আসমানী পর্ব-১৮

0
183

#আসমানী
#পর্ব_১৮
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

“ঐ গাজরা টা আমায় কিনে দিন।আর হ্যাঁ,ঐ যে ঐটাও।”
একটা আর্টিফিশিয়াল আর একটা ন্যাচারাল ফুলের গাজরার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে আহ্লাদী স্বরে আসমানী নাহিদকে বলে।
নাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”তোমার দুটোই লাগবে?একটা নাও।”
“নাহ।দুটোই লাগবে আমার।”
“কি করবে দুটো দিয়ে?একটা তো নষ্টই হয়ে যাবে।আমি ফুল কিনি না কখনোই।ন্যাচারাল ফুল কেনা মানেই লস প্রজেক্ট।”
আসমানী কপট রাগ দেখিয়ে বলে,”আপনি যথেষ্ট ভালো রকমের কিপ্টুস বেডা।এইজন্য আপনার কাছে মনে হয় লস প্রজেক্ট।হোক লস প্রজেক্ট।তবুও আপনি কিনে দিবেন।”
আসমানীর কথায় নাহিদ মুখ টিপে হাসতে থাকে।তবুও সে দুটো গাজরাই কিনে দেয় আসমানীকে।আসমানী ন্যাচারাল ফুলের গাজরাটা নিয়ে নাহিদের হাতে দিয়ে বলে,”পড়িয়ে দিন।”
নাহিদ আমতা-আমতা করে বলে,”আমি?আমি কি পারি নাকি?”
“পারেন না তো বিয়ে করেছেন কেন?আজব মানুষ।খুবই সাধারণ।আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
নাহিদ পারবোনা পারবোনা করেও শেষ পর্যন্ত একটু চেষ্টা করতেই পেরে গেল।আসমানী তার মাথায় টুকা মেরে বললো,”কাজ না করার বাহানা শুধু।”
“আর কি কি লাগবে তোমার?”
“আরও অনেক কিছু।”
“যেমন?”
“বলে শেষ করা যাবে না।আর আমি টিউশনির বেতন পেয়েছি।সবার জন্যই টুকটাক জিনিস কিনবো।আর একটা মুরগী,বাসমতী চাউল কিনতে হবে।”
“কেন?”
“আজকে বাসায় গিয়ে আম্মাকে বিরিয়ানি রান্না করতে বলবো।”
“ওয়াও।তুমিই কি সব কিনে নিবে নাকি?মানে সম্পূর্ণ ট্রিট তুমিই দিবে নাকি?”
“অবশ্যই।”
নাহিদ টিটকারি করে বলে,”বাব্বাহ!বউয়ের থেকে ট্রিট পাবো আজকে।সেটা তো আমার সাত জনমের ভাগ্য।”
আসমানী ভ্রু কুঁচকে বলে,”খবরদার,আমাকে নিয়ে মজা করবেন না।ফল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“ওকে,ম্যাডাম।ক্ষমা চাইছি আমি।”
“এতো সহজে ক্ষমা পাওয়া যায় না।আগে আমাকে ফুসকা খাওয়ান।তাহলে ক্ষমা করার কথা ভাবা যাবে।”
নাহিদ একটা ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে বলে,”নিশ্চয়ই,নিশ্চয়ই।আপনার কথাই তথাস্তু।”
★★★
“উফফ!ভাবী তুমি এত্তোগুলো কিউট।কি কিউট কিউট জিনিস এনেছো তুমি আমার জন্য।” আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলে নাতাশা।
আসমানী হাসিমুখে বলে,”তোমার পছন্দ হয়েছে নাতাশা?আমি এই সবগুলোই তোমার জন্য এনেছি।ট্রাই করে দেখো।”
