ইলেকট্রিক্যাল_মন পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
340

#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–14

সমুদ্র যখন আয়নাদের বাসার বেল বাজাচ্ছিলো তখন সঙ্গে সঙ্গে আলিয়া গেইট খুলে দিলো। আলিয়ার চেহারায় দুঃখী-দুঃখী ভাব। সমুদ্র ভেতরে প্রবেশ করে প্রথম যে কথাটা বললো তা’হলো, ” তোমার আপা কোথায়?”

–” আপা রুমে শুয়ে কান্না করছিলো ব্যথায় এজন্য ভয়ে, এক প্রকার লুকিয়ে আপনাকে কল দিলাম।”

–” লুকিয়ে কেন?”

–” আপা মানা করেছে। বললো আপনার আসা লাগবে না। ব্যস্ত মানুষ আপনি। ”

সমুদ্র বিরক্তিতে ‘চ’ বর্ণ উচ্চারণ করে। একে দুইদিন ধরে ফোনে কথা হয় না৷ হোয়াটসঅ্যাপে একবার ম্যাসেজের রিপ্লে দিয়েছে। এরপর উধাও তিনি। এখন ম্যাডাম বাকিসব কিছু তাকে না জানিয়ে আগ বাড়ায় একা একা সব করে নিতে চাচ্ছে। সে আয়নার রুমের দিকে পা বাড়ালো। একবার ভাবলো নক করে ঢুকবে ভদ্রতাসূচক। কিন্তু পরে ভাবলো মোটেও না। যে অবস্থায়-ই থাকুক তার কাছে ম্যাটার করে না।

সমুদ্র বিনা নক করে দরজা খুলে ঢুকে পড়ে। আয়না তখন বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলো। চোখ ভেজা। সমুদ্রকে দেখামাত্র পিলে চমকে উঠে। নিশ্চয়ই তাকে এ অবেলায় আশা করে নি। আয়না উঠে বসলো৷

সমুদ্র বলে উঠে, ” হুট করে, বিনা নোটিশে নাক ফোঁড়াতে গেলে কেন?”

আয়না মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো, ” দাদী বললো……. ” বাক্যটা শেষ না করেই চুপ বনে যায়৷

সমুদ্র তাগিদ দিয়ে বলে, ” বাক্য অসম্পূর্ণ রাখলে কেন? কী বলেছেন উনি?”

আয়না মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে, ” নাকফুল পড়লে স্বামীর মঙ্গল হয়।”

–” তাই ভাবলে আমার একটু কল্যান হোক? এই বাড়তি মঙ্গলটুকু করে খুব উপকার করলে!”

আয়না ফের মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলে সমুদ্র তার থুতনি ধরে মুখ তার দিকে সোজাসুজি এনে থমকালো। বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নার নাকের ফুল দেখলো। চকচক করছে, কিন্তু পাশ দিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। ওর চোখে জল দেখে রাগ উঠলো। আগ বাড়িয়ে নিজেকে ব্যথা দেওয়ার দরকার কী ছিলো?

সে নাকের যে পাশটায় নাকফুল পড়া সেদিকে বেশ জোরেই মুখ গোল করে ফুঁ দিলো। তারপর একটু সরে এসে বেডে বসে বললো, ” নাকের কাজ নিশ্বাস নেওয়া। তুমি আগ বাড়ায় এতে নাকফুল পড়তে গেলে! ঝামেলা বাড়লো তো।”

আয়নার ওইসময় আরেকটা বার সমুদ্রের উপর ভীষণ অভিমান জন্মালো। সে এতো কষ্ট করে ওনার জন্য নাক ফোঁড়ানোর ব্যথা সহ্য করলো। আর উনি এসেই বলছে ঝামেলা বাড়ালো!

সমুদ্র তার চোখের পানে তাকিয়ে সুধালো, ” আমার জন্য এতোটা কষ্ট করলে? ”

–” না। আমার এমনিতেই ইচ্ছা ছিলো। নাকফুল পড়লে বেশি মানায় আমাকে।”

সমুদ্র একপলক তাকে অবলোকন করে বলে, ” তোমার নাক তো বোঁচা। শুধু শুধু ছোট নাকে ফুল দেওয়ার দরকার ছিল? আগে কেন ফোঁড়াও নি তবে! বিয়ের তিন দিন পর, হুয়াই?”

আয়না উত্তর দিলো না।

–” ব্যথা করছে।”

–” নাহ৷”

সমুদ্র পকেট থেকে মেডিসিন বের করে এরপর বলে, ” আসার পথে মেডিসিন নিয়ে এসেছি৷ ঔষধ খাও। ব্যথা কমতে থাকবে। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে৷”

–” লাগবে না। নো থ্যাংকস।”

–” লাগবে কিনা সেটা আমি বুঝবো।”

সমুদ্রের কণ্ঠে কেমন কঠোরতার আভাস মেলে। আয়না ধপ করে শুয়ে পড়ে বেডে। তখনই আয়নার দাদী আর হালিমা বুয়া আসলো।

হালিমা বুয়া বলে উঠে, ” জামাইবাবু আপামনি কিন্তু সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে দেয়নি। না খাওয়া একদম।”

–” সেকি খায়নি কেন?”

–” সেটা তো আমি কইতে পারি না।”

সমুদ্র আয়নার পানে তাকালো এরপর বলে উঠে, ” খাবার প্লেটে তুলেন৷ এখন খাবে।”

আয়নার দাদীর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, সে বলে উঠে, ” আয়ু বুবু এটা কী হয়ে গেলো! হুজুগে নাক ফোঁড়ানো ঠিক হলো না! নাকের ব্যথায় মেয়েটা খেতে পারছে না।”

হালিমা বুয়া খাবার আনলেও আয়না খেতে চাচ্ছে না।
সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” না খাওয়ার রিজন কী?”

আয়না মনে মনে বলে, ” না খাওয়ার রিজন হচ্ছে অভিমান কিন্তু আপনি তো রোবট-মানব ওসব আপনার ঘিলুতে স্টোরেজ করা নাই। দুইদিন ধরে দেখা নাই, সাক্ষাৎ নাই এখন আসছে জিজ্ঞাসা করতে খাচ্ছো না কেন! যতোসব!

কিন্তু মুখে বলে, ” নাকে ব্যথা সেজন্য খাবো না।”

–” নাক দিয়ে তো আর খাচ্ছো না। খাবে মুখ দিয়ে। নাকি মুখেও ব্যথা?”

আয়নার এতো মেজাজ খারাপ হলো। তার মন চাইলো সমুদ্রের মাথায় খাওয়ার প্লেটটা দিয়ে বাড়ি মারতে, তাও না পারলে ওই অভদ্র লোককেই নাক দিয়ে খাওয়াতে পারলে শান্তি পেত।

সবার জোড়াজুড়িতে সে দুই লোকমা খেল। এর বেশি মুখেই নিলো না৷ না পারতে সাতদিনের কোর্সটার প্রথম ডোজের ঔষধ আয়নার হাতে দিলো। আয়না ঔষধ খেয়ে ঘোষণা দিলো সে ঘুমাবে৷ মূলত সমুদ্রকে ইগনোর করতে চাইছে। সে ঘুমালে, উনি নিশ্চয়ই চলে যাবে। আর যে ব্যস্ত মানুষ নিশ্চয়ই একটু পর কোনো মিটিং আছে৷ একে একে সকলে রুম ত্যাগ করলো। তাদের দু’জনকে একাকীত্ব সময় দিতে চাইলো। সমুদ্র একাই রুমে ওর সাথে থেকে যায়। সে বিছানায় এসে আয়নার পাশে শুয়ে পড়ে। আয়না ভেবেছিলো সবাই চলে গেছে। সে তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে প্রশ্ন করে, ” আপনি? ”

–” হুম। অন্যকাউকে ভুলেও আশা করো না।”

–” গেলেন না কেন?”

সমুদ্র বলে উঠে, ” আমার মঙ্গল কামনা করতে গিয়ে তোমার এ বেহাল দশা, তোমায় এ’অবস্থায় রেখে যাওয়া মোটেও মানবিক হবে না। আফটার ওল আমার জন্য-ই তো এমন দশা হলো!”

আয়না মনে মনে বলে, ” আপনি তো মানুষের জাত-ই না। বলেন মোটেও রোবট-বিক হবে না। হুহ।”

সে ঘুরে অন্যদিকে শুয়ে থাকে। সমুদ্র আয়নার এহেন কান্ডের কোনো উৎস খুঁজে পায় না। দীর্ঘ ছয়বছর ইউশার সঙ্গে ইনভলভ ছিলো সে। মেয়ে সঙ্গীর আচরণ পরিচিত তার। আগে কখনো এমন আজব আচরণ দেখেনি। আয়নাকে বুঝতে তার মাথায় জট পেকে যাচ্ছে। মেয়ের আচার-আচরণ এ বিশাল ঘাপলা আছে৷ সমীকরণ মিলানো যায় না।

সমুদ্র ফোন হাতে নিয়ে টুম্পা আপুকে কল দিয়ে আয়নার সামনে কথা বলতে থাকে। সে বললো আপু আজ অফিসের যাবতীয় কাজ আপনি দেখেন৷ কাল থেকে আমি আবার শুরু করবো। না পারলে রেখে দেন৷ পোস্টপনড করে রাখেন৷

আয়না ও’পাশ থেকে সবটাই শুনলো। ওনার আবার কী হলো? এতো দরদ উতলাচ্ছে কেন? তবে সে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। খামোশ থাকে।

সমুদ্র উঠে বারান্দায় যায়। তারপর একটুপর এসে বললো, ” আধাঘন্টার বেশি হলো। ব্যথা কমেছে?”

