#আসক্তি
পর্বঃ২৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“পাখির যে প্রবলেম টা ছিলো সেটা তেমন জটিল কিছুই ছিলো না।গ্রামের গাঁইয়া ভুত হয়ত জীবনেও প্রেম ট্রেম করে নাই, ছেলে মানুষের সংস্পর্শে আসে নাই তাই হয়ত একঘেয়েমির কারনে রোগ টা হয়েছে।ও সুস্থ হয়েছে আরো অনেক আগে আমার যা ধারনা আরকি।তারপর তো তোর সাথে প্ল্যান টা করা।নেক্সট যখন শান আমার চেম্বারে আসলো তখন থেকেই তো ওদের জটিলতা শুরু।”-নীরা এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে কিছু কাগজে চোখ বুলাচ্ছিলো।
মাথা তুলে আবার বলে,”তাই, দূঃচিন্তার কিছু নেই আপা , জাস্ট চিল ”
“তুই তো বললি পাখি আর শানের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হবে অথচ ওরা দিব্যি সুখে দিন কাটাচ্ছে।তুই জানিস ওদের মধ্যে সবটা আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতোই নরমাল?”
“হোয়াট???কি বলতে চাইছো তুমি? ”
“যা তুই বুঝেছিস সেটাই বলতে চেয়েছি”
“হাউ ইজ দিস পসিবল!আমি যে মেডিসিন গুলো দিয়েছি এবং শানকে যা যা বলেছি তাতে কোনদিনও ওদের মাঝে সবটা ঠিক হবে না আপা।বরং দূরত্ব বাড়বে। সবটা ক্লিয়ার করে বল আমায়”-নীরার চোখে মুখে উপচে পরা রাগের বলিরেখা টনটন করছে।
“ঈদের আগের রাতে ওরা শানের বাগান বাড়িতে ছিলো।ভোরবেলা সবার আড়ালে বাড়িতে ঢোকে।ঈদের দিন সকাল বেলা পাখির চুল ভেজা পেয়েছি আমি… “-সামিহা আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় নীরার দিকে চেয়ে।
নীরা দুহাতে চুল মুঠি করে ধরে মেঝেতে চেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,”আপা আমি কি তবে এবারও শানকে হারালাম”
প্রলাপ বকতে বকতে হেচকি তুলে কেঁদে ফেলে নীরা।
দরজাটা জোড়ে ধাক্কা মেরে ভিতরে কারো ঢোকার শব্দে দুজনই চমকে তাকায় সেদিকে।
সামিহার চোখ যেন কোটর থেকে বাহির হবার উপক্রম।কারো মুখে কোন কথা নাই।শানের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে,”বলেছিলাম না আমার ওয়াইফের ট্রিটমেন্টের গড়িমসি করলে তোমার খবর আছে,তারপরেও করলে তাই না!এতোটা সাহস তোমার নীরা”-নীরার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে শান।
এরপর পা এগিয়ে সামিহার কাছে গিয়ে গালে সজোরে থাপ্পোর বসিয়ে দেয়।
“হাউ ডেয়ার ইউ”-রক্তচক্ষু নিয়ে প্রশ্ন করে সামিহা
“অনেক সম্মান পেয়েছো,সে বার সংসার টা বাঁচিয়ে দিয়ে বড্ডো ভুল করেছি। তোমার স্থান তো আমাদের বাড়ির বাইরেই হতো।ক্লাসলেস,শেইমলেস, নির্লজ্জ,বেয়াদব মহিলা।”
শান আবার রাগে চিল্লিয়ে বলে,”লজ্জা করলো না একটা মেয়ের অসুস্থ্যতা নিয়ে গেইম খেলতে।”
“নীরা তুই না ডাক্তার, নিজের পেশেন্টের কন্ডিশন নিয়েও গেইম খেলা ছাড়লি না?অবশ্য তোর মতো মেয়ের থেকে এর বেশি এক্সপেক্ট করাই ভুল ছিলো।”-রাগে শানের হাতের রেখা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে।
সামিহা গালে হাত দিয়ে স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।নীরা অনবরত কেঁদেই চলছে।ফল মিষ্টি গুলো মেঝেতে ছুড়ে শান আবার বলে,”এই গুলো তোর জন্যে এনেছিলাম।কারণ আমার বউয়ের সুস্থতার পিছনে তোর অনেক অবদান ছিলো বলে।কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম তুই তো কাল নাগিন।যেকোন সময় নিজের ফর্মেই ফিরবি।”
