উত্তল তরঙ্গ পর্ব-২৮+২৯

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নিয়াকে সাথে নিয়ে নেহা ফিরলো বাসায়। আরাভ তখনো বসে অপেক্ষা করছিল তাদের দুজনের জন্য। নিয়াকে নিয়ে এনে আরাভের সামনে দাঁড় করালো নেহা। নিয়া অবাক চোখে আরাভের দিকে তাকালো। আরাভের মনে যদিও কিছু দ্বিধা ছিল নিয়াকে নিয়ে। তবুও সে পরম মমতার সহিত নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“এই বুঝি তোর মেয়ে? একদম তোর মতোই দেখতে হয়েছে।”

নেহা মাথা নাড়ায়। নিয়া ভীষণ উৎফুল্ল স্বরে বলে ওঠে,
“তুমি বুঝি আমার মামা?”

নিয়ার মুখের কথাটা শুনে আরাভ দমে যায়। সে বুঝতে পারে, সে নেহার মেয়ের মামা হয়েছে। অথচ তার তো নেহার বাচ্চার বাবা হবার কথা ছিল। যদি মাঝখানে এমন একটা ঘটনা না ঘটতো তাহলে হয়তো আজ..আরাভ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভাগ্য সত্যিই বড় নির্মম তার প্রতি। সে ছোট্ট নিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, আমি তোমার মামা হই। তোমাদের জন্য তো তেমন কিছু আনতে পারিনি তবে এই কিটক্যাট চকলেটটা নাও। আশা করি ভালো লাগবে।”

“ধন্যবাদ, মামা।”

আরাভের কোলে উঠে নিয়াকে খুশি হতে দেখে নেহাও আনন্দিত হয়। নেহা সবসময়ই নিজের পরিবারের আপন আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ করে। নিজের মুখে কখনো হয়তো বলে না কিন্তু নেহা খেয়াল করেছে নিয়া যখনই তার বান্ধবীদের বড় ফ্যামিলির কথা শোনে তখন তার মনেও আশা জাগে যে, তারও এমন একটা বড় ফ্যামিলি হবে। তবে নেহা ছোটবেলা থেকে নিয়াকে বুঝিয়েছে, তারা একা। এখন হয়তো বাস্তবতা মেনে নিতে তার একটু কষ্ট হবে। তবে নেহা নিশ্চিত এতে করে নিয়া খুশিও হবে।

আরাভ নেহাকে বলে,
“তোর মেয়ে তো ফিরে এসেছে এবার তাহলে আমরা রওনা দেই?”

নেহা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
“হ্যাঁ, যেতে যখন হবেই তখন আর দেরি করে লাভ কি?”

নিয়া অবাক স্বরে জানতে চায়,
“আমরা কোথায় যাব আম্মু?”

আরাভ নিয়ার গালে চুমু খেয়ে বলে,
“আমরা এখন তোমার মামা-বাড়িতে যাব।”

নিয়া অবাক স্বরে বলে ওঠে,
“আমার মামার বাড়িও আছে?”

“হ্যাঁ, আছে। আজ তুমি সেখানে যাবে।”

কিছু সময় পর,
নেহা, নিয়া আরাভের সাথে বাসে রওনা দিয়েছে গাজীপুরে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে। নেহার মনে এখন হাজারো সংকোচ। আজ থেকেই ৫ বছর আগে যেই জীবনকে পিছনে ফেলে এসেছিল আজ আবার সেই জীবনেই ফিরতে হবে তাকে। নেহার পাশেই আরাভের কোলে বসে আছে নিয়া। দুজনের বড্ড ভাব হয়েছে। নিয়ার নিজের মামাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে আর আরাভও নিয়ার দিকে স্নেহের হাত বাড়িয়েছে।

নেহা জানে, আরাভ বাচ্চাদের কতটা ভালোবাসে। তাদের মধ্যে যখন সম্পর্ক ছিল তখন আরাভ প্রায়শই তাকে বলতো, তার অনেক অনেক বাচ্চা লাগবে। নেহা এসব কথা শুনে লজ্জায় গুটিয়ে যেত। এসব দিন মনে করে নেহার বুকের চাপা দুঃখ যেন আরো প্রকাশ পায়। সে মনে করে কিভাবে আহির নামক সেই ঝড়ের কবলে পড়ে তার জীবনটা একদম এলোমেলো হয়ে যায়। নেহা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
“অতীতে যা হবার হয়েছে। তবে সামনে যা হবে সবটাই ভালো হবে।”

★★
আহির সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরলো৷ সে অফিস থেকে ফিরতেই মুমিনুল পাটোয়ারী তার পথ আটকে বললেন,
“কি রে আহির, বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবে দেখলি?”

