#আসক্তি২
পর্বঃ৪৪
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
দেখতে দেখতে চলে আসে রাখি-রনির কাঙ্খিত সেই দিন গুলো।আর মাত্র পাঁচটা দিনই বাকি।রাখির মাঝে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। প্রতিটা মেয়ের মাঝেই বিয়ের আগে এমন অনুভূতি জাগা দোষের কিছু নয়।ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে পাওয়া, তার সম্পর্কিত সকল মানুষকে আপন করে নেওয়া,তার ভালো লাগা মন্দ লাগা সম্পর্কে পূঙ্খানুপুঙ্খ ধারনা রাখা সকল কিছুর একটা মিশ্র অনুভূতি জাগে মনের মাঝে।এই কয়দিন রনির সাথে ঘোরাঘুরি করা,সময় কাটানোর পরেও কেন জানে না রাখির মনে আলাদা এক জড়তা কাজ করছে।রনির সামনে যেতেই কেমন যেন লজ্জায় আড়ষ্ট হয় রাখি।
আজ আমেরিকা থেকে রনির মা বাবা আসার কথা।বিয়েতে তাদের পূর্ণ অভিমত রয়েছে।খুশি খুশি ছেলের পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়েছে তারা।তাদের আগমনেরই বন্দোবস্ত চলছ বাড়িতে।
এদিকে প্রেগন্যান্সির ২ মাস পার হয়ে ১০ দিন চলে গেলো পাখির।কিন্তু দিন দিন পাখির শরীরের অবস্থা আরো অনেক অবনতি হচ্ছে।পানি ছাড়া কোন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না তার।পাখির দিকে তাকালে ভিতরে মুচড়ে ওঠে শানের।কিছুতেই রুচি ফিরছে না পাখির।কিছু ঔষধ এনেছে তাতেও কাজ হচ্ছে না যেন।
শানের ধারনা হয়ত ঘরবন্দি থাকার ফলে এমন হচ্ছে।তাই তো বাড়ির সমস্ত কাজ ফেলে পাখিকে নিয়ে ছুটে চলে লং ড্রাইভে ;একাকিত্বে, নিরিবিলি কোন পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে।
রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট স্থানে গাড়িটা পার্ক করে রাখে শান।হেঁটে চলে সামনে। বিস্তৃত সবুজ মাঠ।চোখ যতোদূর যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। শহুরের যান্ত্রিক জীবনে একটু টুকরো শান্তির খোঁজে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসে এখানে।দূর্বল চিত্তে শানের হাত জড়িয়ে সামনে হাঁটছে পাখি।কিছুদূর এগিয়ে কোলাহল থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে শান।পাখিকে পাশে বসিয়ে পানির বোতল টা এগিয়ে দেয়।
“ভালো লাগছে?”, চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করে শান।
খুব ধীরে চোখের পলক ফেলে ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে পাখি হ্যা বোধক জবাব জানায়।
পাখির হাতদুটো হাতের মুঠোয় ভরে শান বলে,” কি নিয়ে এতো দূঃচিন্তা করছো পাখি?”
পাখি চকিতে মাথা তুলে তাকায়।চোরা দৃষ্টিতে এক নজর দেখে নজর সরিয়ে নেয় শানের থেকে।
“ককই, কিকিসের চিন্তা?”, জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে পাখি।
শান স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,” এতোটা পর করে দিচ্ছো কেন আমায়?আমি তো এমন পাখিকে চাই নি।কেমন যেন মুর্ছা গেছো পাখি”
শানের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে পাখি বলে,”সেরকম টা নয় আসলে”
“তাহলে কি রকম?মেডিসিন কখন কাজ করে না জানো যখন ব্যক্তি খুব দূঃচিন্তায় থাকে।আর তুমি সারাদিন মনমরা হয়ে থাকো কেন?ইদানিং হিসেবের বাহিরে কথাও বলছো না।কেন পাখি?নাকি আমারই ভুল হলো তোমায় ঘরে থাকতে বলাটা”
“আপনি খামোখাই দূঃচিন্তা করছেন, নিজেকে ব্লেইম করছেন।এরকম কিছুই না।”
করূন চাহনীতে শান পাখির দিকে তাকায়।চোখের পাতায় চুমু এঁকে বলে,”তাহলে বলো সঠিক কি?”
