#ইচ্ছেঘুড়ি (২৫)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
শান্ত বাসে উঠতে বাসটি ছেড়ে দিলো। বাস চলতে শুরু করেছে বুঝতে শান্ত বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে পুষ্পের দিকে তাকায়। পুষ্প চিৎকার দিয়ে বলছে,“থামো। আমি উঠতে পারিনি।”
শান্ত এটা দেখে হাত বাড়িয়ে দেয়। পুষ্প সেটা দেখে দৌঁড়ে আসে। পুষ্পের চুলগুলো খোঁপা করায় মুখের সামনে ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে, সুন্দর মুখশ্রীজুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিচ্ছে আর গায়ে জড়ানো লাল রঙের চুরিদার। সব মিলিয়ে ছুটে আসা পুষ্পকে মুগ্ধ নয়নে শান্ত দেখতে থাকে। পুষ্পের ছুটে আসা দেখে ইতিমধ্যে বাস থামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই মূহুর্তে পুষ্প কাছাকাছি চলে আসে। সে হাত বাড়িয়ে দিতে শান্ত হাতটি ধরে ফেলে। পুষ্পর হাত ধরে টেনে বাসে ওঠায় শান্ত। পুষ্প টাল সামলাতে না পেরে শান্তর বুকের কাছে চলে আসে। তার মাথাটি শান্তর বুকে বারি খায়। এই অবস্থায় শান্ত কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,“ইচ্ছে পূরণ হলো। কেমন অনুভূতি?”
শান্তর এই কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। মাথা তুলে শান্তর চোখে চোখ রাখি। আমি বাসে উঠেছি এটা দেখে বাস না থামিয়ে চলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুজন যাত্রী আমাদের দরজার কাছ থেকে চলে আসতে বললো। আমি সেসব কথা কানে না নিয়ে শান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগে কি ঘটলো তাই ভাবছি। একটু আগে শান্ত ইচ্ছাকৃত আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বাসটি স্টার্ট দিবে সেই সময়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে। আমি যখন উঠতে যাই তখন বাসটি ছেড়ে দেয়। আমি সেখানে হতভম্ব হয়ে দাঁড়াই। তখন শান্ত আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি ছুটতে শুরু করি। শান্তর উসকো খুসকো চুলগুলো বাতাসে উড়ছিলো, মুখের উপর রোদ পড়তে মুখটা কেমন চিকচিক করছিলো। তাকে একদম সিনেমার হিরোর মতো লাগছিলো। আমি দৌঁড়ে এসে তার হাত ধরে বাসে উঠে পড়লাম। এসব ভাবছিলাম সেই মূহুর্তে শান্ত বলে,“ভেতরে চলুন।”
আমি মাথা নাড়াই। শান্ত এবং আমি গিয়ে ভেতরে সিটে বসি। আমি জানালার পাশে বসায় জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। শান্ত আড়চোখে কয়েকবার আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি জানালার বাহিরে মুখ করে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে অতীতে হারিয়ে যাই। একদিন রাতে আমি মুভি দেখছিলাম সেই সময়ে শান্ত ফোন করে। আমি ফোনটি ধরে কিছুটা মনমরা কন্ঠে বলি,“আপনার এখনই ফোন দিতে হলো?”
“কেন ভুল সময়ে ফোন দিলাম? আপনি এত দ্রুত ঘুমিয়ে যান বুঝি?”
শান্তর এই কথা শুনে আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,“না। আমি খুব ইন্টারেস্টিং একটা মুভি দেখছিলাম। জানেন কত রোমান্টিক একটা দৃশ্য চলছিলো? ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে নায়িকা উঠতে পারেনি সে ছুটছে সেই মূহুর্তে নায়ক দরজায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। কত রোমান্টিক দৃশ্যটা। ইশ বাকিটা দেখার আগেই আপনি ফোনটা দিয়ে বিপদ ডেকে নিলেন।”
“আমাকে বাচ্চা বলেন আপনি কি? এটা আপনার কাছে রোমান্টিক দৃশ্য মনে হলো? আপনার বয়সের সঙ্গে এটা যায়?”
শান্তর মজা করা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,“আপনি মজা করছেন?আমার বয়সের সঙ্গে কোনটা যায়?”
