#ইচ্ছেঘুড়ি (১৩)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
শান্তর বাবা, মা দুজনে কর্মজীবী হওয়ায় শান্ত ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গ খুব একটা পায়নি। যতটা পেয়েছে ততটায় শান্ত খুব খুশি ছিলো। সে পড়ালেখায় খুব একটা খারাপ ছাত্র ছিলো না। সবসময় ৮০% নাম্বার পেতো। এটা খুব একটা কম নয়। প্রথমে এই ফলাফল শান্তর বাবা, মাকে সন্তুষ্ট করলেও পরবর্তীতে করেনি। যখন শান্তর বাবার সামনে তার কলিগ তার সন্তানের প্রশংসা করতো। তারা পড়ালেখায় ভীষণ ভালো ছিলো। শান্তর থেকে বেশি নাম্বার পেতো। এটাই তার বাবার কাছে লজ্জাজনক মনে হতো। তার মনে হতো তার সন্তান তাকে তার কলিগদের সামনে কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছে না। সে তাদের সন্তানের থেকে বেশি ভালো করতে পারছে না। এসব শুনে বাবা শান্তর পড়ালেখার চাপ বাড়িয়ে দিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে তাকে বকাবকি করতেন। এক মূহুর্ত তাকে বসতে দেখলেও সে রেগে যেতেন। তার কথা তার ছেলেকে সবার থেকে ভালো করতে হবে। তার মুখটা উজ্জ্বল করতে হবে। যাতে সে সবার সামনে গর্বের সঙ্গে বলতে পারে তার সন্তান বেষ্ট।
বাবার এসব আচরণ শান্ত ভীষণ কষ্ট পেতো। তখন তার মা তাকে বুঝিয়ে বলতো,“বাবা, মা সবসময় সন্তানের ভালো চায়। তুমি পড়ালেখা করে ভালো করলে তোমারই লাভ। তোমার বাবা তোমার ভবিষ্যত সুন্দর করতেই এত বকাঝকা করে।”
শান্ত মায়ের কথা মেনে নেয়। সে মন দিয়ে পড়াশোনা করে। তারও ইচ্ছে ছিলো জীবনে ভালো কিছু হওয়ার। তাছাড়া সে ভালো করলে তার বাবা, মা খুব খুশি হবে। সেজন্য মন দিয়ে পড়াশোনা করতো। নিজের খেলার সময় কমিয়ে দিয়ে পড়াশোনা করতো। দিনশেষে আগের তুলনায় ভালো করলেও তার বাবা খুশি হতেন না। তার কথা,“আমার বন্ধু রাজীবের মেয়ে প্রতি সাবজেক্টে ১০০ তে ৯৯/১০০ পায়। সেই তুলনায় এটা খুবই কম নাম্বার। তোমার দ্বারা কিছুই হবে না।”
এসব বলে বাবা খুব বকাঝকা করতো। জবাবে শান্ত খুবই ভীতু গলায় বলতো,“আমি তো চেষ্টা করছি।” তার এই কথার জবাবে তার বাবা তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো।একে তো শান্ত তার আশা পূরণ করতে পারছে না। তার উপর তার মুখে মুখে কথা বলছে। এসবে সে বিরক্ত। এভাবেই বাবা, মাকে খুশি করার জন্য দৈনিক একই নিয়মে শান্তর জীবন চলতে থাকে। তার বন্ধুরা যখন মাঠে খেলা করতো তখনও সে বইয়ের পাতায় মুখ গুজে থাকতো। অথচ সময়টা তার খেলার ছিলো। দিনশেষে এত পড়াশোনা করেও বাবা, মায়ের আশা পূরণ করতে পারে না। বাবা এসবে বিরক্ত হয়ে তো কাজের আন্টিকেও খুব বকতো। বাবা বিশ্বাস করতে চাইতেন না শান্ত বাসায় বসে পড়ালেখা করে। তার কথা শান্ত সারাদিন বাসায় খেলাধুলা করে সময় কাটায়। স্কুলেও হয়তো ঠিকমতো যায় না। এভাবেই কেটে যায় উচ্চ মাধ্যমিক অব্দি। পরীক্ষা শেষে শান্ত যখন ইন্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন দেখছিলো সেই মূহুর্তে বাবা শান্তকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখলেন। শান্ত সেদিন মুখের উপর বলতে পারেনি সে ইন্জিনিয়ার হতে চায়। শান্তকে তেমন কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিক। কারণ বাবা কষ্ট পাবে। মায়েরও ইচ্ছা শান্ত ডাক্তার হবে। তাদের ইচ্ছার জন্য শান্তকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং এ ভর্তি হতো হলো। কিন্তু শান্তর এসবে মন টানছিলো না। তাও বাবা, মায়ের কথা ভেবে শান্তকে এই জীবনটাকে বেছে নিতো হয়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল সব বদলে দিলো। শান্ত চান্স পেলো না। এই খবরটি শান্তর বাবা কিছুতেই মানতে পারলো না। সে শান্তর গায়ে হাত অব্দি তুললেন। তার কথা শান্ত পড়াশোনায় মন না দিয়ে বরং উল্টাপাল্টা কাজ করে বেরিয়েছে। তাই চান্স হলো না। মায়েরও কথা এত পড়ালেখা করলি তবে চান্স হলো না কেন?