আয়নার চোখ খোলা। সে শুয়ে আছে কিন্তু জবাব দিলো না। এতে সমুদ্রের কি যে রাগ উঠলো। নিজেকে সে দমাতে পারলো না। সোজা গিয়ে আয়নার ডান বাহু চেপে ধরে ওকে এক প্রকার হ্যাচকা টান দিয়ে উঠে বসালো তারপর বললো, ” সমস্যা কী তোমার? এমন কেন করছো?”

–” কেমন করছি?”

সমুদ্রের এতে যেন রাগ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়লো। সে আরোও শক্ত করে ওর বাহু চেপে ধরে বলে, ” মজা নিচ্ছো তাও আবার আমার সঙ্গে? আয়না, সমস্যা কী তোমার? এতো আজব ব্যবহার করো কেন? হুয়াট’স রঙ উইথ ইউ?”

আয়না তখন সমুদ্রের কথা শোনার চেয়ে, অন্য হাত দিয়ে বাঁধন খোলায় বেশি গুরুত্ব দিলো। কোনো মেয়ের থেকে ইগনোর কিংবা কিঞ্চিৎ অপমান কেন যেন সমুদ্রের আগে থেকেই একদম পছন্দ না। কিন্তু আয়না একের পর এক আঘাত হানছে। সে তখনো ব্যস্ত সমুদ্রের হাত তার বাহু থেকে সরাতে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তার।

তবে সে সফল হলো। না ঠিক যেমন করে কোনো পিপীলিকা কাঠের শক্ত খন্ড সরাবার বৃথা চেষ্টা করে!

সমুদ্র গমগমে গলায় বলে, ” আমি ধরেছি জন্য এমন ছটফটানি? অন্যকারো স্পর্শ পেলে শান্ত থাকতে?”

সমুদ্র করা প্রশ্ন যেন তীরের মতো ছু’টে এসে খণ্ড-দ্বিখন্ড করে আয়নার কোমল মনে। বড্ড দৈত্যকার আকৃতির রাগ এসে পাখা ঝাপ্টায়!

সমুদ্র তার কোমড়ে অন্যহাত রেখে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে বলে, ” ইগনোর করো কোন সাহসে?”

আয়না যেন তখন ফ্রিজড হয়ে যায়। ওনার এতো কাছে আসায় সে ধাতস্থ হতে সময় দেয়। সব এলোমেলো লাগলো। মাথা ঝিম ধরে আসে।

আয়নাকে চুপ থাকতে দেখে সমুদ্র বলে, ” আমি কিন্তু তাহলে চলে যাবো!”

সঙ্গে সঙ্গে আয়না নড়েচড়ে উঠলো এরপর বলে, ” না।”

–” কেন? কথাও বলবে না, আবার যেতেও দিবে না। মেয়ে মানুষ সামলানো বড় মুশকিল দেখছি। এতো মুড সুয়িং কেন?”

আয়না সরে আসতে চাইলে সে আরো নিবিড়ভাবে তাকে খুব কাছাকাছি আবদ্ধ করে বলে, ” কাছেও ভীড়তে দাও না, দূরেও না। যাব কোনদিকে?”

আয়না বিরক্ত হয়ে বলে, ” উফ! প্লিজ ছাড়েন।”

–” কি ছাড়বো?”

আয়না তার এহেন প্রশ্নে বোকা বনে যায়। সে আমতাআমতা করে বলে, ” হাত।”

–” জাস্ট হাত ধরাতেই এতো রিয়্যাক্ট করছো! আরোও কিছু ধরলে যে কি শুরু করে দিবে…… ”

–” প্লিজ চুপ!”

আয়না তার কানে অন্য হাতটা চেপে ধরে যেন সমুদ্রের বলা অভদ্র কথা শোনা না লাগে।

সমুদ্র তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, ” আচ্ছা আর জ্বালাবো না।”

সেদিন আকাশ মেঘলা ছিলো বটে। অবশ্য অক্টোবরের বৃষ্টি বেশ উপভোগ্য সমুদ্রের কাছের৷ তখনো আটটাও বাজে নি। এরমধ্যেই আয়নার জ্বর এসে গেলো। সমুদ্র বুঝলো না ব্যথা কী বেশি ছিলো যে জ্বর চলে আসবে?

ওর কপালে হাত রাখতেই মৃদ্যু কেঁপে উঠে আয়না। এরপর চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ” কেমন ডাক্তার আপনি? জ্বর ঠিক করে দেন জলদি।দু’মিনিটের মধ্যে ”

সমুদ্র তার কাছে বসে, কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ” তুমি অনেক লাকি। মানুষ ফ্যামিলি ডক্টর পায় আর তুমি পেয়েছো পার্সোনাল ডাক্তার!”

আয়নার চোখ বন্ধ ছিলো। সে চোখ খুলে সমুদ্রের দিকে তাকায়। দু’জনের দৃষ্টি একে অপরের দিকে।

সমুদ্র বলে,” কী খাবে তুমি?”

আয়না খানিক ভেবে বললো, ” কিটক্যাট।”

সমুদ্রের কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয় এরপর থেমে থেকে সুধায়,” জ্বরের মধ্যেও চকলেট চাই?”

আয়না বাধ্য বালিকার মতো মাথা দুলিয়ে বলল, “জ্বর হলে দুইটা ‘চ’ খেতে হয়। তাহলে জ্বর পালায় যায়।”

–” সেই দুটো ‘চ’ কী কী?”

–” চকলেট আর চু( মা।”

ডাক্তার হওয়া সত্তেও এতো জরুরি তথ্য সমুদ্রের জানা ছিলো না। সে বলে উঠে, ” ইঞ্জিনিয়ার যখন বলেছে, ঠিকই বলেছে।”

–” আমার কিটক্যাট দেন এবার?”

–” আপাতত দ্বিতীয় চ টা দিই?”

আয়না বুঝি তখন জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বকছিলো। সমুদ্রের কথায় বোধ হলো। সে মাথা ঘুরিয়ে না ইঙ্গিত করে বলে, ” চকলেট আগে।”

সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে রুমের বাইরে গেলো। রাত আটটায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে বের হবে বউয়ের জন্য চকলেট কিনতে। জীবনে এতো থ্রিলিং কর্ম করেনি এর আগে।

বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ফাহাদ সাহেবের সঙ্গে দেখা।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ” সমুদ্র কোথায় যাও? আজ এখানেই থাকবে কিন্তু তুমি। রাতে আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া আয়নার শরীর ভালো না।”

সমুদ্র নিজ থেকেই আজ থাকতে চাচ্ছিলো। ফাহাদ সাহেব বলায় তার জন্য সুবিধাই হলো।

সে বলে, ” গাড়িতে একটা জরুরি ফাইল রেখে এসেছি। ওটাই আনতে যাচ্ছি।”

ফাইল নেওয়ার বাহানায় সে পকেটে করে দু’টো বড় কিটক্যাট নিয়ে ফিরে আসে। আসার পথে ফাহাদ সাহেবের সঙ্গে পুনরায় দেখা। উনি আরেকবার জিজ্ঞেস করলো, ” তোমার ফাইল কোথায় বাবা?”

সমুদ্র কি জবাবে বলবে? আদৌ কোনো ফাইল নেওয়ার কথাই না। সে তবুও বলে, ” প্রয়োজনীয়টা সঙ্গে আনি নি আংকেল।”

ফাহাদ সাহেব ভ্রু কুচকে বলে, ” আংকেল?”

সমুদ্র খানিকটা দমে যায়। শ্বশুড়কে বাবা ডাকতে বেশ আন কমফোর্ট করছে সে।

তিনি বলেন, ” বাবা বলে ডাকবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে। ”

হালিমা বুয়া স্যুপ এনে সমুদ্রকে দিলো। সমুদ্র ই স্যুপ বানাতে বলেছিল আয়নার জন্য।

সে স্যুপ হাতে রুমে ঢুকে। তখনো আয়নার জ্বর ছিলো। সমুদ্র একপ্রকার জোর করে স্যুপ মুখে তুলে দেয়৷

আয়না মাথা নাড়িয়ে বলে, ” খাবো না আমি। ”

–” কেন?”

