#ইতি_তোমার_সুখফুল
#দুখীফুলের_দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_৩
ফুলের শাশুড়ি কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছেন নতুন অতিথির জন্য। সংবাদটা গতকাল সাগরিকা নিজেই দিয়েছে শাশুড়িকে। বিগত তিন বছর ধরে আদিলের সাথেই সাগরিকা ও তার একমাত্র ছেলে পিয়াল মাহমুদ বিদেশে আছে। পিয়ালের জন্মের একবছর পর সাগরিকা আদিলের কাছে চলে যায়। এই একটি বছর সাগরিকাই ফুলের সাথে ছায়ার মতো ছিল। ফুলের ভাঙা মনকে মজবুত করার চাবিকাঠি নাড়িয়ে গিয়েছিল সাগরিকা নিজেই। মুঠোফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেবরের সাথে কথাবার্তা বলে বুঝিয়েছিল যে, ফুল ভালো নেই। শুভ ভাবীর অনুরোধ, আবদারও শুনেনি। তবে এমন কিছু কথা বলেছিল, যার কারণে সাগরিকার চোখজোড়ায় আশার আলোর দেখা মিলেছিল। সাগরিকা হয়তো জানতো, এমন কিছুই ঘটবে দুজনের জীবনে। সাগরিকা নিজে ফুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিল। ফুলের দুখময় জীবনে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিতে শক্ত খুঁটি হিসাবে দাঁড়িয়েছিল সে।
সন্ধ্যার পর ফুল বাড়ি ফিরল। পথের বাঁকে একজন বৃদ্ধলোককে এক খাঁচা ভরা কলা নিয়ে বসে থাকতে দেখে বড্ড মায়া হলো। বকশি কাকাকে বলে সবগুলো কলা কিনে আনলো সে। সুইটি খানম সোফায় বসে সেলাই কাজ করছিলেন। উনার সামনে ল্যাপটপ খোলা। সাগরিকার সাথে কলে গল্প করছেন আর সেলাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফুল এসেই সোফায় ব্যাগ রেখে শাশুড়ির গা ঘেঁষে বসে পড়লো। ক্লান্তিতে চোখ দুটো বুঁজে রাখলো। সুইটি খানম কাপড় একপাশে রেখে ফুলের মাথায় হাত রাখলো। ফুল আবেশে শাশুড়ির গায়ে আরেকটু ঘেঁষে কাঁধে মাথা রাখলো। শাশুড়ি মায়ের পাশে থাকলে মনে তার প্রশান্তি কাজ করে। সাগরিকা পিয়ালকে খাওয়াচ্ছিল। ফুলকে দেখে বলল,” আমি কালই দেশে চলে আসবো। একা একা মায়ের আদর খাওয়া হচ্ছে। সরে বোস,ফুল। আমার মায়ের থেকে দুই হাত দূরে বোস।”
ফুল চোখ বন্ধ করে উত্তর দিল,” হিংসুটে মহিলা।”
সাগরিকা তেতে উঠলো। ক্যামেরার কাছে এসে দুইবার টোকা দিয়ে ফুলের চোখ খোলার জন্য বলল,” চোখ খোল,ফুল। আজ ঝগড়া করার মুডে আছি।”
ফুল চোখ খুলল ঠিকই তবে সাগরিকাকে জ্বালানোর জন্য শাশুড়ির কোলে শুয়ে পড়লো। ফুলের শাশুড়ি দুই মেয়ের কাণ্ড দেখে হাসছেন। সাগরিকা এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে বলল, ” শোন ফুল, মায়ের কাছে আছিস বলে ভেবেছিস আমার আদর কমে গেছে? আমার আদর আরো বেড়ে গেছে। একটু একটু আদর জমিয়ে রাখছে মা আমার জন্য। একবার দেশে আসি, দুই বাচ্চাকে তোর কাঁধে চড়িয়ে মায়ের কোলে বসে থাকবো।”
সাগরিকার দ্বিতীয় প্রেগ্ন্যাসির কথা ফুল তখনো জানতো না। সাগরিকার মুখে দুই বাচ্চার কথা শুনে ফুল সোজা হয়ে বসলো। চোখ বড়ো করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে উৎসাহী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” কি বললে, ভাবী?”