“বাসর সিন। আপনার বয়স অনুযায়ী ওটা হওয়া উচিত রোমান্টিক দৃশ্য। আর মাত্র যেটা বললেন সেটা তো বাচ্চামো স্বভাব যাদের, যারা বড় নয় তাদের জন্য রোমান্টিক দৃশ্য। রোমান্স ছাড়া রোমান্টিক দৃশ্য…।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। প্রসঙ্গ বদলাতে দ্রুত বললাম,“না মানে। এই দৃশ্য আমার ভালো লাগে। ইশ বাস্তবে যদি আমার সঙ্গে এমন হতো। এটা তো সম্ভব নয়। সিনেমা আর বাস্তবতা কি এক হয়? বাস্তবে তো ট্রেন আমাকে ছেড়ে চলে যেতো।”
শান্ত এই কথা শুনে সম্মতি জানায়। অতীতের এই কথা মনে পড়তেই আমি বিষ্ময় নিয়ে শান্তর দিকে তাকাই। শান্ত আমার সেদিনের সামান্য কথাটিকে এত সিরিয়াসভাবে নিয়েছে। শান্ত আমার বিষ্ময়িত মুখ দেখে বোকা বোকা হেসে বলে,“ট্রেনে এসব করার রিস্ক নিলাম না। আসলে এত তাড়াতাড়ি আমার ম রার শখ নাই। একটাই তো জীবন আমার। এত সহজে বিসর্জন দিতে চাই না।”
শান্তর কথা শুনে আমি শব্দহীন হাসলাম। শান্ত নিজ থেকেই বললো,“ভালো লাগছে?”
আমি মাথা নাড়াই। যার অর্থ হ্যাঁ। শান্ত এটা শুনে খুব খুশি হয়। সে খুশি হয়ে বলে,“তবে আমার কিঞ্চিৎ সন্দেহ ছিলো আপনি আদৌ ঠিকভাবে দৌঁড়াতে পারবেন তো? আবার হোচট খেয়ে বাসের নিচে না পড়ে যান।”
“আমি পড়ে গেলে আপনি কী করতেন?”
আমার কথাটি বলে শান্তর দিকে খুবই সিরিয়াস চোখে তাকাই জবাবের আশায়। কিন্তু আমাকে হতভম্ব করে শান্ত বলে,“অবশ্যই নিজে বাস থেকে লাফ দিতাম না। এটা নিশ্চিত থাকেন। আমার শখ নাই কারো জন্য পটল তোলার। তাই বাসের ভেতরে এসে বসতাম এবং নিজের গন্তব্যে চলে যেতাম।”
শেষ কথাটি খুবই ভাব নিয়ে বলে শান্ত। যেটা শুনে আমার খুবই রাগ হয়। হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়। আমি মনমরা গলায় বললাম,“তারমানে আমার কিছু হলে আপনার কোন কষ্ট হবে না? আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না?”
“আপনি আমার ভালোবাসা চান?”
শান্তর কথা শুনে আমি পুরো নির্বাক হয়ে গেলাম। নিজের মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাটি নিয়ে নিজেই বিপাকে পড়ে গেলাম। তবে শেষ কথাটি আমার অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়েছে।শান্ত আমার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমি আমতা আমতা করে বললাম,“আমরা তো বন্ধু। বন্ধু হিসাবে আপনি আমাকে মোটেও ভালোবাসে না। সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম।”
এটা শুনে শান্ত বাকা হাসে। সে আমাকে চোখ টিপ দিয়ে বলে,“বিপদে আপন প্রান বাঁচা মামা। তখন বন্ধু দেখার সময় নাই। আপনি বাসের নিচে লটকে গেলে শেষে পুলিশ আমায় ধরবে। নানা প্রশ্ন, নানা জিজ্ঞাসা। এসবের চেয়ে স্থান ত্যাগ করা ভালো নয়।”
“আপনি মজা করছেন?”
আমি শান্তর কথাগুলো বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলাম না। তাই জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু শান্ত মুখে একই রকম হাসি ধরে রেখে বলে,“একদম না।”
“সত্যি আমি ম রে গেলে ফেলে চলে যেতেন?”
আমি এই কথাটি খুবই মন খারাপ নিয়ে বললাম। কারণ শান্তর কথা আমার মন মানতে চাচ্ছে না। আমার মন খারাপ করে দিচ্ছে। এটা বুঝতে পেরে শান্ত হাসি মুখে বলে,“তবে অন্যরকম ভালোবাসা হলে ভেবে দেখতাম।”
“মানে?”
আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম। শান্ত জবাব দিলো না। সে প্রসঙ্গ বদলে ফেললো। তবে শান্তর কথা আমার কাছে অন্যরকম লাগছে। আজ প্রায় কথাই শান্ত অন্যভাবে বলছে। এসব বুঝতে পেরে আমি শান্তর চোখের দিকে তাকালাম। শান্ত সেটা দেখে বলে,“খালি চোখে দেখতে পাবেন না।”
“কি?”
আমার কথা শুনে শান্ত বলে,“আপনি যেটা খুঁজছেন আমার চোখে।”
“আপনি আজ বড্ড অন্যরকম কথা বলছেন।আপনার মনে হয় না?”
“হ্যাঁ বলছি তো?”
