#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩০ ( বিয়ে পর্ব)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঐশী পুনরায় চোখ মুছে বললো,
— ” আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। বুকে দু হাত গুটিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।ববললো,
— “তাহ, কারণটা জানতে পারি? ”
ঐশী আশপাশে তাকালো। এত মানুষের ভীড়ে এমন কথা বলতে ওর বাধছে। ঐশীর এমন অস্বস্থি দেখে এক হাফ ছাড়লো। আচমকা ঐশীর বাম হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও। ঐশী একটু অবাক হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। জুভানের সাথে পা মেলালো। জুভান ঐশীকে একটা রুমে এনে ছেড়ে দিলো। সিটকিনি উপরে তুলে দিয়ে ঐশীর সামনে সোজাসুজি হয়ে দাঁড়ালো। বেশ কয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তারপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে মোলায়েম সুরে বললো,
— ” নাও টেল মি দা রিজন? ”
ঐশী কোনোরূপ ভনিতা না করেই বলে দিলো,
— ” আপনি কি ভেবেছেন আপনি সারাদিন সারারাত বাড়িতে সো কলড মেয়েগুলো এনে ফুর্তি করবেন। আর আমি সারা বাড়ি আপনার বউ হয়ে ঘুরে বেড়াবো। আপনি যদি এসব ভেবে থাকেন। তাহলে সেখানেই আটকে যান। এমন হলে আপনাকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না। ”
জুভান ভ্রু নাচিয়ে ঐশীর কথা শুনছিলো। ঐশী সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার পর জুভান তীক্ষ্ম চোখে বললো,
— ” এটাই তো সমস্যা? রাইট? ”
ঐশী মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে ফিরলো। জুভান আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকালো। তারপরও কোমরে এক হাত দিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” ওকে দেন। আমরা একটা ডিল করবো। ”
— ” ডিল? ”
— “হ্যাঁ,ডিল। এই বিয়ে একটা সমঝোতা হবে। ”
— ” মানে? ”
ঐশী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো। জুভান সোজাসুজি বললো,
— ” বিয়ের পর আমি বাড়িতে কোনো মেয়ে আনবো না। এমনকি আমার লাইফেও তুমি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মেয়ে থাকবে না। আমরা দুজন একই বাড়িতে থাকবো। কিন্তু আলাদা। তুমি এক রুমে, আমি আরেক রুমে। আমি তোমার লাইফে জবরদস্তি করবো না। তেমন তুমিও করবে না। কিন্তু যদি কখনো তোমার মনে হয় আমাদের একসাথে থাকা উচিত না। দেন একটাই পথ বেছে নেবো। “ডিভোর্স”। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট যদি কখনো তোমার মনে হয় তুমি আমার প্রেমে পড়েছ, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আমি সেদিন তোমায় ফিরিয়ে দেব না। কথা দিলাম।তো বলো। ডিল মঞ্জুর? ”
ঐশী হতবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ডিল সম্পর্কে ও কখনোই শুনে নি। ঐশী কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। শেষ পর্যন্ত সবদিক ভেবে বললো,
— ” ঠিক আছে। আমি আপনাকে বিয়ে করবো। তবে হ্যাঁ, ডিলের কথা যেনো না ভুলেন। তাহলে কিন্তু…”
— ” ভুলবো না। মাইন্ড শার্প আমার। তোমার মতন না। এখন চলো। ”
ঐশী জুভানের কথায় কিছুটা অপমানিতবোধ করলো। জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
— ” আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন। ”
জুভান অবাক হওয়ার ভান করলো। গালে তওবা করার মতো হাত রেখে বললো,
— ” আস্তাগফিরুল্লাহ। জীবনেও না। ”
ঐশী জুভানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে দিলো।