আহির আনত স্বরে বলল,
“আরেকটু সময় দাও আব্বু। এত বড় সিদ্ধান্ত এত জলদি নিতে চাইছি না।”

মুমিনুল পাটোয়ারী কিছু বলতে যাবেন এমন সময় আহিরার ঘর থেকে বিকট একটা শব্দ আসে। আহির আর বাক্যব্যয় না করে ছুটে যায় আহিরার রুমের দিকে। আহিরার রুমে যেতেই সে দেখতে পায় আহিরার রুমের সব জিনিসপত্র মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আহিরা একটা ফুলদানি ফেলতে গেলে আহির ছুটে গিয়ে আহিরাকে আটকে বলে,
“কি হয়েছে প্রিন্সেস? তুমি এমন করছ কেন?”

আহিরা বলে ওঠে,
“আমি সব শেষ করে দেব পাপা। তুমি তো বলেছিলে আমি বেস্ট? তাহলে ওরা কেন আমায় স্নো হোয়াইট বানালো না? কেন অন্য একটা মেয়ে স্নো হোয়াইট হলো?”

“মামনি, আমার কথাটা একবার শুনো..”

“কিছু শুনবো না আমি। স্নো হোয়াইট শুধু আমিই হবো৷ আর শায়লা ম্যাম নামের স্কুলের এক মিস আমার সাথে অনেক রুড বিভেব করছে। তুমি এই দুজনের একটা ব্যবস্থা করো। নাহলে আমি শান্ত হবো না।”

আহিরের দুচোখ অগ্নিময় হয়ে ওঠে। নিজের হাত দুখানা মুষ্টিবদ্ধ করে সে বলে,
“আমার প্রিন্সেসকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের সবাইকে আমি দেখে নেবো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তুমিই স্নো হোয়াইট হবে। আর ঐ মিস শায়লার ব্যবস্থাও আমি করছি।”

আহির নিজের ফোন বের করে আহিরার স্কুলের উচ্চ মহলের এক লোককে ফোন করে বলে,
“২৪ ঘন্টার মাঝে আপনাদের স্কুল থেকে মিস শায়লাকে বহিষ্কার করুন। আর আপনাদের স্কুলে যে প্রোগ্রামটা হতে চলেছে সেখানে আমার মেয়ে আহিরা স্নো হোয়াইট হবে। আমি যা বলছি, তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। আদারওয়াইজ, আপনাদের সবাইকে আমি দেখে নেব। পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজের সিইও আমি। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের নিশ্চয়ই ধারণা আছে?”

★★
আরাভের সাথে সাথে ধীর পায়ে নিজের তার বাড়ি দিকে এগিয়ে চলল নেহা। যতই কাছে যাচ্ছিল নেহার হৃদস্পন্দন যেন ততই দ্রুত হচ্ছিল। আরাভ নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“ভয় পাস না নেহা। আমি তোর পাশে আছি।”

“এই কথাটা যদি আজ থেকে ৫ বছর আগে বলতে তাহলে আমাদের জীবনটা অন্যরকম হতে পারব।”

আনমনে বললো নেহা। আরাভ অপরাধবোধে দগ্ধ হলো। আরাভ নেহাকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ নতুন এলাকায় এসেছিল। আসতে আসতে সে বলে,
“বাবার অসুস্থতার জন্য আমাদের পুরাতন বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখানে আমরা সম্পূর্ণ একটা নতুন এলাকায় থাকি। সেখানে কেউ তোর সম্পর্কে কিছু জানে না। তাই তোকে এ নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে হবে না। আর আম্মুও এখন আর কিছু বলবে না তোকে।”

নেহা কিছুটা আশ্বস্ত হলো। আরাভ বাড়ির সামনে এসে কলিংবেল বাজালো। একটু পরই বিপাসা চৌধুরী এসে দরজা খুললেন। আরাভকে দেখে তিনি যতোটা না অবাক হলেন তার থেকে বেশি অবাক হলেন আরাভের কোলে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখে। অবাক স্বরে বললেন,
“তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরলি যে, তুই তো ঢাকায় চাকরি খুঁজতে গেছিলি? আর এই বাচ্চাটা কে?”

