উত্তল তরঙ্গ পর্ব-১৩+১৪

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিল। তার মেয়ে এখনো অনেক ছোট, একদম তার কাছছাড়া হতে চায় না। এতটুকুনি একটা মেয়েকে ফেলে একা কোথাও কাজে যাওয়ায় সম্ভব না নেহার পক্ষে। তাই আপাতত কোন কাজে যোগ দেয় নি সে। কিছু সময় পর দৃঢ়তা তার ৫ বছর বয়সী ছেলে তাজিবকে কোলে নিয়ে এলো। সে এসেই সহাস্যে বলল,
“কি ব্যাপার নেহা? তোমার মেয়ে তো দেখছি ভীষণ শান্ত। এসেছে থেকে সেভাবে কাঁদতে দেখি নি।”

নেহা বলে,
“হয়তো ও জানে ওর মায়ের পরিস্থিতি কতোটা কঠিন, তাই শুরু থেকে সেই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে চাচ্ছে।”

“তোমাকেও শক্ত হতে হবে নেহা। নিজের জন্য না হলেও নিজের মেয়ের জন্য। এই সমাজে একা ঠিকে থাকা অনেক কঠিন। তোমাকে নিজের মেয়েকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে হবে।”

নেহা এবার মাথা একটু নত করে বলে,
“এতটুকু বাচ্চাকে নিয়ে তো এখন আমি কোন কাজ করতে পারব না আপু..কিন্তু এভাবে আর কতদিন আপনার দয়ায় থাকব।”

“ধুর পাগলি। এসব নিয়ে ভেবো না। তোমার মেয়ে আরেকটু বড় হোক, তারপর তুমি জব করো৷ আমি অনেক ভালো কোন অফিসে তোমার জবের ব্যবস্থা করে দেব। তোমার তো ভার্সিটি লাইফে সিজিপিএ অনেক ভালো ছিল তাই এই নিয়ে বেশি বড় কোন সমস্যা হবে না৷ আর তুমি এখন নিজেকে আমার ছোট বোন ভাবতে পারো তাই নিঃসংকোচে এখানে থাকো।”

নেহা আবেগপ্রবণ হয়ে দৃঢ়তাকে জড়িয়ে ধরে। দৃঢতা নেহাকে আশ্বাস দেয়। এরমধ্যে তাজিব নেহার ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে,
“আম্মু, তোমায় যে আমি বলেছিলাম আমার একটা ছোট বোন লাগবে, ও কি আমার সেই বোন?”

দৃঢ়তা হেসে নিজের ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
“হ্যাঁ, সোনা। ও তোমার বোন। তুমি ওকে পেয়ে খুশি তো?”

তাজিব তো আনন্দে ফেটে পড়ে বলে,
“ভীষণ খুশি আম্মু। ওকে আমি অনেক আদর করব। ওকে অনেক চকলেট, টয় ও ড্রেস কিনে দেব। ওর সাথে খেলব।”

“কিন্তু ও তো এখনো অনেক ছোট।”

“আমি জানি, আমার বোন তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে। ওকে আমি অনেক আদরে বড় করব।”

এসব কথা শুনে নেহা আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,
“আমার মেয়েটার ভাগ্য অনেক ভালো বাবা, যে ও তোমার মতো এত ভালো একটা বড় ভাই পেল।”

“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি সবসময় এরকম একটা বোন চেয়েছি। আমি ওকে সবসময় আগলে রাখব।”

নেহার চোখে জল চলে আসে। তবে এ কষ্টের অশ্রু নয়, এ তার আনন্দের অশ্রু। সবসময় তো এরকম একটা সুন্দর জীবনই সে তার মেয়ের জন্য চেয়েছিল। নেহা ভাবে, তার জীবন যেমনই হোক সে তার মেয়েকে একটা সুখের জীবন দেবে। অতীতের কোন কালো ছায়া নিজের মেয়ের উপর পড়তে দেবে না। যখন আপনজনরা পাশে নেই তখন এই অচেনা শহরের মানুষগুলোই যেন তার আপন হয়ে গেল। যাদেরকে নিয়ে সে একটা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে।