সাগরিকা লাজুক হাসলো। সুইটি খানম উঠে গেলেন। সুখবরটা শুভকেও দিতে হবে। ফুলের সামনে কথা বললে মেয়েটার মন খারাপ হয়। মা হয়ে উনিও কম চেষ্টা করেননি। শুভর দিক থেকে একই উত্তর পেয়ে এখন তিনিও হাঁপিয়ে উঠেছেন।
এদিকে ফুল ভীষণ খুশি হলো। গল্প জুড়ে বসলো সাগরিকার সাথে। সারাদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একে একে বলে যাচ্ছে ফুল। সাগরিকাও মনোযোগ সহকারে শুনে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
রাতে আদিল ফুলকে ফোন করল। তখন ঘড়ির কাটা আটটার ঘরে। ফুল রাতের খাবার রান্না করছিল। আদিলের নাম্বার দেখে মুচকি হেসে কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিল,” হ্যাঁ, বলো ভাইয়া।”
অপরপাশ থেকে আদিলের গম্ভীর সুর শোনা গেল,” আজ নিশানের ছেলেরা নাকি তোমার পথ আঁটক করেছিল?”
ফুল তরকারি নাড়াচাড়া করছিল। আদিলের কথা শুনে কপাল চাপড়ালো। সে কথায় কথায় সাগরিকাকে আজকের ঘটনা বলে ফেলেছিল। নিশ্চয়ই সাগরিকা আদিলকে সব বলে দিয়েছে। ফুল বিড়বিড় করে সাগরিকাকে আচ্ছামতো বকা দিয়ে নিল। কৃত্রিম হাসি মুখে টেনে উত্তর দিল,” ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে আর কি!”
আদিল ধমক দিল, ” বেশি বড়ো হয়ে গেছো? একা একা ঐ পাড়ায় কে যেতে বলেছিল? বকশি কাকাকে নিয়ে যেতে পারলে না? যদি কিছু হয়ে যেতো?”
ফুল হাসিমুখে উত্তর দিল,” হলে হতো। আমার তো আপন কেউ নেই যে, ম’রে গেলে কেঁদে বুক ভাসাবে।”
আদিল চুপ করে রইলো। মেয়েটার কথায় স্পষ্ট অভিযোগ শুনতে পেল। মেয়েটা না চাইতেও আদিলের কাছে শুভর নামে নালিশ করল। আদিল উত্তর দিল,” আমরা সবাই তোমার আপনজন,ফুল।”
ফুল কথা ঘুরিয়ে বলল,” আমাকে না বকে ভাবীকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করো, ভাইয়া। তুমি তো বললেও আসবে না। আমরা তোমাদের খুব মিস করছি।”
আদিলের স্বর নিচু হলো। সময় নিয়ে উত্তর দিল,” জলদিই আসবো। আমার ভাঙা পরিবার ঠিক করতে হবে তো।”
ফুল আনমনে বলল,” আদৌও কী জোড়া লাগবে, ভাইয়া?”
