ইতি তোমার সুখফুল (দুখীফুলের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব-০৪

0
90

#ইতি_তোমার_সুখফুল
#দুখীফুলের_দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_৪

একমাস পর শুভদের মেডিকেলের পরীক্ষা শুরু হবে। তার একমাস ছুটির পর ইন্টার্নশিপ শুরু হবে। শুভর আজ মেডিকেলে বিশেষ কাজ ছিল না। সে এসেছে তার প্রিয় শিক্ষক ডক্টর মাহমুদা ম্যাডামের সাথে শেষ দেখা করতে। আগামীকাল সকালেই ম্যাডামের সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। কবে ফিরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শুভদের ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ছাত্রীরা ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কেবিনে সামনে জড়ো হলো। প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় অধিকাংশের চোখে অশ্রু জমা হলো। ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করলো। তাদের মধ্যে শুভ ও নোভাও ছিল। নোভার হাতে ফুলের তোড়া। কেবিনে প্রবেশ করে ম্যাডামের দিকে সেটা এগিয়ে দিল। শুভ সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বিধায় নোভা ইচ্ছে করেই গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। শুভ কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে জায়গা করে দিলো। মাহমুদা ম্যাডাম ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশে কিছু কথা বলে বিদায় জানালেন। শুভকে বাদ দিয়ে মাহমুদা ম্যাডাম সবাইকে চলে যেতে বললেন। শুভ হয়তো জানতো এমনকিছুই ঘটবে। সে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলো। সবাইকে বিদায় জানিয়ে মাহমুদা ম্যাডাম শুভর কাছে এসে কান মলে দিলো। শুভ ব্যথা পাওয়ার মিথ্যা নাটক করে চিল্লিয়ে উঠলো। মাহমুদা ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসলো। শুভকে বসতে বলল সামনের চেয়ারটায়।

” পরিবারের সাথে থাকলে তোমার পড়াশোনার ক্ষতি নয়, উপকার হতো। চার বছরে একবারের জন্য পরিবারের কাছে গেলে না। তুমি এতো জেদি কেনো, শুভ?”

টেবিলের উপর নেমপ্লেটের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো শুভ। তার কানে মনে হচ্ছে, কথা ঢুকছেই না। মাহমুদা পুনরায় বলল,” আদিল সকালে ফোন করেছিল। কিছুদিন ধরে ফুলকে নাকি কিছু ছেলেরা রাস্তায় উত্ত্যক্ত করে, জানালো। আপা তোমাকে এই বিষয়ে কিছু বলেছে?”

আদিলের সাথে শুভর দূরত্ব বেড়েছে। এর পিছনের কারণটা দীর্ঘ। আদিল ভেবেছিল, শুভর দূরে থাকার সিদ্ধান্তটা ছিল সাময়িক কিন্তু চার চারটা বছর যে শুভ ফুলের থেকে বিমুখী থাকবে কল্পনা করতে পারেনি। শুভকে শত বুঝানোর পর যখন মানলো না তখন আদিল শুভর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। ভেবেছিল, এতেও শুভর মন নরম হতে পারে কিন্তু আফসোস! শুভর মন নরম হলো না। মাহমুদা হলো আদিলের ক্লাসমেটের মা। শুভর পছন্দের শিক্ষক। এখানে আসার পর মাহমুদা খুব করে চেয়েছিলেন যেনো শুভ তার সাথে থেকে ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করে কিন্তু শুভ নাকচ করে দিয়েছিল। মাহমুদার সাথে থাকলো না। মাহমুদা নিজের কেনা ফ্ল্যাটে শুভর থাকার ব্যবস্থা করে দিল। চার বছর যাবত শুভ সে ফ্ল্যাটে একা আছে। মাহমুদাকে প্রতিমাসে ভাড়া দিয়ে আসছে।

মাহমুদার কথা শুনে শুভর কোনো হেলদোল নেই। মাহমুদা ভেবেছিল শুভ চমকে যাবে। ফুলের প্রতি শুভর দুর্বলতা, ভালোবাসার সম্পর্কে মাহমুদা সবই জানে। শুভর পরিবার মাহমুদাকে সবকিছুই জানিয়েছে। শুভর চোখের মুখের কোন পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে মাহমুদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কথা ঘুরানোর জন্য শুভকে অনুরোধ করে বলে, ” আগামীকাল সকালে চলে যাব। রাতে খাবারের আয়োজন করেছি। বাসায় এসো। তুমি আসলে জারিফ খুব খুশি হবে।”

” যাবো। জারিফের জন্য স্পাইডার ম্যান স্যুট কিনে রেখেছি। আজ দেখা করে দিয়ে আসবো।”

” ফুলের ব্যপারে কিছু ভেবেছো?”

