#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৪৭
বাসায় মেহমান গম গম করছে, আফজাল সাহেব মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যাস্ত। ওরিন রান্না ঘর থেকে নাস্তা নিয়ে,বসার ঘরে গেলো। টেবিলে নাস্তা রাখতেই ওরিনের ছোট খালা মুখ বাকিয়ে বললো, ” দুলাভাই শুনলাম ওরিন কে নাকি উঠিয়ে নিয়ে গেছিলো ওর হবু জামাই। ”
ওরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আফজাল সাহেব আমতা আমতা করে বললো, ” না মানে। ভুলে..”
” উঠিয়ে নিয়ে গেছিলো তো? শুনলাম মেয়ে নাকি এক রাত ও বাসায়ও ছিলো।”
আয়শা চুলে খোঁপা পাকিয়ে, বললো, ” এতো কিছু জেনে কি করবে খালামনি? এসেছো বিয়েতে আনন্দ করবে। ”
খালামনি মুখ বাকিয়ে, বললো..” তুই চুপই থাক। তুই তো বড় তোকে বিয়ে না দিয়ে তো বাবা ওরিন কে কেন বিয়ে দিচ্ছে? নিশ্চয়ই কিছু কান্ড বাধিয়েছে। ”
আয়শা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে, নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছে। আয়শা ছোট খালা মনির উদ্দেশ্য করে, বললো…” খালামনি ফরিদ ওকে নিয়ে গেছিলো। কিন্তু ওরিন ছিলো দাদীর কাছে। একটা মেয়ের নামে কলংক রটানোর আগে একটু শিওর হয়ে সব টা জেনে নিও। ছেলেটা ভালো বাবা সব দিক বিচার করেই ওরিন বিয়ে ঠিক করেছে। বাকি রইলো আমার বিয়ের কথা, আল্লাহ যেদিন আমার বিয়ে লিখবেন সে দিন আমার ও বিয়ে হবে। তুমি এতো চাপ নিও না। ”
আয়শা ওরিনের ছোট খালা কিছু বললো না, মুখ বাকিয়ে তাকিয়ে রইলো। আয়শার যোগ্য জবাবের উত্তর তার পছন্দ হয় নি। আয়শা কে সে এমনিতেও কম পছন্দ করে কারন আয়শা ছোট বেলা থেকেই কথায় হারতে চায় না। এমন উত্তর দেয় যা গা জ্বলে যায় খালামনির।
———————————
সকাল থেকেই শেহতাজ বেগম প্রচুর ব্যাস্ততায় কাটাচ্ছেন। কতো না দ্বায়িত্ব তার, সব টা তার একাই সামলাতে যচ্ছে। দাদী সবাই কে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছেন, এদিক সেদিক যাচ্ছেন। মারিয়া দাদী কে জরিয়ে ধরে বললো…
” দাদী কুল কুল এতো হায়পার হয়ও না। শরীর খারাপ করবে তো।”
” আমি যদি এখন সব দেখা শোন না করি তাহলে দেখবে এগুলো। এমনিতেই সবাই কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। আর তুই এখন রেডি হলি না? সন্ধ্যা হয়ে এলো, হলুদ দিতে যাবি কখন?”
” আরে, আরে নাছিম ভাইয়া আসুক তার পর তো যাবো। ভাইয়া তো রেডি হচ্ছে। ”
নাছিম পাঞ্জাবির বোতাম আটকাতে আটকাতে বের হলো, ব্যাস্ততার ভঙ্গিতে বললো ” এইতো আমি এসে গেছি। ”
ফরিদতার রুম থেকে বের হয়ে বললো, ” আমিও যাই তোমাদের সাথে, আমি গেলে কি খুব সমস্যা?”
মারিয়া বললো, ” হ্যাঁ খুব সমস্যা। আজ বাদের কাল তোর বিয়ে তুই এখন ওদের বাড়ি কেনো যাবি? ”
” কেনো? তোর বিয়ের আগে তুই শ্বশুর বাড়ি যাস নি?”
” আমার কথা বাদ দাও। তুমি ও তো গেছো তোমার শ্বশুর কে পটাতে। আবার ইনোসেন্ট সাজে। ”
দাদী বিরক্ত হয়ে বললো, ” তোরা চুপ করবি। তুষার তুমি নাছিম আর মারিয়া কে নিয়ে শাহাবাগের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরো। তোমাদের যেতেও তো সময় লাগবে। ”
তুষার বাধ্য ছেলের মতো বললো, ” জ্বি দাদী। চলো সবাই এখন।”
তুষার মারিয়া এক গাড়ি তে গেলো। নাছিম তার নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো। সাথে বিয়ের তত্ব হলুদের জিনিস পত্র নিয়ে।
।
।
“আমাদের কপাল টা এমন কেনো বলো তো?”
