#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা আহিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল। আহিরের বলা কথাটা শুনে তার রাগ বেড়ে গেল। সে আঙুল রাঙিয়ে বলল,
“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। আমার বাসায় দাঁড়িয়ে আপনি আমাকে এসব বলতে পারেন না।”
আহির নেহার কথার আর কোন জবাব না দিয়ে আহিরাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে বসায়। আহিরা জেদ করে বলে,
“আমি আন্টির সাথে কথা বলবো..”
“একদম চুপ। খুব জেদি হয়ে যাচ্ছ দিনে দিনে। এখনই চলো তুমি।”
নেহাও ততক্ষণে বাইরে চলে এসেছে। আহির নেহার সামনে এসে বলে,
“সমস্যা কি তোমার?”
“আমার কোন সমস্যা নেই৷ যা সমস্যা সব আপনার। আমি সবকিছু জেনে গেছি।”
“কি জেনেছ তুমি?”
“এটাই জেনেছি যে কি অপরাধে আপনি আমার জীবনটা নরক করে দিলেন। আচ্ছা, বলুন তো আমার কি দোষ ছিল? মানছি আমার বড় আব্বু আপনার এবং আপনার মায়ের সাথে অনেক অন্যায় করেছে। কিন্তু সেখানে আমার দায় কি? আমি কেন শুধু শুধু আপনার ক্ষোভের স্বীকার হলাম।”
আহির কিছুটা থমকে যায়। তারপর আবারো চোয়াল শক্ত করে বলে,
“তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।”
“আপনাকে আজ জবাব দিতেই হবে। কোন কারণ ছাড়াই আপনি আমার জীবনটা নরকে পরিণত করেছেন। এখন আর চুপ করে থাকার সুযোগ নেই।”
“আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি। আর তাতে আমার কোন আফসোস নেই।”
নেহা রেগে আহিরের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
“জানতাম আপনি আসলে এতই জঘন্য একজন মানুষ। আরে আপনি আমার সাথে এত অন্যায় করার পরেও যখন আমার বড় আব্বু আপনার আর আপনার মায়ের প্রতি করা অন্যায়গুলোর কথা বলেছিল, সেই সময় আমার আপনার মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগে। একজন নারী হিসেবে আমি তার কষ্টটা অনুভব করতে পারি। জানি না, আপনার মা এখন কোথায় আছে। কিন্তু তিনি যদি আপনার আমার প্রতি করা অন্যায়গুলো জানতেন কখনো তাহলে সবার আগে আপনাকে জন্ম দেয়ার অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে শেষ হয়ে যেতেন।”
“তোমার ফালতু কথা বলা শেষ হয়েছে? তাহলে এখন আমি গেলাম।”
বলেই সে নেহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় তখনই নেহা বলে ওঠে,
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। আমি জানতে চাই, আমার আরেক মেয়ে কোথায়।”
আহির কিছুটা হতবাক স্বরে বলে,
“মানে?”
“আমার তো যমজ বাচ্চা হবার কথা ছিল। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর আমি শুধু একটা বাচ্চাকেই পাই। আমি জানতে চাই, আমার আরেক মেয়ে কোথায়।”
আহির একবার গাড়িতে থাকা আহিরার দিকে তাকায়। সে চুপচাপ বসে আছে। গাড়িটা কিছুটা দূরে থাকায় তাদের কথোপকথন তার কানে যায়নি। আহির বলে ওঠে,
“সে জন্মের পরপরই মারা গেছে। আর তার কথা ভেবে কি করবে তুমি? তোমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য একটা বাচ্চাই যথেষ্ট ছিল।”
“শাস্তি? কিসের শাস্তি? শাস্তির নামে প্রহসন হয়েছে। আসল শাস্তি কাকে বলে সেটা আপনি খুব শীঘ্রই টের পাবেন। আপনাকে জেলের ভাত না খাইয়ে আমার শান্তি নেই। আমার এক মেয়ে আপনার জন্য মারা গেছে, আরেক মেয়ে হাজারো কষ্টে বড় হয়েছে৷ আর আপনি..আমার সাথে আমার মেয়েদের সাথে এত অন্যায় করেও পার পেয়ে যাবেন! এটা তো হতে পারে না৷ হয়তো ছোটবেলায় আপনার ভোগ করা কষ্টের জন্যই এতদিন ছাড় পেয়ে গেছেন কিন্তু আর না। আপনার খারাপ সময়ের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে৷”
আহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“আমার খারাপ সময়ের কথা না ভেবে নিজের মেয়েকে আগলে রাখায় মনযোগ দাও। যদি আমার সাথে লাগতে আসো তাহলে তোমার এই মেয়েও..”
