#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–44
” এ জার্নি বাই ট্রেন” কম্পোজিশন যতোটা ইন্টারেস্টিং আর নব্য অভিজ্ঞতার হয়, বাস্তবে যেন তার থেকেও কয়েক গুন বেশি-ই সুন্দর। সবে পনের মিনিট হয় ট্রেন ছেড়েছে। হুইশেলের শব্দটা কানে বাজতেই ধীরগতিতে ট্রেন চলা আরম্ভ হলো। ট্রেন চলতে শুরু করার টাইমে আয়নার কেমন জানি এক ভিন্ন অনুভূতি হলো। জীবনে প্রথম বারের মতো তার ট্রেন জার্নি৷ ছকর-ছকর টাইপের আওয়াজ কানে ভাসে। রেল লাইনের দু’পাত বেয়ে ট্রেন গন্তব্যের দিকে ছু’টে। সে সমুদ্রের ম্যাসেজ উপেক্ষা করে ট্রেন জার্নি উপভোগ করে।
এখন অবশ্য ট্রেন তার আপন গতিতে ছু’টছে। জানালার সীটের ধারে বসে চোখ নিবন্ধ রেখেছে আয়না। বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিলো। অন্ধকারে তেমনভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে ট্রেন ছুটছে। ল্যাম্পপোস্ট থাকলে,বাইরের দৃশ্য সামান্য দেখার সুযোগ মিললোও, দ্রুতগামী ট্রেনের গতি এগিয়ে যায়। ফলে কিছু দেখার আগেই অন্ধকার এসে ভীড় জমায়। তাই ভালো লাগছে তার৷ বাতাসে চোখ-মুখ ঠাণ্ডা হয়ে আসে তার। চুল উড়তে থাকে এলোমেলো ভাবে বাতাসের ধাক্কায়।
এমন সময় সমুদ্র এসে তার সামনে দাঁড়ালো তবে কিছু বললো না৷ আয়না একপলক দেখে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে বাতাস খায়৷ ও কেবল চোখ মেলে একবার দেখে গেলো৷ সবে রাত নয়টা বাজে। এতো জলদি কেউ ঘুমাবে না৷ শ্রাবণ সবার দৃষ্টি আর্কষণ করে বলে, ” ট্রেন জার্নি টা কেমন পানসে লাগছে না? চলো সবাই মিলে গানের কলি খেলি। মেয়েরা এক দল আর ছেলেরা এক দল। খেলবা সবাই? তাহলে আর বোর ফিল হবে না।”
তাদের ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে একজোড়া ফরেনার কাপল এসেছে, ওনারা সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছেন। ওখানকার স্থানীয়। ইন্দোনেশিয়ান ভদ্রমহিলারও চোখের মণি নীলচে। উনি বারবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছেন। হয়তো ভাবছে সমুদ্রও ভিন্নদেশীয় কীনা! সমুদ্র পালটা হাসি দেয়। ইতিমধ্যে সবাই গানের কলি খেলার জন্য একপ্রকার উত্তেজিত হয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়নাও এসে দাঁড়ালো। সমুদ্রের একদম ইচ্ছা নেই এসব খেলা খেলার। সে সরে দাঁড়ালো। এই ট্যুরে যারা এসেছে সবাই ওর অনেক জুনিয়র। বেশ কয়েক বছরের জুনিয়র। জুনিয়রদের সঙ্গে মিশতে ভালো লাগে না। এছাড়া আয়না তার ম্যাসেজ উপেক্ষা করেছে বিধায় সামান্য কুণ্ঠিত বোধও করছে৷ ওর আবার কী হলো? মেয়ের মতি-গতি বুঝতে মনে হয় “নারীর মন” রিলেটেট বিষয়ে পিএইচডি করা অত্যাবশকীয়। তবে, আয়না যদি এই মুহূর্তে তার থেকে দূরে থাকবে বলে মনোনিবেশ করে, সে অভিযোগ করবে না। জীবনের এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়ালো, এখন সে কেবল আয়নাকে আগের মতো খুশি দেখতে চায়। আগের মতো সুস্থ হয়ে যাক ও, তার জন্য কারো জীবনে এতোবড় ট্রমার জন্ম হোক যে হাসতেও ভুলে যাবে, এমন মানুষ হতে চায় না সমুদ্র । এরজন্য যদি আয়নার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে হয়, সেটাও গ্রহনযোগ্য বৈকি। তবে আয়না বরাবরের মতো নিশ্চুপ। ওর নিরবতা ক্রমশ সমুদ্রের মনে নেতিবাচক প্রভাবের আঁচড় কাটছে মনের অন্তরালে। কি হবে সামনে? দ্বিতীয়বারের মতো সব ঠিক হবে তো?
গানের কলির আসর জমজমাট হচ্ছে৷ প্রথম পক্ষ গান শুরু করে। শ্রাবণের দল থেকে গান শুরু হলো। খালি গলায় শ্রাবণ গান ধরায়, ওত সঙ্গে তাল দিয়ে সবাই একসুরে গায়।
“বসন্ত বাতাসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে
আমার বাড়ি আসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে।”
ট্রেন আপন গতিতে ছু’টছে। হীম ঠাণ্ডা, হিমেল বাতাসের মাঝে এমন গানের আসর যেনো আগুণ! সবার চোখ-মুখেই হাসির রেখা। আসলে, ট্যুর কিংবা ভ্রমণ আছে জন্যই মানুষ মানসিক ভাবে সুস্থ আছে। নাহলে এমন চাপমুখর ব্যস্ততায় কবে মানুষ ডিপ্রেশনে থেকে ধুকে ধুকে বাঁচতো! ভ্রমণের অপরনাম ম্যাজিক হওয়া উচিত। ভ্রমণে আসলে আপনা-আপনি মানুষের মন-মেজাজ ভালো হয়ে যায়। কয়েকদিনের জন্য সকল কাজ-কর্ম থেকে বিরতি৷ আহা! খালি ঘুরাঘুরি করা!
মেয়েদের দলকে “স” দিয়ে একটা গান গেতে হবে। মেয়েরা অনেক ভাবছে ‘স’ দিয়ে কী গান আছে, কোন গানের লাইন ‘স’ দিয়ে শুরু হয়। রঙ্গন কাউন্ট ডাউন শুরু করে। জোরে জোরে বলে, দশ, নয়, আট…….
