#উইন্টার_এন্ড_মাই_সনেট
#লেখা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
|| পর্ব-০৯ ||
বাজারের ব্যাগ হাতে আতকিয়া জাহানের পিছু পিছু হাঁটছে অরুণিকা। আতকিয়া জাহানের হাতে একটা মাছের ব্যাগ। আর অরুণিকার দু’হাতে দু’ব্যাগ সবজি। বাজারের ব্যাগ ভারী হওয়ায় একটু পরপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অরুণিকা। আর ব্যাগগুলো মাটিতে রেখে একটু ঝিরিয়ে নিচ্ছে। আতকিয়া জাহান পিছু ফিরে অরুণিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে বললেন, “তোমার গায়ে কি জোর নেই? তাড়াতাড়ি পা চালাও। বাজারটাও করতে পারো না? বাড়ির কাজগুলোও আমি করি, বাজারও আমি করি। তোমার মামা তোমাকে বিয়ে দেবেন কীভাবে? কে বিয়ে করবে এমন নিষ্কর্মা কে?”
অরুণিকা আশেপাশে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো। রাস্তার পাশেই পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেঁষে হাঁটতে হয়। রাস্তা ছোট। গাড়িও চলে, আবার মানুষও হাঁটে। পুকুর পাড়টাও ছোট, পিচ্ছিল। অরুণিকা সাবধানেই হাঁটছে। হঠাৎ সামনে থেকে একটা মধ্য বয়ষ্ক লোক অরুণিকার পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে গেলো। অরুণিকা ভারসাম্য হারিয়ে সবজির ব্যাগসহ পুকুরে পড়ে গেলো। শব্দ শুনেই আতকিয়া জাহান পেছন ফিরে দেখলো অরুণিকা পুকুরে ধাপাধাপি করছে। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “এই মেয়ে তো কোনো কাজের না। হাঁটতে গিয়েই আছাড় খায়। এই উঠে আসো।”
অরুণিকা সাঁতার জানে না। তবুও সে ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরুণিকা চেঁচিয়ে বলল, “মামী, আমাকে উঠাও। আমি উঠতে পারছি না।”
আতকিয়া জাহান আঁতকে উঠলেন। বিড়বিড় করে বললেন, “এই মেয়ে বলে কি? সাঁতারও জানে না? শাহবাজ তো আমাকে মেরে ফেলবেন।”
অরুণিকা এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। রাস্তার মানুষজন হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। কে পানিতে নামবে ওইটা সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই পানিতে কিছু পড়ার শব্দ হলো। শেষমেশ অরুণিকাকে বাঁচাতে কেউ একজন নামলো। সবার হৈচৈও এবার কমলো। অরুণিকা এখনো ধাপাধাপি করছে। হঠাৎ সে অনুভব করলো তার হাতটা কেউ একজন ধরেছে। চোখটাও ভারী হয়ে আসছে তার। পাশ ফিরে তাকানোর শক্তিটুকুও নেই। হঠাৎ টান পড়লো তার হাতে। পানিতে ঢেউ খেলে গেলো সাথে সাথেই। কেউ একজন তাকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে। অরুণিকা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। পানি খাওয়া থেকে মুক্ত হয়েছে এই স্বস্তিতেই চোখ বন্ধ করলো সে। এবার কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। শিউরে উঠলো অরুণিকা। চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখে নিষ্কম্প দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মানুষটির কপাল ছুঁইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নাকের ডগায় জমেছে পানির বিন্দু বিন্দু কণা। ভেজা চুল বেয়ে বেয়ে জলধারা তার ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করছে। ঠোঁট চেপে সেই জলের ধারা থেকে নিজের জিভ বাঁচাচ্ছে সেই মানুষটি। এবার সেই জলধারা গড়িয়ে স্থান করে নিলো মানুষটির শ্মশ্রুতে। রোদ ঠিকরে পড়ায় শ্মশ্রুতে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল মুক্তোর দানার মতো জ্বলজ্বল করছে। অরুণিকা এতোক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিন্দু বিন্দু পানির প্রবাহ দেখছিল। এবার অরুণিকাকে কোলে নিয়ে উঠে আসলো আহনাফ। পাড়ে উঠে আসতেই আতকিয়া জাহান বার কয়েক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন আগন্তুকটির দিকে তাকিয়ে। আহনাফ অরুণিকার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করে বললো, “কোলে করেই কি তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে?”
অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। আতকিয়া জাহান অরুণিকার বাহু জোরে চেপে ধরতেই ব্যথায় তার কপাল ভাঁজ হয়ে গেলো। আহনাফ আতকিয়া জাহানের হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে অরুণিকার কুঁচকে যাওয়া মুখের দিকে তাকালো। এদিকে অরুণিকা আতকিয়া জাহানের চোখের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে নেমে পড়লো আহনাফের কোল থেকে। এরপর আশেপাশে তাকিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। পানিতে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে তার গোলাপী টপসটা। অরুণিকা কাঁপা কন্ঠে বললো, “মামী একটা রিকশা ঠিক করো তাড়াতাড়ি।”
আতকিয়া জাহান চোখ ছোট করে বললেন, “আমাকে হুকুম দিচ্ছো তুমি? আমার দুই ব্যাগ বাজার পুকুরে ভাসিয়ে দিয়েছো। এই মাসের সবজি বাজার শেষ। কপাল পুড়লো আমার। তোমার মামা গুনে গুনে টাকা দেন আমাকে। এমনিতেই সব টাকা তো তোমার ফাইফরমাশে খরচ হয়ে যায়।”
অরুণিকা মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। আহনাফ পাশে দাঁড়িয়ে আতকিয়া জাহানের বকবক শুনছে। হঠাৎ সে খেয়াল করলো, অরুণিকার শরীরের ভাঁজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সে সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকালো। দেখলো অনেকেই অরুণিকার দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ এবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আতকিয়া জাহানের দিকে তাকালো। এরপর নিজের পরণের শার্টটির দিকে তাকিয়ে দেখলো, সেটা পুরোপুরি ভিজে গেছে। পাশ ফিরে দেখলো তূর্যও ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আছে আতকিয়া জাহানের দিকে। আহনাফ ইশারায় ডাকলো তূর্যকে। তূর্য ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি?”
আহনাফ অরুণিকার দিকে ইশারা করতেই তূর্য দ্রুত এসে তার গায়ের শার্টটা খুলে এগিয়ে দিলো অরুণিকার দিকে।
(***)
মুখের সামনে কালো শার্ট এসে থামতেই অরুণিকা মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো তূর্য শার্ট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। অরুণিকা সাথে সাথেই শার্টটি নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। তূর্যের এমন ব্যবহারে আতকিয়া জাহানের ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ হলো। তিনি অবাক হয়ে তাকালেন তূর্যের দিকে। তূর্যের গায়ে এখনো একটা টি-শার্ট আছে। টি-শার্টের উপরে প্রায়ই একটা শার্ট পরে সে। এটা তার স্টাইল। আতকিয়া জাহান কিছু বলতে যাবেন, তখনই আহনাফ বলল, “মেয়ে মানুষ। রাস্তায় এতোগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আপনার মেয়ের ভেজা শরীর দেখছে আর আপনি তাকে বকছেন? কেমন ইরেস্পন্সিবল গার্ডিয়ান আপনি!”
তূর্য পুকুরে ভাসমান রত বাজারের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি লিস্টটা আমাদের দিয়ে দেন। আমরা যা যা ভেসে গেছে, তা বাজার থেকে এনে আপনার বাসার সামনে রেখে আসবো।”
আতকিয়া জাহান চোখ ছোট করে বললেন, “এই তোমরা এভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে? আমার বাসার সামনে রেখে আসবে মানে কি?”
আহনাফ বলল, “আমাদের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলুন। আর আপনি অরুণিকার কে হোন?”
“এই, তুমি ওর নাম কীভাবে জানলে?”
আতকিয়া জাহান ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই মেয়ে, কোনো চক্কর টক্কর আছে না-কি তোমার এদের সাথে?”