শান্তর প্রতি কথার পিঠে জবাব শুনে আমি কিছুটা বিব্রত হলাম। এটা বুঝতে পেরে শান্ত বলে,“আমার কোন কথায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন?”
আমি নাসূচক মাথা নাড়াতে শান্ত বলে,“তাহলে এত ভাবছেন কেন? এত ভেবে সময়টাকে নষ্ট না করে উপভোগ করুন। জীবন তো একটাই।”
শান্ত কথাটি বলে মিষ্টি এক হাসি দেয়। আমিও তার হাসির সঙ্গে তাল মেলাই। অতঃপর দুজন বাসের জার্নি উপভোগ করতে শুরু করি। যদিও আমাদের গন্তব্য খুবই কাছে। এতটুকু বাসে না গেলেও হতো। কিন্তু ঐ যে বাস্তব জীবনে একটু সিনেমা ফিল নেওয়ার সাধ জেগেছে। যদিও অনেক লোক অনেক কথা বলেছে। কিন্তু আমি বা শান্ত কেউ সেই কথা কানে নেইনি। আমি এসব ভাবছিলাম আর তখন শান্ত আমাকে আড়চোখে দেখে মনেমনে বলছে,“কৌশলে মনের কথা জানিয়ে দিলাম। যদি আপনার হৃদয়ের অনুভূতির পাতায় আমার নামের একটি অক্ষরও থাকে তবে আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন। সেদিন আপনার জবাবের অপেক্ষায় থাকবো পুষ্প।”
___
কাজল দুই দিনের জন্য বাবার বাড়ি আসে। তাকে দেখে তার মা খুব খুশি হয়। মায়ের খুশি দেখে কাজল ম্লান হাসে। বাবা, মা ফোনে খুব কান্নাকাটি করছিলো। কাজলের শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ায় কাজলকে কথা শুনতে হয়। সেজন্য তারা যায় না। কিন্তু মেয়েকে না দেখে যে থাকতে পারেন না। শত হোক নিজের মেয়ে। বাবা, মা তো। ভালোবাসে খুব। অন্যদিকে কাজলও বা কতদিন তাদের সাথে অভিমান করে থাকবে। যেই আপার জন্য এসব করছে সেও তো যোগাযোগ রাখেনি তার সঙ্গে। দিনশেষে র ক্ত কথা বলে। তাই অভিমান ভুলে বাবা, মায়ের কাছে এলো কাজল। তাছাড়া সে জানে তার বাবা, মা জীবনেও তাদের ভুল বুঝতে পারবে না। এটা তাদের চরিত্রের সঙ্গে যায় না। কাজল বাড়ি আসতে তার মা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেয়েকে কি খেতে দিবে? সে সেসবের যোগাঢ়ে ব্যস্ত। মায়ের এসব কান্ড দেখে কাজল মলিন গলায় বলে,“মা মায়ই হয়। তবে আমার বাবা, মা যদি একটু তাদের ভুল বুঝতো। তাহলে আমাদের সংসারটা খুব সুন্দর হতো। শ্বশুড়বাড়িতেও বড় মুখ করে বাবা, মাকে নিয়ে গর্ব করতে পারতাম। কিন্তু সেটা যে সম্ভব নয়। আমার বাবা, মা সেই সুযোগটা রাখেনি। তাই তো এসব কথা উঠলে চুপ করে হজম করতে হয়। জবাব দিলে যে বাড়ি মাথায় উঠে যায়। সংসারের এই নিত্য অশান্তি থেকে মুক্তি পেতেই তো এখানে এসেছি। বাবা, মায়ের কাছে। দিনশেষে আমিও আমার বাবা, মায়ের রক্তের প্রমাণ দিলাম। তাই তো চলে আসলাম।”
কাজলের এসব কথা শুনে তার মা হতভম্ব হয়ে যায়। তিনি বুঝতে পারেন শ্বশুড়বাড়িতে তার মেয়ে ভালো নেই। সেখানে তাদের জন্যও তাকে অনেককিছু সহ্য করতে হয়। এটা বুঝে মা বলে,“তুই এসব সহ্য করছিস কেন মা?
আমাকে বল তারা তোকে কিভাবে জ্বা লাচ্ছে, আমি তোর বাবা সব দেখে নিবো।”
“কিভাবে দেখে নিবে?”
