ইতি তোমার সুখফুল( দুখীফুলের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব-০২

0
85

#ইতি_তোমার_সুখফুল
#দুখীফুলের_দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২

ক্লাসের পর্ব সমাপ্ত করে রাস্তায় হাঁটা ধরলো, শুভ। অভ্যাস মোতাবেক গায়ের সাদা এপ্রোন খুলে ভাজ করে বাম হাতের উপর রাখলো। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে রাখা আছে। আধাঘণ্টা বিরতি, তারপর হাসপাতালে যেতে হবে। তৃতীয় বছরের পর থেকে রোগীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। শুভর চতুর্থ বছর চলছে। রোগীদের সাথে কাজ প্রতিদিনই করতে হয় তাকে। সকালের খাবার এখনো পেটে পড়েনি। আধাঘণ্টা সময়ে কিছু খেয়ে নিবে ভেবে নিল, শুভ। দশ মিনিট হাঁটার পর চিরচেনা রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করলো, শুভ। সেখানে কাজ করে সতেরো বছরের ছেলেটার নাম, ফরিদ। শুভকে দেখে মুচকি হাসলো সে। বরাদ্দকৃত টেবিলে দক্ষ হাতে পরিষ্কার করে জায়গা করে দিল শুভর জন্য। ছেলেটার গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে গায়ের এপ্রোন চেয়ারের উপর রাখলো, শুভ। ক্লান্ত গলায় বলল,” খেয়েছিস?”

ফরিদ মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। ডান হাতের সাহায্যে ঘাড় চেপে শুভ চোখেমুখে পানি ছিটাতে চলে গেল। ফরিদ স্টেথোস্কোপ কানে লাগিয়ে নিজের হৃৎস্পন্দন শোনার চেষ্টা করতে থাকলো কিন্তু কিছুই বুঝলো না।

শুভ আসতেই ফরিদ জানালো,” দাদাভাই, ভাত শেষ হয়ে গেছে।”

টিস্যুর সাহায্যে মুখ মুছতে মুছতে শুভ পলটা প্রশ্ন করল,” যা আছে তাই নিয়ে আয়, ফরিদ। হাতে বেশি সময় নেই।”

ফরিদ স্টেথোস্কোপ ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর গরম ধোঁয়া উড়া বিরিয়ানি নিয়ে আসলো শুভর সামনে। বিরিয়ানির ঘ্রাণ নাসিকায় পৌঁছাতেই শুভ চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলল। কিছু স্পষ্ট স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের পাতায়। শুভ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। মাথা পিছনের দিকে হেলে দিয়ে অপূর্ণ জীবনটা সাজতে চাইলো কিন্তু আফসোস, কোনোভাবেই সাজাতে পারল না। শুভ চোখ মেলে তাকাতেই সামনের চেয়ারটায় একজন নারীর অবয়ব দেখতে পেলো। শুভ বিরক্ত হলো। চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। মুষ্টিবদ্ধ হাতটা টেবিলের নিচেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেষ্টা করল। মেয়েটির হাস্যজ্বল মুখশ্রী শুভর অন্তরে কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না। মেয়েটির গায়ের সুগন্ধি মাখানো ঘ্রাণ পুরো রেস্তোরাঁয় ছড়িয়ে পড়েছে। পাশের টেবিল থেকে অনেকেই উঁকি দিচ্ছে এক পলক মেয়েটিকে দেখার আশায়। দুধে আলতা গায়ের বরনারীদের সকলে চোখে গিলে খেতেই পছন্দ করে। মেয়েটিকে দেখে অপছন্দ করার মতো নয়। অথচ শুভ মেয়েটিকে কখনোই দেখে না। এই মেয়েটিই নোভা। অত্যন্ত ভদ্র, সুশীল ও বুদ্ধিমতি সে। মেডিকেল পরীক্ষায় সবসময় শুভর পর তার পয়েন্ট আসে। কোথায় নাকি বলা আছে, ভালো ছাত্রদের একসাথে থাকতে হয়। শুরুর বছর থেকে একসাথে থাকার ইচ্ছে পোষণ করতে করতে কবে যে শুভর উপর দুর্বল হয়ে গেছে নিজেও জানে না সে। শুভ, হাতের বন্ধনীতে সময় দেখে নিল। বিরিয়ানি প্লেট একপাশে রেখে ফিরোজকে ডাকলো,” আমি বিরিয়ানি পছন্দ করি না। রুটি থাকলে নিয়ে আয়।”

