#আয়নামতী
#পর্ব_২৬
#পুষ্পিতা_প্রিমা
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করা অনুরাগ চৌধুরীকে দেখার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভীড়। তাদের মতে স্যার সাদাসিধে, সরল মনের এবং বেশ পরোপকারী একজন শিক্ষক। সাহায্যর জন্য যখনি স্টুডেন্টরা ছুটে এসেছে খালি হাতে কখনো ফিরিয়ে দেননি। তবে তার রাগ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা না থাকলে ভয়ংকর এক ঘটনার কথা ছাত্রছাত্রীদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ১ম বর্ষের এক মেয়ের সাথে অভদ্র আচরণ করায় ৩য় বর্ষের ইংরেজি বিভাগের একটা ছেলেকে লোকসম্মুখে চড় মেরেছেন। এতটা ক্ষেপে গিয়েছিলেন যে ছেলেটাকে অনেক পোহাতে হয়েছিল। মেয়েটার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল লোকসম্মুখে। অভিভাবকদের সাথে ও অনেক ঝামেলা চুকাতে হয়েছিল এরজন্য। থানা পুলিশ কেসফেস অনেক হয়েছিল।
যা এখনকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় না।
কতিপয় সাংবাদিক অনুরাগকে যখন বিদায়বেলায় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে দেয়া হয় তখন সে বলল
‘ আমি যখনই পড়াতে আসি তখনই নিজেকে শিক্ষক ভেবে পড়াই না। আমি তাদের একজন বন্ধু হয়ে উঠি তখন। যাতে তারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে আমাকে এবং আমার পড়াকে। আমি শুধু তাদের শিখাই না, আমি ও তাদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখি। সবার উদ্দেশ্য যা বলব তা হলো,
আমি চাই প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট শুধু মেধাবী নয়, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। সবকিছুর আগে প্রয়োজন মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ।
‘ বিদায়বেলার অনুভূতিটা কেমন?
অনুরাগ বলল,
‘ some feelings that cannot be expressed. Which are unpublished and invisible. That’s it for me.
সত্যি বলতে গেলে আমি এতদিন একটা গন্ডির ভেতর শিক্ষক হিসেবে ছিলাম। কিন্তু আজ থেকে আমাকে এই গন্ডির বাইরের মানুষ আমাকে ও শিক্ষক হিসেবে চিনবে। তাই খুবি এক্সাইটেড এন্ড দিনটা ইনজয় করছি।
‘ কোনো বাজে স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে?
‘ নাহ।
ডোন্ট মাইন্ড স্যার। শুনেছি অনুরাগ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীর লুকায়িত প্রেমিকপুরুষ। এই বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
‘ গুজব শব্দটা বোধহয় এজন্যই আবিষ্কার হয়েছে। আমার কখনো এমনটা মনে হয়নি। আর যদি হয়ে ও থাকে তাহলে বলব এসব তাদের বয়সের দোষ।
‘ প্রফেসর অনুরাগ চৌধুরী রিসেন্ট বিয়ে করেছেন। শোনা গেছে আপনার মিসেস গ্রামের একটি ন্যাশনালে ইউনিভার্সিটিতে ১ম বর্ষে পড়ে। আপনার সাথে কেমন বেমানান হয়ে গেল না?
‘ আমিই তার সাথে বেমানান। সে নয়।
‘ আপনি কেন?
‘ কারণ সে ভীষণ বুদ্ধিমতী আর আমি বোকা। বোকার সাথে বুদ্ধিমতী অবশ্যই বেমানান।
‘ ঢাকা শহরের এত বড় বড় মানুষের সাথে আপনার লেনদেন, যোগাযোগ, উঠাবসা । আপনি গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করলেন কেন?
‘ ফ্যামিলি আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। সো ফ্যামিলির পছন্দ।
‘ আপনার প্রথম স্ত্রী নিয়ে কিছু বলতে পারি।
‘ অবশ্যই, কেন ভয় পাব?
‘ ওনি তো চলচ্চিত্রের একটি জনপ্রিয় মুখ। সম্প্রতি মহিবুল হাসানের সাথে তার ডিভোর্স হয়েছে। আপনার কথাই বলি,যে মানুষটা নিয়ে মানুষ এতটাই পঞ্চমুখ তার সাথে কেন ডিভোর্স হলো কুহেলী সরকারের?
‘ আমার মনে সে উত্তরটা ভালো বলতে পারবে। কারণ তার সাথেই কেন বারবার ডিভোর্স হয়?