ছেলেরা অনেক খুশি। ওরা প্রথম রাউন্ডেই জিতে যাচ্ছে। অবশেষে “স” দিয়ে কেউ গান গাইতে পারলো না।
ছেলেরা আবার গান গাওয়া শুরু করে, এবার শ্রাবণ আর রঙ্গন একজোট হয়ে গাচ্ছিলো,
“ওই দূরে চলো না নীল আকাশে
হারিয়ে যাই তোমার হাতটি ধরে,
পায়ে পায়ে ঘুঙুর পায়ে, হারিয়ে তুমি
কাশবনের মৃদুল বাতাসে হয়েছি,
গানের রেশ বেশ কড়া হচ্ছিলো। দূরে সরে থাকা গেলো না৷ গানের আওয়াজ শুনে সমুদ্র দূর থেকে এগিয়ে আসরে যোগ দেয়। দারুণ গাচ্ছিলো ওরা। ফরেনার দুজন খুব উপভোগ করছে৷ সবাই হাত তালি দিচ্ছে।
“চলো না হারিয়ে যাই তোমায় নিয়ে
কোনো নাম না জানা, ওই অজানা শহরে, চলো…..”
সে গানের আসরের ঠিক মাঝে আসায়, আয়নার সঙ্গে চোখাচোখি অথবা শুভদৃষ্টি ঘটে। রঙ্গন গান থামিয়ে বলে, ” এইবার ইংরেজী অক্ষর “ল” দিয়ে গাও তোমরা।”
ছেলেদের দলের সবাই মোটামুটি ভালো গায়৷ কিন্তু মেয়েদের মধ্যে পিউ-আলিয়া কেউ গান গেতে পারেনা৷এমনকি রঙ্গনের বোন রুশাও পারেনা গেতে৷ পিউ আর আলিয়া গিয়ে তর্ক জুড়ে দেয়৷ শ্রাবণ নাকি ইচ্ছা করে ওদের হারানোর জন্য এমনভাবে টিম তৈরি করছে। জানে ওদের টিমে কোনো গায়িকা নাই, তার ছেলেদের টিমে গায়ক দিয়ে ভরা। এটা নাকি বৈষম্য হচ্ছে। ঝগড়াঝাটির শেষ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো ট্রুথ-ডেয়ার খেলা হবে।
তবে শেষ মুহূর্তে ফরেনার ভদ্রলোক বলে উঠে, ” আই ওয়ান্ট টু হেয়ার মোর ফ্রম ইউ গায়েজ। ওয়ান্ট টু হেয়ার সাম বাংলা সং।”
বাঙ্গালী নিজেদের মধ্যে যতো ঝামেলাই করুক না কেনো, বিদেশিদের সামনে ফিটফাট থাকবেই। বিদেশি বাবু যেহেতু বাংলা গান শুনতে চাইছে তাহলে নিজের দেশের সুন্দর গানগুলোই শুনাতে হবে। সুন্দর কণ্ঠে।
শ্রাবণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে, ” বস, এইবার তুমি গাও। তুমি গান গাইলে পুরা ট্রেনের মানুষ গান শুনতে চলে আসবে।”
–” আমি! নারে গান গাইতে আর ভালো লাগে না। আগের মতো গাইতে পারি না। তোরাই তো খুব জোস গাচ্ছিলি। গাইতে শুরু কর আবার।”
শ্রাবণ বলে, ” তুমি ছায়ানটের ছাত্র। তুমি গান শুনাও একটা। প্লিজ।”
সমুদ্র আগে রবীন্দ্র সংগীত ভালো গাইতো। সবাই প্রশংসা করত অনেক। কিন্তু ইদানীং চর্চা নেই। চর্চা ছাড়া রবীন্দ্র সংগীত ডিজাস্টার! সে গলা খাকারি দিয়ে গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
এরপর আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আয়ু, কোন গান শুনতে মন চাচ্ছে? বলো তো!”
আয়না সহ কেউ ভাবেও নি সমুদ্র আয়নাকে উদ্দেশ্য করে কিছু জিজ্ঞেস করবে। সবার দৃষ্টি যায় আসরের এককোনায় গুটিসুটি মেরে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। ও যেন এতেই বিব্রতবোধ করে জোড় পূর্বক হাসে।
রঙ্গন দুষ্টুমি করে বলে, ” ভাবী বলেন, কী গান শুনবেন?”
শ্রাবণ ভ্রু কুচকে বলে, ” ঐ ব্যাটা, ভাবী না তোর ফ্রেন্ড? ”
রঙ্গন বলে, ” কিন্তু ভাইয়া তো কলেজের সিনিয়র। সিনিয়র ফার্স্ট ব্রো।”
আয়না আশেপাশে তাকিয়ে উস-খুস করে অন্যদিকে যাত্রা শুরু করলে, খালি গলায় গানের আওয়াজ ভেসে আসে,
“এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”
আয়না থমকে দাঁ ড়ালো। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে, সমুদ্র তার পানে চেয়ে আছে। ও আয়নার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে গেয়ে উঠে,
” তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম”
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেব তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম”
সমুদ্রের কণ্ঠে হয়তোবা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জন্য কেমন একটা মাদকতা আছে। ওর কণ্ঠে গান শুনলে কিছু একটা উপলব্ধি করা যায়৷ মনে হয়, ওর কণ্ঠে বড়ই বেদনার ছাপ৷ মনে হয় ও নিজের দুঃখ গাইছে। আসলেই কী তাই?
গানের আসর শেষ হলে, ট্রেনের ভেতর থেকে দুজন এসে ওদের ডিনার দিয়ে যায়৷ খিঁচুড়ি আর ডিম সেদ্ধ৷ যদিও বা আহামরি কোনো কিছু না৷ কিন্তু কেনো জানি সবাই মিলে একসাথে খেতে বেশ মজা লাগলো৷ খাওয়া-দাওয়ার পর, ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা শুরু করে৷ কোকের বোতল নিয়ে খেলা শুরু করে। সবার আগে রঙ্গনের দিকে বোতল থামে৷ রঙ্গন ট্রুথ নেয়৷ শ্রাবণ জিজ্ঞেস করলো, তোমার লাইফের ফার্স্ট ক্রাশ কে?”
রঙ্গন একটা দুষ্টু হাসি দিলো। সমুদ্র তীর্যক চাউনিতে তাকায় ওর পানে৷
রঙ্গন বলে, ” আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম৷ আমার এক মামা বিয়ে করে মামীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলো৷ মামীর উপর ক্রাশ খাইছিলাম।”
রঙ্গনের এহেন অকপটে স্বীকারোক্তিতে সকলেক তাজ্জব বনে যায়। ধাপে ধাপে খেলা জমে। শ্রাবণ বোতল ঘুরালে, এবারে আয়নার দিকে বোতল থামলো৷
আয়নাকে সহজ প্রশ্ন করলো শ্রাবণ। ও বলে, ” ভাবী, আপনার কেমন ছেলে পছন্দ ছিলো? বিয়ের আগে?”
এরপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, ” ভাইয়া, তুমি কান বন্ধ করে রাখো।”
সমুদ্র হেসে বলে, ” প্যারা নাই৷”
আয়না বলতে চাইছিল না, কিন্তু সবাই শুনতে চায়, এমনকি সমুদ্রের আগ্রহ দ্বিগুণ। সমুদ্রের ধারণা নিশ্চয়ই কোনো সিএসই ইঞ্জিনিয়ার পছন্দ। এজন্য লজ্জা পাচ্ছে। আয়না উত্তর দিচ্ছিলো না দেখে আলিয়া বলে উঠে, ” আপার ছোট থেকেই ডাক্তার ছেলে পছন্দ। স্পেশালি এপ্রোণ পরা ডাক্তার। ”
সমুদ্র শোনামাত্র বলে উঠে, ” তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন এপ্রোণ পরে বসে থাকবো।”
অনেক অব্দি গল্প-গুজব চলে। তখন অবশ্য সমুদ্র ছিলো না। একটু দূরেই ফরেনার দুজনের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত ছিলো। তারপর আর ওকে দেখা যাচ্ছিলো নাব।এদিকে শিঙ্গাড়া, চিপস সব খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমুদ্র নেই৷ আয়না উঠে যায় সীট থেকে। একাই হেঁটে হেঁটে ট্রেনের বগির শেষ মাথায়, দরজার সামনে আসতেই সমুদ্রের কণ্ঠস্বর শুনলো৷
–” কি ব্যাপার? এখানে কেন?”
আয়না চকিতে উঠে তাকালো। লম্বা মানুষটা কালো জ্যাকেট গায়ে ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ কি যেন দেখছিলো। কী দেখছিলো সেটা আয়নারও দেখতে মন চাইলো৷
সমুদ্র বলে, ” আমার রাতের বেলা ট্রেন জার্নি খুব ভালো লাগে৷ স্পেশালি ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখার মজাই আলাদা।”
আয়না একটু উঁকি মেরে চাঁদ দেখার চেষ্টা করে। সাফ বোঝা যায় ও ভয় পাচ্ছে। সমুদ্র ওর বাহু ধরে এগিয়ে এনে বলে, ” সবকিছুরই এক্সপেরিয়েন্স থাকা দরকার। দেখো আজকের চাঁদ কি সুন্দর!”
আয়না হাতল ধরে উপরের দিকে তাকায়। একফালি চাঁদ দেখতে পেলো সে। আজকে কী পূর্ণিমা নাকি! ওর উড়ন্ত চুল গুলো সমুদ্র মুখ থেকে সরিয়ে নিজের হাতে মুঠো করে ধরে৷
এরপর বলে, ” পরের স্টেশন এ নামবা?”
আয়না চোখ বড় বড় করে বলে, ” বলেন কি!এখনই নেমে পড়লে সিলেট পৌঁছাবো কীভাবে?”
–” আরে বোকা! স্টেশন এ নেমে চা-বিস্কুট কিনে দেন আবার উঠে পড়বো। টিকিট আছে তো। দেখতে চাইলে দেখাবো।”
একটু পর ট্রেনে থামলো৷ কয়েক মিনিটের জন্য মনে হয়। যাত্রীদের সঙ্গে সমুদ্র আয়নাকে নিয়ে নেমে যায়৷ প্লাটফর্ম এ ভীড় লেগে ছিলো৷ আরেকটা ট্রেন নাকি আসবে কিন্তু লেইট করেছে জন্য যাত্রীরা অপেক্ষায় আছে। প্লাটফর্ম এর ফ্লোরেই ফ্লাস্কে করে চা-বিস্কুট বিক্রি করছে এক মহিলা৷ সমুদ্র দু’কাপ চা কিনে আয়নাকে নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে। এই প্লাটফর্ম বুঝি ঢাকার বাইরে। ইতিমধ্যেই কুয়াশায় ঢেকে গেছে আকাশ। দূর-দূরান্ত অন্ধকার আর কুয়াশা। ট্রেন থেমে আছে। যাত্রীদের আনাগোনা। একজন কুলিও দেখা গেলো। এখন আর কুলির দেখা মিলে না৷ অবশেষে চা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে তারা। চা এতো গরম ছিলো মুখে দেওয়া যাচ্ছিলো না। ফুঁ দিয়ে খেতে হচ্ছে।
সমুদ্র এবারো গেইটের ধারর দাঁড়ায়৷ আয়নাও দাঁড়ালো। তার বেশ মজা লাগছে।
সমুদ্র বলে, ” ভূতের গল্প শুনবা?”
আয়না ভ্রু কুচকে বলে, ” আপনি ভূতের গল্প জানেন নাকি!”
–” আগে তো ফেসবুক ছিলো না৷ আমরা রেডিও এফএম এ ভূতের গল্প শুনতাম। শুনবা নাকি? ছোট একটা গল্প?”
–” বলেন তাহলে শুনি।”
–” একটা ছেলে এরকম শীতের রাতে, প্রায় রাত বারোটার ট্রেনে করে সিলেট যাচ্ছিলো৷ পথিমধ্যে ট্রেন থামে কোনো এককারণে। সে প্লাটফর্ম এ বসে গল্পের বই পড়ছিল৷ রাত তখন অনেক৷ প্লাটফর্ম ফাঁকাই ছিলো।হুট করে একটা মেয়ে এসে বলে, গল্পের শেষ এ কী হয়েছে বলা যাবে?”