বাবা, মায়ের এসব আচরণে শান্ত ভেঙে পড়ে। সে ছোটবেলা থেকে তার সঙ্গে ঘটা ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবে। সবসময় তার বাবা, মা তার উপর অসন্তুষ্ট ছিলো। সে কোন কিছু করেই তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। দিনশেষে তাদের বকাঝকা শুনে তাকে মনমরা হয়ে ঘরের কোনে মুখ লুকিয়ে কান্না করতো হয়েছে। অতঃপর শান্তর মনে হলো সে আসলে কোনকিছু করেই তাদের মন জয় করতে পারবে না। এই দুনিয়া কেউ চাইলেই কারো মন জয় করতে পারে না। কারণ মানুষের চাহিদা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। তাই তাদের খুশি করা সম্ভব হয় না।
___
শান্তর জীবন সম্পর্কে শুনে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এটা দেখে শান্ত ম্লান হেসে বলে,“একটা সময় মনে হয়েছিলো আমি ব্যর্থ। আমি চেয়েও বাবা, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। নিজেকে শেষ করে দেই। তবে আজ বুঝি ওটা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।”
“অতঃপর আপনি বদলে গেলেন?”
আমার কথায় শান্ত মাথা নাড়ায়। নরম গলায় বলে,“আমার আজও মনে পড়ে খুব ছোটবেলায় একটা ক্লাসমেট আমাকে বাজেভাবে বিরক্ত করছিলো। সেই বিরক্তির জবাবে আমি তার সঙ্গে তর্ক করি। এক পর্যায়ে মারা মারি হয়ে যায়। অথচ সেই ঘটনার আসল সত্য না জেনেই আমার বাবা আমাকে অনেক মা রধর করেছে। কারণ স্কুল থেকে তাকে ফোন দিয়ে বিচার দেওয়া হয়েছে। সেদিন ইচ্ছে করছিলো সব শেষ করে দেই।”
একটু থেমে শান্ত আবার বলে,“মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে অদ্ভুত জীব। মানুষ এমন জীব যারা শুধু অন্যের কাছে নিজেকে সম্মানীয়, দামী দেখাতে ভালোবাসে। তাদের জীবনের সব অর্জন শুধু লোক দেখানোর জন্য হয়ে থাকে। যেমন আমার বাবা, মা। তারা আমাকে ভালোবেসে আমার ভবিষ্যত ভেবে এসব করেনি। বরং তারা সমাজের কাছে, তাদের কলিগদের কাছে নিজেদের বড় দেখাতে চেয়েছে। এই কথাগুলো যখন আমি বুঝতে শিখিয়েছি তখন থেকেই মনে হলো নিজেকে চরমভাবে ঠকিয়েছি। যেই বয়সটা আমার খেলাধুলার ছিলো সেই বয়সটা আমি অন্য কাজ করে সময় নষ্ট করেছি। আমি আমার মনের কথাগুলো শুনিনি। বরং অন্যের কথায় মনকে দমিয়ে রেখেছি। এমনটা করে আসলে লাভ নাই। দিনশেষে কেউ আমার এই ত্যাগ দেখেনি। শুধু ফলাফল দেখেছে। যেটায় আমি অকৃতকার্য হয়েছি।”
শান্তর কথা শুনে আমি অন্যরকম ভাবনায় চলে গেলাম। পৃথিবীতে কত অদ্ভুত বাবা, মা রয়েছে তাই না? আমার এই কথাটি হয়তো শান্ত বুঝতে পেরেছে। তাই বলে,“আমার কথা দ্বারা আমি এটা বুঝাতে চাইনি যে সবাই একরকম। নয় সবাই এক নয়। এই পৃথিবীতে অনেক বাবা, মা রয়েছে যারা সন্তানের খুশির কথা ভেবে প্রচুর ত্যাগ করে। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় তাদের সন্তানরা তাদের ত্যাগটা দেখে না।
পৃথিবীটা এমনই, এই জগতে কেউ কারো আত্মত্যাগ বুঝে না। খুব কম সংখ্যক পরিবার রয়েছে যেখানে সন্তান এবং বাবা মা উভয়ই নিজেদের বুঝতে পারে। এবং সুখী আছে। বেশিরভাগই এমন। সেজন্য অন্যকারো কথা ভাবার আগে নিজের কথা ভাবা উচিত।”
একটু থেমে শান্ত মুচকি হেসে বলে,“নিজের কথা ততক্ষণ অব্দি ভাবা উচিত যতক্ষণ না সেটা অন্যায় বা ভুল পথে পা বাড়ায়। স্বার্থপর হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। অবশ্যই আমাদের সেই সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়।”
“বুঝলাম।”
আমার এই কথায় শান্ত তার মুখের ভাবভঙ্গি বদলে হাসি মুখে মজারসুরে বলে,“কী বুঝলেন? চল্লিশ বসন্তে আপনার পান খেয়ে দাঁত লাল করা উচিত। এটাই বুঝেছেন তাই না?”
