#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা আজ সকাল সকাল গাজীপুরে চলে এসেছে তার বড় আব্বুর সাথে দেখা করতে। নিয়াও এসেছে তার সাথে৷ আরাভের দেয়া হাসপাতালের ঠিকানায় পৌঁছানো মাত্র নেহা শুনতে পায় অদ্ভুত আহাজারি। আরাভ হাসপাতালের বেডেই বসেছিল। নেহা ছুটে গিয়ে আরাভের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি হয়েছে আরাভ ভাই? বড় আব্বু এখন কেমন আছেন?”
আরাভ নেহাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“তুই এসে গেছিস নেহা? আব্বু বোধহয় তোর সাথে দেখা করার জন্য এখন অব্দি বেঁচে আছেন। যা গিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করে আয়।”
বলেই সে নেহার কোল থেকে নিয়াকে নিজের কোলে তুলে নেয়। আরাভকে পাশে পেয়ে নিয়া হেসে বলে,
“হ্যালো, মামা। তুমি কেমন আছ?”
“আমি আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ। আমি জানি, তুমি বড় নানার জন্য চিন্তা করছ। দেখিও, উনি ভালো হয়ে যাবেন।”
“তাই যেন হয়।”
নেহা আর অপেক্ষা না করে এপ্রোন পড়ে আইসিইউ এর দিকে ছুটে গেল তার বড় আব্বুর সাথে দেখা করতে। আইসিইউ এর সামনে গিয়ে নেহার পা থেমে গেল।
নেহা আইসিইউর কাঁচের দরজা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখল তার বড় আব্বু শুয়ে আছেন। চারপাশে অসংখ্য তার আর যন্ত্রপাতির মাঝে তাকে বড় অসহায় দেখাচ্ছে। নেহার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। তার চোখ জলে ভরে গেল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে আইসিইউর ভেতরে প্রবেশ করল। প্রতিটি পদক্ষেপেই তার বুক ধুকধুক করছিল। কাছে গিয়ে দেখল, বড় আব্বুর চোখ বন্ধ। তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। নেহা ফিসফিস করে ডাকল,
“বড় আব্বু!”
আজমাইন চৌধুরীর শরীর সামান্য নড়ে উঠল, যেন তিনি নেহার উপস্থিতি টের পেয়েছেন। নেহা তার হাতটা ধরল। হাতটা বরফের মতো ঠাণ্ডা। সে জানে, এই হাতটা ধরেই ছোটবেলায় সে কত দুষ্টুমি করত, কত আবদার করত। আজ সেই হাতটা এমন নিস্তেজ! নেহা আবেগে আপ্লুত হয়ে আবার ডাকল,
“বড় আব্বু, চোখ খোলো প্লিজ! আমি এসেছি, আমি তোমার নেহা! আজো কি সেদিনের মতো রাগ করে থাকবে আমার উপর? আমার সাথে কথা বলবে না?”
নেহার ডাকে বড় আব্বু ক্ষীণভাবে চোখ খুললেন। ঘোলাটে দৃষ্টিতে নেহার দিকে তাকালেন তিনি। সেই দৃষ্টিতে ছিল অপত্য স্নেহ আর একরাশ অব্যক্ত কথা। নেহা বুঝতে পারল, তার বড় আব্বু সাড়া দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কোনো কথা হলো না। কিছু সময় পর আলতো স্বরে তিনি বললেন,
“নেহা..মা তুই এসেছিস৷ তোর বড় আব্বুকে ক্ষমা করে দিস।”
“তুমি কেন ক্ষমা চাইছ বড় আব্বু? ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিৎ। দীর্ঘ ৫ বছর থেকে তোমার এই অবস্থা অথচ আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম। একটি বারও তোমার খোঁজ নেইনি। সত্যিই আমি অনেক স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম।”
“তুই কোন দোষ করিস নি, নেহা। আর কখনো এভাবে কোন কিছুর জন্য নিজেকে দোষ দিবি না।”
“বড় আব্বু..”
