে পাখি বলে,”ঢং ”
“ট্রাস্ট মি”
“হইছে আর লাগবে না।”

বোতাম লাগানো হয়ে গেলে পাখি সরে আসতেই আবারও নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসে শান।
চুলের খোপাটা খুলে দিয়ে পাখির দিকে তাকায়।ফট করে বাম গালে চুমু দেয় । আবারও পাখির মুখোমুখি দাঁড়ায়। ভ্রুকুচকে শানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।
আবারও ফট করে ডান গালে চুমু দিতেই পাখি ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়,”এতো রোম্যান্স কেন আজ?”
শান কোন জবাব না দিয়ে বলে,
“একটা জরুরী কাজে যাচ্ছি জান”
“কি কাজ?”,চিন্তিতো ভঙ্গিতে বলে পাখি।
শান ওর দুই কাঁধে হাত রেখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”আমার বাবার তৈরীকৃত পাপের সাম্রাজ্য বিনষ্ট করতে। যার একচ্ছত্র নারী,নীরার আওতাধীন।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই পাখির চোখে মুখে দূঃচিন্তারা একসাথে উড়ে আসে।কেমন মলিন দেখায় মুখটা।পাখিকে অস্বাভাবিক দেখে শান প্রশ্ন করে, “কি হলো?”
“আপনার কিছু হবে না তো! “,হতাশ কন্ঠে বলে পাখি।
শান ঠোঁটের হাসিকে প্রশমিত করে চিরুনি টা পাখির হাতে ধরিয়ে দেয়।এরপর মাথাটা এগিয়ে দেয়।
“কিচ্ছু হবে না ইন শা আল্লাহ্।কারণ আমি অপরাধ করতে নয় অপরাধের ঘাঁটি ভাঙ্গতে যাচ্ছি ”

মাথা আছড়ানো হয়ে গেলে চিরুনিটা পাখির হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রাখে।হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে বলে,”এতো চিন্তা করো না।সব প্রমান আমার কাছে আছে।আর পরশের ফ্রেন্ড আছে গোয়েন্দা বিভাগের অধীনে। উনি আশ্বস্ত করেছে আমায়।”
শানের বলা কথা গুলো পাখির মনে একটুও দাগ কাটতে পারলো না।
হঠাৎ করে বলেই ফেলল,”আমিও যাবো”
শান ঠোঁট কিঞ্চিত প্রসারিত করে ভ্রুতে ভাঁজ ফেলে বলে,”তুমি গিয়ে কি করবা?”
“জানি না। তবে ঐ থার্ডক্লাস মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছে আমার”,বলতে বলতে চোখে মুখে রাগ ফুটে ওঠে পাখির।

“ও অনেক সুন্দর।বুঝলে!”,বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় শান।

এই একটা কথায় থমকে যায় পাখি।গলা দিয়ে যেন আর কোন কথাই বের হচ্ছে না।টলমলে চোখ জোড়ার নজর এদিক সেদিক করে চোখে জমানো পানিটা ভিতরে পাঠানোর চেষ্টা করছে।হঠাৎ করে শান এসে দুই বাহু ধরে ফেলে।
“তুমি ওর থেকেও সুন্দর।আমার জীবনের যা কিছু সুন্দর সব তোমার বদৌলতে “,বলেই পাখির কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে চুপ করে থাকে।
পাখি রাগে অভিমানে নিজেকে ছাড়ানোর হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে।
দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”এখনো তাকে ভালোবাসেন তাই না?”
গা ঝাঁকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয় শান।সে হাসি পাখির সারা শরীরে যেন হিংসার আগুন ধরিয়ে দেয়।

রেগে উঠে এসে টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেট টা নিয়ে শানের হাতে ধরিয়ে দেয়,ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চশমা টা হাতে ধরিয়ে দেয়।শান মুচকি মুচকি হেসে পাখির দিকে দেখছে।
“এসব একবারেই হাতে দিচ্ছো কেন? “,হেসে হেসে বলে শান।
টলটলে চোখে শানের দিকে না তাকিয়ে পাখি জবাব দেয়,”যাতে এসবের উছিলায় বার বার আমায় ডাকতে না পারেন”
পা বাড়িয়ে চলে আসতেই আবার বলে ওঠে,”আর হ্যা নীরা যখন নিঃশ্ব হয়ে যাবে তখন না হয় এ বাড়িতে এনে সারাদিন ওকে মুখের সামনে বসিয়ে রাখবেন।আর ঢকঢক করে ওর সৌন্দর্য গিলবেন”

পাখির কথায় শানের হাসি যেন থামছেই না আর। স্বশব্দে হেসে ওঠে।পাখির হাত টেনে আয়নার সামনে দাঁড় করায়।কিছুতেই দাঁড়াতে নারাজ পাখি।শান পিছন থেকে পেটের উপর হাতের শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে নেয়।কাঁধের চুল সরিয়ে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয়।তবুও পাখি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় মত্ত।পাখির এমন আচরনে শানের স্পর্শের গতি আরো বেড়ে যায়।শ্বাস ভারী হয়ে আসতেই পাখি থেমে যায়।খুব শান্ত চোখে আয়না ভেদ করে শানকে দেখে।স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”এখনো ভালোবাসেন? অবশ্য প্রথম প্রেম বলে কথা”
পাখির কথার কোন জবাবই শান দেয় না।খানিক পরেই শান কাঁধের উপর থুতনিটা রেখে সহাস্যে জবাব দেয়,”আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।ওটা মজা করেছি।আর মজাটা না করলে বুঝতাম কি করে আমার বউ আমায় নিয়ে কতোটা পজেসিভ!”