★★★
আরাভ নিজের রুমে এসে মনমরা হয়ে বসে আছে। নেহাকে সে চারিদিকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু নেহার কোন খোঁজ পায় নি। ঘরে বসে হালকা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আরাভ৷ সে জানে, তার লড়াইটা সহজ নয়। নেহা অনেক কষ্ট নিয়ে দূরে চলে গেছে। আপনজনরা যখন কষ্ট দেয় তখন তা মেনে নেয়া কঠিন। আর নেহা তো নিজের সবথেকে খারাপ সময়ে আপনজনদের থেকে কোন সমর্থন পায় নি।

আরাভের ভাবনার মাঝেই বিপাসা চৌধুরী তার রুমে এসে বললেন,
“আরাভ, তুই এসেছিস। আয় বাবা কিছু খেয়ে নে। একেই তোর আব্বুর এই অবস্থা তার উপর তুই এভাবে না খেয়ে থেকে নিজের শরীরটা আর খারাপ করিস না।”

আরাভ বলে ওঠে,
“নাহ, আম্মু। আমার এখন খিদে নেই।”

“এভাবে না খেয়ে থাকলে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি। দয়া করে খেয়ে নে বাবা। আর তুই তো জানিস, এখন তুই আমার একমাত্র ভরসা। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজের অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় যাব? এক মুহূর্তেই যে, আমাদের পরিবারটা একদম এলোমেলো হয়ে গেল। না জানি আল্লাহ আমাদের কোন পাপের ফল দিচ্ছেন।”

“নেহার প্রতি করা অন্যায়ের ফল আমরা পাচ্ছি আম্মু!”

“তুই আবার ঐ অপয়টার কথা বলছিস? ওর জন্যই তো আজ এত কিছু।”

“আম্মু, প্লিজ তুমি আর নেহার নামে এরকম কথা বলো না। আমি তা মেনে নিতে পারব না।”

“সত্যিই তো বলছি৷ যাইহোক, তুই খাবার খেয়ে নে। আমি ঘটককে বলে রেখেছি, সামনের মাসেই একটা শুভ দিন দেখে..”

“ঘটক মানে? কি চাইছ তুমি?”

“আমি তোকে এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দিতে চাইছি৷ আর কিছু না। ঐ অপয়া মেয়ের স্মৃতি নিয়ে কেন তুই নিজের জীবন কাটাবি? তোর জীবন আবার নতুন করে শুরু কর।”

“না, আম্মু। আমি এই নিয়ে আর কোন কথা শুনব না। নেহাকে অবিশ্বাস না করে আমি যেই ভুল করেছি আবারো সেই একই ভুল কিছুতেই করতে পারব না। প্রয়োজনে নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নেহার জন্য অপেক্ষা করে যাব ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।”

“আরে ও এখন অন্য কারো বাচ্চার মা.. বুঝছিস না কেন?”

“তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আম্মু। আমি শুধু আমার নেহাকে ফেরত চাই।”

বলেই সে নিজের পকেট থেকে বের করে নেহার একটি ছবি দেখে।

★★
নাতাশার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে আহির। নাতাশা ভয়ে শিটিয়ে গেছে।

আহির চিৎকার করে বলে,
“তোর সাহস কি করে হলো এই কথা বলার? তোকে আমি নিজের বান্ধবীর থেকে বেশি কিছু ভাবি না। আর তুই এমন কথা বলে আমাদের এই সম্পর্কটাকে নষ্ট করতে চাইছিস?”

“আহির, আমার কথাটা শোন। আমি এত দিন নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আর সেটা সম্ভব না। আমি তোকে ভালোবাসি আর..”

নাতাশা নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই আহির ঠাস করে তার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নাতাশা অবাক স্বরে বলে,
“তুই আমায় মারলি আহির?”

“হ্যাঁ, মারলাম। এই নিয়ে যদি আবার কথা বাড়াস তাহলে..তুই শুধুই আমার কাছে একজন বন্ধু। এর বেশি কিছু না।”

“নিজের কথা না ভাবিস নিজের মেয়ের কথা ভাব। আমি তোর মেয়ের মা হতে প্রস্তুত।”

“লাগবে না ওর কোন মায়ের। আর তুই যদি এই নিয়ে আর একটা কথা বলিস তাহলে আমাদের মধ্যকার সব সম্পর্ক শেষ।”

নাতাশা দাঁতে দাঁত খিচে বলে,
“বেশ, বলব না আর কিছু। কিন্তু তুই কি সারাজীবন এভাবে একা থাকবি? জীবনে আগাবি না?”

“আমার জীবনের চিন্তা নিশ্চয়ই তোকে করতে হবে না।”

“তুই আবার ঐ নেহাকে জীবনে জড়াতে চাস নাকি। হাজার হোক, তোর সন্তানের মা বলে কথা। একটু মায়া তো থাকবে।”

আহির নাতাশার গলা চেপে ধরে বলে,
“ঐ নেহা আমার কাছে ফেলে দেয়া টিস্যু পেপারের মতো। যাকে তুলে নেয়ার রুচিবোধ আমার নেই। আই উইশ, আমার আর আমার মেয়ের জীবনে ওর ছায়াও কখনো না পড়ুক।”

বলেই সে নাতাশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। নাতাশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“কিন্তু ছায়া তো পড়বেই আহির। তুই ভুলে যাচ্ছিস, তোর আরেক মেয়ে নেহার কাছেই আছে৷ ও যদি কোন দিন ফিরে এসে আহিরাকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায় তখন কি করবি?”

আহির নিজের ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“যদি এমন দিন কখনো আসে তাহলে আমি নেহাকে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব।”

এই উত্তরে যেন এই বঞ্চনার স্বীকার হয়েও নাতাশা বিজয়ীর হাসি হাসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা একদম ফর্মাল ড্রেসআপ করে তৈরি হয়ে নিয়েছে। আজ থেকে নিজের জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে সে। একদিন খালি হাতে সে এই ঢাকা শহরে এসেছিল। তবে সেই অসহায় নেহার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মাঝখানে কেটে গেছে ৭ মাস। নেহার মেয়েটা এখন বড় হয়েছে। হাটতে না পাড়লেও হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। যার ফলে নেহা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটাই সঠিক সময় নিজের ক্যারিয়ারে মন দেয়ার। এভাবে আর কতদিন অন্যের দয়ায় বাঁচবে তারা? এবার তাই নিজে কোন কিছু করার চেষ্টা করলো সে। নেহার একাডেমিক রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল,ইংরেজি বলার দক্ষতাসহ তার প্রোগামিং স্কিলও অনেক ভালো ছিল। কেননা, ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে সে এসব কিছু শিখে নিয়েছিল। তার উপর দৃঢ়তার সুপারিশ তো ছিলই। এজন্য জবটা পেতে বেশি অসুবিধা হয় নি। জবটাও বেশ ভালো, একটা কর্পোরেট অফিসে জব পেয়েছে সে। মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা, যা ক্রমান্বয়ে হয়তো বাড়বে। এসব কিছু মিলিয়ে নেহা অতীতের যন্ত্রণা ভুলে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নেহা যখন তৈরি হচ্ছিল তখনই আনিকা চৌধুরী নেহার মেয়েকে কোলে নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। নেহার মেয়েটা আধো আধো স্বরে বলে ওঠে,
“আমু..”

নেহা একপলক নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে। তার মেয়েটা আর আগের মতো কঙ্কালসার নেই। এই কয়দিনে বেশ ভালোই স্বাস্থ্য হয়েছে, দেখতেও অনেক কিউট হয়ে গেছে। আনিকা চৌধুরী নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“দেখো, তোমার মেয়ে নিজের আম্মুর কাছে আসার জন্য কাঁদছিল। তাই ওকে নিয়ে এলাম।”

নেহা আনিকা চৌধুরীর কোল থেকে নিজের মেয়েকে নিজের কোলে নেয়। তার মেয়ের নাম সে রেখেছে “নিয়া”। নিয়াকে কোলে নিয়ে নেহা বলে,
“আমার ভালো মেয়ে। তুমি কিন্তু একদম শান্ত বাচ্চা হয়ে থাকবে। কোন দুষ্টামি করবে না। আর নানিকে একদম বেশি জ্বালাবে না।”

ছোট্ট নিয়া কথাগুলো বুঝতে পারে কি না সেটা বোঝা যায় না। সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমনিতে বাচ্চা হিসেবে সে ভীষণ শান্ত, বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকে। তবে মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে কোন কারণে বিরক্ত হলো এতো জোরে কান্না করে যে আশেপাশের সবাই বিরক্ত হয়ে যায়।

এমন সময় তাজিব ছুটে এসে বলে,
“তুমি একদম চিন্তা করো আন্টি। ওর ভাইয়া আছি তো, আমি ওকে সামলে নেব।”

নেহা হেসে বলে,
“তুমি তো নিজেই একটা বাচ্চা, আরেকটা বাচ্চাকে কিভাবে সামলাবে।”

তাজিব ভাব নিয়ে বলে,
“আমাকে আন্ডারএস্টিমেট করো না আন্টি, আমি যেমন তেমন বাচ্চা নই, আমি হলাম সুপার বাচ্চা। আমি সব করতে পারি।”

তাজিবের কথা শুনে আনিকা চৌধুরী ও নেহা দুজনেই হেসে ফেলে। এমন সময় দৃঢ়তা এসে বলে,
“নেহা, তুমি প্রস্তুত তো। জলদি বেরিয়ে পড়ো। আজ অফিসে তোমার প্রথম দিন। আজ লেইট করা ঠিক হবে না।”

নেহা মাথা নাড়িয়ে বলে,
“জ্বি, আপু।”

অতঃপর সে নিয়ার গালে ও কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে নিয়াকে আনিকা চৌধুরীর কোলে তুলে দিয়ে বলে,
“ওকে দেখে রাখবেন আন্টি, আর নিয়া মা..তুমিও কিন্তু একদম ভালো বেবি হয়ে থাকবে।”

বলেই দৃঢ়তার সাথে বেরিয়ে পড়ে নেহা। তারা বেরিয়ে যেতেই আনিকা চৌধুরী ও তাজিব। মেতে ওঠে নিয়াকে নিয়ে। তাজিবের বাবা ইউভান চৌধুরী একজন নেভি হওয়ায় বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। ৫/৬ মাস পর পর দেশে আছে। কিছুদিন আগেই তিনি এসে গেছেন। নেহার কথা শুনে অনেক আফসোস করেছেন। এমনকি নেহা ও তার মেয়েকে সবরকম সমর্থনও করতে বলে গেছেন নিজের পুরো পরিবারকে।

★★
বড় একটা কুশনে বসে আছে নাতাশা। তার কোলে আহিরের মেয়ে আহিরা। আহির বর্তমানে কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায় নাতাশাই তাকে সামলাচ্ছে। আহিরাকে এভাবে সামলাতে বিরক্ত হলেও তার কিছু করার নেই। কারণ আহিরের মন পাওয়ার জন্য তার একমাত্র উপায় এটাই। মাঝখানে একবার আহিরা নাতাশার চুল ধরে টানলো। এতে তার ইচ্ছা করছিল বাচ্চাটাকে আছাড় মা*রতে কিন্তু সেই সাহসও তার নেই। নাতাশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আহিরা এখন ৭ মাস বয়সী, আধো আধো কথা বলতে পারে। আহিরকে “পাপা” বলে ডাকে। আহিরাকে একা পেয়ে নাতাশার মাথায় হঠাৎ করে একটা দুষ্টুবুদ্ধি এলো। সে আহিরাকে আদর করতে বলে,
“সোনা মেয়ে..আমি তোমার কি হই জানো? বলো তো মাম্মা..”

আহিরা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে নাতাশার দিকে। শুরুতে কিছুই বলে না। নাতাশা এতে বিরক্ত হলেও বারকয়েক চেষ্টা করে আহিরার মুখ থেকে মাম্মা ডাক শোনার। কিছু সময় পরেও যখন আহিরা বলছিল না তখন অধৈর্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে বলে,
“এটা বাচ্চা নাকি আপদ..ইচ্ছা করছে গলা টিপে মেরে ফেলি। আহিরকে দেখে তো খুব পাপা, পাপা করে তাহলে আমাকে মাম্মা বলতে কি সমস্যা?”

