উত্তল তরঙ্গ পর্ব-৩৮+৩৯

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আহিরের কথা শুনে নাতাশা ভীষণ খুশি হয়ে যায়। তার এতদিনের জমানো ইচ্ছা আজ পূরণ হতে চলেছে। এটা যেন তার কাছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। নাতাশা খুশি হয়ে বলে,
“তার মানে তুই আমায় বিয়ে করবি?”

আহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-বোধক ইশারা করে। তবে তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে মন থেকে এই বিয়েতে রাজি হয়নি। তবে নাতাশার কাছে সেটা কোন বড় ব্যাপার না। নাতাশা আনন্দে আজ আত্মহারা। কিছু সময়ের মধ্যে সে চলে যায় ডাইনিং টেবিলে। সেখানে তখন মুমিনুল পাটোয়ারী খেতে বসেছিলেন। নাতাশা খুশি হয়ে বলে ওঠেন,
“আঙ্কেল, একটা খুশির খবর আছে। আহির অবশেষে আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।”

মুমিনুল পাটোয়ারী খাওয়া থামিয়ে দেন। তার মুখে খুশি এবং অবাক দুই ধরনের অভিব্যক্তি দেখা যায়। তিনি বলে ওঠেন,
“যাক! এতদিনে তাহলে ছেলেটার সুবুদ্ধি হলো। কিন্তু কাল অব্দি তো ও এই বিয়েতে রাজি ছিল না, হঠাৎ এই পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব হলো?”

নাতাশা বলে উঠল,
“সেটা যে কারণেই হোক, ও যে রাজি হয়েছে সেটাই অনেক। এবার আপনি বিয়ের সব প্রস্তুতি শুরু করে দিন আঙ্কেল।”

কিছু সময় পর আহির চলে আসলো। আহিরকে দেখে মুমিনুল পাটোয়ারী বললেন,
“তুই যে নিজের নতুন জীবন শুরু করতে চাইছিস এটায় আমি খুশি।”

আহির বলে,
“আব্বু, তাহলে তুমি বিয়ের সব আয়োজন শুরু করো।”

“আমি চাই, তোমাদের বিয়ে এখানে না, গাজীপুর শহরে হোক।”

“বেশ, তুমি যা বলবে।”

নাতাশার কাছে অবশ্য কোথায় বিয়ে হবে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। সে তো নিজের মা-বাবা এবং কিছু বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিজের এই খুশির সংবাদ ভাগ করে নিলো। তার মাকে বিয়ের শপিং এর প্রস্তুতি নিতে বলল।

আহির নাতাশার এত আনন্দ যেন দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। শুধুমাত্র নিজের মেয়ের জেদের জন্যই তাকে এই বিয়েটা করতে হচ্ছে। নাহলে সে কখনোই করত না।

★★
আরাভের সাথে গাজীপুরে তার নতুন বাসায় এলো নেহা৷ তার সাথে নিয়াও এলো। সে তো এখানে এসে ভীষণ খুশি। কিন্তু নেহার মুখ অন্ধকার। আজ ৫ বছর পর আবারো তার মনে হচ্ছে যে, সে জীবনযুদ্ধে হেরে গেছে! আরাভ যেন বুঝল নেহার মনের কথা। তাই তো নেহার কাধে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“চিন্তা করিস না নেহা, এটা তোর হার নয়। বরং এখান থেকেই তোর জয়যাত্রা শুরু হবে। আমার উপর ভরসা রাখ। আমরা সবকিছু আবার নতুন ভাবে শুরু করব।”

বিপাসা চৌধুরী আরাভকে দেখে ছুটে আসেন। তার সাথে রিনাও ছিল। রিনা নেহাকে দেখে যে খুশি হয় নি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিপাসা চৌধুরী নেহাকে দেখে খুশি হয়ে বলেন,
“তুই এসেছিস নেহা! আরাভ আমায় বলেছে, এখন থেকে তুই আমাদের সাথেই থাকবি। আমি যে কত খুশি সেটা তোকে বলে বোঝাতে পারব না।”

নেহা কি বলবে বুঝতে পারে না। সে শুধু আরাভের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকায়। আরাভ বিপাসা চৌধুরীকে বলেন,
“এখন থেকে নেহা আর ওর মেয়ে আমাদের সাথেই থাকবে আম্মু। ওর সাথে যত কথা বলার পরে বলো। ও অনেক ক্লান্ত,এখন একটু বিশ্রাম নিতে হবে।”