অরুণিকা চাপা স্বরে বলল, “মামী, কি বলছো? আল্লাহর ওয়াস্তে বাসায় চলো।”
অরুণিকার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। লজ্জা আর অপমানে নুইয়ে পড়ছে সে। তূর্য আতকিয়া জাহানকে বলল, “আমাদের ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অরুণিকা। আমাদের বাসা আপনাদের এলাকাতেই। আমরা ওই ইউনিভার্সিটির স্যার।”
আতকিয়া জাহান চমকে উঠলেন। আমতা আমতা করে বললেন, “ছি! ছি! স্যার, আমি চিনি নি আপনাদের। আচ্ছা, আমি রিকশা দেখছি।”
আতকিয়া জাহান দ্রুত রিকশা ঠিক করে অরুণিকাকে নিয়ে উঠে বসলেন। এবার আহনাফ রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “বাজারের লিস্ট!”
“লাগবে না, স্যার।”
“এভাবে হয় না। প্রতিবেশি আপনারা। একই এলাকায় থাকি। বাসায় পুরুষ মানুষ নেই বলেই তো আপনারা বের হয়েছেন। লিস্ট দেন আমাদের, করে নিয়ে আসি।”
অরুণিকা আহনাফের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এদিকে আতকিয়া জাহানের মুখটা ছোট হয়ে গেছে। তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাজারের লিস্ট আহনাফের হাতে দিয়ে দিলেন। আহনাফ রিকশাওয়ালার পিঠে চাপড় মেরে বলল, “মামা, সাবধানে নিয়ে যাও ওদের।”
রিকশা সামনে চলতে শুরু করলো। অরুণিকা এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। আহনাফের এমন যত্নশীল হওয়াটা হজম হচ্ছে না তার। আতকিয়া জাহান অরুণিকাকে হালকা গুঁতো মেরে বললেন, “তোমার স্যাররা কি আমাকে খোঁচা দিয়ে গেলো? আমাকে নিয়ে কি ভাবছে কে জানে! তুমি উনাদের বলো, দোষ তোমার ছিল। তোমাকে সামনে সামনে হাঁটতে বলেছি, আর তুমি ধীরে ধীরে হাঁটতে গিয়েই তো পড়ে গেলে। মা’রা কি বকে না না-কি?”
অরুণিকা মামীর কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
(***)
রক্তাক্ত শরীরটা মাটি থেকে টেনে তুলে উঠে বসলো এক মধ্যবয়স্ক লোক। তার চোখটা ফুলে গেছে টানা আধা ঘন্টা বেধড়ক মার খেয়ে। তিনটা শক্তপোক্ত যুবক তাকে হুট করে রাস্তা থেকে তুলে এনে কোনো কারণ ছাড়াই যে এতো পিটুনি, তার কোনো উত্তর পেলো না লোকটা। তার ঠোঁট ছুঁইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাত দিয়ে গালে হাত বুলিয়ে রক্ত দেখে আর্তনাদ করে উঠলো লোকটি। তার সামনে এক পা ভাঁজ করে বসলো কালো হেলমেট পরা এক যুবক। মার খেয়ে লোকটার শার্ট ছিঁড়ে গেছে। হেলমেট পরা যুবকটি মাটি থেকে শার্টের বোতম উঠিয়ে লোকটার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। লোকটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। হেলমেট পরা যুবকটি এবার লোকটার হাতের তালুতে বোতামটি রেখে বলল, “রাস্তায় দেখেশুনে হাঁটতে হবে, আংকেল। মনে থাকবে?”
মধ্যবয়স্ক লোকটা মাথা নাড়লো। তার পাশে আরো দু’জন কালো হেলমেট পরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজন হেলমেট খুলে লোকটার মাথায় আঘাত করতে যাবে, ওমনি লোকটা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আর নিজের দু’হাত দিয়ে মাথা গুটিয়ে বসে পড়লো। মিনিট খানিক পর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মাথা উঠিয়ে সামনের তাকিয়ে দেখলো চশমা পরা যুবকের চোখ দু’টি লাল হয়ে আছে। লোকটি পা ধরে বলল, “আমি জানি না আমার কি ভুল হয়েছে। তবুও আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।”
লোকটার মাথায় অল্প কিছু চুল ছিল। তৃতীয় হেলমেট পরা যুবকটি সেই চুল ক’টি টেনে ধরে বলল, “মেয়েদের ভীড়ের মধ্যে ধাক্কা দেওয়ার স্বভাবটা আজকের এই মার খাওয়ার কথা মনে করেই যেন শুধরে ফেলা যায়।”
লোকটা তব্ধা খেয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে গেছে তার। চশমা পরা চোখ দু’টি ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “পালাও, নয়তো যেই কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে ওই মেয়েটাকে পুকুরে ফেলেছিলে, ওই কাঁধটা পুড়িয়ে দেবো। কেরোসিন এই রুমে আছে। লাইটার আমার পকেটে।”
লোকটা কোনো রকম উঠে দৌঁড়ে বেরিয়ে পড়লো। লোকটা পালাতেই শার্টের হাতায় কপালের ঘাম মুছলো আরাফ। অন্যদিকে পাশের দু’জন হেলমেট খুলতেই আরাফ তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাগ্যিস তোরা পাশে ছিলি। নয়তো এই শয়তান লোকটাকে তুলে এনে ধোলাই করা সহজ ছিলো না।”
আরাফের কাঁধে হাত রাখলো ইমন। বলল, “অরুর জন্য সব করতে রাজি। আমার ছোট বোন ও। ইভান সব ভুলে গেলেও আমি ভুলি নি।”
আরাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো, “অরু তো পড়ে গিয়েছিলো পানিতে। কাকে দেখলাম যেন পুকুরে লাফ দিলো? লোকটাকে ধরার জন্য ওদিকেই যেতে পারি নি।”
তাহমিদ বাঁকা হেসে বলল, “অবাক তো আমি হয়েছি তাকে দেখে যে পুকুরে লাফ দিয়েছিল।”
“কে সে?”
“আহনাফ।”
তাহমিদের কথা শুনে ইমন আর আরাফ চকিত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। ইমন হালকা হেসে বলল, “তোদের দুই ভাইকে বোঝা মুশকিল। আহনাফের মুখের কথার সাথে তার কাজের কোনো মিলই নেই। সারাদিন কানের কাছে হেইট হার, হেইট হার বলতে বলতে পুকুরেই ঝাঁপিয়ে পড়লো। বাহ!”
(***)
কলিংবেল বাজতেই দরজা খুললো রুহানি। সামনে অপরিচিত দু’জনকে দেখে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো সে। পরক্ষণেই তার কপালের রেখা বিলীন হয়ে গেলো। আর মুখটা হাঁ হয়ে গেলো। আতকিয়া জাহান রুম থেকে বেরিয়ে বললেন, “দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কে এসেছে?”
রুহানি গালে হাত দিয়ে বলল, “রকস্টার!”
আতকিয়া জাহান দরজার কাছে এসে আহনাফ আর তূর্যকে বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় পড়ে গেলেন। মেয়েকে সরিয়ে তাদের বাসায় ঢুকতে বললেন। আহনাফ আর তূর্য ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। রুহানি হাঁ করে তূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। আতকিয়া জাহান মেয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বললেন, “ব্যাগগুলো নিয়ে ভেতরে যা।”
রুহানি বাজারের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল, “রকস্টার আমাদের জন্য বাজার করে এনেছে?”
“কি আবোল-তাবোল বকছিস!”
রুহানি চাপা স্বরে তূর্যকে দেখিয়ে বলল, “তুমি জানো না এই ছেলেটা কে?”
“কে আবার? অরুণিকার ভার্সিটির স্যার।”
“ধুর মা, এটা রহস্য ব্যান্ডের মেইন ভোকালিস্ট। রিকি দা স্টার।”
“কি রহস্যের কথা বলিস? এতো রহস্য বুঝি না আমি।”
মায়ের চেঁচিয়ে উত্তর দেওয়াটা রুহানির পছন্দ হলো না। সে শুকনো মুখে ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো। আতকিয়া জাহান জোর গলায় বললেন, “দুই গ্লাস শরবত বানিয়ে আন।”
এরপর আহনাফ আর তূর্যের সামনে বসে বললেন, “স্যার, আপনাদের কষ্ট দিয়েছি।”
তূর্য বলল, “কষ্ট কেন হবে, আন্টি? আমরা ঠিক আছি। আচ্ছা, আংকেলকে দেখছি না?”