“খবরদার! আমার মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবি না! তোর চোখ আমি উপড়ে ফেলব।”
আহির আর কিছু না বলে চলে যায়। নেহা তার যাওয়ার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।
★★
পরের দিন,
নেহা আজ তার নতুন অফিসে যোগ দিতে এসেছে। অনেক উৎফুল্ল সে। নেহাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়েই নিজের নতুন কর্মক্ষেত্রে হাজির হলো নেহা। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হতেই অবাক হলো৷ কারণ কোম্পানির এমডি তাকে বিশেষ ভাবে ডেকে পাঠিয়ে বলল,
“দুঃখিত, এই চাকরিটা আমরা আপনাকে দিতে পারছি না। ”
নেহা অবাক হয়ে বলে,
“মানে? কি বলছেন এসব? আপনারাই তো ইন্টারভিউ এ আমায় সিলেক্ট করেছেন তাহলে এসবের মানে কি?”
“দেখুন, এত কিছু বলতে পারবো না৷ এই জবটা আপনাকে দিতে পারছি না। এটাই শেষ কথা। নাও লিভ।”
নেহা ভীষণ অপমানবোধ করে। আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত অফিস থেকে বের হয়। একটু পরই নেহার ফোনে একটা কল আসে। সে কলটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে শাহরিয়ার কায়সার বলে ওঠে,
“কি হলো? নতুন জবটা রইল না।”
“আপনি!”
“হুম, খুব তো দেমাগ দেখিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছিলে৷ তোমার ভুল মাফ করে ইনফিনিক্সে ফেরার সুযোগ দিলেও তুমি ফিরলে না। এখন এই তেজ কোথায় গেল? এবার বুঝতে পারলে তো শাহরিয়ার কায়সারের ক্ষমতা! ঢাকা শহরের আর কোথাও তুমি চাকরি পাবে না। তাই তোমায় শেষবারের মতো সুযোগ দিচ্ছি, ইনফিনিক্সে ফিরে আসো নয়তো..”
নেহা রেগে বলে,
“আপনি আমায় এখনো চেনেন নি মিস্টার শাহরিয়ার কায়সার। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আমি নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলেছি। কখনো কোন কিছুর বিনিময়ে নিজের সেলফ রেসপেক্টের সাথে আপোষ করিনি। আর না আজ করবো।”
শাহরিয়ার রাগী স্বরে বলে,
“এত জেদ কোথায় পাও তুমি? এত ইগো কেন তোমার? এত খারাপ অবস্থায় থেকেও ইগো একটুও কমছে না।”
“আমার এটা ইগো নয়, আমার আত্মমর্যাদা। আপনি হয়তো জানেন না,আজ থেকে ৫ বছর আগে আমি যখন ঢাকা শহরে পা রেখেছিলাম তখন আজকের থেকেও অনেক খারাপ অবস্থায় ছিলাম। তখন যখন জীবনযুদ্ধে হার মানিনি তাহলে আজও মানবো না। আমার আল্লাহ আজ থেকে ৫ বছর আগে কিছু নেক দিল মানুষের মাধ্যমে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, আমি নিশ্চিত এবারো উনি কোন না কোন ব্যবস্থা করে দেবেন৷ যাতে করে আমার আপনার মতো অহংকারী ব্যক্তির সামনে মাথানত করতে না হয়।”
শাহরিয়ার রাগে নিজের ফোন ছুড়ে মারে। নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
খালেক হাসান দৌড়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে শাহরিয়ার স্যার?”
