ইতির সংসার পর্ব-১৩+১৪

0
218

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ১৩

-“আপা, আপনার আমার সম্পর্ক ৩০ বছরের উপরে। আমাদের মধ্যে লুকানোর কিছুই নাই। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা কবে আমাদের লুকিয়ে একে অপরকে মন দিয়ে ফেলেছে সেটা আমরা কেউই টের পাইনি। সংসার করবে ওরা, ওরা যদি একে অপরকে পছন্দ করে আমাদের সেখানে মানা করার কিছু নাই। কিন্তু মা হিসেবে আমার কিছু বলার আছে। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের পরবর্তী জীবন সুখে কাটাতে পারে। আমার মনে হয় না আপনার ও তাতে দ্বিমত হবে।” বলেন মুরাদের মা খাদিজা বেগম।

-“আপা আপনাকে আমি ভালো করেই চিনি, জানি। আমার সন্তান মানেই আপনার সন্তান আর আপনার সন্তান মানেই আমার। তাই আমি জানি আপনি এমন কিছু বলবেন না যেটা মানা আমাদের জন্য কষ্টের।” বলেন নাজমা বেগম।

-“হ্যাঁ আপা অবশ্যই তাই। আপা আমি তুলিকে আমার ঘরের বউ করে নেব কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। প্রথম শর্ত নাঈমের কাছে। বাবা তুমি তুলির বিয়ের টাকা জমানোর জন্য যে আলাদা পরিশ্রম কর, সেগুলো বাদ দিতে হবে। মানে তুমি অফিস শেষ করে টিউশনি আর দোকানের হিসাব লেখার কাজ করতে পারবানা। তোমার নতুন বিয়ে হয়েছে, বৌমাকে বেশি বেশি সময় দেয়া উচিৎ। আশা করি ভুল কিছু চাইনি বাবা তোমার কাছে।” বলে নাঈমের দিকে তাকান খাদিজা বেগম।

-“জ্বি খালাম্মা, ঠিক আছে। আপনি যা বলবেন।” নাঈম উত্তর দেয়।

-“আচ্ছা বাবা, খুশি হলাম তোমার কথায়। দ্বিতীয় শর্ত হল তোমরা বিয়েতে এক টাকাও খরচ করবেনা। বিয়ে পরানো হবে মসজিদে। আমরা সেখান থেকেই বউ নিয়ে চলে যাব। পরদিন ওয়ালিমা হবে আমাদের তরফ থেকে। তোমাদের যাকে যাকে ইনভাইট করতে মন চাইবে, করবে। কোন বাধ্যবাধকতা নাই।”

-“না খালাম্মা তা কি করে হয়? সামাজিকতা আছেনা? আমার একটা মাত্র বোন।”

-“শুন বাবা আমার কাছে সামাজিকতার চেয়েও বড় রাসুলের (সঃ) সুন্নাত। উনার নির্দেশিত পন্থায়ই বিয়ে হবে ইনশাআল্লাহ। তোমার যদি বোনের জন্য কিছু দিতে ইচ্ছে হয় মন ভরে দুয়া দিও, তাহলেই হবে। এখন তৃতীয় শর্ত আপার কাছে। আপা যদিও আমার বাসায় একাধিক কাজের মানুষ আছে তাও আমি চাই আমার ছেলের বউ সর্বগুণ সম্পন্না হবে। ঘরের যাবতীয় কাজ কারো উপর নির্ভর না করেই একাই করতে পারবে। আমি যেন মুখ ফসকেও বলতে না পারি মা কিছু শেখায়নি। তাই আপা বিয়ের আগে আপনি প্লিজ তুলিকে রান্না থেকে শুরু করে টয়লেট পরিস্কার করা পর্যন্ত ঘরের সব কাজ শেখাবেন।”

-“ঠিক আছে আপা। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।” বলেন নাজমা বেগম।

-“আমার চতুর্থ শর্ত হল বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তুলি ইতির সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করতে পারবেনা। কারণ একটা মেয়ে যতই রাগী হোক সে যদি তার ভাইয়ের বউয়ের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলে তাহলে সবাই তাকে ভালোবাসবে। কি আপা এই ব্যাপার টা মনিটর করতে পারবেন না? আর ইতি তুমি আমার ফোন নম্বর রাখো, তুলি খারাপ ব্যবহার করলেই আমাকে কল দিবা।” শেষের কথা ইতির দিকে তাকিয়ে বলেন খাদিজা বেগম।