“উনি তো দেশের বাইরে থাকেন।”
আহনাফ আর তূর্য একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। তখনই ভেতর থেকে তোয়ালে পেঁচিয়ে বসার ঘরে ঢুকে পড়লো অরুণিকা। আহনাফ আর তূর্যকে সোফায় বসা দেখে দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো সে। তূর্য অন্যদিকে তাকিয়ে থাকায় সে খেয়াল করে নি অরুণিকাকে। কিন্তু আহনাফের দৃষ্টি ঠিকই পড়েছে। সে চোখ বড় বড় করে এখনো অরুণিকার পালানোর পথটির দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে অরুণিকা রুমে ঢুকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো মেঝেতে। মনে মনে বলল, “আসতাগফিরুল্লাহ, আমি এতো বেঁহুশের মতো চলি কেন? এই অসময়ে কেউ আসবে এটা আমার মাথায়ও আসে নি। ছি, ওরা আমাকে দেখে ফেললে কি হবে?”
রুহানি তখনই রুমে ঢুকে লাফিয়ে অরুণিকার সামনে বসে পড়লো। এরপর এক গাল হেসে বলল, “বাইরে কে জানিস?”
অরুণিকা বিরক্ত মুখে বলল, “বেকুব একটা! আমাকে আগে বলবি না কেউ এসেছে?”
“কেন? তোর আবার কি হলো?”
“আমি তোয়ালে পেঁচিয়েই চলে গিয়েছিলাম ওদের সামনে।”
রুহানি গালে হাত দিয়ে বলল, “ছি! দেখে নি?”
“ধুর ভাই। এরকম হুটহাট যে-কেউ মুখ উঠিয়ে চলে আসবে না-কি বাসায়?”
রুহানি কোমড়ে হাত রেখে বলল, “তোকে কে বলেছে, গোসল করে তোয়ালে পেঁচিয়ে নায়িকাদের মধ্যে ঘরে ঘরে টোটো করতে? ক’বার বলেছি তোকে সাথে সাথেই জামা পরে নিতে।”
“আমি ভেজা গায়ে জামা পরতে পারি না। তুই জানিস না? আমার গা চুলকাই।”
“হয়েছে। তাই বলে পুরো ঘরে হাঁটবি? বেহায়া একটা।”
“বাসা এটা। রাস্তায় হাঁটি না-কি আমি? বাসায় কি কোনো ছেলে আছে না-কি!”
অরুণিকা পা ধাপিয়ে বলল, “যাহ ভাই। ক্লাসও করতে পারবো না আর।”
“ধুর এসব বাদ দে। দেখে নি হয়তো। আগে আমার কথা শোন। ওদের মধ্যে একজন রহস্য ব্যান্ডের মেইন ভোকালিস্ট।”
“তো!”
রুহানি হতাশ কন্ঠে বললো, “যাহ, তুই একটা নিরামিষ।”
“আমি আমার ঝামেলায় মরতেছি। ওই ফাজিল স্যারটা দেখে ফেললো কি-না কে জানে!”
“ওরা তোর স্যার?”
“হ্যাঁ।”
“তূর্য শেখও।”
“হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের না। মিউজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের। আরেকটা যেটা বসা ছিল, ওইটা আমাদের।”
“ওয়াও, আমিও ওই ভার্সিটিতে ভর্তি হবো, কেমন?”
“যে গ্রেট পেয়েছিস, আগে ভালো করে পড়ে ইন্টার পাশ কর।”
তাদের কথার মাঝখানে আতকিয়া জাহান রুমে ঢুকে বললেন, “কি-রে শরবত রেখেই চলে এলি, রুহু? একটু নাস্তা-টাস্তা বানাতে সাহায্য কর আমাকে।”
এরপর অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর তুমি, অরুণিকা চৌধুরী, নায়িকাদের মতো বসে না থেকে গায়ে ভালো জামা পরে স্যারদের নাস্তাটা দিতে আসো। এমনিতেই আজকে আমার ভালোভাবেই নাক কাটালে তুমি।”
অরুণিকা মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আতকিয়া জাহান চলে যেতেই অরুণিকা রুহানিকে বলল, “ভাই রুহু, আমি আর সামনে না যাই। আমাকে হয়তো দেখে ফেলেছে। কয়েকদিন আমাকে না দেখলে ভুলে যাবে।”
অরুণিকা রুহানিকে বের করে দিয়ে রুমের দরজা আটকে দিলো। এদিকে রুম থেকে বেরুতেই আহনাফের সাথে রুহানির চোখাচোখি হয়ে গেলো। আহনাফ রুহানিকে দেখে চোখ সরিয়ে নিতেই রুহানি ভ্রূ কুঁচকে তাকালো আহনাফের দিকে। আর আনমনে বলল, “এই বজ্জাত স্যারটা অরুর রুমের দিকে তাকিয়ে ছিল কেন? নিশ্চয় এ অরুকে দেখে ফেলেছে। নয়তো এতো বড় ঘর থাকতে এদিকেই চোখ? পাশের রকস্টার তো কতো সুন্দর মায়ের সাথে বকবক করছে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে না। দাঁড়া বজ্জাত স্যার, তোর মাথা থেকে তোয়ালে পেঁচানো মেয়ে বের করছি আমি। রুহানির রেসিপি ট্রাই করলে কি দেখেছিস সব ভুলে যাবি।”
চলবে–
#উইন্টার_এন্ড_মাই_সনেট
#লেখা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
|| পর্ব-১০ ||
রুহানি নাস্তার ট্রে টি-টেবিলের উপর রেখে তির্যক চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফের দৃষ্টি এখনো অরুণিকার রুমের দিকেই স্থির। রুহানি পথ আড়াল করে দাঁড়াতেই সে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাস্তার বাটির দিকে তাকালো। রুহানি মিনমিনিয়ে বলল, “খাও, মিস্টার বাজার আনা স্যার। তোমার জন্যই তো রুহানিস স্পেশাল রেসিপি।”
রুহানিকে বিড়বিড় করতে দেখে তূর্য ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। রুহানি এবং তূর্যের চোখাচোখি হতেই রুহানি দাঁত কেলিয়ে হেসে মুখটা ট্রে দিয়ে আড়াল করে ফেললো। আতকিয়া জাহান মেয়ের দিকে কোণা চোখে তাকিয়ে বললেন, “রুহু, তোমার বোন কোথায়? এখনো কি সিনেমার অডিশন শেষ হয় নি?”
আতকিয়া জাহানের কথায় তূর্য ও আহনাফ তার দিকে তাকালো। রুহানি বিরক্ত মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি বলছো স্যারদের সামনে?”
মেয়ের তিরিক্ষি প্রতিত্তোর পছন্দ করলেন না আতকিয়া জাহান। চেঁচিয়ে বললেন, “যাও, ডেকে আনো অরুণিকাকে। বলো, ওর স্যাররা এসেছে।”
রুহানি চোখ ছোট করে তাকালো মায়ের দিকে। এরপর আহনাফ আর তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার, আপনারা কি জানেন অরুকে আই মিন আপনাদের টেলেন্টেড স্টুডেন্ট অরুণিকাকে তার এই মামীটা প্রচন্ড জ্বালায়? সারাদিন ওর সাথে চ্যাঁ চ্যাঁ করে।”
আতকিয়া জাহান উঠে দাঁড়াতেই, রুহানি ট্রে ফেলে দৌঁড়ে পালানোর সময় পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অরুণিকার সাথে ধাক্কা খেলো। রুহানির কপালের সাথে অরুণিকার নাকের ধাক্কা লাগায়, অরুণিকা সাথে সাথেই পর্দা ছেড়ে দিয়ে নাক ধরে তারস্বরে চিৎকার করে উঠলো। এদিকে রুহানি কপালে হাত ঢলছে, আর অরুণিকা নাক ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পর্দা সরে যেতেই আহনাফ আর তূর্য তাকে দেখে ফেললো। আতকিয়া জাহান আনন্দিত কন্ঠে বললেন, “মায়ের সাথে বেয়াদবির শাস্তি হয়েছে!”