“আমার পাপের শাস্তি তোকে পেতে হয়েছে। এজন্য আমি বেঁচে থেকেও প্রতি মুহুর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছি রে। তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই।”
“এসব তুমি কি বলছ বড় আব্বু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তোমার জন্য কেন আমার সাথে খারাপ হবে?”
“আমার জন্যই তো…আমি সব জানি..প্রথমে আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু সেদিন তুই চলে যাবার পরের দিনই রাতে আমার ফোনে কেউ একজন কল করে অজ্ঞাত নম্বর থেকে..কল দিয়ে জানায় আমার করা পাপের কর্মফল ও তোকে ভোগ করিয়েছে।”
“কেন?!”
আজমাইন চৌধুরী চোখ বন্ধ করেন। নিজের করা অন্যায়গুলো স্মরণ করে বলেন,
“আজ থেকে ৩০ বছরের বেশি আগে আমি অন্যায় করেছিলাম একজন এর সাথে। তার প্রতিশোধ নিতেই,,,, ”
“মানে? কি বলছ এসব তুমি? একটু খুলে বলো প্লিজ।”
“আজ থেকে ৩০ বছর আগে, আমি আমিনা নামের এক নারীকে ভালোবেসে বিয়ে করি। কিন্তু পরবর্তীতে পারিবারিক চাপে আমায় বিপাসাকে বিয়ে করতে হয়। এরপর ব্যবসার উত্তরাধিকার পাওয়ার জন্য আমি এতটা পাগল হয়ে যাই যে…ওকে অস্বীকার করি। সেসময় আমিনা গর্ভবতী ছিল। কিন্তু ওর গর্ভের সন্তানকেও আমি অস্বীকার করি। আমার রক্ত..আমার সন্তানকে।”
“কি?”
নেহা ভীষণ অবাক হয়।
“হুম, আর আমার সেই সন্তানই..যাকে ছোটবেলা থেকে নাজায়েজ, জারজ পরিচয়ে বড় হয়েছে সেই প্রতিশোধ নিতে তোর সাথে..”
নেহা আর কিছু শুনতে পারে না। তার পুরো পৃথিবী যেন উলটে যায়। তার মনে পড়ে যায়, নাতাশা ও আহিরের বলা কথা গুলো। তারা বলেছিল, নেহা যা ভোগ করছে তা কারো কর্মফল। এসব শুনে নেহার চোখ জল চলে আসে। সে আর্তনাদ করে বলে,
“কিন্তু এসবের মধ্যে আমার কি দোষ ছিল বড় আব্বু? দোষ করেছিলে তুমি..ঐ আহির লোকটা..ওনার সাথে যা হয়েছে তা অন্যায় মানছি..তোমার জন্য ওনাকে পিতা থাকতেও জারজ পরিচয়ে বড় হতে হয়েছে। কিন্তু উনি তো আমার মেয়েকে জারজ করেই দুনিয়াতে আনলেন। কি দোষ আমার? আমার মেয়েটারই বা কি দোষ?”
“আমি জানি, তোর সাথে যা অন্যায় হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী। আমি যদি আমিনাকে ত্যাগ না করতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।”
“তুমি একা দোষী নও বড় আব্বু, ঐ আহিরও দোষী। ঐ আহির যদি তোমার উপর প্রতিশোধ নিতে এত নিচে নামতে পারে তাহলে আমিও নিজের আর নিজের মেয়ের জন্য প্রতিশোধ নেবোই। ওনার অতীত যেমনই হোক তাই জন্য আমাকে আর আমার সদ্যজাত মেয়েকে উনি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারেন না। ওনাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ওনার ন্যায্য শাস্তি আইনের মাধ্যমেই আমি ওনাকে দেব। তুমি শুধু সেরে ওঠো বড় আব্বু..তুমি কোর্টে আমার হয়ে সাক্ষী দেবে। অতীতের সব কিছু বলবে। আমার পাশে থাকবে না তুমি?”