“আচ্ছা৷ নেহা, তুই ভেতরে যা। তোর মেয়েকেও নিয়ে যা। আমি দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা করছি। রিনা এসো আমার সাথে।”

রিনা মূলত বিপাসা চৌধুরীকে কিছুদিন থেকে রান্নাবান্নায় সাহায্য করছে। আরাভ ব্যাপারটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না। তাই সে বলে,
“আম্মু, ওনাকে শুধু শুধু বিরক্ত করা ঠিক হচ্ছে না। ওনার নিজেরও তো কাজ থাকতে পারে। ওনাকে কেন তুমি রান্নায় সাহায্য করতে বলছ?”

রিনা আরাভের চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমায় আন্টি মোটেই জোর করছেন না। আমি নিজের ইচ্ছাতেই ওনাকে সাহায্য করছি। এতে আপনার কি সমস্যা? আমি সেই মেয়েদের মতো নই, যে নিজের আপনজনদের বিপদে একা ফেলে পালিয়ে যাই। আমি যাদের আপন মনে করি, সব বিপদে তাদের পাশে থাকি।”

কথাটা যে নেহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলা তা নেহা বুঝল। সে আর না দাঁড়িয়ে নিয়াকে কোলে নিয়ে ভেতরে গেল। আরাভ রিনাকে রাগী স্বরে বলল,
“হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি কি বলতে চাইছ আমরা বুঝি নি ভেবেছ? বাইরের লোক বাইরের হয়েই থেকো।”

বলেই আরাভ ত্রস্ত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। আরাভ যেতেই রিনা কাদো কাদো স্বরে বিপাসা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“দেখছেন আন্টি, আপনার ছেলে আমাকে কিভাবে বললো।”

“দেখো রিনা কিছু মনে করো না, তুমি আকারে ইঙ্গিতে কি বলেছ সেটা আমিও বুঝেছি। নেহাকে নিয়ে এমন কথা আমি বা আরাভ কেউ বরদাস্ত করবো না। এরপর যদি এমন কিছু বলো, তাহলে আমিও ছেড়ে কথা বলব না।”

বলেই তিনি স্থানত্যাগ করেন। রিনা রাগে ফুসে উঠে বলে,
“এই এক বাচ্চার মায়ের জন্য এই মা-ছেলের এত দরদ কেন? আমার মতো একটা কুমারী মেয়ে ফেলে কি এখন এই এক বাচ্চার মাকে বাড়ির বউ করবে?”

★★
নাতাশা বিয়ের শপিং করতে এসেছিল। তার সাথে তার মা নূর বেগমও ছিলেন। নূর বেগমকে ভীষণ নাখোশ দেখাচ্ছিল। নাতাশা ভীষণ আনন্দের সহিত বিয়ের কেনাকাটা করলেও নূর বেগম এককোণায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নাতাশা এগিয়ে এসে তার মাকে বলে,
“এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন মা? এসে একটু আমায় শপিং এ সাহায্য করো।”

“আমি এখনো এই বিয়ের সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না। কিসের কমতি আছে তোর যে, তোকে একটা এক বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করতে হবে? এত সুন্দর দেখতে তুই, এত উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তোর, তবুও কেন তুই ঐ আরাভের জন্য এত পাগল?”

“মা! এই ব্যাপারে আমি আর কিছু শুনতো চাই না। তুমি জানো না, আরাভকে আমি কতো ভালোবাসি..ওকে পাওয়ার জন্য আমি কত অপেক্ষা করেছি।”

“আমি সবটাই জানি কিন্তু..”

“কোন কিন্তু নয়।”

“আরাভ যদি কোনদিন তোর সব সত্য জানতে পারে তাহলে কি হবে?”

“কোন সত্যের কথা বলছ তুমি?”

“এটাই যে, মৃদুলের মৃত্যুর জন্য..”