ফরিদ মন খারাপ করে ফেলল। আজ সে একটু বেশিই উৎসাহী হয়ে বিরিয়ানি এনেছিল। শুভ এই রেস্তোরাঁয় নিয়মিত হওয়ার পর থেকে বিরিয়ানিতে হাত লাগায়নি। আজ ভেবেছিল খাবে কিন্তু! ফরিদ শুঁকনো রুটির সাথে কলিজা ভুনা নিয়ে আসলো। শুভ বিনাবাক্যে খাওয়া শুরু করল। নোভাকে উপেক্ষা করার পরও সে ঠায় বসে রইলো। অজুহাত খুঁজলো শুভর সাথে কথা বলার জন্য। শুভ খাবার গোগ্রাসে খেতে লাগলো। একটা সময় বিষম খেলে নোভা নিজের পানির পাত্র এগিয়ে দেয়। শুভ রক্তচক্ষুে নোভার দিকে তাকায়। নোভ ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নেয়। মুখে হাসি টেনে বলে,” মিস্টার আরিব মাহমুদ শুভ, সময়ের কাজ সময়ে করা ভালো। তোমার সামনে একটা অপশনই আছে। আমার পানি সুধা পান করো নয়তো এভাবেই যন্ত্রণা সহ্য করে নাও।”

শুভ পানির পাত্র ফেলে দিল। উঁচু আওয়াজে ফিরোজকে ডাকল,” ফরিদ, পানি দিয়ে যা।”

ফরিদ অপরাধীর মতো পানি নিয়ে হাজির হলো। এমন ভুল সে কখনোই করে না। নিজ কাজে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলো। নোভা তখনও শান্ত। শুভর খাওয়া শেষ হলে পুনরায় আওড়ালো,” গতকাল আট নাম্বার ওয়ার্ডের রোগী বলেছে, আমি নাকি তোমার বউ হিসাবে পারফেক্ট।”

শুভর মাথা ভনভন করে উঠলো নোভার ঐ একটি কথায়।সে নোভার দিকে অবশিষ্ট পানি ছুঁড়ে মারলো। নোভা চোখ বন্ধ করে এই ব্যবহারটাও হজম করে নিলো। তার ধারণা, পছন্দের মানুষের মা’রে’র মধ্যেও ভালোবাসা আছে। শুভ চিৎকার করে উঠলো,” শেষবারের মতো সাবধান করছি মেয়ে! আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে না। আমি তোমার মতো মেয়েদের নরম গরম কথায় গলে যাবো না। পরবর্তীতে আমার পিছু নিলে এমন অপদস্ত করব যে, নিজের মুখ আয়নায় দেখলে লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করবে।”

চেয়ারের উপর থেকে এপ্রোন তুলে হনহনিয়ে চলে গেল, শুভ। নোভা রেগেমেগে শুভর পিছু নিলো। রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে শুভকে পেলো। বিল পরিশোধ করছে ছেলেটা। নোভা শান্ত সুরে বলল,” তুমি কী অন্য কাউকে ভালোবাসো? সেই মেয়েটাকেই কী বিয়ে করবে? মেয়েটা দেখতে কেমন? আমার মতো রূপবতী?”