“তোর কি মনে হয় আমার আর পাখির পাঝে দূরত্ব তৈরী করলেই তোকে আমি আবার এক্সেপ্ট করব!আরে তোকে তো সেদিনই নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি আর এখন এক্সেপ্ট করব ভাবলি কি করে!”-নীরার চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে শান বলে।
শানের গর্জনে পুরো বিল্ডিং যেন কেপে কেপে উঠছে।সামিহা শানের রাগের ধরন জানে তাই এই মূহূর্তে সে নিশ্চুপতাকেই গ্রহন করেছে।
“আহঃশান লাগছে আমার ছাড়ো”-
“এর থেকেও বেশি লেগেছিলো আমার পাখির।যখন ওকে তোর কথায় এভোয়েড করেছিলাম।যখন ওকে কলেজে সবার সামনে এড়িয়ে চলে এসেছিলাম।হসপিটালে রিনির সামনেও ওকে জ্বালিয়েছি।বার বার মেয়েটা আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছিলো আমি দূরে দূরে রেখেছি।ও আড়ালে অনেক কাঁদতো জানিস!আর আমি কিছুই করতে পারতাম না।তুই জানিস, শুধুমাত্র তোর মতো প্রস্টিটিউটের কথায় আমি ওকে কতোটা হার্ট করে ফেলেছি!ওকে না বলেই ঢাকা চলে গেছিলাম।পুরো তিনটা দিন কোন যোগাযোগ রাখি নি।এই তিনদিনের প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমার মনে আছে নীরা।আমাকে ছাড়া পাখির কাটানো প্রত্যেকটা মূহূর্ত আমি পাখির ভাবির থেকে খবর নিয়েছি।ভিডিও কলে নীরবেই দেখে গেছি মেয়েটার অসহায়ত্ব।কার জন্যে? তোর জন্যে।তোর মতো নাগিনের কথায় এসব করতে বাধ্য হয়েছি আমি।অবশ্য তোর এসবে গেইমে পাখি আমার আরো কাছে চলে এসেছিলো”-শান নীরার চোয়াল আরো শক্ত করে চেপে আগুন চোখে জবাব দেয়।দ্রুত হাত নামিয়ে গলা চেপে ধরে।
“খুন করে ফেলবো,জাস্ট খুন!আমায় আগের শানে ফিরতে বাধ্য করিস না।কেটে হাজার হাজার টুকরো করে কাক শকুনকে খাওয়াবো।কেউ বিন্দুমাত্র টের পাবে না।
নীরার কাশ উঠে যায় চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।গোঙ্গানির শব্দ ঘরের প্রতিটা দেয়ালে বারি খাচ্ছে।সামিহা দৌড়ে এসে শানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”তুমি কি পাগল? এভাবে কেউ কাউকে ধরে”
“হুসসসসস একদম না।ডোন্ট টক ।লজ্জা করলো না নিজের এতো নোংড়া মনের পরিচয় দিতে!মেয়টা তো তোমাকে অনেক সম্মান করত ভাবি!”-
শান তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে একটু থেমে লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আবার বলে,”বাড়িতে চলো দেখো কি করে আমার ভাইয়ের জীবন থেকে তোমাকে ছুড়ে ফেলে দেই।এই, কি যোগ্যতা আছে তোমার আমার ভাইয়ের সংসার করার।অন্য কোথাও বিয়ে করলে ভাইয়া তো এতোদিনে বাচ্চার বাবা হতে পারত আর তুমি কি দিতে পেরেছো বলোতো।নেহাত আমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে!আমার মা, আমার পরিবার তোমায় কোনদিনও সে নিয়ে খোঁটা দিয়েছিলো?বরং তোমাকে সন্তানহীন ভেবে আমার মা এক্সট্রা ভালোবাসে তোমায়। তিনি যদি জানতে পারে তোমার কুকীর্তির কথা কি হবে ভাবতে পারছো? শোন ভাবি নিজের সীমার মাঝে থেকো ঠিক গত পাঁচটা বছর যেভাবে ছিলে।নয়ত আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না, জাস্ট কেউ না”-সামিহার দিকে তেড়ে গিয়ে বলে শান।