“সত্যিইইই?সবগুলো আমার?আমি তো ভাবতেই পারছি না।”
নাতাশার চিৎকারে বিরক্ত হয়ে নাবিল বলে,”চেঁচামেচি বন্ধ কর ইডিয়ট।মেজাজ গরম লাগে।সবকিছু নিয়ে এতো আদেখলাপনা করিস কেন রে?শুধু কি তোর জন্যই এনেছে?আমাদের সবার জন্যই তো এনেছে।এই দেখ,আমার পারফিউমের গন্ধটা শুঁকে দেখ।কি দারুন। তোর জন্য তো পারফিউম নেই।”
নাতাশা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,”আমি তো গোসল না করে থাকতে পারিনা।তাই আমার পারফিউমের কোনো প্রয়োজনও নেই।যারা গোসল করে না।গায়ে যাদের গন্ধ,তারাই পারফিউম নেয়।”
অপমানে চোখমুখ লাল হয়ে যায় নাবিলের।কিন্তু নিজেকে শান্ত করে বলে,”এই দেখ,চুলে নেওয়ার জেল ও এনেছে।তোর জন্য চিটচিটে তেল।এই তেল নিয়ে তুই ঘুমাবি আর তোর বালিশ নষ্ট হবে।”
নাতাশা বলে,”হ্যাঁ,দুই দিন পরপরই তো দেখি কে যেন ভাইয়ার ঘরে গিয়ে জেল চুরি করে চুলে মাখে।কি যেন নাম মেয়েটার?দিশা নাকি ফিশা?তার সাথে দেখাও করতে যায়।আমার সাবান চুরি করে গোসল করে।ইদানীং আমার সাবান দিয়ে পাঠা পাঠা গন্ধ আসে।ওয়াক থু।”
এইভাবে সবার সামনে নাতাশা যে হাটে হাড়ি ভেঙে দিবে,সেটা কল্পনাও করেনি।সে বারবার এদিক সেদিক তাকাতে থাকে।আসমানী ভাবী মুখ টিপে হাসছে।ভাইয়া সরাসরি তাকে জিজ্ঞেস করে,”আমার জেল তাহলে তুই চুরি করিস?”
নাবিল আমতা-আমতা করে বলে,”না.. মানে..ইয়ে..মানে….”
নাহিদ হাহা করে হেসে বলে,”নিতেই পারিস তুই।আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।বউ আছে এখন।এখন আর কাউকে ইমপ্রেস করতে হয় না।তুই নিয়ে যাস আমার টাও।”
নাতাশার কথায় যতোটা না লজ্জা পেয়েছিল নাবিল,তার থেকেও বেশি লজ্জা পেল ভাইয়ের কথা শুনে।
আসমানীকে উদ্দেশ্য করে সে বলে,”ভাবী।জিনিসগুলা অনেক ভালো হয়েছে।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।অনেক ধন্যবাদ।তোমরা থাকো।আমি এই একটু আসছি আর যাচ্ছি।”
নাতাশা বলে,”কোথায় পালাচ্ছিস মূর্খ?ফান্দে তো ভালোমতোই পড়েছিস।ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে।থুক্কু নাবিল কান্দেরে।”
নাবিল মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,”আমি মোটেও পালাচ্ছি না।আজকে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।আমি যাচ্ছি দই আর কোনো সফট ড্রিংকস কিনতে।”
নাতাশার চোখমুখ মুহুর্তেই উজ্জ্বল হয়ে উঠে।বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে,”সত্যিই?”