খাদিজা বেগমের এই কথায় নাজমা বেগম মনে মনে জ্বলে গেলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন -“জ্বি আপা অবশ্যই মনিটর করব। ভাবি ননদ হালকা পাতলা তর্কাতর্কি তো হয়ই সব ঘরে।”

-“অন্যের টা না দেখে আমরা নিজেদের ঘরের দিকে তাকাই আপা। অন্যের ঘরের অশান্তির চেয়ে আমার ঘরের শান্তি আমার কাছে বেশি প্রিয়। আর হ্যাঁ আপা পঞ্চম শর্ত হল বিয়েটা হবে তিন বছর পরে। মুরাদের একটা স্কলারশিপ হয়েছে ইউকে তে। সেখান থেকে ফিরে আসুক। তারপর বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে নিয়ে যাব। ততদিন মেয়ে মায়ের ঘরেই থাকুক। কি বলেন আপা?” খাদিজা বেগম জানতে চান।

৩ বছরের কথা শুনে নাজমা বেগম মনে মনে আরো চটে যান, কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করেন না। কিন্তু ইতি ওর শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে। ও নরম গলায় বলে -“আমি কি কিছু বলতে পারি প্লিজ।”

নাজমা বেগম কটমট করে ইতির দিকে তাকান, পারলে চোখের আগুনেই পুড়িয়ে দিবেন। খাদিজা বেগম ইতির হাত ধরে বলেন -“হ্যাঁ মা অবশ্যই বলবে। তোমার মতামতও গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। বল মা কি বলতে চাও?”

-“আন্টি আমি ছোট মানুষ, ভুল হলে ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমার মনে হয় কি মুরাদ ভাই যাওয়ার আগে বিয়েটা পরিয়ে রাখলে ভালো হয়। পরে মুরাদ ভাই ফিরলে অনুষ্ঠান করা হল। আপনারা কি বলেন মা, আমি কি ঠিক বললাম?” ইতি বলে।

নাঈমও সায় দেয় -“আমারও সেটাই মনে হয় খালা। কি বলিস মুরাদ?”

-“আমার আপত্তি নেই কিন্তু মা যা বলবে সেটাই হবে তাইনা বাবা?” মুরাদ জানতে চায় তার বাবা হাফিজুর রহমানের কাছে।

-“হ্যাঁ তা তো বটেই। এখন নারীশক্তির যুগ। নারীরা যা বলবে সেটাই হবে।” হাসতে হাসতে বলেন হাফিজ সাহেব।

-“সবাই যেহেতু এটাই চাইছে তাহলে সেটাই হোক। আমার পঞ্চম শর্ত আমি উঠিয়ে নিলাম আর বউ উঠিয়ে নেব বাকি চারটা শর্ত পূরণ হলে।” হাসিমুখে বলেন খাদিজা বেগম -“তাহলে এই কথায় মিষ্টিমুখ হয়ে যাক।”

সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় পরের শুক্রবার বাদ জুমা মসজিদে বিয়ে পড়ানো হবে মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে। তার আগে নাঈম ওর টিউশনি ও দোকানের কাজ বাদ দিয়ে আসবে। যাওয়ার সময় খাদিজা বেগম ইতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন -“আমি সারাজীবন চেয়েছিলাম মা তোমার মতো একটা ছেলের বউ। কিন্তু আমার কপালে আল্লাহ তুলিকে লিখে রেখেছেন, তুমি ওকে যতটা পারো তোমার মতো করে গড়ে দিও তিন বছরে প্লিজ। তবে নাঈমতো আমার ছেলেই। মুরাদ আর নাঈমকে আমি কখনো আলাদা চোখে দেখিনি মা। আল্লাহ তোমাদের সবরকম সুখী করুক।”