শান্তর মজা বুঝতে পেরে আমি হেসে দিলাম। শান্ত হাসিমুখেই বলে,“আমি জানি না। আমার এই পরিবর্তন আপনি কিভাবে নিবেন, তবে এই পরিবর্তনে আমি আমার বাবার বকা শুনলেও সে কখনো আর আমার গায়ে হাত তুলতে পারেনি। খুব সুন্দরভাবে হাসিমুখে আমি তাকে এমনভাবে জবাব দিতাম যে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভুলেই যেতে তার কি বলা উচিত। কিন্তু আমি যদি নিজেকে পরিবর্তন না করতাম তাহলে দেখা যেতো আমার বাবা সবসময় লোকের ছেলে মেয়ে কী করছে, তাদের সফলতা, প্রতিবেশীদের কথা শুনে এসে আমাকে আজও সেভাবেই টর্চার করতো। যেই অত্যাচারে আমি মানসিকভাবে ভেঙে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যেতাম। হয়তো সেই শেষ সময়ে আমার বাবা তার ভুল উপলব্ধি করতে পারতো। কিন্তু তখন সেই উপলব্ধি কোন কাজের হতো? হতো না।”
আমি শান্তর কথায় মাথা নাড়ালাম। শান্ত মুচকি হেসে বলে,“আমি জানি আমার এবং আপনার জীবন এক নয়। এটা কখনো এক হবে না। তবুও আমি আপনাকে আমার গল্পটা বললাম যাতে আপনি বুঝতে পারেন পরিবর্তন জীবনে কতটা দরকার। যদিও বুঝবেন না। তবে আমি চাইবো আপনি বুঝুন।”
আমি ম্লান হেসে শান্তর চোখের দিকে তাকালাম। অতঃপর বললাম,“সেদিন বিশ্বাস করে যে কথাটি বলতে পারিনি আজ সেটা বলি?”
শান্ত কয়েক মূহুর্তে জন্য থেমে যায়। পরক্ষণে বুঝতে পেরে মাথা নাড়ায়। অতঃপর আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা বললাম। আমার কথা শুনে শান্ত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমার চোখ ছলছল করে উঠলো। এতদিন যে সত্যিটা বুকের মধ্যে চেপে রেখেছিলাম সেই সত্যিটা কাউকে বলতে পেরে মনটা হালকা লাগলেও ভেতর থেকে কষ্টটা বের হচ্ছিলো না। তাই তো না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। হাউমাউ করে কান্না করে বললাম,“আমার জীবনের এই অধ্যায় তো আমি চাইনি। তাহলে আমার সঙ্গে তারা এমন কেন করলো? কিসের জন্য? তারা আমাকে এত ঘৃণা কেন করে? আমি তো…।”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত বলে,“কারণ তাদের জীবনে আপনার অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গিয়েছে।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। মনেমনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে ফেললাম। শান্ত ম্লান হেসে বলে,“আমার বাবা, মা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। পৃথিবীর সকল বাবা, মায়ই তার সন্তানকে খুব ভালোবাসে। কেউ কেউ হয়তো স্বার্থের জন্য সন্তানের সঙ্গে অবিচার করে কিন্তু ভালোবাসাটা মিথ্যা নয়। আর আমার বাবা, মায়ের সমস্যা হলো তারা অন্যের কথায় প্রভাবিত হয় বেশি। অন্যের কথা মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নিয়ে সেই কথার জবাব দিতে সবসময় মরিয়া হয়ে থাকে। এতে যে তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে না। যার ফলস্বরূপ আমাকে এত চাপ দিয়েছে। তারমানে এটা নয় তারা আমাকে ভালোবাসে না। তারা আমাকে খুব ভালোবাসে।”
