ইচ্ছেঘুড়ি পর্ব-১৫+১৬

0
21

#ইচ্ছেঘুড়ি (১৫)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

আমার কথা শুনে মা আমার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। ন্যাকা কান্না কেঁদে বললেন,“এই দিন দেখার জন্য তোকে মানুষ করেছি। বড় বোন হয়ে ছোট বোনের জন্য সামান্য কিছু করতে চাস না। এত স্বার্থপর তুই? এমন স্বার্থপর হবি বলে তোকে বড় করেছি।”
মায়ের এসব কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শান্ত গলায় বললাম,“বড় বোন হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব পালণ করতাম। যদি আমাদের সত্যি টাকা না থাকতো। কিন্তু বাবার ব্যাংক একাউন্টে তো অনেক টাকা আছে। সেদিন আমি তার ফোনে ব্যাংকের ম্যাসেজ দেখেছি। যদিও আমার ফোনে হাত দেওয়া উচিত হয়নি। তবে তোমরা এত টাকা জমিয়ে রেখেও সবসময় ঋন ঋন করো, এখন আবার বিয়েতে যেখানে লোনের দরকার নাই সেখানে লোন নিতে চাইছো। এটা তো ঠিক নয়। যেহেতু আমাদের টাকা আছে সেহেতু আমরা কেন অকারণে লোন নিবে। শুধু শুধু মাথায় বোঝা কেন চাপাবো?”
মা এসব কথায় প্রচন্ড রেগে যায়। সে আমাকে একের পর এক কথা শোনায়। তার এক কথা লোন নিতে বলেছে লোন নিবো। বাড়তি কোন কথা হবে না। মায়ের চিৎকার চেঁচামেচিতে আমি ভয় পেয়ে যাই। যতটা সাহস সঞ্চয় করে কথাগুলো বলেছিলাম সেটা এখন আর নেই। তবে আমি কিছু না বললেও আমার আচরণে বুঝিয়ে দেই, আমি কোনমতেই লোন নিবো না। এসব বুঝতে পেরে বাবা বলে,”বাহ্। বাবা মায়ের ফোন ঘাটতে শুরু করে দিয়েছো। চোরের মতো বাবা, মায়ের দিকে নজর রাখছো। মুখের উপর কথা বলছো। বেশ উন্নতিই তো তোমার হয়েছে। এত উন্নতি কিভাবে করলে?”
আমি এসব কথার জবাব না দিয়ে চলে আসি। আমাকে ঘরের বাহিরে যেতে দেখে মা বলে,”নিশ্চিত তোমার মেয়ের রঙ লাগছে। কোনদিন শুনবো আমাদের মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিয়ে তোমার মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এই মেয়ের লক্ষণ ভালো নয়। আমাদের মুখের উপর না বললো। যে মেয়ে আমাদের কথায় শুধু হয় হয় করতো। সেই মেয়ে আজ মুখের উপর না বলছে। এত স্বার্থপর আচরণ করছে। বাবা, মা, বোন কারো প্রতি কোন টান নেই। এই মেয়ের লক্ষণ মোটেও ভালো নয়।”
মায়ের এসব কথায় বাবা তাকে থামায়। অতঃপর কিছু একটা বোঝায়। সেসবে কান না দিয়ে আমি নিজের ঘরে চলে আসি। সেই মূহুর্তে কাজল আমার কাছে আসে। সে ইতিমধ্যে বাহির থেকে আমাদের সব কথা শুনেছে। সে এসে বলে,“আপা জীবনে প্রথম ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছো।”
কাজলের কথা শুনে আমি তার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলাম। কাজল মুচকি হেসে বলে,“তুমি তো এমন ছিলে না। হঠাৎ এমনটা করার সাহস কিভাবে পেলে?”