শুভ উঠে দাঁড়ালো। গায়ের এপ্রন ঠিক করে বলল, ” সে ভালোই আছে। তার জন্য ভেবে কী করব! আসছি, বন্ধুদের থেকে বিদায় নিতে হবে।”

মাহমুদাকে ফেলে শুভ কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো। মাহমুদা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল।
—————–

ক্যান্টিনের মধ্যে কোনো কোনো টেবিলে মানুষজন চায়ের আড্ডায় মেতে উঠেছে, কোনো কোনো টেবিলে চায়ের বদলে বই খাতা ছড়িয়ে আছে। আবার কোনো কোনো টেবিলে মানুষজন মুঠোফোনে ব্যস্ত আছে। শুভ বন্ধুদের খুঁজে একটি চেয়ারে বসলো। শুভর উপস্থিতিতে বন্ধু মহলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। শুভ সবার দিকে ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো। পাশে বসে থাকা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল,” কাহিনী কি?”

ছেলেটি উত্তর দিল,” বস, দাওয়াত দিলি না।”

হেয়ালিপনা কথা শুভ পছন্দ হলো না। সবার উদ্দেশে প্রশ্ন করল, ” কি আলেচনা হচ্ছে। আর কীসের দাওয়াতের কথা বলছো? ”

একজন উত্তর দিল,” মামা বিয়ে করে ফেলেছিস, আমাদের দাওয়াত দিলি না। শুনলাম মেয়েটাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছিস। কথাটা কী সত্য? ”

শুভর চোখ গেলো নোভার দিকে। নোভা ঠোঁট কামড়ে হাসছে। সে যা বোঝার বুঝে গেল। কাজটা নোভা করেছে।

শুভ সহপাঠীরা শুভকে ধরল তার স্ত্রীর ছবি দেখানোর জন্য কিন্তু শুভর কাছে এই আবদার পছন্দ হলো না। সে সকলের মাঝে নোভার কাছে গিয়ে টেবিলের জোরে বাড়ি দিয়ে বলতে শুরু করল, “পরের ঘরে কি চলছে সেটা না জানলে খালাম্মাদের পেটের ভাত হজম হয় না। এতই যেহেতু অন্যের বউ দেখার শখ তো বিয়ে করে নাও না। তারপর নিজের স্বামীর গায়ে নেমপ্লেট লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে সবাইকে বলো তোমার স্বামীর নাম অমুক তমুক।”

নোভা হাসলো। শান্ত সুরে উত্তর দিল,” তাহলে চলো কাজী অফিসে যাই!”

মুহূর্তেই ক্যান্টিনে করতালি শুরু হয়ে গেল। কেউ কেউ শিস বাজিয়ে নোভাকে অভিনন্দন জানালো। শুভ নোভার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ক্যান্টিনের সকলে তখন চুপ হয়ে গেলো। শুভ সকলের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বলল,” এখানে অধিকাংশই বিবাহিত। আমি কী কখনো জানতে চেয়েছি, তাদের জীবনসঙ্গী কেমন? তবে কেনো অন্যের কথা শুনে মজা নেয়া হচ্ছে? এই মেয়ে পাগল বলে সবাই কী পাগল হয়ে গেলে? তোমাদের মনুষ্যত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে একবার ভাবো তো!”

জিসান নামক একজন সহপাঠী প্রশ্ন করল,” তবে কী তোমার বিয়ের ব্যপারটা মিথ্যা, শুভ?”

শুভ জিসানের দিকে তাকালো। তার চোখে মুখে রাগের পরিবর্তে অন্য কিছু দেখতে পেল জিসান শুভ বলল” আমি বিবাহিত, এটা সত্য। আমার স্ত্রীকে আমি খুব ভালোবাসি, এটাও সত্য। তাকে ছেড়ে আজ চার বছর ধরে এখানে পড়ে আছি কিন্তু তাকে ছেড়ে দিয়েছি, এটা ভুল। ভালোবাসা শুধু কাছে থাকলে হয়, এটা ভাবা বোকামি। আমি মনে করি, ভালোবাসার মধ্যে দূরত্ব আসলে ভালোবাসা বেড়ে যায়। আমি যতটুকু আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি এরচেয়ে দ্বিগুণ সে আমাকে ভালোবাসে। সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি জানি।”