“হ্যাঁ,দেবো তোমাকে।খেও তুমি।”
নাতাশা ওর টিটকারি বুঝতে পেরে নাহিদকে বলে,”ভাইয়া,ও আমাকে খোঁটা দিচ্ছে।আমি ওর টাকায় কেনা দই খাব না।তুমি কিনে নিয়ে আসো।”
আসমানী বলে,”আজকে আমি ট্রিট দিচ্ছি।সম্পূর্ণ ট্রিট আমিই দিব।না হলে অনেকেই আবার আমাকে নিয়ে মজা করবে।নাবিল,আমার সাথে এসো।আমি টাকা দিচ্ছি।তুমি গিয়ে নিয়ে এসো।”
আসমানী আর নাবিল চলে গেলে নাহিদ বোকার মতো ভাবে,”মেয়েদের দেখি কিছুই বলা যায় না।কিছু একটা বললেই হয় ছ্যাৎ করে উঠে না হয় কিছুক্ষণ পরপর খোঁটা দেয়।আল্লাহই জানে এই কথার খোঁটা আরও কতদিন সহ্য করতে হবে।”
★★★
পুরো পরিবার একসাথে খেতে বসেছে।আজ আসমানী তার শাশুড়ীকেও বসিয়ে দিয়েছে।তারা খাবে আর সে কেন শুধু শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের বেড়ে দিবে?আসমানীর মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা।ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় সে এসেছিল এই বাড়িতে।প্রথমে সবাই ভালোভাবে মেনে না নিলেও তার দুরাবস্থার কথা জেনে সবাই তাকে আগলে নিয়েছিল।সেদিনের পরিবারের সবার অবস্থা আর আজকের অবস্থা আকাশ পাতাল ব্যবধান।আসমানীরও অবস্থা বদলেছে।শুধু যে জিনিসটা বদলায়নি,সেটা হচ্ছে ভালোবাসা।মধ্যবিত্তের পরিবারে এই জিনিসটা সবসময়ই লুকায়িত থাকে।কিন্তু কারও প্রতি কারও ভালোবাসার কমতি থাকে না।
★★★
“চাঁদ টা ভীষণ সুন্দর,তাইনা?”
নাহিদ আসমানীর চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে,”তোমার চেয়ে সুন্দর নয় আসমানী।”
“পাম্প দিবেন না।আমি মোটেও চাঁদের চেয়ে সুন্দর না।”
নাহিদ আসমানীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর আসমানী।চাঁদের গায়ে কলঙ্ক লেপে আছে আসমানী।যেটা তোমার গায়ে নেই।তুমি আমার কাছে একটা পবিত্র ফুলের মতো আসমানী।”
আসমানী হেসে বলে,”ছাদে যাবেন?চন্দ্রবিলাশ করবো আজকে আমরা।”
নাহিদ ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,”নিশ্চয়ই।”
দুজনে যখন একে অন্যের হাত ধরে চুপিচুপি ছাদের সিঁড়িঘরে পৌঁছালো,তখন একটা ঘরের ভিতর থেকে ফিসফিস করে কথা বলার শব্দ আসছে।আসমানী একটু উঁকি দিতেই দেখতে পায় নাবিল সেখানে ফোনে কাকে যেন বলছে,”কালকেই দেখা করবো আমরা জান।কলেজে ঢুকবো না আমরা।তুমি গেটের সামনেই যাবে না।রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়াবে।আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।সারাদিন আমরা রিকশায় ঘুড়ে বেড়াবো।”
আসমানী নাহিদের হাত ধরে টেনে তাকে নিচে নামিয়ে এনে বলে,”তোমার ছোট ভাই তো প্রেম করা শিখে গেছে।তুমি শিখছো না কেন?”
চমকে উঠলো নাহিদ।এই প্রথমবার আসমানী তাকে তুমি বলে ডেকেছে।সে কিছু বলার আগেই আসমানী তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি তো একেবারেই আনরোমান্টিক মশাই।উপরে দেখে এলে ছোট ভাই কি সুন্দর প্রেম করছে আর তুমি বউ পেয়েও কোনো কথা বলছো না।”
নাহিদ বলতে চায় আমি শকড ছোট ভাইয়ের প্রেম দেখে।আরও শকড তোমার মুখের তুমি ডাক শুনে।কিন্তু মুখে বলে,”খুব তাড়াতাড়ি সে আসবে।দেখে নিও আসমানী।খুব তাড়াতাড়ি সে আমাদের মাঝে রাজত্ব করতে চলে আসবে।”
আসমানী ভ্রু কুঁচকে বলে,”কে?কাকে নিয়ে আসবেন আমাদের মাঝে?”
নাহিদ ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,”আমার মেয়ে,আনা।”
আসমানী পরম আবেশে নাহিদের চুল আঁকড়ে ধরে চোখ বুজে বলে,”আমাদের মেয়ে।”
★★★
রাত্রির শেষ প্রহরে নাহিদ আসমানীর খোলা চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,”জীবনটা কেমন গোল,তাই আসমানী।”
“কি রকম?”