“আমি একটি পরশ পাথর পেয়েছি। তার ছোঁয়ায় আমি আজকে এতটুকু করতে পেরেছি।”
এই কথাটি বলার সময় আমার চোখের সামনে শান্তর হাসিমাখা মুখটি ভেসে উঠে। কাজল আমার কথার জবাবে বলে,“যেহেতু পরশ পাথর পেয়েছো সেহেতু এত অল্পে থেমে গেলে তো চলবে না। আপা আমি তো তোমায় আগেই বলেছিলাম বাবা, মা সারাদিন যে নিজেদের ঋনী দাবি করে এটা মিথ্যা। একটা মানুষের সারাজীবন ধরে এত ঋন হলো অথচ কোন কাজবাজ দেখা যাচ্ছে না সেই টাকার। এটা খুবই অদ্ভুত। কিন্তু তুমি অতিব নরম মনের এবং শান্ত স্বভাবের হওয়ায় এসব কথায় গুরুত্ব দিলে না। আজ তো বুঝলে তাদের ঋন নেই। উল্টো তাদের কাছে জমা অনেক টাকা রয়েছে। তবুও তারা এমনটা করে শুধুমাত্র তোমার থেকে টাকা হাতানোর জন্য। সেই সাথে তোমার জীবনটা নষ্ট করতে।”
কাজল এই কথা বলে একটু থামে। পরক্ষণে বলে,“তারা আসলে তোমার পিছনে খরচ করা সমস্ত টাকাগুলোকে নিজেদের অপচয় ভাবে। এখন তোমাকে বিয়ে দিলে তো আরও খরচ হবে। এত অপচয় করতে চায় না সেই সাথে তোমার চাকরির টাকাগুলো হাতছাড়া করতে চায় না। সেজন্য এসব করছে। এগুলো আমি যেমন বুঝতে পারছি, তুমিও বুঝতে পারছো। তাও কেন চুপ করে আছো? আজকের ঘটনাই দেখো, তোমাকে এত কথা শোনালো তাও তুমি কিছু বললে না। শুধুমাত্র ব্যাংক লোন নিবে না সেটাই বললে। কিন্তু তুমি যদি সেই কথার সঙ্গে মায়ের বলা প্রতিটি কথার জবাব দিতে তবে অবশ্যই মা থেমে যেতো। এটাই তোমার ভুল। তুমি তাদের জবাব না দিয়ে তাদেরকে তোমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছো। এই করে জীবনটা নষ্ট করছো।”
কাজলের এসব কথায় আমি জবাব না দিয়ে হাসি দিলাম। এসবের জবাব দেওয়ার মতো ভাষা আমার নাই। আমার মাঝে এতটা শক্তি নেই যার সাহায্য আমি বাবা, মায়ের কথার পিঠে কঠিন ভাষায় কিছু শোনাবো। আমার এসব ভাবনার মাঝে কাজল বলে,“পরশ পাথর যখন পেয়েছো তখন তার যথাযথ ব্যবহার করো। যে তোমার জীবনে পরশ পাথর হয়ে এসেছে তার কথা ভেবে অন্তত নিজের হয়ে লড়াই করো।”
আমি কাজলের কথায় মাথা নাড়ালাম। মুখে কোন জবাব দিলাম না। কাজল কিছুটা ভেবে বলে,“আবার পরশ পাথর হিসাবে যাকে ভাবছো তার সম্পর্কেও ভালোভাবে জেনে নিও। না ভেবে ভুল করার চেয়ে শতবার ভেবেচিন্তে এগিয়ে যাওয়া ভালো।”

আমি কোন কথা না বলে কাজলকে জড়িয়ে ধরলাম। এই মেয়েটা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। ছোটবেলায় মায়ের আচরণে যখন ঘরের কোনে মুখ লুকিয়ে কান্না করতাম তখন কাজল এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরতো। আমাকে সান্ত্বনা দিতে বলতো,“মা খুব পঁচা।”
আমি যখন জিজ্ঞেস করতাম,“মা তো তোমার সঙ্গে কিছুই করে না। তবে পঁচা হলো কিভাবে?”

“আমার আপাকে তো বকে। আপাকে বকা, মা রা আর আমাকে মা রা কি আলাদা?”
কাজলের এসব কথায় আমি এই ঘর নামক নরকে শান্তি খুঁজে পেতাম। বেঁচে থাকার আশা পেতাম। যদিও মা চেষ্টা করতো আমরা দুই বোন সবসময় দূরে দূরে থাকি। আমাকে ভাবনায় মগ্ন দেখে কাজল তাকিয়ে থাকে। অতঃপর মনেমনে বলে,“আমি জানি তুমি কখনো বাবা, মাকে বোঝাতে পারবে না তারা জীবনে কতটা ভুল করেছে। তবে চিন্তা করো না আপা। তুমি শুধু একবার পদক্ষেপ নাও, বাকিটা আমি সামলে নিবো। বাবা, মা তখন ঠিক বুঝবে তারা জীবনে কত ভুল করেছে।”