চিন্তার বিষয়। ফুল ও শুভর সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যাবে তাদের। আদিল সহ পরিবারের সকলের একই চিন্তা।
রাত বাড়লেই একাকীত্ব আঁকড়ে ধরে ফুলকে। কতো রাত নির্ঘুমে কেটেছে হিসাব করা যাবে না। আজকাল ঘুম যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। ফুল রাত পাড় করে ছবি আঁকাআকি করে নয়তো শুভর কথা ভেবে। শুভর কথা ভাবলে বুকে ব্যথা করে ফুলের। কতো ঔষধ সেবন করলো কিন্তু অসুখ ভাল হলো না। রাত হলে ফুল আরেকটা কাজ করে। শুভর মতো চিঠি লেখতে বসে। সে জানে না, এই চিঠি শুভ পর্যন্ত পৌঁছে কী না। শুভর ঠিকানা বকশি কাকা জানে। একবার গিয়েছিল সেখানে। ফুল ব্যপারটা জানার পর থেকেই বকশি কাকাকে দিয়ে ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠি পাঠাতে শুরু করে। চিঠি লেখার সময় ফুল শুভর ঘরে আসে। তার মনের ধারণা, এই ঘরই চিঠি লেখার ঘর। শুভ এই ঘরে বসেই তো কতশত চিঠি লেখেছে ফুলকে। কলম হাতে নিয়ে ফুল অনিমেষ তাকিয়ে রইলো খাতার দিকে। আপনমনিবলল,” যেদিন দুজন এক হবো সেদিন যেনো পূর্নিমা থাকে। আমি পূর্নিমার আলোয় তোমাকে দেখব। তোমার ছোঁয়া উপভোগ করব।”
ফুলের চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ফুল অশ্রুমাখা চোখে, বিধ্বস্ত হৃদয়ে একটি চিঠি লেখল,
প্রিয়,
অনেক দিন হলো, তোমার সাথে একটুও কথা হয়নি। অথচ প্রতিটা দিনই আমার মনের ভেতরে একরাশ কথা জমে জমে পাহাড় হয়ে গেছে। জানি, তুমি ভাবছো, তুমিহীনা সব ঠিকঠাক আছে, বিশ্বাস করো কিছুই ঠিক নেই। আমি ভালো নেই। হঠাৎ কেনো এভাবে দূরে সরে গেলে? আমার অপরাধটাই দেখলে? আমার বিধ্বস্ত হৃদয় দেখলে না? তুমি কোথায় আছো, জানি না। শুধু জানি, তোমাকে ভুলে থাকতে পারছি না। আমার মনের গভীরে যে অভিমান জমেছে, সেটাও ভুলতে পারছি না।
তুমি কি কখনো ভাবো, যে মানুষটা প্রতিটা মুহূর্তে তোমার পাশে ছিল, তার জীবনে তোমার অনুপস্থিতি কতটা বড় ফাঁকা হয়ে আছে? প্রতিদিন সকালে চোখ মেলেই খুঁজে ফিরি তোমাকে, আর প্রতিদিনই নতুন করে বুঝতে পারি, তুমি নেই। এটা কতটা কষ্টের, হয়তো তোমার পক্ষে কল্পনাও করা কঠিন।
হয়তো আমার ব্যবহার তোমাকে বুঝতে না পেরে কষ্ট দিয়েছিল। হয়তো তোমার অবাধ্যতা আমাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি তো শুধু তোমার সঙ্গেই আমার জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্নগুলোরও কি কোনো মূল্য নেই? এভাবে দূরে ঠেলে দিলে আমাকে?
আমার এই কথাগুলো তোমার কাছে হয়তো অভিমানের, কিন্তু এটাই আমার ভালোবাসা। আমি চাইনি কখনো তোমায় হারাতে, কিন্তু যে দূরত্বটা আজ আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে, সেটাও তো আমি চাইনি। হয়তো আমাদের এই দূরত্ব ঘোচানোর চাবিকাঠিটা তোমার হাতেই।
যদি কখনো মনে হয়, এই অভিমানের আড়ালে যে ভালোবাসাটা আছে, সেটুকু অনুভব করতে পারো, তাহলে আরেকবার ফিরে এসো। হয়তো সেই দিনটাও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, যেদিন আমাদের সকল অভিমান মুছে যাবে।
ভালো থেকো, আর মনে রেখো, আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় আছি।
ইতি
তোমার সুখফুল।
———————–
প্রিয় সুমন্দভাষিণী,