একটু পরই নেহা ধুকপুক বুক নিয়ে এগিয়ে আসে। নেহাকে দেখেই বিপাসা চৌধুরী থমকে যান। নেহাও কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে। অতীতের তিক্ত ব্যবহার আজো তার মনে গেঁথে আছে। বিপাসা চৌধুরী আচমকা এগিয়ে এলেন। নেহাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত স্বরে বললেন,
“তুই ফিরে এসেছিস নেহা? এতদিন পর তাহলে তোর সব অভিমান ভাঙল? জানিস, বিগত ৫ বছর ধরে আমি নিজের সব ভুল উপলব্ধি করতে পেরেছি। তুই তো ছিলি আমাদের বাড়ির সৌভাগ্য। তুই চলে যাবার পরই আমাদের জীবনে যেন কালো ছায়া নেমে এসেছে। তুই ফিরে এসেছিস, এখন আমার স্থির বিশ্বাস সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

“বড় আম্মু তুমি কেমন আছ?”

“আছি কোনরকম। কিন্তু তোকে দেখে ভালো লাগছে। জানি, আমি অতীতে যা করেছি তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ নেই কিন্তু..”

“ক্ষমা চাইতে হবে না বড় আম্মু৷ আমি তোমার উপর কোন রাগ রাখিনি।”

বিপাসা চৌধুরী খুশি হয়ে নেহার হাত ধরে বলেন,
“চল আমার সাথে, তোর বড় আব্বুর সাথে দেখা করবি। আমি নিশ্চিত তোকে দেখলেই তোর বড় আব্বু একদম আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে।”

বলেই নেহাকে নিয়ে ভেতরে যেতে থাকেন বিপাসা চৌধুরী। নিয়া আরাভকে জিজ্ঞেস করে,
“ঐ মহিলাটা কে ছিল মামা? উনি আম্মুকে নিয়ে কোথায় গেল?”

“উনি আমার আম্মু, তোমার নানী হবেন।”

“আচ্ছা।”

বিপাসা চৌধুরী নেহাকে আজমাইন চৌধুরীর রুমে নিয়ে গিয়ে বলেন,
“ওগো, তুমি দেখো, তোমার নেহা ফিরে এসেছে। এবার অন্তত তুমি সেরে ওঠো।”

নেহা ছুটে গিয়ে আজমাইন চৌধুরী পাশে বসে আলতো স্বরে বলে ওঠে,
“বড় আব্বু!”

কথাটা শোনামাত্রই আজমাইন চৌধুরীর আঙুল নড়ে ওঠে। বিপাসা চৌধুরী তা দেখে খুশি হয়ে যান।

চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা তার বড় আব্বুর পাশে বসে পড়লো। আজমাইন চৌধুরী যেন নড়ে উঠলেন। ফ্যালফ্যাল চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু কিছু বলতে পারলেন না। নেহা আজমাইন চৌধুরীর হাতটা আলতো করে স্বর্শ করে বলল,
“তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো বড় আব্বু? তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছ? আমার সাথে কথা বলবে না?”

আজমাইন চৌধুরী কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়াতে লাগলেন। কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না। নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। বিপাসা চৌধুরী নেহার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“তুই চলে যাবার কিছু দিন পর হঠাৎ করে একদিন তোর বড় আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্ঞান হারানোর আগে আরাভকে শুধু এটুকুই বলে যে, নেহা কোন দোষ করে নি। ওকে ফিরিয়ে আন। এটা বলেই তোর বড় আব্বু জ্ঞান হারান। তারপর থেকে আজ অব্দি ওনার এই অবস্থা।”

“তার মানে বড় আব্বু আমাকে অপরাধী মনে করে না? উনি আমার নির্দোষতা বুঝেছেন?”

বিপাসা চৌধুরী মাথা নাড়ান

“শুরুতে আমিও এটা মানতে পারি নি। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম, তোর বড় আব্বু এইরকম পরিস্থিতিতে নিশ্চিহ্ন মিথ্যা বলবে না। তাছাড়া…”

“তাছাড়া কি?”

