#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা নিয়াকে কোলে নিয়ে বসেছিল তার বড় আব্বু আজমাইন চৌধুরীর পাশে। আজমাইন চৌধুরী ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে ছিল নেহার দিকে। নেহা আবেগপ্রবণ স্বরে বলে,
“তুমি আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে ওঠো বড় আব্বু। তোমার সাথে যে আমার অনেক কথা বলা বাকি আছে।”
নিয়া নেহার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না, বড় নানা একদম আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে অনেক ভালোবাসবেন উনি। তুমি যেভাবে আমায় আদর করতেন তেমনি হয়তো উনিও কি তোমায় অনেক আদর করতেন।”
নেহা মাথা নাড়ায়। বলে,
“আমার জীবনে বড় আব্বুই ছিলেন আমার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ, আমার অভিভাবক, আমার বাবা-মা সব।”
আরাভ বাইরে থেকে নেহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভীষণ অসহায় বোধ করছিল কিন্তু তার কিছু করার ছিল না৷ আরাভ তবুও সাহস করে এগিয়ে এসে নেহার দিকে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিলো। নেহা সেই টিস্যুটা নিয়ে চোখের জল মুছল। আরাভ এই প্রসঙ্গে কোন কথা না বলে নেহাকে প্রশ্ন করলো,
“তুই নাকি আজকেই ফিরে যাবি?”
নেহা ইতিবাচক মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হুম, আগামীকাল নিয়ার স্কুলে একটা প্রোগ্রামে ও অভিনয় করতে হবে৷ তাই আমাকে সেখানে যেতে হবে ওকে নিয়ে।”
নিয়াকে কোলে তুলে নেয় আরাভ। নিয়া আরাভকে বলে,
“মামা, তুমিও চলো না। আমি স্নো হোয়াইট সাজব তুমি দেখবে।”
“আমার তো এখন কিছু কাজ আছে নিয়ামনি, তাই চাইলেও যেতে পারবো না৷ তবে তুমি চিন্তা করো না, সঠিক সময় এলে আমি ঠিক তোমার সাথে দেখা করতে যাব।”
“আচ্ছা।”
দরজায় দাঁড়িয়ে দূর থেকে এই সব দৃশ্য দেখছিল রিনা। আরাভকে এভাবে নিজের কাজিন আর তার মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখে সে যে নাখোশ সেটা তার হাবভাবেই স্পষ্ট। একটু পর বিপাসা চৌধুরী এসে রিনার কাধে হাত রাখে। রিনা ঘুরে তাকিয়ে মৃদু হাসে। বিপাসা চৌধুরী বলেন,
“তুমি এখানে কি করছ রিনা?”
রিনা নরম স্বরে বলে,
“না মানে দেখছিলাম..মিস্টার আরাভ এখানে এসেছে থেকে ওনাকে কখনো এত খুশি দেখিনি৷ আমি তো কত চেষ্টা করেছি ওনাকে একটু হাসানোর কিন্তু উনি তো সবসময় গম্ভীর থাকেন।”
বিপাসা চৌধুরী হতাশা প্রকাশ করে বলেন,
“তুমি এখন যেই আরাভকে চেনো সে আগে এমন ছিল না। আগে ও অনেক হাসিখুশি ছিল। আর ওর এই সব আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নেহা।”
রিনার এসব কথা শুনে একদমই ভালো লাগে না। তবুও সে জোরপূর্বক হেসে বলে,
“তখন তো উনি বোধহয় নেহাকে ভালোবাসতেন কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি বদলেছে। নেহা এখন অন্য কারো বাচ্চার মা। এখন নিশ্চয়ই উনি শুধু নেহাকে কাজিন হিসেবেই দেখেন, তাই না?”