___
বাড়িতে কাজলের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বাবা, মা আমার সঙ্গে কথা বলছে না। সেই সাথে বিয়ের কোন কাজে ডাকছেও না। তার মাঝে তো মা আত্মীয়দের কান্নাকাটি করে বলছে,“আর বলবেন না আপা। এই বিয়ের তোড়জোড় করতে আমাদের যা অবস্থা হয়েছে। কাজলের বাবা খুব কষ্ট করে টাকা যোগাঢ় করেছে। কেউ এক চিমটি সাহায্য করেনি। যেখানে নিজের মেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে অন্যরা যে সহজে ধার দিবে না জানারই কথা। কি বলবো? দুনিয়াটা স্বার্থের খেলা। ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেলে স্বার্থপর হয়ে যায়। ভুলে যায় তাদের এতটা বড় করতে বাবা, মাকে কতটা কষ্ট করতে হয়েছে।”
মা আমাকে দেখে এসব কথা বলে যাচ্ছে। আমি এসবে কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করলাম না। মনেমনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরের ভেতর এসে বসে রইলাম। যদিও বিয়ের সব বিষয়ে কাজল আমার খোঁজ করছিলো। আমিও তার ডাকে যাই। কাজলের জন্যই বাধ্য হয়ে সবার মাঝে যাওয়া। নয়তো ইচ্ছে ছিলো না। গায়ে হলুদের সময় আমি কাজলের পাশে গিয়ে বসতে এক ভাবী বললেন,“তা তোমার বিয়েটা কবে হবে? বড়টার আগে তো ছোটটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? বড়জন বিয়ে করবে না?”
তার এই কথায় আমি বিরক্তি নিয়ে তাকাতে পাশ থেকে অন্য এক কাকি বলে,“আরে এই মেয়ের তো বিয়ে হবে না। সমস্যা আছে৷ শারীরিক সমস্যা।”
এই কথার জবাবে আমি খুবই সুন্দরভাবে বললাম,“আপনারা আমার মেডিকেল রিপোর্ট দেখেছেন? না আমার সঙ্গে থেকেছেন? তাহলে জানলেন কিভাবে আমার শারীরিক সমস্যা রয়েছে। শুধু শুনেছেন বলে? শোনা কথা এভাবে প্রচার করা কতটা যৌক্তিক?”
একটু থেমে স্পষ্ট গলায় বললাম,“আমার কোন সমস্যা নেই। আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না তাই বিয়ে হয়নি। এজন্য কাজলের বিয়েটা আগে হচ্ছে। তাই দয়া করে সারা পাড়া ভুল তথ্য রটাবেন না। এটা আপনাদের বয়সের সঙ্গে যায় না।”
আমার কথায় তারা যে বেশ অসন্তোষ হলো সেটা আমি বুঝতে পারলাম। তবে সেসবে গুরুত্ব না দিয়ে ঘরে চলে গেলাম। আমার চলে যাওয়া দেখে কাজল তাদের উদ্দেশ্য বলে,“মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এমনই হয় গো। তাই বেশি না ভেবে বরং বিয়েতে এসেছেন মজা করুন। অন্যের বাড়ির মেয়েদের কথা ভাবতে গিয়ে দেখা গেল আপনার মেয়েদের খোঁজ রাখাই হলো না। তাই বলবো অন্যের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাবুন।”

কাজলের এসব ব্যবহারের সঙ্গে তারা পরিচিত হলেও আমার ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত নয়। সেজন্য তারা আমার কথা ঠিক হজম করতে পারেনি। সেই সঙ্গে বিয়ের কনে হয়েও কাজল যে এমনভাবে কথা বলছে এটা নিয়েও কানাকানি করছে। এসব কথা মায়ের কাছে পৌঁছাতে সে আমার কাছে আসলো। আমাকে শান্ত গলায় বলে,“কী চাস তুই? কাজলের বিয়েটা ভেঙে যাক? এত মুখের চোপা আসলো কিভাবে? কাজলের বিয়ে দেখে হিংসা হচ্ছে? হিংসায় জ্বলেপুড়ে বিয়েটা ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছিস, তাই মুখের এত জোর?”

