ইচ্ছেঘুড়ি পর্ব-২১+২২

0
21

#ইচ্ছেঘুড়ি (২১)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। ইতিমধ্যে রায়ানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের হাতটি তার দিক থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমি শুধু সেই হাতটি ধরেছি। আমার চোখে রায়ান খুবই ভালো একজন মানুষ। সেজন্য বন্ধুত্বের হাতটি ফিরিয়ে দিলাম না।

আমার দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। তবে প্রায় সময় বাবা, মা, কাজলের কথা মনে পড়ে। সেই চেনা শহর, চেনা গলি, চেনা ঘর সবটার কথা মনে পড়ে। সেইসব কথা ভেবে মনটাও ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। আমি আমার সেই মন খারাপের মূহুর্তে শান্তকে ফোন দেই। শান্ত মানুষটি এমন যে এক মূহুর্তে তার কথা দ্বারা মন খারাপ দূর করতে পারে। সেজন্য সে আমার প্রিয় বন্ধু।

আজ আমার সেই প্রিয় বন্ধু অর্থাৎ শান্ত আমার বাসায় আসছে। আপাতত যেখানে থাকছি। শান্ত প্রথমবার আমার এখানে আসবে সেজন্য সকালে উঠে ঘরটা পরিস্কার করে, সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিলাম। আজ দুপুরের খাবার শান্ত এখানেই খাবে। সেই মতো রান্নার যোগাঢ় করে নিলাম। একে একে সব রান্না করে নিলাম। রান্না প্রায় শেষের দিকে সেই মূহুর্তে শান্ত চলে এলো। আমি কলিংবেলের শব্দ পেয়ে ছুটে এসে দরজা খুলি। দরজা খুলতে শান্তর সেই চিরচেনা হাসি মুখ দেখতে পেলাম। শান্ত হাসি মুখেই বলে,“কপালে কালির চিহ্ন, চোখেমুখে ক্লান্তি, আপনার এখানে এসে বিপদে ফেলে দিলাম আপনাকে?”

“আপনি ভেতরে আসুন। রান্নাটা পুড়ে যাচ্ছে।”
এটা বলে আমি সরে এসে রান্নাঘরে চলে আসলাম। শান্তও আমার পিছনে রান্নাঘরে এলো। আমি তাকে দেখে স্বাভাবিক গলায় বললাম,“বন্ধুর বাড়ি এসেছেন। একদম নিজের বাড়ি মনে করে যেখানে খুশি, যা খুশি করবেন। আসলে আমি একা মানুষ বুঝতেই পারছেন। সবটা সামলে আপনাকে যথাযথ আপ্যয়ন হয়তো করতে পারবো। সেজন্য একটু নিজ থেকে যা ভালো লাগে সেটা করুন।”

“সেটা আপনি না বললেও আমি করতাম।”
শান্তর মুখে এই কথা শুনে জবাব দিলাম না। আমি রান্নার কাজে মনোযোগী হলাম। সেই মূহুর্তে শান্ত বলে,“সুতি শাড়ী পড়ে আঁচলটা কোমরে গুজে নিয়ে রান্না করলে আপনাকে একদম পার্ফেক্ট গৃহিণী মনে হতো।”
শান্তর এই কথা শুনে ম্লান হাসি দিয়ে আমি বললাম,“গৃহিণীর কর্তাকে খুঁজে না পেলে গৃহিণী হয়ে কী লাভ হবে?”

“কথাটা খুব একটা ভুল বলেননি। তবে খুঁজে নেন।”

“খুঁজছি।”
শান্ত আমার কথা শুনে চুপ করে গেল। সে ম্লান হাসি দিয়ে বলে,“আমি আপনার ঘরটা ঘুরে দেখি?”
আমি মাথা নাড়াতে শান্ত ঘরটি ভালোভাবে লক্ষ্য করে। ঘরটি খুব একটা বড় নয়। একদম ছোট। তবে একজনের থাকার মতো। সেই অনুযায়ী যে এই বিল্ডিং এর প্রতিটি ঘর তৈরি করা সেটা শান্ত বুঝতে পারলো। শান্ত রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বেডরুমে গেল। শান্ত পুষ্পের বেডরুমে প্রবেশ করতে থমকে গেল। ভেতরে একটি ছোট খাট, খাটের পাশে একটি টেবিল। যেই টেবিলে একটি ফ্রেমে বাধানো ছবি। যেই ছবিটি শান্তকে থমকে দিয়েছে। ছবিটি ক্যামেরায় তোলা নয় বরং জলরঙে আঁকা। যেখানে শান্ত এবং পুষ্পের প্রথম কথা বলার অর্থাৎ ইচ্ছেঘুড়ির মাধ্যমে যে তাদের কথা হলো সেই দৃশ্যটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ এটা দেখে শান্ত মুচকি হাসে। সে এগিয়ে এসে ফ্রেমে বাঁধা ছবিটি হাতে তুলে নেয়। যেই ছবিটিতে,