_______________________
অতঃপর দুজনের প্রণয়ের ঘণ্টা বাজলো। ঐশী এবং জুভান বেঁধে গেলো এক অমূল্য সম্পর্কে। ইতিমধ্যে মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেছে ওদের বিয়ের খবরে। একটু আগে যারা ওদের চরিত্রে আঙ্গুল তুলছিলো এখন তারাই তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে। জুভানের বন্ধু বিহান গাড়ি চালাচ্ছে। আর বাকি তিনজন অন্য গাড়ি দিয়ে জুভানের বাড়ীতে যাচ্ছে। ঐশী মুখ ভার করে জানালার পাশে সেটে বসে আছে। জুভান ফোন স্ক্রল করছে আর আড়চোখে ঐশীর দিকে তাকাচ্ছে। জুভানের মাথায় ঘুরছে নানা চিন্তা। ” বিয়ে হয়ে গেছে ওদের! ” হ্যাঁ, “বিয়ে”। কিন্তু এই মুহূর্ত এভাবে না আসলেও পারতো। ঐশী যখন তাকে মন থেকে মেনে নিত তখন ধুমধাম করে তার হৃদয়হরিণী কে নিজের ঘরে তুলতো। কিন্তু এখন! এখন সবটাই বিগড়ে যাওয়া এক ঘুড়ির মতন। যার লাটাই একটা তুচ্ছ ডিলের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। জুভান এসব ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
” নিস্তব্দ কুঠির ” বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো ওদের। জুভান আগে নেমে দাড়ালো। ঐশী নামতে ফেলে জুভান বাধা দেয়। সে নিজে ঐশীর পাশে এসে ওর দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। ঐশী মুখ কুচকে বলে,
— ” কি? ”
— ” আব, নামতে হেলপ করি। ”
— ” ডিলের কথা কি ভুলে গেছেন? ”
— ” না। ভুলি নি। কিন্তু আমার অনেক শখ ছিল নিজের বউকে নিজের হাতে গাড়ি থেকে নামাবো। তারপর একসাথে বাড়িতে পা রাখবো। কিন্তু এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তুমি আমার বউ। তুমি এই শখ পূরণ না করলে আমার তাহলে আরেকটা বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন কি করা যায়?”
জুভান মুখ ভার করে বললো। আরেকটা বিয়ের কথা শুনে ঐশীর মুখ তেতো হয়ে উঠলো। বিয়ের এক ঘন্টা যেতে না যেতেই অন্য মেয়ের চিন্তা করছে। নির্লজ্জ লোক একটা! ঐশী অনিচ্ছাসত্বেও হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান মৃদু হেসে হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো। ঐশী একটু ব্যাথা পেয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো,
— ” আস্তে। ব্যাথা পাচ্ছি। ।”
জুভান হাতের বাধন হালকা করে দিয়ে ঐশীকে গাড়ি থেকে নামালো। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই জুভানের বাকি বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরলো। এদের মধ্যে দুজন মেয়েও আছে। ওরা জুভানকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। জুভান মুচকি হেসে মাথা চুলকালো। তারপর হুট করে ঐশীকে কোলে তুলে নিলো। ঐশী ত হতবাক। মুখ হা করে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুষ্টুমি করে হাতের বাধন হালকা করতেই ঐশী জুভানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। জুভান বাকা হেসে বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলো। ভিতরের ফটিক দিয়ে ঢুকতে গেলে গেলে ওদের উপর ফুলের লাল পাপড়ি এসে ঝরতে লাগলো। পাশ থেকে জুভানের বন্ধুরা মুখে হাত দিয়ে ” ওয়ে,হয়ে। জিও গায়ক সাহেব” বলে চিল্লাতে লাগলো। ঐশী কিছুটা লজ্জা পেলো। কিন্তু বাইরে কাঠিন্যভাব এনে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশীকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। ঐশীকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ঠাস করে ওর পাশে বসে গেলো। কয়েকটা দম নিয়ে বললো,
— ” মেয়ে তো নয় যেন বস্তা। বাপরে! ”
ঐশী কটমটিয়ে তাকালো জুভানের দিকে। দাত খিচে বললো,