রুহানি অরুণিকা চিমটে দিতেই অরুণিকা ঠোঁট কামড়ে ধরে রুহানিকে এক কিল বসিয়ে দিলো। রুহানি ব্যথায় চোখ বন্ধ করে বলল, “দাঁড়িয়ে ছিলি কেন চোরের মতো?”
“আমার নাক ফাঁটিয়ে দিয়ে চিমটে কেন দিচ্ছিস? আমাকে এক্সপোজ করে দিলি তো?”
“তোর দোষ। তোকে কে বলেছে চোরের মতো উঁকি দিতে?”
“তাই বলে দৌঁড় দিবি তুই?”
দু’জন চাপা স্বরে ঝগড়া করতে লাগলো। আতকিয়া জাহান জোর গলায় বললেন, “অরু, এদিকে আসো।”
অরুণিকা নাক ঢলতে ঢলতে বসার ঘরে চলে এলো। আর সেকেন্ডের জন্য চোখাচোখি হয়ে গেলো আহনাফ ও অরুণিকার। আহনাফ সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো। আতকিয়া জাহান অরুণিকাকে পাশে বসিয়ে আহনাফকে জিজ্ঞেস করলো, “আমাদের অরু পড়ালেখায় কেমন?”
আহনাফ বলল, “অনেক ইরেস্পন্সিবল।”
অরুণিকা দাঁত কটমট করে তাকালো আহনাফের দিকে। তূর্য আহনাফের পিঠ চাপড়ে বলল, “এক সপ্তাহের ক্লাসে আর কিইবা বোঝা সম্ভব?”
আতকিয়া জাহান বললেন, “হ্যাঁ বাবা, ঠিক বলেছো। ও তো পরীক্ষায় অনেক ভালো নম্বর পায়। ওর মামার খুব আদরের ও। ওর তো বাবা-মা নেই। তাই ওর দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।”
অরুণিকা মামীর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো। রুহানি পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বলল, “মা একটু এদিকে আসো তো।”
আতকিয়া জাহান মেয়ের কথার তোয়াক্কা না করে বললেন, “একটা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো দু’জন। ওকে বাঁচাতে গিয়েই তো হলো…।”
আহনাফ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে গলা ভিজিয়ে আতকিয়া জাহানকে থামিয়ে বলল, “আল্লাহর ইচ্ছায় সব হয়। এসব কথা বাদ দিন।”
আতকিয়া জাহান মাথা নেড়ে আপসোসের সুরে বললেন,
“ওর দাদার পরিবার খুব বড়লোক। ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালোই তাদের। কিন্তু ওর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি। খোঁজই নেই একদম। ওদের যে একটা মেয়ে আছে ওরা বোধহয় ভুলেই গেছে। মেয়ে তো ঘরের আলো। ওদের ঘরে আবার সব ছেলে হয়েছে। আমার ননদেরই একমাত্র মেয়ে হয়েছিলো। এজন্য বোধহয় কারো পছন্দ হয় নি।”
তূর্য আর আহনাফ হাত মুঠো করে বসে আছে। রুহানি মায়ের সামনে এসে বলল, “চুপ করো তো! ওর স্যাররা এসেছে। নাস্তা করতে দাও উনাদের।”
আতকিয়া জাহান মেয়েকে দেখে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন, “তুই চুপ কর। বড়দের মাঝখানে কথা বলিস কেন?”
আহনাফ আর তূর্যের দিকে তাকিয়ে তিনি আবার বলতে লাগলেন, “কিছু বছর আগে খুব নিউজ হয়েছিলো, শুনেছ? একটা ভয়ংকর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো না, সাড়ে পাঁচ বছর আগে, মনে আছে? পেপারে এসেছিল। রেল লাইনের উপর…”
অরুণিকার চোখের সামনে সেই ভয়ংকর অতীতটা ভেসে উঠলো। সে সোফা খামচে ধরে বসে আছে। আতকিয়া জাহান বললেন, “ওই এক্সিডেন্টের পর ওর দাদার পরিবার ওকে ছ’মাস রেখেছিলো। কিন্তু ওখানেও এক কান্ড বাঁধিয়ে…”
অরুণিকা আর সহ্য করতে পারলো না। টেবিলের উপর থাকা সব নাস্তা মেঝেতে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। আতকিয়া জাহান স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। আহনাফ আর তূর্য সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো। আতকিয়া জাহান চেঁচিয়ে বললেন, “এই বদমেজাজের জন্যই তো এই পরিণতি হয়েছে তোমার। তোমার বাবার মতোই তোমার মেজাজ। যেমন বাপ, যেমন রক্ত, তেমন মেয়ে।”
অরুণিকার হাত মুঠো হয়ে আছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। রুহানি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে অরুণিকাকে শান্ত করার জন্য এগুতে যাবে তার আগেই বাসা থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো অরুণিকা। আহনাফ আর তূর্য রাগী দৃষ্টিতে আতকিয়া জাহানের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই অরুণিকার পিছু নিলো। এদিকে রুহানি মায়ের সামনে এসে চেঁচিয়ে বলল, “বেশি সম্মান বোধহয় সহ্য হয় না তোমার, তাই না? তুমি জানো, ওর অতীত ওকে কতোটা দুর্বল করে দেয়। কিন্তু তবুও তুমি বারবার ওর দুর্বল জায়গায় হাত দাও। তুমি জানো ওকে কীভাবে রাগানো যায়, তাই তুমি সবার সামনে অরুকে বেয়াদব প্রমাণ করার জন্য এসব কথা উঠিয়েছো, তাই না। এটা কতোটা সেনসিটিভ বিষয়, তুমি জানো? ওর স্যাররা জানলে, কি মনে করবে ওকে?”
“জানুক, ও কেমন চরিত্রহীন। ওর চিন্তা-ভাবনা কতোটা খারাপ, সেটা জানা উচিত সবার। এমনি এমনিই কি ওদের মেয়েকে বের করে দিয়েছে ওরা? একসময় সত্য বেরিয়ে আসবেই দেখিস।”
“হ্যাঁ, বেরিয়ে আসবো। আল্লাহ তার ফয়সালা করবেনই।আর একদিন ওরাও জানবে, যাকে মিথ্যুক ভেবেছে, যাকে পাপী ভেবেছে, সে তো পাপী ছিলোই না। ওদের ঘরেই সাপ ছিল। ওরা আসলেই নিজেদের হাতে তাদের ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়েছে। আমাদের অরুর গায়ে একটা দাগও পড়ে নি। ওরা ইচ্ছে করেই সেই দাগ লাগিয়েছে।”
রুহানি কথাগুলো বলেই অরুণিকাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়লো।
(***)
অরুণিকা সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়লো তরতর করে। অতীতের সেই ভয়ংকর মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার। সে দৌঁড়ে বেরিয়ে পড়লো গেট দিয়ে। অন্ধকার হয়ে গেছে। মাগরিবের আযান ভেসে আসছে কাছের মসজিদ থেকে। আযানের ধ্বনি শুনলেই অতীতের সেই স্মৃতি তাকে কাঁদায়। এই পাঁচ বছরে এমন একদিনও যায় নি, সে আযান শুনে কাঁদে নি। প্রতি ওয়াক্তে সিজদায় গিয়ে কেঁদেছিল অতীতের ভুলের জন্য। আল্লাহ তাকে কি এখনো ক্ষমা করে নি? অরুণিকা ভাবতে পারছে না এসব। কানে বাজছে সেই পরিচিত কন্ঠের বলা তিক্ত মিথ্যা কথা, “আমাকে বিয়ে করবি, অরু? ভালোবাসি তোকে।”
অরুণিকা কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। ব্যস্ত পথিকেরা তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাথা ভারী ভারী লাগছে তার।
“অরু, ভালোবাসি তোকে।”
“বিয়ে করবি আমাকে, বল?”