🌸🌸

পার্লার বেশ রমরমা চলছে নীরার।লেডিস জেন্টস উভয়ের বিভিন্ন ব্রাঞ্চ খুলেছে আনাচে কানাচে।এক নামে সবাই চেনে “পারফেক্ট লুক বিউটি পার্লার”(ফেইক নাম)

ঢাকার মেইন অফিসেই আজ পুলিশের তদন্ত করার কথা।নীরা তখন চেম্বারে ব্যস্ত সময় পার করছে।হঠাৎ দায়িত্বরত কর্মীর ফোনে নীরা অবাক হয়ে যায়।কল রিসিভ করে কানে নিতেই পায়ের তলার মাটি যেন সরে যাওয়ার উপক্রম তার।খুব দ্রুত চেম্বার অফ করে মেইন অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
এক গাদা পুলিশ দেখে ভড়কে যায় নীরা।খুব চাতুরতার সাথে নিজের অনুভূতিটা লুকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দেয়।সম্ভাষণ জানিয়ে ভিতরে নিয়ে বসায়।তাদের আগমনের কারণ জানতে চায়।
গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার সোহেল ঘুরে ঘুরে সব প্রোডাক্ট গুলো দেখছে।মুচকি হেসে বলে, “তা ম্যাম, কতোদিনের বিজনেস?”
“এএই তো দুই কিংবা আড়াই বছর হবে।অফিসার বসুন না প্লিজ”
“দুই কিংবা আড়াই বছরে এতো এতো নাম কামালেন, কিছু তো রহস্য আছেই ম্যাম। তাই না?থ্যাংকস, আমি বসতে আসি নি”

চুপসে যায় নীরার মুখ।আহত দৃষ্টিতে কর্মীদের দিকে তাকাতেই সবাই চোখ নামিয়ে নেয়।ইতোপূর্বে যতোজন অফিসারই এসেছিলেন তার আগে কোন না কোন ভাবে নীরা খোঁজ পেয়েছিলো। তখন সাবধানতা অবলম্বন করা সুবিধা হতো।আজ সোহেল কিছু না বলেই স্বশরীরে উপস্থিত হয়।
এই মূহূর্তে নীরার কি করা উচিত। কিছুই বুঝতে পারছে না সে।মাথা নুয়ে একাধারে ভেবেই চলছে সবটা।

“ফরিদ কাকা, তালা লাগাও”
হঠাৎ সোহেলের গলায় তালা লাগানোর কথা শুনেই চট করে মাথা ওঠায় নীরা।অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে বলে,”হোয়াট?এসবের মানে কী? কোন আইনী নোটিশ নেই কিচ্ছু নেই তালা লাগবেন মানে?আমার অপরাধ?

সোহেল নীরার সামনে এসে দাঁড়ায় ছোট ছোট চোখ করে বলে,”সত্যিই কি ইতোপূর্বে আইনী নোটিশ পান নি ম্যাডাম?”
থতমত খেয়ে যায় নীরা।সে তো নোটিশ পেয়েছিলো কিন্তু টাকার জোড়ে সেগুলো তো ধামাচাপাও দিয়েছে।তাহলে আজ এমন হবার কারণ!

ছোট ছোট কদমে একটা রুমের সামনে দাঁড়ায় সোহেল।গলা শুকিয়ে আসে নীরার।কি ভেবে যেন দরজায় সজোড়ে একটা লাত্থি দেয় সোহেল।কিন্তু দরজা না লাগানোর ফলে এমনিই খুলে যায়।
“আরে আরে, দরজাও ভিতর থেকে লাগানো নয়?স্ট্রেইঞ্জ!নাকি সুযোগ পান নি কোন টা?”
নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে বলতে ঘরটার ভিতরে ঢোকে সোহেল।অপ্রীতিকর অবস্থায় তিনজন ছেলেমেয়েকে দেখে সোহেল।চোখ মুখ কুচকে বেরিয়ে আসে।
রাগতস্বরে বলে,”কি ভেবেছিলেন পার্লারের ব্যবসার আড়ালে নোংড়া অবৈধ ব্যবসা চালাবেন আর কেউ টেরও পাবে না, তাই না?”