শুভ ক্যান্টিন থেকে চলে আসলো। পিছনে ফেলে আসলো মুগ্ধ হয়ে থাকা সহপাঠীদেরকে।

——————-

সন্ধ্যায় শুভ মাহমুদার বাড়িতে আসলো। মাহমুদার সাত বছরের ছেলের নাম জিসান। সে শুভকে খুব পছন্দ করে। ছোটখাটো অনুষ্ঠানের নাম করে মাহমুদা বিশাল আয়োজন করে রেখেছে। শুভ বাড়িতে প্রবেশ করে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিল। বিগত রাতগুলোতে তার ঘুম হচ্ছে না। পড়াশোনার চাপের পাশাপাশি মন মস্তিষ্কে ফুলের কথা ঘুরে যাচ্ছে। শুভ চাইলেও মস্তিষ্ক থেকে ফুলকে মুছে ফেলতে পারে না। অবশ্য শুভ তা করতে চায় না। ফুলকে ভুলে যাওয়া মানে নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলা। যা শুভ পারবে না।
কিছুক্ষণ পর মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেলো, শুভ। সে ভাবলো, মাহমুদা হয়তো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখল,জারিফ। শুভ মুচকি হাসলো। শপিংব্যাগ জারিফের দিকে এগিয়ে দিল। সেই সন্ধ্যা খুব সুন্দর সময় কাটালো, শুভ। বাড়ি ফিরল, রাত দশটায়। জামাকাপড় পরিবর্তন না করেই ফুলের জন্য একটা চিঠি লেখল। আজ সে চিঠিটা নিজের কাছে রাখবে না। ফুলের কাছে পৌঁছে দিবে। সেই আগের মতো করে। তবে আজকে চিঠির বাহক হবে ডাকঘর,

প্রিয় সুমন্দভাষিণী,

তোমাকে এই নামেই ডাকতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে।এই নামেই যেন তুমি আমার মনের সমস্ত আবেগ, ভালোবাসা আর মাধুর্য নিয়ে বসে আছো। মনে হয়, যতবারই তোমার নাম নিই, যেন আমার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় সেই সুমধুর শব্দের সুর। তুমি কি জানো, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম অধ্যায়, যেখানে প্রতিটি দিনই নতুন, প্রতিটি মুহূর্তই যেন আশ্চর্য।

তোমার কথা ভাবতে গেলে আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, সমস্ত কষ্ট যেন সান্ত্বনার পরশে মুছে যায়। এত দিন একসাথে কাটিয়েছি, অথচ আজও তোমার কথা ভাবলে আমার মনে হয়, নতুন করে প্রেমে পড়ছি। তোমার হাসির মধ্যে এমন একটা মায়া আছে, যেটা আমার জীবনের সব গোপন অনুভূতিগুলোকে যেন খোলা আকাশে উড়িয়ে দেয়। তোমার ছোট ছোট যত্ন, তোমার নিঃশব্দ ভালোবাসা—সবকিছুই যেন আমাকে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার শক্তি দেয়।

তুমি জানো, অনেক সময় আমার মনে হয় আমি হয়তো এই জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারিনি, কিন্তু তারপর তোমার কথা ভাবলে আমার এই ভাবনাগুলো হারিয়ে যায়। তুমি আছো বলেই তো আমার জীবনটা এত রঙিন, এত অর্থপূর্ণ। তোমার মিষ্টি সুরের কথাগুলো আর তোমার সহজ সরলতা—এগুলোর প্রতিটাই আমার জন্য অমূল্য।

তুমি আমার জীবনের একমাত্র নারী, যে শুধু আমার মনের কথা বোঝে। আমি কথা বলি না, তবু তুমি সব পড়ে ফেলো। আজ তাই তোমার কাছে আমার এই সবকিছুই ব্যক্ত করতে ইচ্ছে করছে। এই কথাগুলো চিঠির পাতায় আঁকা হলেও, প্রতিটি শব্দ যেন হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা।

তোমার প্রতি আমার এই অশেষ ভালোবাসা কোনো দিন শেষ হবে না। হয়তো আমৃত্যু তোমার প্রেমে পড়তেই থাকব, তোমার মধুর সুরের মায়ায় নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে চাইব। ভালো থেকো, সুমন্দভাষিণী, আর আমার এই অকুণ্ঠ ভালোবাসার স্পর্শ যেন প্রতিদিন তোমার জীবনের প্রতিটি কোণকে আলোকিত করে।

ইতি
তোমার শুভ

চিঠিটা লেখে একপাশে রেখে দিল শুভ। এই চিঠি সে দিবে না। শুভ সেই প্রথম চিঠির মতো দুই লাইনের চিঠি লেখলো। আদৌও ফুলের কাছে পাঠাবে কী না সন্দেহ।

———————-

ফুলদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তিনজন বন্ধুই ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছে। আজ আরিফা ফুলের সাথে সংগঠন দেখতে এসেছে। মেয়েটা আগের মতোই চঞ্চল। এক জায়গায় স্থির থাকে না। ফুলের সাথে রিকশায় চড়ে আসছে। সারা রাস্তায় আরিফাই কথা বলে যাচ্ছে। ফুল শুধু হু হা উত্তর দিচ্ছে। কাঙ্খিত জায়গায় রিকশা থামলো। দুজন রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটালো। দারোয়ান তখন ফুলের কাছে এসে জানালো,” আফা, আইজ শাহিনের ছেলেরা আইসা টিনে ইট ছুড়ছিল। আমি নিষেধ করলে খুব মা’র’লো। আমি আর চাকরি করমু না।”