এবাড়িতে আসার পরে এই প্রথম কোন নারীর মুখে এতো আদরের কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা ইতি, চোখ ভরে পানি চলে আসে ওর। এটা খাদিজা বেগমের দৃষ্টি এড়ায়না, ইতিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলেন -“তোমার চোখে যাতে আর পানি না আসে সেজন্য তুলিকে নিয়ে যাচ্ছি মা। এরপর থেকে আর চোখে এই পানি দেখতে চাইনা।”

তুলি সন্ধ্যায় ফিরে সব শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনা। তারপর যখন তৃতীয় ও চতুর্থ শর্তের কথা শুনে তখন ফোঁস করে উঠে। নাজমা বেগম বুঝান, বিয়েটা হোক। তারপর উঠিয়ে নিবে অবশ্যই। বিয়ে পর্যন্ত চুপ থাক তুই।

পরদিন মঙ্গলবার, শুক্রবারের বেশি দেরি নাই। ইতি স্কুলে থাকতেই খাদিজা বেগম উনাকে কল দেন। বলেন -“মা, আমার তো মেয়ে নাই তাই তোমাকে একটা দায়িত্ব নিতে হবে। আমার এখন ঘুরে ঘুরে শপিং করার এনার্জি নাই। তাই আমার হয়ে তুমি একটু তুলিকে নিয়ে শপিংএ যাও প্লিজ। আমার কার্ড পাঠিয়ে দিচ্ছি মুরাদের হাতে, পিন কোড মুরাদ বলে দিবে। তুলির যা যা মন চায় শপিং করে দিও। আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ের দিন তুলিকে পার্লার থেকে সাজানোর। ফাইভ স্টারে ওদের জন্য রুম বুক করেছি। রাতে ওরা সেখানেই থাকবে।”

-“ঠিক আছে আন্টি।” বলে ফোন রাখতেই দেখে পিয়ন ডাকতে এসেছে -“ম্যাডাম আপনার গেস্ট এসেছে।”

ইতি গেস্টরুমে গিয়ে দেখে মুরাদ বসে। ইতিকে দেখেই উঠে দাঁড়ায়। একটা খাম এগিয়ে দেয় ইতির দিকে, বলে -“ভাবি, মা এখানে উনার কার্ড পাঠিয়েছেন। শপিং লিমিট ১ লাখ টাকা। আর আমি আপনার বিকাশে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিচ্ছি। তুলির সাথে আপনিও শপিং করবেন প্লিজ। আপনার একমাত্র ননদের বিয়ে। সবচেয়ে ভালো হত আমি বা মা সাথে থাকতে পারলে। কিন্তু আমার আবার বাইরে যাওয়ার কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াতে হবে।”

মুরাদ চলে যাওয়ার পরে ইতি খাম খুলে দেখে একটা ডেবিট কার্ড ও একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে পড়তে লাগে –

মা ইতি,
দুয়া দিয়ে শুরু করছি। আমি নিজে গিয়ে শপিং করিয়ে দিতে পারলামনা তারজন্য ক্ষমা চাইছি। কার কার জন্য কি কি কিনতে হবে আমি বলে দিচ্ছি। আমার হয়ে কিনবা প্লিজ। তোমার শাশুড়ির জন্য একটা জামদানি শাড়ি নিবা, তোমার শ্বশুরের জন্য হাতের কাজ করা পাঞ্জাবি, তোমার জন্য ল্যাহেংগা আর নাঈমের জন্য ম্যাচিং শেরওয়ানি। তোমার ল্যাহেংগার সাথে ম্যাচিং ব্যাগ, জুতা, কসমেটিকস সব নিবা। তুলির যা যা লাগে সব কিনবা। টাকা কম পড়লে জানাবা, আমি বিকাশ করে দেব। আমি চাইনা আমার একমাত্র ছেলের বউয়ের বিয়ের ব্যাপারে কোন শখ যেন অপূর্ণ না থাকে।
খাদিজা আন্টি

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইতি ভাবে মানুষে মানুষে কত তফাৎ। ওর শাশুড়ী ওর জন্য সব কমদামি শপিং করছে, শাড়ি এক ধোয়া দিতেই রঙ শেষ আর তুলির শাশুড়ী পুরো কার্ড দিয়ে দিছে নিজের মতো শপিং করতে। ভাবতে ভাবতেই দেখে ফোনে লেখা – Sasuma calling……