কাজল নরম গলায় জিজ্ঞেস করে। মা খুব কঠিন গলায় বলে,“আমার মেয়েকে অত্যা চার করা। একদম মামলা দিয়ে দিবো। একবার পুলিশের বা রি খেলে সব সোজা হয়ে যাবে।”
“অতঃপর ডিভোর্সি উপাধি পেয়ে তোমার ঘরে এসে থাকবো। তুমিও হাসি মুখে মেনে নিবে। নিজের মেয়ে তো। কিন্তু স্বার্থপর এই দুনিয়া একজন ডিভোর্সির তার বাবা, মায়ের ঘরে শান্তির ভাত দুই মাস বা তিন মাস জুটে। তারপর সেই বোঝাই হয়ে যায়। যদিও তোমাদের তো আমি একমাত্র মেয়ে। হয়তো তোমরা এমন আচরণ করবে না। কিন্তু বলা যায় না। তোমরা যে স্বার্থপর। তাতে নিজের মেয়ে চোখের বিঁষ হতে সময় নিবে না।”
কাজলের মুখে এই কথা শুনে মা খুব কষ্ট পায়। সে মলিন গলায় বলে,“তুই নিজের মেয়ে বলেই তোকে নিয়ে এত ভাবি। তোর জন্যই সব করেছি। অথচ তুই সেই নিজের মেয়ে হয়ে বাবা, মাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলিস। কেন মা? পুষ্পের জন্য? আরে ঐ পুষ্প কি তোকে আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসে? বা ল বাসে। যদি ভালোবাসতো তাহলে তো ঠিকি যোগাযোগ রাখতো। বেতনের টাকায় একা ফু র্তি করতো না।”
“মা একটু চুপ করো।
তুমি আর বাবা সবসময় ঘুরেফিরে সব বিষয়ে আপার দোষটা খুঁজে বের করো। কোনদিন তো আমার সংসারের অশান্তির জন্য না তাকে দ্বায়ী করে ফেলো। মানে তোমাদের জীবনে যাই হোক। সবকিছুতে একমাত্র দোষী হলো কে? সে হলো হতভাগী পুষ্প। জীবনের এতটা সময় তোমাদের জন্য নিজেকে শেষ করে দিয়ে আজ যখন সে নিজের শান্তি খুঁজে নিয়েছে ওমনি তোমাদের গায়ে জ্বা লা ধরে গেল। আজ বলছো বেতনের টাকায় ফু র্তি করছে, কাল বলবে ছেলেদের সঙ্গে এই সেই করে ফেলছে। আর কত মা। এবার একটু থামো। এসব বন্ধ করো।”
কাজল প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বলে। তার কথা শুনে মা চুপ হয়ে যায়। কাজল একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,“আর ভেবো না। আমি ডিভোর্স নিবো না। দিনশেষে জয় আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাকে ভালোবাসি। তাই এসবের জন্য হলেও আমাকে তো তার পাশে থাকতে হবে।”
এটা বলে কাজল ঘরে চলে যায়। মা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মনেমনে বলে,“তুই যতই আমাদের ভুল বুঝিস। আমরা তোর ভালোই চাই। সন্তান দুঃখে থাকুক এটা কোন বাবা, মা চায় না। আমিও চাই না। কিন্তু তুই বুঝলি না। ঐ স্বার্থপর মেয়েটা তোর মাথা খেয়ে নিয়েছে। কোন দুঃখে পুষ্পকে দত্তক নিয়েছিলাম। ধুর। শুধু শুধু টাকা ন ষ্ট হয়েছে। এখন নিজের মেয়ের চোখেও খারাপ হচ্ছি।”
’
’
চলবে,
#ইচ্ছেঘুড়ি (২৬)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আমার সময়গুলো বেশ যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রায়ান একদিন এসে মিষ্টি মুখ করালো। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সেদিন তার কথাবার্তায় খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সবার সঙ্গে নিজের হবু বউয়ের সম্পর্ক এমন প্রশংসা করছিলো যেটা আসলে প্রয়োজন ছিলো না। অতিরিক্ত কোনকিছু ভালো নয়। তার কথায় আমি স্পষ্টভাবে বুঝেছি, সে আমাকে ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার হবু বউ আমার থেকে অনেক বেশি যোগ্য। আমি অবশ্য এসবে তেমন গুরুত্ব দিলাম না। এসব বুঝতে পেরে রায়ান নিজে আমার কাছে এসে বলে,“জেলাস হচ্ছেন।”
“আমি কেন জেলাস হবো?