আমি শান্তর দিকে কৌতূহলী চোখে তাকাতে শান্ত হাসিমুখে বলে,“আমি এই কথাগুলো দ্বারা কিসের ইঙ্গিত করছি সেটা আপনি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। আমি জানি আপনি আপনার জীবনের এই নিয়মের বেড়াজাল খুব সহজে ভাঙতে পারবেন না। তবে আমি চাইবো আপনি ভাঙুন। আপনি এত ছোট নন যে আমার কথার মানে বুঝবেন না। আপনি সবই বুঝছেন। শুধু সেই অনুযায়ী কাজ করতে চাইছেন না।”
“ঋন…।”
আমাকে কথাটি বলতে না দিয়ে শান্ত হাসতে হাসতে বলে,“আগে ভাবতান মহান আপনি তাই এসব করছেন। এবার বুঝলাম মনের মধ্যে জেদ চেপে গিয়েছে। সেই জেদে এবার এসব করছেন। কিন্তু চাইলেই সব ঋনশোধ করা যায় না। আর কিছু ঋন রেখে দিতে হয় অপরপক্ষের এতটুকু আক্ষেপ থাকা উচিত।”
শান্তর কথা শুনে আমি থমকে গেলাম। ছেলেটা আমার মন পড়ে নিলো। আমার ভাবনার মাঝে শান্ত বলে,“এবার আমার যাওয়া উচিত।”
আমি মাথা নাড়ালাম। শান্ত ম্লান গলায় বলে,“পাড়ার মোড়ের দোকানে বসে যখন এলাকার সবাই আপনার শারীরিক ক্রুটি, আপনার জীবনধারা নিয়ে আলোচনা করে তখন সেটা শুনতে ভীষণ দৃষ্টিকটু লাগে।
আমি চাই আমার মতো আর কোন শান্তকে এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে না হোক। তাই বলবো পরিবর্তন হন। নিজের জন্য নাহলে আমার জন্য হয়ে যান।”
এই কথা বলে শান্ত উঠে দাঁড়ায়। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। শান্ত হঠাৎ করে লাফ দিয়ে পাশে তার মামার ছাদে চলে যায়। কয়েক মূহুর্তে ঐ ছাদে গিয়ে একটি গোলাপ ছিঁড়ে আবার আমাদের ছাদে ফেরত আসে। এত দ্রুত সব ঘটলো যে আমি হচচকিয়ে গেলাম। সেই সাথে মনেমনে বললাম,“শান্ত নামটার মান সম্মান রাখলো না ছেলেটা। সবসময় অশান্ত।”
আমার ভাবনার মাঝে শান্ত গোলাপটি আমার কানের কাছে গুজে দিয়ে বলে,“পেত্নী লাগছে পুরাই।”
“হ্যাঁ?”
আমি কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করতে শান্ত হাসিমুখে বলে,“কাঁদলে আপনাকে পেত্নী লাগে।”
এটা বলে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। শান্তর হাতের স্পর্শ মুখে পেতে আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম। শান্ত চোখের পানি মুছে বলে,“এবার কিছুটা মানুষ লাগছল। তবে আমার শখের সিগারেটের টাকায় কেনা ফুল গাছের ফুলটা চল্লিশ বছরের একজনের কানের পাশে গুজে রয়েছে ভাবতেই আমার বুকটা কেমন করে উঠছে।”
”শান্ত।”
আমি কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললাম। শান্ত এটা দেখে শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে,“গেলাম। নয়তো এই হাসির শব্দ শুনলে আশেপাশের সবাই এসে যাবে। পড়ে গনধোলাই খেতে হবে।”
এটা বলে শান্ত নারিকেল গাছের কাছে চলে যায়। সেটা বেয়ে নামতে গিয়ে বলে,“বন্ধু হিসাবে আমি খুবই ভালো। তাই অবশ্যই আমাকে মিস করবেন। আর মিস করলে ফোন দিবেন।”
”আপনি আমাকে মিস করবেন না?