“আয়ান ভাই ফোন দিয়েছিলো”
এই একটি বাক্যই যথেষ্ট শানের রাগের মাত্রাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিতে।চোয়াল শক্ত হয় মূহূর্তেই।দাঁতে দাঁত পিষে রাগতস্বরে বলে,”ও কেন তোমায় ফোন দেবে?”
কম্পিত চোখ দুটোয় শানের দিকে তাকায় পাখি।শান চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড পর স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসে বলে,”আয়ান কেন ফোন দিয়েছিলো পাখি?আর তোমার নম্বরই বা কোথা থেকে পেলো?”
“তা তো জানি না।তবে আমার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি ও চাচ্ছে”,দূর্বল কন্ঠে জবাব দেয় পাখি।
” হোয়াট?”,অবাক হয়ে প্রশ্ন করে শান।
“হুমম,খুব হম্বিতম্বি করলো।জানেন ডাক্তার সাহেব আমার ওসব সম্পদের দরকার নাই।আমি ছেয়েছিলাম এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসার নামে জমি গুলো দান করব। কিন্তু ও যেভাবে……”
বাকি কথা শেষ করতে পারে না পাখি।মূহূর্তেই শানের চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে।
“কবে ফোন দিয়েছিলো ও?”
“এইতো দিন সাতেক হবে ”
“সাত দিন হবে আর তুমি এখন আমায় বলছো?তাও তো বলতে না আজ যদি ভালোভাবে জিজ্ঞেসাও না করতাম”
শানের কথায় পাখি মাথাটা নিচু করে নেয়।
মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ঘাসের ফুলগুলো ছিড়ে হাতে নেয়।
শান পাখির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”এতোটা কেয়ারলেস তুমি কবে হলে পাখি?একটি বারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না।আর ভিতরে ভিতরে গুমরে মরছো দূঃচিন্তায়।আই সি…এই জন্যে তোমার শরীর এতো খারাপ করছে ”
পাখি মাথা উঠিয়ে বলে,”আপনি আমার যত্নে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলেন।তারপর রনির বিয়ের আয়োজনে…. এসবের মাঝে বলে আর আপনার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে চাই নি।আর দূঃচিন্তা থেকেও নয় কয়েকদিন থেকে শরীর টা বড্ডো দূর্বল লাগছে ডাক্তার সাহেব।কলিজাটা হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে ওঠে খুব।”
“তা দূঃচিন্তা করে কি সল্যুশন বার করলে শুনি একটু!”, তেড়ছাভাবে বলে শান
পাখি কিঞ্চিত শব্দ করে হেসে বলে,”আমি সম্পদ চাই,সম্পত্তি নয়।কারণ সম্পদ নয় অবিনশ্বর, সম্পত্তি নয়।আমার সকল সম্পদ তো আপনি”
“তারমানে তোমার জমিজমা ওদের নামে দেবে?”
“তাছাড়া তো উপায় দেখছি না”
“উপায় মানে?এমন কি বলেছে আয়ান যে তুমি আর কোন উপায়ই দেখছো না?”, রাগে চিবিয়ে চিবয়ে কথাটা বলে শান।
পাখি শানের গালে হাত বাড়িয়ে আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,” আমি কোন কিছুর বিনিময়ে আপনাকে হারাতে পারব না।চামড়া ঝুলে যাওয়ার রুক্ষ সময় গুলোতে আমার আপনাকেই চাই,বৃদ্ধ বয়েসের একাকিত্বেও আজকের মতো আপনাকেই চাই ডাক্তার সাহেব”
শানের আর বোঝার বাকি থাকে না আয়ান পাখিকে কি নিয়ে ভয় দেখিয়েছে।ভয়ে মুর্ছা যাওয়া পাখিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আমার কিচ্ছু করতে পারবে না তোমার আয়ান ভাই।জানোই তো গর্জনে বর্ষণ কম।আর আয়ানের ধারনাও নেই তোমায় ফোন দিয়ে এসব বলার জন্যে ওর কতোটা খারাপ অবস্থা করব আমি”
“দয়া করে এমন কিছু করবেন না প্লিজ।ওরা খুবই সাংঘাতিক।আমি বরং সকল কিছু ওদেরকে খুশি খুশি দিয়ে দিবো”,অনুরোধের স্বরে বলে পাখি।