ছেলেটা এন্ডিং বলে দেয়, যেখানে নায়ক তার নায়িকার মৃত্যু তে শোকাহত হয়ে প্রেমের বই লিখেছে। এবং বেস্টসেলার হয়।”
আয়না বিরক্ত হয়ে যায় বলে, ” খুবই বোরিং গল্পটা। এরচেয়ে চুপ থাকুন তো।”
সমুদ্র হাসে বেশ শব্দ করে তারপর বলে, ” প্লাটফর্ম এ গল্পের এন্ডিং শোনা মেয়েটা চলে যা-ওয়ার পর ছেলেটা ভূমিকার অংশ পড়ে, যেখানে লেখা ‘ আমার প্রিয় সন্ধ্যামালতি, তোমার গালের কালো দাগ আমার সবচেয়ে প্রিয়।”
আয়না হাই তুলে একটা। চা খাওয়ায় মনোযোগ দেয়৷
সমুদ্র বলে যায়, ” ছেলে টা হতভম্ব হয়ে কালো কুয়াশার দিকে তাকিয়ে থাকে কারণ গল্পের এন্ডিং শোনা মেয়েটারও গালে কালো দাগ ছিলো।”
আয়না চমকে উঠে বেশ। সে সমুদ্রের দিকে তাকায়। সমুদ্র বলে, ” বারোটা বাজতে চললো। পরের প্লাটফর্মে নেমে সন্ধ্যামালতির সঙ্গে দেখা করবে?”
চলবে।
#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur(ছদ্মনাম)
Part–45
মানুষ কতোটা আহাম্মক, বলদ আর গাঁধা হলে,একটা কাল্পনিক চরিত্রের অস্তিত্ব খুঁজতে সত্যি সত্যি পরের স্টেশনে ঠিক রাত বারোটা বাজতে দশ মিনিট আগে, ট্রেন থামলে, ট্রেন থেকে ঝাপ দিয়ে নামে? সমুদ্র এই কাজটাই করে। প্লাটফর্মে যাত্রীর আনাগোনা খুব কম। এমনকি ট্রেন থেকে গুটি ক’জন নেমেছে। সমুদ্র আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কী ভয় পাচ্ছো নাকি? আসো, আসো। ভয়ের কিছু নাই। সন্ধ্যামালতি ঘাড় ম টকায় না। সি ইজ প্রিটি। প্রিটি ঘোস্ট!”
আয়না বলে, ” আমি আপনার মতো ষ্টুপিড না!”
সমুদ্র সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, ” ওসব কিছু না। তুমি ভয় পাচ্ছো জন্য আসতে চাও না। আমার মতো সাহসী হলে ঠিকই নেমে পড়তে আর সন্ধ্যামালতি কে খুঁজতে আসতে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তুমি নামবে না। কারণ তুমি ভীতুর ডিম। তার চেয়ে বরং ট্রেনের কেবিনে ফিরে যাও। একা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করবে।”
আয়না চোখ বড় করে চোখ রাঙ্গালো তার দিকে, করে জেদ মাথায় চাপলো, এরপর ট্রেন থেকে নামে। ট্রেন থেকে নামতেই ঠাণ্ডায় হাত জমে আসে। বাপরে এতো শীত পড়লো কীভাবে! সে হাতে হাত ঘঁষে সামনের দিকে পা বাড়ায়। সমুদ্র একটু এগিয়েই গেছে কীনা, তার আসলেই ভয় লাগতে শুরু করে। স্টেশন একপ্রকার নির্জন। দু-তিনজন কেবল। কেমন গা ছমছমে রহস্যময়তায় ঘেরা। তবে মনের মধ্যে অন্যরকম এক এডভ্যাঞ্জার অনুভূতি আসে। নিজেকে হারিয়ে যাওয়া নাবিক মনে হচ্ছে! ইন্টারেস্টিং বটে। সে এগিয়ে সমুদ্রের সঙ্গে পা ফেলে। সমুদ্র তাকে দেখে নিজের কালো জ্যাকেট খুলে দিলো। আয়নার গরম কাপড়ের দরকার ছিলো। বিনাবাক্য সেটা নিয়ে নেয়। জ্যাকেট গায়ে জড়াতেই পরিচিত মানুষটার গায়ের গন্ধ নাকে ভাসে৷ আয়নার কাছে মানুষটার গায়ের গন্ধও কত্তো পরিচিত কিন্তু মানুষটা? মানুষ টা কী তার পরিচিত?
সমুদ্র জ্যাকেট খুলে দেওয়ায় উম্মুক হলো তার পাতলা শার্ট যার দরুন ওর নিজের বেশ শীত-শীত লাগে। আয়না অবশ্য একবিন্দু মায়া দেখায় না। ভুলেও জ্যাকেটটা ফেরত দিল না।
হাঁটতে হাঁটতে আনমনে সমুদ্র গান ধরায়। খালি গলায় গায়,
“ধীরে ধীরে যাও না সময়
আরও ধীর বও
আরেকটুক্ষণ রও না সময়
একটু পরে যাও”
ওর গান শুনতে শুনতে হাঁটতে বেশ উপভোগ করে আয়না। কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি। রাত বারোটায় করুন কণ্ঠে গান ওর বুকে তোলপাড় তুলে দেয়৷
পুরা প্লাটফর্ম চক্কর মেরে একদম শেষ প্রান্তে গিয়ে থেমে যায় তারা।দু’জনেই কিঞ্চিৎ হাপাচ্ছে। এদিকে একদম মানুষ নেই। পুরাটা জায়গা ধুধু নির্জন।
সমুদ্র মন খারাপের কণ্ঠে বলে, ” নাহ! সন্ধ্যামালতির দেখা পেলাম না। ভেবেছিলাম আজকে ওর সাথে দেখা হবেই। স্যাড!”
আয়না কর্কশ গলায় বলে, ” মেয়ে দেখার সুযোগ পেলে হুশ থাকে না তাই না ?”
সমুদ্র চোখ বড় করে বলে, ” মাই গড, তুমি দেখি ভূতের উপরও জেলাস। কাম অন, সি ইজ জাস্ট এ ঘোস্ট।”
আয়না মুখ ফিরিয়ে নেয়, ওইসময় মনে হলো কারো ছায়া প্লাটফর্মের মোজাইক করা ফ্লোর থেকে সরে গেলো। কোনো নারীমূর্তি ছিল বলে মনে হচ্ছে আয়নার। হঠাৎ ভয় ঝেকে ধরে। গায়ে হীম ধরা ভয় খেলে যায়৷ ও চোখ বড় বড় করে ঢোক গিললো। এমন সময় দূর থেকে হুক্কাহুয়া শব্দ ভেসে আসে। এর পরপর-ই কেমন করুন সুরে কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে৷ আয়না পিলে চমকে উঠে বলে, ” সমুদ্র, আমার মনে হয় এই জায়গাটা ভালো না। নিশ্চয়ই খারাপ কিছু আছে।”
তখনই দূর থেকে কেমন কাদো গলায় ছোট্ট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। আয়না পারলে সমুদ্রের গায়ে ঢুকে যায় ভয়ে। কাদো কাদো মুখে বলে, ” নিশ্চয়ই সন্ধ্যামালতি এসেছে। কেনো এসব বাজে কথা মুখে আনেন? এখন সত্যি হলো না?”