“তুই তো আমার ছোট্ট বউ।”
অরুণিকার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। সে এলোমেলো ভাবে হেঁটে সামনে এগুতে লাগলো। আহনাফ আর তূর্য তার পিছু পিছু আসছে। তূর্য জোরে ডাকলো, “অরুণিকা, দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছো?”
তূর্যের কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকালো অরুণিকা। তূর্যের পাশে আহনাফকে দেখে তার গা জ্বলে উঠলো। সামনে ঘুরে দৌঁড় লাগালো সে। আহনাফ স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। আর তূর্য অরুণিকার পিছু ছুটলো। গলির মুখে আসতেই হোঁচট খেয়ে পড়লো অরুণিকা। মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই তাকে শক্ত করে ধরে ফেললো একটি হাত। অরুণিকা নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে দেখলো ইভান। পাশেই আরাফ আর তাহমিদ। অরুণিকা বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। শরীরের ভার ছেড়ে দিতেই ইভান শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। তূর্যকে অরুণিকার পেছন পেছন দৌঁড়ে আসতে দেখে, আরাফ তূর্যের দিকে তেড়ে এসে বলল, “কি করেছিস ওর সাথে?”
আহনাফও এসে গেছে ততোক্ষণে। তাহমিদ চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আহনাফ, কি করেছিস তুই?”
আহনাফ অরুণিকার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল, “কি হয়েছে ওর?”
ইভান অরুণিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।”
ইভান অরুণিকাকে পাঁজা কোলা করে নিতেই রুহানি দৌঁড়ে এলো। অরুণিকাকে অজ্ঞান দেখেই ভীত কন্ঠে বললো, “ওর আবার প্যানিক এট্যাক এসেছে!”
রুহানির কথা শুনে সবাই অবাক হলো। রুহানি আশেপাশে তাকিয়ে বলল, “সবাই এদিকে তাকিয়ে আছে। ওকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। মানুষ নয়তো অন্য কিছু ভাববে।”
তূর্য ইভানের হাত ধরে বলল, “ওকে ওই বাসায় নিয়ে যেতে হবে না। ওর মামীই ওকে নিয়ে উল্টো-পাল্টা কথা বলেছে।”
তূর্যের কথায় হাত মুঠো হয়ে এলো আরাফ আর তাহমিদের।
ইভান বলল, “কোথায় নিয়ে যাবো ওকে?”
“আপতত, আমাদের বাসায়।”
“ব্যাচেলারদের বাসায় মেয়ে নিয়ে যাবো?”
তূর্য চাপা স্বরে বলল,
“বাড়ির মালিক তো আমাদের চিনেন। আর অরুণিকা বাইরের কেউ তো নয়। সত্যটা বলে দেবো না হয়। বলে দেবো ওর সাথে আমাদের কি সম্পর্ক। স্পেশালি আরাফ, আহনাফ আর তাহমিদের। আর ওর মামী একটা টক্সিক মহিলা। কার সামনে কি বলতে হয়, জানেই না ওই মহিলাটা। আজ আমাদের সামনে বলতে চেয়েছে, না-জানি আর ক’জনের সামনে পাঁচ বছর আগের অতীতটা তুলে ধরেছিল! ইটস টোটালি আনফেয়া’র।”
আরাফ ইভানের কোল থেকে এক প্রকার কেঁড়ে নিলো অরুণিকাকে। এরপর তাকে বাসায় নিয়ে যেতে লাগলো। রুহানি আরাফের আচরণে অবাক হচ্ছে। সে আরাফের পিছু যেতে যেতে বলল, “আপনি কে? আপনি আমার বোনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
আরাফ কোনো উত্তর না দিয়ে রুদবাদের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়লো। রুহানি মনে মনে বলল, “উনি কি রুদবার বাসায় নিয়ে যাচ্ছে অরুকে? কিন্তু রুদবার তো ফ্যামিলি আছে। ওরা কি মনে করবে?”
আরাফ সিঁড়ি বেয়ে উঠে চার তলায় এসে থামলো। রুদবাদের ফ্ল্যাট বামপাশে। আরাফ ডান দিকের ফ্ল্যাটে বেল বাজালো। রুহানি বলল, “ওহ হ্যালো, রুদবাদের বাসা এই দিকে।”
আরাফ রাগী দৃষ্টিতে তাকালো রুহানির দিকে। আরাফের চাহনি দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো তার। মনে মনে বলল, “এটা কোন রাক্ষসের বাচ্চা! যেভাবে তাকালো, মনে হচ্ছে গিলে খাবে।”
(***)
ইমন দরজা খুলতেই অরুণিকাকে আরাফের কোলে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে, আরাফ তাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়লো। রুহানিও দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। ইমন বলল, “এই মেয়ে, তুমি কে?”
রুহানি কোমড়ে হাত রেখে বলল, “আগে এই চশমা পরা লোকটাকে জিজ্ঞেস করুন, আমার বোনকে এখানে নিয়ে এসেছে কেন?”
ইমন অবাক চোখে তাকালো রুহানির দিকে। আরাফ অরুণিকাকে তার রুমে নিয়ে গেলো, আর শুইয়ে দিলো নিজের বিছানায়। রুহানি আরাফের পিছু পিছু সেই রুমে ঢুকতেই থমকে গেলো। এদিকে আরাফ ব্যস্ত অরুণিকাকে নিয়ে। আর রুহানির দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো দেয়ালে ঝুলন্ত স্থির চিত্রের দিকে। সে এবার পেছন ফিরে তাকালো। তূর্য, তাহমিদ, ইভান আর ইমনের দিকে তাকিয়ে, পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা আহনাফের দিকে তাকালো। রুহানি এবার আহনাফের সামনে এসে দাঁড়ালো। এরপর ক্ষীণ কন্ঠে বললো, “এজন্যই আপনাকে এতো চেনা চেনা লাগছিলো আমার? আপনিই সেই শয়তান লোক, যার জন্য আজ আমার বোনের এই পরিণতি হয়েছে, তাই না?”