‘ আমরা কারণটা জানতে চাই।
‘ সে একজন অভিনেত্রী। আমি তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে তার ক্যারিয়ারে ব্যাড এফেক্ট পড়বে। আমি তা চাই না। সে তার মতো থাকুক।
‘ আপনার বর্তমান স্ত্রী আর আপনার সম্পর্কটা কতটা মজবুত? কুহেলী সরকারের মতো হবে না তো?
‘ যেখানে মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই সেখানে একটি সম্পর্কের নিশ্চয়তা আমি আপনাকে কি করে দেব? তবে এটুকু বলতে পারি। আমি আমার সবটা দিয়ে সম্পর্কটাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করব। তাদের দুজনের মধ্যে তুলনা করতে চাইলে, পাতালে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট আর আকাশের চাঁদের সাথে তুলনা করতে পারেন। অবশ্য সেটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। তুলনাই হয় না।
‘ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে রাজনীতির মাঠে পা দিয়েছেন। মনে কোনো ভয় কিংবা উত্তজেনা কাজ করছে?
‘ ভয় নেই তবে উত্তেজনা এবং সাহস পাচ্ছি। আর জনগণের সাপোর্ট ততটাই পাচ্ছি যতটা আমি আশা করিনি।
‘ কি কি উৎখাত করতে চান এই সমাজ থেকে? আর কি প্রতিষ্ঠা করতে চান?
‘ এই সমাজের আনাচেকানাচে যে ব্যাধিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব উৎখাত করব। পথশিশু, অনাথ,এতিম, আর অবহেলিত মানুষগুলো অধিকার আদায়ের পক্ষে লড়বো। রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি, দস্যুতন্ত্র, সৈরতন্ত্র চলছে সব দূরীভূত করে একটি সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই আমার এই মাঠে নামা।
‘ আপনার জীবনের সফলতার মূল চাবিকাঠি কোনটি?
‘ মায়ের দোয়া।
‘ আর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা ?
‘ সোজাসাপটা না হলে ও, ইন্ডাইরেক্টলি আমার স্ত্রী।
‘ স্ত্রী কি করে অনুপ্রেরণা হয়?
‘ কারণ সে একদিন আমায় বলেছিল। মানুষের জন্য কিছু করতে পারেন না? এই যে এত এত অন্যায় অবিচার হচ্ছে রোজ রোজ, সেসব রুখে দিতে পারেন না। ওই কথাগুলোকে আমি অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি৷
‘ বুঝাই যাচ্ছে পার্ফেক্ট একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছেন? কি নামে ডাকেন আপনি তাকে?
‘ আয়নামতী।
‘ অনেক সুন্দর।
_______________
কাপড়চোপড় নিয়ে আয়না ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে। শেষমেশ বিরুক্ত হয়ে তেজগলায় বলল
‘ আপনি কি আজকে সারাদিন ওখানপ বসে থাকবেন পণ করেছেন? গোসল নিতে এতক্ষণ লাগে। কোথা থেকে কি নোংরা মেখে এসেছেন কে জানে?
অনুরাগ ভেতর থেকে বলল
‘ তোমার সমস্যা কি?
‘ আমি অনেক্ক্ষণ ধরে গোসল করব তাই দাঁড়িয়ে আছি। দেরী হলে গেলে খাবার টেবিলে কথা আমাকেই শুনতে হবে।
অনুরাগ দরজা খুলে দিল। বলল
‘ হয়ে গেছে আমার। প্যানপ্যানানি বন্ধ করো।
আয়না বলল
‘ বের হন তাড়াতাড়ি। বের হচ্ছেন না কেন?
অনুরাগ দরজা খুললো ভালো করে। টান দিয়ে আয়নাকে ভেতরে নিয়ে গেল। উদাম গায়ে আয়না তাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো। বলল
‘ ছিঃ অসভ্য বেয়াদব লোক। ছাড়েন। যান। আল্লাহ আমি এখন নিজের মাথা নিজে ফেটে ফেলব।
অনুরাগ উচ্চস্বরে হেসে দিল। ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে পানির টেপ ছেড়ে দিল। বলল
‘ গরম মাথা তুমি ঠান্ডা হও।
আয়নার চেঁচিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। রাগে সব এক এক করে ভাঙতে ইচ্ছে হলো। অনুরাগ নাক টেনে দিয়ে বলল
‘ আহা রাগ!