আজমাইন চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে বলেন,
“থাকবো..অবশ্যই থাকবো। আমি নিজের করা অন্যায়ের শাস্তি পেয়েছি..এখনো পাচ্ছি আর তোর সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেটা তো আরো বড়। আমি তো শুধু আহিরকে স্বীকৃতি দেই নি কিন্তু গোপনে ওর আর আমিনার খেয়াল ঠিকই রাখতাম আমার এক বন্ধুর দ্বারা। অথচ ঐ আহির তোকে রে*প করেছে, তোকে আর তোর বাচ্চাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। আমি নিজের অন্যায়ের শাস্তিও চাইব আদালতের কাছে সাথে ঐ আহিরের অন্যায়েরও।”
“তুমি আগে সুস্থ হয়ে ওঠো বড় আব্বু। তারপর ঐ আহিরকে উচিৎ শাস্তি আমি পাইয়ে দেবোই। প্রয়োজনে থানায় গিয়ে আমি মামলা করে আসব। এতদিন আমি চুপ ছিলাম কিন্তু আর না। এবার অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি পেতেই হবে। আর সেটা যেকোন মূল্যেই!”
“ঠিক..তোর বড় আব্বু আছে তোর পাশে। তুই একদম ভয় পাস না।”
দূর থেকে এই সমস্ত কথা শুনে নিলো আরাভ৷ তার হাত-পা কাপতে শুরু করে দিল। সে ভাবতেও পারে নি নেহার সাথে এত বড় অন্যায় হতে পারে। আরাভের এখন নিজের বাবা এবং ঐ নরপিশাচ দুজনের উপরই ভীষণ রাগ হচ্ছে। ঐ নরপিশাচকে তো খু*ন করতে মন চাচ্ছে। আরাভ দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
“যে বা যারা আমার নেহার সাথে এত বড় অন্যায় করেছে তাকে আমি ছাড়ব না। তার কর্মের উপযুক্ত শাস্তি পাইয়ে দিয়ে তবে আমার শান্তি হবে। আর সেই শাস্তি এত ভয়াবহ যে সে আজীবন মনে রাখবে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা তার বড় আব্বুর সাথে দেখা করে রুমের বাইরে আসলো। নিয়া বাইরে বসেছিল। আরাভ ঠিক নিয়ার পাশেই। আরাভের চোখমুখ শক্ত। একটু পর বিপাসা চৌধুরী ছুটে এসে নেহাকে বললেন,
“তোর বড় আব্বু তোকে কি বলল নেহা? উনি সুস্থ হয়ে যাবেন তো?”
“আল্লাহর উপর ভরসা রাখো বড় আম্মু। উনি ঠিকই সুস্থ হবেন।”
নেহা তার বড় আম্মুকে জানালো না আজমাইন চৌধুরীর জীবনের কালো অধ্যায়ের গল্প। কোন স্ত্রীর পক্ষেই যে এসব মেনে নেয়া সম্ভব না। আরাভ হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে নেহার কাছে এসে বললো,
“আমার সাথে একটু চল, তোর সাথে জরুরি কথা আছে।”
নেহা মাথা নাড়িয়ে চলল আরাভের সাথে। একটু দূরে যেতেই আরাভ নেহার হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। নেহা অবাক হলো। আরাভ নেহার পায়ের কাছে বসে পড়ে বলল,
“আমি জানি না, তোর কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইব। শুধুমাত্র আমার আব্বুর করা অন্যায়ের জন্য তোর পুরো জীবনটা ন*রকে পরিণত হলো।”
আরাভকে টেনে তুললো নেহা। তার কাধে সান্ত্বনার হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি এভাবে কেঁদো না আরাভ ভাই। যা হবার তা হয়ে গেছে৷ আমি সবটাকে নিজের ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছি।”
“কিন্তু আমি যে মানতে পারছি না নেহা। বিনা অপরাধে তোকে এত গুলো বছর এত কষ্ট সহ্য করতে হলো।”
“অতীতের কথা বলে আর লাভ নেই। আমি মানিয়ে নিয়েছি সব। তুমি শুধু আমার একটা কথা রাখো, বড় আম্মু বা নিয়া ওদের এসব কিছু বলো না। এটাই অনুরোধ থাকবে। আমি চাই না, এই বয়সে এসে বড় আম্মু বড় আব্বুর অতীতের এসব কথা জানুক।”
“ঠিক আছে, বলবো না। কিন্তু তার আগে তুই আমায় বল, কে সেই জানোয়ার যে তোর সাথে এত অন্যায় করেছে। আমি ওকে জ্যান্ত পুড়ে মারব।”
“নিজেকে সামলাও আরাভ ভাই। ওনাকে শাস্তি আইন দেবে। তোমায় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হবে না। আর সেই ব্যবস্থা আমি করবো। শুধু বড় আব্বুকে একবার সুস্থ হতে দাও।”
“তুই একা কিভাবে সব করবি?”