“আমি কিছুই করিনি। চিন্তা করো না এই বিয়ে ভাঙবে না। সেই সঙ্গে তোমাদের সব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে দিবো।”

”মানে?”
আমার কথার ভাবার্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে। আমি শান্ত গলায় বলি,“মা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

“কিসের?”
মা কৌতূহলী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুবই শান্তভাবে বলি,“পরে বলবো।”
আমার কথায় মা খুবই বিরক্ত হয়। বিরক্তি নিয়ে অনেক কথা শোনায়। অতঃপর বলে,“বিয়ে বাড়িতে ভদ্র মানুষের সঙ্গে থাকতে পারলি থাকবি নয়তো না। তোর জন্য আমার মেয়ের বিয়েটা যদি ভাঙে তবে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি তোর হিংসা বুঝতে পারছি। তোর বিয়েটা না দিয়ে কাজলের বিয়েটা দিচ্ছি বলে হিংসায় জ্বলেপুড়ে ম রছিস। আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি।”
আমি মায়ের কথায় কোন জবাব দিলাম না। মায়ের ডাক পড়তে মা চলে যায়। আমি সেখানেই বসে পড়ি। মনেমনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্তর কাছে ফোন দেই। শান্ত ফোনটি ধরতে আমি বলি,“আমি ভীষণ স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি শান্ত।”
আমার এই কথার জবাবে শান্ত শব্দ করে হাসে। অতঃপর বলে,“শেষ সময়ে এসে পিছিয়ে যাচ্ছেন? যান সমস্যা নাই। চাকরিটা হারিয়ে ঘরে ফিরুন। তারপর আপনার বাবা-মা আপনাকে নিজ দায়িত্বে চুলের মুঠি ধরে বের করে দিবে। চিন্তা নাই। তখন এসে আবার বলবেন ভুল করেছি শান্ত।”
শান্ত প্রচন্ড ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলছে বুঝতে পেরে আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,“আপনি আমাকে উপহাস করছেন?”

”তো কী করবো? নাচবো?
আপনি এমন কেন? একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থির থাকতে পারেন না কেন? এত দ্বিধা কিসের আপনার?”
শান্ত কিছুটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বলে। তার রাগ বুঝতে পেরে আমি বলি,“আচ্ছা স্যরি। আর দ্বিধায় ভুগবো না।”
এটা শুনে শান্ত শব্দ করে হাসে। অতঃপর মজার সুরে বলে,“এই কথা বলতে দেরি আপনার আবার দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে দেরি নেই। তাই আর যাই হোক আপনার কথা আমি বিশ্বাস করছি না।”

”আমি আপনার বড়। আপনার আমার সাথে এমন মজা করা কিন্তু যায় না। বয়সের দিকে তাকান।”
আমার কথা শুনে শান্ত আরও জোরে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে,“আপনার বয়সের সঙ্গে আপনার কোন কর্মকান্ডই যায় না। তাই…।”
কথাটি বলে থেমে যায় শান্ত। ফোনের ওপাশ থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,“কী হয়েছে?”

“হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে গেলাম। নিশ্চয় আপনি অভিশাপ দিয়েছেন। নয়তো আমার সঙ্গে এটা তো হওয়ার কথা নয়।”
শান্ত কিছুটা ভাব নিয়ে কথাটি বলে। এই কথা শুনে আমি হেসে দেই। আমার হাসির শব্দ পেয়ে শান্ত বলে,“আস্তে। আপনার বাড়িতে অনেক লোক রয়েছে। পরে আপনাকে পাগল ভেবে পাগলা গারদে দিয়ে আসবে।”
এটা বলে শান্ত নিজেই আবার হেসে দেয়। আমি এটা শুনি বলি,“আপনিও আস্তে হাসুন। পরে আবার খাট থেকে পড়ে যাবেন। শেষে তো কোমর ভাঙলে আমারই দোষ দিবেন।”



চলবে,

#ইচ্ছেঘুড়ি (১৬)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

কাজলের বিয়েটা হয়ে যায়। জয়ের সঙ্গে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে কাজল পাড়ি জমায়। বিদায়ের সময় মা খুব ভেঙে পড়ে। নিজের মেয়েকে পরের ঘরে পাঠাতে গিয়ে কান্নাও করে দেন। আমি দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের ভেজা চোখগুলো দেখি। ম্লান হেসে ঘরের ভেতর চলে আসি। এই মূহুর্তে মাকে সামলানোর জন্য অনেকে রয়েছে। সেখানে আমার প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি গেলে অবশ্য মা বিরক্ত হবে। তাই ঘরের মধ্যে চলে আসলাম।