আহনাফ কিছু না বলে হনহনিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। রুহানি চেঁচিয়ে বলল, “মা ঠিকই বলেছে। আপনারা অমানুষ। আলো চিনতে পারেন নি। আপন বোন হলে তখন অরুর ঢাল হয়ে দাঁড়াতো সবাই।”
আহনাফ রুমের ঢুকার আগেই রুহানিকে চেঁচিয়ে বলল, “শাট আপ।”
ইভান আহনাফের হাত ধরে তাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এরপর রুহানির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি যা জানো না, তা নিয়ে কথা বলো না।”
“লোকটা আমার বোনকে চিট করেছে।”
তূর্য শান্ত স্বরে বলল, “প্লিজ, তুমি এসব কথা তুলে সিচুয়েশন খারাপ করো না।”
“কেন সিচুয়েশন খারাপ হবে? এতোই যেহেতু অরুকে অপছন্দ, তাহলে ওই রুমে আপনাদের সাথে ওর ছবি কেন ঝুলিয়েছেন? আপনাদের সবার ম্যান্টালিটি একই হয়তো।”
তাহমিদ দাঁতে দাঁত চেপে রুহানির বাহু চেপে ধরে বলল, “চুপ, একদম চুপ। এখানে যা হচ্ছে, সবকিছু তোমার বাবার জন্য হচ্ছো।”
রুহানি অবাক কন্ঠে বললো,
“আমার বাবার জন্য? আমার বাবা কি করেছে? ওই লোকটা করেছে সব। অরু আমাকে সব বলেছে। আমি ওর পাঁচ বছরের সেই অতীতের সাক্ষী ছিলাম। চিট করেছে ওই লোকটা। আমার বাবা কি করলো এখানে? পাগল না-কি আপনি? আপনারা পুরো ফ্যামিলিই পাগল।”
আরাফ ধড়াম করে দরজা আটকে দিতেই কেঁপে উঠলো রুহানি। সাথে চুপ হয়ে গেলো সবাই। রুহানি পাশের সোফায় বসে পড়ল স্তব্ধ হয়ে। কেমন যেন এলোমেলো লাগছে তার সবকিছু! আহনাফকে প্রথম বার দেখার পর থেকেই চেনা চেনা লাগছিলো তার। কিন্তু চেহারা মনে করতে পারছিলো না। পাঁচ বছর আগের আহনাফ আর এখনের আহনাফের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তখন তার গালে দাড়ি ছিল না। এখন খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বাকিদের চেনে না রুহানি। তবে নাম শুনেছিলো অরুণিকার মুখে। ছ’জনকে দেখে নিজে নিজেই তাদের চিনে নিলো। অরুণিকা বলেছিল, তার রাগী চশমা পরা চাচাতো ভাইয়ের কথা। আরাফের রাগী দৃষ্টি আর চশমা দেখেই রুহানি বুঝে গেছে সে-ই আরাফ। তূর্যের নাম শুনেছিলো সে। কিন্তু সে যে রহস্য ব্যান্ডের তূর্য শেখ সেটা আজ বুঝতে পেরেছে রুহানি। এজন্যই কি সারাদিন তূর্যের গান শুনে অরুণিকা? বাকি তিনজনকে আলাদা ভাবে চিনতে পারছে না রুহানি। এদের কাউকে আগে দেখে নি সে। কিন্তু এদের মধ্যেই কেউ একজন ইভান, ইমন আর তাহমিদই হবে। তবে আহনাফকে আগে দেখেছিল সে। পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখেছিল। চেনা চেনা লেগেছে, কারণ তখনই অরুণিকা আলাদাভাবে রুহানির সাথে আহনাফের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। একবার, দু’বারের বেশি সামনা-সামনি দেখি নি সে আহনাফকে। এরপর এতো বছরে মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। রুহানি মনে মনে বলল, “আমার বোনটা এতো বছর ধরে যার জন্য কষ্ট পেয়েছে, সেই মানুষটা আবার তার জীবনে ফিরে এসেছে? এতো দিন অরু এই লোকটাকে সহ্য করছিল? এজন্যই তো আজ অরুণিকার রুমের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো সেই লোকটা। নজর খারাপ, ভালোই বোঝা যাচ্ছে। শয়তান লোক, তোকে তো আজ আমি অরুর জন্য আমার রেসিপি খাওয়াতে পারি নি। কিন্তু দেখিস, তোর জীবন আমি কীভাবে হারাম করি।”
এদিকে আরাফ অরুণিকার হাত ধরে বসে আছে। রুহানির মুখ থেকে অরুণিকার প্যানিক এট্যাক আসার কথা শোনার পর থেকেই কেমন শূন্য শূন্য লাগছে তার। অরুণিকার হাতে কপাল ঠেকিয়ে আরাফ ভেজা কন্ঠে বললো, “সরি অরু, এতো জ্বালিয়েছি আমরা যে আজ তোর এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আমি তোকে প্রমিজ করছি, একবার আমি আমার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেই, তোকে ওই জাহান্নামে আর থাকতে হবে না। আমিই তোকে বাসায় নিয়ে আসবো। পড়াশুনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে বের হই। আমিই তোর দায়িত্ব নেবো। এর জন্য যদি আহনাফের সাথেও আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, আই ডোন্ট কেয়া’র। আমি জানি না, তুই আহনাফকে নিয়ে কেন ওমন মিথ্যে বলেছিলি। হয়তো তুই অবুঝ ছিলি। কিন্তু এখন তো সব ঠিকই বুঝিস। সবার কাছে ক্ষমা চাইলে, দেখবি সবাই তোকে ক্ষমা করে দেবে।”
ওদিকে আহনাফ দরজায় মাথা হেলিয়ে দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। অরুণিকার চোখের জল সহ্য করতে পারছে না কেন সে? হাতে থাকা গভীর ক্ষতটার দিকে তাকালো আহনাফ। পাঁচ বছরেও এই ক্ষত শুকায় নি। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো তার। মনে মনে বলল, “যদি কখনো কেউ জেনে যায়, সেদিন অরু যা বলেছিল সব সত্য, তখন কি হবে? আমার ভুলের শাস্তি পাচ্ছে মেয়েটা।”
আহনাফ মেঝেতে ঘুষি মারলো বার কয়েক। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ও এটা ডিজার্ভ করে। ও আমার কাছের মানুষটাকে কেঁড়ে নিয়েছে। আমিও ওর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কেঁড়ে নিয়েছি। টিট ফর ট্যাট।”
চলবে–
#উইন্টার_এন্ড_মাই_সনেট
#লেখা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
|| পর্ব-১১ ||
অরুণিকার জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে অপরিচিত কক্ষে আবিস্কার করলো। রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো সে। উঠে বসতেই খেয়াল করলো বেডের কাছে মাথা রেখে মেঝেতে বসে আছে এক যুবক। চুল দেখেই চিনে ফেলেছে সে মানুষটিকে। কাঁপা কন্ঠে ডাকলো সে, “আরাফ।”
অরুণিকার কন্ঠে হকচকিয়ে উঠলো আরাফ। অবিলম্বে উঠে অরুণিকার পাশে বসে বলল, “তুই ঠিক আছিস, অরু?”
অরুণিকা ক্ষীণ হেসে বলল, “তুমি আবার আমাকে নিয়ে কবে থেকে ভাবা শুরু করেছো?”
আরাফ চুপ করে রইলো। অরুণিকা আশেপাশে তাকিয়ে বলল, “আমি এখানে কীভাবে এলাম? এটা কার বাসা?”
“আমাদের বাসা। আমরা ছ’জন এখানে থাকি।”
“কেন? এই শহরেই তো তোমাদের বিশাল বিশাল অট্টালিকা। এই সামান্য গলিতে জায়গা হয় তোমাদের?”
আরাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো, “এভাবে কথা বলছিস কেন?”
অরুণিকা মলিন হেসে বলল, “আচ্ছা, সরি। আমি শুধু শুধু তোমাদের এই বাসাটাও নষ্ট করে দিয়েছি। অপবিত্র করে দিয়েছি।”
“বাজে কথা বলিস না।”
“তুমি কি বিশ্বাস করছো এই কথাটা বাজে?”
“নয়তো কি?”
“তবে পাঁচ বছর আগে সবাই যখন আমাকে অলুক্ষণে, অপবিত্র, নষ্ট মেয়ে বলেছিল, তুমি তখন চুপ করেছিলে কেন?”
“তুই সেদিন মিথ্যে না বললেও পারতি।”
অরুণিকা স্মিত হাসলো। তার ঠোঁটের হাসিটা একদম মৃত, শুকনো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা যন্ত্রণা সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে। অরুণিকা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আরাফ ব্যস্ত কন্ঠে বললো, “আরেকটু বস।”
অরুণিকা শক্ত মুখে বলল, “সেদিন আমি মিথ্যে বলি নি, আরাফ। আমি যা বলেছি তার একমাত্র সাক্ষী আহনাফ। আর ও কখনো স্বীকার করবে না সত্যটা। কারণ ও আমার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছে। আসলে তোমরা সবাই স্বার্থপর। আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করবো না।”
অরুণিকা আরাফকে সরিয়ে দিয়ে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। অরুণিকা বেরুতেই রুহানি দৌঁড়ে তার কাছে এসে বলল, “তুই আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি, অরু।”
অরুণিকা ক্ষীণ হেসে বলল, “আমার পিছু পিছু এখানে চলে এসেছিস?”
“তোকে আমি একা ছাড়বো না-কি?”
অরুণিকার চোখ পড়লো দেয়াল ঘড়ির দিকে। সে অবাক কন্ঠে বলল, “রাত দশটা বেজে গেছে! আমি এতোক্ষণ এখানে ছিলাম?”