শুভ চোখ বন্ধ করে ফুলের মায়াবী চেহারা কল্পনা করল। নোভার প্রশ্নোত্তর না দিয়েই হাঁটা ধরলো। সময় সংকীর্ণ। পায়ে হেঁটে কাঙ্খিত স্থানে গেলে দশ মিনিট সময় অপচয় হবে। শুভ একটি রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়লো। নোভা তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভর উত্তর না শোনা পর্যন্ত নড়বে না বলে পন করলো। শুভ উত্তর দিতে বাধ্য নয়। নোভা এবার ভয়ংকর কাণ্ড করে বসলো। রিকশায় বসা শুভর উরুর উপর হাত রাখলো। পরনারীর ছোঁয়া শুভর সহ্য হলো না। সে সঙ্গে সঙ্গে নোভার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,” তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে গলির মোড়ে মানায়, মেডিকেলে নয়। কি শুনতে চাচ্ছিস! আমার ভালোবাসার সম্পর্কে? শুনে রাখ, আমার ফুল আমার জন্য দীর্ঘ ছয় বছর যাবত অপেক্ষা করছে। তোর মতো নির্লজ্জ নয় যে, সময় পেলেই পরপুরুষের গায়ে ঢলে পড়ে। আমার ফুল পবিত্র। মায়াবী, সারল্য।”

শুভ রগরগে কথাগুলো শেষ করে চলে গেল। পিছনে ফিরে যদি একটিবার ফিরে তাকাতো , তাহলে নোভার ঈর্ষান্বিতা মুখশ্রী দেখতে পেতো।

———————-

সময়ের পরিবর্তনের সাথে ফুলের মধ্যেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই ভীরু, সরল ফুল আজ পরিপূর্ণ নারী বনে গিয়েছে। তবে পরিচিতদের সামনে সে আগের ফুলই রয়ে গেছে। আজকের ফুল রাস্তায় বের হলে দুমড়ে মুচড়ে যায় না। মাথা উঁচু করে, বুকে সাহস সঞ্চয় করে পথ চলে।

চার বছরের পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটবে আর দুই এক মাস পরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী লাভ করবে কয়েকদিনের মধ্যেই। ফুলের মনের অদম্য আগ্রহের মধ্যে একটি হলো, সমাজ সেবা করা। অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করা। ফুল, এই বিষয়ের উপরই পড়াশোনা করেছে। হাতে ডিগ্রি পাওয়ার আগেই শাশুড়ির সাহায্যে ছোট একটি সংগঠন তৈরি করেছে সে। ফুলের অধীনে বারোজন মেয়ে কাজ করে থাকে। অসহায়, গরীব, অবহেলিত মেয়েদের ভরনপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে এই সংগঠন। মেয়েদের সেলাই কাজ শেখার জন্য বড়ো ঘর ভাড়ায় নিয়েছে, ফুল। তাছাড়াও মেয়েদের শিক্ষার জন্য ছোটখাটো স্কুল খোলার পরিকল্পনা আছে,ফুলের। এই স্বপ্ন সে একদিন পূরণ করবে।

নাফিস ও আরিফাকে বিদায় জানিয়ে ফুল সেদিকেই যাচ্ছে। পথিমধ্যে কয়েকজন যুবক ফুলের রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়ালো। ফুল মাথা তুলে দেখল, এরা ফুলের পূর্ব পরিচিত। এর আগেও ফুল তাদের মুখোমুখি হয়েছিল। ফুলের অফিস শ্বশুর বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। ফুলের শ্বশুর মা’রা যাওয়ার কযেকবছর আগে সেখানে জমি কিনেছিল। ফুলের শাশুড়ি সেখানে সংগঠনের জন্য বাড়ি করে দিয়েছেন। সেই এলাকা নিশান নামক নেতার ক্ষমতায় চলে। এরা নিশানের লোক। ফুলের পথ অবরোধ করেছে মূলত চাঁদার কারণে। ফুল চাঁদা দিতে নারাজ। নিজেদের জমির উপর বাড়ি করে চাঁদা দেওয়ার মতো মূর্খতা সে করবে না। নিশানের ডান হাতের নাম, রাহাত। সে মুখ খুলল,” কই আপা, আমাদের তো এখনো খুশি করলেন না। আমাদের এলাকায় থাকছেন। বিপদ আপদ তো আর বলে আসে না? আমাদের খুশি না করলে একা হাতে বিপদ সামলে নিবেন কীভাবে? ”