আপনি যদি এটা ভেবেও থাকেন তবে ভুল ভাবছেন। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সেরা একজন মানুষ জীবনে বেছে নিয়েছেন। এটা আমার জন্য সুখবর। দুঃখের নয়।”
আমার মুখে এই কথা শুনে রায়ান অবাক হয়। সে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,“মানুষ হারানোর পর বুঝে কী হারিয়েছে। তবে আপনার তো কচি ছেলে পছন্দ। সে হিসাবে আপনার কথাগুলো যথার্থ।”
রায়ানের মুখে এই কথা শুনে আমি রাগান্বিত চোখে তার দিকে তাকালাম। রায়ান শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,“রাগ করছেন কেন? সত্য হজম হচ্ছে না? প্রায়ই তো দেখি নিজের চেয়ে এক বছরের ছোট এক ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে।”
রায়ানের কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো। তবে সেটা নিজের উপর। আমিই তাকে আগ বাড়িয়ে বলেছিলাম শান্ত আমার ছোট। আমার ভালো বন্ধু। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাকে শান্তর বিষয়ে বলে ভুল করেছি। আমাকে চুপ দেখে রায়ান বলে,“সাবধান পুষ্প। বাস্তবতা ভিন্ন। আপনার চেয়ে ছোট একটি ছেলে আপনার প্রেমিক হতে পারে কিন্তু জীবনসঙ্গী হবে না। তাই তার আশায় থেকে ভালো পাত্র হাতছাড়া করবেন না। নয়তো পরে পস্তাবেন।”
“শান্ত আমার বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু। তাছাড়া শান্ত বয়সে আমার ছোট হতে পারে। তবে অনেক বেশি বিচক্ষণ এবং জ্ঞানী। সে তার মস্তিষ্ক যেসব ধারণ করে সেটা আপনি বুঝবেন না। এটা বোঝার জন্য আপনাকে কিঞ্চিৎ নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আদৌ সেটা সম্ভব নয়। তাই না জেনে মন্তব্য না করা উত্তম।”
আমি রায়ানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে সরে যাই। তবে রায়ান সেদিন পুরোটা সময় আমাকে তার হবু স্ত্রী আমার চেয়ে কত পার্ফেক্ট সেটা বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলো। সেই সঙ্গে আমি আমার জীবনে কত বড় ভুল করেছি। আমি এসবে গুরুত্ব দেইনি। এসব নিয়ে এক বিন্দু ভাবিনি। তবুও সে এসব করে বেরিয়েছে। কিছু মানুষ থাকে এমন। তবে আমি তাকে শেষবার শুধু এতটুকু বলেছিলাম,“নিজের জীবনে সুখী হন রায়ান। ভালো থাকুন। প্লীজ কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ভালো থাকার অভিনয় করবেন না। আমি বন্ধু হিসাবে আপনার থেকে এটা আশা করি। আপনি খুব ভালো মানুষ। দায়িত্বশীল মানুষ। আশা করি সংসার জীবনে খুব ভালো থাকবেন।”
অতঃপর অফিসে সবসময় রায়ানের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি। এভাবেই আমার দিন কেটে যাচ্ছে। নিজের মতো ভালো রয়েছি। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় কাজলের সংসার জীবন কেমন চলছে জানতে। কিন্তু সেটা চেয়েও পারছি না। মনে হয়, নিজের এই জীবনে আবার তাদের নাই বা জড়াই। আমাকে ছাড়া তারা হয়তো সুখে আছে। আমিও তো সুখী আছি। এসব ভেবেই হয় না। তবে ইদানীং শান্তর কিছু ব্যবহার, কিছু কথা আমার মস্তিষ্কে গভীরভাবে নাড়া দিচ্ছে। শান্তর কথাবার্তা বোঝা যায়, সে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্কে আটকে নেই। সে অন্যকিছু চায়। কিন্তু আমি এটা মানতে চাচ্ছি না। আমার মনে হচ্ছে, শান্ত সেভাবে কথা বলেনি। আমি তার কথাগুলোকে অন্যভাবে ভাবছি। শান্তকে এসব জিজ্ঞেস করতেও পারছি না। সে এমনভাবে সিরিয়াস মূহুর্তে মজা করে যে তার সঙ্গে সিরিয়াসভাবে সব জানাও যাচ্ছে না।
___
শান্ত বাড়িতে এসেছে বেশ কিছু মাস পর। বাবা, মা তাকে দেখে খুব খুশি হয়। বাবা ভীষণ খুশি হয়। তিনি তাকে দেখে খুব সুন্দরভাবে বলে,“শুনেছি তোমার ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এটা করতে পারবে। ভবিষ্যতে শোরুম দিতে চাচ্ছো শুনলাম?”
“হ্যাঁ।”
শান্তর জবাব পেয়ে তার বাবা খুশিমনে বলে,“টাকা পয়সা লাগলে আমাকে বইলো। আমি ব্যবস্থা করে দিবো।”
বাবার মুখে এমন কথা সেই সঙ্গে মুখে হাসি দেখে শান্ত অবাক হয় না। সে জানতো এমনটাই হবে। তবে মা অবাক হয়। সে কিছুটা বিষ্ময় নিয়ে বলে,“তুমি? যে মানুষটা তার টাকা জলে যাবে বলে টাকাই দিতে চাচ্ছিলো না। বকাবকি করছিলো সেই মানুষটি টাকা দিতে চাইছে? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?”