নীরা জোড় করে হাসি এলিয়ে কম্পিত কন্ঠে বলে,”ভুল ভাবছেন অফিসার।ওখানে বডি ম্যাসাজ করা হয়।আআসলে এই কাজটা নতুন চালু করেছি। এএখনো উদ্বোধন করি নি।তাই আরকি…….”
“বডি ম্যাসাজ সেন্টারে সে* কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তাই না ডক্টর নীরা?”,রাগে চিল্লিয়ে বলে সোহেল।ভয়ে কোণঠাসা হয় নীরা।কিছুই বলার জো থাকে না আর।

সোহেল আরেকজন জুনিয়র অফিসারকে একটা কাগজের কপি বের করতে বলেন।এরপর নীরার সামনে তা রাখতে বলেন।প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা কাগজ পড়ে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত নীরার।এদিকে সোহেল প্রত্যেকটা তাকের প্রোডাক্ট গুলো অন্যান্য সহকর্মী সহ দেখছে।কয়েকটা প্রোডাক্ট দেখেই চোখে মুখে তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটে তুলে বলে,”এতোদিন জেনে এসেছি ডাক্তাররা সততাবান মানুষ হোন।কিন্তু আপনাদের মতো ডাক্তাররা তো মানুষের জীবন নিয়ে খেলেন!”
রাগে চোয়াল শক্ত করে সোহেল আবারও বলে,”প্রত্যেকটা প্রোডাক্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ।সবগুলোর মেয়াদই শেষ হয়ে গেছে।আর সেগুলো দিয়ে আপনি এখনো সার্ভিস দিয়েই চলেছেন?শেইম অন ইউ ডক্টর নীরা”

সোহেল পাশা থাকা জুনিয়র অফিসার আবিদকে ইশারা করে বলে,”এরেস্ট”
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ গোয়িং….এভাবে কি করে কাউকে….”,বলতে বলতেই দুজন মহিলা পুলিশ এসে নীরার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দেয়।
“আরে, আরে আমার কথাটা তো শুনুন অফিসার”

নীরার কথা যেন কারোরই কানে যাচ্ছে না।
সোহেল আবার বলে,”ফরিদ কাকা পারফেক্ট লুক বিউটি পার্লারের সকল ব্রাঞ্চে তালা লাগানোর ব্যবস্থা করুন।আর সমস্ত প্রোডাক্ট নষ্ট করে দিন”

🌸🌸

মূহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘৃনা জানায় নীরাকে সাথে তার অবৈধ ব্যবসাকে।
থানায় নিয়ে আসা হলে প্রথম যে মানুষটার মুখোমুখি হয় নীরা সেটা আর কেউ নয় শান।অট্টোহাসিতে ফেটে পরে শান।রক্তচোক্ষু নিয়ে নীরা সেদিকে তাকাতেই শানের হাসির গতি বেড়ে যায়।

“ডক্টর শান, থ্যাংক ইউ সো মাচ। আপনার সহযোগীতা ছাড়া আমরা এতোদূর যেতে পারতাম না”,কৃতজ্ঞ চিত্তে বলে হাত বাড়িয়ে দেয় সোহেল।
সহাস্যে শান হাত বাড়িয়ে বলে,”এভাবে ছোট করবেন না।আসলে কিছু কাজের বিনিময়ে ধন্যবাদটা পাইলে ভালো লাগে না ”

হেসে উঠে সোহেল কফির অফার করে একজনকে পাঠায় কফি আনতে।
মুখ ঘুরিয়ে বলে,”আসলে কি বলুন তো আমাদের সমাজে ডক্টর নীরাদের মতো রাঘববোয়ালরা প্রমানের অভাবে বছরের বছর আইনের ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়।অনেক সময় প্রমান থাকলেও কিছুই করার থাকে না। উল্টো প্রমানকেই ভুঁয়া প্রমানিত করে ”
বলেই গা ঝাঁকিয়ে হেসে ওঠে দুজনেই।

নীরা কটমটে চোখে সেসব দেখছে আর রাগে ফুঁসছে।শান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
“এই অবস্থা আরো কয়েকবছর আগে হতো যদি জানতাম আমার জন্মদাতা কতোটা নিকৃষ্ট ছিলো।যদি জানতাম তোমরা দুজনেই কতো নোংড়া তাহলে এতোদিনে আমার হাতেই হয়ত বাবার খুনের দায়ে হাতকড়াটা পড়ত”,রাগে তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বলে শান।কপালের রগগুলো দপদপ করে ভেসে উঠছে।

শানের কথার প্রতিউত্তর করার মতো কোন কথাই আজ নীরার কাছে নাই।

“কাম ডাউন, শান”,বলতে বলতে পরশ ঢুকে পরে অফিস কক্ষে।শান সেদিকে চেয়ে নিজের রাগকে সংবরন করে।পরশ কিছু কাগজ এগিয়ে দেয় সোহেলের কাছে।

“স্যার এসব একটু দেখে নিন।প্রয়াত আহমেদ ওরফে আমাদের ডক্টর নীরার লেইট হাজব্যান্ডের ইনকাম সোর্সের সকল ডকুমেন্ট ”
হাত বাড়িয়ে সে সব নেয় সোহেল।পুরো মুখটায় ঘৃনা ভরে শানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”আপনার বাবা এতোটা নোংড়া ছিলেন! নারী পাচার, খাদ্যে ভেজালের মতো নানা দূ্র্নীতির কাজে জড়িত ছিলেন”

সোহেলের কথায় মুখটা পাংশুটে হয়ে যায় শানের।কথায় আছে বাবা মায়ের কর্মের ফল সন্তানদের ভোগ করতে হয়। তাই তো বাবার মৃত্যুর পর আজ তার কর্মের জন্যে কিঞ্চিত হলেও অপমানিত হতে হচ্ছে শানকে।
পরশ সবটা বুঝতে পেরে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে,”উনাকে শানের বাবা হিসেবে না সম্বোধন করে ডক্টর নীরার লেইট হাজব্যান্ড বলাই ভালো স্যার।তখন সোনায় সোহাগা আরকি!”