এমন সময় হঠাৎ করে নাতাশা খেয়াল করে তার পড়নের দামী শাড়িটা ভিজে গেছে। দ্রুত চেক করতেই সে বুঝতে পারে আহিরা তার শরীরে মূত্র বিসর্জন করেছে। এতে সে রেগে গিয়ে আহিরাকে সোফায় বসিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“এটা কি হলো? আমার এত দামি শাড়ি..এটা বাচ্চা না আপদ..”

“নাতাশা…”

হঠাৎ একটি গর্জন কানে আসতেই নাতাশা সতর্ক হয়ে গেল। আহির দ্রুত বেগে এসে নাতাশার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“তোর সাহস কি করে হলো আমার মেয়েকে নিয়ে এমন কথা বলার?”

নাতাশা ঢোক গিলে বলল,
“আসলে আহির..আমার নতুন দামী শাড়ি এটা..অনেক প্রিয়..”

“তোর কয়টা দামী শাড়ি লাগবে বল আমায়, আমি তোকে কিনে দেব। কিন্তু আমার মেয়েকে নিয়ে এমন শব্দ আমি বরদাস্ত করব না। আর কোনদিন যদি এমন কিছু শুনি তাহলে তোর জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলব।”

“তুই এতো সিরিয়াস কেন হচ্ছিস আহির? আমি তো জাস্ট..”

“গেস্ট লস্ট..”

“আহির..আমার কথাটা..”

“গো টু দা হেল। আমার মেয়ের পাশে তোকে আর থাকতে হবে না। আমি তো তোকে থাকতে বলিনি। ওর প্রতি এমন বিভেবিয়ার আমি একদম টলারেট করব না।”

নাতাশা বুঝতে পারে আহিরের মন পেতে তাকে আহিরার প্রতি নরম হতে হবে। তাই সে নতস্বরে বলে,
“সরি, আর কখনো এই ভুল হবে না। আমাকে একটা সুযোগ দে।”

“দিলাম সুযোগ। এখন যা আমার সামনে থেকে।”

নাতাশা যাওয়ার সময় একবার আহিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“একদিন এই বাচ্চাই আমার তুরুপের তাস হবে!”

★★
আরাভের দাঁড়ি যেন একটু বেশি লম্বা হয়েছে,চুল গুলো উস্কোখুশকো। দীর্ঘ ৭ মাস ধরে সে নেহাকে নানা যায়গা খুঁজেছে কিন্তু কোন খোঁজ পায়নি। এর ফলে নিজের যত্ন নিতেও ভুলে গেছে সে। নেহার একটা পুরানো ছবি দেখে বলে,
“কোথায় তুই নেহা? আর কখনো কি ফিরবি না? এত অভিমান তোর?”

এমন সময় বিপাসা চৌধুরী ছেলের রুমে এসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“চুল-দাড়ি গুলো ছেটে আয় বাবা। এভাবে নিজের অযত্ন করিস না। একেই তোর আব্বুর এই অবস্থা আর..”

“আমি যে আর পারছি না আম্মু। একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি।”

বিপাসা চৌধুরী জানেন না তিনি কি করবেন। এই ৭ মাসে বাস্তবতা তাকেও বদলে দিয়েছে। আজমাইন চৌধুরীর অসুস্থতার জন্য ইতিমধ্যেই তাদের ব্যবসা দেউলিয়া হবার পথে। তারমাঝে আরাভেরও এই অবস্থা। বিপাসা চৌধুরীর সব অহংকার যেন ধুলোয় মিশে গেছে এসবে!

★★
নেহা তার অফিসে পা রাখলো। এত বড় অফিস দেখে তার বড্ড ভয় হলো। তার নতুন কর্মস্থল এটা। চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে সে বলে,
“ধন্যবাদ আল্লাহ, আমাকে এত সুন্দর একটা জীবন দেয়ার জন্য। আমি কখনোই ভাবি নি অতীতের অন্ধকার ঠেলে আবার এত আলো আসবে আমার জীবনে। এখন তোমার কাছে একটাই চাওয়া, এই আলো যেন বজায় থাকে আজীবন। কখনো নিভে না যায়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ✨