শান্তর মায়ের এসব কথা শুনে বাবা হাসে। সে হাসি মুখে বলে,“তোমার ছেলে যে বাউন্ডুলে যে সে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবে এটাই তো আমি কখনো ভাবিনি। এখন যখন পারছে, টাকাটা জলে যাইনি তখন টাকা দিতে সমস্যা কোথায়। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম আমার ছেলেটা প্রতিষ্ঠিত হোক। বাবা হিসাবে এতটুকু চাওয়া।”
“না বাবা। তুমি এতটা চাওনি। তুমি এবং মা তোমাদের চাওয়া অনেক বেশি ছিলো। তোমরা আমাকে নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখতে। তাই তো ছোটবেলা থেকে অল্পতে খুশি হতে না। কিন্তু একটা সময় পর আমি যখন তোমাদের কথা শুনছিলাম না। নিজের মতো জীবন শুরু করি। সারাজীবন ছন্নছড়া হয়ে জীবন পার করেছি তখন তোমাদের আমাকে নিয়ে চাওয়া কমে যায়। আমি যদি তোমাদের সেই মেধাবী ছেলে থেকে আজ কাপড়ের ব্যবসায়ী হতাম তাহলে তোমরা কখনোই খুশি হতে না। কিন্তু আজ আমি একটা আড্ডাবাজ ছেলে থেকে কাপড়ের ব্যবসা করছি, ভালো লাভবান হচ্ছি। তাই তোমার আমাকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। তোমার মুখের হাসিই প্রমাণ করে দিচ্ছে তোমাদের গর্ব হচ্ছে।”
শান্তর বাস্তব কথাগুলো শুনে আজ আর তার বাবা প্রতিত্তোর করলো না। বরং মেনে নিয়ে বলে,“হ্যাঁ। ভুলটা আমার ছিলো। অন্যের সন্তানের সাফল্য দেখে নিজের সন্তানকে তাদের মতো বানাতে চেয়েছি। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম এই জগতে কেউ কারো মতে হতে পারে না। সবাই সবার জায়গা বেষ্ট। আমি শিক্ষিত মানুষ হয়েও এই ভুলটা করেছি। স্যরি শান্ত।”
একটু থেমে হাসি মুখে বলে,“বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে শান্ত। শুধু প্রকাশ করতে পারেনি।”
শান্তর মা তার বাবার কথা শুনে একই কথা বলে। সে বলে,“মাও তোকে খুব ভালোবাসে।”
শান্ত এই কথা শুনে তার বাবা, মা দুজনকে জড়িয়ে ধরে। শান্তর বাবা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলে,“এই উপলব্ধি আমার আজ হয়নি। তুই যখন ধীরে ধীরে ব্যবসায় উন্নতি করছিস শুনলাম। তোর মা রোজ ফোনে তোর সঙ্গে কথা বলে কতটা কি পারছিস শুনতো, সেসব গল্প আমায় শোনাতো। যখন পাড়ার লোক আমায় দেখে বলতো, শুনলাম তোমার বখাটে ছেলে নাকি ব্যবসায়ী হচ্ছে। ছেলেটা তবে এবার ভালো হলো। নিজের ভালো বুঝলো। তোর মা যখন আমায় বলতো, এটাই হয়তো তোর নিয়তিতে লেখা ছিলো। এভাবেই সফলতা। তখন আমি বুঝলাম, তোর উপর সবকিছু চাপিয়ে না দিয়ে ছোট থেকে যেটা ভালো লাগতো সেটা করতে দিলে হয়তো অনেক ভালো হতো। স্যরি বাবা।”
“ঠিক আছে। এখন আমরা ভালো আছি এটাই তো অনেক।”
শান্তর কথা শুনে তার বাবা, মা খুশি হয়। শান্তর বাবা জানে তার বকাবকির জন্য এবং শান্তর চাচা ব্যবসা সম্পর্কে ভালো বোঝে তাই শান্ত অন্য শহরে গিয়েছে। তাই সে নিজে থেকে বলে,“শোরুম দিলে কিন্তু এই শহরেই দিবি। যা যা ব্যবস্থা করে দেওয়া লাগে আমি দিবো। টাকা নিয়েও তোকে ভাবতে হবে না। আমাদের পেনশনের টাকায় হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো। এখনই তো আর শোরুম খুলছি না। যখন খুলবো তখন ভাবা যাবে।”
“এভাবে হয় না। কোন কিছু এখন ভাবলাম এখন করলাম এমনটা ঠিক হয় না। সবকিছু করার আগে পরিকল্পনা করে নিতে হয়।”
শান্ত তার বাবার কথা শুনে ভাব নিয়ে বলে,“এজন্যই তোমার সঙ্গে আমার ভাবনা মিলে না। তুমি বড্ড বেশি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো বাবা। আরে বিস্তার পরিকল্পনা আবার কি, এখন ভাবছি কোন একদিন খুলবো এটাই পরিকল্পনা। বাকি যেটা লাগবে সেটা যেদিন খুলবো তার আগের দিন ভাববো।”
শান্তর বাবা চুপ হয়ে যায়। ছেলের সঙ্গে কথায় যে তিনি পারবেন না তা জানেন। এটা দেখে মা বলে,“হয়েছে অনেক। বাদ দে। এবার আসল কথা শোন। অনেকদিন পর বাড়ি এলি। তোর তো ঐ শহরে গেলে আর বাড়ি আসতে মন চায় না। এদিকে আমরা যে কেমন আছি সেটা বুঝতে চাস না। এমন ভাব করিস মনে হয় ঐ শহরে বউ আছে। তাই তাকে ছেড়ে আসতে মন চায় না।”
মায়ের শেষ কথা শুনে শান্তর কাশি উঠে যায়। শান্তর মা এটা দেখে অস্থির হয়ে যায়। শান্তর বাবা পানি এগিয়ে দেয়। সেটা পান করতে শান্ত ঠিক হয়ে যায়। তার মায়ের ‘বউ’ কথা শুনে তার চোখে পুষ্পের মুখ ভেসে উঠে। এটা বুঝতে পেরে শান্ত মনেমনে বলে,“শালার এটা তো মারাত্নক। শালী এতদিন হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিতো, এখন দেখছি বউ হতে চায়। আরে শালার মন। তুই চাইলে এসব সম্ভব নয়। তুই কেন বুঝছিস না?”