“তা যা বলেছেন পরশ”,বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ওঠে সোহেল।
আড়মোড়া ভেঙ্গে স্বগতোক্তি করে সোহেল বলে,” আবিদ ডক্টর নীরাকে কোর্টে না নেয়া পর্যন্ত সেলেই রাখো”

চলবে…….

#আসক্তি২
পর্বঃ৩৯
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকাল বেলা বেশ হন্তদন্ত হয়ে শান রেডি হয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।যেন তড়িৎগতিতে সব করতে পারলে বেঁচে যায় সে।পাখি কতো বার জিজ্ঞেসাও করেছ আজ এতো তাড়াহুড়ো কেন, কিন্তু কোন জবাব মেলে নি।বরং বারংবার পাখিকে এভোয়েড করেছে শান।যেটা পাখির নজর এড়ায় নি।কেমন যেন মন টা খারাপ হয়ে আসে।

আজ শার্টের বোতাম নিজে নিজেই লাগাচ্ছে,এমনি সময় ভেজা চুলটাও পাখিকে দিয়ে মুছিয়ে নেয় আর আজ নিজেই করে নিচ্ছে,নিজে নিজেই চিরুনী চালিয়ে চুল টা সেট করে নেয়।পাখি বার বার হাত বাড়ালে সে কাজটা নিজেই করে নিচ্ছ শান।রেডি হলে পাখি ওয়ালেট আর চশমাটা হাতে নিতেই শান সেটা আগে আগে উঠিয়ে নেয়।এবার আর নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রখতে পারে না পাখি।
মুখ ফুটে বলেই ফেলে,”কি হয়েছে?কেন এমন টা করছেন?”

শান তবুও নিরুত্তর ছিলো।পাখিকে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে আসতেই পাখিও দ্রুত পিছন পিছন নিচে নেমে আসে।ডায়নিং এ সাজানো নাস্তাগুলো এগিয়ে দিতেই খেয়াল হয় শান সোজা দরজার কাছ চলে গেছে।পাখি দৌঁড়ে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়।দুই হাত দুইদিকে ছড়িয়ে বলে,”সমস্যা কি?কাল রাত থেকে এভোয়েড করছেন কিসের জন্যে?”

শান ওর দিকে একবার চোরা চোখে তাকিয়ে পকেট হাতরিয়ে ফোন বের করে পাখির সামনে ধরে।পাখি বোকার মতো ফোনের দিকে তাকায়;কিছু বুঝতে পারে না।
“কী?”
শান তবুও নিরুত্তর।বাম ভ্রু টা উচিয়ে মুখে বিরক্তির ছাপ এনে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই পাখি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।পিঠের উপর মাথাটা ঠেকিয়ে চুপচাপ থাকে।
শান নিজের বুকের উপর রাখা পাখির হাতে মুঠি দুটো আলতো হাতে ছাড়াতেই পাখি বলে ওঠে,”কি হয়েছে?আমি কি কোন ভুল করেছি ডাক্তার সাহেব?এমন শাস্তি দিচ্ছেন!”

শান কন্ঠে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে,”না”
“তাহলে?”, খুব শান্তকন্ঠে ফিরতি প্রশ্ন করে পাখি।
কিন্তু তার কোন জবাব পায় না সে।শান ঝনঝনে গলায় বলে,” কাজ আছে, ছাড়ো।দেরি হয়ে যাচ্ছে”
বলেই পাখির হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় শান।আর তার যাওয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পাখি।কয়েকফোটা জল গাল গড়িয়ে পরে যায়।হুশ ফিরে চোখের পানিটা মুছে নিজেকে সান্তনা দেয়, “হয়ত দরকারি কোন কাজ আছে ”
“তাই বলে এভাবে চলে গেলো?কিছু খেয়েও গেলো না?এমন তো কখনো করে না”, হাজার টা চিন্তায় বুক ভারী হয়ে আসে পাখির।শানের এই সামান্য ব্যবহারই তার সহ্য হচ্ছে না ।

” ভাবি”
পিছন থেকে রনির ডাকে সম্বিৎ ফেরে পাখির।ভালো করে চোখের পানিটা মুছে ঠোঁট এলিয়ে রনিকে বলে,”খেতে আসেন ভাইয়া ”
পাখির কথামতো রনি খেতে আসে।রনিকে ডায়নিং এ বসিয়ে পাখি ইনায়াহ্’র ঘরে চলে যায়।কিছু অঙ্ক করতে দিয়েছে সে।