তোমাকে এই নামেই লিখতে ইচ্ছে করে আজকাল। তোমার কথাগুলো যেমন মধুর, ঠিক তেমনই প্রতিটি বাক্য যেন এক টুকরো নীরব সুরের মতো মনের গভীরে বেজে ওঠে। জানি না, আমার এ চিঠির শব্দগুলো তোমার কাছে পৌঁছালে তুমিও কি একইভাবে অনুভব করবে কিনা, তবে আমার সমস্ত কথাগুলো যেন তোমার ঐ মৃদু হাসির সাথে মিলেমিশে এক হয়ে যেতে চায়।
প্রতিদিনের সেই ছোটখাট কথাগুলোও তোমার বলা মধুরতায় এমন মায়া ছড়ায়, মনে হয় সেগুলোয় নতুন রং লেগেছে। তোমার প্রতিটি কথা আমার কাছে যেন এক দৃষ্টান্ত, যেখানে বিনয় আর কোমলতা পাশাপাশি বসে। জানি, কখনো তোমাকে সরাসরি বলিনি, কিন্তু আজ এই চিঠির মধ্য দিয়ে বলতে ইচ্ছে হল—তোমার কথাগুলোই তো আমার দিনগুলোর সবচেয়ে সুন্দর অংশ।
এখন, তুমি যদি কোনো ভ্রু কুঁচকে ভাবতে থাকো যে, আমি কেন এত কথাগুলো বলছি, তবে শুধু এটুকু বলব—তোমার ঐ সুমন্দ ভাষা সব সময়ই আমাকে এই কথাগুলো বলার সুযোগ এনে দেয়।
ইতি,
তোমার মুগ্ধ শ্রোতা
এলোমেলো শব্দের চিঠি লেখে শুভ নিজের জন্য এক কাপ কফি বানালো। গত রাতটা নির্ঘুমে কেটেছে শুভর। বিশেষকরে নোভাকে ফুলের কথা জানানোর পর এলোমেলো হয়ে গেছে সে। বিগত বছরগুলোর সহ্যশক্তি আজ নিষ্পত্তি হয়ে গেল। শুভ সেই ধৈর্যহারা প্রেমিকের স্থানে চলে গেলো যেই সময়টা ছিল সুখ আর সুখ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক বসালো শুভ। তার দৃষ্টি অদূরে দুতলা বিল্ডিংয়ের ছাঁদে। যেখানে একজোড়া কবুতরকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। একটা সময় শুভ, ফুলের পাশে এভাবেই লেপ্টে বসে থাকতো। ফুলের ছোঁয়া ছিল শুভর মরণের প্রথম ধাপ। অথচ আজ?
বারান্দা থেকে চলে আসতে নিতেই নিচের দিকে চোখ গেল, শুভর। ফরিদ দাড়িয়ে আছে। এতো সকালে ছেলেটাকে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো শুভ। আওয়াজ তুলে ডাকলো ছেলেটাকে,” এখানে কি করছিস, ফরিদ?
ফরিদ উত্তর দিল,” এদিকেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম আপনার জন্য নাশতা নিয়ে যাই।”
শুভ হাতের বন্ধনীতে চোখ বুলালো। সকাল সাতটা বাজে। শুভ ফরিদকে বলল,” উপরে আয়।”
ফরিদ এটারই অপেক্ষা করছিল। এর আগেও শুভর ফ্ল্যাটে সে এসেছিল। তখন অবশ্য শুভ নিয়ে এসেছিল। ফরিদের জন্য কাপড় কিনেছিল সেটা দেয়ার জন্য। ফরিদ ফ্ল্যাটে ঢুকে সরাসরি শুভর রান্নাঘরে গেল। দুটো প্লেট এনে একটাতে রুটি অপরটিতে ডালভাজি রাখলো। শুভ মাত্র কফি পান করল। এখনই রুটি খেতে ইচ্ছে করল না। সে ফরিদকে নিয়ে নিজের ঘরে আসলো। বিছানায় বসতে বলে বাথরুমে ঢুকলো সে। একেবারে গোসল সেরে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। এরমধ্যে শুভর ফ্ল্যাটের দরজায় কেউ করাঘাত করলো। ফরিদ নিজেই দরজা খুলে দিল। চিঠি নিয়ে ডাকপিয়ন এসেছে। শুভর সিগনেচার লাগবে। ফরিদ ভাবলো দরকারী কিছু হবে হয়তো। শুভকে ডকলো। এদিকে ডাকপিয়নের তাড়া দিয়ে বলল, ” আপনিই সাইন করে দিন। এমনিতেও সপ্তাহে তিনদিন এবাড়িতেই আসতে হয়। উনাকে আমি চিনি।”
ফরিদ ভাঙা অক্ষরে নিজের নাম লেখলো। সে ফাইভ পাশ। জোড়া শব্দে বাক্য পড়তে নিতে সময় লাগে অনেক।৷ ঘরে এসে চিঠির উপর ঠিকানায় নাম পড়তে লাগলো সে। ভাঙা অক্ষরগুলো বানান করে পড়লো সে,” ই, ত-ই কার তি ইতি। ত ঔ-কার তো, ম-আকার মা, র তোমার। স উ-কার সু,খ সুখ। ফ উ-কার ফুল, ল সুখফুল।”
বানান করে ফরিদ পুরোটা পড়ে বাথরুমের দরজায় কষাঘাত করল। শুভ ভেতর থেকেই প্রশ্ন করল,” কিছু বলবি?”
