#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
হঠাৎ একজন লোক তন্ময়ের কাছে আসলো। মাথা নিচু করে বললো,
” ভাই, একটা ছেলে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। ”
তন্ময় রাগী চোখে চেয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। হুংকার ছেড়ে বললো,
” আমি এদিকে চিন্তায় মরছি। আর তুই এখানে বা* শুনাইতে আসছস। গিয়ে বল আমি ব্যস্ত। যা। ”
ছেলেটা তটস্থ হলো। মুখের লালা দিয়ে গলা ভিজানোর চেষ্টা করে বললো,
” ভাই , ওই পুলিশের সম্পর্কে কি জানাবে বলেছে আপনাকে। ”
তন্ময় শুনে দু চোখ বুজলো জোরালো ভাবে। নিজেকে শান্ত করে হেঁটে গেলো ড্রিংকস সেকশনের দিকে । গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বললো,
” পাঠিয়ে দে। ”
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে সম্মান জানিয়ে বেরিয়ে গেলো।
একটু পর একটা পুলিশ অফিসার ভিতরে এলো। তন্ময়ের পিছনে দাড়িয়ে অতি নরম গলায় বললো,
” ভাই ”
তন্ময় হাতে ড্রিংকস নিয়ে পিছন ফিরলো। পুলিশকে দেখে বাঁকা হেসে পুলিশের কাছে এসে দাড়ালো। কাঁধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
” আরে , নিমকহারাম। তুই ? ”
পুলিশ ” নিমকহারাম ” শব্দটা শুনে কিছুটা গুটিয়ে গেল। অপমানে মুখশ্রী লাল হলো। তবুও কিছু করার নেই। বেঁচে থাকাটায় এখন মুখ্য তার কাছে। পুলিশ মাথা নিচু করে বলল,
” ভাই , আশরাফুল স্যারের মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। উনার মেয়ের নাম ঐশী। মেয়ে ছোটবেলা থেকে দেশের বাইরে ছিল। অস্ট্রেলিয়া। এখনো দেশে এসেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। আমরা এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোনো খবর পাইনি। ”
তন্ময় রেগে তাকালো পুলিশের দিকে। দাঁত চেপে বললো,
” তোমার ব্যর্থতার খবর এভাবে নাচতে নাচতে দিতে এসেছ ? হাও ফানি ! ”
পুলিশ মাথা নেড়ে বললো,
” ভাই, আপনি চাইলে আ… ”
” মেয়েটার ছবি আছে ? ”
পুলিশ নিজের কাধ ব্যাগ থেকে একটা জঙ্কার পড়া ছবি বের করে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে দিল। তন্ময় ছবিটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলো ছবিটার দিকে। তারপর তেজ নিয়ে তাকালো পুলিশটার দিকে। কাধ চাপড়ে বললো,
” আমাকে ওই মাইয়ার ছোট বেলার ছবি দিয়ে কি বুঝাতে চাইছো, পুলিশ ? বড় বেলার ছবি দেও। দেইখা আমার পরান জুড়াই।”
পুলিশ মাথা নিচু করে বললো,
” ভাই , আমি পাইনি। সেদিন তো আপনারা স্যারের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। সব ছবি আগুনে পুড়ে গেছে। খুব কষ্ট করে এই ছবি জোগাড় করেছি, ভাই। ”
তন্ময় মুখ হিংস্র করে এগিয়ে গেলো ড্রিংকস সেকশনের দিকে। মদের গ্লাস থেকে এক ঢোকে সমস্ত পানীয় পান করে অপলক তাকিয়ে রইলো সামনে বসে থাকা প্রভুভক্ত কুকুরের দিকে। যার ঘেউ ঘেউ শব্দে মুখরিত হলো গ্যারাজের চারপাশ।
__________________________
ঘড়ির কাঁটা ” আট ” । এলার্ম বাজছে ” টিংটিং” “টিংটিং”। ঐশী হাত দিয়ে হাতড়ে এলার্ম বন্ধ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু সফল বিশেষ হলো না। বরং এলার্ম ঘড়িটা ঐশীর হাত লেগে আরো দূরে সরে গেলো। ঐশী ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেললো। কোলবালিশ দিয়ে শটান করে নিজের চোখ , কান বন্ধ করলো। কিন্তু এই এলার্ম ঘড়িটা বড্ড বিরক্তিকর। কারো কথাই শুনে না। শেষ পর্যন্ত এলার্ম ঘড়ির উদ্দেশ্য জয় হলো। ঐশী শরীর থেকে কাথা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ বেটে নিয়ে ঘড়িটার দিকে তাকালো। একটু এগিয়ে গিয়ে ঘড়িটা নিজের কাছে এনে বন্ধ করলো প্রচন্ড জেদে। চোখ কচলে ভাবলো কিছু হৃদয় বিদারক স্মৃতির কথা। প্রতিদিন মা ওকে জাগাতে কি কষ্টটাই না করতো। আর আজ ? এখন থেকে তো যা করার ওর নিজেরই করতে হবে। কপাল ! ঐশী মুখ ভার করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। অতঃপর নাকে মুখে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো জুভানের অফিসের উদ্দেশ্যে।