“অঙ্ক শেষ মা?”, বলতে বলতে ইনায়াহ্’র ঘরে ঢোকে পাখি।
সহাস্যে ইনায়াহ্ জবাব দেয়, ” শেষষষ”
“ওকে এবার চলো নাস্তা খেয়ে তোমায় স্কুলে দিয়ে আসি, কেমন!”
“আচ্ছা”
বলেই ইনায়াহ্ পাখির হাত ধরে নিচে চলে আসে।

🌸🌸

ইনায়াহ্’কে স্কুলে দিয়ে আসার অনেকক্ষন হয়েছে।বাড়িতে এসে বুঝতে পারে রনি বাড়িতে নেই।আজ থাকারও কথা নয় রাখির সাথে ঘুরতে গেছ সে।এর মাঝে কতোবার ফোনটা চেক করেছে অথচ শানের কোন মেসেজ বা কল পায় নি সে।ভিতরে যেন কষ্টেরা দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছে।
“সবাই ঠিকই বলে,বিয়ের পর নাকি ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়।তাই তো, না হলে এভাবে হঠাৎ ইগ্নোর করার মানে কী””

“বউ মা, কি রান্না করবা আজ”,
রাহেলার কথায় ভাবনার সুতো ছেড়ে পাখির।চোখের জমানো জল টা লুকিয়ে বলে,” যা ইচ্ছে রাঁধো চাচি।”
রাহেলা বুঝতে পারে পাখির মন ভালো নেই।দরজার চৌকাঠ ছেড়ে বিছনায় পাখির পাশে এসে বসে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”কি হয়েছে মা?”
মাথায় রাখা হাতটার দিকে একবার তাকিয়ে ছলছলে চোখে রাহেলার দিকে তাকায় পাখি।পরম মমতায় রাত থেকে জমানো কষ্টগুলো গড়গড় করে বেরিয়ে আসতে চাইছে।চোখ নামিয়ে কোলের উপর রাখা বালিশের কভার ট খুঁটে চলেছে পাখি।নিঃশব্দে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পরতেই পাখি সন্তোর্পনে মুছে নেয়।রাহেলা মুখ টা উচু করে বলে,”বলবে না কি হয়েছে?”

“চাচি উনি আমার সাথে কাল রাত থেকে কথা বলেন না।কি কারণে বলেন না তাও বলে না। আরে বাবা আমায় না বললে বুঝব কি করে আমার দোষটা কোথায়।আমার একটুও ভালো লাগছে না তার এমন ব্যবহার”, বলতে বলতে কেঁদে ফেলে পাখি
রাহেলা নিঃশব্দে হেসে বলে,” এতো সামান্য কারণে এতো কষ্ট পেও না বউ মা।শানবাবা তোমায় কতোটা ভালোবাসে তা তুমি আন্দাজও করতে পারবে না”
“ওসব কিছু না চাচি।বিয়ের পর ফুরিয়ে যাচ্ছে সব”,ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে পাখি।

🌸🌸

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় তবুও শানের একটা কল বা মেসেজ পায় না পাখি।এমনি সময় প্রতিটা মূহূর্তে খোঁজ নেয় অথচ আজ!

রাহেলা সারাদিনে চেষ্টা করেও পাখিকে খাওয়াতে পারে নি।ঘরের দরজা লাগিয়ে গুমোট হয়ে ছিলো সারাদিন।অবাক হয় পাখি কারণ, ইনায়াহ্ও আজ একটি বারও ডাকতে এলো না।
“সবাই কেমন যেন পর পর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন”
ভাবতেই কান্না চলে আসে পাখির।

ইদানিং খুব সামান্য কষ্টেই চোখে জল আসছে পাখির।শানের সামান্য নীরবতাও তার সহ্য হচ্ছে না।নিজেকে অসহায় লাগছে তার।নিচে ড্রয়িং রুমে শর্মিলার কন্ঠ শুনে কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করে কি বলছে! কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না পাখি।তাই অগত্যা নিচে নামতে বাধ্য হয়।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখে খান সাহেবও এসেছে আজ।মূহূর্তেই নিজের সব কষ্ট লুকিয়ে পা চালিয়ব দ্রুত নেমে আসে।

সালাম জানিয়ে বসতে দেয় তাকে।পাখি হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরে ঢুকলে শর্মিলা বলে,”এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই বউ মা।আমরা বাড়িরই লোক।আমাদের সাথে অতিথির মতো আচরন করো না।আমার খারাপ লাগে”
শর্মিলার কথাটায় কিছু একটা যেন ছিলো। যেটা পাখির মন খারাপের মূহূর্তটাকে আরো বিষিয়ে তোলার জন্যে যথেষ্ট।

শর্মিলার কথা শেষ হতেই শান আব্দুল্লাহ্ সহ হাতে বড় বড় দুটো বাজারের ব্যাগ সমেত বাড়িতে ঢোকে।পাখির দিকে না তাকিয়েই পাশ কেটে শর্মিলার কাছে গিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয়।লিস্ট মোতাবেক সব বাজার আছে কিনা সব দেখতে বলে।
“আম্মা,দেখো তো সব টা ঠিক আছে”
কিছুক্ষন পর শর্মিলা দেখেশুনে বলে,”হ্যা বাবু সব ঠিক আছে”