ফরিদ উত্তর দিল,” সুখফুলের চিঠি এসেছে।”
শুভর অন্তর মোচড় দিয়ে উঠলো। নামটা যে তারই দেয়া। শুভর সুখফুল। কোমরে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে শুভ বের হয়ে আসলো। মাথার চুলগুলো থেকে পানি ঝড়ছে। শুভ মুছলো না। ফরিদের হাত থেকে চিঠি কেড়ে নিয়ে চোখ রাখলো তাতে। ফুলের হাতের লেখা শুভ চেনে। এতোদিন চিঠি অযত্নে ফেলে রাখতো। আজকে রাখতে ইচ্ছে করলো না। শুভ ঝটপট কাগজ বের করল। আজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। চিঠি খুলে পড়বে এমন সময় শুভর মুঠোফোন বেজে উঠে। টেবিলের উপর চিঠি রেখে শুভ ফোন হাতে নিল। শুভর মা ফোন করেছেন। ফোন রিসিভ করল শুভ। অপরপাশ থেকে শুভর মা জানালো,” তুই দ্বিতীয়বারের মতো চাচা হবি, শুভ। পিয়ালকেও দেখতে এলি না। এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে যাস না, বাবা! ফুলের কথাও একটু ভাব। কয়েকদিন পরই তো ছুটি আছে। দেশ বিদেশে এবার না ঘুরে বাড়িতে ফিরে আয়। মেয়েটা তোর জন্য আর কতো অপেক্ষা করবে? ”
শুভ থমথমে কণ্ঠে উত্তর দিল,” আমার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ফিরব না, মা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর যদি কারো অপেক্ষা করতে ইচ্ছে না করে তবে চলে যেতে বলো। যেভাবে চার বছর আগে চলে গিয়েছিল, সেভাবেই। আমি বাঁধা দিব না। রাখছি, ক্লাস আছে।”
একরোখা, বদমেজাজী শুভকে কেউ চিনবে না। সেই হাস্যজ্বল শুভর হাসি আজ কেউ দেখে না। মনে অদম্য রাগ পুষে নিজের সাথে অন্যদেরও শেষ করে দিচ্ছে ছেলেটা। ফরিদ দেখলো সবটাই। তার অন্তঃপটের প্রশ্ন গুলো খুবই স্বাভাবিক। ফুল সম্পর্কে যতটুকু বুঝার বুঝলো ফরিদ। তাছাড়া গতকাল শুভর কথাগুলোও শুনেছিল সে। শুভ বিবাহিত সেটাও জেনেছিল গতকাল। ফরিদ বুঝলো, শুভ ও তার স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক ভালো নয়। ফরিদও একজনকে খুব ভালোবাসে। আগামী মাসে তার বিয়ে। ফরিদের সাথে নয়, অন্যকারো সাথে। ভালেবাসার মানুষটার সাথেরকার দূরত্ব কতোটা কষ্টের সেটা ফরিদ জানে।
শুভ কথা বলা শেষ করে কাগজখানা ড্রয়ারে রেখে দিল আগের মতো অযত্নে। এরপর পোশাক পরিবর্তন করতে চলে গেল।
ফরিদের চোখ তখন টেবিলের উপর নিবদ্ধ ছিল। যেখানে শুভর লেখা দুটো কাগজ পড়ে আছে। ফরিদ দেখতে পেল, কিছুক্ষণ আগে আসা চিঠির খাম জমিনে পড়ে আছে। ফরিদ সেটা হাতে নিল। তার মস্তিষ্কে কী চলছে বুঝাই যাচ্ছে। হয়তো ফরিদের জন্য একটি পবিত্র সম্পর্কের দুরত্ব ঘুচবে এবং সেটা খুব শীঘ্রই।
চলবে………..