–” আমি রোবটের হাতে কিছু খাই না।”

–” রোবট কই পেলে?”

–” আপনি? ”

সমুদ্র বহু কষ্টে রাগ সংবরণ করলো। পিউ তাকে বলেছিলো রাগটা দমায় রাখতে। স্পেশালি ভাবীর সামনে৷ ওর ধারণা ভাইয়ার রাগ দেখলে ভাবী ভুলেও শ্বশুড়বাড়িতে পা মাড়াবে না৷

অসুস্থ ভেবে সে অনেক শান্ত গলায় বলে, ” স্যুপটা না খেলে চকলেট গুলো ফেলে দিবো কিন্তু। ”

–” আপনার কি মনে হয় আমি চকলেটের লোভ করি?”

–” তাহলে কী দ্বিতীয় ‘চ’ টার লোভ আছে?

সে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে। আয়না দ্রুত স্যুপ খেয়ে নিয়ে বলে, ” প্লিজ অসভ্য কথা বলবেন না।”

–” আহা, বাণী ছুঁড়লে নিজে, সেটা মুখে বলায় আমি অসভ্য?”

আয়না বিছানায় শুয়ে পড়ে। জ্বর মনে হয় আরোও বাড়ছে তার। সমুদ্র কিটক্যাট গুলো তার সামনে রেখে দিলো। আয়না জ্বর গায়ে নিয়েই উঠে বসে চকলেট খুললো। সে আয়েশী ভঙ্গিমায় চকলেট খেতে থাকে। এরপর আয়না চকলেট তার সামনে এগিয়ে দিয়ে খাওয়ার অফার দিলো।

সমুদ্র শেষ কবে চকলেট খেয়েছে মনেই পড়ে না। চকলেট বলে যে খাওয়ার কোনো জিনিস আছে মাঝেমাঝে মনেই থাকে না। কিন্তু আয়না অফার করায় সে না করলো না। ওর হাত থেকে চকলেট খাওয়ার বড় শখ জাগলো।

ওর হাত থেকে চকলেট মুখে অল্প পুড়ে নেয় সে। তারপর আজ সমুদ্র তার স্বভাবত খোলস ভেঙে হঠাৎ নিয়ম ভঙ্গ করলো। সে খুব মোলায়েম ছোঁ’য়ায় আয়নার বাম গালটায় নিজের ঠোঁট ছো’য়ালো। আয়না চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে। সমুদ্রের ঠোঁটে বেশ উত্তাপের আভাস মেলে। তার ঠোঁট যেন গরম হয়ে উঠে।

সে মিহি গলায় বলে, ” দেখো এবারে জ্বর দ্রুত সেড়ে যাবে।”

আয়না মাথা নাড়িয়ে না বোধক অর্থ প্রকাশ করলো।

সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” না?”

আয়নার তখন অনেক জ্বর। ১০১ ডিগ্রি পাড় হবে হয়তো।

সে সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ” এমন হাল্কাতে হবে না। আমার সব ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ড লি?প কি–স করে আর আপনি হাসবেন্ড হয়ে হাল্কা চু–মু দিলেন। এতে কিছুই হবে না…….. ”

সমুদ্র সবটা শুনলো না। সে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মেয়েটাকে যতোটা ইনোসেন্ট বাচ্চা ভেবেছে মোটেও তা না। ভীষণ পাকনা সে। অবশ্য জ্বরে অনেকের মাথা আউলায়। আয়না তো স্বভাব’তই তারছিড়া, জ্বর মাথায় বোধহয় মাথার স্ক্রল ঢিলা হয়ে গেছে।

সমুদ্র বিজ্ঞ গলায় বলে, ” চু–মুর আবার ওজন আছে যে হাল্কা-ভারী হবে?”

এতেই যেন সমুদ্র বিপদের সাগরে পড়ে গেলো। আয়না জ্বর গায়ে নিয়ে বায়না ধরল সে ভারী চু–মু খাবে৷ যে চু–মু দেড়’শ কেজি ভারী, সেই কি স তার চাই৷ এমন পাগলের পাল্লায় পড়তে হবে জানলে ভুলেও ওই বাক্য মুখে আনতো না সে।

কিন্তু আয়না এতো পরিমাণ নাছোড়বান্দা আর দুষ্ট! সমুদ্রের কোনো কথায় শুনে না। রাতের ঔষধ ও নিবে না। বরং বাবাকে গিয়ে নাকি তার ব্যাপারে কমপ্লিন করবে। এমন বক্তব্য দিয়ে বেড থেকে আয়না উঠে বসতে চাইলে দ্রুত সে আয়নাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। আয়নাকে একদম নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে। চিন্তা করতে লাগলো কিভাবে এই পাগলকে শান্ত রাখবে? পরে বুদ্ধি আটলো। ওর নিজেকে কেমন শেয়ালের মতো ধুরন্ধর চালাক মনে হলো। ইঞ্জিনিয়ারকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় সোজা করতে হবে৷ এছাড়া উপায় কোথায়?

সে বলে উঠে, ” শোন আয়না, চুমু আসলে ওজনের মতো বুঝলা? নিউটন এককে হিসেব-নিকেশ করা হয়৷ আর ওজন তো পরিবর্তনশীল। আমি তোমাকে যেই কি–সটা দিলাম ওটা পৃথিবীতে হাল্কা হলেও মঙ্গলে অভিকর্ষ ত্বরণের জন্য মান অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সো আল্টিমেটলি তোমাকে আমি ভারী চু–মুই দিয়েছি।

আয়না তখন ওর বুকের সঙ্গে লেপ্টে শুয়ে ছিলো। ঘুম ঘুম সুরে বলে, ” সত্যি?”

–” ইয়েস।”

তারপর সমুদ্রের কি যেন হলো সে আবারো খুব শক্ত করে, প্রগাঢ়ভাবে আয়নার গালে ঠোঁট ছো’য়ায়! আদৌ দেড়’শ কেজি ভারী চু–মু কি সে জানে না, তবে নিজেও এমন কি৷ স চায় অন্তত ওয়ান ইন এ লাইফটাইম!

চলবে।

#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–15

তারপর সমুদ্রের কি যেন হলো সে আবারো খুব শক্ত করে, প্রগাঢ়ভাবে আয়নার গালে ঠোঁট ছো’য়ায়! আদৌ দেড়’শ কেজি ভারী চু–মু কি সে জানে না, তবে নিজেও এমন কি৷ স চায় অন্তত ওয়ান ইন এ লাইফটাইম!

আয়না ওইসময় বড্ড ঝামেলা করছিলো। নড়াচড়া, অস্থিরতা সব মিলে একাকার। ওকে চুপটি করে শুইয়ে রাখা মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিনতম কর্ম৷ নিশ্চয়ই জ্বরে কষ্ট হচ্ছে। সমুদ্র কপালে হাত দিলো ওর। সেকি বেশ ভালো রকম জ্বর এসেছে। কপালে ঠাণ্ডা পানির জলপট্টি দিলে আরাম পাবে ভেবে ও যখন উঠতে যাবে, আয়না তখন ওর বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলো। সমুদ্রকে উঠতে দেয় না। শার্ট খামচে ধরে।

সমুদ্র বললো, ” তোমার তো একদম জ্বরে বেহাল দশা। গা পুড়ে যাচ্ছে।”

আয়না ওর এই কথায় হাসলো বেশ৷ সমুদ্র তাজ্জব বনে যায়। জ্বর হলে মানুষ হাসে! এই প্রথম দেখলো৷

আয়না মুখ ফুলিয়ে বলে, ” আপনি না কিছু বুঝেন না!”

–” তুমি বুঝো? ”

–” হুম।”

–” ওতেও চলবে। এবার ছাড়ো আমার শার্ট।”

আয়না ওনার শার্ট তো ছাড়লোই না বরং একটা পাগলামো করে বসে৷ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” এটাকে প্রেমের জ্বর বলে জানেন?”

–” না তো। আজই শুনলাম।”

–” ধুর! ভালো লাগে না।”

সমুদ্র উঠে চলে যায়। কেন যেন এ’সব তার আর ভালো লাগছিলো না। দ্রুত টাওয়ালের শেষ অংশ ভিজিয়ে এনে আয়নার হাত-পা, কপাল মুছে দিলো৷ প্রায় আধা ঘন্টা কপালে জলপট্টি দিতেই ওর গায়ের টেম্পারেচার কমে আসে। ঘুমিয়ে পড়ে ও। কিন্তু সমুদ্রের চোখে ঘুম থাকে না৷ সে কিছুক্ষণ বহু চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে না৷ কিছুক্ষণ আয়নার মাথায় হাত বুলায় যেন আরাম পায় ও।

পরেরদিন, সকাল সাতটার দিকে আয়নার ঘুম ছ’টে যায়৷ গরম লাগছিলো বেজায়। সে চোখ খুলতেই নিজের পাশে একটা জলজ্যান্ত পুরুষকে শুয়ে থাকতে দেখে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে । চোখ বড় বড় হয়ে আসে তার। সমুদ্র জাগ্রত-ই ছিলো।

সে দ্রুত উঠে বসে জিজ্ঞেস করে, ” কি হলো?”