আমি বুঝি খুবই খারাপ।”
আমার কথা শুনে শান্ত হাসতে হাসতে বলে,“আমার শখের সিগারেট খাওয়ার পয়সা ফোনে ভরে কাউকে ফোন দিয়ে আমি মিস করা বোঝাতে পারবো না গো। তাই অবশ্যই মিস করবো না।”
শান্ত এই কথা বলে ঝড়ের বেগে গাছ বেয়ে নেমে যায়। আমি ছেলেটার এমন মজা শুনে হাসতে থাকি। সেই সময় ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেতে চমকে উঠি….
’
’
চলবে,
#ইচ্ছেঘুড়ি (১৪)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
আমি পিছনে ঘুরে কাজলকে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাবা, মা হলে ব্যাপারটা সামাল দিতে কষ্ট হতো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,“তুই এখনো ঘুমাসনি?”
“না। ঘুম আসছিলো না। তোমার ঘরে গিয়ে তোমাকে না পেয়ে ছাদে আসলাম।”
কাজলের কথায় মৃদু হেসে আমি বললাম,“এতরাতে ছাদে থাকা ঠিক হবে না। চল যাই।”
কাজল মাথা নাড়ায়। আমি ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে কাজল বলে,“বখাটে ছেলেটা তোমার বন্ধু?”
কাজলের কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। না চাইতে রেগে গিয়ে বললাম,“শান্ত মোটেও বখাটে নয়। হ্যাঁ একটু দুষ্টু প্রকৃতির। কিন্তু বখাটে বলে যেমন ইঙ্গিত করা হচ্ছে তেমন মোটেও নয়।”
কাজল এই কথা শুনে আমার হাতের গোলাপটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমি এটা দেখে বললাম,“চল যাই।”
কাজল মাথা নাড়ায়। অতঃপর ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আমি কাজলকে উদ্দেশ্য করে বলি,“এসব কথা মাকে বলিস না।”
কাজল ম্লান হেসে আমার দিকে তাকায়। যার অর্থ সে বলবে না। সেই সঙ্গে বলে,“এমনিতেও এলাকায় যা রটে তার তুলনায় ঘটে খুব সামান্য। তবে ঐ ছেলেটাকে আমি রাস্তায় মারা মারি করতে দেখেছি। যদিও জানি না, কেন করছিলো। তবুও বলবো তুমি জীবনে যাই করো ভেবেচিন্তে করো। আপা আমি তোমার ক্ষতি চাই না। আমি চাই তুমি নিজের কথা ভাবো। অবশ্যই গভীরভাবে ভাবো যে ভাবনা শেষে তুমি নিজের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা সঠিক হবে। আমি এমনটাই চাই।”
আমি কাজলের কথায় হেসে চলে আসি। তাকে কোন জবাব দেই না। কাজলও জবাবের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে না। সে নিজের ঘরে চলে যায়।
___
পরবর্তী দিন সকালে রাস্তার মোড়ে এসে শান্তকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। শান্ত খুব ভোরেই বাস ধরতে চলে গিয়েছে। এই শহর ছেড়ে অনেকটা সময়ের জন্য চলে গিয়েছে। তার সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে কি-না জানি না। রোজ অফিস যাবার সময় মোড়ের দোকানে বসে তাকে কারো সঙ্গে তর্ক করতে কিংবা সিগারেট টানতে দেখা হবে না। কখনো হয়তো নির্জন রাতে ছাদে পাশাপাশি বসে গল্প করা হবে না। আপাতত হবে না। তবে ভাগ্যে থাকলে হয়তো ভবিষ্যতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে অফিসের উদ্দেশ্য এগিয়ে গেলাম। রিকশা উঠে বসতেই রিকশাচালক মামা বললো,“কোথায় যাবেন?”
আমি স্থানের নাম বলতে লোকটি বলে উঠলে,“সেখানে কেন যাবেন, কারো সঙ্গে দেখা করতে?”