রুহানি অরুণিকার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি তোকে এখানে রাখতাম না। কিন্তু তোর পেছনের লোকটা অনেক ভয়ংকর।”
রুহানির কথায় আরাফ ভ্রূ কুঁচকে তাকালো তার দিকে। রুহানি অরুণিকার হাত চেপে ধরে বলল, “এরা তোর কাজিন ভাই, তাই এতোক্ষণ বসে আছি। আর লোকটা না-কি ডাক্তারি পড়ছে। ভাবলাম তোকে আমার চেয়ে ভালো দেখে রাখবে।”
রুহানি এবার চাপা স্বরে বলল, “বলতে পারিস এই লোকের মুখের উপর কথা বলার সাহসটাও হয় নি আমার। লোকটা রাক্ষসের এক নম্বর বাচ্চা। দরজাটা ধড়াম করে যে বন্ধ করলো, বিশ্বাস কর, ভূমিকম্প হলে যেমন বিল্ডিং কেঁপে উঠে, ওরকম কেঁপেছিল আমার বুকটা।”
অরুণিকা পেছন ফিরে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “থ্যাংক ইউ আপনাদের এগ্রেসিভ হস্পিটালিটির জন্য।”
ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল, “একে তো তোমাকে এখানে উঠিয়ে এনেছে আরাফ, আর তুমি বলছো এগ্রেসিভ হস্পিটালিটি দেখিয়েছি আমরা? তুমি যে একটা অকৃতজ্ঞ সেটা আবারও প্রমাণ করে দিলে।”
অরুণিকা চোখ ছোট করে বলল, “ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি আপনাদের কাছ থেকে কোনো ফেভার নেই নি, সো অকৃতজ্ঞ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। যতোদিন আমার বাবা ছিল, ততোদিনের সম্পর্ক ছিল আমার সাথে চৌধুরীদের। নাউ ইটস ফিনিশড। উলটো আমার বাবার সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করার জন্য আমার নামে মিথ্যে মামলা করেছে এরা। অকৃতজ্ঞ শব্দটা দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করার আগে নিজেদের কৃতকর্মের হিস্ট্রি ঘেঁটে আসবেন, মিস্টার ইভান রহমান।”
অরুণিকা রুহানিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তূর্য তার হাত ধরে বলল, “তুমি ইভানের সাথে এভাবে কথা বললে কেন?”
অরুণিকা তূর্যের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলল, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই ল’টা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি প্রতিটা কথারও একটা জবাব আছে। আমাকে কি বোবা মনে হয়? আমি চুপ করে শুনবো সবার কথা? আমি সেই ক্লাস নাইনে পড়া অরুণিকা চৌধুরী নই, যাকে আপনারা যাচ্ছেতাই শুনিয়ে নিজের রাগ ঠান্ডা করবেন। না আমি এখন আপনাদের খাই, না পড়ি, তাই নেক্সট টাইম হেল্পও করতে হবে না। ঝামেলাও করতে হবে না। আপনারা আমার জন্য জাস্ট স্ট্রেঞ্জার।”
অরুণিকা হনহন করে বেরিয়ে পড়লো। রুহানিও তার পিছু পিছু এসে বলল, “এতো রাগ!”
অরুণিকা নিজেকে শান্ত করে বলল, “মামী আমাকে আজ কতো কথা শুনিয়েছে, তাও আবার সেই মানুষটার সামনে, যার সামনে আমি নিজেকে শক্ত রাখতে চাই। মামী আজ আমাকে একদম দুর্বল করে দিয়েছে। মানুষটা তো এটাই চাই। সবাই আমাকে অপমান করুক, আমি দুর্বল হয়ে যাই। সে তো মনে মনে খুশিতেই আছে।”
রুহানি অরুণিকার হাত ধরে বলল, “কিন্তু ওদের চোখে তোর জন্য আলাদা স্নেহ আছে, অরু। নয়তো মায়ের কথা শুনে তুই যখন বেরিয়ে পড়লি, তখন তূর্য শেখ আর ওই শয়তানটা কি এভাবে অস্থির হয়ে তোর পিছু নিতো?”
অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “শয়তান!”
“আরেহ, ওই স্যারটা! তোর ক্লাসের স্যার। আরেহ, তোর ওই কাজিনটা আর-কি যে তার জীবনে এতো কেলেঙ্কারি বাঁধিয়েছে।”
“আহনাফ?”
রুহানি কপাল চাপড়ে বলল, “কি নাম-রে বাপ! আহনাফ না রেখে কালসাপ রাখা উচিত ছিল।”
অরুণিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি করেছে ও?”
“তুই যখন বেহুঁশ, ওই ব্যাটা তো সে-ই অস্থির। এই মাত্র লেকচার দিলি না একটা লোককে?”
“ইভান?”
“হ্যাঁ, ওই ব্যাটাই তোকে নায়কের মতো ধরে ফেলেছিল। এরপর ওই ভয়ংকর ভূমিকম্পওয়ালা লোকটা তোকে টেনে ওই নায়ক ব্যাটার কাছ থেকে নিয়ে হনহন করে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল। এরপর আমি রুমে ঢুকে তোর ছবি দেখলাম দেয়ালে। ছোটবেলার ছবি! ওই ছ’জনের সাথে? তখনই বুঝে গেছি এই ছ’জনই ওই ছ’জন। কিন্তু সবাই তোকে নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিল। তবে ওই কাল সাপটা যে রুমে ঢুকলো, ওইটা আর বের হয় নি। ওইটা ছাড়া বাকীরা সবাই তুই রুম থেকে বের না হওয়া অব্ধি পায়চারি করছিলো। কেউ কারো সাথে কথায় বলে নি। মনে হচ্ছিলো অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি সবাই। বিশ্বাস কর, ওদের টেনশন দেখে আমার পেট কামড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
অরুণিকা হেসে বলল, “বাসায় চল, এতোক্ষণে হয়তো মামীর পেট কামড়ানো শুরু হয়ে গেছে।”
“ঠিক বলেছিস৷ বাবা ফোন করে আমাদের না পেলে, মা’কে জম্পেশ শোনাবে। আমি তো বাবাকে বলেই দেবো সব।”
“থাক বলিস না। শুধু শুধু ঝামেলা হবে।”
“আসছে আমার গিন্নী মা। বেশি ভদ্রদের গালেই থাবড়া পড়ে। তোর কাছে ক্ষমতা থাকলে থাবড়া খাবি না, উলটো দিবি। এটা রুহানি’স এডভাইস।”
অরুণিকা হাসলো। রুহানির সাথে টুকটাক গল্প করতে করতে বাসায় ঢুকলো। আতকিয়া জাহান দু’জনকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, “তোমার মামার কল না ধরে বারবার কেটে দিচ্ছিলাম আমি। উনি যদি জানতেন তুমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেছো, তখন কি হতো?”
রুহানি মুখ বাঁকিয়ে বলল, “অরু তো আমাকে বলেছে বাবা ফোন দিলে আজকের সব কথা বলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে। তোমাকে প্রতিদিন প্রতিদিন মানুষের সামনে গীবত করে মৃত ভাইয়ের গোস্তো খেতে দেখাটা আর সহ্য হচ্ছে না অরুর।”
আতকিয়া জাহান ব্যস্ত কন্ঠে বললেন, “কি বলছো অরুণিকা? এসব পুরুষ মানুষকে বলার বিষয়?”
রুহানি গালে হাত দিয়ে বলল, “ওমা কেন? আজ যে দুইটা পুরুষকে বলছিলে, ওগুলো কি দেখতে তোমার মহিলা মনে হয়েছিল?”
“তুই কিন্তু বেশি বেয়াদবি করছিস, রুহু। আমি তোর মা।”
রুহানি কিছু বলতে যাবে, অরুণিকা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “মামী, যা হওয়ার হয়েছে। আমি মামাকে কিছু বলবো না। আপনি অন্তত বাইরের মানুষের সামনে আমার অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। দ্বিতীয়বার বললে, আমি মামাকে বলে সত্যিই হোস্টেলে চলে যাবো।”
আতকিয়া জাহান ব্যস্ত কন্ঠে বললেন, “কি যে বলো, তুমি এভাবে চলে গেছো, আমি কী চিন্তায় ছিলাম জানো? তুমি একটু বাইরে বেরুলেই ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এভাবে হোস্টেলে যাওয়ার কথা বলে না, মা।”
রুহানি মুখ বাঁকিয়ে অরুণিকার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে গেলো রুমে। অরুণিকা রুমে ঢুকে বিছানায় বসে বলল, “মাকে ভেংচানো উচিত না।”
“ভালো হইছে। মায়ের মাথায় ব্যাঙ থাকলে ভেংচাবো না তো চুম্মা খাবো?”