— ” আমার ওজন মাত্র পঁয়তাল্লিশ কেজি। আমি বস্তা? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে একটা কিউট করে হাসি দিলো। ঐশী না চাইতেও সেই হাসিতে গলে গেলো। জুভানের দুজন মেয়ে ফ্রেন্ড পুষ্পিতা আর অপর্ণা এসে ঐশীর পাশে বসলো। ঐশীকে একহাত দিয়ে পুষ্পিতা জড়িয়ে ধরে বললো,
— ” জুভান, কেনো লাগছিস ওর সাথে। ছাড় তো। এই বাড়িতে মিষ্টি আছে? ”
জুভান সোফায় পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। বললো,
— ” না। ”
— ” এখন? নতুন বউকে মিষ্টিমুখ করাবি না? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” নতুন কই? ওলরেডি ওর বউ হওয়ার পয়ষট্টি মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড হয়ে গেছে।”
— ” ধুর। বাজে বকিস না তো। কাউকে পাঠিয়ে মিষ্টি আনা।”
— ” মিষ্টি আছে। ফ্রিজে দেখ। ”
পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বললো,
— ” তুই কখনো শুধরাবি না। অপর্ণা যা। ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আয়। ”
অপর্ণা সোফা থেকে উঠে জুভানের পিঠে এক ঘা বসিয়ে চলে গেলো। জুভান পিঠ ঘষতে ঘষতে বিড়বিড় করলো,
— ” এই মেয়েটার হাত চলার অভ্যাস কখনোই যাবে না। দেখবি ও ওর জামাইরেও সেকেন্ডে সেকেন্ডে মারবে। ডাফার! ”
ঘরের বাকি সবাই হেসে উঠলো। বিহান ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ঐশীর দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো
— “ভাবি, এটা আমার পক্ষ থেকে গিফট তোমার জন্যে। শাড়ি। ”
ঐশী মুচকি হেসে প্যাকেট হাতে নিলো।
________________________
অতঃপর নানা ঝামেলা পাড় করে ঐশী রুমে এসে বসলো। জুভানের বান্ধুবিরা ঐশীকে জুভানের রুমে এসে দিয়ে গেছে। ওরা এই বিয়ের ডিল সম্পর্কে জানে না। আর ঐশী চায় না ওরা জানুক। তাই কোনো বাধা দেয়নি। জুভানের সব ফ্রেন্ড আজকে এই বাড়িতে থাকবে। তাই ঐশী এখন জুভানের রুকে ঘুমানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঐশী বিছানায় বসে আছে ঠোঁট ফুলিয়ে। সবকিছু অসহ্য লাগছে। জুভানকে মেনে নিতে ওর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেই ছেলে কাল অব্দি মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াতো, সেই ছেলে বিয়ের পর হুট করে ভালো হয়ে যাবে, তার কি গ্যারান্টি? ঐশী তাই জুভানকে এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। একটু পর জুভান রুমে এসে প্রবেশ করলো। ঐশীকে বিছানার উপর দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটলো। সিটকিনি আটকে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ও। ঐশী মাথার ঘোমটা সরিয়ে জোরে শ্বাস নিলো। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এত সময়। এখন শান্তি লাগছে। জুভানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে ঐশী মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো। সঙ্গেসঙ্গে ” ছি ” বলে মুখে হাত চেপে ধরলো। জুভান অবাক হয়ে পিছন ফিরলো। বললো,
— ” হোয়াট? ”
ঐশী চোখ খিচে বললো,
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই।”
#চলবে
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই। ”
” হাসব্যান্ড! ” ঐশীর বুক ধক করে উঠলো। যাকে এতবছর নিজের কল্পনায় ভেবে এসেছে, সেই মানুষটা আজ তারই স্বামী। কিন্তু নিয়তি বলেও একটা কথা আছে। নিষ্টুর, নির্দয় এই নিয়তি তাদের মাঝখানে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছে। কবে ভাঙবে এই দেয়াল? নাকি এই দেয়াল কখনোই ভাঙবার নয় ?