বাহিরের কোলাহল ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে। আত্মীয় স্বজন সব বিদায় নিচ্ছে। বাবা, মায়ের বিশেষ অনুরোধে কাছের কয়েকজন থেকে গেল। আমি সেসবে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। অতঃপর ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য নতুন শহর। সেদিন রাতে শান্তকে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি বলার পর তার কথাগুলো শুনে মনে হলো এবার সময় এসেছে একটু স্বার্থপরতার। তাই তো কয়েকদিনের মাঝে বদলির আবেদন করে ফেলেছি। যদিও শান্ত, কাজল এরা চাইতো আমি বাবা-মায়ের কথার জবাব দেই। প্রতিবাদের ভাষায় নিজের অবস্থান শক্ত করি। কিন্তু আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়। এতদিন যাদের মুখের উপর একটি শব্দ অব্দি করিনি, তাদের এখন কিভাবে জবাব দেই? এতটা পরিবর্তন আমার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সেজন্য যেটা সম্ভব সেটাই করলাম। নিজের কথা ভাবলাম। তবে সেটা বাবা, মাকে কোনরকম জব্দ না করে। আমি চাই না তাদের আমার কথার তীরে দগ্ধ করতে। নিজের জন্য ভাবার অর্থ তো এটা নয়, যে তোমার সঙ্গে খারাপ করেছে তুমিও তার সঙ্গে খারাপ করো। এটা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে পাড়ায় যা আমার সম্পর্কে রটেছে সেটা চাইলেই এখন তর্ক করে মুছে ফেলা যাবে না। আমি সেটা পারবো না। তাই নিজের কথা ভেবে অন্যভাবে জীবন শুরু করলাম। নতুন শহরে বদলি হয়ে সেখানে জীবনযাপন করতে শুরু করতে যাচ্ছি। যা বেতন পাই তাতে দিব্যি চলে যাবে। সেই সঙ্গে অফিস থেকেই থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। আমি অবশ্য শান্ত যে শহরে থাকে সেখানেই যাচ্ছি। যদি সত্যি বলি তবে ঐ শহরে শান্ত আছে। সে পাশে থাকলে ভরসা পাবো সেই আশায় সেখানেই বদলি নিয়েছি। এজন্য অবশ্য অফিসে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে ম্যানেজ করে নিয়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে আমি বাসে উঠে বসলাম। বাসের জানালা দিয়ে নিজের শহরটাকে একবার দেখে নিলাম। এই শহরে আবার কবে ফেরা হয় জানি না। তাই প্রান ভরে শহরটাকে দেখে নিচ্ছি।

____
বেশ বেলা হয়ে যাওয়ার পরও আমি ঘর থেকে বের হচ্ছি না দেখে মা কিছুটা অবাক হলো। যেহেতু আমার অফিস রয়েছে সেহেতু এতক্ষণে বের হয়ে যাওয়ার কথা। আমি আজও অফিস বন্ধ দিবো ভেবে মা বিরক্ত হয়ে আমার ঘরে আসে। ঘরে এসে আমাকে দেখতে না পেয়ে হচচকিয়ে যায়। বিছানার উপর পড়ে থাকা চিঠিটা হাতে নেয়। অতঃপর মনেমনে বলে,“এই মেয়েটা আবার কোন কান্ড করলো। মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মা রবে।”
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে মা চিঠিটা খোলে। কিছুটা পড়ে সে বাবাসহ সবাইকে ডাকে। চিঠির উপর প্রথমেই লেখা,“আমি চলে যাচ্ছি বাবা, মা। তোমরা ভালো থেকো।”
এটা দেখেই মা পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে। তার ধারণা হলো আমি কোন ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে তার মান সম্মান ডুবিয়েছি। বাড়িতে থাকা কয়েকজন আত্মীয় যা ছিলো সবাই ইতিমধ্যে মায়ের কাছে আসে। মায়ের কাছে আমার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। মা যখন আহাজারি করে বলে,“জানতাম এই মেয়ে আমার শান্তি কেড়ে নিবে। আমাদের কখনো শান্তি দিবে না।”