আয়না নাক ঝামটে বলল
‘ অভদ্র লোক।
অনুরাগ আবার ও হাসলো। বলল
‘ রাগী বউ আমার। কপাল কপাল। সবই কপাল।
আয়না ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল
‘ আপনি যদি না যান এখন? আমি?
‘ কি করবে তুমি?
‘ চেঁচাবো। চামেলি আপা আর জমিলা আপাকে ডাকব। ডাকি?
‘ ডাকো।
আয়না থতমত খেল। বলল
‘ আপনি ওই,, ভালো হচ্ছে না।
অনুরাগ হো হো করে হেসে বলল
‘ ভাইরে ভাই যাহা পারিবে না তাহা বলিতে যাও কেন?
আয়না তাকে ধাক্কা দিল। বলল
‘ এক্ষুণি বের হয়ে যান। আল্লাহ আমি এখন কি করব নিজে ও জানিনা।
অনুরাগ এসে মুখ চেপে ধরলো তার।বলল
‘ গলার আওয়াজ তো নয় যেন ভাড়া করা মাইক। ফালতু মেয়ে।
আয়নার চোখো আগুন। অনুরাগ মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল। আয়না ভয়ার্ত চোখে বলল
‘ একদম শেষ করে দেব। খবরদার।
অনুরাগ দ্রুত সরে গেল। নাকতুলে বলল
‘ ইয়াক মাছের গন্ধ, পেঁয়াজের গন্ধ। ধুরর রাক্ষসী রান্নাঘর থেকে এসেছ বলবে না।
আয়নার চোখে জল জমে এল। অনুরাগ বলল
‘ ওমা রাক্ষসীর চোখে জল? বাপরে বাপ। আমি গিয়ে সবাইকে বলে আসি।
আয়না ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল তাকে। তারপর ধপাস করে দরজা বন্ধ করলো। চামেলি ঠিক তখনি এসে বলল
‘ চাহেব বৌরাণি কুনহানে গেছে?
‘ গোসল সাড়তে।
চামেলি লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল। বলল
‘ আইচ্ছা মুই যাইতাছি। আবার আসুম।
অনুরাগ তার হাসির রহস্য ভেদ করতে পারলো না। মেয়েমানুষ মানেই রহস্য।
________
নদীটার নাম কানুয়া। নদীর নামানুসারে গ্রামটার নাম ও কানুয়া। নদীর প্রায় দশ বারো মিনিট পথ ফেরোতেই একটি বড় বাসভবন। এটি শায়খ চৌধুরীর। বাড়িটা অনুরাগের নামে। সেখানে বিচিত্র মাল্টিমিডিয়া থেকে একদল অভিনেতা আর অভিনেত্রী এসেছে নাটকের শুটিং করতে। দলে দলে গ্রামের মানুষ ছুটছে শুটিং দেখার জন্য। রূপা ও তার ব্যতিক্রম নয়। লোকজনের ভীড়ে সে ও গেল সেখানে। কুহেলীকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। এই মহিলা এখানে ক্যান আসছে আবার। বেয়াদব।
নাটকের শুটিং শুরু হবে পরের দিন থেকে। নদীর পাড়ে দুই তিনটা সিন নিতে হবে। তারপর গ্রামের কোন এক কুটির বাড়িতে। যেখানের জায়গাটা খুব সুন্দর দেখতে হবে। এবং ছবির মতোই দেখাবে। ডিরেক্টর আজমল খয়রাত খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো আয়নামতীর বাগান নামের একটা বাগান আছে, ওখানে একটি ছোট্ট কুটি বাড়ি আছে। যেটাতে রূপা আর ফজলু মিয়া থাকতো। আজমল খয়রাত দেখতে আসলো। জায়গাটা খুব পছন্দ হওয়ায় ভাড়া চাইলো কয়েকটা দিনের জন্য। আয়নার কাছে খবর এল রহমত মিয়ার হাত ধরে
আয়না শুরুতেই দিতে চাইলো না। ডাবল টাকা দিবে বললে ও না।
কিন্তু শায়লা বেগম বলল
‘ টিভিতে তোমার বাগান দেখা যাইবে নাতবউ। ভালো হবে। রাজী হয়ে যাও।
আয়না রাজী হলো। শর্ত লিখে পাঠালো যাতে বাগানবাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়। কুটিবাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়।
অনুরাগ বাড়িতে আসতেই কানে এল খবরটা। বলল
‘ ভালো। আয়নামতীর বাগান তাহলে এবার নাটকে দেখাবে। ভালো।
আয়না বলল
‘ ভালো তাই দিয়েছি। আপনাকে অত ঘটা করে বলতে হবে না।
অনুরাগ হাসলো। বলল
‘ একা একা ওই বাগানবাড়িতে যাবে না। সাথে রহমত মিয়াকে রাখবে।
‘ কেন? আমি ছোট বাচ্চা নই।
‘ যেকোনো কথাকে অগ্রাহ্য করবে না আয়নামতী। আমি তোমার শত্রু নই যে তোমার ক্ষতি চাইবো?