হালকা মেরুন রঙের সেলোয়ার-কামিজে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্প। কাধে ঝোলানো কালচে রঙের ব্যাগ। শক্ত চামড়া বা মোটা কাপড়ে তৈরি, আকারে আড়ষ্ট অথচ ব্যবহারিক। আর তার কোমল হাতে রয়েছে রঙিন ঘুড়ি। যার মাঝে লেখা,“ইচ্ছেঘুড়ি।” তার সামনে দাঁড়ানো শান্ত। গায়ের রং রোদে পোড়া, চেহারায় দুষ্টু হাসি আর গায়ে চাপানো সবুজ রঙের জার্সি গেঞ্জি। এলোমেলো চুল কপালের ওপর ঝুলে আছে। ভঙ্গিমায় একরকম খামখেয়ালি সাহস এবং চোখে দুষ্টুমি ভরা। সেই দৃশ্যটিকে কোন এক শিল্পী খুবই নিপুণভাবে জলরঙে তুলে ধরেছে। যেটা ফ্রেমে বাঁধিয়ে পুষ্প টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে। এসব দেখে শান্তর বুকের মধ্যে অন্যরকমের অনুভূতি জেগে উঠছে। পরক্ষণে শান্ত নিজেকে সামলে মনেমনে বলে,“এই মূহুর্ত বা তোর সঙ্গ পুষ্পের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাই তোকে এত ভালোবেসে বাঁধিয়ে রেখেছে শান্ত। এছাড়া অন্যকিছু নয়। পুষ্পের পছন্দ পুরুষ দায়িত্বশীল। পরিবার, কাজ সবকিছু নিয়ে গভীর চিন্তাশীল। একদম খামখেয়ালিপনায় বিশ্বাসী নয়। যাকে বলে পার্ফেক্ট মানুষ। এটাই পুষ্পের পছন্দ।”
এই কথা বলে শান্ত তার মনের মধ্যে অল্প করে জন্ম নেওয়া অনুভূতিকে দমিয়ে রাখে। শান্ত ভেবে পায় না তার কি হয়েছে। সেদিন সে পুষ্পকে ওভাবে না দেখলেই এই সমস্যা হতো না। সে বন্ধু, বন্ধু হিসাবেই যথার্থ।


আমি রান্না পুরোপুরি শেষ করে ঘরে এলাম। সেখানে শান্ত বিছানার উপর শুয়ে ফোন চালাচ্ছে। অবশ্য এরমাঝে একবার এসে তাকে নাস্তা দিয়ে গিয়েছে আমি। তবুও কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললাম,“আপনাকে বাসায় ডেকে এনে যথার্থ আপ্যয়ন করতে পারছি না। স্যরি। একা মানুষ তো। তাই আপনাকে একা একা এখানে বোরিং হতে হচ্ছে।”

“বন্ধুত্বে এত ফর্মালিটি ভালো লাগে না। আপনার এসব কথায় আমি বিব্রত হচ্ছি। বিরক্ত হয়ে কিন্তু চলে যাবো।”
শান্তর কথা শুনে আমি চুপ করে যাই। শান্ত যা মানুষ চলেও যেতে পারে। আমি চুপ করে গেছি দেখে শান্ত বলে,“যান গোসল করে আসুন। দ্রুত আসবেন। ক্ষুধায় আমার পেটে ইঁদুর ডিস্কো নাচ দিচ্ছে।”
শান্তর কথা শুনে হেসে দিলাম। আমি সম্মতি জানিয়ে গোসলের উদ্দেশ্য পা বাড়াতে শান্ত বলে,“আমি এখানে মোটেও বোরিং হচ্ছি না। আমি যাতে বোরিং না হই তাই তো আপনি আমার মতো ছেলেকে জলরঙে এত সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন।”
শান্তর এই কথা শুনে থমকে গেলাম। আমার চোখ আপনা আপনি ছবিটির দিকে গেল। অতঃপর আমি বললাম,“আমি এসব আঁকতে পারি না। তাই এই কৃতিত্ব আমার নয়। তবে যদি পারতাম তাহলে আপনাকে আপনার মতো করেই এঁকে নিতাম। এই ছবিটিতে আপনাকে সেভাবে তুলে ধরতে পারেনি। আপনি বাস্তবে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম।”

শান্ত এই কথা শুনে হচচকিয়ে যায়। আমি ইতিমধ্যে গোসলের জন্য বাথরুমে চলে যাই। শান্ত আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে ভাবছিলো। সে আপন মনে বলে উঠে,“আপনাকে আমাকে সেভাবে লক্ষ্য করেন বুঝি পুষ্প?”