বিপাসা চৌধুরী কিছু বলতে পারেন না। নিজের ছেলের মনের খবর তিনি জানেন। নেহার প্রতি আরাভের অনুভূতি যে এখনো অমলিন সেটা তিনি মানেন। আগে তার এই নিয়ে রাগ হলেও এখন আর সেটা পারেন না। দীর্ঘ ৫ বছর থেকে আরাভ জীবনে একচুলও আগায় নি শুধুমাত্র নেহার কথা ভেবে। এই তো, এই রিনা নামের মেয়েটা। যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই তার ব্যবহার। মেয়েটা কত চেষ্টা করেছে আরাভের মন পাওয়ার অথচ আরাভ তাকে পাত্তা দেয় নি।
বিপাসা চৌধুরী তাই রিনাকে বলেন,
“তোমাকে আমি মিথ্যা আশ্বাস দিতে চাই না, রিনা। নেহার প্রতি আরাভের অনুভূতি কখনো মলিন হয়ে যায় নি আর ও নেহার স্থানও কখনো কাউকে দেয়নি আর না ভবিষ্যতে দেবে।”
বলেই তিনি সামনে এগিয়ে যান। এদিকে রিনার মনটা একদম খারাপ হয়ে যায়। পাঁচ বছর ধরে তার দেখা সব স্বপ্ন যেন মুহুর্তে ভেঙে গেল।
আরাভ নেহাকে বলল,
“তোমরা তৈরি হয়ে থেক, আমি তোমাদের বাসে তুলে দিয়ে আসব।”
“আচ্ছা।”
★★
নেহা নিয়াকে নিয়ে আবার ঢাকায় পৌঁছে গেছে। তাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। দুজনেই এত বেশি ক্লান্ত ছিল যে বাড়িতে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়ে।
অতঃপর পরদিন সকালে উঠেই নেহা নিয়াকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। তাকে সুন্দর ভাবে তৈরি করে দেয় একদম স্নো হোয়াইট এর সাজে। নিয়া বারবার নিজেকে আয়নায় দেখে আর বলে,
“আমাকে একদম স্নো হোয়াইট এর মতো লাগছে, তাই না আম্মু?”
নেহা নিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার নিয়ামনিকে স্নো হোয়াইট এর থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে। কারো নজর না লাগুক।”
বলেই সে নিজের চোখের কাজল নিয়ে নিয়ার কপালে ফোটা দিয়ে দেয়। নিয়া নেহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমি আজ খুব খুশি আম্মু। আজ সবাই আমার অভিনয় দেখবে। আমার জন্য ক্ল্যাপিং করবে।”
“হুম, তোমাকেও কিন্তু খুব সুন্দর করে পারফর্ম করতে হবে। তোমার স্কুলের সম্মান রক্ষা করতে হবে। ম্যামরা অনেক ভরসা করে তোমায় বাছাই করেছে। সেই ভরসা রাখবে কেমন?”
“আচ্ছা।”
★★
আহিরা সকাল থেকে কম করে হলেও ১০ বার ড্রেস চেঞ্জ করেছে। কিন্তু একটা ড্রেসও তার পছন্দ হচ্ছে না। এরমধ্যে আহির নতুন একটা ড্রেস এনে আহিরাকে দেখিয়ে বলে,
“এই ড্রেসটা পড়ে দেখো। আমার প্রিন্সেসের জন্য এটাই বেস্ট।”
আহিরার এই ড্রেসটাও পছন্দ হয় না। সে নাক কুচকে বলে,
“আমার এটাও ভালো লাগছে না। আমার সবথেকে বেস্ট ড্রেসটা চাই। যেটা পড়লে আমাকে সবথেকে সুন্দর লাগবে।”
“তুমি তো এমনিতেই প্রিটি মাই প্রিন্সেস। তুমি যা পড়বে সেটাতেই সুন্দর লাগবে।”
এমন সময় নাতাশা একটা ড্রেস এনে আহিরার হাতে দিয়ে বলে,
“এটা পড়ে দেখো তো আহি। এটা তোমার নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।”
আহিরা ড্রেসটা দেখে। তার মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে।
“হুম, তোমার পছন্দ ওতোটাও খারাপ না নাতাশা আন্টি। আমি এটাই পড়বো।”
আহিরের মুখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফুটে ওঠে। সে নাতাশাকে ধন্যবাদ জানায়। নাতাশাও হাসিমুখে বলে,
“আরে ধন্যবাদ দিতে হবে না।”
আর মনে মনে বলে,
“এভাবেই ধীরে ধীরে আহিরার মাধ্যমে আমি তোর জীবনে নিজের জায়গা তৈরি করব।”
আহিরা ড্রেসটা পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। এরপর বলে,
“তাহলে এবার স্কুলে যাওয়া যাক!”
অতঃপর আহির ও নাতাশা আহিরাকে নিয়ে রওনা দেয়। নাতাশা একপ্রকার নিজে থেকেই যেতে চেয়েছে এই অনুষ্ঠানে। আর আহিরও কোন আপত্তি করে নি।
★★
স্কুলে এসেই নিয়াকে নিয়ে তাদের হেড টিচার মিসেস খাতুনের কাছে যায় নেহা। কারণ সে জানতে পেরেছে নিয়াকে নাকি অভিনয় থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটা জেনে নিয়া খুব কান্না করছিল। নেহা হ্যাড ম্যামের কাছে বলল,
“ম্যাম, আমি কি শুনছি এসব? নিয়াকে নাকি শেষ মুহুর্তে স্নো হোয়াইটের চরিত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু আমাদের তো এসব ব্যাপারে ইনফর্ম করা হয়নি।”
তিনি কিছুটা বিরক্ত স্বরে বলেন,
“আমাদের ওকে ভালো লাগেনি তাই বাদ দিয়েছি। এই নিয়ে এত কথা বলার কি আছে?”
“ম্যাম, আপনারা চাইলে বাদ দিতেই পারেন। কিন্তু শুরুতে ওকে সিলেক্ট করে এত আশা দেখালেন মেয়েটাকে আমি এভাবে সাজিয়ে নিয়ে এলেন তারপর এভাবে হঠাৎ করে যদি ও জানতে পারে যে ওকে বিনা নোটিশে বাদ দেয়া হয়েছে তাহলে তো কষ্ট পাবেই। ও একটা বাচ্চা।”
“দেখুন, এটা একটা অনেক বড় অনুষ্ঠান। এখানে এসব ঠুনকো ইমোশনের কোন দাম নেই। আমাদের বেস্টটা প্রেজেন্ট করতে হবে।”
বলেই তিনি নেহাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যান। এরপর নেহার স্কুলেরই আরেকজন শিক্ষক এগিয়ে এসে বলেন,”আসলে এসবকিছুই পলিটিক্স। কোন এক ধনী লোকের মেয়ে স্নো হোয়াইট হয়েছে। এমনকি তার মেয়েকে বকা দেয়ায় তো শায়লা ম্যামকে স্কুল থেকেই ছাটাই করা হয়েছে।”
এটা শুনে নেহা রেগে বলে,
“ছি! বাবা-মায়ের শিক্ষা যদি এমন হয় না জানি তাদের সন্তান কেমন হবে। এভাবে সামান্য কারণে একদম শিক্ষিকাকে স্কুল থেকে বের করে দিলো। আমি দেখা করবো, ঐ অভিভাবকের সাথে যে নিজের মেয়েকে এমন জঘন্য শিক্ষা দিচ্ছে। তাকে দুটো উচিত কথা না বললে আমার শান্তি হবে না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা নিয়াকে নিয়ে অপেক্ষা করছিল দর্শক মঞ্চে বসে। তার মাথায় এখন রাগ চেপে বসেছে। নিয়াকে স্নো হোয়াইট থেকে বাদ দেয়া নিয়ে তার খুব একটা আপত্তি নেই কিন্তু সামান্য কারণে একজন শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করার কথাটা সে মেনে নিতে পারছে না। এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার ঐ বাচ্চার অভিভাবকদের দুটো কথা শুনিয়েই যাবে। এমনকি সে নিজের মেয়েকেও আর এমন স্কুলে পড়াতে চায় না যেখানে এমন ভাবে প্রভাব খাটিয়ে অন্যায় করা যায়।
কিছু সময় পর আহির, আহিরাকে নিয়ে উপস্থিত হলো স্কুলে। আহিরা তো ভীষণ খুশি এটা ভেবে যে আজ সে স্নো হোয়াইট হিসেবে অভিনয় করবে। নাতাশা আহিরাকে বললো,
“চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
এমন সময় আহির বললো,
“নাহ, তুই এখানেই থাক নাতাশা। আমার মেয়েকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি।”
নাতাশা আর কিছু বলে না৷ আহির আহিরাকে গিয়ে মঞ্চের পেছনে দাঁড়ায়। সে বলে ওঠে,
“যাও প্রিন্সেস, নিজের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করো। আমি এখানেই আছি।”
আহিরাদের স্কুলের ড্রামা টিচার এগিয়ে এসে আহিরাকে নিয়ে গেলো মঞ্চের দিকে। আহিরা নিজের স্বভাবসুলভ অহং ভাব নিয়ে মঞ্চে উঠল। আহিরাকে মঞ্চে দেখামাত্রই নেহা অবাক হলো। নিয়া নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আম্মু, এটা সেই মেয়েটা না যাকে ঐদিন তুমি এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাচিয়েছিলে? জানো, ও সেদিন রিহার্সালের সময় আমায় ধাক্কা মে*রে ফেলে দিয়েছিল। শায়লা ম্যামকেও অনেক বকেছিল।”
নেহা রাগী কন্ঠে বলে,
“তুমি আমায় এসব আগে বলো নি কেন?”