–” খাইসে রে! এখন কী হবে আয়ু? সন্ধ্যামালতি যদি সামনে আসে কেমনে সামলাবো ওরে?”
আয়না ভয়ার্ত চোখে তাকাতেই সমুদ্র হোহো করে হেসে ওর মাথায় চাটি মেরে বলে, ” কুকুরের কান্নায় আওয়াজও চিনো না!”
আয়না যেনো জানে পানি ফিরে পেলো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ও৷ এমন সময় ট্রেনের হুইশেল বেজে উঠে বিকট শব্দে। শব্দের তোপ এতো জোরে ছিলো যে স্টেশনের শেষ মাথা অব্দি কানে বাজে৷ সমুদ্র চোখ বড় করে বলে, ” ওহ শীট! নো!”
এরপর দুইজন একে অপরের দিকে তাকালো এরপর সমুদ্র কোনো চিন্তাভাবনা না করেই আয়নাকে কোলে তুলে নিলো। এরপরে দেয় এক দৌঁড়। দিক-বেদিক ভুলে সমানে দৌড় লাগায়। অবশেষে ট্রেন চলতে শুরু করার দশ সেকেন্ড আগে ট্রেনে। আর সামান্য দেরি হলে ট্রেন মিস যেত। আয়নাকে কোল থেকে নামিয়ে ও হাপাতে থাকে। টিটি এসে সমুদ্রের উপর চটে এক প্রকার ঝারি মেরে বললো, ” মাইয়া মানুষ নিয়ে বের হইসেন। সময়ের আক্কেল-জ্ঞান রাখে চলবেন না?”
–” সর্যি ভাই।”
ভদ্রলোক বিরক্ত মুখে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সমুদ্র একটু হেঁটে কোথা থেকে এক বোতল পানি এনে নিজে ঢকঢক করে খেয়ে আয়নাকে সাধলো। আয়নাত ও পিপাসায় গলা ফেটে যাচ্ছিলো। সে এক চুমুকে পানি পান করে সমুদ্রের দিকে তাকায়। ওই নীলচে চোখের মণির দিকে তাকালেই মায়া লাগে৷ বুক ভার লাগে! ভালোবাসার মরুভূমিতে আটকা যেতে মন চায়। পরক্ষণেক মরিচীকা নামক ভয়াবহ বস্তু আঘাত হানে! যদি সবটা মরিচীকা হয়? ওর এই কেয়ার, ভালোবাসা সব মিথ্যা হলে? দ্বিতীয়বার পারলে আয়না সব ধাক্কা সামলাতে? উহু পারবে না!
–” আয়ু?”
সমুদ্রের মুখে ‘আয়ু’ নামটা শুনে কেমন মিশ্র অনুভূতি হতো। আগে আকারে-ইঙ্গিতে কতো বুঝিয়েছিলো তাকে আয়না না ডেকে আদর করে আয়ু ডাকতে কিন্তু জনাব যেন বুঝতে-ই চাইতো না।
–” সিদ্ধ ডিম খাবা? ট্রেনে সিদ্ধ ডিম খেতে দারুণ মজা লাগে।”
আয়না সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ওর পানে তাকায়। দুজনের মধ্যে নিরবে বোঝাপড়া চলে৷ চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা চলে। একটা সময় পর সমুদ্র মোলায়েম কণ্ঠে বলে, ” আরেকবার সুযোগ দিতে খুব চাপ যাবে? দেওয়া যায় না? ওয়ান মোর চান্স!”
আয়না নিরব থেকে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে যাওয়া চাঁদের পানে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র বুঝে ওর নিরবতায় ভীষণ রকমের অভিমান লুকিয়ে আছে৷ ক্ষোভ আছে! তবে কী রাগ,জেদ, ক্ষোভ জয়ী হবে? তাদের ম্যারিড লাইফ পরাজয় মানবে? পরাজিত হলে যদি ও সুখে থাকে, হার-ই সই! সমুদ্র বড় আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজের মনের সঙ্গে নিজেই কথা বলে।
আয়না অনেকক্ষণ থম মেরে চুপ থাকার পর বলে, ” আপনার দেওয়া ইফোর্ট দেখতে চাই আমি। সমুদ্র, ভরসা আর বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। আমি দ্বিতীয়বার যে আপনার প্রয়োজন হবো না, আমাকে প্রিয়জন ভাববেন– আমাকে এই ভরসা আপনাকে দিতে হবে। যতোক্ষণ অব্দি আমি আপনার থেকে এমন কোনো আশার বাণী পাচ্ছি না৷ ততোক্ষণ অব্দি আপনার সঙ্গে ফিরবো না। স্ত্রী হিসেবে অবহেলা মেনে চলছিলাম হাজার কষ্ট হলেও, কিন্তু আমার সন্তান যেন ভবিষ্যতে কোনো অবহেলা না পায় এটার ইনশিওরিটি আপনাকে দিতে হবে।”
আয়না বলা কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে সমুদ্র। উত্তরে কেবল বলে, ” আমি তোমাকে নিরাশ করবো না। দেখবে, আমাদের সুখের সংসার হবে।”
আয়না সমুদ্রের দিকে তাকালো। ওর চোখ ছলছল করছে। নিশ্চয়ই মিসক্যারেজের কথা স্মরণ করে কান্না আসছে।
সমুদ্র ওর দিকে মোহগ্রস্ত চাউনিতে তাকিয়ে বলে, ” ভালোবাসায় নাকি প্রমাণ দেওয়া যায় না, তবে আমি অনুভব করাবো, আমি আসলেই আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি।”
দুজনেও কিয়ৎক্ষণ চুপ থাকে, সমুদ্র পরিবেশ হাল্কা করার জন্য বলে, ” ডিম সিদ্ধ আনি। ওয়েট।”
এরপর হেঁটে কোথা থেকে একটা কাগজে করে সাদা ডিম সিদ্ধ আনে। সঙ্গে লবণ-মরিচ। নিজে এক কামড় বসিয়ে আয়নার মুখে তুলে ধরে। আয়না ভেবেছিল খেতে খুব একটা আহামরি কিছু না, কিন্তু কামড় দেওয়ার পর মনে হচ্ছিলো বেশ মজার।
রাত সাড়ে বারোটার পর দুজনে ফিরে যায় কেবিনের দিকে। কেবিনের সামনে আসতেই রঙ্গন-পিউকে দেখা গেলো। পিউ ভাইয়াকে দেখে সামান্য ঘাবড়ে যায় তবে হাসি মুখ করে বলে ” তোমাদের খোঁজার জন্য-ই বেরিয়েছি। পথিমধ্যে রঙ্গনের সঙ্গে দেখা। দুজন মিলে আলাপ করছিলাম তোমরা কোথায় থাকতে পারো।”
সমুদ্র তেমন সন্দেহ করে না। আয়নাকে কেবিনের সীট্র বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। আয়নার খুব ঘুম পাচ্ছিলো। ওদিকে, আলিয়া, পিউ আর রুশা কি মুভি দেখছে আর হাসছে। মুভির সাউন্ড কানে বাজছে বেজায়৷ সে ঘুমিয়ে পড়ে। চোখ খোলা রাখতে পারে না।
কিছুক্ষণ ফিরে এসে সমুদ্র দেখে আয়না ঘুমে৷ ও ফিসফিস করে বলে, ” তোমরা আমার সীটে গিয়ে মুভি দেখো। যাও।শব্দ করো না।”
ওরা তিনজন চলে গেলো। চিপস সাথে নিয়ে৷ সমুদ্র আয়নার পাশে বসার পর আয়না একটু নড়ে হাওয়ায় কাঁধ বেকিয়ে মাথা কোথাও রাখতে চাইলে, সমুদ্র নিজের বাহু এগিয়ে দিয়ে ওকে আরাম দেয়। আয়না ঘুমের ঘোর সমুদ্রের বাহুকে বালিশ ভেবে বেশ আদুরে ভঙ্গিমায় ঘুমিয়ে থাকে৷ সমুদ্র মুচকি হেসে বলে, ” আই উইল বি ইউর পারসোনাল পিলো (pillow) , হোয়েনেভার ইউ নিড টু স্লিপ।”
চলবে।
#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–46
নতুন প্রতিটি দিন যেনো কোনো নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। পূর্বাকাশে তখনো কেবল সূর্যের মিষ্টি আভা এসে ঝিলিক মারছিলো। সমুদ্ররা গন্তব্যে পৌঁছল সে’সময়। বেশিরভাগ মানুষ-জন, বিশেষ করে তাদের ট্যুর গ্রুপের মেয়েদের মধ্যে ঘুমু-ঘুমু ভাব। পিউ তো খুব বিরক্ত হয়ে জানিয়েই দিলো তার আর ভালো লাগছে না। ঘুমাবে সে। তাকে এই মুহূর্তে বিছানা এনে দিলে এক সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে সে। শ্রাবণ ওর মুখে পানির বোতল থেকে পানি বেশ ভালোমতো ওর মুখে ছুড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে পিউয়ের মুখে পানির ঝাপ্টা লাগে আর ও ভীষণ রেগে শ্রাবণকে তাড়া করে। পিউ-শ্রাবণের সম্পর্ক একদম ভাই-বোনের মতোই। শ্রাবণ কখনো ওকে কাজিন ভাবে না। নিজের কোনো ভাই-বোন নেই জন্য পিউকে খুব আদর করে। পিউ ওকে ধাওয়া করলে, শ্রাবণ পালটা ধাওয়া করে।
সমুদ্র ওদের দু’জনকে ঝারি মেরে থামিয়ে দিলো। সকালের নাস্তা করতে সিলেটের একটা পরিচয় বাংলা হোটেলে নামে তারা। তাদের সঙ্গে মিনি মাইক্রোবাস আছে। সিলেট ভ্রমণে এই মাইক্রো তাদেরকে টুরিস্ট প্লেস গুলায় পৌঁছে দিবে। পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে থামলো মাইক্রো । সকালেও অনেক ভীড় ছিলো হোটেলে। তারা পরোটা সবজি অর্ডার দেয়। ফরেনার দুজন বাঙ্গালী খাওয়া বেশ উপভোগ করে। খাওয়া শেষ করে শেষে দুধ চায়ের অর্ডার দেওয়া হলো। আলিয়া আর শ্রাবণ সবার সামনে এমন আচার-আচরণ করে যেনো ওরা কতোটা অপরিচিত। কিন্তু একমাত্র ম্যাসেঞ্জার নামক এ্যাপটাই জানে তাদের মধ্যে কতো কিছু চলছে তলে তলে। আলিয়া খেতে খেতে শ্রাবণের দিকে তাকালো। আরোও বেশ কয়েকদিন আগেই সে শ্রাবণের প্রোপোজাল একসেপ্ট করেছে। একই ভার্সিটির সিনিয়র-জুনিয়র তারা! চুটিয়ে প্রেম করছে।
পরিকল্পনা অনুসারে আজকে রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট যাওয়ার কথা। তারা হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই নাস্তা করতে বের হয়েছে। নাস্তা করেই মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা হবে। হয়তো তিন-চার ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে গন্তব্যস্থলে। আয়না আজকে হলুদ রঙের স্কার্ট পরেছে৷ ওকে স্কার্ট পরায় ষোল বছরের বাচ্চা মানুষ লাগছে। সমুদ্রর যেন নিজের বউ থেকে চোখই সরছে না। সিলেট ঘুরতে এসে সবারই মন-মেজাজ বেশ ভালো। সবার চেহারায় হাসি-হাসি। এমনকি, আয়না যে মুখ গোমড়া করে ছিল, আজ সেও হাসিমুখে সবার সঙ্গে গল্প করছে। ফরেনার মহিলার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে।
সমুদ্র তো এই আয়নাকে দেখতে চায়। সে গম্ভীর হয়ে যায়৷ মাঝে মাঝে নিজের খুব অনুতাপবোধ হয়। কেনো যে কাজ নিয়ে এতো ডুবে থাকত, কী হত আয়ুকে আরেকটু বেশি সময় দিলে? হাসপাতালের দিনগুলোর কথা ভাবলেই তার গা শিউরে ওঠে। কি দুর্বিষহ ছিলো! সে চুপচাপ চায়ে চুমুক দেয়। সবাই হৈচৈ করে বাসে। আয়না জানালার সীটে বসে সিলেটের সবুজ সমাহার দেখায় ব্যস্ত। তার পাশে রুশা বসেছে। ওদিকে ছেলেরা গান ধরিয়েছে,
“দুঃখটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে
এক পৃথিবী ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে
মনটা যেন আজ পাখির ডানা
হারিয়ে যেতে তাই নেই তো মানা
চুপি চুপি চুপি স্বপ্ন ডাকে হাত বাড়িয়ে।”
আয়না খুব জানতে ইচ্ছা হলো, আসলেই কী দুঃখকে ছুটি দেওয়া যায়? উত্তর আসলো, যায় তো। এই যে তার মনে কতো আঘাত ছিল, কিন্তু ভ্রমণে এসে আপাতত মনের কোথাও দুঃখ নেই!
দুঃখকে ছুটি দিতে চাইলে ভ্রমণে আসা দরকার।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে যেতে হলে নৌকা ভাড়া করতে হয়। রাতারগুল হলো মিঠাপানির জলভূমি। বিশ্বের কয়েকটা মিঠাপানির জলভূমির মধ্যে এটা অন্যতম। তবে শীতকালের আবির্ভাব হওয়ায় পানি অনেকাংশেই শুকিয়ে গেছে। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ জন্ম নেয়ায় এটাকে সিলেটের সুন্দরবন বলা হয়। ডালবের্গিয়া, রেনিফর্মিস, সহ বিভিন্ন জল উদ্ভিদ দিয়ে ঘেরা সোয়াম্প ফরেস্ট। সাপ, কেচো ছাড়াও, বুলবুল, ঘুঘু, টিয়া, তোতা পাখির বসবাস রয়েছে৷ মাছরাঙা কাঠঠোকরা পাখি উল্লেখযোগ্য।
জুলাই থেকে অক্টোবর রাতারগুল ঘোরার বেস্ট সিজন, তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি হওয়ায় তাদের ঘুরতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তাও পানি কিছুটা হলেও শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে।
নৌকায় করে খাল পেরিয়ে সোয়াম্প ফরেস্ট এর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় মাঝি। নৌকা ভ্রমণ বেশ উপভোগ করছিল সবাই। শীত-শীত থাকায় আরোও আকর্ষণীয় লাগছিল সবকিছুই। অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জলভূমির দিকে নৌকা বেয়ে মাঝি নিয়ে যাচ্ছিলো। সোয়াম্প ফরেস্ট যেতে আরেকবার নৌকা পরিবর্তন করলো তারা। প্রতিটি নৌকায় চারজন থাকলেও, সমুদ্র আর আয়নাকে আলাদা একটা নৌকায় উঠে, কেবল দুইজনই ভাড়া নিয়ে উঠে। ওদের গ্রুপের সবাই কাছাকাছি থেকেই সোয়াম্প ফরেস্টের ভেতর নৌকা যাত্রা শুরু করে। যতো সামনে আগাচ্ছিল মাঝি, আয়না যেন ততোই পুলকিত হচ্ছিলো। মাঝি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। এক ঘন্টা ঘুরবে তারা। ওয়াচ টাওয়ারের দিকে যাওয়া হচ্ছে। চারপাশে থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে।কিন্তু আশেপাশে তাকালে পাখি দেখা যাচ্ছে না। হুট করে সমুদ্রর চোখ যায় একটা টিয়া পাখির দিকে।
সে দ্রুত আয়নাকে ডেকে উঠে বলে, ” আয়ু, দেখো একটা কী সুন্দর টিয়া পাখি। কী সুন্দর ওর লাল টুকরো ঠোঁট, একদম তোমার মতো সুন্দর , তাই না!”
আয়না টিয়া পাখি দেখার করে আশেপাশে তাকালো কিন্তু দেখতে পায় না। সমুদ্র ওর কাছে এসে, ওর সাথে মিশে গিয়ে আয়নাকে বাম দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। ও বামে ঘুরে দেখে একটা টিয়া পাখি গাছের ডালে বসে পাখা ঝাপ্টাচ্ছে। সমুদ্র সুযোগ বুঝে ওর গালে ঠোঁট ছু’য়ে বলে, ” মেয়ে, তুমি ওই টিয়েপাখি হও, ওর মতো চঞ্চল হয়ে আনন্দে উড়ো, আমি নাহয় ওই গাছের ডাল হলাম, স্থির! যার কাঁধে মাথা রেখে সমস্ত ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলবে।”
আয়না ওর চোখের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলে, ” আপনি কী ফ্লাট করছেন নাকি!”
–” তোমার কী মনে হয়? ”
–” আমার যা মনে হচ্ছে তাই বললাম।”
সমুদ্র নির্বিকার চিত্তে হেসে বলে, ” আজকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করো, আমার এই চেহারা প্রতিদিন ই দেখবে।”
আয়না ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকায়। সত্যি এই অপরুপ প্রকৃতির মাঝে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র বিরক্ত ভাব নেই। সোয়াম্প ফরেস্ট খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর। চোখে না দেখলে আসলে বিশ্লেষণ করে এর প্রাকৃতিক রুপ বলে বোঝানো যাবে না। পানির মধ্যে থেকে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য গাছ-গাছালি। গাছের অনেকাংশেই পানির নিচে ডুবে আছে। পানি আর গাছের সংমিশ্রিত সমাহারের মাঝ দিয়ে নৌকা চলে।আমাজন জঙ্গলের একটা অংশ ভেবে ভ্রম হলেও হতে পারে।
সমুদ্র ওর কয়েকটা ছবি তুলে বলে, ” খুব সুন্দর এসেছে তোমার ছবি।”
এরপর আয়নার সামনেই সদ্য তোলা ছবিতে সমুদ্র চু মু দিলো। ওর এসব বাচ্চামো কান্ডে আয়নার হাসি পায় বেজায় কিন্তু তা অপ্রকাশিত রেখে মুখে রাগী ভাব এনে বলে, ” এটা কী করলেন আপনি?”
–” কী করলাম?”
এমন ভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে যেনো কিছু জানেই না এই ভণ্ড ছেলেটা। ওইসময় ওর চেহারা খানা নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছিলো।
আয়না স্পষ্ট কাঠ গলায় বলে, ” আমার ছবিতে কি–স করলেন কেনো?”
–” মোবাইলের স্ক্রিন তো আমার। তাও আপত্তি আছে?”