“না। ওখানে আমার অফিস। আমি চাকরি করি।”
আমার কথা শুনে মামা কয়েক মূহুর্তে চুপ করে যায়। অতঃপর বলে,“ওহ। বুঝলে মা আজকালকার ছেলে মেয়েরা একদমই ভালো না। মেয়েরা তো প্রচুর খারাপ।”
এটা বলে মামা তার অভিজ্ঞতা বলতে শুরু করেন। যেটা শুনতে আমার একদমই ভালো লাগছিলো না। বিরক্ত লাগছিলো। তিনি বলেন,“সেদিন এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রিকশায় উঠলো। কয়েক ঘন্টার জন্য ভাড়া করলো। বললো কোন কথা না বলে রাস্তায় শুধু চালাতে। সে যত টাকা লাগে দিবো। মাঝপথে একটি ছেলেকে ওঠালো। ছেলেটা উঠেই বললো, মামা রিকশা চিপাচাপা জায়গা দিয়ে নিয়ে যান। যেখানে মানুষ নাই। তারপর হুডি টেনে দিয়ে….।”
এরপর মামার কথাগুলো শুনতে পেলাম না। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে আমি আমার হাতের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। স্বভাবগত কারণে আমি চেয়েও তাকে থামতে বলতে পারছি না। সেই মূহুর্তে মনে হলো পাশে শান্ত বসা। যে আমাকে বলছে,“নিজের কথা নিজেকেই বলতে হয়। আপনার হয়ে কেউ আপনার বিরক্তি প্রকাশ করবে না। এটা আপনাকেই করতে হবে।”
এই কথায় আমার মনের মধ্যে কিছুটা সাহস জন্মায়। তাই বলে উঠলাম,“থামুন মামা। হয়তো এসব আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা। দিন দুনিয়ায় এমন অনেক ঘটনা ঘটে। তাই বলে এসব জনে জনে বলাটা আপনার উচিত নয়। এটা আপনার বয়সের সঙ্গে যায় না। বরং আপনি যখন দেখলেন তারা আপনার রিকশায় উঠে ভুল কাজ করেছে তখন আপনার উচিত ছিলো টাকার চিন্তা না করে তাদের নামিয়ে দেওয়া। যেহেতু সেটা করেননি এখন ঐ ঘটনা ভুলে যান। প্লীজ থামুন।”
রিকশাচালক চুপ করে যায়। আমিও কথাগুলো বলতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এমন অনেক রিকশাচালক থাকে যারা একা মেয়ে রিকশায় উঠলেই একটি বেশিই কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কখনো বা সেটা সীমা অতিক্রম এভাবেই অন্যের নামে পরনিন্দা পরচর্চায় রূপ নেয়। আমি জানি, এসব ঘটনা যখন ঘটে তখন তারা ঠিকই রিকশার সামনে বসে মজা নেয়। আবার পরবর্তীতে আমাদের মতো একা মেয়ে পেয়ে এসব বলে অন্যরকম উদ্দেশ্য পূরণ করার চেষ্টা করে। এজন্য আমি সবসময় রিকশায় ওঠার সময় একটু বয়স্ক রিকশাচালক দেখে উঠি। কারণ তারা সচরাচর খারাপ হয় না। কিন্তু আজকের জন তার বয়স ভুলে গিয়ে এসব কথা বলতে শুরু করেছে। যা সত্যি বিরক্তিকর। দুনিয়াটা যে কত খারাপ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা বুঝতে আর বাকি নেই। হ্যাঁ সেই মেয়েটা বা ছেলেটা যা করেছে সেটা ভুল ছিলো। অবশ্যই তারা খারাপ। তাই বলে একা মেয়ে পেয়ে সেসব গল্প শোনাটা কখনোই কোন ভালো লোকের কাজ হতে পারে না। অতঃপর আমার গন্তব্য চলে আসতে আমি রিকশা থেকে দ্রুত নেমে তার দিকে টাকা এগিয়ে দিয়ে চলে আসলাম। তার মুখটা দেখে নিয়েছি, অবশ্যই পরবর্তীতে তার রিকশায় উঠবো না।
★
বেশ কিছুদিন কেটে যায়। এই ক’দিনে শান্তকে ভীষণ মিস করছিলাম। তবে সংকোচের জন্য তাকে ফোন দেইনি। ইতিমধ্যে বাড়িতেও বেশ কিছু পাত্রপক্ষ এসেছে কাজলকে দেখতে। সবাই একই কারণে বিয়ের কথা আর আগায়নি। এসবে বাবা, মা যখন হতাশ হয়ে উঠেছিলো সেই মূহুর্তে একদল পাত্রপক্ষ নিজ থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলো। তারা বাবার ফোন নাম্বার যোগাঢ় করে তাকে ফোন দিয়ে জানায়,“আমরা আপনার মেয়েকে দেখতে আসতে চাই। আমাদের ছেলে দেখেছিলো, তার পছন্দ হয়েছে।”