বাচ্চার কথা শুনে সামিহার চোখ দিয়ে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পরে।রাগের আগুনে জ্বলে পুরে যাচ্ছে ও।
নিজের মনেই বলে,”আজকের দিনটা খুব মনে থাকবে শান।সুদে আসলে উসুল করব”
শান নীরার দিকে কটাক্ষের চোখে চেয়ে আবার বলে,”আরেকটা কথা শোন তোর দেয়া নির্দেশে আমার এভোয়েডে পাখি আমার অনেক কাছে চলে এসেছে।মানে বুঝিস তো!ক্লিয়ার করছি শোন দিনটা স্মরনীয় করে রাখতে পাখি ঈদের আগের রাতকে বেছে নেয়।সারাটা রাত আমরা একসঙ্গে থেকেছি।বুঝতে পারছিস তো।সে আমায় পাগলের মতো ভালোবাসে।”
“আর তুমি?”-নীরা এলোমেলো নজরে তাকায় শানের দিকে।
“আমি আমার বউকে অনেক অনেক ভালোবাসি।কান খুলে শুনে রাখিস।”
নীরা দুহাতে কান চেপে ধরে থরথর করে কাপতে কাপতে বলে,”শান চুপ করো, চুপ করো প্লিজ!”
“হাহাহা….নীরা! ভেবেছিলাম তোমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা রাখব তা আর হলো না।”
“দ্বিতীয় বার তোমাকে পাওয়ার লোভটা সামলাতে পারি নি শান।দেখো আজ আমি কতোটা একা।না আছে স্বামী সংসার না অন্যকিছু।আমি অনেক বড় ভুল করেছি শান।আমায় মাফ করে দাও।”-কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পরে শানের পায়ের কাছে।
“আজ তোমার যা অবস্থা তার জন্যে তুমি নিজেই দায়ি।কর্মফল বুঝো, সেটাই পাচ্ছো এখন।
তুমি আমার সাথে যা করেছো তার ক্ষমা অনেক আগেই পেয়ে গেছো কিন্তু আমার বউয়ের সাথে যা করলে তার জন্যে তোমায় ক্ষমা করলে ক্ষমারাও লজ্জা পাবে।সো নো ক্ষমা। হউ হ্যাভ টু রিপেন্ট নীরা।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”-পা জড়িয়ে ধরা নীরাকে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে শান ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায়।
সামিহা নীরা দুজনেই স্তম্ভিত।শুধু নীরার কান্নার শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে।চোখের পানি দুহাতে মুছে সামিহাকে বলে,”আপা পাখির ফোন নম্বর দে আমায়”
মানুষ যখন ধ্বংসের পথে একবার পা বাড়ায় তখন পুরোপুরি নিঃশ্ব না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হয় না।তেমনি নীরারও মনোভাব আজ প্রবল হিংসাত্বক।ধ্বংসের জঘন্য খেলায় মেতেছে সে।
🌸🌸
শানের বাড়ি ফিরতে ফিরতে ১১.৩০ বেজে যায়।কয়েকটা দরকারি কাজ সেড়ে এলোমেলো পায়ে বাড়িতে ঢোকে।সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে নিজের ঘরে যায়।দরজা থেকেই বুঝতে পারে পাখি ঘুমিয়ে গেছে।ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে এসে হাতের ব্যাগটা পাখির মাথার কাছে রেখে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শান।মুখ গুঁজে দেয় ঘারে।হঠাৎ ঘারে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোঁয়ায় নড়েচড়ে ওঠে ঘুমন্ত পাখি।
“আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি পাখি, সরি।আমি যদি জানতাম সবটাই নীরার গেইম প্লান তবে কখনোই তোমায় এতো কষ্ট পেতে দিতাম না।সরি ব্ল্যাক এঞ্জেল”-মনে মনে বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।পাখি পিটপিট করে চোখ খোলে।ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,”কখখন এলেন?আমি অনেক্ষন ছিলাম আপনি…..”-আর কিছু বলতে পারে না পাখি। ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।চোখের পাতা টেনে তুলে আবার দেখে শানের দিকে।