–” আজব আপনি! ”
সমুদ্র পুনরায় হেসে নীলচে চোখের মণি দিয়ে তাকিয়ে থাকে প্রেয়সীর পানে। হুম প্রেয়সীই তো। যে মেয়েটি তার প্রিয় ভালোবাসার নারী তাকে তো প্রেয়সী বলাই যায়। আজ এই মুহূর্তে সে উপলব্ধি করছে সে আয়নাকে ভালোবাসে। ওর হাজারো অসুস্থতাকে নিজের অসুস্থতা হিসেবে মেনে নিতেও রাজী সমুদ্র। নিজের সমস্ত শান্তির বিনিময়েও সমুদ্র চায় আয়নার হাসিমাখা মুখ। আচ্ছা এটাকেই কী ভালোবাসা বলে? ইউশার ক্ষেত্রে তো এমন হতো না। ইউশার বেলায় সে নিজে সুখে থাকতে চাইতো, কিন্তু এই মুহূর্তে মন চায়, আয়ু-ই সুখী থাকুক। এমনকি সে না থাকলেও যেন আয়ু খুশি থাকে। অদ্ভুত যতোসব মনন ত্রিঘাত সমীকরণ!
ওয়াচ টাওয়ারের সামনের দিকে নৌকা ভীড় জমালে আয়না লক্ষ্য করে শ্রাবণ আলিয়া একসঙ্গে গল্প করছে। আবার রঙ্গন পিউকে নিয়ে নৌকার অপরপ্রান্তে ছবি তুলে দিচ্ছে। ওদের এতো দ্রুত ভাব কীভাবে হয়ে গেলো বুঝতে পারে না ও।
ওদের নৌকার কমবয়সী মাঝি খালি গলায় গান ধরায়৷ ওয়াচ টাওয়ার বন্ধ থাকায় ওইদিকেই নৌকা থামিয়ে পর্যটকদের ছবি তুলার জন্য সময় দেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পর নৌকা ফিরতি পথে ঘুরে যাবে। আয়না – সমুদ্র ছবি তুলায় আগ্রহ দেখায় না। ওরা প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত। দূর থেকে পানি ঝাপ মারার শব্দ কানে আসে৷ মাঝি বলে জলজ সাপ হতে পারে। আয়না সাপের নাম শুনে গা শিউরর উঠে৷ সমুদ্র বলে উঠে, ” আয়ু দেখো, সাপ।
সাথে সাথে আয়না ভয়ে সমুদ্রের বুকে ঝাপিয়ে পড়লে ও হোহো করে হেসে বলে, ” প্রাংক করলাম।”
আয়না রেগেমেগে যেন বোম বনে যায়। সমুদ্র তা তোয়াক্কা না করে, আচমকা ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলে, ” আহ কী আরাম! ”
আকস্মিক ওনার এমন কান্ডে আয়না কিছু বলার সুযোগ পায় না। তার আগেই ও চটজলদি উঠে বলে, ” আয়ু, তুমি ও শুয়ে দেখো, কি যে অদ্ভুত লাগে। উপরে আকাশ! নিচে সবুজ।”
আয়নাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ও নিজে তো নৌকায় গা ঠেকিয়ে শুয়ে পরে, সঙ্গে আয়নাকে আধশোয়া করে নিজের পাশে শুয়ালো।
আয়না নৌকায় হেলান দিয়ে শুতেই একটা সাদা বক তাদের মাথার উপর থেকে খুব কাছাকাছি উড়ে যায়। একটু করে নৌকা দুলছে। সমুদ্রর কড়া পারফিউমের সুঘ্রাণ আয়নাকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়।
সমুদ্র ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলে, “Ocean loves his mirror.”
সমুদ্রর কথার অর্থ বুঝতে না পেরে আয়না প্রশ্ন ছুড়ে, ” কী বললেন বুঝি নি।”
সমুদ্র হেসে ফেলে এবং উঠে বসে তারপর নৌকা চলতে শুরু করে। আয়নাও উঠে বসে এক প্রকার চিন্তা করে। দু-তিন মিনিটের মধ্যেই উত্তর পেয়ে যায় তবে সমুদ্রকে বুঝতে দিলো না৷ মনে মনে সে ভীষণ অবাক হয়। এরপর একটু থেমে সমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” দর্পন প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। সমুদ্র ভালোবাসা দিলে, সেটারও প্রতিবিম্ব তৈরি হবে আয়নার ভেতর। অবহেলা দিলে প্রতিবিম্বে অবহেলাই ফুটে উঠে।”
সমুদ্র ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো, আয়না ভুলেও ওর পানে তাকায় না।
দুজনের মধ্যে নিরবে-নিভৃতে ভালোবাসাময় দ্বন্দ চলে। একে অপরকে বুঝতে চায়, শিখতে চায় দুজনের মনের ভাষা। আয়না বুঝে পায় না, সমুদ্রকে ক্ষমা করে আবার সুযোগ দিবে কীনা, অপরদিকে সমুদ্র চায় আয়নার পরশ, ছাড়তে নারাজ স্ত্রীর ছোঁয়া। অবশেষে কে জয়ী হবে তা কেউ জানে না।
__________________________
শায়লা চৌধুরী নিজের নারায়ণগঞ্জের বাসায় এসেছেন। বেশ কয়েক মাস বাসা বন্ধ থাকায়, কেমন সৌন্দর্যের মাত্রা কমে এসেছে। সুন্দর করে সাজানো শোপিস গুলা বেশিরভাগই সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ানো। সে বিছানায় শু’য়ে আছেন। শরীর ভালো যাচ্ছে না তার। কেমন অসুস্থতা গ্রাস করে নিলো তার শরীরটাতে। অসুখের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি। হাসপাতালে গিয়েছিলো। কিছু টেস্ট করে এসেছেন। একা একা অসুস্থ অবস্থায় বড় অসহায় অনুভব করছেন তিনি। একা নেই অবশ্য, একটা কমবয়সী তরুণী মেয়ে আছে তার সাহায্যকর্মী হিসেবে। গতকালকেই তার অসুস্থতার কথা ফাহাদকে জানানো হয়েছে কিন্তু এখনো নারায়ণগঞ্জ এলো না। এমনকি কল দিয়ে খোঁজও নেয় নি। সব মিলিয়ে শায়লার শরীর ও মন কোনোটাই ভালো যাচ্ছে না। শায়লা চৌধুরী ভাবছেন আয়নাকে দিয়ে কনভিন্স করাবেন ফাহাদকে। আয়না মানসিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার পর তার সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়েছে৷ কোনোভাবে আয়নাকে ইনফ্লুয়েন্স করলে হয়তো ফাহাদও শান্ত হবে। আয়না সিলেট থেকে ফিরে আসলে একবার ওকে এবাসায় দাওয়াত করবে বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
শায়লা চৌধুরী বাথরুমে যাবে বলে ভাবলেন,বেড ছেড়ে উঠে সামনে পা ফেললেন, কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। উনি পা পিছলে ফ্লোরে পরে যান৷
চলবে৷