শেষ কথাটি নিজের উপর রাগ করে বলে। পরক্ষণে মায়ের কথা শুনে শান্ত হতভম্ব হয়ে যায়। তার মা বলে,“এখন তোর ব্যবসাটা তো ভালোই যাচ্ছে। তাছাড়া বয়সও হয়েছে। আমরা এবার তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই। বিয়ে দিয়ে বউ এখানে রেখে দিবো। আমি নিশ্চিত বউ এখানে থাকলে দুই সপ্তাহে চলে আসবি।”
এটা শুনে শান্ত হতভম্ব হয়ে যায়। শান্তর বাবাও সম্মতি জানায়। তারা এক কথায় শান্তকে না জানিয়ে পাত্রী দেখাও শুরু করেছে। এটা বুঝতে পেরে শান্ত বলে,“আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। অবশ্যই এখানে আমার মতামত আগে। তোমরা মত না নিয়ে কিভাবে পাত্রী দেখা শুরু করেছো?”
“আমরা পাত্রী দেখিনি। তবে দুই একজনের খোঁজে রয়েছে। তুই বললে সেটা দেখবো। তাছাড়া তুই বড় হয়েছিস। তোর নিজের পছন্দ থাকলে সেটা বল। আমরা তাকেই ঘরে তুলবো।”
শান্ত মায়ের এই কথা শুনে খুশি হয়। তবুও বলে,“মা এসব নিয়ে আমি পরে বলছি। এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন করতে হবে। সেটা করি। আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি।”
এটা বলে শান্ত নিজের ঘরে চলে যায়। তার বাবা, মা অবাক হয়ে তার যাওয়া দেখে। বাবা কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলে,“মনে হচ্ছে ওর পছন্দের কেউ আছে।”
“তাহলে তো ভালো। আমাদের কষ্ট করে দেখতে হবে না।”
মায়ের এই কথায় বাবা চিন্তিত গলায় বলে,“কিন্তু সে আমাদের পছন্দের হবে তো? তাছাড়া শান্ত যা মানুষ ও কাকে পছন্দ করে রেখেছে সেটা ভাবতেই তো আমার ভয় হচ্ছে।”
বাবার কথায় মা চিন্তিত হয়ে পড়ে। মেয়ে তাদের পছন্দ নাহলে শান্ত কি তাদের কথা শুনবে? শুনবে না। তখন কী হবে? এটা ভেবে মা চিন্তায় পড়ে যায়।
___
শান্তর ফোন দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আমি ফোনটি ধরে কানে ধরতে শান্ত বলে,“মন ভালো?”
“হ্যাঁ। হঠাৎ ফোন করেই এই প্রশ্ন করলেন যে?”
শান্ত এই কথা শুনে খুব উৎসাহ নিয়ে বলে,“আপনাকে খুশির একটা খবর দিতে চাচ্ছিলাম। যেহেতু মন ভালো সেহেতু ভালোই লাগবে।”
”তাই? বাড়িতে গিয়ে খুব খুশির খবর পেয়েছেন বুঝি?”
আমার কথায় শান্ত সম্মতি জানিয়ে বলে,“হ্যাঁ একদম।”
“তো বলুন শুনি সেই খুশির সংবাদ?”