‘ বন্ধু ও তো নন।
অনুরাগ আর কথা বাড়ালো না। চলে গেল।
_________
বাগানের আগাছা পরিষ্কারের জন্য দুইজন মহিলা নিয়োগ দিয়েছে আয়না। নিজে তো ছিলই। শাড়ির উপর ওড়না পড়েছে। চৌধুরী বাড়ির পেছনে হওয়ায় একদম আনহিতা আর শায়লা বেগমের নখদর্পনে সে। শুটিংয়ের কাজে অনেক মানুষ চারপাশে। কিন্তু অনুরাগ দারোয়ান রাখায় অনুমতি ব্যতীত কেউ বাগানে ঢুকতে পারেনা। তাই আয়নার সমস্যা ও নেই। বাগান পর্যবেক্ষণের সময় মনে হলো কারো সাথে কথা কাটাকাটি চলছে দারোয়ানের সাথে। আয়না সেদিকে এগোলো। দেখলো গলার সাথে ওড়না ঝুলিয়ে সেলোয়ার-কামিজ পড়া একটা মেয়ে। গায়ের কাপড় এতটাই ফিট যে দেখতে বাজে লাগছে আয়নার চোখে। আয়না এগিয়ে গেল। বলল
‘ কি হয়েছে মামা?
দারোয়ান ভড়কে গেল আয়নাকে দেখে। মেয়েটি তাকালো আয়নার দিকে। আগাগোড়া আয়নাকে দেখলো। বলল
‘ তুমি কে?
আয়না উল্টো জিজ্ঞেস করলো
‘ আপনি কে?
মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসলো। হেঁটে কিছুদূর গিয়ে টান মেরে গাঁদাফুল ছিঁড়ে নিল। বলল
‘ তুমি চিনবে না আমায়। বাদ দাও।
আয়না ফিরলো সেদিকে। মনে করার চেষ্টা করলো কোথায় যেন দেখেছে সে এই মেয়েকে। কোথায় দেখেছে?
আয়না কিছু জিজ্ঞেস করলো না মেয়েটিকে। মেয়েটি নিজেই বলল
‘ তুমি আমার ছোট তাই তুমি করে বলছি। কিছু মনে করছ না তো?
আয়না বলল
‘ কি করে বুঝলেন?
‘ বুঝে গিয়েছি। আমার চোখ অনেক গভীর।
‘ তোমার বিয়ে কবে হয়েছে?
‘ বেশিদিন নয়। কেন?
‘ এমনিই বলছি।
‘ বাগানটা তো অনেক সুন্দর। তোমার নাম কি?
‘ আফসানা আহমেদ আয়না।
‘ আয়নামতীর বাগান কেন? আয়নামতী কে ডাকে?
আয়না সাইনবোর্ডটার দিকে তাকালো। আয়নামতীর বাগানবিলাস। উফফ ওই লোকটা তাকে মেরেই ছাড়বে। এসব দেওয়ার কি দরকার ছিল ?
‘ কি হলো চুপ কেন? তোমার স্বামী আদর করে ডাকে বুঝি?
আয়নার গলায় কথা আটকে গেল। বলল
‘ আপনি বোধহয় নাটকদলের সাথে এসেছেন?
‘ হ্যা। কথা ঘুরাতে তো ভালোই জানো। পিচ্চি তবে অনেকটা ম্যাচিউর।
‘ আমি পিচ্চি?
‘ হ্যা। আমার ঠিক চার পাঁচ বছরের ছোট হবে তুমি।
‘ ওহহ।
‘ তোমরা গ্রামের মেয়ে, তাই লেখাপড়া না করে শুধু বিয়ে আর বিয়ে। বিয়ে ছাড়া কিছুই বুঝোনা তোমরা। আমার এটাই ভালো লাগেনা।
‘ আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। প্রথম বর্ষ।
পিছু ফিরে আবার আয়নার দিকে তাকালো মেয়েটি। বলল
‘ তাই নাকি? ডিফারেন্ট। তুমি খুব সুন্দর। অভিনেত্রী হতে পারতে। সুযোগ আসলে কি হবে?