___
পুষ্প গোসল সেরে বের হতে শান্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তবে পুষ্প যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য সে ফোন তার মুখের সামনে ধরে।

গোসল সেরে সদ্য বেরোনো পুষ্প যেন এক সজল ভোর। ভিজে ওঠা শরীরের চারপাশে গন্ধ ছড়িয়ে আছে তাজা জুঁইয়ের মতো স্নিগ্ধতা। মাথার চুলে জড়ানো সাদা তোয়ালের প্যাঁচ যেন মেঘের আস্তর, আর গায়ে হালকা নীল জামা তাকে করে তুলেছে শান্ত নদীর ঢেউয়ের মতো প্রশান্ত। তার পদক্ষেপে রয়েছে অদৃশ্য কুয়াশার নরম আভা, মুখমণ্ডলে ধোয়া জলকণার দীপ্তি, আর চোখে এক নির্মল প্রশান্তির আলো, যেন গোসলের জলে ধুয়ে ফেলা হয়েছে পৃথিবীর ক্লান্তি। শান্তর চোখে পুষ্পকে এখন এমনই লাগছে। এসব ভেবে শান্ত নিজেই নিজেকে উপহাস করে বলে,“কোন শালা জানি বলছিলো ছেলে, মেয়ে বন্ধু হতে পারে না। শালাকে হাতের কাছে পেলে দেখাতাম মজা। এখন মনের মধ্যে যা হচ্ছে সবের জন্য ঐ শালাই দ্বায়ী। শালাকে কেউ আমার কাছে পাঠা, একটু মনমতো পি টাই।”

শান্তর এসব ভাবনার মাঝে আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,“আমি খাবার বাড়ছি। আপনি দ্রুত চলে আসুন।”
শান্ত আমার কথা শুনে মাথা নাড়ায়। অতঃপর আমি এসে খাবার বাড়তে শুরু করি। ইতিমধ্যে শান্ত এসে বসে পড়ে। আমরা দুজনেই বসে একসঙ্গে খাবার খাওয়া শুরু করি। খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কথা বলছিলাম। শান্ত হঠাৎ বলে উঠে,“একা ঘরে আপনার আমাকে ডাকতে ভয় করেনি?”
“ভয় কেন করবে? আপনি বাঘ না ভাল্লুক?”
আমার কথা শুনে শান্ত মাথা দুপাশে নাড়িয়ে বলে,“আমি লোকে কি বলবে এই ভয় কাজ করছে না সেটা বললাম।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি একটু থেমে যাই। অতঃপর বলি,“সত্যিটা হয়তো আপনার পছন্দ হবে না। তাই মিথ্যেটা বলি?”
“আচ্ছা আপনি নাহয় মিথ্যেটাই বলুন। আমি সেখান থেকে সত্যিটা খুঁজে নিবো।”
আমি শান্তর কথা শুনে ম্লান হেসে বললাম,“না ভয় করছিলো না। সবাই তো বন্ধুদের ডাকে। আমিও ডাকলাম। এটা তো দিনের বেলায়। লোকে কেন খারাপ ভাববে?”
আমার কথা শুনে শান্ত আপনমনে সত্যিটা বুঝে নিলো। সে বুঝে হাসি দিলো। সেই হাসির অর্থ,“পুষ্প আপনি এমনই। আপনার জীবনে পরিবর্তন দরকার ছিলো। যেটা হয়েছে। এরবেশি দরকার নেই। আপনাকে শান্ত হতে হবে না।”
আমি শান্তর এসব কথা বুঝে খুশি হলাম। সত্যি বলতে আমি লোকে বাজে বলবে সেই ভয় এখনো পাই না। কিন্তু শান্ত আমার হাতের খাবার খেতে চাচ্ছিলো। বন্ধু হিসাবে আমার বাড়ি দেখাতে বলছিলো। সেই কথা রাখতে তাকে ডাকা। ছুটির দিনে দিনের বেলা ডেকে নিয়েছি তাই। তবে শান্ত এসব ক্ষেত্রে আসলই সঠিক। আমরা লোকের কথা ভেবে যতই নিজেদের ভালো রাখতে চাই না কেন? তারা সেই ভালোর মাঝেও খারাপটা খুঁজবে।
“আপনার হাতের রান্না কিন্তু অতিব চমৎকার।”
শান্তর কথা শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি। আমি খুশি হয়ে বললাম,“আপনার ভালো লাগলে কষ্ট স্বার্থক। এত কষ্ট করে সব রান্না করলাম।”
“সবই ভালো। সব আমার পছন্দের খাবারই রান্না করেছেন। শেষ পাতে একটা সিগারেটের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি শব্দ করে হেসে দিলাম। অতঃপর বললাম,“আপনার সবকিছু সিগারেট থাকবেই?”
“হ্যাঁ। আরে আমাদের মতো ছেলেদের কাছে সিগারেট একটা বউয়ের সমান। সব ছাড়া থাকা যায় এটা ছাড়া চলবে না।”
“পরে যখন রোগ বাঁধিয়ে বসে থাকবেন তখন সিগারেটকে বউয়ের সমান করে কত ভুল করেছেন সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন।”
“সুযোগ পেলেই কাকি মায়েদের মতো উপদেশ দেওয়া শুরু হয়ে যায় তাই না?”
শান্ত এই কথাটি বলে আমার দিকে রাগী লুকে তাকাতে গিয়ে চোখমুখ কুচকে একদম বোকা বোকা একটি লুক দেয়। যেটা দেখে আমি হাসি আটকাতে পারলাম না। আমার দম ফেটে হাসি আসছে। সেই মূহুর্তে ফোনটি বেজে উঠে। টেবিলের পাশেই ছিলো ফোনটি। আমি ফোনটি ধরে দেখলাম রায়ানের ফোন। ফোনটি ধরে কানে নিতে ওপাশ থেকে রায়ান বলে,“মিস পুষ্প আমরা বিকালে দেখা করতে পারি?”