” আপনাদের খুশি করার থেকে উপরওয়ালাকে খুশি করা আমার প্রধান দায়িত্ব। বিপদে পড়লে আপনাদের মতো ভন্ডরা নয় উপরওয়ালাই আমাকে সাহায্য করবেন। যা বললেন, আপনাদের এলাকা। মনে করিয়ে দিচ্ছি, আমি আমার জমির উপর বাড়ি করেছি। আপনাদের এলাকায় কে কী করছে তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।”

রাহাত প্রত্ত্যুত্তর দেয়ার আগে ফুল পুনরায় বলতে শুরু করল,” আপনাদের আরেকটা কথা স্মরণ করিয়ে দেই। আমার সংগঠনের নামটা নিশ্চয়ই আপনাদের জানা আছে! নারী সংগঠন। এখানে শুধু নারীদের আশ্রয় দিয়ে থাকি না। তাদের সাথে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে থাকি। আশা করছি, মাথায় কথাগুলো গেঁথে নিয়েছেন! ভুলে গেলে আবার আসবেন, আমি মনে করিয়ে দিব।”

তীর্যক দৃষ্টি, নির্ভয় অন্তর, সাহসী মনোভাব। এই ফুল একদম অচেনা। তিন চারজন যুবককে কথার জালে কাবু করে চলে গেল, ফুল। ফুলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো সকলে। পাশের যুবকটি বলল,” মেয়েটার কথায় যেনো আগুন ঝড়ে পড়ছিল। কী ভয়ংকর, কী ভয়ংকর।”

——————–

কাজকর্ম শেষ করে বাহিরে বের হতেই বকশি কাকার দেখা মিলল। ফুলকে নিতে এসেছেন তিনি। ফুল, দারোয়ানকে কিছু পয়সা দিয়ে গাড়িতে উঠলো। বকশি কাকা ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছে। ফুল প্রশ্ন করল,” চিঠি পৌঁছে দিয়েছো, কাকা?”

বকশি কাকা মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। হাসিমাখা মুখাবয়ব দেখিয়ে উত্তর দিল,” সাথে সাথেই ডাকঘরে দিয়ে আসছি। লোকেরা এখন আমাকে এমনভাবেই চিনে বউমামনি। আমি গেলেই হাত পাতে চিঠির জন্য।”

ফুল হাসলো তবে কথা বাড়ালো না। সিটে গা এলিয়ে দিয়ে রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে। সারা পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে ফুলের অন্ধকারপূর্ণ জীবনের মতো। ফুল, রাতকে অপছন্দ করে। রাত হলেই শুভর অনুপস্থিতি কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। ফুলের অন্তর, শরীর তখন শুভকে চায়। আজ চারটে বছর সে শুভর ছোঁয়া পায় না। আর না পায় শুভর দেখা। শুভর কণ্ঠে সেই যাদুকরী কথা শুনতে পায় না। সে জানে না, শুভ কোথায়। জানার চেষ্টা করে না এটা বললেও ভুল হবে। শুভ জানাতে চায় না বলে ফুলও জানতে পারে না। শাশুড়ির সাথে শুভর কথা হয়। প্রথম প্রথম ফুলের কণ্ঠস্বর শুনলেই শুভ ফোন কে’টে দিত। ফুল তখন কষ্ট পেতো। অভিমানে বুক ভাসাতো। কতোবার নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিল হিসাব নেই। ফুলের শাশুড়ি সবসময় সান্ত্বনা দিত। পড়াশোনা করার মনোবল তৈরি করতো। ফুল আজ এখানে থাকার পিছনে মা নামক শাশুড়ির অবদান অনেক বেশি। ফুল এখনো জানে না, শুভ কেমন আছে? তবে এই ভেবে সে নিঃশ্বাস ফেলে, তার শুভ যেখানেই আছে সুস্থ আছে। ফুলের আত্মবিশ্বাস, একবার শুভর সামনে দাঁড়ালেই শুভর রাগ মুছে যাবে। আগের মতো ফুলকে তখন ভালোবাসবে।