“মা! আর একটা শব্দও বলবে না।”

নাতাশার গলা শুকিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে সে মনে করে আজ থেকে ১৫ বছর আগের সেই ঘটনা।

ফ্ল্যাশব্যাক
মৃদুল, আরাভ ও নাতাশা তখন সবে ফাস্ট ইয়ার এক্সাম দিয়েছে। কিছুদিন পর রেজাল্ট দিলো। মৃদুল দুটো সাবজেক্টে ফেইল করেছে। এমনিতেই নেহার প্রত্যাখ্যানের জন্য তার মন খারাপ ছিল তার উপর এই রেজাল্ট। আহিরও তখন নিজের মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল জন্য মৃদুলকে সময় দিতে পারত না। মৃদুল তাই নাতাশার কাছে এসে তার দুঃখের কথা বলছিল। সেই সময় নাতাশা আবার একটু অন্য কাজে জড়িত ছিল। নাতাশা ডাক্তার হওয়ার আগে তাদের পারিবারিক অবস্থা বেশি ভালো ছিল না। তার বাবা একজন সাধারণ মুদি দোকানি ছিল আর মা গৃহিনী। ঐ আয়ে তাদের সংসার কোনমতে চলত। কিন্তু নাতাশা অনেক লোভী ছিল। সে অনেক আভিজাত্যপূর্ণ জীবন চাইত। এজন্য সে গোপনে কিছু ড্রাগ স্মাগলারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সেই বয়সেই। এমনকি স্কুল কলেজের অনেক স্টুডেন্টকে সে ড্রাগ সাপ্লাই দিত যারা বিভিন্ন হতাশায় নিমগ্ন ছিল। নাতাশা জানত, মৃদুল ভীষণ ধনী পরিবারের ছেলে। তাই মৃদুলের এই মানসিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে চড়া দামে তার কাছে ড্রাগ বিক্রি করে। সে মৃদুলকে বলে,
“এটা খেয়ে দেখ, তোর সব দুঃখ ভুলতে পারবি।”

“সত্যি বলছিস নাতাশা? এটা খেলে আমি আর কোন দুঃখ বোধ করব না?”

‘উহু।’

মৃদুল নাতাশাকে ভরসা করে ড্রাগ নিতে শুরু করে। কিছুদিনের মাঝেই সে এতোটা আসক্ত হয়ে পড়ে যে নাতাশা তাকে একপ্রকার নিয়ন্ত্রণ কর‍তে শুরু করে। তার কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু এভাবে চলতে চলতে একদিন মৃদুলের কাছে অনেক বেশি টাকা চেয়ে বসে। মৃদুল সেই টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় তাকে ড্রাগও দেয় না। যার ফলে মৃদুল মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে নিজেকে শেষ করে দেয় ড্রাগের নেশায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৩৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা নিয়াকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল। নিয়া ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ খাচ্ছিল। এমন সময় রিনা তাদের রুমে আসে। রিনাকে দেখে নেহা কিছুটা অবাক হয়। রিনা খুব একটা কিছু না ভেবে নেহার পাশে এসে বসে৷ অতঃপর সামান্য হেসে বলে,
“আপনার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি বিপাসা আন্টির মুখে। আপনার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছা ছিল৷ আজ সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো।”

নেহাও বিনয়ী হেসে বলে,
“আমি বড় আম্মুর মুখে শুনেছি আপনি এতদিন কিভাবে ওনাকে আর আরাভ ভাইকে আগলে রেখেছিলেন। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।”

“আমি মন থেকেই ওনাদের আগলে রেখেছিলাম। কারণ ওনারা আমার আপন ছিলেন। তবে এখন মনে হচ্ছে, এসব অর্থহীন ওনাদের কাছে।”

“কেন এমন মনে হচ্ছে?”

“বাদ দিন সেসব। আপনি আপনার কথা বলুন। আপনার মেয়েটা তো খুব মিষ্টি। ওর চেহারায় অবশ্য আপনার সাথে বেশি একটা মিল নেই। ও নিশ্চয়ই ওর বাবার মতো হয়েছে, তাই না?”

নেহা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিয়াও কিছুটা অবাক হয়। “বাবা” এই শব্দটা নিয়াকে কখনো সেভাবে ভাবায় নি। নেহা ছোটবেলাতেই নিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তার অভিভাবক শুধুমাত্র নেহা। নিয়া তাই স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছিল। বাবার ব্যাপারে কিছু জানতে চায়নি কখনো। তার জন্য তার মায়ের সঙ্গই যথেষ্ট ছিল সবসময়। নেহা নিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার মেয়ে আমার মতোই হয়েছে। আপনার বুঝতে ভুল হয়েছে।”

“হতে পারে। ওর বাবাকে দেখলে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারতাম। আচ্ছা, আপনার কাছে ওর বাবার কোন ছবি আছে? থাকলে দেখান তো একটু দেখে বলি, ও নিজের বাবার মতো হয়েছে না আপনার মতো।”

নেহা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আরাভ এসে বলে,
“কি হচ্ছে এখানে?”