“আজ বিকালে দেখা করবো?”
আমি কিছুটা সংকোচ নিয়ে কথাটি জিজ্ঞেস করি। রায়ান বলে,“প্লীজ না করবেন না। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা রয়েছে। না বললে নয়। প্লীজ।”
রায়ান খুব অনুরোধ করায় আমি না বলতে পারলাম না। আমি রাজি হয়ে গেলাম। আমি হ্যাঁ বলে ফোনটা রাখতে শান্ত বললো,“কে?”
“রায়ান সাহেব। বললো আমার সঙ্গে খুব জরুরি কথা রয়েছে। তাই দেখা করতে চায়।”
আমার মুখ থেকে এই কথা শুনতে শান্তর মুখটা কেমন শুকনো হয়ে যায়। তার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে,“ওহ আচ্ছা।”
”হ্যাঁ। খাবার শেষ করে বিশ্রাম নিন। তারপর আমরা বের হবো নাহয়।”
আমার কথা শুনে শান্ত অবাক হয়ে বলে,“আমরা বের হবো মানে? আপনি না রায়ান নামক লোকটার সাথে দেখা করতে যাবেন?”
“হ্যাঁ। আমি তো ভাবছি আমরা একসঙ্গে যাবো।”
আমার এই কথায় শান্ত অসম্মতি জানালো। সে বললো,“না। এটা ঠিক নয়৷ সে আপনাকে জরুরি কিছু কথা বলবে বলেছে। সেখানে আমার যাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া আমার বিকালে একটা কাজও রয়েছে।”
আমার শান্ত যাবে না শুনে কিছুটা মন খারাপ হলো। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে শান্তর কথায় রাজি হয়ে গেলাম। শান্তকে আমার এবং রায়ানের বন্ধুত্বের কথা বললাম। আমি বললাম,“জানি না। হঠাৎ করে কেন সে আমার বন্ধু হতে চাইলো? তবে তার মতো মানুষ আমার বন্ধু এটা ভাবতে আমার ভালোই লাগছে। সে খুব মেধাবী এবং বিচক্ষণ মানুষ।”
শান্ত জানে না তার কি হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই তার রাগ হতে লাগলো। রায়ানের প্রতি তার একরকম বিরক্তি জন্ম নিলো। তবে সে সেটা পুষ্পকে বুঝতে দেয় না।


চলবে,

#ইচ্ছেঘুড়ি (২২)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বিকালে তৈরি হয়ে বের হলাম। রায়ান রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি সেখানে আসতে রায়ান আমাকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,“তবে যাওয়া যাক।”
আমি মাথা নাড়াই। যার অর্থ হ্যাঁ। রায়ান এবং চলতে শুরু করলাম। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান থেকে রিকশা পাওয়া যায় না। কিছুটা সামনে পাওয়া যাবে৷ তাই দুজনে হাঁটতে শুরু করলাম। সেই মূহুর্তে রায়ানের গায়ে একটি ফুটবল এসে লাগে। সে কিছুটা হচচকিয়ে যায়। সামনে কয়েকজন বাচ্চারা দাঁড়িয়ে। তারাই খেলছিলো। রায়ান বলটার দিকে একবার তাকিয়ে বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বললো,“এটা তোমাদের খেলার জায়গা? রাস্তার মাঝে কেউ এগুলো করে?”