” দিয়ে দেবে মানে?কেন দেবে তুমি?দেয়ার হলে সেখানেই দেবে তুমি, যেখানে দিতে চাইছো।আয়ান রায়ানকে এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই পাখি”
“আছে, অনেক কিছুই আছে।আপনি জানেন না।আপনি প্লিজ এ ব্যপারে কিছু বলবেন না”
শান আর কিছু বলতে পারে না।চুপচাপ পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে মনে মনে আওরায়,”পাখিকে মেন্টালি হার্ট করার জন্যে হলেও তোমায় কঠিন একটা শাস্তি পেতে হবে আয়ান”
🌸🌸
“আজ বাদে কাল, কাল বাদে পরশু,পরশু বাদে তার পরশু,তার পরশুর পরের দিন আমাদের বিয়ে রাখি আর তুমি এখন এতো লজ্জা পাচ্ছো মানে?”,
রাখির পাশে বসে আছে রনি।ডানহাত টা ধরতেই রাখি সিটকে সরে যায়।মনের মাঝে অন্যরকম এক লজ্জা অনুভূত হয়।
” কি হলো, কিছু বলছো না যে”,আরেক দফা প্রশ্ন করে রনি
রাখি মিনমিন করে বলে,”কিছু না”
“বাই দ্য ওয়ে,তুমি সেই রাখি তো যে আমার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করত?”,সন্দিহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে রনি।
ঠোঁটের কোণে লজ্জার রেশ ফুটিয়ে নজর এদিক সেদিক করে রাখি।
” আশ্চর্য রাখি!এসব ন্যাকামি আমার একদমই ভালো লাগছে না।আমি এরকম রাখিকে চাই না। তুমি আগের মতো হয়ে যাও।জাস্ট ডিজগাস্টিং লাগছে আমার”,বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় রনি।
“ঐ ব্যাডা ঐ, তুই কোন জাতের মানুষ রে?তুই জানিস না বিয়ের সময় মেয়েরা এমন লজ্জা পায়?বুঝিস না কেন লজ্জা এসে যায় আপনাআপনি?”, রাগে রনির কলার দুইহাতে চিপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে রাখি।
রাখির এমন রাগান্বিত রূপ দেখে রনি আশপাশ তাকিয়ে দেখে সবার দৃষ্টি তাদের দিকে।শুকনো ঢোক গিলে কলার চেপে রাখা হাতদুটো সন্তোর্পনে ছাড়িয়ে নেয়।দুই হাত খোলা করে সামনে এগিয়ে রাখিকে বলে,” ওকে ওকে, কুল কুউউল”
“এহন কিসের কুল কুল করতাছোস?এতোক্ষন কুল ছিলাম তোর সহ্য হইছিলো না, না?রাখি এমন হইছো কেন?ওমন হইছো কেন?আগের মতো হও। এসব বলে বলে তো মাথা খাচ্ছিলি আমার”, মুখ ভেঙ্গিয়ে শেষের কথাটা বলে রাখি।
ওর এমন কথা বলার ভঙ্গিতে রনি হেসে কুটিকুটি হয়।মুখে হাত চেপে হাসি সংবরনের চেষ্টা করে।ব্যর্থ হয়ে শব্দ করে হেসে দেয় রনি।রাখি রেগে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অন্যদিকে হাঁটা ধরে।
” আরে বেইবি শোন না প্লিজ”,বলতে বলতে পিছনে দৌঁড় লাগায় রনি।
চট করে রাখির হাত ধরে ফেলে।রাগে হাতটা সরিয়ে নিতেই এক টানে নিজের বুকের কাছ নিয়ে আসে।হকচকিয়ে মাথা নিচু করে নেয় রাখি।বাঁকা চোখে চারদিকে এক পলক দেখে রনিকে চাপাস্বরে বলে,”কি করছেন এসব?সবাই দেখছে”
রনি ওর কথায় কান না দিয়েই পলকহীন তাকিয়ে দেখে চলেছে রাখিকে।কপালে চুমু এঁকে দেয় ফট করে।রাখি অবাক চোখে তাকায় রনির দিকে।
“তোমার বাঘিনী রূপটাই আমার কাছে ভালো লাগে, লজ্জাটা ঠিক যায় না তোমার সাথে”
রনির কথায় না চাইতেও ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত হাসি ফুটে ওঠে রাখির।
🌸🌸
“আয়ান, ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু কাম ব্যাক। আই ডোন্ট নিড ইউ।আই’ল ডিভোর্স ইউ”, ফোনে আগত এমন কথায় দুমড়ে মুচড়ে যায় আয়ান।রাগে চোখে জল জমা হয়।
নিজেকে সংবরন করে বলে,” প্লিজ জলি ট্রাই টু….”