আরাভের গলা শুনে রিনা নড়েচড়ে ওঠে। আলতো স্বরে বলে,
“আমি একটু তোমার কাজিনের সাথেও গল্প করছিলাম।”

আরাভ এগিয়ে এসে রুক্ষ স্বরে বলে,
“এসব গল্প পরে করা যাবে। নেহা অনেক দূর জার্নি করে এসেছে। ও এখন ভীষণ ক্লান্ত। তুমি নিজের বাসায় যাও রিনা। নেহাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।”

“কিন্তু আমি তো সেভাবে বিরক্ত করি নি..”

“তোমায় যা বললাম তাই করো। আমি অতিরিক্ত কোন কথা শুনতে চাই না।”

অগত্যা রিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আরাভ নিয়ার পাশে বসে বলে,
“কি করছে আমার নিয়ামনি?”

“এই তো, ভাত খাচ্ছি মামা।”

“গুড।”

“আচ্ছা, মামা আমাকে তুমি গাজীপুর শহরটা একটু ঘুরে দেখাবে?”

“হ্যাঁ, দেখাব।”

“ইয়ে..আজই ঘুরতে যাই চলো।”

“ঠিক আছে, আজ বিকেলে তোমাকে আর তোমার আম্মুকে নিয়ে আমি ঘুরতে যাব।”

নেহা সহসা বলে ওঠে,
“তুমি নিয়াকে নিয়েই যাও না আরাভ ভাই, আমার সাথে যাওয়ার কি দরকার?”

“দরকার আছে৷ তোর মন ভালো হবে যদি তুই ঘুরতে যাস। শোন, এই ব্যাপারে আমি আর কিছু শুনতে চাই না। এতদিন তুই নিজের ভালো নিজেই বুঝেছিস তবে এবার আমাদেরও তোর ভালোটা বুঝতে হবে। চিন্তা করিস না, আমি সব পরিস্থিতিতে তোর খেয়াল রাখব। তোকে ভালো রাখার দায়িত্ব এখন আমার।”

নেহা আরাভের কথা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে।

★★
বিয়ে উপলক্ষে বর্তমানে সপরিবারে গাজীপুরে চলে এসেছে আহির। আগামী মাসেই নাতাশার সাথে তার বিয়ে। মূলত এনগেজমেন্টটা দুই দিন পর হবে, সেই উপলক্ষ্যেই গাজীপুরে আসা। আহিরা জানে আহির ও নাতাশার বিয়ের ব্যাপারে। তবে এই বিয়েটা নিয়ে সে মোটেই আগ্রহ পাচ্ছে না। তার নাতাশাকে এমনিতেও খুব বেশি পছন্দ না। তাই আহিরা মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷

মুমিনুল পাটোয়ারী আহিরাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তার পাশে এসে বলে,
“তুমি তো এখন নিশ্চয়ই অনেক খুশি, তাই না আহিরা? তুমি নিজের মাম্মা পেতে চলেছ।”

আহিরা বলে,
“না, আমি একটুও খুশি না। নাতাশা আন্টিকে আমি মাম্মা বলে মানতে পারব না।”

“এভাবে বলছ কেন? নাতাশা আন্টি তোমায় কত ভালোবাসে। ”

“আমার নাতাশা আন্টির মতো মাম্মা চাই না, আমার তো ঐ ভালো আন্টিটার মতো..”

আহিরা আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় আহির এসে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আহিরা! চুপ করো। কি বলছ এসব তুমি। যাও, নিজের রুমে যাও।”

আহিরা রাগী দৃষ্টিতে আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি এখন খুব পচা হয়ে গেছ। আই হেইট ইউ।”

বলেই আহিরা চলে যায়। আহিরার মুখে কথাটা শুনে আহির বুকের গভীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। মুমিনুল পাটোয়ারী আহিরের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ও তো বাচ্চা মানুষ তাই বুঝতে না পেরে বলে ফেলেছে। তুই কিছু মনে করিস না, এনগেজমেন্টের প্রস্তুতি নে।”