“আমি ভেবেছিলাম তুমি শুধু শুধু চিন্তা করবে তাই কিছু বলি নি।”
নেহা বলে,
“মেয়েটারই বা কি দোষ। পরিবার থেকে যেমন শিক্ষা পেয়েছে তেমনই তো হবে। যেদিন ওর বাবা ফোন করে আমায় উপকারের জন্য ঋণশোধ করতে চেয়েছিল সেদিনই আমি বুঝে গেছিলাম ওনার মনোভাব কেমন। নিজের মেয়েকে একদম উচিৎ শিক্ষা দিতে পারেন নি উনি। দেখি, অনুষ্ঠানটা শেষ হোক। তারপর আমি গিয়ে ওনার সাথে কথা বলে আসব।”
আহিরা মঞ্চে উঠে হাসিমুখে তাকালো সামনের দিকে। তার আশেপাশে আরো কিছু বাচ্চারা গোল হয়ে দাঁড়াল। আহিরা স্নো হোয়াইটের অভিনয় করা শুরু করল। সে বললো,
“আমি হলাম স্নো হোয়াইট। এই দুনিয়ার সবথেকে সুন্দরী রাজকন্যা…”
নিয়ার কথা শুনে নেহার রাগ আরও বেড়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল, এই আহিরা নামের মেয়েটার অহংকার আর ওর বাবার উদ্ধত মনোভাবের জন্যই শায়লা ম্যামকে চাকরি হারাতে হয়েছে। নেহা মনে মনে ঠিক করে নিল, অনুষ্ঠান শেষ হলেই সে আহিরার বাবার সঙ্গে কথা বলবে এবং এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।
এদিকে আহিরা মঞ্চে নিজের অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। সে যখন নিজেকে ‘সবচেয়ে সুন্দরী রাজকন্যা’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিল, তখন তার মুখে একটা গর্বিত হাসি লেগে ছিল। কিন্তু নেহার চোখে সেই হাসিটা অহংকারের হাসি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছিল না।
অনুষ্ঠান চলতে লাগল। বাচ্চারা নিজেদের মতো করে অভিনয় করে যাচ্ছে। নেহা শুধু আহিরাকে লক্ষ্য করছে। তার মনে হচ্ছিল, এই ছোট্ট মেয়েটার মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আর উদ্ধত মনোভাবের অভাব নেই। সে বুঝতে পারছিল না, একটা ছোট বাচ্চার মধ্যে এই ধরনের আচরণ কিভাবে আসতে পারে। নিশ্চয়ই এর পেছনে ওর বাবা-মায়ের শিক্ষা বা প্রভাব রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর নাটকের বিরতি হলো। দর্শকরা সামান্য বিরতি নিতে ব্যস্ত। এই সুযোগে নেহা উঠে দাঁড়াল। নিয়া তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কোথায় যাচ্ছো আম্মু?”
নেহা দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল,
“আমি আহিরার বাবার সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। এটা অন্যায়, নিয়া। একজন ভালো শিক্ষিকাকে এভাবে চাকরিচ্যুত করাটা আমি মেনে নিতে পারছি না।”
নিয়া নেহার হাত ধরে বলল,
“কিন্তু আম্মু, তুমি কেন ঝামেলায় জড়াতে যাচ্ছো? আর যদি উনি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন?”
নেহা নিয়ার হাত ছাড়িয়ে বলল,
“ভয় পেও না। আমি শুধু সত্যি কথাটাই বলব। আমি কোনো অন্যায়কে চুপ করে থেকে মেনে নিতে পারব না।”
নেহা ভিড়ের মধ্যে আহিরার বাবার খোঁজ করতে লাগল। কিন্তু বুঝতে পারল না তিনি কোথায় আছেন। এই ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ করে সে কারো সাথে একটা ধাক্কা খেলো। যার ফলে তার সামনে থাকা মহিলার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। মহিলাটি নিজের ফোন ফ্লোর থেকে তুলতে তুলতে রাগী স্বরে অস্পষ্ট কিছু বলল৷ নেহা সেদিকে বিশেষ খেয়াল না করে বলল,
“সরি আমি ইচ্ছা করে..”
মহিলাটি মাথা তুলে তাকাতেই নেহার সাথে তার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হলো। নাতাশা অবাক চোখে নেহাকে দেখতে লাগল। নেহার অবস্থাও একইরকম। নাতাশা মনে মনে বলল,
“আমি কি ঠিক দেখছি? এটাই তো সেই মেয়ে..আহিরার মা নেহা। এতগুলো বছর পর ও আমার সামনে..আমার চাওয়া তাহলে আল্লাহ পূরণ করল।”
নেহা নাতাশাকে দেখেই ভাবলো,
“এই তো সেই মহিলা..ডাক্তার নাতাশা..ঐ জানোয়ার আহিরের বন্ধু। ইনি এখানে কি করছেন?”