“তোর বড় আব্বু অসুস্থ হবার আগে তার ফোনে একটা কল এসেছিল। সেই ফোনকলের পরই তোর বড় আব্বুর এই অবস্থা। আমি জানি না, এর পেছনে কে বা কারা আছে। আরাভ পুলিশকে ফোন নম্বরটা দিয়েছিল কিন্তু তারাও ট্রেস করতে পারে নি। মনে হয়, সিমটা জাল ছিল।”

নেহার অবাক হবার মাত্রা বাড়ে। সে নিজের চোখের জল মুছে বলে,
“আমি ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছি এসবের পেছনে কে আছে। আর তাকে আমি ছাড়বো না।”

আর মনে মনে বলে,
“ঐ আহির পাটোয়ারী শুধু আমার আর আমার মেয়েকে অসহায় অবস্থায় ফেলেই ক্ষান্ত হন নি, শুধুমাত্র ওনার জন্য আজ আমার বড় আব্বুর এই অবস্থা। ওনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না। অনেক হয়েছে লুকোচুরি, এই ৫ বছর আমি অনেক পালিয়ে বেড়িয়েছি। কিন্তু এবার আর না। এবার আমি ঐ আহির পাটোয়ারীকে ওনার সমস্ত কাজের উচিৎ শিক্ষা দেব। আমার প্রতি, আমার মেয়ের প্রতি এবং আমার বড় আব্বুর প্রতি করা সব অন্যায়ের শাস্তি উনি পাবেনই।”

বিপাসা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“তুই কি জানিস নেহা এসবের পেছনে কে আছে? তাছাড়া..যদিও আরাভ আমাকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে মানা করেছে কিন্তু তবুও..মানে তোর বাচ্চার বাবা কে? এটা আজও আমাদের সবার কাছে একটা বড় রহস্য। আমি হয়তো এক সময় তোকে দুই চোখে দেখতে পেতাম না, তবুও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, তুই আর যাই করিস কারো সাথে প্রেম করা বা পালিয়ে যাবার মতো মেয়ে নস। খটকা আমার মনেও হয়েছিল। কারণ তোর উপর তোর বড় আব্বু, আরাভ ওরা যেভাবে নজর রাখত তাতে করে তোর কারো সাথে প্রেম করা বা পালিয়ে যাওয়া এতটা সোজা নয়। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন রহস্য আছে। আমি সেইসময় তোর প্র‍তি ক্ষোভ থেকেই এটা ভেবে নিয়েছিলাম যে তুই পালিয়ে গেছিস। আসল সত্যটা জানারও চেষ্টা করিনি৷ আজ জানতে চাইছি, বলবি আমায়?”

নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“তোমাদের সবাইকে আমি সব সত্য বলব বড় আম্মু। শুধু আমাকে একটু সময় দাও, আর আমাকে এটুকু কথা দাও যে সব সত্য জানার পরে তোমরা কেউ আমার মেয়ের প্রতি বিরূপ মনোভাব ধারণ করবে না। আমি জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি কিন্তু নিজের মেয়েকে আমি কোন কষ্ট পেতে দিতে চাই না।”

বিপাসা চৌধুরী অনুতপ্ত স্বরে বলেন,
“এক ভুল মানুষ বারবার করে না রে নেহা। একবার তোকে অবিশ্বাস করে আমরা যেই ভুল করেছি তার শাস্তি আজও পেয়ে যাচ্ছি। এর পুনরাবৃত্তি করার সাহস আমাদের নেই।”

এমন সময় নিয়া আরাভের কোলে চড়ে আসে সেখানে। আরাভ নিয়াকে সামনে নিয়ে এসে আজমাইন চৌধুরীকে দেখিয়ে বলে,
“এই হলো তোমার বড় নানা।”

নিয়া আজমাইন চৌধুরীর দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে বলে,
“বড় নানা এভাবে শুয়ে আছে কেন? কি হয়েছে ওনার?”

“তোমার বড় নানার একটা বড় অসুখ হয়েছে। তাই সে এভাবে শুয়ে থাকে সবসময়।”

“উনি কি আর কখনো আগের মতো হবে না মামা?”

