উত্তল তরঙ্গ পর্ব-০১

0
2

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“তোমাকে আমার জারজ বাচ্চার মা হতে হবে। এজন্যই তোমাকে তুলে আনা হয়েছে।”

সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা এক পুরুষের মুখে এহেন কথা শুনে চমকে উঠলো নেহা। সে বুঝে উঠতে পারছিল না এসবের মানে কি। এদিকে নেহাকে চুপ দেখে পুরুষ কন্ঠটি আবার বলে ওঠে,
“তো কাজ শুরু করা যাক?”

নেহা সাথে সাথেই চিৎকার করে বলে,
“খবরদার! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। যদি এমনটা করেন তো..”

পুরুষটি সহসায় নেহার কাছে এসে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কি করবে?”

নেহার গলার স্বর অস্পষ্ট হতে লাগল। এই প্রথম সে কোন পরপুরুষের এতোটা কাছাকাছি এসেছে। লজ্জা ও অস্বস্তিতে তার গলা দিয়ে আর কোন কথাই বের হলো না। নেহা শুধু চোখ বন্ধ করে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে লাগল। পুরুষটি নেহার এহেন অবস্থা দেখে তার গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে বলল,
“আমার জারজ বাচ্চার মা হওয়ার জন্য তৈরি হও।”

নেহা এবার কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে,
“কে আপনি? আর কেনই বা এমন করছেন? আমি তো আপনাকে চিনি না,,,,আপনার কোন ক্ষতিও করি নি।”

“হুশ,তোমার এত কথা শোনার জন্য এখানে তুলে আনা হয় নি। যে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তার জন্য তৈরি হও।”

“আপনি কি কোন সাইকো নাকি? এসব কি বলছেন? প্লিজ,আমায় ছেড়ে দিন। যেতে দিন আমায়। আজ আমার বিয়ে।”

সহসাই পুরুষটি বিকট শব্দে হেসে বলে উঠল,
“বিয়ে! হাহ, এসব বড্ড বোরিং কনসেপ্ট। এখনকার যুগে কে বিয়ে করে? সবাই তো জাস্ট রুমডেট, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড নিয়ে পড়ে থাকে।”

“আমি অন্য মেয়েদের মতো নই। প্লিজ আমায় যেতে দিন।”

“এত প্লিজ প্লিজ করো না। আমি এই শব্দটকে ঘৃণা করি।”

“কেন আমার সাথে এমন করছেন আপনি?”

পুরুষটি আর নেহার কোন কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করল না। তৎক্ষণাৎ নেহার নাকে একটি রুমাল চেপে ধরে পুনরায় তাকে অজ্ঞান করে দিলো। অতঃপর নেহার অচেতন দেহটা বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে উঠল,
“ইটস টাইম ফর এনজয়।”

বলেই নিজের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল।

★★
চারিদিকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত পুরো বিয়ে বাড়িটা যেন এক মুহুর্তে শোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আজমাইন চৌধুরী হতাশ হয়ে বসে পড়লেন সোফায়। তার সামনেই দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী বিপাসা চৌধুরী রাগী থমথমে স্বরে বললেন,
“তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম এই বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে। কিন্তু তুমি আমার কোন কথা শুনলে না। নিজের ভাইঝিকেই আমার ছেলের বউ করতে চাইলে। এখন এর ফলাফল কি হলো দেখেছ? আমাদের সবার মুখে চুনকালি মাখিয়ে তোমার মাসুম, এতিম ভাইঝি পালিয়ে গেল! খুব আদরের ছিল না তোমার। আজ দেখো কিভাবে তোমার মুখে জু*তা মেরে পালিয়ে গেল।”

আজমাইন চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন এমন সময় তার একমাত্র ছেলে আরাভ চৌধুরী সেখানে চলে এলো। আরাভের পরণে একটা সুন্দর শেরওয়ানি, মাথায় পাগড়ি। দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সে বিয়ের উদ্দ্যেশ্যে তার এই সাজ।

আরাভ এসেই বলে উঠল,
“আম্মু..আব্বু আমাদের উচিৎ এখন নিজেদের মধ্যে এসব তর্ক না করে নেহাকে খোঁজা। আমি নিশ্চিত, নেহা কখনো নিজে থেকে পালায় নি। নিশ্চয়ই ও কোন সমস্যায় ফেসেছে।”

আজমাইন চৌধুরী রেগে বলেন,
“এসব কথা আমাকে না বুঝিয়ে নিজের আম্মুকে বোঝাও। সে কোন কিছু না জেনে বুঝেই নিজের মতো কথা বানিয়ে নিচ্ছে।”

বিপাসা চৌধুরী মুখ বাকিয়ে বলেন,
“হ্যাঁ, তোমাদের বাপ-ছেলের কাছে তো আমিই ভিলেন। আর ঐ নেহা একদম ধোয়া তুলসীপাতা। বেশ, যাও খুঁজে বেড়াও ওকে। এত কিছুর পরেও তোমাদের টনক নড়ল না।”

আরাভ নিজের মা-বাবার এমন কথায় বেজায় বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে কপালে হাত দিয়ে বলল,
“তোমাদের যদি ঝগড়া করার হয় তো করতে থাকো কিন্তু আমার এখন নেহাকে খুঁজতে যেতে হবে। তো সেই কাজেই যাচ্ছি আমি।”

বলেই আরাভ বেরিয়ে যায়। এদিকে আজমাইন চৌধুরীও বলেন,
“আমারও আর এখানে থেকে কাজ নেই। তোমার বাজে কথা শোনার থেকে আমিও গিয়ে নিজের ভাইঝিকে খুঁজি সেটাই বরং ভালো হবে।”

বলে তিনিও বেরিয়ে যান। এদিকে বিপাসা চৌধুরী নাক মুখ কুচকে বলেন,
“ঐ মেয়ে আর ফিরবে নাকি? আর ফিরলেও কিছুতেই আমি ওকে নিজের ছেলের বউ হতে দেব না। যেই মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেছে তাকে আমি কিছুতেই নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দেব না।”

★★
নেহা নিভু নিভু চোখে আশেপাশে তাকালো। চারিপাশের অন্ধকার যেন গ্রাস করতে লাগলো তাকে। নেহা উঠে বশতেই এক শীতল হাওয়া বয়ে যায় তার শরীর বেয়ে। নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে গেছে। তার শরীরে একটা সুতোও ছিল না। নেহা লজ্জায় বিছানার চাদর জড়িয়ে আরষ্ঠ হয়ে চেচিয়ে ওঠে। এমন সময় হঠাৎ একটা পুরুষ এসে তার সামনে দাঁড়ায়। নেহা ডুকরে উঠে বলে,
“কে আপনি? আর কি করেছেন আমার সাথে?”

“এত করে যখন জানতে চাচ্ছ তো জেনে নাও, আমি হলাম আহির। আমার এই নামটাই যথেষ্ট আমার পরিচয় দেয়ার জন্য। আর যদি জানতে চাও কি করেছি তো…এর উত্তর হলো তোমাকে আমার বাচ্চার মা হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

“কেন করলেন আপনি আমার সাথে এমন? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার?”

“হুশ, এত কথা শুনতে চাই না। বাস্তবতাটা মেনে নাও এটাই তোমার জন্য ভালো। যদিও এখনো অনেক কিছুই মেনে নিতে হবে তোমায়।”

নেহা পুরো ভেঙে পড়লো আহির নামক এই অজানা ব্যক্তিটার কথায়। এক নিমেষেই তার জীবনটা কতো এলোমেলো হয়ে গেল! কোথায় সে ভেবেছিল আজ তার পছন্দের ব্যক্তি, তার আরাভ ভাইয়ের বউ হবে কিন্তু..তার ভাগ্যে যেন সেই সুখ একেবারেই লেখা ছিল না। বিয়ের সাজের জন্য পার্লারে যাওয়ার পথে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে আসে আর তারপরই তার জীবনে ঘটে যায় এই ট্রাজিক ঘটনা।

নেহা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কেন তাকে এত কিছু সহ্য করতে হলো। সে তো জ্ঞানত কারো ক্ষতি করে নি। ছোট বেলায় নিজের মা-বাবাকে হারানোর পর চাচার ভালোবাসা ও চাচির অবজ্ঞা মেনে বড় হয়েছে। তার চাচা আজহার চৌধুরী তাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন। তাই তো নিজের পুত্রবধূ করে কাছে রাখতে চাইছিলেন। অথচ আজ সেই চাচার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মতো মুখ তার নেই। তার মধ্যে যে পবিত্রতা, যে সতেজতা ছিল তা যেন এক লহমায় শেষ হয়ে গেল। নেহার এখন ইচ্ছা করছে নিজেকে শেষ করে দিয়ে এই অপবিত্র জীবন থেকে মুক্তি নেয়ার।

আহির নামক ব্যক্তিটা যেন তার এই ইচ্ছাটা বুঝল। আর তাই তো নেহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“নিজের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না ভুলেও।”

“আর কি চান আপনি আমার থেকে? আমার যা সর্বনাশ করার তা তো করেই নিয়েছেন। তাও কি আপনার শান্তি হয় নি?”

“আমি আমার বাচ্চাকে চাই। তোমাকে আমার বাচ্চাকে এই পৃথিবীতে আনতে হবে। সেটা যেকোন মূল্যেই। এজন্য আমার যা করা দরকার আমি করবো।”

নেহা ক্রোধে ফুসে উঠে বললে,
“আপনার মতো শয়তানের নাজায়েজ বাচ্চাকে জন্ম দেয়ার থেকে আমার গ*লায় দড়ি দিয়ে ম*রে যাওয়া ভালো।”

বলেই সে উঠতে নেবে এমন সময় আহির এগিয়ে এসে নেহার গলায় একটা ইনজেকশন পুশ করে। যাতে করে নেহা তখনই আবার জ্ঞান হারিয়ে আহিরের বাহুডোরে লুটিয়ে পড়ে। আহির একটা শয়তানী হেসে বলে,
“তুমি এত সহজে মরে গেলে যে আমি মজা পাবো না নেহা..তোমায় তড়পাতে দেখব, কষ্ট পেতে দেখব, নিজের মান সম্মান হারিয়ে পাগলের মতো কাঁদতে দেখব তাহলেই তো আমার শান্তি। এজন্য অপেক্ষা করো। মৃত্যু কোন শাস্তি হলো নাকি? তোমাকে মৃত্যুর থেকেও ভয়াবহ জীবন দেব আমি।”

চলবে ✨