শান ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,”ঘুমাও
কষ্ট করে চোখ খুলতে হবে না”
শানের কথায় পাখি আরো মিইয়ে যায়।ছোট্ট পাখির ছানার মতো শানের বগল ঘেঁষে ঘুমিয়ে যায়।
রাত ২ টা বাজে।ঘড়ির কাটায় শব্দ হলো।বেঘোরে ঘুমাচ্ছে চারিপাশ।এসি চলছে তবুও দরদর করে ঘেমে চলছে পাখি।অস্ফুট স্বরে গোঙ্গানির আওয়াজ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে।ওর কান্না মিশ্রিত গোঙ্গানিতে শানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।উঠে বসে পাখিকে দুহাতে ঝাঁকাতে থাকে।
“পাখি, এই পাখি কি হলো তোমার।চোখ খুলো”
পাখির কোন পরিবর্তন নেই।আগের মতো কেঁদেই চলেছে। শান দ্রুত উঠে ওয়াটার পট থেকে পানি এনে ঝপটা মারে পাখির মুখে। ধড়ফড়িয়ে ওঠে পাখি।
“সার্জন সাহেব, ও আমার সার্জন সাহেব।আমি কাউকে দিবো না”-বলতে বলতেই উঠে বসে পাখি।শান গিয়ে পাশে বসে পানি এগিয়ে দেয়।পাখি ঢকঢক করে সবটা পানি গিলে অপলকে তাকায় শানের দিকে।
আকষ্মাত শানের গলা জড়িয়ে হুহু স্বরে কেঁদে ফেলে।শান বুঝতে পেরেছে পাখি কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছে,”রিল্যাক্স পাখি।এইতো আমি! কি দেখেছো বলো?নিশ্চই বাজে স্বপ্ন দেখেছো?”
“আমায় ছেড়ে কোত্থাও যাবেন না।কোথাও যেতে দিবো না আপনাকে।নিজের জানের থেকেোও বেশি ভালোবাসি আমি আপনাকে”
শান স্তম্ভিত আজ।কি বলে শান্তনা দেবে ভেবে পায় না।
ঠিক কতোটা ভালোবাসলে নিছক স্বপ্নের কারণে এতো কষ্ট পায় কেউ তা শানের ভাবনার সীমায় ঘোরপাক খাচ্ছে।
জড়িয়ে নেয় পাখিকে নিজের বুকের সাথে।
কিছুসময় পর পাখির কান্না থেমে যায় কিন্তু হিচকি থামে না।শানের বুকে গুটিশুটি মেরে আধশোয়া হয়ে থাকে।
“আমায় কখনো ছেড়ে দেবেন নাহ তো সার্জন সাহেব?
“কি যা তা বলছো,বিয়ে করেছি কি ছাড়ার জন্যে”
“যাইই ঘটে যাক আমায় কখনোই মিথ্যে বলবেন না সার্জন সাহেব।আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে ঘৃনিত জিনিস হলো মিথ্যে বলা।আমি মিথ্যেকে ঘৃনা করি।মনে রাখবেন কোন কিছুকে গোপন রাখাও মিথ্যের শামিল।”-
পাখির হঠাৎ এমন কথায় গলা শুকিয়ে আসছে শানের কোন জবাব দিতে পারছে না সে।
“কি করব, পাখিকে নীরার ব্যপারে বলব?”-মনে মনে ভাবতেই অজানা ভয় গ্রাস করে শানকে,”পাখি যদি আমায় ভুল বোঝে,ছেড়ে যায় কি করব আমি,কি করে থাকব ওকে ছাড়া।পাখি তো আমার নেশা “-
পাখির ডাকে হুশ ফেরে শানের।
“কি ভাবছেন এতো”-পাখি মুখটা তুলে জানতে চায়।
শান শুকনো স্বরে জবাব দেয়, “কিছু না,ঘুমাও।আবার তো সকালে উঠবা।”
“ঘুম আসছে না আর।স্বপ্নে দেখলাম ঘুমন্ত আমিকে রেখে আপনি অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে ধোঁয়াচ্ছন্ন একটা ঘরে ঢুকে গেলেন।সত্যি যদি তাই হয়…..! ”
শান পাখিকে আলগা হাতে ধরে কাপা কাপা গলায় বলে,”ওসব কিছু না।স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় তাই না?”