কি বলবে ইতির শাশুড়ী?
©সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ১৪

-“আসসালামু আলাইকুম মা। বলেন কি বলবেন?” ফোন রিসিভ করে বলে ইতি।

-“ওয়ালাইকুম সালাম। তোমার স্কুল শেষ হবে কখন? আজ একটু তাড়াতাড়ি আসো। আর তুলির বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত ছুটি নাও।” বলেন নাজমা বেগম।

-“আচ্ছা মা, আমি বলে দেখি।”

-“দেখাদেখির কি আছে? ছুটি না দিতে চাইলে আমার সাথে কথা বলায়া দিবা। হুহ ননদের বিয়ে, বাসায় কত কাজ আর ওরা ছুটি দিবেনা। যত্তসব ঢং। নাকি তোমারই ছুটি নেয়ার ইচ্ছা নাই?”

-“আমি স্যারের সাথে কথা বলে দেখি মা।” ফোন রেখে দিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করতে যায় ইতি। ইতির আচরণ ও কর্মদক্ষতা গুণে ইতিকে অনেক স্নেহ করেন তিনি। ননদের বিয়ে শুনেই সাথে সাথে ৭ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে দেন তিনি। ইতি হাপ ছেড়ে বাঁচে।

বাসায় ফিরে দেখে তুলি শপিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। ইতিকে দেখেই বলে -“ফটাফট কার্ড আর পিন নম্বর দিয়ে দাও। তোমার যাওয়ার দরকার নাই। আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়েই কিনতে পারব।”

ইতি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে -“আন্টি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা আমাকেই পালন করতে দাও। তুমি কার্ড দেয়ার মতো ভরসার যোগ্য হলে তোমার কাছেই দিতেন, আমাকে না।”

-“কি? এতো বড় কথা? আমার মেয়ের যোগ্যতা নাই? এতো বড় সাহস তোমার, আমার মেয়েকে অযোগ্য বল। আজ আসুক নাঈম। এর বিহিত একটা করবই। এই তুলি, তুই এখন যাবিনা শপিংয়ে। আগে নাঈম আসুক, বিচার করুক। তারপর যাবি।” হুংকার দিয়ে বলেন নাজমা বেগম।

-“ঠিক আছে মা। কোন সমস্যা নাই। আমি ক্লান্ত হয়ে এসেছি, বিশ্রাম প্রয়োজন। আন্টি বিকেলে কার্ড নিতে পাঠাবেন, তখন কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেব তুলির ইচ্ছে। তারপর উনি ডিসিশন নিবেন বিয়ের ডেট এটাই থাকবে নাকি পিছাবে। ভুলে যাবেন না উনারা তিন বছরের জন্য বিয়ের মুলা ঝুলিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, যেটা আমার অনুরোধে নাকচ করেছেন। এখন আমি যদি বলি ৪র্থ শর্ত না মেনে তুলি আমার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতেছে আর আপনি তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারপর উনারা কি ডিসিশন নিবেন উনাদের ব্যাপার। আমি ঘরে গেলাম। ভালো করে চিন্তাভাবনা করে জানান কি করবেন আপনারা?” শান্ত স্বরে শাশুড়িকে কথাগুলো বলে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ে ইতি।

নাজমা বেগম ভেবে দেখেন ইতি যা বলছে সেটা সঠিক। ওরা বিয়ে ৩ বছর পরে করতে চেয়েছিল কিন্তু ইতির অনুরোধে ওরা বিয়ের তারিখ দেয়। এখন যদি ইতিকে চটায় তাহলে বিয়ে ভেস্তে যেতে পারে। এই রিস্ক কোনভাবেই নেয়া যাবেনা। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হোক, তারপর ইতির ব্যবস্থা করা যাবে। এই ভেবে ঘরে গিয়ে মেয়েকে বুঝান এখন ইতির বিপক্ষে না যেতে। এই কয়দিন ইতি যা বলে শুনতে। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে যাক। তখন দেখা যাবে ইতিকে। তুলিকে পাঠিয়ে দেন ইতিকে ডাকতে।