বাচ্চাগুলো ভীষণ ভয়ে ভয়ে রায়ানের দিকে তাকায়। তারা ক্ষমা চায়। রায়ান তাদের বল নেওয়ার অনুমতি দিতে একটি বাচ্চা এসে বলটি হাতে নেয়। অতঃপর রায়ান বলে,“খেলাটা যেখানে করা যায় সেখানে গিয়ে করো। এটাই তোমাদের জন্য সঠিক।”

ছেলেগুলো মাথা নাড়িয়ে ধীরে ধীরে চলে গেল। তারা চলে যেতে রায়ান আমাকে বলে,“এদের বাবা, মায়েরা যে কেন এদের বোঝায় না যেখানের কাজ সেখানে বসে করা উচিত। এই রাস্তার মাঝে এসব কত বিপদজনক এটা কী বোঝে না এদের পরিবার?”

আমি রায়ানের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ মনে হলো এখানে শান্ত থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। আমি কল্পনায় ভেসে গেলাম। অতীতের স্মৃতি মাথায় এসে নাড়া দেয়। একদিন এভাবে রাস্তার মাঝে বল খেলতে ছিলো বাচ্চারা। আমি এবং শান্ত সেদিক দিয়ে যাওয়ার সময় বলটি এসে আমার গায়ে লাগতে নেয় তখন শান্ত ধরে ফেলে। বাচ্চারা এগিয়ে এসে শান্তর হাতে বল দেখে কিছুটা ভয় পায়। শান্ত বকে দিবে তাই। আমিও ভেবেছিলাম শান্ত তাদের বকবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শান্ত বলটি বাচ্চাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,“ভালোভাবে খেলতে শিখিসনি নাকি? চল তোদের খেলা শেখাই।”

“তুমিও আমাদের সঙ্গে খেলবে?”
বাচ্চাদের কথায় শান্ত হেসে সম্মতি জানায়। অতঃপর সেও মাঝ রাস্তায় বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে শুরু করে। শান্ত আমার হাত ধরে এগিয়ে এসে বলে,“আপনিও বলটা পা দিয়ে লাথি মা রুন। ভালো লাগবে।”

“এসব কী বাচ্চামো হচ্ছে? এভাবে রাস্তার মাঝে এসব কেউ খেলে?”
আমার এই কথার জবাবে শান্ত খুব সুন্দরভাবে বলে,“আরে মিস কাকিমা আপনি কী বুঝবেন নিয়ম ভাঙায় কত মজা? এখানে এভাবে খেলে যে মজাটা পাওয়া যাবে সেটা মাঠে খেলে পাওয়া যাবে না। আর যাই হোক মাঠে খেললে তো আপনার মতো কাকি মা, কাকুরা বকার সুযোগ পাবে না। বকা না শুনলে মজা আছে নাকি? কী বলিস বাবুরা?”
শেষ কথাটি বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বলে। বাচ্চারাও সম্মতি জানায়। আমি সেদিন মুগ্ধ হয়ে শান্তর বাচ্চামো দেখছিলাম। বাচ্চাদের সঙ্গে সেও বাচ্চা হয়ে গেছে।

“মিস পুষ্প।”
রায়ানের ডাকে স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি। আমি হচচকিয়ে জবাব দিলাম,“হ্যাঁ বলুন?”

“চলুন?”
রায়ানের কথার জবাবে আমি মাথা নাড়ালাম। রায়ান এবং আমি রিকশা করে একটি রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম। পুরো রিকশাজুড়ে আমরা দুজন চুপ ছিলাম। হঠাৎ না চাইতে মাথায় এলো এখানে শান্ত থাকলে প্রচুর কথা হতো। এসব ভাবনা ভেবে নিজেই মনেমনে হাসলাম। অতঃপর রায়ানের সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। রায়ান দুটো কফি অর্ডার দিয়ে বলে,“আপনি আমার সঙ্গে অস্বস্তিকর অনুভব করছেন না তো পুষ্প? আমরা বন্ধু হলেও এভাবে তো কখনো কোথাও অফিসের বাহিরে দেখা করিনি। সেজন্য অসুবিধা হতেই পারে।”