আয়শা চুলাটা বন্ধ করে, ওরিনের দিকে তাকালো। আয়শা বোন কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। ওরিন দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো ” আজ পর্যন্ত কাউকে দেখলাম না আমাদের সাপোর্ট করতে, সবাই একটা করে খোঁচা মারা টাইপ কথা বলে৷ বুঝেও না যে মানুষ কষ্ট পায়। ”
” মানুষের কথা যদি কানে নিস, তাহলে বেঁচে থাকাটা মুশকিল হয়ে যাবে। জীবন একটাই একে উপভোগ কর। মানুষের মুখ আছে তারা বলতেই থাকবে। ” বলে আয়শা ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ওরিন আয়শা কে যতো দেখে ততই অবাক হয়। এই মেয়ে টাকে আল্লাহ এতো ধৈর্য কি ভাবে দিয়েছে। তা এক মাত্র উনি জানান।
নাছিম, মারিয়া এবং তুষার হলুদের তত্ব নিয়ে বাসায় ঢুকলো। এতো অতিথিদের মাঝে নাছিম এদিক ওদিকে আয়শা কে খুজে বেরাচ্ছে। আফজাল সাহেব নাছিমদের দেখে এগিয়ে আসলেন। নাছিম , মারিয়া তুষার কে একটা রুমে বসতে দিলেন। কিছুক্ষণ পর আয়শা সহকারী মহিলাকে দিয়ে নাস্তা পাঠালেন। নাছিম ভেবেছিলো হয়তো আয়শা আসবে, নাছিমের চিন্তায় সেগুরে বালি দিলো আয়শা।
নাছিম উঠে দাঁড়ালো, আফজাল সাহেবের উদ্দেশ্য করে নাছিম বললো ” আংকেল আমি একটু ওয়াশ রুম থেকে আসি। ”
বলেই নাছিম বেরিয়ে গেলো।আয়শা এখন কোথায় থাকতে পারে তা নাছিমের ভালো করেই জানা আছে।নাছিম রান্না ঘরে গেলো, আয়শা শিল নোরায় হলুদ বাটছে। পড়নে কালো পাড়ের শাদা শাড়ি আয়শা নাকে বিন্দু বিন্দু ঘামছে গরমে চোখের কাজল ক্ষানিকটা লেপ্টে গেছে। এই প্রথম বার নাছিম আয়শাকে কাজল চোখে দেখলো।
সামনের চুল গুলো আয়শা কে ভীষন জ্বালাতন করছে। আয়শা একহাতে হলুদ বাটছে আরেক হাত দিয়ে কিছুক্ষন পর পর চুল গুলো কানের পিঠে গুজিছে। নাছিম আয়শার চুল গুলো ঠিক করে দিলো, আয়শা নাছিম কে দেখে ভরকে গেলো। আয়শা এতোক্ষন আপন মনে, কাজ করছিলো তাই নাছিম কে খেয়াল করে নি। আয়শা অবাক হয়ে বললো ” আপনি এখানে?”
” হুম। কেনো অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি? ”
আয়শা কিছু বললো না। চুপ চাপ আয়শা হলুদ বাটছে। নাছিম আয়শার ক্ষুদ্র রাগ গুলো দেখছে মনে মনে হাসছে। নাছিম ইচ্ছা করে একটু হলুদ আয়শার নাকে গালে ছুঁয়ে দিলো। আয়শা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নাছিম আয়শার চুলের কাঠি টা টান দিলো আয়শা চুল গুলো খুলে গেলো। সেই আগের মতোই গন্ধ নাছিমের নাকে লাগলো। আয়শা কে কাছে টেনে চুলে ঘ্রাণ উপভোগ করছে।
” আপনি কি তেল যেনো ইউস করেন? ”
” তা জেনে আপনি কি করবেন? ”
” আমার বউ কে কিনে দেবো।”
এই লোকটা কি গোপনে বিয়ে ও করেছে। তাহলে এতো নির্লজ্জ কেনো, অন্য মেয়ের কোমর ধরছে।আয়শার ভেতর টা ফুলে আসছে রাগে। কি হয়েছে টাকি এই লোকটার। আয়শা ছট ফট করছে। বিরক্ত হয়ে আয়শা বললো। ” বিয়ে করেছেন তো আবার অন্য মেয়েকে ধরেছেন কেনো?”