‘ নাহ।
‘ কেন?
‘ আমার আম্মা আব্বা পছন্দ করবে না। আমার ও পছন্দ নয়। আবার অপছন্দ এমন ও নয়। আমি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। রক্ষণশীল পরিবারের বউ। তারা এসব পছন্দ করবে না। আমি কারো অপছন্দের কাজ করব না।
তোমার হাজবেন্ড কি করে?
আয়না বলার সময় থামলো। পরে বলল
‘ শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদ।
‘ ভালোই। তোমার স্বামী কয়টা বিয়ে করেছে?
‘ আপনি কি করে জানলেন? প্রশ্নটা তো ব্যক্তিগত।
‘ আমি সব জানি। কয়টা করেছে বললে না তো। তুমি আছ নাকি আর ও অনেকে আছে।
আয়না বলল
‘ কিসব বলছেন? আপনি কি কি ওনাকে চেনেন?
মেয়েটি হেসে ফেলল। আরও কিছু বলার আগে বাগানে অনুরাগ ঢুকে এল আয়নামতী ডেকে ডেকে। কুহেলীকে দেখে চোখদুটো স্বাভাবিকের চাইতে বড় হলো। কপাল কুঁচকে গেল। মেজাজ গরম হলো। আয়না বলল
‘ আমি যাচ্ছিলাম।
অনুরাগ এসে ধরলো আয়নার হাত। টেনে নিয়ে গেল। কুহেলী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। আবার আরেকটি ফুল ছিঁড়লো। বলল
‘ এই মেয়ের নামই তাহলে আয়নামতী!
আয়না হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
‘ বলদের মতো টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আশ্চর্য! আমার উপর সব জোর কাটান। নাকি আপনার সব বউয়ের সাথে? আর কয়টা বিয়ে করে রেখেছেন আপনি? আমি কত নাম্বার? আর ও কয়টা করবেন । আপনার মতো লম্পট বেয়াদব, আর অসভ্য মানুষ খুবই কম দেখেছি।
অনুরাগ নিজেই আয়নার হাতটা ঝেড়ে ফেলে দিল। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল।
আয়নার চোখে তখন জল। শেষমেশ এমন চরিত্রহীন লোকই তার কপালে জুটলো?
চলবে,,,,
#আয়নামতী
#পর্ব_২৭
#পুষ্পিতা_প্রিমা
বাড়িতে পা রাখতেই আয়নাকে মুখোমুখি পড়তে হলো অনিমার। ক্রোধান্বিত চেহারা তার। আয়নাকে বলল
‘ ভাই রেগে গিয়েছে কেন? কি হয়েছে তোমাদের?
আয়না বলল
‘ সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার । আপনি আর কিছু জানতে না চাইলে খুশি হব।
অনিমা আর কিছু বলতে পারলো না। আসলে আয়না তাকে বলার সুযোগ না দিয়েই ঘরে চলে গেল। দেখলো গোছানো ব্যাগ থেকে এক এক করে কাপড়চোপড় বের করছে অনুরাগ। আয়না বলল
‘ আপনার না কক্সবাজার যাওয়ার কথা। আবার কাপড়চোপড় নামিয়ে রাখছেন কেন?
অনুরাগ উত্তর দিল না। চোয়াল শক্ত তার। আয়না বলল
‘ আপনি এত কম কথা বলা শুরু করেছেন কখন থেকে?