“কিন্তু ওর না শারীরিক সমস্যা ছিলো। তবে ছেলের সঙ্গে পালালো কেন?”
মায়ের কানে এই কথা যেতেই চুপ করে যায়। সে এখন বলতে তো পারে না ওটা তার রটানো এক মিথ্যে গল্প। এসবের মাঝে বাবা বিরক্ত হয়ে পুরো চিঠি পড়তে শুরু করে। চিঠিতে আমি লিখেছি,

“আমি চলে যাচ্ছি বাবা, মা। তোমরা ভালো থেকো। আমি জানি তোমরা খুব কষ্ট পাবে। আমার বেতনের টাকাগুলো হাতছাড়া হয়ে গেল। আমার পিছনে এত বছর তোমরা যে খরচগুলো করেছো সেটা বৃথা গেল। সেই টাকা উসূল করা হলো না।

একটা সময় পর, যখন আমি জেনেছি আমি তোমাদের সন্তান নই। তোমরা আমার এবং কাজলের মধ্যে এত বৈষম্য করো কারণ আমি যে তোমাদের সন্তান নই। তখন আমার মনে হয়েছিলো, তোমরা সঠিক। একটা এতিম মেয়েকে এত বছর বড় করেছো তার জন্য তোমরা তো দাম চাইবেই। তোমাদের ভাবনা ভুল নয়। তাছাড়া এই অনাথ, পরিচয়হীন মেয়েকে বড় করে এখন যখন সে চাকরি করছে তখন বেকার নিজেদের লাখ টাকা খরচ করে তার বিয়ে কেন দিবে? এরচেয়ে যতদিন চাকরি আছে ততদিম আরামে তার টাকাগুলো নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য জমাতে তো পারো। আমার কাছে মনে হয়েছিলো তোমাদের এই কাজগুলো সঠিক। আমারও তোমাদের ঋন শোধ করা উচিত। এতটা বছর নিজের কেউ না হয়েও তোমরা আমায় বড় করলে। আমাকে এতটা পড়ালেখা করালে। সেই ঋনশোধ করা উচিত।

সেই সময়ে একজন কেউ এলো আমার জীবনে। না তোমরা যেমন ভাবছো তেমন নয়। সে আমার বন্ধু। বন্ধুত্বের মাঝে নোংরামি খুঁজে বের করো না প্লীজ। এটা আমার অনুরোধ। তো যা বলছিলাম, কেউ একজন এলো আমাকে বোঝালো
তোমরা আমাকে সন্তান না মনে করলেও আমি তো তোমাদের বাবা, মায়ের স্থান দিয়েছি। নিজের বাবা, মা ভেবে সারাজীবন ভালোবেসেছি। তোমরা তোমাদের চোখ দিয়ে তোমাদের যে দারিদ্র্যতা আমাকে দেখিয়েছো আমি সেটা দেখেছি। সেটাকে নিজের ভেবেছি। কারণ আমি তোমাদের বাবা, মা ভেবেছি। বাবা, মায়ের যন্ত্রণা তো সন্তানেরও যন্ত্রণা তাই না? যাদের বাবা, মা ভেবে এতটা বছর পার করেছি। তাদের ঋন কী শোধ করা যায়? যায় না। আমি পারবোও না। তোমরা আমাকে ভালো না বাসলেও একটা জীবন দিয়েছো। হতে পারে প্রচুর বৈষম্য করেছো। তাও তো পড়ালেখা করিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছো। এসবের ঋন শোধ করা সম্ভব নয়। তাই আমি স্যরি। আমি সত্যি স্যরি। আমি পারলাম না তোমাদের ঋন শোধ করতে। তাই তোমাদের ঋন শোধ না করেই চলে গেলাম। নিজের কথা ভেবে নিজেকে খুশি রাখতে নিজের মতো বাঁচতে। চলে গেলাম নতুন এক গন্তব্যে।