“এই লড়াই টা আমার একার। আমার একাই ঐ শয়তানটার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। সাহসের সঞ্চার করে সেই সব প্রমাণ তুলে ধরতে হবে সবার সামনে।”
“তুই একা নস নেহা। তোর আরাভ ভাই সব পরিস্থিতিতে তোর পাশে আছে।”
আরাভের এই কথায় ভরসা পায় নেহা।
★★
আজকেও স্কুলে নিয়াকে দেখতে পায় নি। এই ঘটনায় ভীষণ তিতিবিরক্ত সে। টানা তিন দিন সে নিয়াকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখছে। আহিরা টিফিন টাইমে ক্লাস রুমে বসে টেবিলে জোরে একটা ঘুষি মে*রে বলে,
“নাহ, এবার ঐ আন্টির সাথে আমায় যেকোনো ভাবে দেখা করতেই হবে। নাহলে আমি শান্তি পাচ্ছি না।”
আহিরা ভাবলো, নিয়া স্কুলে না আসলে সে প্রয়োজনে ওদের বাসায় গিয়ে দেখা করবে। যেই ভাবা সেই কাজ, ক্লাস ছুটি হতেই আহিরা ছুটে গেল অফিসরুমে। সেখানে প্রিন্সিপাল ম্যামকে গিয়ে বলল,
“আমাদের ক্লাসের নিয়া আছে না, ওদের বাসার ঠিকানা আমায় দিন তো।”
“ওর ঠিকানা নিয়ে তুমি কি করবে?”
“আপনাকে যা বলছি তাই করুন।”
রেগে বলল আহিরা। প্রিন্সিপাল ম্যাম বিরক্ত হলেন। কিন্তু তিনি জানেন আহিরার বাবা আহির পাটোয়ারীর ক্ষমতা সম্পর্কে। তাই তিনি আর বেশি না ভেবে স্কুলের স্টুডেন্ট ডাটা থেকে সংগ্রহ করে ঠিকানাটা লিখে দিলেন আহিরার হাতে। আহিরা এটা পেয়ে খুশি হয়ে বলল,
“এবার আমি ঐ আন্টিটার সাথে দেখা করে ওনাকে ধন্যবাদ জানাতে পারব।”
★★
নেহা ও নিয়া সবেমাত্র ঢাকায় ফিরল গাজীপুর থেকে। নিয়া কিছুটা ক্লান্ত ছিল তাই ফিরেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল। নেহা রান্না চাপাতে ব্যস্ত ছিল। আরাভকে ফোন করে সুস্থভাবে পৌঁছানোর খবর দিয়েই সে গ্যাসে রান্না চাপিয়ে দেয়। এমন সময় হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে ওঠায় নেহা অবাক হয়। বিড়বিড় করে বলে,
“এই সময় আবার কে এলো?”
কলিং বেল ক্রমাগত বেজে চলায় নেহা আর বেশি ভাবল না। দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুলল। আর দরজা খুলেই দেখতে পেল আহিরাকে৷ আহিরাকে দেখে অবাক হয়ে গেল নেহা। হতবাক স্বরে বলল,
“তুমি?!”
আহিরা বলল,
“৩ দিন থেকে তোমাকে খুঁজে চলেছি। কিন্তু তোমার কোন খোঁজ না পেয়ে আমি নিজেই চলে এলাম।”
নেহা বুঝতে পারে না কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে। তার মনে ভয় চেপে বসে। সে বলে,
“তোমার আব্বুও কি এসেছে এখানে?”