“ঐ নেহার এত ইগো! আমি জাস্ট মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু আমিও শাহরিয়ার কায়সার। ওকে আমার সামনে যদি মাথানত করাতে না পারি তাহলে আমার শান্তি নেই।”
তার চোখে ক্ষোভের আগুন ফুটে ওঠে।
★★
নেহা আজ আর তাড়াহুড়ো করে বাসা ফেরে না। হাটতে হাটতে একটা পার্কে প্রবেশ করে। চোখের সামনে বাচ্চাদের খেলতে দেখে স্বস্তি বোধ করে। যদিও তার মনে এখন অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। নতুন মাস পড়ে গেছে, সামনেই বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, নিয়ার স্কুল সহ অন্যান্য আরো অনেক খরচ। প্রচুর টাকার প্রয়োজন। অথচ তার হাত ফাকা। কিভাবে সবদিক ম্যানেজ করবে সে। নেহা চোখ বন্ধ করে। এসবের পাশাপাশি তার মনে পড়ে যায় আহির ও শাহরিয়ার, নিজের জীবনে দেখা এই দুই জঘন্য পুরুষের ব্যবহার। নেহা বিড়বিড় করে বলে,
“পুরুষ মানেই কি এমন? যারা মনে করে নারীরা তাদের পায়ের জুতা৷ যাদের ইচ্ছামতো অবহেলা করা যায়, ব্যবহারের পর ছুড়ে ফেলা যায়! পৃথিবীর সমস্ত পুরুষই কি এমন? যাদের ধ্যানজ্ঞান শুধু এটাই যে কিভাবে একজন নারীকে নিজের সামনে অবনমিত করে রাখবে।”
নেহার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে সে অনুভব করে বৃষ্টি পড়ছে। চোখ দুটো খোলে না সে। আজ বৃষ্টিতে ভিজতেও বড্ড ইচ্ছা করছে। কিছু সময় গেলে সে টের পায় তার গায়ে আর বৃষ্টির পানি পড়ছে না। চোখ খুলতেই দেখে আরাভ ছাতা আগলে তার সামনেই দাঁড়িয়ে। সে হেসে বলে,
“নাহ, কিছু পুরুষ এমনো আছে যারা নারীর বিপদে ছায়া হয়ে দাঁড়ায়। আর এমন পুরুষকে যারা পায় তারাই ভাগ্যবতী নারী।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা মুখ তুলে আরাভের দিকে তাকালো। আরাভ তখনো তার মাথায় ছাতা ধরেছিল। আরাভকে দেখেই নেহা বলে উঠল,
“আরাভ ভাই, আপনি?!”
“হ্যাঁ, আমি। এভাবে এখানে বসে কাঁদছিস কেন তুই? বল আমায়।”
নেহা নিজের চোখের জল মুছে বলে,
“কই কাঁদছিলাম না তো।”
“শোন, আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে চিনি। তাই এভাবে আমার থেকে নিজের কষ্ট লুকাতে পারবি না।”
নেহা প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বলল,
“কিন্তু তুমি এখানে কি করছ?”
“ঢাকায় কিছু জরুরি কাজে এসেছিলাম। আর কাকতালীয় ভাবে আমিও এই পার্কে এসেছিলাম। আর আমাদের দেখা হয়ে গেল।”
“আচ্ছা।”
নেহা চুপ। আরাভ নেহার পাশে বসে ছাতাটা ভালো ভাবে ধরে বলল,
“৫ বছর তো একা লড়েছিস। আর কত? এবার আমাকে তোর হয়ে লড়তে দে। অপরাধীকে যে তার শাস্তিটা পাইয়ে দিতে হবে আমাদের।”
নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“সে যে অনেক শক্তিশালী আরাভ ভাই। এই সমাজে অনেক ক্ষমতা তার। আর আমার কাছে তো, তার বিরুদ্ধে সেরকম কোন প্রমাণ নেই। কিসের ভিত্তিতে আমি তার সাথে লড়াই করব?”
“নিজেকে এত অসহায় ভাববি না। আমি সব পরিস্থিতিতে তোর পাশে আছি। এটা মনে রাখবি।”
নেহা যেন এবার একটু স্বস্তি পায়। কিছু সময় পর আরাভকে নিয়ে সে ফ্লাটে ফেরে। কিন্তু ফ্লাটে ফিরেই অবাক হয়ে যায়। কারণ ফ্লাটের দরজায় তালা মারা। নেহা বলে ওঠে,
“এই তালাটা কে দিল?”