তীর্যক চোখে তাকালো অনুরাগ। হাতটা ও থেমে গেছে সাথে। রোষানলে দগ্ধ হয়ে বলল
‘ এমন না যে তুমি আমাকে চেনো না। আমার সম্বন্ধে কিছুই জানো না। তারপরও কার কাছ থেকে কি শুনে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে বসছো । আমি তোমাকে চিনি। যে কারো কথায় নাচার মেয়ে তুমি নও। তুমি এসব এই কারণেই করছো, কারণ তুমি সবসময় আমার দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছ। কোথায় আমার খুঁত সেটা খুঁজে বের করে খোঁচাচ্ছ আমাকে। তোমাকে অচেনা লাগছে আয়নামতী। তোমাকে মানাচ্ছ না এসব। আমার দোষত্রুটি ওই একটাই। কুহেলীকে বিয়ে করা, ওই একটাই দোষ আমার। নাহলে আমার প্রতি অভিযোগ আসার কোনো পথ আমি খোলা রাখিনি। অন্য কোনো অপবাদ তুমি আমাকে আন্দাজে দিতে পারো না।
‘ আপনাকে বিশ্বাস করিনা আমি। আপনার কোনো কথা আমার বিশ্বাস হয় না। আপনি একজন ঠক, মিথ্যেবাদী। বোকা বোকা চেহারার পেছনে চতুরচালাক, ধূর্ত একজন মানুষ। আপনাকে আমার সহ্য হয় না। আপনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে ঠকিয়েছেন আমাকে৷ মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে বের করে, জোর করে বিয়ে করেছেন৷ আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মেনে নিচ্ছি আপনাকে? অন্যায় করে আপনি পার পাবেন? আমি ঘেন্না করি আপনাকে, আপনার পরিবারকে। আপনার পরিবার আজ ভালো সাজছে, দুই বছর আগের সেই দিনটা আমার এখনো মনে আছে। টাকা ছাড়া তারা বিয়ে না পড়ানোর আদেশ দিয়েছিল কাজীকে। আমার আব্বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল শুধু আপনাদের জন্য। আমার পরিবারে অশান্তি, দুর্দশা নেমেছিল শুধু আপনাদের জন্য। আমার পরিবারকে লোকমুখে খোঁটা শুনতে হয়েছে শুধুই আপনাদের জন্য। কিচ্ছু ভুলিনি আমি।
‘ মনে রেখেছ কেন? শাস্তি দেবে?
‘ শাস্তি? আমার জানা নেই কোন শাস্তিটা ঠিক আপনাদের জন্য প্রযোজ্য। নাহলে আজই দিয়ে দিতাম। এক্ষুণি।
‘ চাবিটা দাও।
আয়না চমকালো। বলল
‘ কিসের চাবি?
‘ কুটিবাড়ির আর বাগানের।
‘ কি করবেন? ওনারা মাত্র কয়েকদিন থাকবেন।
অনুরাগ চাপাস্বরে বলল
‘ চাবিটা দাও। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব শালাদের। নাটক ফাটক জাহান্নামে গিয়ে করুক। আমার কি? চাবি দাও।
আয়না সরে গেল। বলল
‘ চাবি নেই। আপনি আমার সামনে থেকে যান তো।
অনুরাগ গর্জন করলো। বলল
‘ চাবি দাও বলছি। কোথায় চাবি?
আয়না ভড়কে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
‘ দেব না বলেছি আমি।
অনুরাগ তেড়ে গেল। শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। আয়না ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল
‘ কি করছেন?
অনুরাগ চাবি খুলে নিয়ে আঁচলটা ছুঁড়ে মারলো। বলল
‘ গলা ধাক্কা দিয়ে বের করব। না গেলে উত্তমমধ্যম দিয়ে বের করে দেব।
আয়না ছুটলো অনুরাগের পিছু পিছু। বেশিদূর যেতে পারলো না। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল অনুরাগ। চলে গেল বাগান বাড়িতে।
কুহেলী এখনো সেখান থেকে যায়নি। ফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে বিছিয়ে ফেলেছে। দারোয়ান চেঁচামেচি করলে ও শুনছে না। ডিরেক্টর আজমল খয়রাত এসে মাথা চাপড়ে বলল
‘ এসব কি করেছ কুহেলী? বাগানের মালিকীন দেখলে কি বলবেন? কি করেছ তুমি?
হনহন পায়ে হেঁটে এল অনুরাগ ঠিক তখুনি। আজমল খয়রাত বলল
‘ আরেহ মিঃ চৌধুরী যে, কি সৌভাগ্য আমাদের!
বাকিটুকু বলতে না দিয়ে অনুরাগ বলল
‘ দুর্ভাগ্য তখুনি হবে, যখন আপনারা এই বাগানবাড়ি না ছাড়বেন। তাড়াতাড়ি দলবল নিয়ে এখান থেকে আউট হন। নোংরা মানুষ নিয়ে আমাদের এই বাগান বাড়িতে আসবেন না। এটা ফুলবাগান। ফুল মানেই পবিত্র। আর পবিত্র জায়গায় অপবিত্র মানুষের আনাগোনায় দেখছেন কি অবস্থা চারপাশে? এভাবে ফুল ছিঁড়েছে কে?