শর্মিলার সাথে কথা বলে শান আবারও পাখিকে পাশ কাটিয়ে খান সাহেবের কাছে এসে বসে।কুশল বিনিময় করে ক্ষীণ সিস বাজিয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।শানের যাওয়া দিকে অপলক চেয়ে থাকে পাখি।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।
“মা “,ক্ষীনস্বরে ডাকে পাখি।শর্মিলা জবাব না দিয়ে মাথা উচু করে পাখির দিকে তাকায়।
” আমি কিছু করব?”
“এভাবে বললে, কেউই তোমাকে কাজ করতে দিবে না মা।বাড়ির বউ রা এভাবে কাজের অনুমতি নেয় না।নিজে থেকে এসে করে”, স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো বলে শর্মিলা।
অথচ কথাগুলোর ঝাঁঝে পাখির ভিতর পুড়ে যাচ্ছে যেন।নিজেকে সমান্য একটু ধাতস্ত করে বলে,” সেদিন কাজ করতে চাইলাম দিলেন না তো, তাই আজ…..”
“রাহেলা ও কি এভাবেই মুখে মুখে তর্ক করে?”
পাখির কথার মাঝেই শর্মিলা পাখিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।রাহেলা কিছু না বলে মাথা নিচু করে কাজ করে।

সবার আজকের ব্যবহার পাখিকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীতে সে কতোটা অসহায়।এতোদিন পর আবারও নিজেকে এতিম লাগছে।
জলভরা চোখ নিয়ে দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে পাখি।ইনায়াহ্’র দিকে তাকাতেই ইনায়াহ্ মলিন মুখে ওর দিকে চেয়ে খান সাহেবের সাথে খেলায় মত্ত হয়।
“তোমার জন্যেই তো এ বাড়ির সাথে, এ বাড়ির মানুষদের সাথে আত্মার বাঁধনে বাঁধা পরলাম। আর সেই তুমিও আজ!”… আপনমনে কথাগুলো আওরিয়ে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে যায় পাখি।ঘরে ঢুকেই বিছানায় নজর ফেলে বুঝতে পারে শান বাম পায়ের উপর ডান পা দিয়ে শুয়ে শুয়ে ফোনে কি যেন টাইপ করছে আর মিটমিট করে হাসছে।

পাখি অপলক চোখে সেদিকে চেয়ে থাকে।শান একবার তাকিয়ে মুখের হাসিটা বিলীন করে আবারও ফোনে ব্যস্ত হয়।
” কি এমন হলো হঠাৎ?সবাই এতো পরিবর্তন হলো কেন?কি করেছি আমি?”,ভেবেই চোখের পানিটা মুছে নেয়।
ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে বলে,”এভাবে মানব না আমি।আমাকে এভোয়েড করার কারন বলতেই হবে আজ”
শানের দিকে পা বাড়াতেই শান ফোন টা কানে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

পাখির পা থেমে যায় । আর এক মূহূর্ত দেরি না করে দৌঁড়ে ঢুকে পরে ওয়াশরুমে।শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পরে।দুই হাতে হাঁটু জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে ফেলে।পানির শব্দের কাছে কান্নার শব্দটা খুবই ক্ষীণ শোনা যায়।তবুও শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না পাখি কাঁদছে।
ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ভাবে,”খুব বেশি হচ্ছে নাতো”

পুরো এক ঘন্টা পর দরজা খুলে বাহিরে চলে আসে পাখি।শান তখনও শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।পাখি ভেজা শরীরে পা টিপে কাবার্ডের কাছে এসে ড্রেস বের করে নেয়।
তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে দুদিন আগেও শান তার জামা কাপড় কাবার্ড থেকে বের করে দিতো।সেই জামা ওয়াশরুমের ভিতরে দিতে কতো খুঁনসুটি।যতোক্ষন না শানকে ভিতরে ঢুকতে দিতো ততোক্ষন জামা হাতে পেত না পাখি।
ভাবতে ভাবতে কাবার্ডের দরজা ঠাস করে লাগিয়ে আবারও ওয়াশরুমে চলে যায়।

পাখির ফোলা ফোলা লাল চোখ দুটো নজর এড়ায় না শানের।সেদিকে তাকিয়ে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তার।বিড়বিড় করে বলে,”কেন যে এই রনির কথা শুনতে গেলাম!এভাবে কষ্ট পেতে হতো না আমার বউটাকে”
শানের ভাবনার মাঝেই পাখি শুকনা কাপড় পরে বের হয়ে আসে।ভিজা কাপড় গুলো বেলকোনিতে মেলে দিতেই বুঝতে পারে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
পাখি ঘরে ঢুকতেই শানের চোখে চোখ পড়ে যায়।শান নজর সরিয়ে বলে,”এতোক্ষন গোসল করলে কি জ্বর বাঁধানোর জন্যে?”
পাখি কোন উত্তর না দিয়ে বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে।