আয়নার যেন ধ্যান ভাঙ্গলো। ধাতস্থ হতে সময় নেয়।

সে ছোট্ট করে জবাব দেয়, ” ওও।”

সমুদ্রের ওর কাণ্ড-কারখানা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে সুধালো, ” বাই এনি চান্স, ভুলে গিয়েছিলে নাকি নিজের বিয়ের কথা?”

আয়নার তখন কি যে লজ্জা লাগলো। সে জোর গলায়, অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি জোরেই বলে, ” না।”

–” চোরের মায়ের বড় গলা।”

আয়না ঠায় বসে থাকে। সমুদ্র তার দিকে ঝুঁকে এসে কপালে হাত রেখে উষ্ণতা যাচাই করে এরপর বলে, ” তবে কী প্রেমময় জ্বর সারাতে পেরেছি?”

আয়না চোখ গোল গোল করে তাকায়। সমুদ্র যেন ওকে আরোও বাগে পায়। কাল বহুত জ্বালাইছে আজকে একটু হলেও শোধ তুলতে হবে৷

সে বলে উঠে, ” ভারী চু) মু এখন দিবো নাকি পরে?”

আয়না প্রথম দফায় ভ্রু কুচকে তাকায়। এরপর ক্ষণেই খেয়াল হতেই ওর চোখ-মুখ দেখার মতো অবস্থা। লাজের বশে সে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়৷

সমুদ্র বালিশে হেলান দিয়ে বলে, ” মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলে কেন? না মানে আমি করিনা জন্য তোমার অনেক দুঃখ। এখন আমি কর‍তে চাচ্ছি, মুখ সরিয়ে নিচ্ছো।”

আয়না আস্তে করে বলে, ” সাট আপ!”

–” হুয়াই?”

আয়না বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে, সমুদ্র বলে, ” কফি বানায় আনো। সারারাত ঘুমাইনি।”

–” সেকি কেন?”

–” যা পাগলামো করছিলে, আমার জায়গায় অন্যকেউ এসব শুনলে লজ্জায় কেবল মাথা কেন সম্পূর্ণ ঘাড় সমেত কল্লা কাটা যেত।”

আয়নার অবশ্য সবটা খেয়ালও নেই তবে যা যা স্মরণ আছে ওতেই এই লোকের সামনে আর থাকতে ইচ্ছা করছে না।

আয়না সাফাই গেয়ে বলে, ” জ্বর হলে আমি একটু আবোলতাবোল বলি। সেজন্য সর‍্যি।”

–” শুধু জ্বর নাকি প্রেমের জ্বর!”

আয়না তৎক্ষনাত বেড থেকে একটা বালিশ হাতে তুলে নিয়ে সমুদ্রের মুখের উপর ছুঁ’ড়ে মা’রে।

সমুদ্রর বিছানায় হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম।

সকালে নাস্তার টেবিলে ফাহাদ সাহেব আয়নাকে নিজের পাশে বসালেন। এবং আয়নার পাশে সমুদ্রের জায়গা হলো। আলিয়া তখনো ঘুমে।

ফাহাদ সাহেব বলে, ” সমুদ্র বাবা, তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? দেখছোই তো অফিসে থাকি। তোমাকে সময় দিতে পারছি না।”

সমুদ্র বলে, ” না, না আংকেল সবাই আমার অনেক খেয়াল রাখছে৷ প্লিজ ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি একদম ঠিক আছি।”

সমুদ্র আর ফাহাদ সাহেব একসঙ্গে অফিসের উদ্দেশ্য বের হবেন৷ সমুদ্র আয়নার রুমে গিয়ে শার্ট ইন করতে লাগলো৷ আয়না রুমে আসতেই সে ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকালো।

এরপর পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ওর হাতে গুঁজে দিয়ে বললো, ” এটা রাখো।”

–” কী এতে?”

–” খুলে দেখে নিও।”

আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না, রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্য। আয়না রুমে বসে প্যাকেট খুলতে-ই হতভম্ব হয়ে যায়। ছোট হীরার একটা নাকফুল। একদম রেগুলার ইউজের জন্য ছোটো সাইজের কিন্তু ডিজাইনটা বেশ!

সে মনে মনে অনেক খুশি হলো।

সেদিন একদম রাতে সমুদ্রের কল আসে। আয়না তখন বসে বসে কে-ড্রামা দেখছিলো। খুবই রোমান্টিক একটা এপিসোডের বেস্ট সীন চলছে। এরমধ্যেই কলটা এলো। সে রিসিভ করতেই সমুদ্র বলে উঠে, ” কি করছিলে?”

–” ড্রামা দেখছিলাম।”

–” ভাবলাম পড়ছো!”

–” না মানে এখন তো সামনে এক্সাম নেই….. ”

–” এক্সাম না থাকলে পড়ো না?”

আয়না বুঝে পায় না এমন রাতের বেলা পড়াশোনা নিয়ে কেন তদারকি করছেন উনি!

সমুদ্র এবারে নিজ থেকে বললো, ” কালকে এক জায়গায় যাচ্ছি আমরা। বিকেলের আগে ধরো চারটার মধ্যে রেডি থাকবে৷ আমি এসে নিয়ে যাব।”

–” কোথায় যাচ্ছি?”

–” ভয় পেতে হবে না। নট ইন হেল।”

–” উফ! কারো বাসায় নাকি এমনি কোথাও?”

–” গেলেই জানতে পারবে। এতো অস্থির হয়ো না।”

আয়নার সে’রাতে উত্তেজনায় ঘুম আসেনি ঠিকঠাক। পরদিন সকালে ভার্সিটির একটা ক্লাস ছিলো। সেটা মিস দিলো। অবশ্য ভার্সিটির ক্লাস মিস দেওয়ার রেকর্ড নেই তেমন তার। সে তার সেকশনের সিআর, তবুও আজ অকারণে ভার্সিটি গেলো না। দুপুর থেকেই কি পরবে, কি পরবে না এইটাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। সমুদ্র কোথায় নিয়ে যাবে তা অন্তত বলে দিলে ভালো হত। পরবর্তীতে একটা মেরুন রঙের সালোয়ার কামিজ জড়ালো গায়ে। কেন যেন এই জামাটা আজ পড়তে মন চাচ্ছিলো। এরপর চুল বাঁধতে বসলো। আগে কোনোদিন সে সাজ-সরঞ্জামে এতো সময় দেয় নি৷ ইদানীং কি যে হচ্ছে তার সঙ্গে! সুন্দর করে সাজতে মন চায়। সাড়ে তিনটার মধ্যে সাজা শেষ করে, হালিমা খালার সাহায্য সমুদ্রের দেওয়া নাকফুল পড়ে। ব্যথাও পায় বেশ। তারপর দাদী সরিষার তেলের সঙ্গে রসুন-কালোজিরা গরম করে তার নাকে মালিশ করে কয়েক মিনিট৷ ঠিক চারটা বাজে সমুদ্রের কল আসে৷

ফোন ধরতেই বলে, ” নিচো আসো জলদি। রেডি তো তাই না? না মানে তোমরা মেয়ে মানুষ সাজতে বসলে তো আবার ঘঁড়ির কাটা মানো না।”

আয়না বলে উঠে, ” আসছি।”

সে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে দাদা-দাদীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

গাড়ির গ্লাসে টোকা মারতেই সমুদ্র বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। আয়না সীটে বসলো। সমুদ্র দু’পল থমকালো। ওকে আজ একটু বেশিই অন্যরকম সুন্দর লাগছে কি? কোনো কারণে অতিরিক্ত রূপবতী? নাকি চোখের ভ্রম!

আয়না খোলা গ্লাসের দিকে ঝুঁকে এসে বলে, ” কি হলো?”

সমুদ্রের ধ্যান ভঙ্গ হয়, সে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে। মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে, আয়নাকে কেন আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে?

আয়না বলে, ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

–” নারায়ণগঞ্জ।”

–” কিহ! এতোদূরে?”

–” দূরে কোথায় ড্রাইভিং ডিস্টেন্স দেড়ঘন্টা মাত্র!”

আয়নাকে বড় বিচলিত দেখালো। নিশ্চয়ই গণ্ডির রেঞ্জ তার বাড়ির আশপাশে, রেঞ্জের বাইরে যাওয়ার পারমিশন পায় নি কখনো।

সে বলে উঠে, ” তোমার দুই অভিভাবক-ই জানে, যে তুমি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছো। তাহলে অসুবিধে কী?”

–” দুইজন অভিভাবক কে কে?”