“ধুর, তুই আরেক! বাদ দে। আমি একটু ঘুমাই। কাল সকালে রুদবার বাসায় যেতে হবে।”
“কেন?”
“স্পিকিং ক্লাসের আইডিয়া নেবো। ওদের স্যারটা অনেক ভালো পড়ায়।”
“তোদেরটা?”
“শয়তানি করার ধান্ধায় থাকে, পড়ানোর সময় কই তার!”
(***)
সকালে উঠেই যে রুদবাদের বাসায় গেলো, সন্ধ্যায় বের হলো অরুণিকা। রুদবাদের বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সে দেখলো আহনাফ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আহনাফ তাকে খেয়াল করে নি। সেই সুযোগে অরুণিকা দৌঁড়ে পঞ্চম তলায় উঠে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আহনাফের মুখোমুখি যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই। সে ঘাপটি মেরে বসে আছে সিঁড়ির হাতল ধরে। তখনই পঞ্চম তলা থেকে কেউ একজন বেরুলো। অরুণিকা সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো। মিনমিনিয়ে বলল, “পড়লাম তো বিপদে!”
উপরের তলা থেকে একজন মধ্যবয়সী মহিলা নেমে আসছে। অরুণিকা তাকে দেখে সালাম দিলো। মহিলাটি ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে লাগলো। অরুণিকা ভাবলো, এই মহিলার পিছু পিছু বেরিয়ে গেলে আশংকামুক্ত সে। যা ভাবা তাই কাজ। মহিলাটির পিছু পিছু নামতে লাগলো সে। মাথার ওড়না টেনে দিলো সে। মুখটাও দেখা যাচ্ছে না এখন। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই হুট করে বিদ্যুৎ চলে গেলো। অরুণিকা পরের ধাপটা না দেখে নামতেই গিয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়লো কারো গায়ের উপর। অরুণিকা ভাবলো, হয়তো সেই মধ্যবয়সী মহিলা। সে ব্যস্ত কন্ঠে বলল, “আন্টি সরি, সরি, সরি। অন্ধকারে আপনাকে খেয়াল করি নি।”
সোজা হয়ে দাঁড়ালো অরুণিকা। এখনো পুরো সিঁড়ি অন্ধকার। মোবাইলের টর্চ অরুণিকার মুখের উপর এসে পড়তেই সে চোখ ছোট করে সামনে তাকালো। আলোটা তার মুখের উপর পড়লেও সে ছড়িয়ে পড়া আলোতেই বুঝে গেলো, সে যার গায়ের উপর পড়েছে, সেই মানুষটা আর কেউ নয়, বরং আহনাফই। যার মুখ না দেখার জন্য পালাচ্ছে, তার গায়েই পড়তে হলো তাকে? মাথাটা খারাপ হয়ে গেলো অরুণিকার। মিনমিনিয়ে বলল, “সরির মাইরে বাপ।”
অরুণিকা উলটো দিকে ফিরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাবে তখনই মোবাইলের টর্চ নিভিয়ে আহনাফ পেছন থেকে তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। অরুণিকা আহনাফের স্পর্শেই স্থির হয়ে গেলো। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। আহনাফের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে তার কোমড়। অরুণিকা দাঁতে দাঁত চেপে তার বড় বড় নখ দিয়ে উলটো খামচে ধরলো আহনাফের হাত। আহনাফ ব্যথায় ঠোঁট কামড়ে ধরলো। অরুণিকা চাপা স্বরে বলল, “বদমাইশি স্বভাব এখনো যায় নি তোমার?”
আহনাফ দাঁত কটমট করে বলল, “আমাকে ধাক্কা দিলি কেন?”
“অন্ধকারে দেখি নি, নয়তো তোমার মতো আবর্জনার একশো হাত দূরেও থাকে না কেউ।”
“থাকতে পারিস নি, সেটাই বল। তোকে থাকতেই দেই নি আমি।”
“আমি মরে যাচ্ছি না থাকার জন্য।”
“হুহ, আমি জানি, কীভাবে মরে যাস আমার পাশে থাকার জন্য।”
অরুণিকা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “নিজেকে কি ভাবো তুমি? তোমার পাশে থাকার জন্য মরে যাবো আমি? পাগলে কি-না বলে ছাগলে কি-না খায়।”
“নয়তো ক্লাসে আমাকে এভাবে এভয়েড করিস কেন? আবার প্রেমে পড়বি তাই?”
“টিনএজে তোমার মতো ফাতরা পোলার পাল্লায় পড়াটা তাও একটা কথা ছিল। এই বয়সে এসে এই ফাতরামি করি না আমি। আশেপাশে অনেক স্ট্যান্ডার্ড, তোমার চেয়ে এনাফ ম্যাচিউওর, এনাফ সুইট, এনাফ হ্যান্ডসাম, এন্ড টু মাচ জেন্টেল ম্যান আছে। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিও, মিস্টার গোবর চৌধুরী।”
আহনাফ এবার অরুণিকাকে টেনে দেয়ালের সাথে সেঁটে ধরলো। অরুণিকা আহনাফকে সরানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। হুট করে আহনাফ তার অধর ছুঁয়ে দিতেই চমকে উঠলো অরুণিকা। গলায় কি যেন আটকে গেলো তার। শব্দ বেরুচ্ছে না মুখ দিয়ে। আহনাফ অরুণিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমি কিন্তু আরেকটা বিয়ে করতে পারবো। তুই পারবি তো? স্ট্যান্ডার্ড, ম্যাচিউওর, সুইট, হ্যান্ডসাম, টু মাচ জেন্টেল কেউ যদি তোর আর আমার সম্পর্কের সত্যটা জেনে যায়, কি হবে তোর? না এই ঘাটের থাকবি, না ওই ঘাটের।”
আহনাফের কথায় অরুণিকার চোখ ভিজে উঠলো। সে আহনাফকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল, “যেমন অধিকার দেখাচ্ছো, মনে হচ্ছে আমি তোমার প্রথম বউ?”
“কেন বিয়ে হয় নি আমাদের?”
“তুমি বলছো এই কথা?”
“হ্যাঁ, জানিস না? ভুলে গেছিস?”
“তুমি মানো বিয়েটা? কেউ মানে আর?”
“মানুক আর না মানুক, তুই আরেকটা ধরবি কীভাবে, আগে সেটা বল? এই বিয়ে ক্যান্সাল না হলে তো অন্য জায়গায় বসতে পারবি না। মেয়েরা দুইটা বর রাখতে পারে না, বোকা।”
“তোমার কি মনে হয়, আমি বসে থাকবো? আমি আরেকটু লম্বা হই, তোমার পা ভেঙে তোমার হাতে ধরিয়ে দেবো।”
“এক টাকাও দেবো না আমি তোকে।”
“তোমার দেওয়া পয়সার ভাঙা টুকরাও লাগবে না আমার।”
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসায় সিঁড়ির সব ক’টা বাতি জ্বলে উঠলো। অরুণিকা আহনাফের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ সাথে সাথেই ছেড়ে দিলো অরুণিকাকে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে। অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো, “তুমি এতো বছর পর আজ কেন এই কথা তুললে?”
আহনাফ কোনো উত্তর দিলো না। সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। অরুণিকা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখ বেয়ে দরদর করে জল গড়িয়ে পড়ছে। তার ঝাপসা চোখ দু’টির সামনে অস্পষ্ট একটা রাত ভেসে উঠলো। অরুণিকা চোখ বন্ধ করে রাখলো। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকালো সে। সামনে আরাফকে দেখে তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে নেমে পড়লো সিঁড়ি বেয়ে। আর আরাফ ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে–