ইট পাটকেল পর্ব-৩৪+৩৫

0
901

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৪

কামিনী চৌধুরী কে একটা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। চারিদিকে গার্ড রা ঘিরে রেখেছে তাকে।বাচ্চাদের আলতো করে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর আর একজন মেয়ে গার্ড। অনেকক্ষন না খেয়ে থাকার দরুন তার একটু পর পর কেদে উঠছে।কামিনী চৌধুরীর গায়ে কেউ হাত তুলে নি।যতই অন্যায় করুক না কেন কামিনী চৌধুরী আশমিনের মা।তাকে আঘাত করার সাহস কারোর নেই।

আশমিন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবাই সরে দাড়ালো। আশমিনের পিছনে সানভি আর আমজাদ চৌধুরী ও ভিতরে ঢুকলো। কামিনী চৌধুরী রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের মেয়েদের কাছে গেলো। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানু মুক্ত করে মেয়েদের নিজের কোলে নিয়ে বুকের সাথে আগলে রাখলো কিছুক্ষণ। বুকের অসহ্য অস্থিরতায় এতক্ষণে পাগল হওয়ার দশা তার। সন্তাদের কোলে নিয়ে অশান্ত বুক শান্ত হয়ে এসেছে। বাবার কোলে উঠে মেয়েরা ও চুপ হয়ে গেছে। আশমিন দুজনের কপালে চুমু খেয়ে তাদের কোলে নিয়েই কামিনী চৌধুরীর সামনা সামনি বসলো। মেয়েদের বুকের সাথে আগলে ধরে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— আমাকে ও কি এভাবে নিজের বুকে আগলে রাখতে পারতে না আম্মু?

এতো বছর পরে ছেলের মুখে আম্মু ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরী।

— কিসের প্রতিশোধ নিতে চাইলে আম্মু? ভালবাসার মানুষ হারানোর? তাহলে তার একমাত্র অংশ কে এভাবে অবহেলা করলে কিভাবে? তার ভালোই বাসা যদি তোমাকে এতটা উন্মাদ ই করে থাকে তাহলে তার সন্তানের জন্য নিজেকে মমতাময়ী করতে পারলে না কেন? আসলে তুমি কখনো কাউকে ভালোই বাসোনি। তুমি শুধু তাকে উপলক্ষ্য বানিয়েছিলে নিজের মনের ভিতর থাকা ঘৃণা প্রকাশ করতে।তাই না আম্মু?

কামিনী চৌধুরী রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আমজাদ চৌধুরী সহ সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশমিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বাচ্চাদের আমজাদ চৌধুরী আর সানভির কোলে দিয়ে কামিনী চৌধুরীর মুখ খুলে দিলো।অগোছালো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে জরিয়ে ধরলো তাকে।কামিনী চৌধুরীর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ধরা গলায় বলল,

— আমার একা থাকতে খুব কষ্ট হতো আম্মু। হোস্টেলের অনেক ছেলেরা আমাকে মারতো।আমি খুব ছোট ছিলাম।কিছু বলতে পারতাম না তাদের।একা একা ঘুমাতে ভয় হতো খুব।মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ভয়ে জোড়ে কেদে উঠতাম।তখন পাশের ছেলেরক আমাকে বারান্দায় বন্ধ করে দিতো।ঠিক ভাবে খেতে দিত না।মাঝে মাঝে সারাদিন বাথরুমে বন্ধ করে রেখে আমাকে কষ্ট দিতো।ওরা আমাকে পছন্দ করতো না আম্মু।তুমি কেন আমাকে তোমার সাথে রাখলে না? রাতে তোমার বুকে ঘুমাতে খুব ইচ্ছে করতো আমার। আমাকে একটু বুকে কেন জরিয়ে ধরতে না আম্মু? আমি তোমার ছেলে বলো? সন্তানের সাথে কেউ এমন করে?

কামিনী চৌধুরী চুপ করে আছে। আশমিনের কোন কথা তার মনে আচড় কেটেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অমি আশিয়ানের সাথে নূর ও এসে পড়েছে। অগোছালো নূর কে দুই দিক থেকে আগলে রেখেছে দুই ভাই।নিজে নিজে দাড়ানোর অবস্থায় নেই নূর।অমি অনেকবার আটকানোর চেষ্টা করে ও সফল হয় নি। আশমিনের দেয়া মেসেজের কথা অমির মুখে শুনেই আসার জন্য পাগলামি শুরু করে। আশিয়ান ও তখন সেখানে উপস্থিত হয়।নূরের অবস্থা দেখে আশিয়ান নিজেই তাকে এখানে নিয়ে আসে।

কামিনী চৌধুরী নূর আর আশিয়ান অমি কে একসাথে দেখেই জ্বলে উঠলো। আশমিন তার হাতের বাধন খুলে দিতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নূরের উপর আক্রমণ করে বসলো সে।আশিয়ান আর অমি আটকে দিলো কামিনী চৌধুরী কে। আশমিন কামিনী চৌধুরীর ধাক্কায় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে।নিজেকে সামলে শান্ত চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরীর দিকে। নূর নিজের বাচ্চাদের কাছে গিয়ে তাদের সারা মুখে চুমু খেলো।
তাদের কোলে নেয়ার অবস্থায় নেই সে।আশমিন ধীর পায়ে এসে দাড়ালো কামিনী চৌধুরীর সামনে। আশিয়ান আর অমি তাকে ধরে রেখেছে।আশমিন শান্ত গলায় বললো,

— আমার মেয়েদের কেন কিডন্যাপ করেছিলেন?

কামিনী চৌধুরী দাত কিড়মিড় করতে করতে বললো,

— বেচে দিতাম তোর মেয়েদের। আমার সামনে তোরা শান্তিতে থাকবি তা আমি থাকতে সম্ভব না। ওর বাবার জন্য আমি ছোট থেকেই অবহেলায় বড় হয়েছি।কারন আমি মেয়ে।বাবা মা সারাদিন ভাইয়ের পিছনেই লেগে থাকতো। মরে যাওয়ার আগে সব সম্পত্তি ও তার নামেই দিয়ে গেল। আমাকে বাচতে হতো তার দয়ায়।নিজের ইচ্ছায় ভালবাসার মানুষ টা কে বিয়ে করলাম তাকে ও খু*ন করলো। আমি কোন ভুল করিনি। আর তুই, তুই আমার পেটের ছেলে হয়ে আমার সংসার ভাঙ্গলি।আমার জন্য সতিন নিয়ে এলি। তোকে আমি শান্তিতে থাকতে দেই কি করে?

আমজাদ চৌধুরী তাচ্ছিল্যের গলায় বলল,

— তাই নাকি কামিনী? তোমার সংসার? তা কবে আমাকে স্বামীর অধিকার দিয়েছো।আমাদের কি আদেও কোন সংসার ছিল?

— আমি তোমাকে ভালবাসি আমজাদ।

কামিনী চৌধুরীর কাতর গলা শুনে আমজাদ চৌধুরী মলিন হাসলো। কামিনী চৌধুরীর চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— সত্যিই কি ভালবাসো কামিনী?

— আমি বিয়ের সময় ই তোমাকে বলেছিলাম আমজাদ।আমরা কখনো স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক সম্পর্কে থাকবো না।তুমি সব মেনেই আমাকে বিয়ে করেছিলে।তাহলে আজ অভিযোগ কেন?

আমজাদ চৌধুরী আর কিছু বললো না। মুখ ঘুড়িয়ে নিলো কামিনী চৌধুরীর থেকে।আশমিন অমি আর আশিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নিলো কামিনী চৌধুরী কে। আরেকবার তাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো। নূর চুপ করে আশমিন কে দেখে যাচ্ছে। আজ আশমিন কে তার স্বাভাবিক লাগছে না।কামিনী চৌধুরী ছটফট করছে ছোটার জন্য। আশিয়ান কে বেঈমানের রক্ত বলে গালাগালি করছে।আশমিন তার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে তলপেটে পর পর তিন বার শু*ট করে দিলো। আশমিনের রক্ত লাল চোখ থেকে গড়িয়ে পরা পানি কামিনী চৌধুরীর কপালে এসে পরলো।সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কামিনী চৌধুরী কয়েক বার গুঙিয়ে সাথে সাথেই শান্ত হয়ে গেছে। আশমিন তার নিথর দেহ এখনো নিজের বুকে আগলে রেখেছে। বুক থেকে মাথা টা একটু আলগা করে কপালে চুমু খেয়ে আবার মাথা টা বুকে চেপে ধরে ধরা গলায় বলল,

— আমাকে কেন ভালবাসলে না আম্মু? একটু ভালবাসলে কি হতো? কেউ আমাকে কেন ভালবাসে না? আমি কি এতোই খারাপ বলো? আমি তো তোমাদের খুব ভালবেসেছিলাম।তাহলে আমাকে কেন তোমরা একটু ভালবাসা দিলে না। আমাকে কেন তোমার খু*নি হতে হলো আম্মু? যে হাত দিয়ে আমি তোমাকে খু*ন করেছি সে হাত আমি কিভাবে বয়ে বেরাবো? আমার বেচে থাকাকে কেন এমন যন্ত্রণাময় করে দিলে।

কামিনী চৌধুরীর নিস্তেজ দেহ নিয়েই ফ্লোরে বসে পরলো আশমিন। নূর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরীর হাত কাপছে।অমি এসে তার কাছ থেকে বাবু কে নিয়ে নিলো।আশিয়ান অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর নিথর দেহের দিকে।আমজাদ চৌধুরী আশমিনের বুক থেকে কামিনী চৌধুরী কে নিজের কাছে নিলেন।তার সারা মুখে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে ডুকরে কেদে উঠলেন।

— তোমাকে এভাবে বুকে রাখা আমার স্বপ্ন ছিল কামিনী। আমি চেয়েছিলাম আমার বুকের উষ্ণতা তুমি উপভোগ করো।আমি তোমাকে বুকে নিয়েছি ঠিকই কিন্তু তুমি উপভোগ করছো না। তুমি কেন এমন বিনাশিনী হলে? আমার মায়াবিনী হয়ে কি বেচে থাকতে পারতে না! তুমি ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? তোমার এই দেহে প্রাণ নেই ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমাকে কিসের শাস্তি দিলে কামিনী! আমি তো শুধু ভালবেসেছিলাম। একটুও ক্ষাদ রাখিনি আমার ভালবাসায়।তাহলে কেন?

নূর পাথর চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিনের এক হাতে কামিনী চৌধুরীর হাত। আশমিন কে দেখে মনে হচ্ছে একটা প্রাণহীন দেহ বসে আছে। নূরের কানে শুধু একটা কথা ই বাজছে,,কেউ আমাকে কেন ভালবাসে না। তাহলে কি নূর আশমিন কে ভালবাসেনি? নূর কে অমি একহাতে ধরে রেখেছে।সানভি নিরবে চোখের পানি ফেলছে।আশমিনের জন্য তার বুকটা হুহু করে উঠছে।তার স্যার ভালো নেই।সত্যিই তাকে কেউ ভালবাসে না।সে ই শুধু বুক উজার করে সবাই কে ভালবেসে গেলো ।

চলবে,,

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৫

আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে কামিনী চৌধুরী কে সরিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলো।বাহাদুর কে ইশারায় কিছু বলে কামিনী চৌধুরী কে কোলে নিয়ে সাথে সাথেই বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আমজাদ চৌধুরী আশিয়ান তার পিছু নিতে চাইলে তাদের আটকে দিলো বাহাদুর। সানভি বাবুকে মেয়ে গার্ডের কোলে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল আশমিনের পিছু পিছু।আমজাদ চৌধুরী বাহাদুরের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বললো,

— আমার সামনে থেকে সরে যাও বাহাদুর। নাহলে আজ আমার হাতে অনর্থ হয়ে যাবে।কোথায় নিয়ে গেল কামিনী কে? পথ ছাড়ো। আমাকে কামিনীর কাছে যেতে দাও।

বাহাদুর নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর এক কোনে চুপ করে বসে আছে। তার ভালো খারাপ কোন অনুভূতি ই হচ্ছে না। আশমিন এতো পাষাণ কি করে হলো। যাই হোক না কেন কামিনী চৌধুরী তার মা! তাকে সে কিভাবে গু*লি করতে পারলো! নূরের মাথা ধরে যাচ্ছে। আশিয়ান বাহাদুর কে সরিয়ে খুব সহজেই বেরিয়ে গেছে।তার কাছে বাহাদুর দুধভাত। নূরের জন্য খারাপ লাগছে তার। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে মেয়েটা আবার কি করে বসে কে জানে! এখানে তার ও কিছু ভুমিকা আছে।তা পালন করতেই তাকে ছুটতে হচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব চোখে শুধু সব দেখেই গেলো। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বাহাদুর অমি কে কিছু বলতেই অমি আমজাদ চৌধুরী নূর আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নূর মঞ্জিলের দিকে রওনা হলো। নূর চুপ হয়ে সব মেনে নিচ্ছে। খেলার শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায়। আশমিন মানুষ টা তার কাছে একটা গোলকধাঁধার মতো। তাকে বুঝতে চাওয়া আর অদৃশ্য গুহায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা একই কথা।আপাতত নিজের সুস্থ হওয়া টা খুব জরুরি। তবেই না খেলা জমবে।

আশমিন কামিনী চৌধুরী কে নিয়ে কোথায় গেছে তা কেউ জানে না।সানভি আর আশিয়ান কেউ ই তার নাগাল পায়নি।সানভির ফোনে আশমিনের এস এম এস আসতেই সানভি কাজে লেগে পরলো।এতক্ষণ কামিনী চৌধুরীর জন্য খারাপ লাগলেও আবার তার মন টা বিষিয়ে উঠলো। মৃত মানুষের উপর রাগ রাখতে নেই।তবে সানভির রাগ হচ্ছে। ভভয়ংকর রাগ হচ্ছে। আশমিনের দেয়া ঠিকানায় আসতেই সেখানে পুলিশ কে ফোর্স সহ পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো সানভি।সেখান থেকে সরে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো সে।তাকে কেউ এখানে দেখলে স্ক্যান্ডেল হতে সময় লাগবে না। গত কয়েকমাসে গায়েব হওয়া মেয়ে গুলো এখানেই আছে।তাদের মধ্যে কিছু কিছু মেয়েকে পাচার করে দেয়া হয়েছে চড়া দামে।আশমিনের মেয়েদের ও বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল কামিনী চৌধুরী। না জানি এভাবে আরো কতো মায়ের বুক সে খালি করে দিয়েছে।পাচার চক্রের মেইন মাথা ই ছিল কামিনী চৌধুরী। আশিয়ানের ডুবাই তে অ*স্ত্রের ব্যবসা আছে। সেখানকার মাফিয়া সে।তবে মেয়ে পাচারের সাথে সে জড়িত নয়। কামিনী চৌধুরীর এই চক্রের খবর আশিয়ান ই আশমিন কে দিয়েছে। আশমিন নিজেই সব কিছু করেছে। একজন মন্ত্রীর মা নারী পাচারকারি! বিষয় টা জানাজানি হলে জনগণের তোপের মুখে পরতে হবে তার পুরো পরিবার কে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে এক মুহুর্তে। তবুও সে এসব কিছুত তোয়াক্কা করে নি।আশিয়ানের মাধ্যমে অনেকবার কামিনী চৌধুরী কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।ফলাফল শূন্য। কিন্তু তার মেয়েদের সাথে যখন একই কাজ করতে চাইলো তখন আশমিন শান্ত থাকতে পারলো না। তার পনের দিনের মেয়েদের জন্য যদি তার এতো কষ্ট হয় তাহলে যারা পনের বিশ বছর লালন পালন করে নিজের মেয়েদের হারিয়েছে তাদের না জানি কি অবস্থা। এই সিদ্ধান্ত নিতে তার অনেকবার ভাবতে হয়েছে। এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হলে তার পরিবার কে ও সে বাচাতে পারতো না। চারিদিকে শত্রুর মেলা।সুযোগ পেলে তাকে শেষ করতে এক মুহুর্ত ও সময় নিবে না কেউ।জনগনের ভালো করতে গিয়ে নিজের দলেই অনেক শত্রু হয়েছে তার।তাই সব কিছু গোপনেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

শহর থেকে দূরে একটা ভাঙা বাড়ির সামনে পুলিশের অবস্থান। সানভি জানে ভিতরে কয়েকজন পাতি গুন্ডা ছাড়া আর কেউ নেই। তবুও পুলিশের এতো সময় নেয়া দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।বাংলা সিনেমার পুলিশের মতো কি ক্লাইমেক্স হওয়ার অপেক্ষা করছে নাকি! এদিকে মশা তকে নিয়ে মনের সুখে পিকনিক করছে।

খাজা বাবার ডেগ আকারের পেটের অধিকারী পুলিশ অফিসার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে। সানভি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পুলিশের একটা টিম ভিতরে ঢুকতেই সে সেখানে উপস্থিত হলো। গোলাগুলির মধ্যে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। একটা মাত্র প্রাণের অধিকারী মানুষদের এতো রিস্ক নেয়ার কোন মানে হয়না।

আমজাদ চৌধুরী বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরলো। মায়া বেগম গার্ডের কোল থেকে বাবু কে নিয়ে করুন চোখে অমির দিকে তাকালো। অমি মাথা নিচু করে ভিতরে চলে গেলো। তার কিছু ভালো লাগছে না। এখানে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার।যেখানে বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায়।

নূর কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো মায়া বেগম।তার মুখটাও শুকিয়ে গেছে।আজ বারবার নিজের অতীত মনে পরে যাচ্ছে। নূর কে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বালতি তে করে হালকা গরম পানি এনে ফ্রেশ করিয়ে দিলো।বাচ্চাদের ফিডিং করাতে হেল্প করে নূরের পাশেই উদাস মুখে বসে রইলো মায়া বেগম।

— কামিনী আপা কি আর বেচে নেই বউমা?

নূর ঘাড় উচু করে মায়া বেগমের দিকে তাকালো। তার উদাস দৃষ্টি ভাবিয়ে তুললো নূর কে।এটা কি শুধু সতিনের জন্য মায়া নাকি এর পিছনে ও অন্য কোন গল্প আছে। আজকাল কাউকে বিশ্বাস হয় না নূরের।সবার মুখের উপরই যেন এক একটা মুখোশ টানা। মায়া বেগমের প্রশ্নের উত্তর দিলো না নূর।মায়া বেগম ও আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। লুবানা আজ সকাল থেকে গায়েব। সে থাকলে এখন নূরের কাছে থাকতে পারতো।মায়া বেগম কে নূর খুব একটা পছন্দ করে না।তাই সে ও দূরত্ব বজায় রেখে চলে।একজন মেয়ে স্টাফ কে নূরের রুমের বাইরে থাকতে বলে মায়া বেগম নিচে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরী কামিনী চৌধুরীর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। থেকে থেকে ফুপিয়ে উঠার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মায়া বেগম সেদিকে না গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ক্লান্ত দেহমন এবার একটু বিশ্রাম চায়।

দুই’শ বেয়াল্লিশ জন মেয়েকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।তাদের মধ্যে একজন লুবানা। পরিস্থিতি আয়ত্তে আসতেই ভিতরে গিয়েছে সানভি।খাজা বাবার ডেগ ধাচের লোকটা আসলেই খুব কাজের।এখন আর তাকে এই নামে ডাকা যাবে না।হি ইজ আ রেস্পেক্টেড পারসন। ভিতরে গিয়ে মেয়েগুলোর অবস্থা দেখে বুক কেপে উঠলো সানভির।সে পাগলপ্রায় হয়ে লুবানা কে খুজতে লাগলো। একটা মেয়েও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই।সবাইকে প্রচুর আঘাত করা হয়েছে। এখানে নিয়জিত থাকা লোক গুলো ক্রশ*ফায়ারে মারা গেছে।আশমিনের অর্ডারেই তাদের ক্র*শ*ফায়ার দেয়া হয়েছে।নহলে সত্যি বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে না। সানভি চারিদিকে খুজে ও যখন লুবানা কে পেলো না তখন তার হাত পায়ে কাপুনি উঠে গেলো। ও ঠিক আছে তো? এই প্রশ্ন তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু করে দিলো।

— স্যার এখানে একটা মেয়ে পরে আছে।মনে হয় না বেচে আছে।

এক কনস্টেবলের ডাকে সবাই সেদিকে তাকালো।সানভির বুক অসম্ভব কাপছে। পুলিশ অফিসার যাওয়ার আগেই সানভি দৌড়ে গেলো সেদিকে। লুবানা কে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ফর্সা মুখ রক্তিম আকার ধারণ করেছে তার।সামনে আগানোর সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না সে। লুবানার সারা শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। সানভি কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে গেলো লুবানার দিকে। হাটু গেড়ে বসে আলতো হাতে সোজা করল লুবানা কে।

— সাবানা,,,এই সাবানা।

গালে হালকা চাপড় দিতেও ভয় করছে সানভির। পাছে সে ব্যথা পায়। নাকের কাছে হাত নিয়ে চেক করতেই দেখলো হালকা নিশ্বাস পরছে। তড়িঘড়ি করে পাজা কোলে তুলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল সানভি।একজন কনস্টেবল ও গেলো তার সাথে।মেয়েটাকে এখানে পাওয়া গেছে তাই তাকে এভাবে যেতে দেয়া যায় না।

চলবে,,