এতক্ষণ যা বললো তা একজন মেয়ের কথা ছিলো। এবার একজন মানুষ হিসাবে বলি। স্বার্থপর এই দুনিয়ায় তোমরা আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বার্থপর মানুষ। তাই তোমাদের মতো স্বার্থপর মানুষের কাছে কারো ঋন থাকতে পারে না। কখনোই না। রেগে যেও না। আমি সবটা পরিস্কার করে বলছি৷ তোমরা দাম্পত্য জীবনের সাত বছরেও যখন সন্তানের মুখ দেখোনি তখন স্বার্থপরের মতো আমাকে নিয়ে এসেছিলে নিজেদের ব্যর্থতা লোকাতে। বাবা, মা ডাক শোনার আক্ষেপ মেটাতে। তিন বছর তোমরা বাবা, মায়ের দায়িত্ব পালণ করেছিলে। কিন্তু সেই সময়ে আমার ভাগ্য খারাপ ছিলো। তাই তো মায়ের গর্ভে কাজলের আগমন। যেই আগমনের সঙ্গে তোমাদের স্বার্থপরতার চরম রূপ বাহিরে বের হলো। নিজেদের সন্তান থাকতে পরের সন্তানকে মেনে নিতে তোমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সেদিন যদি আমাকে তোমরা অনাথ আশ্রম রেখে আসতে। তাহলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু তোমরা সেটা করোনি। এখানেও তোমরা স্বার্থপর হয়েছো। কারণ লোক সমাজে সবাই জানে আমি তোমাদের সন্তান। আমাকে তোমরা দত্তক নিয়েছো। এখন নিজেদের সন্তান হতে ফেরত দিলে যে সবাই তোমাদের বদনাম করতো। সেই বদনাম এড়াতে আমাকে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে মেনে নিলে। অতঃপর আমাকে এমন এক জীবন দিলে যেই জীবনটা হয়তো কোন শত্রুও চায় না। যদিও আমাকে ঘাড় থেকে নামাতে তোমরা চৌদ্দ বছর বয়সে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে। কিন্তু আমি তো অবুঝ ছিলাম। তাই বাবা, মায়ের কাছে পড়ালেখা আবদার করছিলাম। আমার কান্নাকাটিতে যখন পাড়া প্রতিবেশী বিষয়টা জেনে যায়। তারা যখন বাল্য বিবাহ দিতে বারণ করে তখন তোমরা না চাইতেও আমাকে বিয়ে দাও না। সবশেষে আমি পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পেলাম। এখন আমার বয়স হয়ে গেলেও তোমরা বিয়ের কথা ভাবোনি। কারণ এখন যে আমি চাকরি করি। টাকা খরচ করে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে মাস শেষে আমার বেতনটা হাতে নেওয়া তোমাদের কাছে বেশি ভালো মনে হয়েছে। আমার জীবন নিয়ে নেওয়া তোমাদের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত ছিলো নিজেদের স্বার্থের জন্য। তাই এখানে আমার কোন ঋন জমা নেই। হতেই পারে না। সেজন্য আজ আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা ভুল নয়। আমি চলে যাচ্ছি। নিজেকে মুক্ত করে নিজের মতো বাঁচতে চলে যাচ্ছি। একজন মেয়ের ভাবনায় হয়তো আমি যেটা করেছি ভুল করেছি। তোমাদের দায়িত্ব সারাজীবন বহন করা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি পারলাম না। তার জন্য স্যরি। তবে একজন মানুষ হিসাবে হয়তো আমি যেটা করেছি সেটা ভুল নয়।

পরিশেষে, এই পৃথিবীতে এমন অনেক বাবা-মা রয়েছে যারা নিজের সন্তানের পাশাপাশি দত্তকের সন্তানকেও খুব ভালোবাসে। হতে পারে গর্ভের সন্তানের জন্য আলাদা মায়া। তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাই বলে দত্তকের সন্তানকে বোঝা মনে করে না। তোমরা তোমাদের আচরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সেইসব বাবা, মাকে অপমান করলে। তাদের ভালো মানুষি সমাজের লোকে প্রকাশ হতে দিলে না। কারণ এই সমাজে খারাপটাই বেশি প্রকাশ হয়। ভালোটা আড়ালে থেকে যায়। তবুও বলবো ভালো থেকো তোমরা। খুব ভালো থেকো। তোমরা ভালো থাকলে আমি খুশি হবো। সত্যি খুশি হবো। বিশ্বাস না করলেও খুশি হবো।”
পুরো চিঠি পড়ে বাবা, মা দুজনে কয়েক মূহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে যায়। পরক্ষণে মা বলে উঠে,“আমাদের টানবে না তাই পালিয়ে গিয়েছে। নাগর ধরে বিয়ে করবে। সেটা না বলে বরং উল্টাপাল্টা লিখে গেছে। আমরা বুঝি না যেন। ফিটার খেয়ে চলি।”