আজমল খয়রাত তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলো। আয়নামতী ম্যাডামের কাছে ফোন পাঠাতে হবে। কেন বাগান বাড়ি ছাড়তে হবে? এমনটা কথা ছিল না।
আজমল খয়রাত সরতেই অনুরাগ দারোয়ানকে বলল
‘ সবাইকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করো মামা। তুমি নোংরা মানুষজনকে এখানে ঢুকতে দাও কেন? কেন দিয়েছ?
দারোয়ান ভয়ে ভয়ে বলল
‘ ম্যাডাম?
‘ কে ম্যাডাম?
কুহেলী বলল
‘ বাহ আমি তো রীতিমতো অবাক হচ্ছি, ইনি আসলেই অনুরাগ চৌধুরী তো? গলার আওয়াজ এত বড়? কখন হলো এত উন্নতি?
অনুরাগ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। বলল
‘ চুপ। হীন, নিচ জঘন্য মেয়েমানুষ লজ্জা করেনা? আমার অতীত নষ্ট করেছ তুমি। যার ফল আমি এখনো ভুগছি। এখনো অন্ধকার কাটছে না। আর এখন আমার বর্তমান নষ্ট করতে এসেছ? চরিত্রহীনা!
কুহেলীর চোখে আগুন। থরথর করে কেঁপে উঠলো তার পা জোড়া। আঙুল তুললো বেশ নিয়ম করে। অনুরাগের দিকে বাড়িয়ে বলল
‘ খবরদার। আমি সেই কুহেলী আর নেই, যে আপনার ধমকে কেঁদে দেবে। আজকের এই অপমানের জন্য পোহাতে হবে আপনাকে। দেখে নেব আমি।
অনুরাগ বলল
‘ দূর হও। যাও। আরেকবার আমার চোখের সামনে পড়লে খবর ছাড়া গুম করে দেব। বেয়াদব মেয়েমানুষ। নষ্টা। লোভী। ঠক।
কুহেলী একমুহূর্ত ও দাঁড়ালো না। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লো অন্য খবর।
নাটকদলের সবাইকে নিয়ে রাতারাতি গ্রাম ছাড়তে হলো আজমল খয়রাতকে। অনুরাগ লোক লাগিয়ে দিয়েছে। বলেছে আজ রাতেই গ্রাম ছাড়তে নইলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এত বড় ঘটনা ঘটায় কুহেলী এমনিতেও থাকতো না। কুহেলী না থাকলে শুট হবে কি করে? তাই সবাই চলে গেল। আয়নাকে তীব্র তিরস্কার করলো আজমল খয়রাত। তার মতে আয়না কথা দিয়ে কথা রাখেনি। এবং স্বামীর অমত থাকা স্বত্বে ও কেন বাগানবাড়ি ভাড়া দিল? সেসব শুনে আয়নার মেজাজ খারাপ হলো।
রাত করে ফিরলো অনুরাগ। সব চুকিয়ে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে। ভেবেছে আয়না হয়ত ঘুম। সে আরামে ঘুমটা দিতে পারবে। কিন্তু না। সে ঘরে পা রাখতেই নাগিনী রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে এগিয়ে এল। যেন এক ছোবলে শেষ করে দেবে অনুরাগকে। রাগের চোটে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমে গেল নাক আর কপালে। রেগেমেগে বলল,
‘ আমি থাকব না আপনার সাথে। মরে যাব তবু ও এমন মানুষের সাথে থাকব না। কোনো মানুষ আমাকে কখনো এত কথা শোনায়নি৷ আপনার জন্য শোনালো।
অনুরাগের ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি। এক হাত বাড়িয়ে কোমর টেনে নিজের কাছে আনলো আয়নাকে। দূরত্ব কমিয়ে ফেলতেই আয়না হাত দুটোর ভর প্রয়োগ করলো তার বুকে। কিন্তু বলিষ্ঠ হাতের কাছে তার শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ। চিৎকার করতে গিয়ে ও চেঁচালো না আয়না। অনুরাগ আঙুল দিয়ে ছুঁলো তার নাক। বলল
‘ নাকটা কি দিয়ে বানাইলো আল্লাহ। বাপরে বাপ আমার বাপের জন্মে এত রাগ দেখিনি আমি। নাকের ডগায় এত রাগ কেমনে থাকে ভাই?