তাড়াহুড়ো করে অফিসে গিয়ে ঐশী দেখে শাহাদাত ফোন হাতে নিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। ঐশী ব্যাগ আকড়ে ধরে এগিয়ে গেলো শাহাদাতের দিকে। সোফায় বসে থাকা শাহাদাতের দিকে চেয়ে ভাবলো এই মধ্যবযস্কা লোককে কি সম্বোধন করা যায় ? চাচা নাকি অন্যকিছু ? ঐশী এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” চ আব চাচা ? ”
শাহাদাত তাকালেন ঐশীর দিকে। দৃষ্টি অসহায়। ঐশী ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করলো,
” কিছু কি হয়েছে ? এমন হয়ে আছেন কেনো ? ”
শাহাদাত ফোনটা ঐশীকে দেখিয়ে বললো,
” স্যারকে সেই কখন থেকে ফোনে ট্রাই করছি। কিন্তু রিসিভ করছেন না। আর এদিকে মিউজিক প্রোডিউসার আমার মাথা খাচ্ছে। স্যারের সাথে কাজ শুরু করবে বলে। এখন আমি কি করি ? ”
ঐশী উত্তরে কিছুই বললো না। বরং নিজের ফোন থেকে জুভানের নাম্বার বের করে দু একবার কল দিল। কিন্তু বন্ধ। ঐশী নিজেও এতে বিরক্ত। শাহাদাত বারবার কল করছে। ঐশী সেদিকে একবার তাকিয়ে ভাবলো ” বন্ধ ফোনে বারবার কল করা কি বোকামি নয় ? ” শেষ পর্যন্ত ঐশী সিদ্ধান্ত নিলো। সে বাসায় যাবে। জুভানের। শাহাদাত এতে সম্মতি দেওয়ায় ঐশী রিক্সা ভাড়া করে জুভানের বাসার দিকে এগিয়ে গেলো।
বিশাল বাড়িটায় কলিং বেল বাজালো ঐশী। একবার বাজাতেই একজন ছেলে সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। ঐশী জিজ্ঞেস করলো জুভানের কথা। জেনে নেওয়া শেষ হলে সিড়ি বেয়ে দুই তলায় জুভানের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
দরজার নক দিল ঐশী। কিন্তু ভিতরের মানুষটা নিরুত্তর। ঐশী পুনরায় নক করলো। এবারও কেউ সাড়া দিল না। আর কোনো উপায় না পেয়ে ধুকধুক মন নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো ঐশী।
বেডের উপর জুভান চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। একটা ট্রাউজার পড়া উদোম শরীর। ঐশীর অবাধ্য মন জুভানকে এভাবে দেখে ধুক করে উঠলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো হাজারবার। ঐশী মাথা নেড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তবে লাভ বিশেষ হলো বলে মনে হলো না। ঐশী দুরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ডাক দিল আলতো করে ,
” স্যার ,, স্যার,”
জুভানের কোনো হেলদুল নেই। ঐশী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কাছে গিয়ে ডাক দিবে ? ঐশী পড়লো এক মহা ফ্যাসাদে। চোখ মুখ খিচে এগিয়ে গেলো জুভানের বেডের দিকে। একটু কাছ থেকেই ডাক দিল ,
” স্যার , স্যার। আপনার একটা শুটিং আছে আজ। প্লিজ উঠুন। স্যার। ”
আচমকা জুভান ঘুমের ঘোরেই এক অবিশ্বাস্য কাজ করে বসলো। ঘুমের ঘোরেই হাত উঠিয়ে ঐশীকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বিছানায় নিয়ে এল। ঐশীকে নিচে রেখে জুভান ওর উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। ঐশী তো কিংকর্ত্যবিমূঢ়। কি হলো ! ঐশী ভেবে কুল পাচ্ছে না। মুখের আকৃতি ” হা ” ধরনের হয়ে গেছে। যখনই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখনই জুভানকে নিজের থেকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো। কিন্তু এত শক্তপোক্ত নিজের উপর থেকে সরাতে খুব একটা সফল হলো না ঐশী। তবে ঘুম ভাঙলো জুভানের। চোখ আদো খুলে ঐশীকে এই অবস্থায় দেখে খানিক ভরকে গেল ও।নিজের দোষ বুঝতে পারে জলদি সরে উঠলো ঐশীর থেকে। জুভান সরতেই ঐশী এক ঝটকায় উঠে দাড়ালো। মুখ এখনো তার স্বাভাবিক হয়নি। জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে অপরাধবোধ নিয়ে বললো,
” আব, আই অ্যাম সরি। আমি ভেবেছি জেনিফার। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। ”
ঐশী মুখ কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। জেনিফার ? আজও কি মেয়ে নিয়ে এসেছে জুভান ? ঠিক তখনই ওয়াশুরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। শুধু একটা টাওয়েল জড়িয়ে বের হলো সাদা ধবধবে এক মেয়ে। ঐশী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো সেই মেয়ের দিকে।মেয়েটা জুভানের কাছে এসে বসলে জুভান ঐশীকে দেখিয়ে বলে,
” মিট। শি ইজ জেনিফার। মাই কল গার্ল। ”
#চলবে