–” আমি আর তোমার আব্বু।”

–” আপনি অভিভাবক? ”

–” আলবত! ”

আয়নার যেন দুশ্চিন্তা তবুও যায়নি। জীবনে প্রথম সে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছে৷ প্রস্তুতিও নেই কোনো। ভেবেছিলো ধানমণ্ডি বা গুলসানের কোথাও যাচ্ছে। কিন্তু এতোদূর নিয়ে আসবে ভাবতে পারেনি৷ পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে খায় সে। এরপর হেলান দিলো।

সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” খারাপ লাগছে?”

–” নাতো।”

–” ভালোও তো মনে হয় না লাগছে?”

আয়না হেলান দিয়ে থেকেই বললো, ” লাগছে। জানালা খুলে দিলে, প্রাকৃতিক বাতাস পেলে আরোও ভালো লাগবে৷”

সমুদ্র এসি অফ করে দিয়ে জানাল খুলে দিলো। ওয়েদার খুব সুন্দর আজ। বিকেলের দিকে রোদ কমে গেছে। হাই স্পীডে গাড়ি চলছে। হুহু করে বাতাস ঢুকছে। কেমন আরাম লাগতে থাকে। পনের মিনিটের অন্তর ঢাকা ছেড়ে তারা এগিয়ে যেতে লাগে গন্তব্যস্থলে৷ জ্যাম আজকে কম কেন জানি। খুব একটা সময় অপচয় হচ্ছে না।

রাস্তার দুই’ধারে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ চোখে পরে। সমুদ্রের নজর যায় আয়নার উপর। বেচারা ফের অস্থিরতা করছে। হাতে হাত মোচড়া-মুচড়ি করছে। আধা ঘন্টায় সম্পূর্ণ পানির বোতল শেষ করে ফেলেছে। মুখ ফুটে বললেই পারে ওয়াশরুম যাবো। সমুদ্র আনমনে হাসে।

সমুদ্র বলে, ” কোথাও গাড়ি থামিয়ে ফ্রেশ হয়ে চা খাই?”

আয়না যেন এহেন প্রস্তাবে খুশি হয়ে যায়। চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক খেলে যায়৷

সে বলে উঠে, ” এই এই সামনের দোকানটায় থামান৷ ”

সমুদ্র কিঞ্চিৎ হাসলো। আগে এদিকে এতোটা খাবার দোকান ছিলো না। তবে আজকাল অনেক রেস্তোরাঁ খুলছে। তারা দোকানের সামনে গাড়ি পার্ক করে। ভেতরে মানুষ-জন আছে গুটিকয়েক। আয়নাকে নিয়ে টেবিলে বসতেই মেন্যু কার্ড দিয়ে গেলো৷ কিন্তু আয়নার চোখ গেলো দোকানের পাশ ঘেঁষে বড় কালো কড়াইয়ে তেলে ভাজা বেগুনি-পিঁয়াজুর দিকে। তার মোটেও নুডুলস, শর্মা খাওয়ার ইচ্ছা নাই৷ ওই তো গরম-গরম পিঁয়াজু আর আলুর চপ চাই তার!

সে দোকানের ছোট ছেলেটাকে বলে উঠে, ” ওই ভাজাপোড়া গুলো আনো। আর দুই কাপ চা। মালাই চা। বেশি করে সর দিবে। কেমন? ”

— ” আচ্ছা আপা।”

সমুদ্র অবাক চোখ তার দিকে তাকায়। আয়না তাকে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আসতে আসতেই দুই প্লেট ছোট ছোট পিয়াজু, আলুর চপ আর বেগুণি দিয়ে গেলো। আয়না ছোট ছোট ফুঁ দিয়ে মজা করে পিঁয়াজু খেলো। তাকেও বার কয়েক সাধলো।

সমুদ্রের ধারণা ছিলো এসব রাস্তার দোকানের সস্তা তাও ভাজাপোড়া খুব বাজে হয় খেতে! কিন্তু ওর জোড়াজুড়িতে মুখে দেওয়ার পর ধারণা পালটে যায়। ভাজাপোড়াও যে এতো সুস্বাদু হয় তার একদম অজানা ছিলো। সে খাওয়ার ফাঁকে আয়নাকে দুইবার দেখে নিল। কি মজা করে খাচ্ছে! ওর খাওয়া দেখেই তার খেতে মন চাইলো আরোও।

চা দিয়ে যাওয়ার পর সমুদ্র বলে, ” চল বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাই। খোলা বাতাসে।”

আয়নার যেন প্রস্তাব খানা ভারী মনে ধরে। সে কাপ হাতে বাইরে চলে যায়। সমুদ্র নিজেও যখন আসে, তখন বিকেলের শেষভাগ। রোদের ছিটেফোঁটা নেই বললেই চলে৷

আয়না তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” ওরা যদি ভাবে আমরা বিল না দিয়েই ভেগে যাবো? বিল চোর ভাববে কী?”

–” তা কেন ভাববে? বিল তো দিবোই।”

আয়না চায়ের কাপে চুমুক দিলো। সমুদ্রের খেয়াল হলো ওর নাকে তার দেওয়া হীরার নাকফুল জ্বলজ্বল করছে। এতোক্ষণ সময় লাগলো কেন তার, এটা পর্যবেক্ষণ করতে?

আশেপাশে কোথাও বোধ করি কাশবন আছে। বাতাসের তোপে কাশবন থেকে কাশ ফুলের ক্ষুদ্র কণাসমূহ উড়াউড়ি করতে করতে এদিকেও পৌঁছে গেছে৷ ওগুলো দেখতে একদম সাদা প্রজাপতির মতোন! কেমন বেখেয়ালি ভাবে উড়াউড়ি করছে! কাশফুল গুলোর মতো যদি মনের দুয়ার খুলে বহুদূর, অনেক দূরে বেদনাগুচ্ছ উড়ে যেত!

বাতাস বইছে। রিকশার ক্রিংক্রিং আওয়াজ কানে ভাসছে। আয়নার চুলের খোপা খুলে যায়। এলোমেলো চুলগুলো বাতাসে আরো এলোমেলো হলো। কোথা থেকে যেন পেঁজা তুলোর মতো নরম কাশ ফুল এসে আয়নার চুলে আটকা পড়ে। সমুদ্র চোখ সরাতে পারে না ওর দিক থেকে।

আয়না বলে, ” থ্যাঙ্কিউ এতো সুন্দর একটা বিকেল উপহার দেওয়ার জন্য। আই লাইকড ইট সো মাচ্।”

সমুদ্র ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বলে উঠে, ” আজ তোমায় খুব সুন্দর লাগছে৷ ”

আয়না যেন এহেন প্রশংসায় খুশিতে আটখানা হলো। আবেগে অতিরিক্ত পর্যায়ে আপ্লূত হয়ে সমুদ্রের পকেট ধরে টানাটানি করে বলে, ” তাই?”

সমুদ্র ওমন টানাটানির তোপ সামলাতে না পেরে একটু ঝুকে পড়ে এরপর বলে, ” এইজন্য তারছিড়াদের বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই৷ প্রশ্রয় দিলেই মাথায় উঠে নাচানাচি করে!”

আয়না চোখ গরম করে বললো, ” তারছিড়া? আপনি আমাকে তারছিড়া বললেন?”

–” তো? রাস্তায় কেউ এভাবে কারো শার্ট ধরে টানাটানি করে? দেখেছো কখনো?”

–” ওতোসব খেয়াল ছিলো না জন্য ভুলে।”

–” তারছিড়াদের ই আশপাশের খেয়াল থাকে না।”

আয়না ভীষণ রাগ হলো। সে অতিরিক্ত খুশি হয়ে নাহয় একটু শার্ট ধরে টান-টাই মেরেছে এতে এতোবার তাকে তারছিড়া বলে হেনেস্তা করা লাগবে? আরে টান মারার ফলে শার্ট তো আর খুলে পড়েনি!

সে রাগী চেহারা নিয়ে শব্দ করে গাড়ির উপর চায়ের কাপ রেখে বললো, ” আমি চললাম।”

সমুদ্র তখন চায়ে শেষ চুমুক দিচ্ছিলো। ওর কথা শুনে লাফিয়ে উঠে বলে, ” কই?”

–” ঢাকায়। আমার বাসায়। আমি আপনার সঙ্গে আর যাচ্ছি না। মিষ্টার ডাস্টবিন সর‍্যি মিষ্টার সাদবিন আপনি একাই যান।”

সমুদ্র ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো এরপর কেবল জিজ্ঞেস করলো, ” কিন্তু ঢাকায় যাবে কীভাবে?”

এতেই আয়না আরোও ক্ষেপে গেলো। সে হাত উঠিয়ে একটা বাস থামালো। এদিকটায় বাস যাতায়াত করে অনেক। বাসও সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় যাত্রী নেওয়ার আশায়৷ সমুদ্র ঘটনা বোঝার আগেই যা হওয়ার ঘটে যাচ্ছে। আয়না দ্রুত পায়ে বাসে উঠে যাচ্ছে৷ তাও যদি বাসটা ঢাকাগামী হতো দুশ্চিন্তার কারণ ছিলো না। ঢাকা গিয়েই পৌঁছাবে৷ কিন্তু এই বাস ঢাকা বিমুখী৷ কোনদিকে যাবে তাও লেখা আছে কিন্তু ম্যাডামের ওসব পড়ার টাইম কোথায়?