এমন সময় পেছন থেকে ফ্লাটের মালিক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলে ওঠেন,
“আমি।”
নেহা আবদুল মান্নানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আঙ্কেল, আপনি..”
“মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ফ্ল্যাটের বেতন পরিশোধ করার ডেট ছিল। অথচ আজ ১৫ তারিখ, ৫ দিন থেকে বেতন পাচ্ছি না। আবার আমি খবর নিয়ে জানলাম আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তো এই অবস্থায় আমি এখানে আপনাকে থাকতে দেব না। দ্রুত আমার ভাড়া পরিশোধ করে এই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিন।”
“এসব আপনি কি বলছেন আঙ্কেল? এই অবস্থায় আমি নিজের মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব? আর আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার টাকা আমি পরিশোধ করে দেব।”
“আমি কিছু শুনতে চাই না। আমার কাছে অনেকেই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে চাইছে। আগামী মাসেই আমি নতুন ভাড়াটে তুলব।”
“প্লিজ আঙ্কেল, এমন করবেন না।”
“দূর হয়ে যাও এখান থেকে।”
আরাভ এবার রাগী স্বরে বলে,
“আপনি ওর সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। ও বলছে তো, যে কোনভাবে ব্যবস্থা করে ফেলবে। তাহলে আপনি কেন ওকে সুযোগ দিতে চাইছেন না।”
“শোন, এটা আমার ফ্ল্যাট, এখানে আমি কোন আশ্রম গড়ে তুলি নি যে বিনা পয়সার থাকার সুযোগ দেব। আর ফ্ল্যাটটা কেনার সময়ই আমি শর্ত দিয়েছিলাম যে, প্রতি মাসের ভাড়া প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হবে। তাই এখন আর কিছু শুনতে চাই না।”
নেহা তখন বলে,
“আঙ্কেল, ভেতরে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে। সেগুলো অন্তত আনতে দিন।”
“আগে টাকা পরিশোধ করো, তারপর।”
বলেই তিনি স্থানত্যাগ করেন৷ আরাভ তার পিছু নিয়ে কিছু শক্ত কথা শোনাতে চায় কিন্তু নেহা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“শুধু শুধু এভাবে ঝামেলা করে কোন লাভ হবে না।”
“কিন্তু নেহা..এই লোকটা এটা কিভাবে করতে পারে। দেশে কি কোন আইন-কানুন নেই? এভাবে কি মানুষকে জিম্মি করা যায়?”
“এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেয়ার সময়ই এই এগ্রিমেন্টে সাইন করেছিলাম যে প্রতি মাসের বেতন সঠিক সময় পরিশোধ করতে হবে আর ফ্ল্যাটের বেতন দেয়ার নুন্যতম সামর্থ্য থাকতে হবে। যেহেতু এখন আমি বেতন পরিশোধ করতে পারছি না আবার আমার চাকরিও নেই তাই ওনার বিরুদ্ধে আইনত কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।”
“তাহলে এখন তুই কি করবি? নিয়াকে নিয়ে কোথায় যাবি?”
নেহা চিন্তায় পড়ে। দৃঢ়তাও তার ছেলে তাজিব ও তার শাশুড়ীকে নিয়ে তার স্বামীর কাছে ঘুরতে গেছে। এই সময় তাদের ফোন করে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চায় না নেহা। এমনিতেই তারা নেহার জন্য অনেক করেছে। নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“দেখি কি ব্যবস্থা করা যায়।”
“এসব দেখাদেখির কিছু নেই। এই অবস্থায় তোকে আমি একা ফেলে যাব না। তুই আমার সাথে গাজীপুরে ফিরে চল।”
“এটা কিভাবে হয় আরাভ ভাই?”
“কেন, তুই কি আমাকে আপন ভাবিস না? ৫ বছর আগে করা ভুলের জন্য আর কত শাস্তি পেতে হবে আমায়?”