” বিয়ে করেছি কোথায় বললাম। ”
” এতো কিছু বুঝিনা ছারুন আমাকে, কেউ দেখে ফেললে আমাকে খারাপ ভাবে। ”
নাছিম আয়শাকে ছারলো না আয়শা হলুদ মাখানো হাত টা নাছিমের সাদা পাঞ্জাবিতে মুছলো। নাছিমের সাদা পাঞ্জাবিতে দু হাতে দশ আংগুলের ছাপ বসে আছে। আয়শা মিটি মিটি হাসছে। বেশ হয়েছে। নাছিম আই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,” এমন এক টা কেনো দশ পাঞ্জাবি নষ্ট করলে নাছিম হোসাইনের কোন যাবে আসবে না। ”
” বাইরে গিয়ে কি বলবেন সেটাই ভাবুন স্যায়ায়ায়ার।”
বলেই আয়শা হি হি করে হাসলো। নাছ পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে ভাবলো আসলেই তো সে এখন বাইরে গিয়ে কি বললবে সবাই কে। নাছিম অনেক ভেবেও কোন উপায় খুঁজে পেলো না। অগত্য সে হলুদের হাতের ছাপ নিয়েই বাইরে বের হলো। নাছিম দেখা মাত্রই আফজাল সাহেব বললেন…
” তোমার পাঞ্জাবীতে দাগ কিসের?”
নাছিম আমতা আমতা করছে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মারিয়া ক্ষানিকটা বুঝে ভয়ে বললো, ” আংকেল আপনার সাথে কিছু কথা আছে, যদি একটু আসতেন। ” আফজাল সাহেব মারিয়ার কাছে গেলো নাছিম হাফ ছেরে বাচঁলো।
সন্ধ্যার পর পর ওরিনের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। ওরিন হলুদের কনে সেজে সোফায় বসে আছে। তনুর সাথে হাসি ঠাট্টা করছে, ওরিন কে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে। দূর থেকে আয়শা ওরিন কে দেখছে, আয়শার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। হঠাৎ গাল বেয়ে চোখের জল গরিয়ে পড়লো। নাছিম আয়শার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো, আয়শার চোখের জলের কারন একটু হলেও নাছিম বুঝতে পারছে। সে ও যে তার বোন কে পরের ঘরে বিদায় দিয়েছে।
ওরিনের, গায়ে হলুদ দিয়ে নাছিম, মারিয়া এবং তুষার নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ফরিদ কে ও তো হলুদ দিতে হবে। আয়শা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখনি ছোট খালা মনির মেয়ে রাদিয়া আয়শার কাছে এসে দাড়ালো। মিটি মিটি হেসে আয়শা কে বললো, ” ওরিনের ভাসুর টার বয়স কত হবে?”
আয়শা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, বললো ” কেনো রে?”
” ইশশ কি হেন্সাম দেখতে। শুনেছি উনি নাকি আনমেরিড। ”
আয়শার রাগে লাগছে পাশাপাশি বিরক্ত লাগছে। দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে সবাই এই লোকটার দিকে কেনো এতো নজর দেয়। নাছিমের আশে পাশে আয়শা কাউকে সয্য করতে পারে না কেনো আয়শা? সে কি নাছিমের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে? উফফ…
.
.
চলবে।
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Janan_Maya
পর্বঃ–৪৮
‘ আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাই নি তোমায়, দেখতি আমি পাইনি। বাহির পানে চোখ মেলেছি বাহির পানে..’
মাঝ রাতে আয়শা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। নীরব শহরে কেউ জেগে নেই এখন হয় তো। বাসার সবই ঘুমিয়ে পরেছে আগামীকাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। কাল যে ওরিনের বিয়ে। আয়শা কাধে কারো স্পর্শ পেলো, পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ওরিন ছল ছল দৃষ্টিতে আয়শার পানে তাকিয়ে আছে। আয়শা ওরিন কে বললো…
” ঘুমাস নি এখনো?”
” ঘুম আসছে না। আমার ভেতর ভেতর কেমন জানি করছে, এমন লাগছে কেনো?”