সমুদ্র দ্রুত এক প্রকার দৌঁড়ে আয়নাকে বাস থেকে নামালো। এতে কন্ট্রাক্টর বেশ রেগে যায়। বিরক্ত হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকায়।

সমুদ্র বললো, ” আমার বউ ভুলে ভুল বাসে উঠে গেছে। দেখে নি বাস কোনদিকে যাবে৷”

বাংলাদেশের লোকাল বাসের কন্ট্রাক্টরদের চেহারায় সবসময়ই একটা বিরক্তি ভাব লেগে থাকে। ওনারা মনে হয় পৃথিবীর সবকিছুর উপর ভীষণ রকম বিরক্ত থাকে।

লোকটা বললো, ” হেতিরে সামলাতে পারেন না তো মাঝ রাস্তায় আনছেন ক্যান? ওস্তাদ আগে নেন।”

বাস সাইসাই করে তাদের রেখে চলে গেলো। সমুদ্র মনে মনে বলে, ” হেতিরে সামলাতেই তো জান বেরিয়ে যাচ্ছে!”

এরপর আয়নাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে৷ বিল মিটিয়েই সোজা গাড়ি টান মারে। গাড়ি একদম গন্তব্যে এসে থামে। ঢাকা শহর থেকে দূরে, নিরিবিলি স্থানে একটা বাংলো টাইপ বাসা৷ একদম সিনেমায় দেখানো ফার্মহাউজ যেন।

আয়না এতো সুন্দর বাসা দেখে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” এটা কার ফার্মহাউজ?”

–” শায়লা আন্টির।”

উত্তর শোনামাত্র আয়নার মুখ থেকে খুশি কর্পূরের ন্যায় গায়েব হয়ে যায়৷

চলবে।

#ইলেকট্রিক্যাল_মন
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–16

বাড়িটা কিছুটা পুরোনো আমলের ধাঁচে তৈরি করা। কোথায় যেন একটা রাজকীয় ভাব বিদ্যমান কিন্তু সহজেই ধরা যায় না ঠিক কোথায় রাজকীয় ভাব। একতলা বাসাটার বাউন্ডারির পাশ ঘেঁষে পরপর তিনটে তালগাছ। তারা প্রবেশ করতেই একটা শালিক উড়ে এসে দেয়ালে বসে কিচিরমিচির করে ডাক পাড়ে।

সমুদ্র বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি রেখে দরজায় কড়া বাজায়। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে দরজা খুলার শব্দ কানে আসে। আয়না মুখ ভোতা করে রেখেছে। যদি জানতো নারায়ণগঞ্জ তারা শায়লা চৌধুরীর ফার্মহাউজে আসবে তাহলে রাজীই হতো না। তবুও মনে প্রশ্ন রয়ে যায় সমুদ্র কীভাবে শায়লা আন্টিকে চেনে? সে চেনে কারণটা বিশাল বিস্তৃত। কিন্তু সমুদ্র চিনে কীভাবে? নানা চিন্তারা একে একে মাথায় জট পাকিয়ে ফেলে, ওমন সময় শায়লার কণ্ঠস্বর শোনা যায়।

–” কি হলো আয়ু? ভেতরে আসো।”

আয়নার ধ্যান ভঙ্গ হলো। ইতিমধ্যেই সমুদ্র ভেতরে প্রবেশ করেছে। সে এক পা এগুতেই শায়লা সুন্দর করে হাসি দিলো। সে প্রত্যুত্তরে নিশ্চুপ থাকে। সমুদ্রের পানে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে ও বেশ সহজ এ পরিবেশে। আরাম করে বেতের সোফাটায় পা এলিয়ে দিয়েছে৷ ড্রাইভিং করে বোধহয় কিঞ্চিৎ ক্লান্ত।

আয়না এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সমুদ্র একবার তার দিকে তাকায় এবং ইশারায় বসতে বলে। কিন্তু আয়না যে কোন ভাবনায় ছিলো খেয়াল করে না। কারো হ্যাচকা টানে ওর সম্মোহন ফিরে। মুহুর্তের সে সমুদ্রর পাশে নিজেকে আবিষ্কার করলো। তাদের মধ্যে দূরত্ব এক ইঞ্চিও না।

সমুদ্র তখনো তার হাত ধরে রেখেছে। চোখ বুলিয়ে আশেপাশে তাকালো আয়না। ওইতো শায়লা চৌধুরী তাদের দুইজনের কাণ্ড দেখে হেসে সরে গেলেন। আয়নার এতো বেশি লজ্জা লাগলো। ছেলেটা এতো বেশি আক্কেল-জ্ঞানহীন কেন? বেশরমও মনে হয়! লাজ নেই একদম। ধ্যাত ভালো লাগে না।

সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে, ” কি হলো? কি বিড়বিড়িয়ে বলছো?”

–” কিছু না।”

–” মনে হলো আমাকেই কিছু বললে?”

আয়না একদম পাত্তা দিলো না। সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য সোফায় গিয়ে বসে। উনি বোধহয় খানিক হতবুদ্ধি হয়ে যায়৷ আয়না চোখ বুলিয়ে ড্রয়িংরুমটা দেখলো। একদম বাঙ্গালীয়ানার ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ যেন!

শায়লা চৌধুরী ফিরে এসে বলে, ” এই যে নিউলি ম্যারিড কাপল, ফ্রেশ হবে নাকি নাস্তা সাজাবো?”

আয়না বলে উঠে, ” ফ্রেশ হবো।”

যেন ও সবকিছু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। আয়নাকে বাম পাশের একটা রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো। ও ফ্রেশ হয়ে দশ মিনিট পর রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে-ই পিলে চমকে উঠে। ওর বাবা বসে আছে সোফায়। বাবা ওদের দুইজনের সঙ্গে বেশ হাসি মুখে গল্প করছেন। আচ্ছা সমুদ্র কী সবটা জানে? শায়লা আন্টির সাথে তার বাবার সম্পর্কের কথা? আয়নার মন ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। তাহলে উড়ো খবরটাই সঠিক? অবশ্য যা রটে তা ঘটে কিছু-মিছু। তবে সে মানে না। যতোদিন না বাবা নিজ মুখে না বলবে সে মানবে না৷

শায়লা আন্টি কি সুন্দর কথা বলছে সমুদ্রের সঙ্গে ।

সমুদ্র বলে উঠে, ” আন্টি আপনি দিন-দিন ইয়ং হচ্ছেন৷ আপনার সৌন্দর্যের রহস্য কী?”

আয়নার তখন এতাও রাগ উঠলো। সে দ্রুত ওই রুমে ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে বাকি তিনজন সামান্য ভড়কে উঠে। ফাহাদ সাহেব আস্তে করে ডেকে বলে, ” আয়ু কী হলো মা?”

আয়না একদম শুনলো না সে ডাক। সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” আমি দেখছি। আপনারা বসেন।”

ওই রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই দেখলো সে রাগে গজগজ করছে। ওকে আসতে দেখে আয়না একপ্রকার হামলে পড়ে সমুদ্রের উপর। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” আপনি তো খুব ধুরন্ধর মানুষ! ”

–” আমি আবার কী করলাম?”

–” ওই যে সুন্দরী মহিলার সঙ্গে ফ্লার্টিং করছিলেন? আচ্ছা সব মাঝবয়েসী সুন্দরী মহিলার কাছে আপনি সুন্দর থাকার ফর্মুলা চেয়ে বসেন কীনা?”

সমুদ্র ওর লাল হয়ে আসা নাকটার দিকে তাকিয়ে হোহো করে হেসে ফেলে। এরপর বলতে ধরে পাগল একটা কিন্তু ক্ষণেই বোবা হয়ে যায়। ফের কোন নাটক করবে কে জানে?

–” হাসছেন কেন? যা যা সুন্দরী মহিলার কাছে যান।”

–” সেজন্য-ই তো এলাম এখানে।”

কেমন ঘোর লাগা কণ্ঠে কথাগুলো বললো সমুদ্র।

আয়না চুপ বনে যায় এবং উলটো ঘুরলো যেন ওনার চেহারা দেখতে নাহয়। সমুদ্র ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” সুন্দরী তো আমার বউ।”

–” ছাড়ুন বলছি।”

–” আজব! কেন?”

–” একদম ধান্দাবাজি করবেন না।”

আয়না জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। সমুদ্রের মেজাজ খানিকটা খারাপ হয় তবুও চুপ থেকে বললো, ” একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিলো।”

–” বলুন।”

–” ছাদে যাই?”

–” এটাই আপনার জরুরি কথা?”