ওরা দুজন রাস্তায় বের হয়ে রিকশা ডাকতেই দেখে মুরাদ গাড়ি নিয়ে হাজির। দরজা খুলে দিয়ে বলে -“মা পাঠালো আপনাদের শপিংয়ের ব্যাগ বওয়ার জন্য।”

ইতি হেসে বলে “এখন থেকেই অভ্যাস করেন, নইলে কিন্তু পরে পারবেন না।”

ইতি পিছনের সীটে আর তুলি সামনে মুরাদের পাশে গিয়ে বসে। ইতি মার্কেটের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ফিসফিস করে তুলিকে বলে -“তোমাকে যখন পছন্দ করতে বলা হবে তুমি কম দামের যেগুলো সেগুলো পছন্দ করবা। বাকিটা আমি সামলে নেব।”

তুলি শুনে “বাকি টাকা আমি মারব।” দাঁত কিড়মিড় করে বলে “আমার শাশুড়ী টাকা দিছে ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করার জন্য আর তুমি সেখান থেকে টাকা মারতে চাও আমাকে কমদামি জিনিস দিয়ে?”

রাগ উঠে যায় ইতির, পর মুহুর্তে মনে হয় এই গর্দভের কাছে এর চেয়ে ভালো আর কোন কথা আশা করা বৃথা। নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে -“যা বলছি চুপচাপ সেটাই কর। পরে বুঝিয়ে বলছি।”

প্রথমেই ওরা যায় বিয়ের ল্যাহেংগা দেখতে। সেখানে গিয়ে তুলি অনেক দামী একটা ল্যাহেংগা পছন্দ করে, কিন্তু ইতি পাশে থেকে ওর হাতে চাপ দেয়ায় সে থেমে যায়। পরে সবকিছুই মুটামুটি দামের কেনা হয়। বেশি দামীও না, বেশি কমদামীও না। মুরাদ নিস্পৃহ ভাবেই ওদের সাথে থাকে। ইতির বারবার বলায় দুই একটা জিনিস পছন্দের সময় মতামত দেয়। শপিং শেষ করে মুরাদ একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় ওদের। এখানেই ডিনার সেরে যাওয়ার কথা বলে কিন্তু ইতি মানা করে কারণ বাসায় বলেও আসেনি আর রান্নাও করে রেখে আসেনি। তখন হঠাৎ নাঈমের গলা শুনে -“বাসায় আমি বলেছি আর খাবার নিয়ে যাব যাওয়ার সময়।”

ইতি অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে -“তুমিইইইই কখন আসলা? আমি টের পাইনি।”

মুরাদ হেসে বলে -“ভাবি আপনি শপিং নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলেন যে নাঈম আমাদের সাথেই ছিল আপনি টের পাননি। তবে টের না পাওয়ারই কথা। ও আপনার চোখের আড়ালেই থাকছে, আপনাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।”

নাঈম তুলির দিকে তাকিয়ে বলে -“আমার একটামাত্র বোনের বিয়ে। আমি তারজন্য কোন শপিং করতে পারবোনা আন্টির মানা করার জন্য কিন্তু শপিং করার সময় তো সাথে থাকতে পারি। সেই জন্য পুরো সময় তোমাদের আশেপাশেই ছিলাম। বাসায় বলে দিছি। আমরা খেয়ে বাসার জন্য খাবার নিয়ে যাব। আর হ্যাঁ মুরাদের তোর সাথে কিছু কথা আছে। খাবার আসতে আসতে তোরা কথা বল, আমরা অন্য টেবিলে বসছি।”

নাঈম ইতিকে নিয়ে অন্য টেবিলে গিয়ে বসে। মুরাদ আর তুলি মুখোমুখি বসে। তুলি নার্ভাস ফীল করে। ও ছোট থেকেই মুরাদকে ভালোবাসে কিন্তু মুরাদ বরাবরই ওকে ইগনোর করে আসছে। সেই মুরাদ হঠাৎ করে ওকে বিয়ে করতে চাওয়ায় হতভম্ব হয়ে যায় তুলি। মুরাদ বিয়ের কথা বলার পর থেকে সে মুরাদের সাথে একটা কথাও বলেনি। পারতপক্ষে তার সামনেও যায়নি। আজ এভাবে একা কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে যায়। এমন না যে সে লাজুকলতা, কিন্তু মুরাদকে সে ভয় পায়। মুরাদ ডাকে -“আমার দিকে তাকা তুলি। আমি তোকে কয়েকটা প্রশ্ন করব, চাইলে তুইও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিস। তার আগে একটা কথা বলি ছোট থেকেই তোকে তুই ডাকি, হুট করে চেঞ্জ করা যাচ্ছেনা তবে আমি চেষ্টা করতেছি, আমাকে একটু সময় দে।”