আয়শা স্মিথ হেসে বললো ” কালকে ওরিন টার বিয়ে, যে বোনটা ছোট বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় বলতো, আয়শা আপু চকলেট এনো কাল সেই বোনটার বিয়ে।”
ওরিন ঢুকড়ে কেঁদে বললো ” তোমাকে ছাড়া বাবা কে ছাড়া কি ভাবে থাকবো আমি? আমি বিয়ে করবো না।”
আয়শা ওরিন জরিয়ে ধরে বললো, ” ধুর পাগলী। কি বলিস। আমি তো রোজ ধানমন্ডি যাবো অফিস করতে। তোর সাথে দেখা করবো প্রমিজ। বাবাও যাবে।”
” আমার একদম ভালো লাগছে না।”
” কান্না করিস না ওরিন। তুই কান্না করলে আমারো খারাপ লাগে। চল তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। ”
আয়শা ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ওরিন এক সময় চোখ বুজে এলো। সকালে আয়শার ঘুম ভাংলো ছোট খালা মনির ডাকে। আয়শা হাই দিয়ে উঠতেই খালা বললো..” আয়শা ওঠ তোর নানা এসেছে। বসার রুমে বসে আছে।”
আয়শা ঘুম ঘুম চোখে বললো ” নানা কি সপ্নে এসেছে।”
” না আয়শা আমি। সত্যি এসেছি। ”
আয়শা সামনে তাকয়ে দেখলো, দরজায় নানা ভাই দাঁড়িয়ে আছে, আয়শা চোখ ডলে দেখলো সত্যি তার নানা কালাম সাহেব এসেছে। ওরিন দেখে অবাক হয়ে গেলো তাদের নানা এসেছে৷ এই প্রথম বার তাদের বাসায়। আয়শা ওরিন দৌড়ে গিয়ে নানা ভাই কে জড়িয়ে ধরলো। আয়শা বললো ” নানা ভাই তোমাকে কতো মিস করি জানো। ”
কালাম সাহেব আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, বললেন ” ওরিনের বিয়ে শুনে কি ভাবে না আসি বলতো? গত কাল রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে এসেছি তোদের সারপ্রাইজ দিবো বলে। ”
ওরিন খুশি খুশি হয়ে বললো “নানা ভাই তুমি এসেছো আমি কত খুশি হয়েছি জানো?”
কালাম সাহেব হাসলেন। আয়শার খালা দূর থেকে ভেংচি মারে বিড় বিড় করে বললেন ‘ বাবা সবসময় আপার মেয়েদের নিয়ে পড়ে থাকে। কই আমারো তো ছেলে আছে তাদের কথা কি একবার বাবার মনে পরে না। যত্তসব ঢং। ‘বলেই উনি বেড়িয়ে গেলেন।
কালাম সাহেব নাস্তার টেবিলে বসে আছে পাশে ওরিন বসেছে আয়শা নাস্তা প্লেটে দিচ্ছে। আফজাল সাহেব এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন শ্বশুর আব্বার কাছে যাবার সাহস পাচ্ছেন না। কালাম সাহেব নাস্তা মুখে দিয়ে বললেন ” আয়শা দিদি ভাই। ”
” হ্যাঁ নানা ভাই?”
” তোমার বাবা কে টেবিলে বসে নাস্তা করতে বলো। এভাবে শং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকলে। বিয়ে বাড়ি সামলাবে কে?”
আয়শা ঠোঁট টিপে হাসলো। আফজাল সাহেব নাস্তা করতে বসলেন। পার্লার থেকে লোক আসতেই, ওরিন রুমে চলে গেলো আফজাল সাহেব এবং তার শ্বশুর মশাই একই টেবিলে বসে নাস্তা করছেন, নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না।
ছাদ টা খুব সুন্দর করে বিয়ের ডেকরেশন করা হয়েছে। সাদা এবং লাল রংয়ের থিমে। ফুল গাছে টব গুলো এক পাশে রাখা অপর পাশে বিয়ের স্টেজ। আয়শা স্টেজের সাজানোর দেখা শোনা করছে। আফজাল সাহেব, আয়শা কে বললেন ” এক টা বাজে মা এবার তুই রেডি হতে যা। ”
” যাচ্ছি বাবা। তুমি রোদে ঘুরা ফেরা করো না বেশি। ”
আফজাল সাহেব স্মিথ হাসলে। আয়শা বাসায় চলে এলো, ফ্রেশ হয়ে সাদা-আকাশী রঙের শাড়িটা পড়লো। সাথে আকাশী রঙের কাঁচের চুড়ি, সাদা পাথড়ের ঝুমকা।বোনের বিয়ে বলে কথা, একটু বেশিতো সাজ তেই হবে। আয়শার সাজ গোছ শেষে ওরিনের কাছে গেলো, ওরিন কে লাল বেনারসি তে খুব সুন্দর, সাথে ব্রাইডাল মেক-আপ।
ওরিন লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বললো…” আপু আমাকে দেখতে কেমন লাগছে?”