বাবা এক কথায় তাদের আসতে বলে দেয়। পরবর্তী দিন তারা এসে কাজলকে দেখে যায়। কাজল পাত্রকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। এই ছেলেটি সেদিন রাস্তায় দেখা হওয়া ছেলেটা। ছেলেটির নাম জয়। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাবা, মা পাত্রের খোঁজ নিয়ে সব ঠিক দেখে তারা পছন্দ করে ফেলে। অন্যদিকে জয়ের সেদিন রাস্তাতে কাজলকে ভালো লেগে যায়। সেজন্য তারা বিয়েতে ভাঙানি পেয়েও রাজি হয়। তাদের কাছে মনে হয়, এসব মানুষ হিংসায় মানুষের নামে বদনাম করে বেড়ায়। এই ঘটনা আমার কানে আসতে আমি খুশি হয়ে যাই। এমন পাত্রই তো চেয়েছিলাম আমার বোনের জন্য। যার চিন্তাধারা খুব ভালো হবে। যতটা শুনেছি তাতে জয়কে আমার ভালো মানুষই মনে হলো।
দুই পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ঠিক হতে বাবা, মা আমাকে তাদের ঘরে রাতে ডেকে পাঠায়। আমি তাদের ঘরে যেতে বাবা বলে,“তোর বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুই তো সবই জানিস। আমাদের অবস্থা সম্পর্কেও জানিস।”
“হ্যাঁ।”
এই কথা বলে আমি বাবা, মায়ের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাই। তারা আসলে কি বলতে চেয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারছি না। তখন মা বলে,“বুঝিস তো মেয়ের বিয়ে। অনেক খরচ। পাত্রপক্ষের দাবী না থাকলেও তাদের অনেককিছু দিতে হবে। এটা মেয়ের বাবা, মা হিসাবে আমাদের দায়িত্ব।”
“হ্যাঁ। এখন আমি কী করবো?”
আমি শান্ত গলায় এই প্রশ্নটি করতে আমার বাবা বলে,“বড় বোন হিসাবে তোরও তো দায়িত্ব আছে। তাই আমরা চাচ্ছিলাম তুই দুই লাখের মতো টাকা যদি দিতি। তাহলে বিয়ের অর্ধেক খরচ হয়ে যেতো। বাকিটা আমরা কোনরকম ম্যানেজ করে নিতাম।”
“দুই লাখ টাকা!”
আমি অবাক হয়ে বাবা, মায়ের দিকে তাকালাম। পরক্ষণে বললাম,“আমি এত টাকা কোথায় পাবো? আমার কাছে তো কোন টাকা নেই। তোমরা তো জানো, আমার সব টাকা তো তোমাদেরই দিয়েছি।”
“টাকা নেই বলে কী কাজলের বিয়েটা হবে না? আবার বিয়েটা ভাঙবে?”
মা এবার আহাজারি শুরু করে। কান্না করে আফসোসের সুরে বলে, এবার কাজলের বিয়ে ভাঙলে আর তার বিয়ে হবে না। এক পর্যায়ে বাবা বলে,“পুষ্প তুই ব্যাংক লোন নে তাহলেই তো হয়ে যায়।”
এখানে বাবার কথায় আমি স্পষ্টভাবে বুঝলাম তারা আমাকে ব্যাংক লোন নিয়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার জন্যই ডেকেছে। এখানে বাবা, মা নানা আবেগময় কথা বলে। সেই সাথে তারা আমাকে খুব ভালোভাবে বোঝায়, এই টাকাটা কেন দরকার? আমি অবশ্যই এই টাকা সপ্তাহ খানেকের মাঝে তুলে দিবো। আমি সেই সময়ে কোন কথা বলতে পারি না। আমার নিরবতাকে তারা সম্মতি ধরে নেই।
আমি ঘরে আসতেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। দুই লাখ টাকা লোন। এই ঋন শোধ করতে পারবো আমি? আমার মাথায় এসব চিন্তা ঘুরছিলো। বাবা, মায়ের কথায় বুঝলাম তারা তাদের নামেও একটা লোন নিবে। আর একটা আমার নামে নিতে বলছে। এটা দিয়ে কাজলের বিয়ে দিবে। তবে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম এই দুটো ঋনই তারা আমাকে দিয়ে শোধ দেওয়াবে ভবিষ্যতে। শোধ দিতে না পারলে হয়তো মস্তবড় বিপদে পড়ে যাবো। এসব নিয়ে ভাবছিলাম সেই মূহুর্তে শান্ত ফোন দেয়। এতদিন পর শান্তর ফোন পেয়ে আমি অবাকের সঙ্গে খুশিও হয়ে যাই। আমি ফোনটি কানে তুলতে শান্ত বলে,“আমার একদিনের সিগারেটের পয়সা মে রে দিলেন। এত সংকোচ কিসের? বন্ধুকে ফোন দিতে এত ভাবতে হয়?”