আয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল
‘ মেরে ফেলব একদম। ছাড়ুন।
অনুরাগ ছাড়বে কেন? কত মেহনত গেল এই হাতের বাঁধনে বন্দী করার পেছনে। ছাড়লো না। ধস্তাধস্তির চোটে মুখের সামনে চলে আসা এলোমেলো চুলগুলো গুঁজে দিতে দিতে বলল
‘ এই যে এত লড়াই করে এলাম, এত রাগ দেখিয়ে গেলাম সবকিছু কারণ কিন্তু তুমি আয়নামতী। আমাকে যদি একটু বুঝার চেষ্টা করতে তাহলে আমার লড়াইটা স্বার্থক হতো। কিন্তু তুমি তো আমাকে না বুঝার লড়াইয়ে নেমেছ৷ কি আর করার!
কথা বলা শেষে হুট করে ছেড়ে দিল অনুরাগ। আয়না একটু তড়াক খেয়ে গেল। বলল
‘ ছাড়লেন কেন? আশ্চর্য!
অনুরাগ চোখ কপালে তুলে বলল
‘ ধরে রাখতে বলছো?
আয়না থতমত খেয়ে বলল
‘ ওভাবে ছাড়লেন কেন বলেছি? আমি পড়ে যেতে পারতাম।
‘ আমি পড়তেই দিতাম না।
__________
সকাল সকাল আয়নার অপ্রত্যাশিত বায়নায় রাগ উঠলো অনুরাগের। বাড়ি যাবে মানে কি? কালকের জন্য কি কোনোভাবে রাগ দেখাচ্ছে? যা ভাবলো তাই। আয়না ফটাফট বলল
‘ আমি বাড়ি যাব। খবরদার আমাকে আনতে যাবেন না।
অনুরাগ কোনোকিছু বলতেই পারলো না। রহমত মিয়াকে দেখা গেল নিচে রিকশা দাঁড় করিয়েছে। অনুরাগ বলল
‘ আমি দুঃখিত কালকের জন্য। এভাবে যেওনা। আমি দিয়ে আসব তোমায়।
আয়না বলল
‘ থাকব না আমি। আপনি আমাকে ছুঁয়েছেন কালকে। দেখা৷ যাবে রোজ রোজ একটু একটু করে ছুঁবেন। আমি সহ্য করব না ওসব বেয়াদবি। আমি থাকব না আপনার সাথে।
অনুরাগ জিহ্বায় কামড় দিল। বলল
‘ তুমি এজন্যই বাচ্চা। ঠিক আছে আমি আর ছুঁবো না ভুলেও। আমি দিয়ে আসব তোমায়।
আয়নার রাগ কমলো। গেল না। অনুরাগ সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে গেল। আয়শা বেগম আর আজহার সাহেব মেয়েকে দেখে কেঁদেই ফেললেন। নামিরা আর আয়ান খুশি হলো। আর ছোট্ট দুটো মানুষ।
আয়শা বেগম এই প্রথম অনুরাগের সাথে কথা বলল দূরে দাঁড়িয়ে আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে।
‘ শোনো চৌধুরীর ছেলে আজকে আমাদের গরিবের বাড়িতে থাকো একদিন। বিয়ের পর একদিন শ্বশুরবাড়ি থাকা লাগে।
অনুরাগ বলল
‘ অন্য একদিন। আপনাদের মেয়ে যেদিন বলবে সেদিন। আজ আসি।
আয়না মুখ ফিরিয়ে নিল৷ সে কখনোই বলবে না। সবাই চলে যেতেই অনুরাগ আয়নার কাছে এল। ফিসফিসিয়ে বলল
‘ রাগ কমলে ফিরে এসো।
‘ আমার রাগ কমবে না।
‘ রাগ না কমলেও ফিরে এসো। আমি কমিয়ে দেব।
‘ আসব না।
‘ আমি আসব, নিয়ে যেতে।
‘ আপনি আমার পিছু ছাড়েন এবার। নিজের কাজে মন দেন।
‘ ছাড়ছি না। ছাড়ব না। ভুলে ও ভেবো না তুমি আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবে। যাওয়ার আগে একটা কথা বলি?
‘ আবার কি?
‘ পারলে আমার উপর থেকে সব অভিযোগ গুলো তুলে নিও। মনে পড়লে খোঁজ নিও আর একটু দরকার পড়লেই ডেকে নিও। কথা বলতে ইচ্ছে হলে চিঠি লিখো।
চলবে,
রিচেইক করা হয়নি।