এমনি সময় শান কখনোই তাকে এভাবে শুয়ে থাকে দিতো না।কখনো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে থাকত,কখনো কাঁধে মুখে গুঁজে দিতো নয়ত কখনো বুকে নিয়ে শুয়ে থাকত। আর আজ!
ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় পাখি।

ঘুম ভেঙ্গে যায় পেটের ক্ষিদেয়।আর যেন সহ্যই হচ্ছে না তার। সারাদিনে একটা দানাও পেটে পরে নি পাখির।চোখ পিটপিট করে খুলে দেখে পুরো ঘর আবছা ড্রিম লাইটের আলোতে ছেঁয়ে গেছে।ঘড়ির দিকে চোখ ফেলে দেখে ১১.৩০ বাজে।
“এতোক্ষণ ঘুমাইলাম!”
ভাবতে ভাবতেই বিছানা ছাড়ে পাখি। ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেখে শানের ফোনটা বালিশের কাছে অথচ শান নেই।চারদিকে চোখ বুলিয়ে ফোনটা দ্রুত হাতে নেয়।
“তখন উনি কেন হাসছিলো ওভাবে”

ফোনের প্যাটার্ন পাখির নামের প্রথম অক্ষর।সেটা পাখি জানে।সে অনুযায়ী লক খুলতে গিয়ে অবাক হয় পাখি। কারণ প্যাটার্ণ ভুল দেখাচ্ছে।ভিতরে কষ্টের পাহাড় গড়ে ওঠে মূহূর্তেই।সে দৃশ্য শান দরজার আড়াল থেকে দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না।

বিছনায় ফোনটা ছুড়ে ধীরপায়ে নিচে নেমে আসে।এতোক্ষণে কারোরই জেগে থাকার কথা নয়।তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে ঘরে ঘরে সবাই জেগে আছে।পাখি ড্রয়িং রুমের লাইট জ্বালাতেই অবাক হয়ে যায়।থ হয়ে চেয়ে থাকে চারিদিকে।রঙ্গ বেরঙ্গে লাইটে সাজানো পুরো ঘর।ড্রয়িংরুমের মাঝ বরাবর সুন্দর করে গাঁদা ফুলের পাপড়িতে লেখা,”শুভ জন্মদিন মনি”
হঠাৎ মনে পড়ে, “আজ তো ২৩ শে ডিসেম্বর”
আপনা-আপনি মুখে হাত চলে যায় পাখির।পা টিপে ফুলের মাঝখানে রাখা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতেই মাথার উপর রাখা ঝাড়বাতিটা শব্দ করে দুলে ওঠে।মাথা তুলে তাকায় পাখি।হাজারও ফুলের পাপড়ি ঝপঝপ করে গড়িয়ে পরে পাখির গায়ের উপর।ফুলের সুবাসে ছেঁয়ে যায় পুরো ঘর।মূহূর্তেই দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটায় ঢংঢং শব্দ করে ওঠে।
“২৪ তারিখ পরলো তবে”

“হ্যাপি বার্থ ডে মনি”, বলতে বলতে এগিয়ে আসে বাড়ির প্রতিটা সদস্য। পিছন ফিরে ঠোঁট টিপে কান্না সংবরন করার চেষ্টা করে পাখি।শর্মিলা সামনে এসেই বুকে জড়িয়ে নেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,” শুভ জন্মদিন বউ মা।”
রাহেলা এসে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে, “আমাদের সকলের মধ্যমনি”

পাখি হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারে না।শর্মিলার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।অভিমানী স্বরে বলে,”ভেবেছিলাম আমায় বুঝি পর করে দিলে”
শর্মিলা হেসে বলে,”তোমায় পর করার সাধ্য কার আছে মা?এতো বড় কঠিন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে নেই।”

এরপর একে একে সবাই পাখিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।রাখি আর রেহানা হককেও সবার মাঝে খুঁজে পায় পাখি।সবাই সবার মতো নানান উপহার দিচ্ছে পাখিকে।ইনায়হ্ ঘুমু ঘুমু চোখ দুটো টেনে টেনে তুলছে।সেদিকে চেয়ে হেসে ফেলে পাখি।কোলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বলে,”এতো রাত জাগতে হবে না মা। তুমি ঘুমাও”
ইনায়াহ্ নাকোচ করে বলে,”না আমি তোমায় উইশ করব তো মুন সাইন”
“আচ্ছা”,
ইনায়াহ্’র কথায় হেসে ফেলে সবাই।

সবাই আছে কিন্তু কাঙ্খিত সেই মানুষটাই নেই যাকে খুঁজে চলেছে পাখির চোখ।আশপাশে চোখ বুলাতেই শর্মিলা কানে কানে বলে,” আমার ছেলেকে খুঁজছো বুঝি?”
থতমত খেয়ে পাখি বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে।
শর্মিলা স্বগতোক্তি করে বলে,”আছে।আগে আমাদের সাথে সময় কাটাও তারপর না হয় আমার ছেলেকে খুঁজে নিও”
লজ্জায় কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে পাখির।