“সমস্যা নেই। আপনি যা বলতে চাচ্ছেন সেটা বলুন।”
আমার অনুমতি পেয়ে রায়ান খুব স্বাভাবিক গলায় বলে,“আমার বয়স ত্রিশ বছর। বুঝতেই পারছেন এই বয়সের একটি প্রতিষ্ঠিত ছেলের বাবা, মা কী চায়? স্বাভাবিকভাবে আমার বাবা, মায়ও আমার বিয়ের কথা চিন্তা করছে। অনেকদিন ধরেই তারা চিন্তা করছিলো। তারা আমাকেও কাউকে পছন্দ হয় কি-না জানাতে বলেছে। বিশেষ করে অফিসের কাউকে।”
আমি রায়ানের কথা বুঝতে পারলাম না। অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। রায়ান কিছুটা শান্ত গলায় বলে,“আমি এটাই আপনাকে বলতে চাই। দেখুন আমার এই বয়সটা প্রেমের নয়। বিবাহ উপযোগী হয়ে গেছি আমি। তাই এখন বিয়ে করে নেওয়াটা ভালো। তো আমার আপনাকে ভালো লাগে। তো আমি চাচ্ছিলাম পারিবারিকভাবে আমরা এটা নিয়ে কথা বলি। আপনি যদি এখন বিয়ে করতে চান তবে আমি আমার পরিবারকে আপনার পরিবারে পাঠাবো।”
রায়ানের পুরো কথার ভাবার্থ বুঝতে পেরে আমি অবাক হয়ে গেলাম। প্রথমে জবাব দিলাম না। একটু সময় নিয়ে বললাম,“আপনি আমাকে এজন্য ডেকেছেন?”

“হ্যাঁ। ভণিতা করার মতো বয়স আমার নেই।
তাই সরাসরি বললাম। তবে হ্যাঁ আপনার সম্মতি না থাকলে অবশ্য জোর করবো না। অন্য পাত্রী খুঁজবো।”
রায়ানের মুখে এই কথা শুনে আমি তার দিকে একটু ভালোভাবে তাকালাম। বয়স ত্রিশ পার হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য চেহারায় বোঝা যায় না। তাকে বেশ সুদর্শন পুরুষ লাগছে। চেহারার মাঝেই এক ভদ্রলোক ভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে তার মাঝে সেসব গুণাবলি রয়েছে যা একজন জীবনসঙ্গীর থাকা উচিত। তাকে অপছন্দ করার কোন কারণ নেই। কিন্তু! এখানে এসে আমি আটকে গেলাম। তাই একটু ভেবে বললাম,“আমি দুই মিনিট একটু বাহিরে যাই। তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।”
রায়ান সম্মতি জানালো। সে ভাবলো আমি কিছুটা বিব্রত হয়েছি। সেজন্য নিজেকে সামলানোর সময় নিতে চাচ্ছি। সেটা ভেবে অনুমতি দিয়ে দিলো। আমি উঠে বাহিরে চলে আসলাম।

শান্ত দোকান এসে মনমরা হয়ে বসে আছে। এখন শান্তর দোকান মোটামুটি ভালোই চলছে। রবির পাশাপাশি একজন বড় কর্মচারীও রেখেছে সে। যার নাম পলাশ। শান্তর এখানকার বন্ধু হয়। তারা দুজন থাকায় এখন ছুটির দিনও দোকান খোলা হয়। তবে শান্ত ছুটির দিন আসে না। তার এক কথা শুক্রবার সে কিছুতেই কোন কাজ করবে না। তবে আজ বিকালে হঠাৎ শান্তকে দোকানে দেখে পলাশ এবং রবি দুজনেই অবাক হয়। আবার এলো অনেক সময় হলো, এরমাঝে তাকে একবারও হাসতে দেখলো না। এসব দেখে পলাশ না পেরে এগিয়ে এসে বলে,“তোর কী হয়েছে? এমন মনমরা লাগছে কেন?”

“কিছু না। তোরা কাজ কর।”
এটা বলে সে চুপ হয়ে যায়। পলাশ এবং রবি এটা দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। রবি এক পর্যায়ে বলে,“ভাই আপনার কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? আমাকে বলেন? আমার স্যারকে কে কী বলেছে? তাকে একদম দেখে নিবো।”
এই ছোট বাচ্চার মুখে এই কথা শুনে না চাইতেও শান্ত হেসে দেয়। এরপর বলে,“তুই কাকে দেখবি? উল্টো লোকজন তোকে আচাড় দিয়ে দিবো।”

“এই তো হাসি ফুটেছে মুখে। আপনার মুখে এমন হাসিই মানায়। বিশ্বাস করুন।”
রবির এই কথা শুনে শান্তর দিকে তাকায়। বড় মায়া রবির মুখজুড়ে। খুব অল্প বয়সে তার কাধে দায়িত্ব এসে পড়েছে। তবুও ছেলেটা কত প্রাণোচ্ছল। এটা ভাবতেই শান্ত বলে,“আচ্ছা। তাহলে সবসময় হাসবো।”