”হ্যাঁ তাই। যেই জানলো আমরা ওর বাবা, মা নই সেই নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলো। স্বার্থপর মেয়ে কোথাকার।”
বাবার মুখ দিয়ে এই কথাটি বের হতে সেখানে থাকা এক আত্মীয় মনেমনে বলে,“এদের মতো মানুষ ঠিক হওয়ার নয়। স্পষ্ট চিঠিতে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কান্না করতে করতে চিঠিটা লিখেছে। তাও এদের ভাবনা দেখো।”
এই মানুষটি ভালো হলেও অন্যরা মজা নেওয়ার জন্য আফসোস করে বলে,“ছিহ তোমরা এসব করে বেড়িয়েছো বাড়িতে। দুই মেয়েকে এভাবে দুই চোখে দেখতে। আমরা বাপু এমন হতে পারতাম না। আমাদের কাছে সবাই সন্তান।”

“বেশি কথা বলো না। তোমাদের আমি কম চিনি না। নিজের পেটের সন্তানের মধ্যে ভেদাভেদ করে সে আসছে জ্ঞান দিতে। তাছাড়া তোমরাই তো তারা না যারা আমার কাজল পেটের আসার পর বলছিলে, একটা আপদ দত্তক নিলি। এখন সেটাকে পালতে বেকার টাকা যাবে। ছেলে হলেও না কাজে দিতো। রোজগার করে খাওয়াতো। এসব কথা তোমরা বলছিলে না? এখন ভালো সাজার নাটক করছো?”
মা প্রচন্ড রেগে ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলে। যা শুনে সবাই চুপ করে যায়। তারা কোন কথা বলার সাহস পায় না। কারণ তারা মুখ খুললে মা যে তাদের বাড়ির কর্মকান্ডও বলে দিবে সেটা তারা বেশ বুঝতে পেরেছে।
___
বাস গন্তব্যে আসতে আমি নেমে পড়লাম। আশেপাশে তাকিয়ে শান্তকে খুঁজছিলাম। সে জানে আমি আসবো। আমি যেহেতু এই শহর চিনি না সেহেতু শান্তকে আমায় নিতে আসতে বলেছিলাম। তবে শান্তকে কোথাও দেখতে পেলাম না। তাকে দেখতে না পেয়ে আমি ফোন বের করে তাকে ফোন দিলে সে ফোন ধরে বলে,“আপনার নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন। তবে আমাদের দেখা এত দ্রুত হবে না। স্যরি আমি আসতে পারলাম না। কারণ এটা আপনার লড়াই৷ জীবনে চলার পথে সারাজীবন আমি আপনার সঙ্গ দেবো না। পৃথিবীর কোন বন্ধুই এটা করে না। এটা আশা করাও উচিত নয়। তাই জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে একাই পথ চলতে শিখুন মিস। নিজের মতো করে জীবনে এগিয়ে যান। জীবনটাকে উপভোগ করুন।”
আমি এসব কথা শুনে ভয় পেয়ে যাই। কিছু বলতে নিবো তখনই শান্ত বলে,“ধরুন এই পৃথিবীতে কেউ আপনার পরিচিত নেই। দুনিয়ার সবাই আপনার অপরিচিত। অপরিচিত এই দুনিয়ায় আপনি কিভাবে নিজের গন্তব্যে খুঁজে নিতেন সেটা ভেবে এগিয়ে যান। আমি জানি আপনি পারবেন। অবশ্যই পারবেন। মনের ভয়কে জয় করে এতদূর যখন আসতে পেরেছেন তখন বাকিটাও পারবেন।”
এটা বলে শান্ত ফোনটা কেটে দেয়। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। আবার ফোন দিতে শান্তর ফোন বন্ধ বলে। আমি অচেনা এই শহরে এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে ব্যাগ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর নিজেকে শান্ত করে মনেমনে বলি,“পুষ্প এত ভয় পাওয়ার কি আছে৷ এটা তোর শহরটার মতোই। এখান থেকে রিকশা বা অটো ধরে ঠিকানা মতো চলে যাবো। এখানে এত ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই। সব শহর তো একই রকম। সেই একই রাস্তা, গাছপালা, বাড়িঘর৷ সবই তো এক। শুধু শহরের নামটা ভিন্ন।”


চলবে,