-“আচ্ছা।” নরম সুরে বলে তুলি।

-“শুনতে পাইনি, জোরে বল। তোর এমন আওয়াজ শুনে অভ্যস্ত না।” হেসে বলে মুরাদ।

তুলি আরো গুটিয়ে যায়। আরো আস্তে বলে -“কি জানতে চাও বল।”

-“বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মেয়ে ছেলে সবারই কিছু স্বপ্ন থাকে। তোর কি স্বপ্ন বিয়ে নিয়ে বল, আমি পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।” মুরাদ বলে।

হঠাৎ একরাশ লজ্জা তুলিকে ঘিরে ধরে। কোনমতে উচ্চারণ করে -“আমার কোন স্বপ্ন নাই।”

মুরাদ বুঝতে পারে তুলি কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে তাই ওকে বলে -“ভেবে রাখ, আমি রাতে কল দিয়ে জেনে নেব।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে পরিস্কার করে নিয়ে মুরাদ আবারও বলে -“দেখ তুলি, তুই আমাকে ছোট থেকে চিনিস জানিস। আমি কেমন সেটাও তুই জানিস, তুই কেমন সেটাও আমি জানি। বিয়ের কথা ভাবলে আমি যেমন বউয়ের কথা ভাবতাম তুই তার সম্পুর্ণ আলাদা। শুধু তাই না, তুই আমিও একদম আলাদা। তারপরও তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছি কারণ তুই নাঈমের বোন, নাঈমের চোখের মনি। তুই হয়তো বুঝিস না নাঈম আমার কাছে কতখানি। নাঈমকে ভালো রাখতে আমি সব করতে পারব ইনশাআল্লাহ।”

-“আমি কি ভাইয়াকে কষ্ট দিছি? তুমি আমাকে এসব বলছ কেন?” জানতে চায় তুলি।

-“কেন তুই বুঝিসনা? এই যে তুই ভাবির পিছনে লাগিস, অযথা সীন ক্রিয়েট করিস। ওদের বেডরুমে গিয়ে উঁকি দিস এগুলো লাগা না বল? এটা কি ঠিক? তোকে ধুমধামে বিয়ে দেয়ার জন্য ও দিনরাত এক করে পরিশ্রম করতেছে। তুই জানিস নাঈম সারাদিন কিছু খায়না টাকা বাঁচানোর জন্য। সকালে বাসা থেকে খেয়ে যায় আর রাতে বাসায় ফিরে খায়। এভাবে দিনরাত না খেয়ে পরিশ্রম করলে বাঁচবে ও? তোর কি মনে হয়? যতদিন তোর বিয়ে না হবে ততদিন ও এইসব করে যাবে সেজন্য, শুধুমাত্র নাঈমের কষ্ট কমানোর জন্য আমি এখন তোকে বিয়ে করছি। কারণ ওর মাথায় একটাই চিন্তা তোর ভালো ঘরে বিয়ে দেয়া। তাই ভাবলাম ছেলে তো আমি ভালোই, ঘরও ভালো। আমিই বিয়ের প্রস্তাব দেই। কাজটা ঠিক করছিনা বল?” মুরাদ বলে।

-“হ্যাঁ অবশ্যই ঠিক করেছ।” বলে তুলি।

-“তবে আমার একটা শর্ত আছে তোর কাছে, বা বলতে পারিস বিয়ের আগে সব ক্লিয়ার হয়ে নেয়া ভালো। জানতে চাস?”

-“হ্যাঁ জানতে চাই তোমার শর্ত। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব।” মাথা নিচু করে বলে তুলি।

-“শুন তাইলে। প্রথম শর্ত হল……….
দেখি সামনের পর্বে কি শর্ত দেয় 😁
@সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