“হ্যাঁ সে নাহয় হাসবি। তা এতক্ষণ মন খারাপ কেন ছিলো? কী হয়েছে?”
পলাশের এই কথা শান্ত একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,“জানি না রে। মন যা চায় এবার হয়তো তা পাবো না। শালার মনটা যে কেন ওখানেই বারবার হোচট খাচ্ছে বুঝতে পারছি না। শালার মনটা নিয়ে যে কি করি।”
শান্তর কথা শুনে পলাশ তার পাশে বসে বলে,“আরে এই ব্যাপার। একটি সিগারেট বের কর। সেটা ধরিয়ে দুটো টান দে। দেখবি সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।”
পলাশের এই কথাটা শান্তর ভালো লাগলো। সে সত্যি তাই করলো। সিগারেট ধরালো। সেই মূহুর্তে এক বৃদ্ধ কাস্টমার আসলো। সে এটা দেখে বলে,“এই ছোকরা এভাবে লোক সমাজের সামনে সিগারেট টানছো লজ্জা করছে না? তুমি এইসব করো তাও লোকজন তোমার মতো খারাপ ছেলের দোকান দেখিয়ে দিলো আমাকে ভালো বলে?”

“দাদু এক ঠ্যাং কবরে এখনো এটায় টান দিতে পারলেন না। এই দুঃখে তো আপনার পেটের ভেতর মাথা ব্যথা ওঠা উচিত।”
শান্তর মজারসুরে বলা এই কথা শুনে বৃদ্ধ অবাক হলো।তবে সে দমে না গিয়ে বলে,“এসব খাওয়া ভালো না।”

“এই নিয়ে তিন হাজার ছাপ্পান্ন বার এই কথাটি শুনেছি দাদু। কিন্তু কী করার? কানের ভেতর কথাটা পৌঁছাও না।”

“পৌঁছায় না কেন?”

“কারণ আপনার মতো বুড়োদের কথা আমি কানে নেই না।”
শান্তর মুখে এই কথা শুনে বৃদ্ধ হচচকিয়ে যায়। সে বলে,“আমি তোমার দোকান থেকে কিছু নিবোই না। যাচ্ছি আমি।”

“যান যান। আমার দোকানে বসে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো, এসব দেখে যারা দোকানে এসে জিনিস নিবে আমি তাদের কাছেই শুধু জিনিস বিক্রি করি। আপনার মতো মানুষদের কাছে কিছু বিক্রি করিও না।”
শান্তর এই কথা শুনে বৃদ্ধ চলে যায় তাকে বকতে বকতে। শান্ত এটা দেখে হেসে বলে,“এই মজাটার দরকার ছিলো এখন।”

শান্তর এই কথা শুনে পলাশ এবং রবিও হাসে। এসবের মাঝে শান্তর ফোনটা বেজে উঠে। সে পুষ্পর ফোন দেখে অবাক হয়। শান্ত ফোনটা ধরতে পুষ্প তাকে রায়ানের সব কথা বলে। এটা শুনে শান্ত থমকে যায়। পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে,“আপনার তো রায়ানের মতো বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, দায়িত্বশীল পুরুষই পছন্দ। তাহলে আপনার সম্পর্কে সব বলে দিন। তারপর সে রাজি হলে বিয়েটা সেড়ে ফেলবেন।”

শান্তর মুখে আমি এই কথা শুনে কিছুটা ভরসা পাই। আমি সেটা করার কল্পনা করছিলাম। এরমাঝে শান্ত আবার বলে,“তবে হ্যাঁ অবশ্যই ভেবেচিন্তে এগিয়ে যাবেন। সে সত্যি আপনার পছন্দের মানুষ হওয়ার যোগ্য কি-না এটা যাচাই করে নিবেন।”

“আমি তার যোগ্য?”
আমার এই কথা শুনে শান্ত কিছুটা কঠিন গলায় বলে,“মাঝে মাঝে মন চায় আপনাকে ধরে পিটাই। আপনাকে কী বুঝিয়েছি এতদিন? আপনি তার যোগ্য কি-না সেটা যাচাই করেই তো সে আপনার কাছে আসবে। সে যদি আপনাকে যাচাই করে নেওয়ার যোগ্যতা রাখে তাহলে আপনি কেন পারবেন না? এটা আপনার অধিকার। শুধু তাকে নয় তার পরিবারকে যাচাই করে নিবেন। মনে রাখবেন তার পরিবারও আপনাকে দেখেশুনে যাচাই করেই ঘরে তুলবে। সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে এত ছোট ভাবার কিছু নেই। একটা কথা মাথায় রাখবেন, আমি যদি নিজেকে নিজে দামি মনে না করি তাহলে সারা দুনিয়ায় আমাকে সবসময় সস্তায় ভাববে।”
শান্ত এই কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়। আমি তার কথা শুনে ম্লান হাসি। শান্তর জীবনটাকে দেখার চোখ ভিন্ন হলেও সে যেভাবে সবটা বর্ননা করতে পারে সুন্দরমতো সেটা কেউ পারে না। সবচেয়ে বড় কথা তার চিন্তা ভাবনা চমৎকার। এসব ভেবে আমি আবার রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে আসলাম। এসে রায়ানের উদ্দেশ্যে শান্ত গলায় বললাম,“আমার আপন বলতে কেউ নেই যার সঙ্গে আপনার পরিবার কথা বলতে পারে।”