” ভীষণ সুন্দর লাগছে। আমার মিষ্টি বোনটাকে। ”
” আমার ছোট দিদি ভাই কোথায়? দেখি দেখি? ”
কালাম সাহেব ওরিন কে দেখার জন্য ঘরে ঢুকলেন, ওরিন কে দেখে বললেন ” মাশাল্লাহ। আমার দিদি ভাই কে তো পরীর মতো দেখাচ্ছে। ”
ওরি নানা ভাইয়ের কথা শুনে হাসলো।
———————————
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে ফরিদ। নাছিম ফরিদ কে রেডি করিয়ে দিচ্ছে। লাল গোল্ডেন শেরোয়ানী তে ফরিদ কে বেশ মানিয়েছে। নাছিম ফরিদ কে পাগড়ী পড়িয়ে দিলো। ফরিদ নাছিমের উদ্দেশ্য বললো, ” ইশ এভাবে যে কবে তোমাকে রেডি করিয়ে দেবো।”
নাছিম কিঞ্চিৎ হেসে বললো ” অপেক্ষা কর। সেই প্রহর আর খুব বেশি দেরী নেই। ”
” সত্যি বলছো ভাই? ”
” হুম। মনে তো তাই হচ্ছে। চল এবার লেট হচ্ছে। ”
নাছিম ফরিদ বের হলো, দাদী মেহমান দের সাথে কথা বলছেন। সবাই বর যাত্রীতে যাবার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। মারিয়া আর তুষার রেডি হয়ে সোফায় বসে আছে। ফরিদ কে দেখে মারিয়া বললো..” ভাইয়া তুমি রেডি? ”
” হ্যাঁ। দাদী তুমি এখনো রেডি হওনি? ”
” ওরে পাগল। আমি গেলে বাড়ি সামলাবে কে? ”
” এতো কিছু বুঝি না দাদী তোমাকে আসতেই হবে। ”
নাছিম বললো ” হ্যাঁ দাদী চলো, তুমি না হয় আগে চলে আসবে।”
“আচ্ছা। ঠিক আছে। ” বলেই দাদী রেডি হতে গেলেন। অতঃপর সবাই মিলে শাহবাগের উদ্দেশ্য রওনা দিলেন। নাছিমের চোখে মুখে চাপা হাসি দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে একজন মহিলা বকুল মালা বিক্রি করছেন। নাছিম গাড়ি থামিয়ে একটা বকুল মালা কিনলো। মহিলাকে টাকা দিয়ে, বললো ” পুরো টাকা রেখে দিন। ”
মহিলা হাজার টাকার নোট নিয়ে খুশি মনে চলে গেলো। নাছিম মালাটা নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রান নিলো। নাছিমের হাতে ফুলের মালা দেখেই ফরিদের মনে, পরলো সে দিনের শিউলি ফুলের কথা ফরিদ মনে মনে ফন্দি আঁটে নিলো। মারিয়ার কানে কানে নিজের পরিকল্পনার কথা বললো। মারিয়া দাঁত বের করে হাসি দিলো।
গাড়ি থামলো, আফজাল ভিলার সামনে, গাড়ি খুলে নাছিম নামতেই দারোয়ান রমিজ দাঁত বের করে হেসে বললো ” সালাম সাহেব। কেমন আছেন? ”
” ভালো। তুমি কেমন আছো রমিজ?”
” ভালা আছি। আমি তো ভাবছি আপনি জামাই সাইজা (সেজে) আইবেন( আসবেন)। আয়শা আফারে নিতে। ”
” আসবো আসবো। আগে আমার ভাই তোমাদের ওরিন আপাকে বিয়ে করুক তারপর না হয় আমি।”বলেই নাছিম হাসলো। রমিজ হা করে নাছিমের হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো, মনে মনে ভাবলো, একটা ছেলে এতো সুন্দর হাসি কি ভাবে হতে পারে? এতো সুন্দর,হাসি রমিজ খুব কম দেখেছে।
” ভাইয়া নাকে রুমাল দাও। ”
” নাকে রুমাল দিতে হবে কেনো?শুনি? ”
” এটা নিয়ম। কেনো তুষার তো বিয়ের দিন নাকে রুমাল দিয়েছিলো। ”
” ধুর। নাকে রুমাল দেয়ার কি আছে। আমি কোন রুমাল টুমাল দিতে পারবো না। ”
শেহতাজ বেগম হেসে বললেন ” থাক তোকে রুমাল দিতে হবে না। তুই এ ভাবেই থাক। ”
” থেংক ইউ কিউটি দাদী। ”
দরজার সামনে আয়শা দাঁড়িয়ে আছে, নাছিম কে দেখা মাত্র আয়শার ঠোঁটে কোনে, তিক্ষ্ণ হাসি ফুটলো। আয়শা বর যাত্রী মেহমান দের স্বাগতম জানাচ্ছে। আবশেষে আয়শা দাদী কে নিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলেন। আয়শা দাদী কে সোফায় বসিয়ে, দিলেন। দাদী আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
” ঠিক তোমার মতো একটা, লক্ষী মেয়ে চাই আমার নাছিমের জন্য। ”
আয়শা লজ্জায় কানের পিঠ চুলকাতে চুলকাতে বললো ” ইয়ে মানে দাদী আমি একটু আসছি। ”
বলেই আয়শা সরে দাঁড়ালো, ঠিক তখনি কেউ আয়শার হাত ধরে, টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো, আয়শা ভয়ে চোখ বন্ধ করে করে রেখেছে। কেউ আয়শার চেহারায় ফু দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো। আয়শা পিট পিট করে তাকিয়ে দেখলো নাছিম তার দিকে তাকিয়ে আছে। ” আপনি এখানে?”