নাতাশা নেহাকে কিছু বলতে উদ্যত হয় এমন সময় নেহা তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। নাতাশা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে বলে,
“যদি কোনভাবে আহির আর নেহা মুখোমুখি হয়ে যায় তাহলে কি হবে?”
একটু পরই সে ভাবে,
“হলে ক্ষতি কি? বরং ভালোই হবে। নেহাকে দেখে আহিরের মনে আহিরাকে হারানোয় ভয় আবার জেগে উঠবে। আর সেই সুযোগটাই ব্যবহার করব আমি।”
★★
নেহা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর দেখতে পেল আহিরা চুপচাপ মঞ্চের পেছনে একটি সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে মনের সুখে চিকেন কাটলেট খাচ্ছে। নেহা ভাবলো,
“মেয়েটা এখন খাচ্ছে..এখন কি ওকে বিরক্ত করা ঠিক হবে?”
নেহার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে মঞ্চে পুনরায় এনাউজ করা হলো নাটকের বাকি অংশ এখন মঞ্চায়ন করা হবে। আহিরাও উঠে চলে গেল। নেহা আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও কাউকে দেখতে পেল না। সে ভাবলো,
“তাহলে কি আহিরার বাবা-মা কেউ আসে নি এখানে?”
সে আবার দর্শক সিটে ফিরে গিয়ে নিয়ার পাশে বসলো। নিয়া নেহাকে দেখে বললো,
“ঐ মেয়েটার বাবা-মায়ের দেখা করলে আম্মু?”
নেহা মাথা নাড়িয়ে না-বোধক ইশারা করে। তখনো তার মনে নাতাশার সাথে দেখা হবার দৃশ্যটা ভেসে ওঠে। নেহা ভাবতে থাকে, ঐ নাতাশা এখানে তাহলে কি কোনভাবে আহিরও এখানে আছে?
তবে নেহার মনে আজ আগের মতো ভয় নেই। বরং সে নিয়াকে কোলে আগলে নিয়ে বলে,
“যদি থেকেও থাকে তাহলে আমি তার পরোয়া করি না। এবার যদি ওনার মুখোমুখি হই তাহলে ওনার চোখে চোখ রেখে উচিৎ জবাব দেব।”
নাতাশা আশেপাশে আহিরকে খুঁজছিল। আহির বাইরে থেকে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরের দিকে আসছিল। নাতাশা এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,
“কিরে কোথায় গেছিলি?”
” বাইরে গেছিলাম একটা ইমপরট্যান্ট কল ছিল। নাটক আবার শুরু হয়েছে?”
“হুম। তোকে একটা কথা বলার ছিল।”
“এখন আমি কিছু শুনতে চাই না। আমাকে আমার মেয়ের পাশে থাকতে হবে।”
বলেই সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এদিকে নাতাশা বলে,
“এখন আমাকে যতো এড়িয়ে যাবি যা, তবে তোকে লাইনে আনার ওষুধ আমি পেয়ে গেছি। নেহাই হবে আমার তুরুপের তাস।”
আহিরা মঞ্চে অভিনয় করছিল। এমন সময় নেহা খেয়াল করে মঞ্চের পাশে থাকা একটি ক্রেন ভীষণ নড়ছে যেকোন সময় তা ভেঙে পড়তে পারে আহিরার উপর। এটা দেখামাত্রই নেহা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিৎকার করে মঞ্চে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সরিয়ে দিলো আহিরাকে। ক্রেনটা পাশেই ভেঙে পড়ল। উপস্থিত দর্শকরা হতবাক। আহিরও দিকবিদিকশুন্য হয়ে মঞ্চের সামনে ছুটে এসে বলল,
“প্রিন্সেস..তোমার কিছু হয় নি তো?”
চেনাজানা কন্ঠস্বরটা শুনেই হতবাক চোখে সামনের দিকে তাকালো নেহা। আহির তখন আহিরাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল জন্য শুরুর দিকে নেহাকে খেয়াল করে নি। কিন্তু চোখ পড়তেই বিস্ময়ে থ হয়ে গেল তার চোখ। দীর্ঘ ৫ বছর পর মুখোমুখি তারা!
চলবে ইনশাআল্লাহ✨