— ” হেই? ”
ঐশীর সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো জুভান। ঐশী ধ্যান ভেঙে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুহাত ঐশীর দুপাশে রেখে ওর দিকে ঝুঁকে আছে। ঐশী জুভানকে এতটা কাছে দেখে এক ঢোক গিললো। থতমত হয়ে বললো,
— ” আপনি এত কাছে কেনো? ডিলের কথা.. ”
ঐশীর কথার মাঝখানে জুভান সরে এলো ওর থেকে। ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” ইয়াহ। ডিল। ম্যাই ব্যাড লাক। ”
ঐশী ভ্রু কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ত্রি পিস বের করে ঐশীর দিকে এগিয়ে দিলো। বললো,
— ” দৃশ্য ড্রেস এনেছিল তোমার জন্যে। ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে চটপট জুভানের কাছ থেকে প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
______________________
আষাঢ়ে সকাল। সকাল থেকেই হঠাৎ রোদ, তো আবার হঠাৎ বৃষ্টি ঝড়ছে আকাশ থেকে। ঐশী এখনো বেঘোর ঘুমে। কাল রাতে অচেনা জায়গায় ঘুমোতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ওর। তাই এখনো বিছানায় শটান করে শুয়ে আছে। জুভান মুখ হাত ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। বিছানার দিকে চোখ যেতেই ওর চোখ স্তব্ধ হলো। পানির নয় বরং অজানা এক ত্তৃষ্ণা পেলো। জুভান গুটিকয়েক ঢোক গিলে ঐশীর পায়ের কাছে বসলো। প্লাজো পায়জামা পড়ায় ঐশীর পা এখন অনেকখানি দৃশ্যমান। মেয়েলি ফর্সা পা দেখে জুভানের ভিতর তোলপাড় হয়ে উঠলো। তবে এই তোলপাড় কোনো কামনার প্রকাশ নয় বরং পবিত্র ভালোবাসার ফলস্বরুপ। কিন্তু জুভান নিজেকে সামলাতে জানে। সে কখনোই চাইবে না ঐশীর মতের বিরোদ্ধে যেতে। ও চায়, তার মেঘবালিকা হাসুক , বাঁচুক। একসঙ্গে ওরা বার্ধক্যের আকাশ দেখুক। জুভান সারাজীবন তার মেঘবালিকার পবিত্র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দিয়ে পারবে। জুভান সেসব ভেবে মাথা ঝাড়া দিলো। খুব আলতো হাতে ঐশীর পায়জামা ঠিক করে দিলো। ঐশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শিহরণ খেলে গেল ওর মনে। এতটা পবিত্রও কেউ হয়? এতটা মায়া কারো মুখে থাকে? জুভান মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বুকে হাত দিয়ে লম্বা এক নিঃশ্বাস নিলো। বিড়বিড় করে বললো,
— ” উফ! মনে রীতিমত ভূমিকম্প ডেকে আনলো।মিস ভয়ংকরী! ”
সকালের নাস্তার জন্যে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। ঐশী একপাশে মাথায় ওড়না দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছে আর প্লেটে অযথাই আঁকিবুকি করছে। হঠাৎ জুভান ঠাস করে এসে ঐশীর পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে প্লেট হাতে নিলো। সার্ভেন্ট নাস্তা বেড়ে দিতে লাগলো। পুষ্পিতা খেতে খেতে আচমকা বলে উঠলো,
— ” ঐশী রাতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? ”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকালো পুষ্পিতার দিকে। জুভান পুষ্পিতার মাথায় চাটা মেরে বললো,
— ” মুখ সামলে কথা বল , মেরি মা। তোর কি মনে হয় আমি ওর সাথে কিছু করেছি, যে ওর ঘুমাইতে প্রবলেম হবে? ”
পুষ্পিতা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,
— ” হ্যাঁ। সেটাই। ”
জুভান থমথমে মুখে তাকালো ওর দিকে। দৃশ্য ফিচেল হেসে বলে উঠলো,
— ” ওই জানস, কাল রাতে বিহান আর আমি তোদের রুমে পাহারা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেচারি ঐশী ভাবির কথা ভেবে আর দেইনি। আমার একমাত্র ভাবি। তাকে কি লজ্জা দেওয়া যায়? উহু। ”
সবাই মিটমিটিয়ে হাসলো। আর ঐশী লজ্জায় মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। যেমন সে , তেমন তার বন্ধুবান্ধব। একটার মুখেও লাগাম নেই। জুভান ঐশীকে পর্যবেক্ষণ করে ওদের দিকে তাকালো। বললো,
— ” আরে বাদ দে। বেচারীকে আর কত লজ্জায় ফেলবি।
তোদের লজ্জা শরম নাই। ওর তো আছে। অফ যা এখন। ”
সবাই জুভানের কথা শুনে একসাথে বলে উঠলো,
— ” ওয়ে,হয়ে। কি আন্ডারস্ট্যা্ডিং। বাহ্। ”