আহিরের কিছু ভালো লাগছিল না। তাই সে দ্রুত সেভাবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি বের করে ড্রাইভ করতে লাগল। কিছু সময় ড্রাইভ করার পর একটা পার্কের সামনে এসে সে গাড়িটা থামালো।

পার্কে বিভিন্ন বাচ্চারা তাদের মা-বাবার সাথে মজা করছিল। এই দৃশ্য দেখে আহিরের মনেও ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। কিন্তু আচমকা সে এমন কিছু দেখে যাতে করে এই ভালো লাগা উধাও হয়ে যায়। নিয়া আরাভ ও নেহার হাত ধরে এই পার্কেই আসে। তাদের হাত ধরে সে খুশিতে উৎফুল্ল ছিল৷ আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছু জানতে চাইছিল। নেহাকেও আরাভের পাশে ভীষণ খুশি লাগছিল। তারা যেন এক খুশি পরিবার। এই দৃশ্য দেখে আহির নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আরাভকে চেনে সে। আরাভের প্রতি ঈর্ষা বোধ হয় আহিরের। সে মনে মনে বলে,
“এই ছেলেটা আমার কাছ থেকে সবসময় সবকিছু কেড়েই নিলো! আমিও আজমাইন চৌধুরীর ছেলে কিন্তু কখনোই বাবার ভালোবাসা পাইনি যা এই আরাভ পেয়েছে, আমার নিজের সন্তানও আমাকে ভালোবাসে না সেখানে আমার আরেক সন্তানের ভালোবাসা পাচ্ছে এই আরাভ, নেহা যাকে আমি শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম সেও কিনা আরাভের সাথে ভালো আছে। নাহ,এটা হতে পারে না। আমি এটা হতে দেব না। ওদের সুখ আমি সহ্য করতে পারছি না। আবারো প্রতিশোধের নেশা চেপে বসছে আমার মাথায়।”

আচমকা আহির দেখে আরাভ নিয়াকে কোলে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দোল দিচ্ছে। আহির এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বলে,
“আহিরাকে আমি এত ভালোবাসলেও ও আমাকে কখনো বিন্দুমাত্র ভালোবাসে নি আর আমারই আরেক মেয়ে কিনা এই আরাভকে নিজের অভিভাবকের স্থান দিয়ে দিচ্ছে। ওর সাথে এত খুশি। এটা তো আমি হতে দিতে পারি না। এবার আমি তাই করবো যা আমার করা প্রয়োজন। আহিরাকে তো আমি আগেই নিজের করে নিয়েছিলাম এবার নেহার কাছ থেকে আমার আরেক মেয়েকেও আমি ছিনিয়ে নেব। তার জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি করবো।”

আহিরের চোখে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গের দেখা মেলে। এরমধ্যে নেহা চুপচাপ পার্কের ব্রেঞ্চে বসে ছিল। আচমকা তারও চোখ যায় আহিরের দিকে। আহিরকে দেখেই নেহা ভয় পেয়ে যায়। সে বলে ওঠে,
“আবারো এই লোকটা! ইনি কি কখনোই আমার পিছু ছাড়বেন না।”

নেহা উঠে দাঁড়ায়। দোলনায় দুলতে থাকা নিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার মেয়েকে আমার এনার থেকে দূরে সরাতে হবে।”

বলেই সে হাটা ধরে। দোলনার কাছে গিয়ে নিয়াকে কোলে তুলে নেয়। নেহার আচমকা এমন কাণ্ড দেখে আরাভ বলে,
“কি হয়েছে নেহা?”

“আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।”

“এক্ষুনি তো এলাম। এত তাড়াতাড়ি কেন যাব?”

“প্লিজ আরাভ ভাই, এখান থেকে যাওয়াটা খুব বেশি প্রয়োজন। তর্ক করো না।”

বলেই সে নিয়াকে নিয়ে হাটা ধরে। আরাভ বিস্ময়ে থ হয়ে যায়। নেহা নিয়াকে নিয়ে সামনেই যাচ্ছিল এমন সময় আহির হঠাৎ করে নেহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“স্টপ, আই হ্যাভ টু টক উইদ ইউ!”

“কি বলবেন আপনি? কি বলার আছে?”

“তোমার মেয়ে কি জানে, আমার আসল পরিচয়? ওকে বলেছ? ব্যাপার না, আমিই বলছি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