–” না।”

এরপর আয়নাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্য বের হয়। তখনো ফাহাদ সাহেব আর শায়লা একসাথে বসে কথা বলছিলো। আয়নার মনে হলো সে একটা গরু! কেমন গরুর মতো টানছে তাকে! তাছাড়া নিজেকে তার গরুর মতো বোকাও লাগছে। নাহলে এতোসময় লাগলো বুঝতে বাবা কেন এসেছেন?

ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো দুইজন। আয়না চোখ-মুখ খিঁচে কিছুক্ষণ সবুর করে রাগ নিয়ন্ত্রিত করে। সমুদ্র তাকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দেয়।

এরপর বলে, ” ফাহাদ আংকেল শায়লা আন্টিকে বিয়ে করেছে৷”

আয়না বেশ খানিকটা চমকে উঠে ভেতরে ভেতরে তবে অভিব্যক্তিতে প্রকাশ করে না৷ তবে, তবে চোখের কোণে পানি এসে ভীড় জমালো।

সমুদ্র তার দুইগালে হাত রেখে বললো, ” কাঁদার কি আছে? এটা খুব নর্মাল না?”

–” নর্মাল?”

–” হ্যাঁ! সবারই তো একটা সুন্দর-গোছানো জীবন যাপন করার রাইট আছে?”

আয়না কিছু বলতে পারলো না। কেবল সমুদ্রের বুকে আঁছড়ে পড়ে কান্না আরম্ভ করলো। সে কিছুক্ষণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। কাঁদতে কাঁদতে আয়নার বুঝি হিচকি উঠে যাবে৷ অতীতে বিচরণ করলো, শায়লা আন্টির সাথে পরিচয় অনেক আগে থেকেই। মিসেস রোদেলার সঙ্গে ব্যবসায়ীক সূত্রে পরিচয় হলেও একটা সময় ফ্যামিলি ফ্রেন্ড হয়ে যান উনি। মহিলার অল্প বয়েসে বিয়ে হয়। এরপর শ্বশুড়বাড়ি থেকে অত্যাচারিত হন। স্বামীভাগ্য ভালো ছিলো না।বিভিন্ন এনজিও তে কাজ করেন, থার্ড পার্টি হিসেবে নানারকম কাজে ইনভলভ হয়ে এখন নিজেই ব্যবসা করছে। উদ্যোক্তা তিনি। তবে সমুদ্রের সঙ্গে ওনার সম্পর্ক অস্ট্রেলিয়া থেকে ভালো হয়। মহিলা প্রায়ই যেত অস্ট্রেলিয়া৷ অস্ট্রেলিয়ায় গেলেই নানারকম মজার খাবার রান্না করে সমুদ্রের ডর্মে পৌঁছে যেতেন৷ সমুদ্রের ধারণা তার আর ইউশার রিলেশনশিপের ব্যাপারে মাকে শায়লা আন্টিই তথ্য দিয়েছিলো। তবুও শায়লা চৌধুরীর কাছে সে কৃতজ্ঞ। উনি অনেক বড় একটা উপকার করেছে। দূর ভীনদেশে সমুদ্র যখন ভঙ্গুর অবস্থায় ছিলো, উনি এসে যত্ন নিতেন! শায়লা আন্টি একবার বলেছিলো, দ্বিতীয় দফায় ওনার যে ভদ্রলোকের সঙ্গে সম্পর্ক, তারা কোর্ট ম্যারেজ করতেন সব ঠিকঠাক, কিন্তু ভদ্রলোকের বড়মেয়ে নাকি একদম রাজী না। বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনেই কান্নাকাটি, বাবার সঙ্গে জেদ করে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে অসুস্থ হয়েছে৷ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন একবার! এজন্য কোর্ট ম্যারেজ হলো না। সবটা আটকে আছে।

এসব আরোও অনেক আগের কথা। এরপর তো সমুদ্রের নিজের জীবনেই ঝড় এলো। ঝড়ে ভাঙ্গা বৈঠা নিয়ে ফিরে আসে দেশে। অন্যদের কথা স্মরণ থাকে না। পরবর্তীতে ভাগ্যের আজব বিবর্তনে ভদ্রলোকের আদুরে জেদী মেয়েটা তার ঘরের বউ হলো! যতোদিনে জেনেছে তখন বিয়ের কথা পাকা হয়ে গিয়েছে। আর তাদের বিয়ের মূল ঘটক তো শায়লা চৌধুরী-ই। উনি সমুদ্রর জন্য আয়নার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সমুদ্র সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বললো, ” এই আর কতো কাঁদবা? আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে তো!”

আয়না একবার চোখ তুলে তাকায় এরপর আবার সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে। সমুদ্র বলে, ” তুমি চাইলে আমাকে ফ্রেন্ড ভাবতে পারো। আমি বন্ধু হিসেবে দারুণ! ”

আয়না এবার মাথা তুলে তার দিকে চেয়ে থেকে বলে, ” ফ্রেন্ড!”

–” চাইলে।”

–” চাই তো!”

সমুদ্র বলে উঠে, ” জানি তোমার খারাপ লাগছে বাট সবাইকে একসময় মুভ অন করতে হয়। ”

–” আমাকে বড় চাচা বাবার বিয়ের খবর আগেই দিয়েছিলো কিন্তু বাবা মুখে কিছু বলছিলো না জন্য আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না।”

–” তাহলে এতো কান্নাকাটি করলে কেন? আগে থেকেই তো জানতে! ”

— একবার কান্না শুরু করলে, আমি চাইলেও কান্না থামাতে পারি না। ”

সমুদ্র আয়নার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, ” শায়লা আন্টি খুবই ভালো মনের। জীবনে অনেক দুঃখ পেয়েছে। এখন সেও সুখে থাকতে চায়। যে যেভাবে চায় তাকে সেভাবে থাকতে দেও। বাঁধা হয়ো না।”

আয়নার এবার আর এতো রাগ-ক্ষোভ লাগছে না। সত্য বলতে বাবার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মিসবিহেইভ করার পর সে মনে মনে অনুতপ্ত ছিলো। একবার মনেই হয়েছিলো বাবাকে বলবে ফের শায়লা আন্টির সাথে যোগাযোগ করতে। ও হ্যাঁ, আয়না আবার বাবাকে জেদের বশে বলেছিলো ওনার সাথে যেন কথা না বলে।

সে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো, ” আমার আর এখন একবিন্দু খারাপ লাগছে না।”

আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় সমুদ্রের আচরণ বেশ নরম মনে হলো ওর। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো নিজ থেকে। আয়না একবার সমুদ্রের চোখের দিকে তাকায়।ওমন নীলচে মণির দিকে তাকালে মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আচ্ছা উনি এতো হ্যান্ডসাম কেন?

সমুদ্র জিজ্ঞেস করে, ” আমায় এমন ফ্যালফ্যাল করে দেখছো কেন?”

প্রশ্নের তোপে পড়ে সে লাজুক হাসে এরপর হুট করে জিজ্ঞাসা করে, ” আপনি যে এতো হ্যান্ডসাম? তাও অস্ট্রেলিয়া ছিলেন, আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো কখনো?”

এহেন প্রশ্নে যেন সমুদ্র ভড়কে যায়। কেমন ভয়ার্ত চোখে একবার তাকালো। এরপর এক কদম পিছিয়ে যায়। আয়না বুঝে পায় না ওনার আবার কী হলো?

সমুদ্রের ভেতরকার সকল নম্রতা কই জানি হারায়, সে কঠিন সুরে বলে, ” এসব কেমন প্রশ্ন আয়না? এই টাইপ কথা-বার্তা আমার পছন্দ না।”

–” আরে এতো রিয়্যাক্ট কেন করছেন? ফ্রেন্ড বললেন তাই জিজ্ঞেস করলাম। ফাজলামি করছি জাস্ট। ”

সমুদ্র কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে খানিক চুপ থাকে। বুঝতে পারে আয়নাও রেগে যাচ্ছে তাই খানিক গলার ভয়েজ কোমল করে বলে, ” এজন্য ছোটদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায় না৷ কি সব আজাইরা প্রশ্ন করে। চলো নিচে চলো।”

ছাদে তখন ছোট একটা ল্যাম্প লাইট জ্বলছিলো৷ কোথা থেকে জানি সাইকেলের হর্ণের আওয়াজ কানে আসছিলো। তারা নিচে ফিরে আসে। ফাহাদ সাহেব আর শায়লা চৌধুরী বুঝি তাদের অপেক্ষায় ছিলো। আয়নার মনে হলো সব পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে। ফার্মহাউজে এনে আয়নাকে সমুদ্রের মাধ্যমে তাদের বিবাহের খবরটা দিবে এমনই প্লান ছিল।

ফাহাদ সাহেবের পাশে গিয়ে আয়না বসলো। ফাহাদ সাহেব বলে, ” ডিনার করবে না তোমরা? আসার পর থেকে নাকি কিছু-ই খাও নি। এটা কেমন কথা? নতুন জামাইকে না খাইয়ে কেন রেখেছো?”