” অন্য কারো থাকার কথা ছিলো নাকি?”
” অন্য কেউ না। কিন্তু আপনারও তো থাকার কথা ছিলো না। ”
” রিয়ালি বেয়ান সাহেবা।”
” বেয়ান সাহেবা? ”
নাছিম দেয়ালে হাত দিয়ে, আয়শার দিকে ঝুকে বললো “সম্পর্ক টা এখন বস আর এমপ্লয়ির না, এখন আপনি আমি সমান সমান, বুঝলেন।”
” খুব বুঝেছি। এখন ছারুন। ”
নাছিম আয়শার চুলে মালাটা পড়িয়ে দিলো। আয়শা গা থেকে বকুল ফুলে কড়া মিষ্টি গন্ধ আসছে। যা নাছিমের ভীষণ ভালো লাগছে।
———————————
কাজি সাহেব বিয়ে, পড়াচ্ছেন ওরিন ফরিদে এক সাথে বসে আছে। ওরিন এক হাত ঘোমটা দিয়ে আছে, ফরিদ বার বার আড় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ওরিন ফিস ফিস করে বললো ” এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো? লোকে কি ভাববে।”
” লোকে কি ভাববে তা লোকের বিষয়। বাই দা ওয়ে আমার সে দিনের কথা খুব৷ মনে পড়ছে।”
ওরিন আবারো ফিস ফিস করে বললো ” কোন দিন?”
” যে দিন তুমি আমার বোনের বান্ধবী সেজে ফ্রি তে খেয়ে গেছিলে আজ আমি গুষ্টি শুদ্ধো লোক নিয়ে এসেছি ফ্রি-তে তোমার বিয়ের খাবার খাবো বলে।”
ওরিন ফিক করে হাসলো। দুষ্টু লোক একটা।
দূরে একটা চেয়ারে শেহতাজ বেগম বসে আছে। কালাম সাহেব হঠাৎ সে দিকে তাকাতেই ওনার দৃষ্টি থমকে গেলো। মুখ দিয়ে শব্দ বের হলো…
” শেহতাজ। ”
।
।
চলবে
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ–৪৯
শেহতাজ বেগম পরিচিত কন্ঠে নিজের নাম শুনে চেমকে গেলেন। সেই চেনা মানুষ টি তার সামনে, শেহতাজ বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
শেহতাজ বেগম তখন সবে মাত্র কলেজে উঠেছেন। উঠতি বয়ষে প্রচুর দুষ্টু ছিলেন কিশোরী দুষ্টু মেয়েটি কালাম সাহেবের মন কেড়ে নিয়েছিলেন। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, চিলেকোঠার ঘড় থেকে চিঠি আদান প্রদান কত না সুন্দর সময় ছিলো সেগুলো। শেহতাজ বেগমের চোখের সামনে ভাসছে, সব।
কালাম সাহেব শেহতাজ বেগমের কাছে এসে দাঁড়ালেন, স্মিথ হেসে বললেন ” কেমন আছো শেহতাজ। ”
” ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? বুড়ো হয়ে, গেছো যে।”
” তুমিও তো বুড়ি হয়ে গেছো। ”
” বুড়ি হবো না। বয়স তো আর কম হয় নি। স্বামী চলে গেলো, একমাত্র ছেলে চলে গেলো, এখন নাতী নাতনী দের কে নিয়ে দুনিয়া। তোমার বউ কেমন আছে?”