ফুল চিন্তিত হয়ে বলল,” আপনি চলে গেলে মেয়েরা তো বিপদে পড়ে যাবে। আমি আপনাকে ডাবল বেতন দিব, চাচা। দয়া করে চাকরি ছাড়বেন না।”

দারোয়ান মানলো না। সে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো। আরিফা হতভম্ব হয়ে গেল। সে ফুলের সাথে ভেতরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো।

ফুল সেদিন মেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য নতুন কাউকে রাখলো কিন্তু মানুষটা কেমন তাড়াহুড়োয় তা জানলো না। এবার ফুল, শাহিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

নাসিমা নামের একজন মেয়ে দীর্ঘদিন যাবত স্বামী দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে এসেছে। শেষবার যখন নাসিমার স্বামী তার পেটে লাথি দিয়ে তিনমাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলল, নাসিমা তখন থেকে শ্বশুর বাড়ি ফিরেনি। মা বাবাও বাড়িতে ঠায় দেয়নি। নাসিমা পথেঘাটে দুইদিন থেকেছিল। অনাহারে যখন মুর্ছে যাচ্ছিল তখন বকশি কাকা আশার আলো দেখিয়েছিল। তিনিই নাসিমাকে ফুলের কাছে নিয়ে আসছিল। ফুলের কাছে এসে নতুন জীবন পেয়েছে মেয়েটা। বাঁচতে শিখেছে নিজের জন্যে। ফুল মেয়েটাকে নিজের সাথে বাড়িতে আনলো। ফুল বাইরে থাকলে তার শাশুড়ি একা হয়ে যায়। শাশুড়ির সাথে সবসময় থাকার জন্য নাসিমাকে নিয়ে আসা।

রাত তখন শুরু। নয়টা বাজতেই বকশি কাকা আসলো বাড়িতে। উনার চোখে মুখে আজ খুশির ঝিলিক। ফুলকে খবর দিয়ে অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না যেনো। ফুল আসলো সময় নিয়ে। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো। বকশি কাকা জানালো সব ঠিক আছে। ফুলের দিকে তিনটি খাম এগিয়ে দিল। ফুল অবাক হয়ে হাতে নিলো। তার দুরুদূরু বুকের কাঁপন বেড়ে গেল। চার বছর পর ফুলের দুয়ারে চিঠি আসলো। বকশি কাকা প্রফুল্লের সাথে বলল,” তোমার কান্নার দিন ফুরাইছে, বউমামনি। বাবুর রাগ কমে গেছে। দেরীতে হলেও তোমাকে স্মরণ করছে। তুমি গোস্সা করো না। এবার সব ঠিক হবে, সব।”

ফুল সোফায় বসে পড়লো। ফুলের ভাবভঙ্গি দেখে নাসিমা এগিয়ে আসলো। বকশি কাকা ফুলের মাথায় হাত রেখে চলে গেলো। নাসিমা নিচে বসে ফুলকে এটাসেটা প্রশ্ন করতে থাকলো,” কি হয়েছে, বুবু। সব ঠিক আছে তো? তোমার হাতে কী?”

ফুল শান্ত ঠিকই তবে ঝড় বইছে তার মনের ভেতরে। সে সোফা ছেড়ে সিঁড়ির দিকে আগালো। নাসিমাকে বলল,” তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস, নাসিমা। আমাকে ডাকতে আসিস না। আমি খাবো না।”

নাসিমা অবুঝের মতো মাথা দুলালো।

ফুল, শুভর ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে দিল। এতোক্ষণে চেপে রাখা চোখের পানি ছেড়ে দিল। খাম তিনটায় অসংখ্য চুমু খেলো। বিড়বিড় করতে থাকল,” কতদিন? অনেকদিন, অনেকসময়, চিঠির অপেক্ষা করেছিলাম। আজ আসলো কিন্তু অভিমান সেটা কী কমলো?”

ফুল খামের উপরে লেখা নাম পড়লো। একটিতে শুভর লেখা অপর দুটো অপরিচিত। ফুল শুভর লেখা খাম খুলে পড়া শুরু করল।

সেই প্রথম চিঠির মতো কয়েক বাক্যে লেখা আছে কাগজটায়। ফুল ডুকরে কেঁদে উঠলো। সে আজও অসহায় বিয়ের রাত্রীর মতো। পার্থক্য শুধু এটাই, তখন কেঁদেছিল অচেনা কারো চিঠি পেয়ে আর আজ কাঁদছে পরিচিত কারো চিঠি পেয়ে। দুটো চিঠি পড়েই ফুলের অন্তর ক্ষতবিক্ষত হলো।

চলবে………