আরাভ নিয়ার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,
“অবশ্যই হবে। তোমরা এসে গেছ না এবার উনি আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবেন। তারপর আমরা সবাই মিলে একসাথে নতুন ভাবে জীবন শুরু করব।”

নেহা আচমকা বলে ওঠে,
“সেটা সম্ভব নয় আরাভ ভাই।”

আরাভ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়। বিপাসা চৌধুরী বলেন,
“কেন এমন বলছিস নেহা? আমরা সবাই তো নিজেদের ভুলটা শুধরে নিতে চাইছি৷ তুই কি আমাদের আর একটা সুযোগ দিবি না?”

নেহা বলে,
“আমার লড়াইটা একার বড় আম্মু। আমার মেয়ে বা আমার দায়িত্বের বোঝা আমি তোমাদের উপর চাপাতে চাই না। তোমাদের উপর আমার কোন রাগ নেই বিশ্বাস করো কিন্তু..আমি নিজের আর নিজের মেয়ের যে আলাদা দুনিয়া তৈরি করে নিয়েছি সেই দুনিয়াতেই থাকতে চাই।”

আরাভ আহত স্বরে বলে,
“এর মানে তো এটাই বোঝায় যে, তুই আমাদের সাথে থাকতে চাস না।”

“বিষয়টা এমন নয়..তোমাদের সাথে আমার যোগাযোগ সবসময় থাকবে। আর হ্যাঁ, নিয়ার স্কুলে একটা প্রোগ্রাম আছে তাই আমাদের পরশু আবার ঢাকায় ফিরতে হবে আবার আমার নতুন চাকরিও খুঁজতে হবে। তবে তোমাদের সাথে আমার যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থাকবে।”

বিপাসা চৌধুরী ও আরাভ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তার বুঝে যায়, নেহাকে আর বেঁধে রাখা যাবে না। কারণ সে আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখে গেছে।

★★
আহির নিজের রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। তার মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। আচমকা মাথায় কারো স্পর্শ টের পেয়ে আরাভ চোখ তুলে তাকায়। নাতাশাকে দেখতে পেয়ে সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
“নাতাশা তুই…তুই এখানে কেন? আমার পারমিশন ছাড়া এভাবে আমার রুমে এসেছিস কেন?”

“তোর রুমে আসতে আমার পারমিশন লাগবে? হাসালি রে!”

“এখানে হাসির কিছু নেই। আমি সিরিয়াস।”

“শোন, আর কিছুদিন পরই আমরা এক হয়ে যাব। তখন এত দূরত্ব থাকবে না।”

“আমরা কখনোই এক হবো না নাতাশা। তোকে আমি বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবি না।”

“কিন্তু তুই আঙ্কেলকে কথা দিয়েছিস যে..”

“আমি জাস্ট এটাই বলেছি যে, আমি ভেবে দেখব। এখনো নিজের রায় আমি জানাই নি। আর তাছাড়া, যদি আমি বিয়ে করিও তবুও আমার কাছে তুই ছাড়া আরো অনেক অপশন আছে। তাই বলছি, আমার পেছনে না লেগে থেকে অন্য কাউকে খুঁজে নে।”

বলেই আহির বেরিয়ে যায়। নাতাশা আহিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোকে আমি ছাড়া আর কেউ পাবে না। তোকে পাবার জন্য তো কম কিছু করি নি আমি। কত পথের কাটাকে সরিয়েছি। এবার তোকে পাওয়ার জন্য যত নিচে নামতে হয় আমি নামব।”

হঠাৎ নাতাশার ফোনে একটা কল আসে। নাতাশা ফোনে তার একজন সহকর্মীর সাথে বলে। ফোনটা রেখেই সে বলে,
“নেহা….এই নেহা কোথায়? ৫ বছরে ওর কোন খোঁজই পেলাম না। যদি নেহা আবার ফিরে আসত তাহলে খুব ভালো হতো। আহিরের দূর্বলতা হলো আহিরা, নেহা ফিরে আসলে সেই দূর্বলতা আরো বেশি করে চেপে বসত আর সেই সুযোগে..”

নাতাশা একটা শয়তানী হাসি দেয়। আর দুহাত জোড় করে বলে,
“সৃষ্টিকর্তা তুমি ঐ নেহার সাথে একটা বার আমার দেখা করিয়ে দাও। তারপর আহিরকে কিভাবে নিজের করে নিতে হয় সেটা আমি দেখে নেবো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ✨