কথাটা পূর্ণ না করতেই কল কেটে যায়।রাগে ক্ষোভে ফেট পরে আয়ান।এতোদিনের সাধনা বুঝি তার বিফলে চলে যায়।তীরে এসে তরী ডুববে নাতো!
অনেক চেষ্টার পর জলিকে পটিয়ে বিয়ে করেছিলো আয়ান ;শুধুমাত্র সে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার লোভে।কিন্তু দুই মাস আগে দেশে ফিরে কোন একটা কাজে আটকা পরে সে।আর এরই মাঝে আয়ানের উপর থেকে সমস্ত ইন্টারেস্ট চুকে যায় জলির।ডিভোর্স দিতে উদ্যত হয়।
নিজের চুল নিজেরই ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আয়ানের।কোন কালেই এ দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে থাকার ইচ্ছে তার নেই।তার ইচ্ছে লন্ডনের নাগরিকত্ব লাভ।উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই এমন ইচ্ছের জন্ম হয় আয়ানের মনে।কিন্তু সবটা যেন বিগড়ে যায় জলির একটা কথাতেই।দুহাতে মুখ চেপে মাথা নিচু করে বারান্দায় বসে থাকে আয়ান।
এমন সময় চোখের সামনে এসে দাঁড়ায় একজোড়া পা।ভ্রু কুচকে চোয়াল শক্ত করে নেয় আয়ান।কারণ এ বাড়িতে কারোরই এমন সাহস নেই, যে এভাবে আয়ানের সামনে এসে দাঁড়াবে।রক্তচোক্ষু নিয়ে ফট করে মাথা তোলে আয়ান।চোখ মুখ খিঁচে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কথা থেমে যায়।
“আরে ডাক্তার যে..হঠাৎ কি মনে করে শ্বশুর বাড়িতে পা রাখা?”, বলতে বলতেই সিনা টানটান করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে গম্ভীর স্বরে বলে,”কি মনে করে?”
শান শান্ত স্বরে চেয়ে দেখে নেয় আয়ানকে।স্পষ্টকন্ঠে প্রশ্ন করে,”পাখিকে কি বলেছো?”
“কি বলেছি?”, একরোখা জবাব আয়ানের।দেখতে মন্দ না বেশ সুদর্শনই বলা চলে আয়ানকে।
কালো কুচকুচে নেত্রদুটি বড় বড় করে আবার বলে,”তা কি বলেছি?”
উচ্চতায় শানের থেকে দু তিন ইঞ্চি লম্বা হবে আয়ান।ধূসর শ্যামবর্ণ গায়ের রং।সুঠাম দেহের বলিষ্ঠ পুরুষ।তার মাঝে এমন কিছু আছে যা মেয়েদেরকে আকৃষ্ট করার মতো ক্ষমতা রাখে।বেশ ফিটফাট গঢ়নেরই বলা চলে। চুলগুলো ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলে সেট করে নেয়।সামনের দাঁত কপাটি বের করে একগাল হেসে দেয়।কতো অমায়িক সে হাসি!
আগাগোড়া দেখে নিয়ে শান বলে,”সৌন্দর্যের আড়ালে যে একজন মানুষ কতোটা নোংড়া,লোভী হতে পারে তা তোমায় দেখে বোঝা উচিত।”
রাগে চোখ বন্ধ করে নেয় আয়ান।ফট করে ঠোঁট এলিয়ে বলে,”এমনিই মেজাজ খুব তিরিক্ষি আছে, না পেচিয়ে যা বলতে সিলেট এসেছো সরাসরি বলো”
“এরপর যদি আর কোনদিন পাখির সাথে যোগাযোগের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করো তো এই সিলেটেই তোমায় গেড়ে দেবো। মাথায় ঢুকিয়ে নাও”,আয়ানের চোখে চোখ রেখে আগুনঝড়া দৃষ্টিতে বলে শান।
আয়ান পূর্বের ন্যায় হেসে চলেছে অনবরত।নাকে কয়েকটা ছিঁচকে শব্দ করে পা দিয়ে মেঝেতে পরপর কতোগুলো ঘষা দেয়।
” বলা শেষ?”