আমি শান্তর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যাই। সে ইতিমধ্যে বুঝেও গিয়েছে আমি কেন তাকে ফোন দেইনি। আমি এটা ভেবে কিছুটা খুশিই হই। কেউ একজন তো রয়েছে যে আমাকে বোঝে। আমি চুপ করে আছি দেখে শান্ত বলে,“চুপ করে থাকবেন। তবে আমার ফোনে রিচার্জ করা বৃথা গেল?”
“কেমন আছেন?”
আমি শান্ত গলায় প্রশ্নটি করি। শান্ত খুব সুন্দরভাবে বলে, সে সবসময় ভালো থাকে। অতঃপর আমাদের মাঝে টুকটাক কথা হয়। কথার এক পর্যায়ে আমি লোনের বিষয়টি বলে শান্তকে বলি,“এবার আমার কী করা উচিত?”
“ফোনটি দিয়ে ভালোই করলাম তাই না? আপনার কাজে লেগে গেলাম?”
”হ্যাঁ।”
আমি কথাটি বলতে শান্ত মুখের উপর ফোন কেটে দেয়। আমি পুরো হতভম্ব হয়ে যাই। আমি কিছু না ভেবে কেটে গেছে ভেবে শান্তকে ফোন দেই। সে ফোনটি ধরে বলে,“এখন আমি ফোন না দিলে অবশ্যই আপনি আমাকে ফোন দিতেন না। আমি জানি আপনি আপনার সংকোচ কাটিয়ে ফোন দিতে পারতেন না। যেহেতু আমি অনেকটা দূরে চলে এসেছি। আমাদের এখন দেখা হবে না। তাই আপনি দ্বিধায় পড়ে গিয়েছেন আমাকে ফোন দিবেন কি-না। আগে তো ফোন দিতেন দেখা করার কথাটি বলার জন্য। তবে এখন কি বলবেন সেটা ভেবে না পেয়ে ফোনই দিচ্ছেন না। আপনার এই কর্মকান্ডে বোঝা যায় আপনি এখনো চল্লিশে দাঁড়িয়ে আছেন। একটুও পরিবর্তন হননি। এমন মানুষের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব করা মানায় না। তাছাড়া আজ আমি ফোন না দিলে আপনি সাহস করে এখন ফোন দিতেও পারতেন না। এসবে যা বুঝলাম তাতে মনে হয়, আমাদের বন্ধুত্ব সম্ভব নয়। যে বন্ধুত্ব দূরে চলে গেলে শেষ হয়ে যায় সেটা কখনো বন্ধুত্ব হতে পারে না।”
আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শান্ত এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যায়। অতঃপর আবার ফোনটি কেটে দেয়। আমি শান্তর কথাগুলো ভেবে ভীষণ কষ্ট পাই। মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। সেই মূহুর্তে শান্তর নাম্বার থেকে একটি ম্যাসেজ আসে। যেখানে লেখা,“আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে পুষ্প। আপনি খুব ভালোভাবে জানেন এই লোন আদৌ আপনার পরিবারের প্রয়োজন কি-না। তো নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন।”
এই ম্যাসেজটি দেখে আমি শান্তকে ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাই। আমি প্রথমে কিছুটা হতাশ হলেও পরক্ষণে শান্তর সমস্ত কথা ভেবে মুচকি হাসি দেই। আমার মুখে ফুটে ওঠা এই হাসির অর্থ হলো আমি বুঝতে পেরেছি শান্ত কেন ফোনটি বন্ধ করে রেখেছে। সেটা বুঝতে পেরে আমি মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই। যদিও ভয় পাচ্ছিলাম। তবুও ভয়কে জয় করে আমি বাবা, মায়ের ঘরে এসে দাঁড়াই। মা আমাকে দেখে তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,“লোন নিতে কি কি করতে হবে সেটা জানতে এসেছিস। এ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তোর বাবাই সব করে দিবে।”
“আমি কোন ব্যাংক লোন নিবো না।”
আমার কথাটি বাবা, মায়ের কানে যেতে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। তারা আমার মুখের কথা বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের আরও অবাক করে দিয়ে আমি বলি,“বাবার ব্যাংক একাউন্টে তো অনেক টাকা আছে। যতটা আছে তা দিয়ে কাজলের বিয়ে হয়ে যাবে। সেই সাথে আরও কিছুটা থাকবে। এই অবস্থায় শুধু শুধু আমরা ঋন করবো কেন?”
’
’
চলবে,