শানের বিবেক নাড়া দিচ্ছে পাখির স্বপ্নের কথা শুনে।
“আচ্ছা পাখি,আমায় ভালোবাসো?”
“অনেনননক ”
“বিশ্বাস করো আমায়?”
“নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আর নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি”-বলেই শানের চোখের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে বলে,”হঠাৎ এমন কথা যে!”
“তোমায় আজ কিছু বলতে চাই”
“হ্যা বলুন নাহ”
“আমার অতী……..”-পাখির মুখটা দেখে থেমে যায় শান।”
নিষ্পাপ একটা নারী অবয়ব।কষ্ট পাবে, ভেঙ্গে যাবে। আবার গড়তে পারব তো”-আনমনেই ভাবে শান
“কি হলো, কি যেন বলতে চাইলেন যে!বলেন না।এর আগেও অনেকবার এমন করে বলেছিলেন।”
শান নিজেকে কোনমতে সামলিয়ে বরে,”ভালোবাসো, বিশ্বাস করো অথচ এখনো আপনি থেকে তুমিতে আসতে পারলে না।ভেরি স্যাড”
মাথা নিচু করে পাখি জবাব দেয়,”সময় হলেই বলব”
পাখির দিকে চেয়ে শান মনে মনে আবার ভাবতে থাকে,”নীরা কি বলে দেবে সবটা বা ভাবি?না, ওতো সাহস ওদের কারোরই নেই।তাহলে ওকে ওর ক্যারিয়ার হারাতে হবে আর ভাবিকে সংসার।আর নীরা তা কখনোই করবে না”-মুচকি হেসে পাখিকে আরো জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।
🌸🌸
পাখি সকাল সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে শানকে ডেকে দেয় নামাজের জন্যে।এরপর নিজে নামাজে দাঁড়ায়। নামাজ শেষ করে কুরআন পড়তে থাকে।ততোক্ষনে শান নামাজ শেষে ফিরে এসে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরে।
পিছনে দুহাত এলিয়ে দেয়ায় শানের হাত গিয়ে পরে পাখির বালিশের কাছে রাখা গতকালকের ব্যাগটার উপর।
“এই মেয়েটা এতো খাম খেয়ালি কেন!কাল কিছু জিনিস এনেছি তা দেখারও সুযোগ পায় নি”-মুচকি হেসে ভাবতে থাকে।
পাখি কুরআন রাখতে রাখতে শান বলে,”ঐ গাধি”
পাখি ওর দিকে ফেরে ভ্রুকুচকে ফেলে।
“এদিকে আসো”-শান দুই আঙ্গুলের ইশারায় কাছে ডাকে।
পাখি এগিয়ে যেতেই ওকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসায় শান।
“এসব দেখো নি, ইডিওট!”-প্যাকেট টা দেখিয়ে কপোট রাগ করে বলে শান।
পাখি কিছু না বলেই প্যাকেট টা খুলতে শুরু করে।
ভিতরে বেশ কয়েকটা সুন্দর সুন্দর থ্রিপিচ রাখা।মুখ হা করে শানের দিকে চায়,”এসব কি? আর এতোগুলো কেন!”
“সব গুলোই ভালো লেগেছে এনেছি।আর তুমি এখন থেকে সালওয়ার কামিজ পরবা।শাড়ি পরবা না।শাড়ি পরলেই…..”
“শাড়ি পরলে কি? “-পাখি সন্দিহান চোখে জানতে চায়।
শান ওর কোমড়ে সদ্য জন্মানো হালকা মেদের ভাঁজে আঙ্গুল ছুঁয়ে বলে,”তা তোমায় বুঝতে হবে না ”
পাখির সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।চোখ বন্ধ করে রাখে।শান ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের কোলে বসায়।কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে, “আমি যেদিন বলব সেদিন শাড়ি পরবা তার আগে নয়”
“বজ্জাত লোক একটা”-বলেই পাখি শানকে সরিয়ে চলে আসে বাহিরে।
চলবে…..