“এই যে,তুমি।তোমার সাথে আমার দেখাই হওয়ার কথা ছিল না অথচ তুমিই আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তি।”
আসমানী মৃদু হেসে বলে, “তাই বুঝি?”
“সত্যি।”
“কয় সত্যিই?”
“তিন সত্যিই।”
“ওকে,মেনে নিচ্ছি আমি।”
“মেনে নিতেই হবে।কারণ তুমিও সেটা জানো।”
“তুমিও আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তি।”
নাহিদ এবার বেশ আহ্লাদের স্বরে বলে,”শুনো না আসমানী,একটা কথা বলি।”
“বলো।”
“কালকের মিশনে তুমি না গেলেও চলবে।যেতে হবে না তোমায়।প্লিজ যেও না।”
আসমানী উঠে বসে নাহিদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি যেহেতু যাবে,তাহলে আমিও অবশ্যই অবশ্যই যাব।”
নাহিদ হাল ছেড়ে হতাশ গলায় বলে,”ঠিক আছে।কিন্তু তুমি কথা দাও,তুমি শুধু ব্যাকআপ হিসেবেই থাকবে।প্রমিস করো আমাকে।”
“ওকে।”
“আমার ভয় হচ্ছে আসমানী।”
“এই লাইনে তুমি কি নতুন?”
“নাহ।আমার ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।”
“চিন্তা করোনা।আমি নিজেকে ঠিকই সামলে নিবো।আমার কিছুই হবে না।”
আসমানী মুখে বললেও নাহিদের মনের আশঙ্কা কাটে না।কেন যেন তার মনে হচ্ছে এইবার খুব খারাপ কিছু একটা হবে।খুব খারাপ কিছু।আগে এইরকম কখনোই মনে হয়নি।নিজেকে সান্ত্বনা দেয় নাহিদ।হয়তো আসমানী তার সাথে এই বিপদজনক কাজে যাচ্ছে বলেই তার ভয় হচ্ছে।
★★★
নির্জন রাস্তার পাশে আসমানীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,”সাবধানে থেকো আসমানী।তুমি আমার কাছে আমানত স্বরুপ।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিন্তু নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।”
আসমানী নিজের স্বামীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি ভালোবাসি আপনাকে।ভীষণ ভালোবাসি।বড্ড বেশি ভালোবাসি।”
নাহিদের চোখে পানি চলে আসে।আসমানী তাকে এতো আকুল ভাবে কখনোই এইরকম ভালোবাসার কথা বলেনি।নিজেকে একেবারেই অসহায় মনে হয় তার।সে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই তার বন্ধু আরিয়ান এসে বলে,”কাছাকাছি চলে এসেছে বস।আমাদের যেতে হবে।ভাবীকে এইখানেই রেখে চলো।একজন তো আছেই।ভাবী এখানে সেইফ থাকবে।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাহিদ আসমানীর হাত ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।কিন্তু হঠাৎই একবার পিছনে ঘুরে দেখে আসমানীর চোখে পানি।কোনোভাবেই আসমানী নিজেকে সামলাতে পারছে না।সেই সময়ে নাহিদ বেশ বড়সড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়।এইটাই শেষ।এরপর আর এইরকম কোনো কাজ সে করবে না।আর না এইরকম কোনো কাজে জড়াবে।

“বস,এসে গেছে ধনকুবের সাহেব।এইবার তার ফকির হওয়ার সময় এসে গেছে।”