” আয়শার মা মারা যাবার শোকে এক মাসের মাথায় আয়শার নানী হার্ট অ্যাটাক করে, তার পর কিছুমাস পর সে মারা গেছে। ”
” মানুষ কি অদ্ভুত না? পরিবার চাপে পড়ে যাকে বিয়ে করলাম সে আমায় ছেড়ে চলে গেলো। যার সাথে এতো গুলো বছর সংসার করলাম সে কি ভাবে আমার মায়া ছারলো? ”
” মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয় শেহতাজ। আমারা ও এক দিন চলে যাবো। ”
শেহতাজ বেগমের চোখ দুটো ছল ছল করছে। কালাম সাহেব লাঠিতে ভর দিয়ে বললেন ” কেঁদো না শেহতাজ। তোমার বিয়ের পরে আমি ঢাকায় চলে আসি, চাচার হাত ধরে বিদেশ পারি দেই। তোমাকে ভুলতে পারি নি জানো? পরিবারের কথা চিন্তা করে আয়শার নানী কে বিয়ে করি। আমার দুটো মেয়ে হয়। ”
” আসলে কি জানো? মনের মধ্যে ভালোবাসাটা যদি শুদ্ধ হয় তাহলে, যুগ যুগ পরেও তা ভোলা সম্ভব হয় না। আমরা চাইলেও আমাদের মন আমাদের ভুলতে দেয় না। ”
শেহতাজ বেগম মনে মনে, বললেন ‘ টান ছিলো এই জন্যই হয়তো শেষ বয়সে আবারও তোমার সাথে দেখা হলো। ‘
______________________
কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সবাই খেতে বসেছে, নাছিম এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আয়শা এদিক সেদিক ছুটা ছুটি করছে। হঠাৎ আয়শার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে উঠলো। আয়শা ঠোঁট কামড়ে হাসলো। চুপি চুপি নাছিমের পেছনে একটা চেয়ার রাখলো, এবং চেয়ারের ওপর লাল টমেটো।
আয়শা মিষ্টির প্লেট নিয়ে গিয়ে নাছিম কে বললো, ” আপনি হলেন আমার একমাত্র বেয়াই। আপনাকে মিষ্টি না খাইয়ে পারি। ”
বলেই আয়শা জোর করে নাছিমের মুখে পুরে দিলো, নাছিম নড়তে গিয়ে ধাম করে চেয়ারে বসে পরলো। টমেটু চেপ্টা হয়ে ‘ পচ’ শব্দ হলো।
সবাই নাছিমের দিকে তাকিয়ে, আছে। নাছিম আয়শার দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার সবার দিকে তাকাচ্ছে। মুখে মিষ্টি নিয়ে হাসার ভান করলো। কয়েক মূহুর্ত পর সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আয়শা হাত হাত ভাজ করে, ভ্রু নাচিয়ে বললো..
” মিষ্টি টা কেমন লাগলো বেয়াই সাহেব। ”
” ভালো। খুব টেস্টি।”
” আচ্ছা। ” বলেই আয়শা বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালো। নাছিম বললো ” আমি ওয়াশ রুমে যাবো? ”
” হ্যাঁ যান। না করেছে কে? ”
” ইয়ে মানে আপনি যদি একটু আসতেন। এতো মানুষের ভীরে বাসায় কিভাবে ঢুকবো?”
আয়শা মুখ টিপে হেসে বললো “আচ্ছা চলুন। ” নাছিম পাঞ্জাবি চেপে ধরে আছে আয়শা নাছিম কে দেখছে এবং মনে মনে হাসছে। আয়শা নাছিম কে ওয়াশ রুমের দিকে নিয়ে গেলো, নাছিম আয়শার কানে কানে বললো,” টমেটো থেরাপি দেয়াটা কি ঠিক হলো। ”
” বেশ হয়েছে। যান গিয়ে ফ্রেশ হোন। আমি বাবার টাইড দেখে একটা পাঞ্জাবি আনছি। ”
আয়শা পাঞ্জাবি টা নাছিমের হাতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নাছিম শীষ বাজাচ্ছে এবং পাঞ্জাবি পড়ছে। রেডি হয়ে ছাদে গেলো। আয়াশা কাছে গিয়ে বললো,” স্যার লাঞ্চ করবেন চলুন।”
” লাঞ্চের নাম করে আবার উল্লটা পালটা কিছু খাওয়াবেন না তো?”
” এ মা! কি যে বলেন না স্যার। আপনি বসুন আরাম করে খান।” নাছিম টেবিলে খেতে বসলো, আয়শা একটার পর একটা খাবার প্লেটে দিয়েই যাচ্ছে নাছিম খেয়ে শেষ করতে পারছে না। মুখের ওপর না ও করতে পারছে না। আয়শা মুখ টিপে হেসে বললো, “আরেক টু দিবো?”
” প্লিজ আর না। ”
ফরিদ, বাধন আরে কয়েক জন বন্ধু মিলে খাওয়া দাওয়া ব্যাস্ত।তনু সুযোগ বুঝে ফরিদের জুতো জোড়া সরিয়ে ফেললো। ওরিনের কানে কাছে ফুসুরফাসুর করে বললো” দোস্ত প্লেন সাক্সেস।”ওরিন হাসলো। খাওয়া দাওয়ার পর যখন ফরিদ জুতো খুঁজে না পেলো তখন সবাই বুঝে গেলো জুতো নিয়ে কেউ চম্পট দিয়েছে। তনু গিয়ে, বললো…
” জুতো খুঁঁজছেন?ওটা তো আমার কাছে?”