এটা শুনে রায়ান কিছুটা অবাক হয়। আমি ধীরে ধীরে সবটা খুলে বলি। সব শুনে রায়ান বলে,“আপনাকে দেখে কখনোই মনেই হয় না আপনি জীবনে এত কষ্ট সহ্য করেছেন। সবসময় এভাবে খুশি থাকেন কিভাবে?”

“একটা সময় দুঃখী মুখ নিয়ে ঘুরতাম। আমার সেই দুঃখী মুখ দেখে কারো একজনের খুব মায়া হয়েছিলো। তাই সে আমার কাছে একটি ইচ্ছেঘুড়ি পাঠায়। যার ছোঁয়ায় আমার জীবনটা বদলে যায়।“
আমার এই কথা শুনে রায়ান হাসে। অতঃপর বলে,“আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।”
রায়ানের এই কথা শুনে আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। সত্যি তো। তার পরিবারের কাছে আমার বিষয়ে সবটা খুলে বলতে হবে। এসব মেনে সবাই রাজি হলে বিয়ের মতো বড় বিষয়ে এগিয়ে যাবে। অতঃপর আমরা এসব কথাবার্তা রেখে নিজেদের বিষয়ে কিছু টুকটাক গল্প করলাম।

অন্যদিকে, শান্ত পুষ্পের ফোনটা রেখে আবার মনমরা হয়ে যায়। পলাশ এটা দেখে বলে,“তবে ওনি তোর মন খারাপের কারণ? ভালোবাসিস?”

“বাসতাম তো না। কিন্তু এখন জানি না কেন রাগ হচ্ছে তার অন্যকারো সঙ্গে কথা বলা নিয়ে? খুব বিরক্ত হচ্ছি।”

“বুঝেছি বন্ধু। তোমার মন ফেসে গেছে। তাহলে দেরি কিসের বলে দে?”
পলাশের মুখে এই কথা শুনে শান্ত উপহাসের হাসি দিয়ে বলে,“সম্ভব নয়। তার সঙ্গে ভালোবাসার ভাবনায় মাথায় নিয়ে আসাটা ভুল। কারণ তার মতে একজন পার্ফেক্ট স্বামী হতে হলে তাকে দায়িত্বশীল হতে হয়, ভদ্র হতে হয়।”

“তুই কী অভদ্র নাকি? তার আচল ধরে টান দিয়েছিস নাকি?”
পলাশের মজা শুনে শান্ত হেসে দেয়। পলাশ আবারও বলে,“তাছাড়া তুই দায়িত্বশীল কম নাকি। যতই বলিস ওখানের সব বন্ধুরা কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এখানে এসে ব্যবসা ধরেছিস। আসল কথা তো এটা যে তোর বাবা, মা তোর বাউণ্ডুলে স্বভাবে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো। তাই তাদের চিন্তা কমাতে, তাদের শেষ বয়সের দায়িত্ব হতেই তো এই ব্যবসা ধরলি।”
শান্ত এই কথা শুনে ম্লান হাসে। জবাব দেয় না। হয়তো সত্যি এটাই। তবে বাস্তবে তার বাবা, মায়ের শেষ বয়সে তাকে দেখতে হবে না। আর্থিক সাহায্য কখনোই লাগবে না তাদের। তবুও এটা তো শান্তর দায়িত্ব। তাছাড়া শান্ত বদলে গেলেও পুরোটা বদলাতে পারেনি। তাই তো তার বাবার চিন্তিত মুখ, মায়ের সঙ্গে তাকে নিয়ে আফসোস করা তাকে বাধ্য করেছে নতুন করে কিছু করতে। বাবা, মা সন্তারের ভালো চায়। হয়তো ভালো চাইতে গিয়ে মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলে। তবে খারাপটা যে চায় না। তাই সন্তানেরও তাদের জন্য কিছু করা উচিত। এটা ভেবে শান্ত ম্লান হাসে।


চলবে,