আয়না একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না বরং সুধালো, ” বাবা আমি তোমাদের অনেক বিরক্ত করি?”

ফাহাদ সাহেব অদ্ভুত ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকালো। তারপর বলে উঠে, “তুমি তো আমার লক্ষী মেয়ে। বিরক্তিকর কেন হবে? এমন প্রশ্ন কেন করলে?”

আয়না বলে, ” কিছু না। এমনি বাবা৷ ”

এরপর উঠে এসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আসুন, আপনাকে খেতে দিই।”

সমুদ্র নড়েচড়ে উঠলো। হলো কি এই মেয়ের? এতো স্বাভাবিক আচরণ! একটু আগেই কেঁদে বুক ভাসালো, না না কেঁদে শার্ট ভাসালো এখন আবার খুব নর্মাল বিহেইভ করছে?

সে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলে শায়লা চৌধুরী ই সব সার্ভ করে দেন। প্রত্যেকটা খাবার ই বাঙ্গালী খাবার। সমুদ্রের যেসব প্রিয়।

আয়না বলে, ” আমরা বেরুবো কখন?”

সমুদ্র ভাত খেতে খেতে বললো, ” আজকে এখানেই রাতে থাকবো।”

আয়না হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। তাদের রাত্রী যাপনের ও প্ল্যান ছিল অথচ তাকে কিছুই বলেনি। আয়না অল্প খেয়েই উঠে পড়ে। তাদের আজ থাকার জন্য বরাদ্দ করা রুমে চলে যায়। ফাহাদ সাহেব একটু আগেই খেয়েছেন জন্য উনিও রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন৷

সমুদ্র উঠে পেছনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। শায়লা একবার সমুদ্রের পানে তাকালো। উনি জানেন সমুদ্র এখন সিগারেট খাবে। ছেলেটা ভীষণ ভদ্র– মানুষের সামনে সিগারেট খায় না। উনি হাতের কাজ সেড়ে একটা সুতির সাদা-নীল মিশেলে টাই-ডাই করা শাড়ি হাতে নিয়ে আয়নার রুমে ঢুকে।

এরপর জিজ্ঞেস করলো, ” আয়ু আসবো?”

আয়না বলে, ” আসেন।”

সে চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকার। এমন মেন্টাল প্রিপারেশন-ই নিয়েছে৷ এখন আর যুদ্ধ বা ঝগড়া করে লাভ নেই কেবল অশান্তি বাড়বে। আর সে অশান্তির বিপক্ষে। চাইলেও আর কিছু হবে না। তাই মেনে নেওয়াই উত্তম। তাছাড়া সমুদ্রের সামনে সে চায় না কোনো সিনক্রিয়েট করতে।

শায়লা এসে শাড়ি দেখিয়ে বলে, ” এটা পড়ো। তোমার সালোয়ার কামিজ টা যে গর্জিয়াস, গরম লাগছে না? শাড়ি একা পড়তে পারো তো?”

আয়না বলে, ” না। হেল্প লাগে।”

–” আসো আমি হেল্প করি।”

শায়লা চৌধুরী খুব সুন্দর করে ওকে শাড়ি পড়িয়ে দেন। আয়নার নিজেকে দেখে মনে হয়, শুভ্র মেঘের ভেলা যেন!

শায়লা চৌধুরী অল্প করে সাজিয়ে দেয় ওকে৷ এরপর বললো, ” তারপর সমুদ্র সাহেব কে তোমার বর হিসেবে কেমন লেগেছে? ”

আয়না দু’পল ভেবে বলে, ” একদম অসভ্য আর বেয়াদব।”

আসলে সমুদ্রের ব্যাপারে ভালো কথা মুখ দিয়ে বের হয় না। আপনা-আপনি বেয়াদব তকমা লাগাতে ইচ্ছে করে। যে লজ্জা দিয়েছে অফিসে একবার! তবে বুঝে ফেলে কথাটা বলা ঠিক হলো না৷

শায়লা চৌধুরী হতভম্ব হয়ে চেয়ে রয়। এরপর মৃদ্যু হেসে বলে, ” তোমরা এ’যুগের মেয়েরা ভীষণ এডভান্সড তো!”

____________________

সমুদ্র দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে। রাত হলে বড্ড ধোঁয়ার নেশা চেপে বসে মাথায়। শহরের বাইরের দিকে রাত গুলো কেমন নিস্তব্ধ। নিরিবিলি। গতদিন বৃষ্টি হওয়ায় কোথায় পানি জমেছে সেখান থেকে ব্যাঙের ডাক কানে আসছে।

সারাদিনে ঘটে যাওয়া বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবে সে। এরপর একবার নিজেকে নিয়ে ভাবলো। অতীতের সকল কালোর সঙ্গে সংগ্রাম করে এগিয়ে তো এলো। এখন জীবনে কেবল বর্তমান বিদ্যমান। নতুন সম্পর্কটাকেও পুরাপুরিভাবে পরিপূর্ণ করতে চায় সে। ধীরপায়ে রয়ে-সয়ে তাদের রুমের দিকে আগায় সমুদ্র। রুমে আসতেই চোখ গেলো আয়নার দিকে। ও মিররের সামনে বসে কী যে করছে। আজ শাড়ি পড়েছে। শাড়ি পড়লে ওকে বেশ মানায়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থেকে সমুদ্র বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে বলে, ” তুমি কি এখন সাজতে বসবা?”

–” নাতো। এখন কেন সাজবো?”

–” সেটা তুমি-ই ভালো জানো। তোমরা মেয়েরা তো সারাদিন-সারারাত ওই আয়নায় নিজেকে দেখেই পাড় করে দিতে পারো।”

–” বাহ আপনি দেখছি মেয়ে নিয়ে অনেক জানেন।”

সমুদ্র দু’হাত প্রসারিত করে আরাম করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো যেন৷ এরপর আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি কী অনেক খারাপ নাকি?”

আয়না ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, ” কেন এমন প্রশ্ন?”

সমুদ্র তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, ” তাহলে এতো দূরত্ব কেন?”

আয়না চকিতে উঠে। এরপর হুট করে তার হাতে টান লাগে। মুহুর্তের মধ্যে সমুদ্রের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করলো। ওর কেমন আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সমুদ্র আস্তে করে ওর কাঁধে পড়ে থাকা চুল গুলো নিয়ে খেলা শুরু করে। কেমন শিহরণ বয়ে যায়। ওর শ্বাস-নিশ্বাস ঘণ ও গভীর হতে লাগে। হৃদস্পন্দনের গতি ক্রমশ পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায়। কেঁপে-কেঁপে উঠে সে। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই বুঝতে পারে সমুদ্রের মন আর হাত আজ বড্ড চঞ্চল।

সমুদ্র আস্তে করে ওকে পাঁজাকোলে তুলে বিছানার বসে। আয়না আস্তে করে চোখ খুলতেই সমুদ্র ওর দু’চোখের পাতায় চু-মু খায়৷ ওনার খোঁচা খোঁচা দাড়ি এসে আয়নার গালে খুঁচতে থাকে। একটা হাত আয়নার হাতের আঙুলের ভাঁজে গুঁজে দেয়। আরেকটা হাত আজ বড্ড বেখেয়ালি! ওর ভারী নিশ্বাসের উষ্ণতা যেন আয়নার মধ্যকার সুপ্ত নারী বাসনাকে জাগিয়ে তুলে। সে ওনার শার্ট আকড়ে ধরে। সমুদ্র টাল সামলাতে না পেরর ধপ করে আয়নার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আয়নাকে খুব যত্ন করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ওর কপালের চুলগুলো বারবার উড়ে আসছিলো মুখের সামনে। সমুদ্র হাত দিয়ে তা সরিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁ’য়ায়। এবারে আয়না নিজ থেকে সমুদ্রের কপালে একটা চুমু খায়। কি ভীষণ আদুরে ছিলো সেটা। উনিও আবেশে চোখ বুজে ফেলে। ওনার নীলচে চোখের দিকে তাকাতেই আয়না যেন খেই হারায়।

আয়না ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে, ” আই লাভ ইউ সমু। লাভ ইউ সো মাচ্ মাই ওসেন।”

সমুদ্র সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেলে। ওর চেহারার রঙ পালটে যায় ক্ষণে। চোখ-মুখ শক্ত করে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে একপ্রকার চেচিয়ে উঠে বললো, ” এক কি বললে তুমি? কি নামে ডাকলে?

— ” সমু বলে! কেন কি সমস্যা?”

–” আমাকে আমার নামে ডাকবে। এসব সস্তা ফালতু জিনিস কই থেকে আসে মাথায়? সমুদ্র নাম আমার। হাউ ডেয়ার ইউ? প্লিজ আউট ফ্রম হেয়ার। জাস্ট বিরক্ত লাগছে তোমাকে। বের হও এখনি প্লিজ। চেহারা দেখতে চাইছি না তোমার।”

আয়না তবুও ওর হাত ধরলে, এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয়।

চলবে।