কেক কেটে সবার সাথে হালকা কিছু খেয়ে নেয় পাখি।অনুষ্ঠান শেষে রনি চলে যায় রাখি আর রেহানাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে।শর্মিলা চলে যায় ও বাড়িতে।রাহেলা ইনায়াহ্’কে শুয়ে দিতে চলে যায়।এতো সময়ের মাঝে একবারও শানকে খুঁজে পায় নি পাখি।সারাদিনের অভিমান খুব গাঢ় হতে থাকে।

এতো আয়োজনের মাঝেও খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে পাখির।সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। দরজায় পা রেখে সামান্য ভিড়িয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই গলার কাছে ওড়নায় টান পড়ে।আবছা আলোয় হকচকিয়ে ওঠে পাখি।শুকনো ঢোক গিলে বলে, “কে?”
একটা মৃদু হাসির শব্দ কানে ভেসে আসে পাখির।সে শব্দটা পাখির চেনা।মানুষটাকে ঠাওর করতে পেরে অভমানে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে ।ওড়না টা রাগে হেচকা টান দিয়ে দুই কদম এগিয়ে যেতেই চুলে টান পরে।
“ঢং ছাড়েন।আমার ব্যথা লাগছে”,দাঁত কিড়মিড় করে কথাটা বলে পাখি।

তৎক্ষনাৎ পাখিকে একদম নিজের মুখোমুখি নিয়ে আসে শান।চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেয় পাখি।চুল চেপে ধরা শানের হাতটা চেপে ধরে পাখি।
কপালে গাঢ় উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে চোখ মেলে তাকায় পাখি।চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে তার।দুইহাত বুকে ঠেলে দিতেই শান আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলে,” হ্যাপি বার্থ ডে জানপাখি”
“বা* পাখি”, বলে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেয় ।

শান শব্দ করে হেসে পিছনে গিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়।পাখি মাত্র এক ইঞ্চির দূরত্বে শানকে বুঝত পেরে আরেকটু সরতেই গলায় কোন কিছুর অস্তিত্ব টের পায়। ততোক্ষণে শানের হাত গলার পিছনে চলে যায়।গলায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে মোটা একটা চেইন পরিয়ে দেয় শান।স্তম্ভিত হয়ে যায় পাখি।শান গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।পাখি আবারও হাতদিয়ে চেইন টা স্পর্শ করে দেখে স্বর্নের মোটা একটা চেইন।

শান ওকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে একটা লাল বক্স থেকে মোটা দুটো হাতের চুড়ি বের করে মুচকি হেসে হাতে পরিয়ে দেয়।এরপর পিছনে গিয়ে চুল সরিয়ে কানের দুল দুটো খুলে নতুন গড়িয়ে আনা ঝুমকো জোড়া পরিয়ে দেয়।পাখি অবাক চোখে শানকে দেখে বার বার।এবার শান সামনে এসে বসে বলে,” শুভ জন্মদিন জান”
“লাগবে না এসবের।জুতো মেরে গুরুদান”
“ভালোবাসি তো”
“সারাদিন বিনা কারণে চোখের জল ঝড়িয়ে এতোসব আমার চাই না ডাক্তার সাহেব”, ছলছলে চোখে করূন কন্ঠে বলে ওঠে পাখি।
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,” তোমায় একটু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।বিলিভ মি, তোমায় ইগ্নোর করার বুদ্ধি রনির।কিন্তু ভাবতে পারি নি তোমার এতোটা কষ্ট হবে”

পাখি কিছু না বলে সারাদিনের জমানো অভিমানটা উগড়ে দেয়। শ্রাব্য অশ্রাব্য শ’খানিক গালি দেয় শানকে।শান মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সেসব শুনে বলে,”বাহ্ তোমার মুখে এই গালি গুলো এতো মিষ্টি লাগছে কেন জান!”
পাখির রাগ আরও বেড়ে যায়।দাঁত কিড়মিড় করে শানের দিকে এগিয়ে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়।
দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথ সহ্য করে শান।

হঠাৎ হুশ ফিরতেই পাখি সরে আসে। চেয়ে দেখে সামনের আট টা দাঁতের প্রতিচ্ছবি যেন জ্বলজ্বল করছে।অপরাধ বোধ জেগে ওঠে মনের মাঝে। হাত বাড়িয়ে জায়গা টা ছুঁতেই শান মুচকি হেসে বলে,”রাগ কমেছে?”

পাখি বিছানা ছেড়ে উঠে গহনা গুলো খুলতে খুলতে বলে,”আর কোনদিন এমন করলে আমি দূরে চলে যাবো”
“যেতে দিলে তো।”, পাখির হাত থামিয়ে দিয়ে বলে শান
পূনরায় বলে,” খুলো না। থাকুক একটু।দেখি ”

পাখির হাত থেমে যায় মূহূর্তেই।
“যেদিন হারিয়ে যাব সেদিন এভোয়েড করার কাউকেই পাবেন না ”

“কথাটা যা বলেছো আর কোন দিন বলো না। আমি বাঁচব না জান”

চলবে……