নেহা কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে নিয়া ছুটে আসে। সে এসেই হাসিমুখে বলে ওঠে,
“আম্মু, আমি এসে গেছি৷ আরে মামা..তুমিও এসেছ।”
আরাভ নিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, নিয়ামনি। আমি এসেছি। আর এবার আমি তোমাকে আর তোমার আম্মুকে সাথে নিয়ে গাজীপুরে যাব। তুমি যাবে তো?”
নিয়া খুশি হয়ে বলে,
“হ্যাঁ, যাব।”
নেহা আর কিছু বলতে পারে না। আরাভ নেহার হাতটা আলতো করে ধরে বলে,
“চল, এখন। আর কোন আপত্তি করতে পারবি না।”
অগত্যা নেহাকে যেতে হয়।
★★
শাহরিয়ার কায়সার অফিসে বসে বসে ফোন করে আবদুল মান্নানকে। আবদুল মান্নান ফোনটা রিসিভ করতেই শাহরিয়ার বলে ওঠে,
“কাজটা হয়ে গেছে তো?”
“জ্বি, মিস্টার কায়সার। আপনি যেমন বলেছিলেন আমি ঠিক তেমনটাই করেছি। ঐ নেহাকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিয়েছি।”
শাহরিয়ারের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সে প্রসন্ন সুরে বলে,
“আপনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। চিন্তা করবেন না। আপনার একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।”
আবদুল মান্নান খুশি হয়ে যান।
শাহরিয়ার কায়সার বলে ওঠে,
“খুব ইগো না তোমার? এবার দেখি কি করো, চাকরিও নেই, বাসাও নেই। এবার রাস্তায় বসে বসে ভিক্ষা করো। এছাড়া আর কি করবে তুমি নেহা? ভালো অফার দিয়েছিলাম শুনলে না। এবার দেখি, তোমার এই অহংকার কোথায় যায়।”
শাহরিয়ারের চোখে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
★★
আহিরা বাড়িতে ফিরেছে থেকে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। সকাল থেকে এখনো অব্দি সে কিছু খায় নি। আহির অনেক চেষ্টা করেও আহিরাকে কিছু খাওয়াতে পারে নি। তার একটাই কথা।
“কেন তুমি আমাকে ঐ আন্টির সাথে কথা বলতে দিলে না? ঐ আন্টির সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আমি কিছু খাবো না।”
আহির আহিরার পাশে বসে বলে,
“তুমি কেন ঐ আন্টির সাথে দেখা করতে চাইছ আহিরা? ওনাকে তো তুমি ঠিকভাবে চেনোও না।”
আহিরা বলে ওঠে,
“কারণ ঐ আন্টির কাছ থেকে আমি মাম্মা মাম্মা ফিলিংস পাই পাপা। আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি, আমার সব ফ্রেন্ডের মাম্মা আছে শুধু আমার মাম্মা নেই। জানো, ঐ নিয়াকে ঐ আন্টি কত ভালোবাসে, আমাকেও দুইবার বিপদের হাত থেকে বাচিয়েছে সে। মাম্মারা বুঝি এমনই হয়, তাইনা? তাহলে আমার কোন মাম্মা নেই কেন পাপা?”
আহির থমকে যায় নিজের মেয়ের প্রশ্নে। কি জবাব দেবে এবার সে? আহিরা আহিরকে চুপ দেখে বলে,
“কি হলো চুপ করে আছ কেন তুমি? আমাকে জবাব দাও। হয় আমাকে ঐ আন্টিকে এনে দাও নাহলে আমার মাম্মাকে এনে দাও। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”
আহির চুপচাপ আহিরার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে আসতেই নাতাশাকে দেখতে পায়। সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিল। আহিরকে দেখতেই সে বলে,
“দেখলি তো আহির, আমি যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই এবার সত্য হলো। ঐ নেহা সত্যিই তোর মেয়েকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে। এবার কি করবি তুই?”
আহির হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
“এটা কখনো হবে না।”
বলেই সে আবার রুমে প্রবেশ করে আহিরাকে বলে,
“তোমার মাম্মা চাই তাই তো, আমি তোমাকে মাম্মা এনে দেব।”
আহিরা অবাক হয়। সাথে নাতাশাও। রুমের বাইরে এসেই আহির নাতাশাকে বলে,
“বিয়ের শপিং করে নে!”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