ঐশী এদের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। আর জুভান সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল অপলক। মুগ্ধ হলো তার দুচোখ। উজ্জ্বলতা খেলে গেলো চোখের মণিতে মণিতে।
_________________________
ঐশী ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। ফোন বের করে অনলের নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কেউ বিচলিত গলায় বললো,
— ” হ্যালো ঐশী। তুমি ঠিক আছো? এসব কি শুনছি? আর ইউ ওকে? ”
ঐশী এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” আমি ঠিক আছি। ”
— ” আমি কাল থেকে কতবার তোমায় ফোন দিয়েছি। কিন্তু একবারও ফোন রিসিভ করো নি তুমি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। জানো তুমি? ”
— ” এসব কথা ছাড়ো। শুনো তুমি সাজ্জাদ হোসেনের কিছু তথ্য পেয়েছো? ”
অনল এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” না। এখনো পাইনি। ওই ব্যাটা সিকিউড়িটি গার্ড ছাড়া ঘর থেকেই বের হয়না। রাবিশ! ”
— ” দেখো মাথা গরম করলে চলবে না। আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। হি ইজ সো ডেঞ্জারাস ম্যান। ”
— ” জানি। তুমি একবার দেখা করো। আমরা দুজন একসাথে ওর তথ্য বের করবো। আই থিঙ্ক সেটাই ভালো হবে। ”
ঐশী থমথমে গলায় বললো,
— ” আমি এখন মহা ফ্যাসাদে পড়েছি। জুভান স্যারের প্রত্যেক রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা। আমি এখন ওয়াসরুমে দাড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলছি।আমার এখন এমন কিছু করা যাবে না যেটাতে জুভান স্যারের সন্দেহ হয়। বুঝতে পারছো কি বলছি?”
অনল কপাল চুলকে বললো,
— ” এখন? ”
ঐশী এক হাফ ছেড়ে বললো,
— ” আমি দেখছি কোনো উপায় বের করা যায় কি-না। ”
— ” ওকে। আমি এদিকটা খেয়াল রাখছি। ”
— ” ওকে। এখন রাখছি। ”
ঐশী ফোন কেটে দেয়। বেসিন থেকে পানি নিয়ে মুখে এক আজলা পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। তখন জুভান বাইরে থেকে ঐশীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। ঐশী মুখ ঘুরিয়ে জুভানের দিকে তাকালে জুভান হাত ঘড়ি ঠিক করতে করতে ব্যস্ত গলায় বলে,
— ” আমি বেরোচ্ছি এখন। তোমার যদি কোনো কাজ থাকে তুমি করে নিতে পারো। আমার আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান যাওয়ার আগে ঐশীর মুখের দিকে একঝলক তাকায়। ঐশীর মুখ খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। জুভান ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝার কথা চেষ্টা করে। একটু পর ঐশীর কাছে এসে ঐশীর গালে আলতো করে হাত রাখে ও। ঐশী অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকায়। জুভান আদুরে গলায় বলে,
— ” ভয় পেও না। বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে। ওরা তোমার খেয়াল রাখবে।আমি খুব জলদি আসার চেষ্টা করবো। ”
ঐশী সেসব কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়। জুভানের এসব আদুরে কথা শুনে ঐশীর মন না চাইতেও গলে যায়। এই মানুষটা আসলেই অদ্ভুত। খুব বেশি রহস্যময়। একেক সময় তার একেক রূপ। কখনো খুব রাগী , আবার কখনো এক পাগলা প্রেমিক। ঐশী জুভানের দিকে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান ঐশীকে বিদায় দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
_____________________________
দুপুর হয়ে এসেছে। বসার ঘরের জানালা ভেদ করে এক টুকরো আলো এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ঐশীর কোল জুড়ে। ঐশী সোফায় বসে টিভি দেখছে। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠে।ঐশী এগিয়ে যায়। সার্ভেন্ট দরজা খুলে দেয়। কে এসেছে দেখতে ঐশীর এগিয়ে যায় সেদিকে। তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। সার্ভেন্ট ওদের আসার কারন জিজ্ঞেস করলে একলোক বলে উঠলো,
— ” আমাদের জুভান স্যার পাঠিয়েছেন। বাড়ির সব সিসি টিভি ক্যামেরা খোলে ফেলার জন্য। ”
#চলবে