“আমার পাপার কথা বলছ? না, সে আসেনি। আমি একাই এসেছি।”
“তোমার এভাবে একা আসা ঠিক হয়নি। যদি কোন বিপদ হতো। এত পাকামি করো কেন?”
“উফ..আমাকে আগে ভেতরে ঢুকতে দাও তো। আর এভাবে আমায় বকবে না। আমার বকুনি ভালো লাগে না।”
“শাসন না করে করেই তো তোমার পাপা তোমায় মাথায় তুলেছে। তাই এত পাকামি করার সাহস পাচ্ছ। যদি তুমি আমার মেয়ে হতে তাহলে…”
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল নেহা। তার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হলো না। এরমধ্যে আহিরা নেহাকে পাশ কাটিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে বলে,
“তোমাদের বাড়িটা এত ছোট কেন আন্টি? জানো, আমাদের বাড়ি কত বড়।”
নেহা কিছু বলতো পারে না। আহিরা দ্রুত তাদের সোফায় বসে বলে,
“আমার না খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। একটু পানি দেবে?”
নেহা পানি নিয়ে এসে আহিরাকে দেয়। আহিরা তৃপ্তি করে পানি খায়। নেহা বলে,
“তুমি এভাবে এসে ঠিক করো নি। চলো তোমায় আমি স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসি। ওনারা তোমায় তোমার পাপার কাছে পৌঁছে দেবে।”
“আমাকে তাড়ানোর জন্য তুমি এত উঠেপড়ে লেগেছ কেন আন্টি? আমি যদি তোমার নিজের মেয়ে হতাম তাহলেও কি এভাবে আমায় তাড়িয়ে দিতে?”
কথাটা শুনেই নেহার বুক কেপে ওঠে। সে চিৎকার করে বলে,
“তুমি আমার কেউ নও..আমার মেয়ে নও তুমি”
আহিরা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তার ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখে নেহা দমে যায়। মনে মনে বলে,
“নিজেকে সামলা তুই নেহা..তোর ক্ষোভ ঐ আহিরের প্রতি। তোর সাথে যা অন্যায় করেছে ঐ আহির। এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার কি দোষ? শুধু এটাই যে ওর গায়ে আহিরের রক্ত বইছে। সে তো তোর নিয়ার গায়েও বইছে৷ নাহ, এই বাচ্চাটার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করা ঠিক না।”
এই ভাবনা থেকেই নেহা বলে,
“তোমার পাপা আর মাম্মা তোমার জন্য চিন্তা করছে। চলো তোমায় আমি রেখে আসি।”
“নাহ, আমি যাবো না। আমার তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
“এত জেদি কেন তুমি?”
“আমি এমনই।”
এমন সময় হঠাৎ করে আহির ছুটে আসে। আহিরাকে স্কুলে নিতে এসে না পেয়ে, প্রিন্সিপাল ম্যামের সাথে কথা বলে যখন সে জানতে পারল আহিরা নিয়ার ঠিকানা চেয়েছে তখন সেও সেই ঠিকানা অনুযায়ী চলে এলো। আবারো নেহার মুখোমুখি হয়ে সে অবাক হলো। নেহাও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আহিরাকে বললো,
“ঐ যে তোমার পাপা চলে এসেছে। চলে যাও ওনার সাথে।”
আহিরা আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“পাপা! তুমি কেন এলে?”
আহির এসে আহিরার হাত চেপে বলে,
“অনেক দুষ্টামি হয়েছে আর না। এখনই ফিরে চলো।”
“নো, আমার হাত ছাড়ো। আমি যাব না। আমাকে আন্টিকে থ্যাংকস দিতে হবে।”
“তার কোন প্রয়োজন নেই। চলো বলছি।”
“নো.”
“আহিরা,”
“আমাকে বকা দিচ্ছ? হাউ ডেয়ার ইউ।”
নেহা আহিরকে বলে ওঠে,
“আপনি কি সবকিছু ধ্বংস করতে জন্মেছেন? এমনিতেই বিনা অপরাধে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন..এখন নিজের মেয়েকেও আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব করে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?”
আহির রেগে বললো,
“আমি ওকে তোমার পেছনে লাগাই নি। তুমি আমার মেয়েকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছ।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