আমি খুব উৎসাহিত হয়ে খুশির খবর শোনার অপেক্ষা করছিলাম। আমার মুখে বিরাজ করছিলো মিষ্টি হাসি। কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম শান্ত নিশ্চয় এমন কিছু বলবে যেটা আমার খুবই ভালো লাগবে। কিন্তু শান্ত যা বলে তা শুনে আমার মুখের হাসি মূহুর্তে বিলীন হয়ে যায়। মুখটা মলিন হয়ে যায়। শান্ত বলে,“বাবা, মা আমার বিয়ের কথা ভাবছে। বাহ্ আটাশ বসন্তে এসে আমার বিয়ের ফুল ফুটবে। আমি তো ভেবেছিলাম শালা আমার কপালে কোন বিয়ে নেই। কিন্তু এখন তো দেখছি বিয়ে আছে।”
শান্ত খুব উৎসাহ এবং খুশি নিয়ে কথাগুলো বলছিলো। যে কথা শুনে আমার খুশি হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমি পারলাম না। আমার অজান্তে আমার বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা অনুভব হলো। এটার কারণ কি? শান্তর কথায় বোঝা যাচ্ছে এতদিন তার কথায় আমি যেসব ইঙ্গিত পেয়েছিলাম সেটা মিথ্যা সেজন্য এই ব্যথা। নাকি অন্য কারণে? আমি বুঝতে পারলাম না। আমি নির্বাক হয়ে বসে আছি। ফোনটা কানে এটা দেখে শান্ত বলে,“কী হলো পুষ্প চুপ হয়ে গেলেন কেন?”
আমি কথা বলতে পারলাম না। আমার হাত দিয়ে ফোনটি বিছানার উপর পড়ে গেল। শান্ত তখনও কথা বলে যাচ্ছে। শান্ত বলছেন,“আপনি অনেক বেশি খুশি হয়েছেন বুঝি? পুষ্প? এই পুষ্প?”
আমি ফোনটা কেটে দিলাম। আমি বহু চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারলাম না। আমি বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। হাতে তুলে নিলাম আমার এবং শান্তর প্রথম কথা হওয়ার সময়ের সেই জলরঙে আঁকা ছবিটি। আমি ছবিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। শান্তর হাসি মুখ, দুষ্টুমি ভরা কন্ঠ, বাচ্চামো স্বভাব সবটা আমার চোখে স্পষ্ট হতে লাগলো। যেসবে আমাকে জানান দিচ্ছে, আমি শান্তর বিয়ের কথা চলছে শুনে খুশি হতে পারছি না। কিছুতেই পারছি না। কারণ তার সেই বাচ্চামো স্বভাব, হাস্যজ্জ্বল মুখ, প্রাণোচ্ছল জীবন সবটা আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সেদিন বাসে শান্ত যেসব বলেছিলো সেসবের মাঝে আমি ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলাম। যেটা আমি দেখতে পেয়েও এড়িয়ে গিয়েছিলাম। তবে মনেপ্রানে চাচ্ছিলাম সেটা সত্যি হোক। আমি এসব ভাবছিলাম পরক্ষণে মন বলে উঠলো,“ঠিক হচ্ছে না পুষ্প। শান্ত ছোট একটি ছেলে। তুই এসব কী ভাবছিস? মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
সেই মূহুর্তে ফোনে ম্যাসেজের শব্দ এলো। আমি ফোনটি হাতে নিতে চাইনি কিন্তু বিছানার উপর থাকা ফোনের স্ক্রিনে শান্ত নামটি দেখে হাতে নিলাম। ম্যাসেজটি পড়ে আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। শান্ত লিখেছে,“বিয়ের কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন কেন? আমি সেভাবে কখনো আপনাকে বলিনি। আপনিও কিছু বলেননি। তবে আমার আচরণে আপনি যেমন বুঝে নিয়েছেন সেভাবে আমিও বুঝে নিলাম। তাই আমি আমার বাবা, মাকে আপনার কথা জানাচ্ছি। আশা করি আপনি সেভাবে প্রস্তুত থাকবেন।”
এই ম্যাসেজটি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিলাম আমি। সেই মূহুর্তে আরও একটি ম্যাসেজ এলো। শান্ত আবার লিখেছে,“মন খারাপ করবেন না। কথাটি আমি আপনাকে বলিনি ঠিক তবে অনেকবার বলেছি। না বলেও বলেছি বহুবার। তাই কষ্ট পাবেন না। পাত্রী আপনিই হবেন।”
শান্তর এই দ্বিতীয় ম্যাসেজটি দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। একটু আগে বয়স নিয়ে যে দ্বিধা কাজ করছিলো এক মূহুর্তে সেটা আমি ভুলে গেলাম। আমার মন খুশি হলো। এ এক অন্যরকম খুশি। যেখানে না বলেও বহুবার বলা যায় এমন এক কথা যেটা হৃদয়কে খুশি করে দেয়।
’
’
চলবে,