বাধন হেসে বললো,” আশে পাশে এতো হেন্সাম ছেলে থাক তে জুতো চুরি করলেন কেনো?মন তো চুরি করতে পারতেন। ”
তনু মুখ ভেংচি কেটে বললো ” ফ্লার্ট করছেন। ”
বাধন করুন সুরে,” ভাগ্যিস আপনি বুঝতে পেরেছেন। ”
” বুঝা বুঝি বাদ দেন, আগে টাকা ছারুন। জুতো নিন।”
” এই ফরিদ জুতোর দাম কত?”
ফরিদ বললো ” হাজার ছয়ের মতো হবে।”
” রাইট তাহলে আপনার জুতো বেঁচে টাকা নিয়ে নিন। আমার বন্ধুর জন্য আমি জুতো এনেছি।”
বলেই বাধন জুতো জোড়া ফরিদের পাঁয়ের সামনে রাখলো। রাগে গা শীর শীর করছে তনুও। সবাই হো হো করে হাসছে।তনু বাধন কে বললো ” আপনাকে ছারবো না। হুহ।”
বাধন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”আগে ধরুন। তার পর না হয়, ছাড়া ছাড়ি হবে।”
অনু ভেংচি মেরে চলে গেলো।
———————————
আফজাল সাহেব এক কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। বুকের এক কোনে ব্যাথা অনুভব করছেন ” একটু পরেই তো মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে দিবেন। তার মেয়ে অন্যের বাড়ির বউ হয়ে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।”
ভাবতেই আফজাল সাহেবের কষ্ট হচ্ছে। অকারণে মেয়েটা কে ভুল বুঝেছিলো।মেয়েটা কতো কষ্ট বুকে জমিয়ে সে দিন কান্না করেছে।
“” বিয়ে যদি সামাজিক বন্ধন না হতো তাহলে হয়তো কোন বাবা-মা মেয়েকে বিদায় দিতো না।”””
আয়শা বাবা কে খুঁজেতে খুঁজতে
ছাদের এক পাশে যেতেই দেখলো, বাবা মাথা নিচু করে চোখ মুছছে। আয়শা বাবার কাধে হাত রাখলো। আফজাল সাহেব মেয়ের থেকে কান্না লুকানোর চেষ্টা করছেন। বাবার কান্না দেখে আয়শার ও কান্না পাচ্ছে। বাবারা এমন হয় কেনো?ভেতরে শত কষ্ট লুকিয়ে রেখে সন্তানের সামনে সব সময় হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে। এর নাম হয়তো বাবা।
” বাবা তুমি কান্না করছো?”
” মেয়ের বিদায়ের সময় সব বাবা মায়ের কান্না আসে রে মা। ”
” বাবা তুমি কেঁদো না। মেয়ে বলে কি বিয়ের পর পর হয়ে যায়? তোমার মেয়ে তোমার মেয়েই থাকবে। ”
আফজাল সাহেব রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। এই মেয়ে টার কথায় মনে হয় জাদু আছে। আয়শার কথায় এতো বল কি ভাবে মাঝে মাঝে নিজেও চিন্তা করেন আফজাল সাহেব। আফজাল সাহেব চোখ মুছে ওরিনের কাছে গেলো। ওরিন নানা কে জরিয়ে ধরে কান্না করছে, বাবা কে দেখে কান্নার গতি নেরে গেলো, ওরিনের সামনে তো শুধু তার বাবা নয় মাও দাঁড়িয়ে আছে, তার বাবাই তো তার মা। ওরিন একবার বাবার পানে তাকাচ্ছে আরেক বার বোনের পানে তাকাচ্ছে। আয়শার কান্না লুকিয়ে হাসি মুখে বোন কে শ্বশুর বাড়ি পাঠালো। কনে বিদায় এতো কষ্টের হয় কেনো?
রাত আটটা নাগাদ বর যাত্রী ধানমন্ডির উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো। আফজাল সাহেব ডাইনিং টেবিলে চুপ করে বসে আছেন, নানা ভাই রুমে রেস্ট নিচ্ছে। ছোট খালামনি সহ বাকি মেহমান রা নিজের কাজে ব্যাস্ত। আয়শা কাজের সহকারী মহিলার সাথে কাজ করছে বাবার দিকে তাকাতেই দেখলো আফজাল সাহেব বুকে হাত দিয়ে বসে আছে। আয়শা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিয়ে বললো..
” সারা দিনে তোমার অনেক ধকল গেছে বাবা রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। ”
” যাচ্ছি মা। ” বলেই গ্লাস টা নিয়ে রুমে চলে গেলেন।
।
।
চলবে