আয়ানের প্রশ্নে শান কোন জবাব দেয় না।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে আয়ানের।
মেঝেতে একটা তেলাপোকা দেখতেই আয়ান নিচু হয়ে ফট করে সেটা হাতে ধরে নেয়।হাত উচু করে শানের সামনে এনে বলে, “কিছু জিনিস টুকরো টুকরো করে নষ্ট করার মাঝে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। বলতে পারো পৈশাচিক একটা আনন্দ পাওয়া যায়”
খুব গাম্ভীর্যের সাথে কথাটা বলে তেলাপোকাটার ডান পা টা আস্তে করে টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলে আয়ান।বাকি পা আর পাখাগুলো ঝাপটিয়ে উড়ানোর চেষ্টা করে নিরীহ তেলাপোকাটা।
এরপর বাম টা টেনে ছিড়ে ফেলে।এভাবে পাখা দুটো ছিড়ে নিচে ছেড়ে দেয়।তড়পাতে থাকে অর্ধমৃত তেলাপোকা।আয়ান মাথা উচু করে শানকে চোখের ইশারায় সেটাকে দেখতে বলে।শান ধীরে চোখ নামিয়ে দেখতেই আয়ান সেটাকে পায়ের নিচে পিষে ফেলে।
শানের বুঝতে বাকি থাকে না আয়ান ঠিক কতোটা ভয়ানক।আর কি বোঝাতে চাইল!
এক কদম এগিয়ে আয়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”স্টে এওয়ে ফ্রম হার।নয়ত তেলাপোকার থেকেও জঘন্য পরিণতি করব তোর।”
শান নিজের ডান হাতটা আয়ানের মাথার বাম দিকে ঠেকিয়ে পূনরায় বলে,”মগজে ঢুকিয়ে নিস”
বলে গজগজ করে বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসে শান।
ঘরের ভিতর থেকে সবটাই দেখছিলো রায়ান।কোথাও না কোথাও সে আয়ানের আধিপত্য চায় না।পুরো সম্পত্তির ভোগ দখল নিজে একা করতে চায় রায়ান।বিদেশ থেকে যতোবারই আয়ান ফিরেছিলো ততোবারই কোন না কোন ভাবে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে রায়ান।কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়।আয়ানের বিচক্ষন মস্তিস্ক তার আগেই সাবধান হয়ে যায়।কিন্তু আয়ান আদৌ জানতে পারে নি তার নিজের আদরের ছোট ভাইই তাকে মারার চেষ্টা করে।আয়ানকে সরিয়ে দেয়ার চিন্তা থেকেই রায়ান সবটা শুনে ভিতরে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলো।বাহিরে বের হওয়ার প্রয়োজন বোঁধ করে নি
শানের যাওয়ার দিকে চেয়ে ঠোঁটে সিস দিয়ে গানের সুর তোলে আয়ান।পকেটে দুইহাত গুঁজে নিজের অবস্থানেই কয়েকপাক ঘোরে।এরপর বারান্দায় রাখা কাঠের চেয়ারটার সামনের পায়ায় সজোড়ে একটা লাত্থি মেরে সেটাকে ফেলে দেয়।
রাগে গা কাপঁছে আয়ানের।পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলেও সে ব্যথা এই মূহূর্তের রাগের কাছে নিছকই সামান্য অনুভূতি মাত্র।
কম্পনরত শরীরটা পিছনের সোফায় এলিয়ে মুখে অস্পষ্ট স্বরে বলে,”আজ সবই কুফা।মাদার**”
🌸🌸
“হ্যালো,কোথায় আপনি? সেই সকাল বেলায় বেড়িয়েছেন!এদিকে কাকা কাকিরা এসে গেছে তো”,ফোনের ওপাড় থেকে বলে পাখি।কন্ঠে তার বিচলিত ভাব।
এক বাক্যে শান জবাব দেয়,” সিলেট”
“মানে!”, একপ্রকার চিৎকারে কথাটা বলে পাখি।
শান পাখিকে আশ্বস্ত করে বলে,” কাজে এসেছিলাম, কাজ শেষ।ফিরে যাচ্ছি”
আয়ানের সাথে কথা বলে বাড়ির গেইটে পা রাখতেই পাখি কল করে।পাখির সাথে কথা শেষ করে ফোনটা পকেটে ভরতে ভরতে গাড়ি স্টার্ট করে শান।
চলবে…….