কোনো কথা আর কেউ বলে না।তাদের দলের সবাই একে একে কালো মুখোশ পড়ে নেয়।হাতে তুলে নেয় লাইসেন্স বিহীন পিস্তল।যদিও এইগুলো কিছু অসাধু ধনকুবেরদের থেকেই কেড়ে নেওয়া।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।লোকটি নির্জন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে আসা মাত্রই তাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রথমে গিয়ে গাড়িটাকে থামায়।ঘাড় ধরে বের করে নিয়ে এসে প্রথমে লোকটির হাত পা বেঁধে ফেলে।এরপর আরিয়ান আর নাহিদ এসে গাড়ির ভিতরে ঢুকতে যেতেই ভেতর থেকে বেশ কয়েকজন তাদের দিকে বন্দুক তাক করে বাইরে বের হয়ে আসে।নাহিদের হাত পা এবার কাঁপতে থাকে।আরিয়ান ইতোমধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাদের সাথে লড়াই করছে।কিন্তু নাহিদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার মনে তখন কেবল আসমানীর চিন্তা।আসমানী তাদের থেকে আর মাত্র একটু দূরত্বেই তার অপেক্ষায় বসে আছে।তার দলের অনেকেই আঁটক হয়ে গেছে।হঠাৎ দুই দলের কোনো একজন লোক বাশিতে ফুঁক দিলে নাহিদের হুশ ফিরে।পুলিশের গাড়ির সাইরেনও শুনতে পায় সে।নিজেকে সামলে নিয়ে তার দিকে বন্দুক তাক করে থাকা লোকটাকে মারতে যেতেই প্রথমে তার পিঠে একটা গুলি এসে লাগে।সে ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে।

চারপাশ যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।শুধু গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই যেন শোনা যাচ্ছে না।নাহিদ বেশ ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছে আরিয়ানের মুখে রক্ত লেগে আছে।কেউ যেন সজোরে ঘুষি মেরেছে।আরিয়ান অবাক দৃষ্টিতে পিছনের দিকে তাকিয়ে আছে।তার দলের বেশিরভাগ সদস্যই পিছনের দিকে তাকিয়ে আছে।সে ধীরে ধীরে পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় তার থেকে হয়তো পাঁচ কিংবা ছয় ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রী তার দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখে মুখে যেমন রাগ,ঘৃণা রয়েছে তেমনি রয়েছে পানি। সে এখনও কাঁদছে।বন্দুকের নল দিয়ে এখনও ধোঁয়া বেরুচ্ছে।তবে কি সেই গুলি করেছে তাকে?নাকি তাকে বাঁচাতে এসেছে?
নাহিদ অস্ফুটস্বরে বলে,”আ..স…মা..নী…তুমি….”

কথা শেষ হয় না নাহিদের।তার আগেই আসমানী তাকে দ্বিতীয় গুলিটি করে তার পায়ে।নাহিদ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।তার চোখে মুখে এখনো অবিশ্বাস ।সে যেন মানতেই চাইছেনা তার আসমানী তার সাথে এমন করছে।সে শুধু বলে,”এইটা কি তুমি আসমানী? আমার প্রাণের সখী আসমানী?”
আসমানী তার দিকে বন্দুক ছুড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমার গোটা পরিবারকে শেষ করেছো তুমি।শুধু আমিই বাকি ছিলাম।আমাকেও শেষ করে দাও।তাহলেই আমার জন্য ভালো হবে।কোনো খুনীর স্ত্রী পরিচয় নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে না।কোনো খুনীকে ভালোবেসে তার জন্য কষ্ট পেয়েও আমাকে মরতে হবে না ধুঁকে ধুঁকে।”

আসমানীর কথাগুলো বেশ অস্ফুট লাগছে নাহিদের কাছে।যেন মনে হচ্ছে বহুদূর থেকে ভেসে আসছে।তবু সে শুনতে পায় আসমানীর বলা কথাগুলো।সে নিজেই নিজেকে বলে,”তোমায় কেন মারবো আসমানী?তুমি তো আমার আসমান।আমার পুরো আকাশই যে তুমি।আমার দুনিয়া তুমি।তোমাকে মারলে আমি বাঁচবো কিভাবে?বিশ্বাস করো আসমানী,আমি তোমার বাবা-মাকে মারিনি।আমি তো তাদেরকে দেখিও নি কোনোদিন।তাদের মারবো কিভাবে?আমি তো শুধু তাদের মেয়েকে চিনি।তাদের মেয়েকে ভালোওবাসি যে ভীষণ।”
চলবে…..