———

মধ্যরাত, কাগজের উপর খচখচ শব্দের উৎপত্তি জানান দিচ্ছে কেউ পড়াশোনায় খুবই ব্যস্ত। শহরের অধিকাংশ দালানকোঠা অন্ধকারে আচ্ছন্ন। কয়েকটা কোঠায় আলো জ্বলছে। হয়তো তারাও রাত জেগে পড়াশোনা করছে। শুভর সামনে খোলা ল্যাপটপ। টেবিলের উপর এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কলম ও পেন্সিলগুলো। গভীর মনোযোগ দিয়ে শুভ লেখছে। রাত তখন তিনটার ঘরে। শুভর লেখা যখন থামলো তখন অনেকটা সময়ই অতিবাহিত হয়ে গেল। আড়মোড়া ভেঙে শুভ চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। তার নির্লজ্জ চোখজোড়া ড্রেসিং টেবিলের ছোট ড্রয়ারের উপর নিবদ্ধ। নিজেকে আজ সংযত রাখতে পারছে না। মন বলছে, একবার চিঠি খুলে দেখ! নিশ্চয়ই তোর মন ভালো করার ঔষধি সেখানে লেখা আছে।”
পরমুহূর্তে শক্ত ও পাষাণ মস্তিষ্ক নিষেধ করছে,” ড্রয়ার খুললেই তুই দুর্বল হয়ে যাবি। তোর স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যাবে। যেই মানুষটিকে সুন্দর একটি পৃথিবী দেখাতে এতো আয়োজন করছিস সেটাই ভঙ্গ হয়ে যাবে।”

শুভ মস্তিষ্কের কথা শুনলো। তবে, সে মন ও মস্তিষ্কের কথা না শুনে সময়ের কথা ভাবলো। দীর্ঘ চার বছর পর এক টুকরো কাগজে কলম চালালো। সেখানে লেখল,

প্রিয় সুমন্দভাষিণী,

কেমন আছো তুমি? আশা করি, তোমার কথার মধুরতা আজও ঠিক আগের মতোই থেকে গেছে, যেমনটা চিরকাল থাকে। আমার প্রতিদিনের যাত্রাপথে তুমি যেনো সেই স্নিগ্ধ বাতাস, যে নিঃশব্দে ছুঁয়ে যায় মনকে। কখনো কখনো মনে হয়, তোমার সেই মৃদু ভাষার শব্দগুলো যেনো কোনো গোপন ভেলায় ভেসে আসে আমার কাছে, নিভৃতে বসে শোনায় এক মুগ্ধ করা সুর।

তোমার মিষ্টি কথা শুনে আমার জীবনের অনেক কঠিন মুহূর্তও সহজ হয়ে যেতো, জানো? পৃথিবীর সব কোলাহল যেন এক নিমেষে থেমে যেতো তোমার মুখের শব্দগুলোর কাছে। তুমি কি জানো, এইসব কথাই তোমার কাছ থেকে শুনে নিঃশব্দে জমিয়ে রাখতাম নিজের ভিতরে? যেনো এগুলোই আমার জন্য একান্তে রক্ষা করা ভালোবাসার গান।

তোমার মৃদু কথাগুলোতে লুকানো স্নিগ্ধতা স্মরণ করে আজ লিখতে বাধ্য হলাম। তুমি কখনো হয়তো বুঝবে না, কিন্তু তোমার সেই অমলিন মিষ্টতা আমাকে নিঃশব্দে টেনে রাখে, যেমন টানে ঘরের কাছে ফিরতে চায় পথের শেষটা।

ইতি,
তোমার…….

লেখা শেষ করে শুভ এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকলো। বইয়ের ভাঁজে চিঠি ফেলে বিছানার দিকে এগুলো। বালিয়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করল,” তুমি সুমন্দভাষিণী, অন্তরতম আত্মার প্রেমানন্দিনী। তুমি আমার আলসে পরী, আমার ফুলের কুড়ি।”

চলবে…………